খুন,অন্তিম পর্ব

0
801

খুন,অন্তিম পর্ব
ক্রাইম থ্রিলার
যাবেদ খাঁন আবু বকর

এতটুকু বলে থেমে গেলেন মাইকেল। চেহারায় ঘৃণিত ভাব ফুটিয়ে বলে উঠলেন যাবেদ,
-“ছিঃ! কতটা খারাপ হলে নিজের মা’কে এরকম ভাবে কেউ মেরে ফেলতে পারে। অবশ্য যারা সন্তানের চিন্তা করে না সে-সকল মেয়েদের এই ভাবেই মেরে ফেলা উচিত ।”
হাসতে হাসতে জবাব দিলেন মাইকেল,
-” এই তো। এবার লাইনে এসেছিস। বল আমার কর্মকাণ্ড কোথাও খারাপ হয়েছে!”
-” হাজার খারাপ হোক মা। তবুও সে জন্মদাত্রী। তাকে এই ভাবে মেরে ফেলাটা তোর মতো পাপিষ্ঠের কাজ।” কথাটি বেশ রেগে বললেন যাবেদ।
-” আমাকে যেই ভাবে পালিত করা হয়েছে আমিও সেই ভাবেই বড় হয়েছি। এখানে আমাকে পাপিষ্ঠ না বলে তাদেরকে বল।” যাবেদের কথায় রেগে গিয়ে বললেন মাইকেল।
-” হ্যাঁ তারা তো পাপিষ্ঠ। তাদের চাইতেও বড় পাপিষ্ঠ তুই। পরবর্তীতে কি কাণ্ড করেছিস সেগুলো বল।” শান্ত হয়ে বললেন যাবেদ।
ধীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন মাইকেল।

একদিন রাতে কবির মাহমুদ ও রুমা বেগম ঠিক করলেন তাদের বাবার বাড়ি বেড়াতে যাবেন। এটি খুব সূক্ষ্ম ভাবে কানে নিলেন নীল রহমান। এতদিনের নির্যাতনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মারিয়া হয়ে উঠলেন তিনি। কবির মাহমুদের একটি বদভ্যাস আছে। আর যেটি হলো হাইওয়ে রোডে অধিক গতিতে গাড়ি চালানো। এটার ফায়দা বেশ ভালো করেই ওঠালেন নীল রহমান। নিজ মুক্তির জন্য এতো সুন্দর একটি পরিবেশ মিস করতে যে নেই। রাতের আঁধারে গাড়ির সিকি খুলে ব্রেকের তার গুলো খুব সূক্ষ্ম ভাবে কেটে দিলেন। এবং এরকম ভাবে জোড়া দিয়ে রাখলেন যেনো গাড়ির গতি ঘন্টায় ৪০ পেরুলেই অতঃপর আর ব্রেক কোনো কাজে আসবে না। পরিপাটি ভাবে কাজটি সেরে হাতে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে নিজের রুমে গিয়ে অন্ধকারের সাথে আলাপন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। পরের দিন সকাল বেলায় কবির মাহমুদ ও রুমা বেগম রওনা হলেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তাদের সাথে সঙ্গি হয়ে গেলেন কবির মাহমুদের ১৬ বছরের মেয়ে নিলা। তারা যাত্রা আরম্ভ করলেন গন্তব্যের জন্য। কিন্তু তারা একটুও জানে না তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে আগামীতে। অনেক ক্ষণ হয়েছে বাসা থেকে বের হয়েছেন তারা। এদিকে তাদের মৃত্যুর খবর শোনার জন্য অধিক আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন নীল রহমান। সকাল এগারোটা নাগাদ একাত্তর টেলিভিশনের চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজে বলতে লাগলেন খবর পাঠিকা।

” সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ঢাকা গুলশান হাইওয়ে রোডের ধারে একটি গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। অধিক গতিতে গাড়ি চালিয়ে রোড দিয়ে ছুটে চলেছিলেন তারা কিন্তু পথিমধ্যেই একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এক্সিডেন্টের ফলে ঘটনাস্থলেই গাড়িতে অবস্থান নেওয়া তিনজনের মাঝে দু’জনের ই মৃত্যু ঘটেছে। এবং গাড়িতে থাকা ১৬-১৭ বছরের একটি মেয়ে জীবিত অবস্থায় আছে তবে তার অবস্থা বেশ ক্রিটিকাল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন তিনি। ট্রাকের সাথে গাড়ির সংঘর্ষের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গাড়ির এবং ঘটনাস্থল। সেই সাথে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত এবং নিহতদের কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এবং তথ্যসূত্র অনুযায়ী জানা গেছে গাড়িতে মৃত দু’জন স্বামী-স্ত্রী। যাদের নাম কবির মাহমুদ এবং রুমা বেগম। কবির মাহমুদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আপাতত এতটুকু জানা গেছে বলে দাবী করছেন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা। পরবর্তী ঘটনা দেখতে আমাদের সঙ্গেই ধন্যবাদ।”

এতটুকু শুনে টিভি অফ করে দিলেন নীল রহমান। অধিক রাগের ফলে কান রক্তলাল হয়ে গেছে। ভেবে নিলেন নিজ হাতে আরো একটি খুন করতে হবে। সকল প্লান এভাবে ভেস্তে দেওয়া যায় না। এমতাবস্থায় নীল রহমানের ফোনে একটি কল এলো। অধিক চিন্তিত থাকার ফলে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে কল রিসিভ করে কানে তুললেন। ওপাশ থেকে মধ্যবয়সী লোকের কণ্ঠে ভেসে এলো,
-” নীল তুমি কোথায় আছো! তোমার বাবা-মা আর তোমার বোনের গাড়ি এক্সিডেন্টে হয়েছে।”
-” কি বলছেন আঙ্কেল। এ ঘটনা কখন হলো? আর তারা এখন কোথায়। সুস্থ আছেন তো সবাই?” বিষ্ময়কর ভাব নিয়ে কথাগুলো বললেন নীল রহমান।
-” তোমার বাবা আর মা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তোমার বোন বেঁচে ছিলো কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।” লোকটি কথাগুলো বলার সময় গলা ধরে আসছিলো।
– ” নাহ! এ হতে পারে না। ” বলে চিৎকার দিয়ে মিথ্যা কান্নায় ভেঙে পরলেন নীল রহমান।
-” দেখো একসময় সবারই মরতে হবে। যার হায়াত শেষ হবে সে-ই মারা যাবে। নিজেকে সামলাতে শেখ। আর নিজেকে সামলে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে এসো।”

আর কিছু বললেন না নীল রহমান। ফোনটি কান থেকে নামিয়ে কলটি কেটে দিলেন। অতঃপর অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন। নিজ হতে আরেকটি খুন করার কোনো প্রয়োজন হলো না তার। অতঃপর হাসি থামিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। লাশ তিনটে পোস্টমর্টেম করা শেষ হলেই হস্তান্তর করা হয় তাদের কাছে। বাসায় এনে জানাজা পড়িয়ে মাটি দিয়ে দেওয়া হলো তাদের।

এরপর বেশ কিছুদিন ভালোই চলছিলো তার। হঠাৎ করেই তার প্রেয়সী সাদিয়া কেমন বদলে যেতে শুরু করলেন। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে তদন্ত চালালেন। উঠে এলো সাদিয়া অন্য একজনের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছেন। প্রাইভেট নাম্বার তৈরি করে ফোন দিলেন সাদিয়ার ফোনে। অতঃপর ঠিকানা দিলেন তার বাসায় আসার জন্য।
সদিয়া সাধারণ ভাবেই তেমন কিছু না ভেবে চলে এলো তার বাসায়। তার জন্য কী অপেক্ষা করছে সেদিকে বিন্দু পরিমাণ জানা নেই। বাসায় প্রবেশ করতেই শরবত তৈরি করে নিয় এলেন নীল রহমান। সেই সাথে আরো বেশ কিছু খাবার। কড়া রোদ্দুরের মাঝে আসায় প্রচুর তেষ্টা পায় তার। হয়রানি হয়ে যাওয়ার ফলে প্রথমেই সাদিয়া হাতে নিলেন শরবতের গ্লাস। পান করতেই মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো তার।

চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করেন একটি বদ্ধরুমে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়। তার সামনে হাতে ধারালো চকচকে ছুরি নিয়ে বসে আছেন নীল রহমান। কোন কথা বলতে পারেনি সাদিয়া। তার পূর্বেই গলার নিচে ছুরি চালিয়ে দিয়েছিলেন নীল রহমান। কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ভালোবেসেছিলেন বলে ততটা ভয়ানক মৃত্যু দিতে পারেননি তিনি। বস্তার ভেতরে ভরে নিলেন সাদিয়ার মৃত দেহটি। বস্তার ভেতরে বেশ কয়েকটি ইট প্রবেশ করিয়ে মুখ বন্ধ করে বেঁধে দিলেন। অতঃপর রাতের আঁধারে বস্তাটি গাড়ি করে নিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন। কেস কেউ করেনি। যার ফলে তদন্তও হয়নি। আর যদিও বা হয়েই থাকে তবে তার কোনো ক্লু না পাওয়ার ফলে অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

ধীরে ধীরে সময় কাটতে লাগলো। ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল তার ভেতরে পুষে রাখা দানব। বেড়ে উঠতে লাগলো ক্রাইমের সংখ্যা। একে একে তার হাতে মৃত্যুর সংখ্যা তরতর করে বেড়ে উঠতে লাগল। তার হাতে মৃত্যুর সংখ্যা একশত সত্তরের উর্ধ্বে। একেক সময় একেক স্থানে অভিনব পদ্ধতিতে ভয়ানক ভাবে খুন করে চলেছিলেন তিনি। তার ক্রাইমের পর বেশ কয়েকবার তাকে ধরার জন্য পুলিশদেরকে ক্লু দিয়েছিলেন। কিন্তু সে ক্লু ভেদ করে তার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি কোনো পুলিশ। ভেবে নিয়েছিলেন তিনি কেউ আর তাকে ধরতে পারবে না।

এতটুকু বলে থেমে গেলেন মাইকেল। বেশ জোর গলায় যাবেদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন,
-” কিন্তু তুই আমার পর্যন্ত পৌঁছে যাবি তা কল্পনা করিনি। তোকে মারার জন্য এতো বড় একটি মাস্টার প্লান করলাম তবুও তুই না মরে বেঁচে গেলি। এতোদিনের প্লান এভাবে ভেস্তে যেতে দিতে পারি না। তুই আমাকে চমকে দিয়ে আমার পর্যন্ত পৌঁছে গেলি। চারটা অক্ষর ক্লু দেওয়ার ফলে আমার পর্যন্ত পৌঁছে গেলি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলই হচ্ছে এটা। শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে কীভাবে আমার পর্যন্ত পৌছে গেলি তুই। কিন্তু এতটা সময় যে আমার হাতে নেই।

“হ্যাপি জার্নি”

হ্যাপি জার্নি বলেই হাতে থাকা ছুরিটি উঁচু করে যাবেদের বুক বরাবর আঘাত হানতে প্রচেষ্টা চালালেন। পেছনে বেঁধে রাখা দু’টি হাত উন্মুক্ত করে সামনে এনে মাইকেলের ছুরির আঘাত আটকে দিলেন যাবেদ। মাইকেলের হাতে থাকা ছুরিটি উল্টো করে ঘুরিয়ে তার দিকেই দিকে তাক করলেন যাবেদ। তীব্র গতিতে এক হাত দিয়ে আঘাত করলেন ছুরির হাতলের পেছনে। সাথে সাথে ছুরিটি মাইকেলের বুকে গেঁথে যায়। এরকম আচমকা ঘটনার জন্য বিন্দু পরিমাণ প্রস্তুত ছিলেন না মাইকেল। কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলেন না তিনি। বুকের ভেতরে আঘাত হানলো ছুরির মাথা। খচ করে একটি শব্দ হলো কেবল। আঘাত প্রাপ্ত বুকে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে যায় মাইকেল।

