খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,পঞ্চদশ পর্ব

0
330

খুন সিরিজ তৃতীয় সিকুয়েন্স,পঞ্চদশ পর্ব
গল্প:- মাস্টার অব মাইন্ড গেম
লেখা:- যাবেদ খান আবু বকর

চৌত্রিশ.
‘ আপনার ফোনে লাগাতার বেশ কয়েকদিন এবং বেশ কয়েকবার প্রাইভেট নাম্বারটির সঙ্গে কথা হয়েছে। ‘ একটি কাগজ এমপি পদপ্রার্থী কামালের দিকে ছুড়ে দিলেন। লাগজটির মাঝে এগারো ডিজিটের অসংখ্য নাম্বারসহ সময় এবং আরও বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত রয়েছে। তন্মধ্যে সবুজ রঙের হাইলাইটার পেন দিয়ে খোঁচা দিয়ে রাখা হয়েছে একটি নাম্বার। অবশ্য নাম্বার বলা যায় না। ওটাতে কোনো নাম্বার নেই। প্রাইভেট নাম্বার নামে নাম্বারের ঘরটি পূর্ণ করে রেখেছে। প্রত্যেকটি কল এবং কল টাইম অবধি হাইলাইট করা হয়েছে। কাগজটি লোকটির দিকে এগিয়ে দিলে চেয়ারের ব্যাক রেস্টে হেলান দিলেন। জেল পেন নিয়ে ঘুরাচ্ছেন হাতে। আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন সামনে বসে থাকা লোকটির গতিবিধি। তার পাশের চেয়ারে বসে আছেন জুনিয়র অফিসার ফারহান। তারা তিনজনে একটি বদ্ধ কক্ষে বসে আছেন। দশ বাই দশ ফুটের একটি ঘর। খুবই ছোট, তবে ভেতরটা কালো রঙে আবৃত করা হয়েছে। যেন কক্ষের অন্ধকারত্বে পরিমাণটা আরও বিস্তর হয়েছে। সহন ভাষায় বললে কক্ষটিকে একটি ইন্টারোগেশন রুম বলা যায়। মধ্যখানে একটি চার বাই তিন ফুটের একটি টেবিল। এবং তার দুই প্রান্তে চেয়ার। এক প্রান্তে দুটি চেয়ার। যেখানে বসে আছেন অ্যাজেন্ট এবং তার জুনিয়র। অপরপ্রান্তে বসে আছে এমপি পদপ্রার্থী কামাল।

লোকটি অ্যজেন্টের প্রাশ্ন শুনে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে যায়। যেন এরকমটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। সাধারণত সে একজন এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে যতটা ক্ষমতাবান ভেবেছিল, এবং থানায় এসে যতটা ক্ষমার প্রভাব দেখাবে ভেবেছিল, তার কিছুই হয়নি। উলটো তার ভাবনায় যেন গুড়ে বালি পড়ে গেছে। তার মতো একজনকে এরকমভাবে হুমকি প্রদান করল অফিসারটি, যেন সে ঘোরে চলে গেছে। নিজ আঙিনাতে এরকমভাবে হুমকির শিকার হবে বলে কক্ষনো ভাবেনি। কিন্তু এখন তার হাতে করার কিছুই নেই। থানা থেকে না বেরুনোর আগ পর্যন্ত কিছুই করতে পারছে না সে। তার হাত-পা যেন সম্পূর্ণ রূপে বেঁধে রাখা হয়েছে। এরকমটা অনুভব হচ্ছে তার। তাছাড়া তার সামনে বসে থাকা অফিসারটি প্রতি শব্দই তার হৃৎপিণ্ড হতে রক্ত সঞ্চালন ক্ষণে ক্ষণে বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। গম্ভীর স্বরে কথাও যে একটা মানুষ এভাবে অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলতে পারে, তা এই অফিসারকে না দেখলে কোনোদিনই অনুধাবনের অবকাশ পেত না। তার শরীর ঘামছে দেখে আরও অবাক হয়ে গেল। সামান্য একটা অফিসারের হুমকিতে তার এই হাল হবার কথা তো মোটেও ছিল না! শরীর থেকে চিকন করে শীতল পানি মাথা থেকে নিচ দিকে নেমে যাচ্ছে। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাচ্ছে চিকন একফোঁটা ঘাম। যা তাকে আরও কম্পিত করে দিচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সে। কিন্তু পারছে না। মনে হচ্ছে মনের ভেতর থেকে ভয় জেগে উঠেছে। মন যেন তাকে বারবার নির্দেশ করছে, এই অফিসারকে ভয় পাও। ভয় পাও এই অফিসারকে।

