খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,অষ্টম পর্ব

0
207

খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,অষ্টম পর্ব
গল্প:- মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর

উনিশ.
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে ঘরে ফিরে আসেন ফারহান আহমেদ। ঘরে আসার আগে মেয়ের ঘরে এক নজর দেখার জন্য গিয়েছিলেন। মেয়ে ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে। বিরক্ত করার ইচ্ছে জাগল না তার। কিছুক্ষণ পর রাহেলা তার হাতের কাজকর্ম সেড়ে ঘরে ফিরে এলেন। এসে দেখেন, ফারহান বিছানায় শুয়ে পড়েছেন। খাটের কাছে যেতেই তাকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন তিনি। এরপর টেনে নিলেন নিজের কাছে। বুকের সাথে মিলিয়ে রাখলেন তাকে। ঘাড়ে মুখ গুঁজে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন ফারহান,
‘ তা মহারানির কি রাগ অবশেষে কমেছে? ‘
কোনো প্রত্যুত্তর দিলেন না রাহেলা। তিনি আবেশে জড়িয়ে গেছেন। ফারহান ঘাড়ে চুমু দিতে দিতে পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন,
‘ মহারানির কি রাগ ভাঙেনি?’
ঘোর লাগা কণ্ঠ থেকেই জবাব দিলেন রাহেলা,
‘ ভেঙেছে। তবে অল্প। এখনও রাগ কমেনি পুরোপুরি। ‘
নিজের দিকে তাকে ঘুরিয়ে নিলেন ফারহান। ঠোঁটে আলতো করে চুম্বন করে বললেন,
‘ এই প্রজা তার মহারানির জন্য কী করতে পারে? ‘
প্রত্যুত্তরে একটি চুমু উপহার দিয়ে রাহেলা বললেন,
‘ আপাতত প্রজার ভালোবাসা হলেই হবে। এরপর অন্যকিছু নিয়ে ভাবা যাবে। ‘

হেসে ওঠেন দুজনে। তাদের দুজনের সংসার যেন ভালোবাসা দিয়ে কানায় কানায় ভরতি। মাঝেমধ্যে কাজের চাপ পড়ায় ফারহানের উপর রাগ-অভিমান জমে রাহেলার। কিন্তু তা দীর্ঘ হতে পারে না কোনোবারই। অবশ্য তার রাগ-অভিমান যখন-তখন হয় না। একাকীত্বে ভুগলেই তার এই সমস্যাটা বেড়ে যায়। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসার পর সম্পূর্ণ বাসা খালি হয়ে যায়। কখনো কাজ করতে করতে সময় পার হয়ে যায়। আবার কখনো কাজ শেষ হয়ে যাবার পরেও সময় ফুরোয় না। বিরক্তি ধরে আসে তার। তখনই মনের মাঝে অভিমান জমতে শুরু করে। শুধু শুধু ফারহানের উপর রাগ করে থাকেন। এমনিতে তিনি বুঝতে পারেন, ফারহান প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝে আছে। তবুও তার মন মানতে চায় না। মন-মস্তিষ্ক তখন একটা কথাই বলে, ফারহানকে যে কোনো মূল্য আসতে বল। সকল কাজ ফেলে রেখে তোর কাছে বসে থাকতে বল। ফারহান প্রথম প্রথম তার এই পাগলামিকে মেনে নিলেও ধীরে ধীরে মানাতে শুরু করে। সবসময়ই যদি তার পাগলামিকে মেনে নেয়। কখনো অর্ধেক অফিসে করে বাসায় ফিরতে হয় কিংবা কখনো অফিস কোনো রকম করতেই ফিরতে হয়। তবে তো সমস্যা! একজন জনসেবক হয়ে তিনি যখন-তখন বাসায় আসতে পারেন না। তাছাড়া চাকরি করলে সমস্ত কিছুর জবাবদিহিতা করতে হয়। একদিন দুদিনের ব্যাপার হলে মানা যায়। কিন্তু প্রতিনিয়ত হলে তা মানা অসম্ভব।