হাত দিয়ে দ্রুত পায়ের বাঁধন খুলতে লাগলেন যাবেদ। পায়ের বাঁধন খুলে জুতার ভেতর থেকে বের করে আনলেন 9mm বন্দুকটি। বেশ কিছুক্ষণ যাবেত রুমের মাঝে নীরবতা বিরাজমান। রুমে কেবল মাইকেলের মৃদুস্বরে কাতরানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বন্দুক হাতে তুলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন যাবেদ। মাইকেলের চারপাশ ঘুরেঘুরে হেঁটে ধীর গলায় গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন,

-” বহু প্রতিক্ষা পর এই সময়টি হাতে পেয়েছি। ভুলে গিয়েছিলি তুই আমি একজন গোয়েন্দা। সেই সাথে মার্শাল আর্টের ট্রেনিং প্রাপ্ত স্টুডেন্ট। তাই সব ধরনের টেকনিক রপ্ত করাটা আমার কাছে দুধভাতের মতো। সেই সাথে আমি কোর্টের হাতার ভেতর একটি ব্লেড রেখে দেই। যাতে করে যদি কোনো সমস্যায় আটকে যায় এটি দিয়ে উদ্ধার হওয়া যাবে। তোর লাইফ হিস্ট্রিটি জানার জন্য যেমন প্রবল আগ্রহ ছিলো ঠিক তেমনি ভাবে তার উপরেই প্লান করে ছক এঁকে নিলাম। প্লান কেবল তুই নয় আমরাও পাড়ি।
একটা মানুষ যখন পুরনো স্মৃতিচারণ করেন তখন বাস্তবে ফিরে এলে-ও তার মাঝে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। যার ফলে সে বিচক্ষণতার দৃষ্টিতে সকল কিছু দেখে উঠতে পারেন না। তার অগোচরে বহু কিছু করা সম্ভব। আমিও এটাই চেয়েছিলাম তুই আমার বুক বরাবর আঘাত কর। তুই কী ভেবেছিলি আমার হাত চেয়ারের পেছনে বেঁধে রেখে আমার উপর ছুরি দিয়ে আঘাত করে আমায় মেরে ফেলবি আর আমি চুপচাপ দেখব আর তালি বাজাব?।

আরে তুই এখনো কোন জগতে বিচরণ করছিস রে? আচ্ছা সে যাইহোক! তোর তো জানার বড্ড শখ আমি তোকে খুঁজে পেলাম কীভাবে? তো শুন।
এই বলে ডান হাতে বন্দুক ধরে চেয়ারে বসে পড়লেন যাবেদ। বলতে লাগলেন তিনি,

প্রতিটি খুনের ছবিগুলো বাসায় সিক্রেট রুমে টাঙানো অবস্থায় রেখে রিসার্চ করতেন যাবেদ। এমন কোনো ক্লু আছে খুনের সাথে সম্পৃক্ত যেটা চোখে পড়ছে না তাদের। গভীর ভাবে সকল কিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন তিনি। গতকাল যখন যাবেদের বাসায় হুডি পরিধান করে প্রবেশ করেন মাইকেল তা দূর থকে লক্ষ্য করছিলেন যাবেদ। অতঃপর গাড়ী দেখে বন্দুক তাক করে নাম্বার প্লেট তাক করে গুলি ছুড়লেন। গুলিটি সোজা আঘাত হানে নাম্বার প্লেট আটকানো নাটে। গুলিটি নাটে আঘাত হানতেই ভেঙে যায় নাট। যার ফলে নাম্বার প্লেটটি খুলে নিচে পড়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই বাসা ত্যাগ করলেন হুডি পরিধেয় অজ্ঞাত লোকটি। দ্রুত পাশের বাসা থেকে নিজের বাসার দিকে ছুটতে লাগলেন যাবেদ। বাসায় প্রবেশ করেই প্রথমে নিচে পড়ে থাকা নাম্বার প্লেটটি হাতে তুলে নিয়ে এক পলক দেখে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলেন। রুমে প্রবেশ করে তেমন কিছুই পেলেন না যার জন্য একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি বাসার ভেতরে প্রবেশ করবে। রুমের সকল বস্তুগুলো তার নিজ নিজ স্থানেই রয়েছে। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে তিনি তার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। লেজার লাইট থাই গ্লাসের মধ্যে ছিদ্র হয়ে থাকা দিয়ে আলোর রশ্মি ফেলে কোন এঙ্গেলে সেদিন বুলেট এসেছিল তা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। হঠাৎ চোখ গেলো পাশের দেয়ালে। কালো ছোট্টো একটি যন্ত্র দেখতে পেলেন তিনি। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বুঝতে পারলেন এটি একটি ক্যামেরা। দ্রুত ফোন করলেন তার নিকটবর্তী বন্ধু আসলামকে। ফোন তুলতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এলো,

