মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর-১২,১৩

0
960

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর-১২,১৩
মাহফুজা_আফরিন_শিখা
১২

সকাল সকাল রাহনাফকে নিজ বাড়িতে দেখে বেশ অবাক হয় রাহি, সাথে খুশিও হয় অনেক। সে একগাল হেসে রাহনাফের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,

– রাহনাফ তুমি আমার বাড়িতে!

– স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি, স্যার কোথায় আছেন? ব্যাস্ত ভঙ্গিতে জবাব দেয় রাহনাফ।

– বাবাতো তার রুমেই আছে। তুমি যাও আমি তোমাদের দুজনের জন্যে চা করে আনছি। খুশি মনে গান গাইতে গাইতে রান্নাঘরে চলে যায় রাহি। রাহনাফ পুরো ড্রয়িংরুম অবলোকন করে নিয়ে উপরে সৈয়দ নওশাদ আহমেদের রুমের দিকে পা বাড়ায়। কয়েক কদম সামনে এগোতেই দেখা হয়ে যায় রাহির মায়ের সাথে। রাহনাফ তাকে সালাম দিয়ে কোন রকমে তার থেকে চলে যায়। রাহির মা বিড়বিড় করতে করতে ড্রয়িংরুমে চলে আসে। একমাত্র মেয়েকে রান্নাঘরে দেখে অবাকের চরম শিখরে পৌঁছে যায় সে। মুখে হাত দিয়ে অবাক নয়নে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ধীর পায়ে মেয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ান তিনি। অতঃপর বলেন,

– বাড়িতে এতজন সার্ভেন্ট থাকতে তুমি কেন রান্নাঘরে?

– রাহনাফের এসেছে!

– দেখেছি। তুমি যাও গিয়ে রাহনাফের সাথে গল্প করো। চা-টা না হয় কমলা করে দিবে।

– নাহ। রাহনাফের জন্যে আমি নিজে হাত চা বানাতে চাই।

– কিন্তু রাহি তুমি তো চা বানাতে পারবে না।

– শিখে নিবো। তুমি আমাকে শিখিয়ে দাওনা মা। রাহির কথায় তার মা বিষম খেল কয়েকবার। সে কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে বলল,

– বেবী তুমি চা বানাও আমি দেখি রাহনাফ কি করছে। দ্রুত পা ফেলে রান্নাঘর থেকে চলে আসে রাহির মা। রাহি ইউটিউব এ চা বানানোর ভিডিও দেখে চা বানাতে থাকে

এদিকে রাহনাফ সৈয়দ নওশাদের রুমে আসলে সৈয়দ নওশাদ তার কাজ ছেড়ে রাহনাফকে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। গ্রিলে হাত রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে দুজনে। দক্ষিণা হওয়া এসে শীতল করে দিচ্ছে মন। রাহনাফের খুব করে জানতে ইচ্ছে কাছে তাকে কেন ডাকা হয়েছে। আবার মুখ ফুটে সৈয়দ নওশাদকে সে কিছু জিগ্যেস ও করতে পারছে না। দুজনের মধ্যে চলছে পিনপতন নিরবতা। প্রায় মিনিট দুয়েক পর সৈয়দ নওশাদ নিরবতা ভেঙে বলে উঠে,

– তোমার পড়াশুনার কি খবর রাহনাফ। বিএসসি করবে না নাকি?

সৈয়দ নওশাদের কথায় মৃদু হাসে রাহনাফ। সামর্থ্য জানা সত্তেও সে কেন এমন প্রশ্ন করছে সেটাই বুঝতে পারছে না সে। সৈয়দ নওশাদ তো জানেই অর্থের অভাবে রাহনাফের বিএসসি করাটা আটকে গিয়েছে তবুও কেন এ প্রশ্ন করছে সে

– আপনি তো সবটা জানেন স্যার, তাহলে কেন প্রশ্ন করছেন?