অ্যাজেন্ট তার উদ্দেশ্যে সফল। লোকটিকে তিনি ভয় পাইয়ে দিতে সক্ষম। মৃদু ঘামে ভেজা লোকটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। টেবিলের উপর ঢেকে রাখা গ্লাসটির দিকে নজর দিলেন। এরপর ঢাকনাটি তুলে রাখলেন নিচে, এবং গ্লাসটি বাড়িয়ে দিলেন লোকটির দিকে। গ্লাসটি দেখতে পেয়ে লোকটি যেন থাবা মেরে নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নিলো। এরপর এক ঢোকে গিলে নিলো গ্লাসের সম্পূর্ণ পানিটুকু। পানি খেতে পেরে লোকটি যেন আরাম বোধ করল। একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে ফের একই বিষয়ে কথা বলতে আরম্ভ করলেন অ্যাজেন্ট যাবেদ,
‘ আপনি কি জানাবেন, কারা এরা? আর কেন আপনাকে কল দিত? তাছাড়া আপনার সাথে এত কীসের কথা হতো তাদের সাথে? ‘ থামলেন তিনি। নিজের জন্য নয়। বরং লোকটির জন্য। এতগুলো প্রশ্নই সে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই। তার উপরে আরও কিছু প্রশ্ন করলে হয়তো মানসিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। এই মুহূর্তে এই সাসপেক্ট তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন।
লোকটি কম্পিত স্বরে বলতে আরম্ভ করে,
‘ আ…আমার সাথে তেমন কোনো ক..থাই হয়নি। কয়দিন আগে যেন কল দিছিল, কল দিয়া কয়, হেগো একটা কামে সাহায্য করে দিতে। আমি মানা কইরা দিছি। হেরলেইগা আমারে নানান হুমকি ধামকি দিছে।’ বহু কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে জবাব প্রদান করল লোকটি। প্রত্যুত্তর দিয়েই সে অফিসারের দিকে তাকাল। বুঝার চেষ্টা করল অফিসারের ভাব-ভঙ্গি। তিনি কি তার কথা বিশ্বাস করেছে? কিন্তু বুঝতে পারল, তার কথা বিশ্বাস করেনি অফিসার।
‘ মিথ্যে গল্পটা সুন্দর ছিল। কিন্তু অ্যাক্টিংয়ে আপনি বড্ড কাঁচা। আরেকটু খিলাড়ি হয়ে আসা উচিত ছিল আপনার আমার সামনে। এত কাঁচা খেলোয়াড় দিয়ে কি আর একজন মাস্টারকে হারানো যায়? ‘ লোকটি দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে মৃদু হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে মন্তব্যটি করলেন অ্যাজেন্ট। এতক্ষণ তিনি লোকটির দিকেই তীক্ষ্ণতার সহিত তাকিয়ে ছিলেন। অবলোকন করছিলেন তার কথার ধরন এবং বাচনভঙ্গি। বডি মুভমেন্ট দেখেই ধর‍তে পেরেছিলেন, গল্পটি নিছক বানোয়াট। কেবলই এখান থেকে নিস্তার পাবার জন্য এরকম একটা নিম্ন মানের গল্প সাজিয়েছে সে। তাছাড়া এমনিতেই সে স্নায়ুচাপে পীড়িত হয়ে ছিল। যার ফলে নিখুঁত অভিনয়টাও হয়নি তার দ্বারা।