‘ আমার আরেকটা বাবু চাই। ‘ ফারহানের ঠোঁটে গাঢ় করে চুম্বন দিয়ে শেষে এই কথাটি বললেন রাহেলা। ফারহানও আগেই বুঝতে পেরেছিলেন, তার কাছে রাহেলা কী চাইবে বা চাইতে পারেন। একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য হলেও একজন সঙ্গী প্রয়োজন। বাড়িতে দুজন সিকিউরিটি গার্ড থাকলেও রাহেলার সাথে কথা বলার মতো মানুষের বড্ড অভাব। তাছাড়া কাজের মহিলাটি যতক্ষণ থাকেন, তিনি তার কাজে ব্যস্ত থাকেন। কাজ শেষ করে চলে যান। এসব ভাবতে ভাবতে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন ফারহান। রাহেলা পুনরায় তার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলেন,
‘ এত কী চিন্তা করছেন আপনি? খুব বেশি কিছু চেয়েছি আপনার কাছে? আমার এই ছোট্টো আবদারটা আপনি পূরণ করবেন না? ‘
রাহেলার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে নেন ফারহান। এরপর বলেন,
‘ কখনো কি তোমার কোনো চাওয়া অপূর্ণ রেখেছি? ‘
মৃদু স্বরে জবাব দিলেন রাহেলা,
‘ না। ‘
‘ তাহলে আপনার কেন মনে হলো, আমি আপনার আবদার পূরণ করব না? ‘
‘ যেভাবে ভাবতেছিলেন। এ দ্বারা কী বুঝা প্রয়োজন আমার? ‘
একটি মুচকি হাসি উপহার দেন ফারহান। ঠোঁটে পুনরায় একটি আলতো চুমু খেয়ে বলেন,
‘ মহারানি, আপনাকে চিন্তা করছিলাম। আপনার একাকীত্ব সময়গুলো পার করার জন্য একজন সঙ্গী প্রয়োজন। তা নিয়েই ভাবছিলাম। ‘
নিজের চাওয়া পূরণ হতে দেখে খিলখিল করে হেসে ওঠেন রাহেলা। দুজনে মিলে হারিয়ে যান স্বামী-স্ত্রীর এক পবিত্র রাজ্যে।