রাহনাফের কথা শুনে স্মিত হাসলো সৈয়দ নওশাদ। সে স্থির দৃষ্টি রাখলো রাহনাফের মুখের দিকে। কিছুক্ষণ রাহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সৈয়দ নওশাদ বলে উঠলেন,

– যদি ইনভেস্ট আমি করে দেই।

সৈয়দ নওশাদের কথা শুনে রাহনাফের চক্ষুদ্বয় আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো। সে অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অতঃপর বলে,

– আপনি কেন শুধু শুধু আমার পিছনে ইনভেস্টমেন্ট করবেন।

– শুধু শুধু ইনভেস্ট করবো এটা কখন বললাম। বিনিময়ে তুমি আমায় কিছু দিবে।

মৃদু হাসলো রাহনাফ। অধরে হাসি ফুটিয়ে বলল,

– আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কি আছে বলুন স্যার। কেন শুধু শুধু লজ্জা দিচ্ছেন আমায়।

– সেটা সময়মতো আমি চেয়ে নিবো। এখন বলো কোথায় গিয়ে বিএসসি কম্প্লিট করতে চাও। আমেরিকা অস্ট্রিয়া কানাডা জাপান। উঃহ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, তোমার তো জাপানের ইউনির্সিটিতে থেকে বিএসসি করার স্বপ্ন ছিলো। আজই এপ্লাই করে ফেলো।

সৈয়দ নওশাদের কথা শুনে আবারও হাসলো রাহনাফ। এই মানুষটাকে ও ওর বাবার আসনে বসিয়েছে। আশ্রাম থেকে বেড়িয়ে আসার পর এই মানুষটাই তো ওকে লড়াই করে বাচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। কলেজের ফি ভেতন দেওয়ার সময় এই মানুষটা নানা ভাবে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় রাহনাফের বাবা বেঁচে থাকলে বোধহয় এভাবেই সাহায্য করতেন।

– আমি দেশের বাহিরে কোথাও যেতে চাইনা, স্যার। সবার সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়, বলুন স্যার। আমি এখানেই থাকতে চাই এই শহরে তার কাছাকাছি।

রাহনাফ কথা বলা শেষ করে সৈয়দ নওশাদের দিতে তাকিয়ে দেখে সে ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাহনাফ তার মাথা নিচু করে ফেলল।অতঃপর সৈয়দ নওশাদ বলে উঠলেন,

– কোন স্পেশাল কেউ!

উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় রাহনাফ। রাহনাফের এমন লজ্জামখা মুখ দেখে সৈয়দ নওশাদ ধরেই নেন এই স্পেশাল মানুষটা রাহি। কারন রাহনাফকে তিনি রাহির সাথে বেশী মেলামেশা করতে দেখেন। অতঃপর সৈয়দ নওশাদ রাহনাফের কাঁধে হাত রেখে বলেন,

– আগে নিজের ক্যারিয়ার ঠিক করে নাও। তাছাড়া সে তো তোমার জন্যে অপেক্ষা করবে। বিএসসি কম্প্লিট করে দেশে ফিরে এসো তারপর আমি নিজে তোমাদের চারহাত এক করে দিবো।

– সেটা তো তুমি দিবেই বাবা, কিন্তু বিএসসি করার জন্যে দেশের বাহিরে কেন যেতে হবে। আমাদের দেশে এত বড় বড় ইউনির্সিটি থাকতে বাহিরের দেশগুলোতে কেন যাবে। দু-কাপ চা হাতে রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল রাহি। সৈয়দ নওশাদ রাহির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন অতঃপর বললেন,

– কয়েকদিনের ই ব্যাপার এতে তুমি অমত করো না। সৈয়দ নওশাদ আহমেদের বাড়ির জামাই হবে আর বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে আসবে না সে টা তো কখনো হয় না। শেষ ব্যাক্যটা মনে মনে বললেন তিনি।

রাহি রাহনাফ ও সৈয়দ নওশাদের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাড়িয়ে বলে,

– কতদিন লাগবে পড়াশুনা শেষ হতে?

রাহনাফ চায়ের কাপ থেকে মুখ সরিয়ে রাহির দিকে তাকায় কিছু বলার জন্যে কিন্তু তার আগেই সৈয়দ নওশাদ বলে উঠেন,

– তিন থেকে সারে দিন বছর।

মন খারাপ করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় রাহি। রাহির চলে যাওয়ার পর রাহনাফ চায়ের কাপটা রেখে বলে উঠে,

– আপনি ঠিক কি করতে চাইছেন?