লোকটি যেন তার এরকম কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে লজ্জাবতী গাছের মতো নিমিষেই জীবনীশক্তি নিস্তেজ হয়ে গেল। ভাবতে পারেনি, তার মিথ্যেটা এভাবে ধরা পড়ে যাবে। বারবার মনে করার চেষ্টা করল, আজ সকালে কার মুখ দেখে উঠেছিল ঘুম থেকে! সকাল থেকেই ভাগ্য যেন একবারের জন্যও সহায় হচ্ছে না। হুম থেকে উঠতেই আসে ইন্সপেক্টরের কল। এরপর ঝারি শুনতে হয় সামান্য ইন্সপেক্টরের কাছ থেকেও। তবুও ভেবেছিল, থানায় এসে কোনোরকমে বিষয়টা সামাল দেবে এবং উলটো গরম দেখিয়ে দাবিয়ে দেবে। কিন্তু থানায় এসে বরং ঘটে উলটো ঘটনা। যেন সে ইঁদুরের মতো ফাঁদে পড়ে গেছে এবং ফাঁদে ইঁদুরের মতোই মাথা আটকে গেছে। যার হেতু মাথা কিংবা দেহ কোনোটাই নড়াতে পারছে না। তার ক্ষেত্রেও যেন তেমনটাই ঘটেছে। না চলছে মস্তিষ্ক, আর না পারছে সঠিকভাবে অভিনয় করতে। কী হচ্ছে আর কী হবে ভেবেই যেন ভাবনার কোনো তট খুঁজে পাচ্ছে না সে। তার ভাবনার মাঝে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন আসে অফিসারের তরফ থেকে।
‘ প্রাইভেট নাম্বারের লোকগুলোর সাথে আপনার সম্পর্ক কী? কারা ওরা? আর আপনারা মিলে কী পরিকল্পনা করছেন? ‘
লোকটি প্রশ্ন শোনামাত্রই থমকে যান। কেঁপে ওঠে তার দেহ। কীসের কারণে হচ্ছে এই কাঁপুনি এবং এই অনুভতি তা সে নিজেও জানে না। তোতলাতে তোতলাতে প্রত্যুত্তর দেয়,
‘ স্যার, বিশ্বাস করেন, আমি কিছু জানি না। আমার কোনো সম্পর্ক নাই হেগো লগে। কোনো পরিকল্পনাই আমি করি নাই হেগো লগে। ‘ খানিক সময় নিয়ে এতটুকু প্রশ্নের জবাব দেয় সে। কিন্তু এবারও বুঝতে পারেন অ্যাজেন্ট, লোকটি মিথ্যে বলছে। শেষবারের মতো হুমকি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। টেবিলের ড্রয়ার টেনে খুলে ফেললেন তিনি। আগেই লক্ষ্য করেছিলেন এটি। এবং এও বুঝতে পেরেছেন, এই ড্রয়ারের মাঝে কী থাকতে পারে। থানার ইন্সপেক্টর তার জুনিয়র। তারই যে অনুসারী হবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি টেবিলের ড্রয়ারের রাখতেন বিভিন্ন ধরনের ব্লেড, কাটিং প্লাসসহ নানান ধরনের নির্যাতনের অস্ত্র। ড্রয়ার খুলতেই তিনি তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় বস্তুগুলো পেয়ে গেলেন। ড্রয়ারটা সম্পূর্ণ বের করে রাখলেন টেবিলের উপরে। লোকটি যেন দেখেই তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে। বুঝতে পেরেছে, আজ ভয়ানক কোনোকিছুর পাল্লায় পড়েছে সে। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। মুচকি হাসি দিলেন অ্যাজেন্ট। লোকটি যেই চেয়ারে বসেছে সেদিকে নজর দিলেন তিনি। ঘাড়ের কাছে থাকা একটা সূচালো জিনিস নজরে পড়ল। সেদিকে ধ্যান দিলেন না। লোকটির রক্তচাপ কমানোর জন্য খুবই সূক্ষ্মভাবে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে ঘাড়ে। এবং তা এমনভাবেই যে, তিনি তা টেরও পাননি। অবশ্য টের পাওয়ার পরিস্থিতিতেই ছিল না বেচারা। সে এসেই অফিসারের হুমকি শুনে বেকুব বনে গেছিল। তার উপরে ভয়ভীতিও ছিল মনে। ফলে এতকিছুর দিকে দৃষ্টি দেয়নি। ঘাড়ে ছোট্টো পিঁপড়ের কামড়ের মতো অনুভব হলেও সেদিকে ধ্যান দেয়নি হয়তো। কিন্তু তার ধ্যান দেওয়া আর না দেওয়াতে তো আর ঔষধ কাজ করবে না। সে তরল রক্ত পেয়েই দ্রুত মিশে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করল। এবং তিন মিনিটের মাথায় দেহের সম্পূর্ণ রক্তের সাথে মিশে গিয়ে ধীরে ধীরে হৃৎপিণ্ডেরর রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে শুরু করল। যার ফলে লোকটির ঘাম এবং দুর্বল হয়ে পড়া।