বিশ.
সন্ধ্যার দিকে গোসল করে আবার বেরিয়ে পড়েন ফারহান। তবে তিনি তার কোনো টিম নিয়ে বের হননি। একাই বেরিয়ে পড়েছেন। উদ্দেশ্য এখন সেখানে যাওয়া, যেখান থেকে এই কেসের সকল সূত্রপাত শুরু হয়েছে। মিনিট পনেরো পরেই পৌঁছে যান সেই স্থানে। ইতোমধ্যে ভালোই আঁধার নেমে এসেছে। চারিদিকে তেমন কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। ফারহানের এই সময় এখানে আসার কারণ সাধারণ মানুষের কাছে পাগলামি মনে হবে। কিন্তু সে ভিন্ন নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করেন, যেই দৃশ্য আলোতে দেখা যায়নি বা খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেই দৃশ্য অন্ধকারে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। গাড়ির হেড লাইট সবগুলো অন করে দেন। জায়গাটা এখনও নো এন্ট্রি এরিয়া দেওয়া। ভেতরে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফোনের লাইটটিও অন করে নো এন্ট্রি করা সম্পূর্ণ স্থানটা একবার ঘুরে আসেন। নো এন্ট্রির বাহিরে রাখা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। গাড়ির ফ্রন্ট ডিকির উপর আধ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কল্পনায় খসড়া স্কেচ প্রস্তুত তৈরি করলেন। হুবহু ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলোর সাথে মিলে গেল তার স্কেচ। আচমকা তার ফোনে কল আসে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখেন আননোন নাম্বার থেকে কলটি এসেছে। দ্রুত রিসিভ করে কানে তুলে নেন। স্বাভাবিক স্বরে বলতে লাগলেন,
‘ হ্যালো! ‘
ওপাশ থেকে উৎফুল্ল কণ্ঠে ভেসে আসে,
‘ স্যার, আমি রায়ানের স্ত্রী আদিবা বলছিলাম। ‘
কলকারীর পরিচয় পেয়ে একটু অবাক হলেন। তবুও ভদ্রতাসূচক বললেন,
‘ জি বলুন। ‘
আদিবা অস্বাভাবিক হয়ে বলতে লাগল,
‘ স্যার, আপনি বলছিলেন, রায়ান, আব্বা আর রবিন স্যার কোনো কিছুতে জড়িত ছিল কি না। এটা এই কেসের সাথে কোথায় সম্পৃক্ত তা আমার জানা নেই। কিন্তু কেন যেন মনে হলো, এই ঘটনাটা আপনাকে জানানো উচিত। ‘
উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন ফারহান,
‘ জি কোন ঘটনা? বলুন। ‘
ওপাশ থেকে আদিবা একটু থেমে বড় দম নিয়ে বলতে শুরু করে,
‘ গত কয়েকমাস আগে একটা বিজনেস মিটিং হয় আমাদের বাসায়। সেখানে একজন লোক ইললিগ্যাল ড্রাগ সাপ্লাই করতে চাইছিল। এরজন্য তাদের তিনজনের সহোযোগিতা চেয়েছে। কিন্তু তারা তার সাথে চুক্তি ক্যান্সেল করে দেয়। ওই লোকটি সেদিন বেরিয়ে যাবার সময় বলে গিয়েছিল, তাদেরকে দেখে নেবে। ‘
চিন্তিত হয়ে পড়লেন ফারহান। আদিবার কাছে জানতে চাইলেন,
‘ আপনার কেন মনে হলো, এই খুনগুলোর পেছনে ওই লোকটির হাত থাকতে পারে? ‘
প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে থেমে গেল আদিবা। তার জবাব শোনার জন্য অপেক্ষা করলেন ফারহান। কিছু সময় সে বলতে লাগল,
‘ কেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু মনে হয়েছে। ‘
‘ ঠিক আছে। বুঝতে পেরেছি। কবে নাগাদ কিংবা কত তারিখে মিটিংটা হয়েছিল সঠিক মনে আছে আপনার? ‘
আদিবা একটু সময়ের জন্য থামে। ভাবনা চিত্তে প্রবেশ করে। আচমকাই বলে ওঠে,
‘ স্যার, গত মাসের প্রথম দিকে। তিন থেকে চার তারিখের মধ্যেই হবে। ‘
আগ্রহী কণ্ঠস্বর নিয়ে ফারহান বলতে লাগলেন,
‘ ঠিক আছে। আপনি অপেক্ষা করুন। আমি আসতেছি। ‘

ফোনটা কান থেকে নামিয়ে পকেটে পুড়ে নেন। মার্ডার স্পটের দিকে পুনরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে একবার দেখে গাড়িতে উঠে গেলেন তিনি। ঘাড় ঘুরিয়ে নজর দিলেন স্টেয়ারিংয়ে। ভাবতে লাগলেন গাড়ি স্টার্ট করে, এখন কোথায় তার যাওয়া উচিত। থানায় নাকি এমপির বাড়ি। গাড়ি নিয়ে ছুটতে শুরু করলেন ভাবনা স্থীর করে এমপির বাড়ির দিকে। পথিমধ্যে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন নিজে। তার কোথায় মিসিং হচ্ছে! কোন ক্লুটা তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন! ভাবনাতে বিভোর হয়ে গেলেন। বেশ কিছু দূর এগুতেই দেখতে পেলেন, কালো রঙের একটা ব্ল্যাক রেঞ্জ রোভার ব্র্যান্ডের একটা গাড়ি বুলেটের গতিতে তার পাশ কেটে উলটা পথের উদ্দেশ্যে ছুটছে। সাধারণ গতির তুলনায় অতিরিক্ত দেখে মস্তিষ্কে কিছু সময়ের জন্য বিরূপ চিন্তার জন্ম নিলো। কিন্তু তা দীর্ঘায়িত হলো না। তার কেসের চিন্তায় হারিয়ে গেলেন। তিনি যেখান থেকে রওনা দিয়েছেন, সেখান থেকে এমপির বাসা কম করে হলেও সাড়ে আট থেকে নয় কিলোমিটার হবে। গাড়ির গতি ঘণ্টায় আশি কিলোমিটার হলেও কম করে ১০ মিনিট লাগবে পৌঁছাতে। ফারহান যতটা সময় ভেবে নিয়েছিলেন তিনি তার আগেই পৌঁছে গেছেন। রাতের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাড়ির চারপাশে আলো জ্বলে আছে। কিন্তু মানুষের আনাগোনা নেই। আচমকা হেসে দিলেন তিনি। হাসার কারণ উপলব্ধি করলে লক্ষ্য করা যায়, মানুষের আনাগোনা নেই দেখে হেসে ফেলেছেন। ব্যাপারটা একদিক থেকে স্বাভাবিক আবার অন্যদিক থেকে অস্বাভাবিক।