– আপনাদত তোমাকে জাপান পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি। আজই এপ্লাই করবে তুমি। রাহনাফ কিছু বলবে তখন সৈয়দ নওশাদ তার হাত উঠিয়ে রাহনাফকে থামিয়ে দেন।

২১,
সৈয়দা মাহবুবা বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছিলেন এমনি সময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। ক্লাস নিচ্ছিলেন বিধায় তিনি কল রিসিভ করলেন না। শুধু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। কলটা কেটে যায়। সৈয়দা মাহবুবা আবারও বাচ্চাদের পড়ানোর মনোযোগ দেন, কিছুক্ষণ পর আবার কল বেজে উঠে। এবার সৈয়দা মাহবুবা নাম্বার না দেখে মোবাইলটা সুইচ অফ করে দেন। তারপর মনোযোগ দেন পড়ানোর কাজে। প্রায় পচিশ মিনিট পর তার ক্লাস নেওয়া শেষ হয়। ক্লাস থেকে বেড়িয়ে তিনি আগে মোবাইলটা অন করে নেয়। মেহের কল করেছে। খুব প্রয়োজন না হলে মেহের কল করে না। তাহলে এখন কেন কল করছে ও। ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে তো। মেহেরের নাম্বারে ডায়াল করেন সৈয়দা মাহবুবা। কলটা রিং হতেই ওপাশ থেকে মেহের কল রিসিভ করে কর্কশ গলায় বলে উঠে,

– তোমাকে কতবার কল করেছি, কল রিসিভ কেন করছো না

– ক্লাস টাইম ছিলো তাই রিসিভ করিনি। কল কেন করেছো?

– আলিহান ভাই তার ব্যাগপত্র নিয়ে আমাদের বাসায় উঠেছে। বলে সে নাকি এখন আমাদের সাথে থাকবে। আলিহান ভাইকে ব্যাগপত্র নিয়ে বাসায় আসতে দেখে পাশের ফ্লাটের কয়েকজন আন্টি এসে নানা কথা বলছে। মৌ-কে নিয়ে খারাপ কথা বলছে। মা তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় এসো। কথাগুলো বলেই কল কেটে দেয় মেহের। সৈয়দা মাহবুবা দু-হাতে তার মুখ চেপে ধরেন। এ জিবনে বেঁচে থাকতে নিয়ে আরো কত সমস্যায় মুখোমুখি হতে হবে। তার জিবনটা তো এভাবে গেলো এখন কি তার মেয়েদুটোও শান্তি পাবে না নাকি। চোখদুটি পানিতে টলমল করে উঠলো। বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে মোবাইলটা ব্যাগে পুরে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন।

বাড়িতে পা রাখা মাত্রই তিনি শুনতে পেলেন কিছু অশ্রাব্য ভাষা। কিছু মহিলা তাকে তুলে তার মেয়েদের অপমান করছে। মহিলারা সৈয়দা মাহবুবার সিঙ্গেল মা হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করছে। মেহেরের জন্ম পরিচয়ের কথা তুলছে। আজ মেহের প্রতিবাদ করতে পারছে না। কারন সে তার জন্মদাতার পরিচয় কাউকে বলবে না কাউকে না। তাই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনে যাচ্ছে। আলিহান প্রতিবাদ করতে চাইলে তাকেও থামিয়ে দেয় মেহের। বলুক না লোকে যা খুশি বলুক। এদের তো এটাই কাজ সামনে দাঁড়িয়ে শান্তনা দিলেও চোখের আড়াল হলেও সমালোচনার মেলা বসে। আজ না হয় সামনাসামনি বলছে। তাতে কি! এসব মেহেরের অভ্যাস হয়ে গেছে।

– গুড্ডু তুই বিয়ের জন্যে প্রস্তুত তো?

সৈয়দা মাহবুবা বুকের উপর দু-হাত গুজে বললেন।

সৈয়দা মাহবুবার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে সকলের দৃষ্টি পরে তার দিকে। একজন মাধ্যবয়স্ক মহিলা বলে উঠেন,

– যেই বড় লোকের ছেলে দেখেছে উমনি বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। এই বিয়ে কয়দিন টিকবে। পরে দেখা যাবে পেটে বাচ্চা নিয়ে এসে আবার বাপের বাড়ি ফিরে এসেছে । পরে হবে সিঙ্গেল মাদার। আর কত ডং দেখতে হবে।