লোকটি চেয়ারের হাতলে হাত রেখে একটু শান্ত হবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু যেন কাল হয়ে দাঁড়াল এটি। হাত দুটো হাতলের সাথে মুহূর্তের মাঝে আটকে নিলো একটি রিং। এমনকি পায়ার সাথে তার পা দুটোকেও আটকে নিয়েছে। সে যেন আরও নার্ভাস হয়ে উঠল। চেষ্টা করতে লাগল ছোটার জন্য। কিন্তু কোনো ফলপ্রসূ হলো না। সম্পূর্ণ চেষ্টাই বৃথা গেল। চেষ্টা করল চিৎকার করার, কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। চিৎকার করার মানসিকতা সৃষ্টি করতেই সাথে সাথে ধমক দিলেন অ্যাজেন্ট। ধমকের সুর শুনে ফের চিৎকার দেওয়ার দুঃসাহস দেখাল না। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন অ্যাজেন্ট। পা বাড়ালেন লোকটির দিকে। সাথে টানতে টানতে নিয়ে এলেন চেয়ারটি। লোকটির কাছাকাছি, মুখোমুখি চেয়ারটি রেখে বসে পড়লেন তাতে। অবলোকনের চেষ্টা চালালেন লোকটির দেহের গতিবিধি। চেয়ারে বসেই মুখটা লোকটির মুখের কাছাকাছি এনে কঠিন স্বরে বলতে আরম্ভ করলেন,
‘ ড্রয়ারের ভেতরের অস্ত্রগুলো নজরে পড়েছে নিশ্চই। আপনি ভেবে নিয়েন না, এগুলো কেবল ভয় দেখানোর জন্যই। আপনারা মনে রাখা দরকার, আপনার মতো এমপি পদপ্রার্থী কেন স্বয়ং এমপি রজবানকেও যদি কেসের সিলসিলায় টর্চার করে মেরে ফেলতাম, তাও কেউ বাধা দিতে আসত না। এমনকি ইনকোয়ারিও বসত না আমার উপরে। ‘ একটু থামে। ফের একই স্বরে বলতে আরম্ভ করেন ফারহানকে ইশারা করে, ‘ ও আপনাদের ইন্সপেক্টর। আপনার আন্ডারের থানা এটি। যাচ্ছেতাই ক্ষমতা থাকতে পারে আপনার কাছে। কিন্তু আপনি আমার কাছে যাস্ট সাসপেক্ট আর ছাড়া আর কিছুই না। আমি আবারও পরিষ্কার করে বলে দিই, আপনার ক্ষমতাকে আমি বুড়ো আঙুল দেখাই। ‘