মানুষ জীবিত অবস্থায় তার জন্য কত মানুষ কিংবা কত ক্ষমতা তা প্রকাশ করায় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না। এমপি রজবানের বাসা অধিকাংশ সময় বিশেষ দিন ছাড়া অধিকাংশ সময়েই মানুষের আনাগোনার রেশ লেগেই থাকত। অথচ তার মৃত্যুর পর সেই আনাগোনা আর নেই। তার বিদায়ের পর মানুষও তার নাম, খ্যাতি, যশ ভুলতে বসেছে। আর ভোলাটাই স্বাভাবিক। এটাই দুনিয়ার নীতি বলা যায়। তবে ফারহান বেশ অবাক হলেন। গেটের কাছে বেশ দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু কেয়ারটেকারের কোনো খবর নেই। হর্ন বাজানোর পরেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই! এমনটা তো হবার কথা নয়। নিজেকেই তিনি প্রশ্ন করে বসলেন, ‘ কেয়ারটেকারও কোথাও গিয়ে মরল নাকি? নাকি তারে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে? ‘
নিজের এহেন চিন্তাধারা দেখে নিজের প্রতিই বিরক্তি চলে এলো তার। কী সব ভাবছেন তিনি? আরও বেশ কয়েকবার গাড়ির হর্ন বাজালেন। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এমপি রজবানের বাড়িটা নিরিবিলি প্রাকৃতিতে ঘেরা দেখে আশেপাশে তেমন কোনো মানুষের আনাগোনাও নেই। বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেটের দিকে এগোলেন। ছোটো গেটে টোকা দিতেই গেটটা খুলে গেল। গাড়ি বাহিরে রেখেই গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখলেন। গেট পার করে টাইলসের তৈরি রাস্তায় পা রাখতেই নজর যায় ডান দিকে। নীল রঙের ড্রেস পরে ইন করা একজন লোক পড়ে আছে। পোশাক-আশাক থেকে মুহূর্তের মাঝেই নির্বাচন করতে সক্ষম হলেন, লোকটি একজন কেয়ারটেকার। কিন্তু তাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে কিছুই বুঝতে পারলেন না। লোকটা সামনে ঝুঁকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা কেয়ারটেকারকে সোজা করতেই আঁতকে উঠেন তিনি। স্বানুভাব অনুযায়ী আঁতকে ওঠাটাই স্বাভাবিক। লোকটার কপাল মাঝ বরাবর গর্ত হয়ে আছে। রক্তগুলো চুইয়ে চুইয়ে রাস্তার পাশে বাড়ন্ত ঘাসের মাঝে মেখে গেছে। সতর্ক হয়ে ওঠে ফারহানের মস্তিষ্ক। দ্রুত দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। বেল্টের সাথে সংযুক্ত হোলস্টার থেকে বন্দুক হাতে নিয়ে লক করে নিলেন। একজন দক্ষ গোয়েন্দা বেশে বন্দুক হাতে ছুটে গেলেব বাড়ির দিকে। কিন্তু বাড়ির গেটের কাছে আসতেই অবাক হয়ে পড়েন। চারজন গার্ডের লাশ পড়ে আছে সেখানে। স্বল্প সময়ের জন্য মস্তিষ্কে কাজ করা বন্ধ করে দিলেও মুহূর্তের মাঝে মস্তিষ্ক উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। বাড়ির ভেতরে ঢুকেন তিনি।