-“হ্যালো। আসলাম স্পিকিং।”
-“হ্যাঁ বন্ধু। আমি যাবেদ বলছি। একটি সাহায্যর প্রয়োজন।” বললেন যাবেদ।
-“আরে বল। আর শুনলাম তোর উপর না-কী গুলি হামলা হলো!”ওপাশ থেকে ভেসে এলো আসলামের বলা কথা।
-“হ্যাঁ হয়েছে। সময় করে একদিন তোর বাসায় গিয়ে ঘটনা শুনিয়ে আসব। এবার আমাকে সাহায্যটি কর।”
-“আরে বল কি সাহায্য করতে পাড়ি আমার বন্ধুর জন্য।”বললেন আসলাম।
-“আমি একটি গাড়ীর নাম্বার বলছি। গাড়ীর সকল কিছু ডিটেইলস বের করে আমাকে দ্রুত মেইল কর।”
-“তুই গাড়ির নাম্বারটা বল। আমি এক্ষুনি চেক করে দিচ্ছি।” বললেন আসলাম।

-“ঢাকা.মেট্রো-গ ”
“১০৩-২০২৪৮”
-“আচ্ছা! তুই একটু লাইনেই থাক আমি চেক করে বলছি এবং পাঠিয়ে দিচ্ছি।” বললেন আসলাম।
-“ওকে।”
কিছুক্ষণ পরেই অপর পাশ থেকে আসলাম নামের লোকটি বলতে লাগলো,
-“হ্যাঁ বন্ধু যাবেদ। সব ডিটেইলস আমি মেইল করেছি।”
-“ধন্যবাদ বন্ধু। একদিন আসিস আমাদের বাসায়।” বললেন যাবেদ।

কম্পিউটার থেকে মেইল চেক করে প্রিন্ট আউট করে নিলেন যাবেদ। দ্রুত কালো ছোট্টো ক্যামেরার ইউএসবি ক্যাবল প্রবেশপথে একটি ইউএসবি ক্যাবল প্রবেশ করালেন। অতঃপর আইপি এড্রেস খুঁজতে লাগলেন। কয়েক মুহূর্ত যেতেই খুঁজে পেয়ে গেলেম আইপি এড্রেস। আইপি এড্রেস ট্রাক করে যা জানতে পারলেন তাতে বেশ চমকে গেলেন।

দ্রুত সিক্রেট রুমে প্রবেশ করে টাঙানো ছবিগুলো ভালো করে দেখে বের করতে লাগলেন। বোর্ডে চারটি ছবি টাঙানো আছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে “ই” অপর ছবিতে দেখা যাচ্ছে “ল” তার পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে “মা” তার পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে “কে”। সবগুলো ছবি কালেক্ট করা হয়েছে মৃত দেহের বুক থেকে।

চারটি অক্ষর এক সাথে করলে বিভিন্ন রকম শব্দ তৈরি হয়। রুমে থাকা হোয়াইট বোর্ডের উপর কয়েকটি নাম লিখলেন। কিন্তু মেধা খাটিয়ে দু’টি নাম বাদে বাকি সকল নামগুলো মুছে নিলেন।