সৈয়দা মাহবুবা মহিলার কথার কোন প্রতিবাদ না করে আলিহানের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারপর বললেন,

– আজ এখুনি তুই মৌ-কে বিয়ে করবি।

সৈয়দা মাহবুবার কথা শুনে অন্য আরেক মহিলা বলে উঠেন,

– বড় লোকের ছেলে, মেয়েদের সাথে ফুর্তি করাই এদের কাজ। ফুর্তি করবে, মজা লুটবে তারপর ভাগবে, বিয়ে কোনদিন করবে না।

উক্ত মহিলাদের কথা শুনে সৈয়দা মাহবুবা সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আলিহানের দিকে। আলিহানের দৃষ্টি স্থির তার পাশে মাথা নিচু করে বসে থাকা মৌ-য়ের দিকে।

চলবে,,,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [১৩]

২২,
বাসের সিটে পাশাপাশি বসে আছে মেহের আর রাহনাফ। মেহের কলেজে যাচ্ছে আর রাহনাফ কোথায় যাচ্ছে সেটা নিজেও জানেনা সে। মেহেরকে বাসে উঠতে দেখে সেও বাসে উঠে মেহেরের পাশে বসেছে। চারদিন পর আজ কলেজে যাচ্ছে মেহের। তাই ওকে খুব বেশী চিন্তিত দেখাচ্ছে। মৌ আর আলিহানের বিয়ে হয়েছে চারদিন হলো। সেদিন সকলের মুখ বন্ধ করার জন্যে আলিহান মৌ কে বিয়ে করে নেয়। তাছাড়া আলিহানের ইচ্ছে ছিলো সে ডাক ঢোল পিটিয়ে বিয়ে করবে। ওই মহিলাদের জন্যে সেটাও আর হলো না। সেদিন বাসায় কাজী ডেকে কোন রকমে বিয়েটা করে নেয়। মৌ-য়ের বিয়ের পর আলিহান ওদের সাথেই থাকতে শুরু করে দিয়েছে। এই কয়দিন মেহেরের কলেজে যাওয়া হয়নি। কাল রাতে কলেজ থেকে প্রিন্সিপ্যাল কল না করলে হয়তো আজও তার কলেজে যাওয়া হতো না। প্রিন্সিপ্যাল হঠাৎ কেন ওকে ডাকলো! বাসে বসে ভাবছে আর হাতের নোখ কামড়াচ্ছে। ওর পাশেই বসে রাহনাফ মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওকে দেখে যাচ্ছে।

– ম্যাডাম ভাড়াটা?

গাড়ির হেল্পপারের কথা শুনে চমকে উঠে সামনে তাকায় মেহের। তারপর সে হেল্পপারকে ভাড়া দিয়ে রাহনাফের দিকে তাকায়। রাহনাফ তার দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। হেল্পপার ওকে জিগ্যেস করে,

– আপনি কোথায় যাবেন স্যার?

হেল্পপারের প্রশ্ন উপেক্ষা করে রাহনাফ মেহেরের দিকে ঘুরে বসে। মেহেরের মুখের দিকে তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নেশালো কন্ঠে বলে উঠে,

– কোথায় যাব জানিনা! শুধু এভাবে চলতে চাই, সারাজীবন?

রাহনাফের মুখে এমন অদ্ভুত কথা শুনে মেহের তার চক্ষুদ্বয় কিছুটা সংকোচিত করে রাহনাফের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রাহনাফ বলে উঠে,

– টিকিট কাটবো লেখিকা সাহেবা ?

– মানে! কি বলতে চাইছেন আপনি মিস্টার রাহনাফ।

মেহেরের ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নের কোন জবাব দেয়না রাহনাফ। সে মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর বলে,

– আমি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি মেহের। রাহনাফের কথা শুনে মেহের মৃদু হেসে রাহনাফকে অভিনন্দন জানায়। রাহনাফ আবার প্রশ্ন করে,

– আমি চলে গেলে আমায় মিছ করবেন না লেখিকা সাহেবা।

– একটু।

– অপেক্ষা করবেন আমার জন্যে?

– কেন?

– ভালোবাসি আপনাকে লেখিকা সাহেবা। খুব বেশী ভালোবাসি।

রাহনাফের কথা শেষ হতে না হতেই বাস থেমে যায়। সামনে তাকাতেই দেখতে পায় গাড়ি কলেজের গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মেহের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইলে রাহনাফ ওর পথ আটকিয়ে বলে,

– আমার প্রশ্নের জবাব পাইনি আমি!