একুশ.
একে একে নিচ থেকে শুরু করে দোতলা অবধি প্রত্যেকটা ঘর খুঁজে খুঁজে দেখতে লাগলেন। কিন্তু আশানুরূপ কিছুই পেলেন না। এমনকি আদিবাকেও কোথাও খুঁজে পাননি। ব্যাপারটা তার কাছে ধোঁয়াশার মতো মনে হলো! এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কে বা কারা দায়ী তাও বুঝতে পারতেছেন না তিনি। এটা কি আদিবার কোনো চাল নাকি আদিবা কিডন্যাপ হয়েছে? মস্তিষ্কে এ ধরনের প্রশ্নের জন্ম নিতে বেশি সময় লাগল না। হাতে বন্দুক ধরে রেখেই পকেট থেকে ফোনটা বের করলেন। বলে উঠলেন, ‘ হেই সিরি, কল সাইমুন। ‘

ফোনে কমান্ড দেওয়ার সাথে সাথে অটোমেটিক কল চলে গেল সাইমুনের নাম্বারে। কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে ঝুলিয়ে পকেটে ফোন পুড়ে নিলেন। দুই হাতের তর্জনীর আঙুল বন্দুকের ট্রিগারের কাছে রেখে পুনরায় ঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলেন। দুটো রিং হতেই ওপাশ থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে কল রিসিভ করল সাইমুন। তার হাঁপানি এরকম সিচুয়েশনেও অনুভব করতে পারছেন ফারহান। তিনি কিছু হলে ওঠার আগেই ওপাশ থেকে সাইমুন বলতে আরম্ভ করে,
‘ আপনিই কল দিয়েছেন! ভালো হয়েছে। আমি এখন আপনাকেই কল করতাম। ‘
এরকম পরিস্থিতির মাঝেও ফারহান বেশ অবাক হলেন তার কথা শুনে। বলতে লাগলেন,
‘ আমাকে কল দিতে! কিন্তু কেন? আর এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন তুমি? কী হয়েছে? ‘
সাইমুন যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। বারবার গুলিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটার এই একটা সমস্যা। কোনো চমকানোর মতো খবর শুনলে বা দেখলে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারে না। উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে লাগল,
‘ রায়ানের স্ত্রী আদিবাকে কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে। লাইভে… লাইভে ওর নগ্ন দেহ দেখানো হচ্ছে। চেয়ারে হাত পা বাঁধা। ‘ এতটুকু বলেই থেমে যায় সে। তার গলা দিয়ে এই কথাটুকু বের করে আনতে বহু ফুরসত পেরুতে হয়েছে। তার কথা শুনে অবাক হন ফারহান। তৎক্ষণাৎ তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন,
‘ লোকেশন ট্র‍্যাক করতে পেরেছ ওদের? কোথায় আছে? ‘
সাইমুন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে লাগল, ‘ জি স্যার, ওদের লোকেশন ট্র‍্যাক করতে পেরেছি। লাইভের লিংক এবং লোকেশন দুটোই আপনার টেলিগ্রামে দিয়ে দিয়েছি। ‘