প্রথমটি ” মাইলেক” দ্বিতীয়টি লিখলেন “মাইকেল”। নাম্বার প্লেট দিয়ে বেরকৃত ডিটেইলস এর সাথে মিলিয়ে চোখ-মুখে মুক্তা ঝড়ছে যাবেদের। রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছে সে। লাশের উপর অক্ষর গুলো দিয়ে তৈরি হয় ” মাইকেল”। অতঃপর গাড়ীর নাম্বার প্লেট থেকে যে ডিটেইলস পেয়েছে লোকটির নাম “নীল রহমান মাইকেল”। এছাড়াও ডিটেইলস এ বলা আছে নীল রহমান মাইকেলের বাড়ি ঢাকা মীরপুর-২। আইপি এড্রেস ট্রাক করে লোকেশন জানতে পারলেন ঢাকা মীরপুর-২। বেশি ভাবতে হয়নি আর তার। দ্যা থ্রি মন্সটার ইন ওয়ান পিপল। তিনটি সূত্র ধরে এগুলে পাওয়া যায় লাস্ট মাইন্ড গেইমার মিস্টার মাইকেল।
বেশি দেরি না করে বাসার থেকে বন্দুকটি পায়ের তলায় লুকিয়ে পকেটে একটি ছুরি নিয়ে হাঁটতে লাগলেন সামনের দিকে। ধীর পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে বসলেন। মুটামুটি গতিতে গাড়ি ছুটে চলেছে সামনের দিকে। রাত ১১ টার সময় গাড়ী থামলো ঠিকানা অনুযায়ী। গাড়ী থেকে নেম দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন।

গভীর রাত সেই সাথে নির্জনতায় ঘেরাও করা পরিবেশ। পায়ের পদদলিতর ফলে খটখট আওয়াজ তুলে এক হাতে ছুরি ও অপর হাত পকেটে পুরে কালো কাপড়ে আবৃত করে গা ঢাকা দিয়ে মাথায় হুডি পরিধেয় করে এগিয়ে চলেছেন যাবেদ। হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সাদা ধোঁয়া আবদ্ধ হয়ে গেল স্থানটি। নিশ্বাস নিতে পারছেন না তিনি। ধীরে ধীরে নিচের দিকে ঢলে পড়তে লাগলো তার দেহটি। হাজার চেষ্টা করেও চোখ খোলা রাখতে পারছেন না। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো তার চোখ। পরবর্তীতে কী হতে চলেছে সে সম্পর্কে অবগত নন তিনি।
পরক্ষণেই নিজেকে আবিষ্কার করেন চেয়ারে বদ্ধ অবস্থায় একটি বদ্ধ রুমে।

এতক্ষণ কথাগুলো বলছিলেন যাবেদ। স্মৃতিচারণ থেকে বাস্তবে ফিরে আসতেই লক্ষ্য করলেন বুকে গাঁথা ছুরিটি হাতে নিয়ে তার উদ্দেশ্যে আঘাত হানার জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছেন মাইকেল। ‘একটা মানুষ যখন পুরনো স্মৃতিচারণ করেন তখন বাস্তবে ফিরে এলে-ও তার মাঝে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। যার ফলে সে বিচক্ষণতার দৃষ্টিতে সকল কিছু দেখে উঠতে পারেন না।’ তার কথাটাই তার বিরুদ্ধে দাঁড় করালেন মাইকেল। তবে বেশি কিছু না ভেবে যাবেদ হাতে থাকা বন্দুকটি উপরে তুলে তাক করলেন মাইকেলের কপাল বরাবর। যেইমাত্র তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন তখনই ট্রিগার চাপ দিলেন তিনি। “ঠাস” করে একটি শব্দ হলো। অব্যর্থ নিশানা। কপালের মধ্যস্থানে আঘাত হানল গুলিটি। কপালে গুলিবিদ্ধ হতেই সেখানেই পড়ে গেলেন মাইকেল। দেহটি দু’টি কাঁপুনি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেল।