পঁয়ত্রিশ.
কথা শেষ করার আগেই চোখের পলকে ড্রয়ার থেকে কাটিং প্লাসটি হাতে তুলে নেন অ্যাজেন্ট। কিছুই বুঝে ওঠার আগেই লোকটির বুড়ো আঙুলে প্লাস রেখে বেশ করে চাপ দিয়ে বসেন। রক্ত বেরুতে শুরু করল হাত থেকে। প্লাসের ধারালো অংশ থেকে রক্ত চুইয়ে পড়তে লাগল মেঝেতে। কামাল নিজেও বুঝে ওঠার জো-তে নেই। হাতের দিকে তাকাতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে। কিন্তু সেদিকে ধ্যান দেন না তার সামনে বসে থাক্স অফিসার। প্রশ্ন ছুড়েন তার দিকে,
‘ তোর সাথে আর এই প্রাইভেট নাম্বারের সাথে সম্পর্ক কী? এমপি রজবানের মৃত্যুর পেছনে তোর কী হাত আছে? ‘
লোকটা একটু থামতেই আরেকটু প্লাস চেপে ধরলেন তিনি। এতে ব্যথিত অনুভব হয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। পরিশ্রান্ত হয়ে দ্রুত শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে করতে বলে ওঠে,
‘ ব..ব..বলছি, বল..ছি, বলছি…!’
‘ তুই যত দেরি করে প্রশ্নের উত্তর দিবি, তত বেশি তোর ব্লিডিং হবে। আর যত বেশি ব্লিডিং হবে, তত বেশি দুর্বল হয়ে পড়বি। এমনকি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মরেও যেতে পারিস। তাছাড়া আরেকটা কথায় মাথায় রাখিস, তুই কোনো প্রশ্নের উত্তর মিথ্যে বললে আমি তা সহজেই ধরতে পারব, এবং আমি একই প্রশ্ন পুনরায় করব। এতে সময়ও বেশি লাগবে, আবার রক্তও ক্ষরণ হবে বেশি। তাই উত্তর দেওয়ার সময় ভেবেচিন্তে বলিস। ‘

লোকটি হাঁপাচ্ছে, কিন্তু সেদিকে পাত্তা নেই অ্যাজেন্টের। এদিকে চেয়ারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন জুনিয়র। তার মতো চরিত্রের ভূমিকা আপাতত এখানে নেই। তিনি যে এখানে আছে সেটা অনুভবই করার দরকার নেই। কেননা তিনি আপাতত এই জগতের বাসিন্দা হিসেবে নেই। বরং মেয়ের চিন্তায় ভিন্ন মাত্রার রাজ্যে ঘুরে ফিরছেন। সিনিয়র একবার তার দিকে তাকালেন। তার কোনো ধ্যান নেই তাদের দিকে দেখে আর কিছু বললেন না। তিনি তার কাজে লেগে গেলেন।
‘ তোর সাথে প্রাইভেট নাম্বারের লোকগুলোর সাথে কীসের সম্পর্ক? কারা এরা? ‘
লোকটি পুনরায় অনুনয়-বিনয় করে বলতে আরম্ভ করে,
‘ বিশ্বাস করেন স্যার। আমি আসেই জানি না, কারা এরা! ‘
প্লাসটা চাপ দিলেন অ্যাজেন্ট। এবার আর থেমে থাকতে পারল না। বরং বলে দিতে বাধ্য হলো। বহু কষ্টে নিজের অদূর ভবিষ্যৎকে ধূলিসাৎ হতে দেখে কম্পিত কণ্ঠে বলতে আরম্ভ করল,
‘ স্যার, আমি চিনি না ওরা কারা। ‘ ঢোক গিলার জন্য থামে সে। ‘ ওদের সাথে আমার বছরখানেক আগে হুট কইরাই পরিচয় হয়। সামনাসামনি কখনো দেখি নাই। তয় আমার আগের দ্বিতীয় ফোনটাতে কথা হইত। আমার লগে বিভিন্ন বিষয় কথা কইত। ‘
‘ কী বিষয়? ‘ তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করেন অ্যাজেন্ট।

– চলবে –

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here