ফারহান দ্রুত ডান হাত বন্দুক থেকে সরিয়ে পকেটে ঢুকায়। ফোন বের করে দ্রুত ডাটা অন করে। বাম হাতে বন্দুক রেখেই টেলিগ্রাম অ্যাপে ঢুকে। ফেসবুকের লিংকটা প্রথমে ভিজিট করে। লাইভ চলছে। ইতোমধ্যে হাজার দশেক মানুষ লাইভটি দেখছে। কেউ হাহা দিচ্ছে তো কেউ এংরি। আদিবাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে চেয়ারের দুই হাতলে তার হাত দুটো বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশে একটা টেবিল নজরে আসছে। যেখানে একজন মানুষকে টর্চার মতো বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র রয়েছে। হাতে ব্লেড নিয়ে একটা ছেলে আচমকা আদিবার ডান বক্ষের উপর পোঁচ দেয়। গলগল করে রক্ত ঝড়তে থাকে! চিৎকার করে ওঠে আদিবা। ব্যথায় ছটফট করতে থাকে সে। তাকে এমন ছটফট করতে দেখে লোকটা খিলখিল করে হেসে ওঠে। আচমকা পুনরায় বাম বক্ষে পোঁচ দেয়। সুডৌল ও মৃদু ঝুলে থাকা স্তনদুটো ব্লেডের পোঁচ লাগা মাত্রই চামড়া থেকে অর্ধেক আলগা হয়ে পড়ে। রক্ত দিয়ে চারিপাশ মেখে যাচ্ছে! আদিবার চিৎকারে কান ফেটে যাবার মতো অবস্থা। ব্যথায় চিৎকার দিয়ে আচমকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফারহান যেন ঘোরে আটকে গেছেন। একটা মেয়েকে তার স্তনযুগলে আঘাত কী করে করতে পারে! তাও ব্লেড দিয়ে চামড়া থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার উপক্রম! ঘোর কাটে সাইমুনের ডাকে। ওপাশ থেকে সাইমুন স্যার স্যার বলে ডাকতে আরম্ভ করে। এই ভয়ানক ভিডিও তবে সে-ও দেখেছে! এর কারণেই তার কণ্ঠস্বর তখন এত অস্বাভাবিক লাগছিল।

ঘোর ভেঙে লাইভ থেকে বেরিয়ে দ্রুত লোকেশন লিংকে ভিজিট করে। তিনি একটু আগে যেই জঙ্গল থেকে আসছিলেন, সেই জঙ্গলেরই ভেতর দিকে দেখাচ্ছে। দেরি না করে বন্দুকটা আনলক করে হোলস্টারে রেখে দেন। এরপর দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন। দৌড়াতে দৌড়াতে সাইমুনের উদ্দেশ্যে বলতে লাগেন।
‘ সাইমুন ‘ ওপাশ থেকে ভেসে আসে, ‘ জি স্যার!’ ফারহান তার সম্পূর্ণ কথা বলতে লাগলেন, ‘ আমি লোকেশনে যাচ্ছি। তুমি থানার ৩০ জনকে তিনটা ইউনিটে ভাগ করে একটা ইউনিট পাঠিয়ে দাও এমপি রজবানের বাড়ি। বাকি দুই ইউনিট নিয়ে তুমিসহ লোকেশনে আসো। ‘
ওপাশ থেকে কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল সাইমুন, ‘ স্যার, এমপি রজবানের বাড়িতে ইউনিট পাঠানোর কী দরকার? ‘
রেগে গেলেন ফারহান। গাড়িতে উঠে বসতে বসতে বললেন,
‘ সব প্রশ্নের জবাব কি তোমার কাছে দিতে হবে? তোমাকে যেটা করতে বলেছি। সেটা করো। এত প্রশ্ন করো কেন?’
দুঃখ প্রশ্ন করল সাইমুন। নরম কণ্ঠে বলল, ‘ সরি স্যার, পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর আমরা ইতোমধ্যে রওনা দিয়ে দিছি। ‘
আর কিছু বলল না। কল কেটে দিয়ে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিলো। ইতোমধ্যে এগারোটা বেজে গেছে। এত সময় কীভাবে কেটে গেল তার মাথায় আসছে না। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। খালি রাস্তা পেয়ে গাড়ির গতি যেন সাধারণের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গাড়ি ছুটছে তার উদ্দেশ্যে। ফারহান নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে। তার লক্ষ্য এখন একটাই, যত দ্রুত সেখানে পৌঁছে এই অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করা যায়।

– চলবে –

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here