পকেটে হাত দিতেই নিজের ফোনটির আভাস পেল। অবশ্য তার কারণ রয়েছে। পকেটটি বেশ সিক্রেট ভাবে তৈরি বলা যায়। স্বাভাবিক ভাবে হাতালে কেউ বুঝবে না ভেতরে কিছু আছে। ফোন বন্ধ হয়ে আছে দেখে চালু করলেন। বাড়ির কাছে গাড়ী থামতেই ফোনটি অফ করে নিয়েছিলেন তিনি। কি উদ্দেশ্য ছিলো তার সেটা বুঝা যাচ্ছে না। ডায়েল লিস্ট নাম্বার থেকে একটি নাম্বার তুলে কল দিতেই কিছুক্ষণের মাধ্যেই কলটি রিসিভ হলো। রিসিভ হবার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো কেবল কান্নার আওয়াজ। বেশ বিচলিত হয়ে গেলেন যাবেদ। বলে উঠলেন তিনি,
-“কি হয়েছে অলিন। কান্না করতেছ কেন?”
তবুও কান্না করেই যাচ্ছে ওপাশে থাকা মানুষটি। এবার বেশ রেগে গিয়ে বললে যাবেদ,
-“তুমি কি কান্না করতেই থাকবে? যদি তাই হয় তবে ফোন কেটে দিচ্ছি।”
-“এই না না। প্লিজ কল কেট না। আমি কান্না করছি না দেখ।” বলে উঠলেন অলিন।
-“এই তো আমার সোনা বাবুটা। আচ্ছা আমি আসছি।”
-“তোমার কিছু হয়নি তো? আর এখন কোথায় তুমি? দু’দিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে আমাকে না বলে?” বলে উঠলেন অলিন।
-“সে লম্বা কাহিনি। সেটা আগামী বাসর রাতে সারারাত ভরে বলে শোনাবো।”

যাবেদ কথা শেষ করতেই হাতে গান নিয়ে একদল পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করল। যাদের মাঝে আছে রফিক এবং অর্নব। যাবেদ উল্টোদিকে ঘুরে আছে তার পেছনে পুলিশগুলো এসে বন্দুক তাক করে বলল,
-“হ্যাডস আপ। ড্রপ দ্যা গান। আই সেইড ড্রপ দ্যা গান।”

হঠাৎ করেই তেজস্ক্রিয় আলো দিয়ে ভেতরে কেউ একজন হেঁটে প্রবেশ করলেন। সবাই সেদিকে তাকালেন।কিন্তু আগন্তুকের চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কিছু কদম হেঁটে সামনের দিকে অগ্রসর হতেই লোকটির দেখা মিললো। এ আর অন্য কেউ নয়। হাত বন্দুক নিয়ে হেলতে দুলতে সামনের দিকেই এগিয়ে আসছে তাবিব। সকলে অবাক হয়ে গেল। তিনি তো মারা গিয়েছিলেন। তবে তিনি এখানে কীভাবে? সকলেই বেশ অবাক হয়ে আছে কারো মুখেই কোনো বুলি নেই। আর তা দেখে গগনবিদারী অট্টহাসি দিয়ে পেছন দিকে ঘুরে বলতে লাগলেন যাবেদ,

-“১৮০° কোণ এঙ্গেল। ইটস শো টাইম।”
,
,
,
— ” সমাপ্ত ” —
— ” খুন ” —
— ” যাবেদ খাঁন আবু বকর ” —

চলবে

আমি জানি, আমি ভালো লিখি না। আমার লেখা গল্পকে এক দিক থেকে অখাদ্য-কুখাদ্য বলা যায়। তবুও যারা আমাকে এই পর্যন্ত আসতে সাপোর্ট দিয়েছে। সাহায্য করেছেন তাদের জন্য রইলো আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। এতদিন সকলেই কমবেশ কমেন্ট করেছেন। আমি আজকে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি গল্পটি সম্পর্কে বলে যাবেন। রেটিং করবেন গল্পটি নিয়ে। আপনার কতটুকু মন ছুঁতে পেরেছি গল্পটি তা বলবেন। আর আমি সকলের কাছে অনুরোধ করব সকলে একটি করে অন্তত রিভিউ দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here