– পাগল হয়ে গেছেন আপনি মিস্টার রাহনাফ। ডক্টর দেখান। গাড়ি থেকে নেমে যায় মেহের। রাহনাফ ও মেহেরের পিছু পিছু গাড়ি থেকে নেমে যায় আর মেহেরকে ডাকতে থাকে। পিছনে ফিরে তাকায় না মেহের। রাহনাফ পিছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠে,

– ভালোবাসি লেখিকা সাহেবা আপনাকে। আপনি বাসুন আর নাই বাসুন আমি আপনাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাব লেখিকা সাহেবা। আমি অপেক্ষা করবো আপনার জবাবের জন্যে! আর হ্যাঁ আমি কিন্তু আপনার মুখ থেকে হ্যাঁ টাই শুনতে চাই। বুকের বা পাশে হাত রেখে উপরের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি আমার মেঘলা আকাশে ভালোবাসা রোদ্দুর নিয়ে এসেছেন লেখিকা সাহেবা। আমার মনের আকাশের #মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর আপনি।
বুকের উপরে থাকা হাতের উপর ভালোবাসা পরম উষ্ণ ছুঁইয়ে দেয় রাহনাফ তারপর সেখন থেকে চলে যায়।

এদিকে রাহনাফ চলে যাওয়ার পর হাটু গেরে মাটিতে বসে পরে রাহি। সৈয়দ নওশাদ তার হাতটা শক্তকরে ধরে রেখেও তাকে পরে যাওয়া থেকে আটকাতে পারলেন না। গাটুগেরে মাটিতে বসে চিৎকার করে উঠলো রাহি। সৈয়দ নওশাদ করুন চোখে তাকিয়ে আছে তার মেয়ে রাহির দিকে। কিছুক্ষণ আগে রাহনাফ যখন চিৎকার করে মেহেরকে তার মনের কথা বলছিলো তখনি রাহি আর সৈয়দ নওশাদ চলে আসে আর রাহনাফের বলা কথাগুলো শুনে নেয়। সব শুনে সৈয়দ নওশাদ অবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এক অচেনা ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছেন তিনি। যে ঝড় এসে নিমিষেই সব কিছু চুরমার করে দিবে। সৈয়দ নওশাদ কি পারবে এই ঝড় সামলাতে? নানা চিন্তা বেকে বসেছে তার মাথায়। রাহি উঠে দাঁড়িয়ে দু-হাতে চোখের পানি মুছে বলতে থাকে,

– বাবা আমার রাহনাফকে চাই। তুমি যে করেই হোক আমার রাহনাফকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। ওই দুটাকার মেয়ের জন্যে আমি আমার রাহনাফকে হাড়াতে চাইনা বাবা।

রাহির কথা বলা শেষ হয় সৈয়দ নওশাদের চিৎকারে। রাহির কথা শুনে সৈয়দ নওশাদ চিৎকার করে ওর উপর হাত উঠায়। রাহি অশ্রুসিক্ত নয়নে সে দিকে তাকায় আর বলে,

– বাবা তুমি,

সৈয়দ নওশাদ তার হাত মুঠি করে সেটা নামিয়ে নেয়।রাহির দিকে ক্রোধ নিক্ষেপ করতেই রাহি চোখ থেকে দু-ফোটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। সৈয়দ নওশাদ কলেজের দিকে এক পলক তাকিয়ে রাহির পিছন পিছন চলে আসে।

২৩,
ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই সৈয়দ নওশাদের স্ত্রীর ঝঝালো কণ্ঠস্বর শুনে থেমে যায়। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় তার স্ত্রী কোমড়ে শাড়ির আঁচলে গুজে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সৈয়দ নওশাদ তার স্ত্রীর এমন রাগের কারন বুঝতে অসুবিধা হইলো না। তিনি এটাও বুঝতে পারলেন এবার তার উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে চলবে। এই ঝড় রোজকার বিষয় তাদের। সৈয়দ নওশাদ মাথা নিচু করে তার রুমে চলে যেতে চাইলে তার স্ত্রী এসে তার কলার চেপে ধরে বলতে থাকে,

– তোমার সাহস হয় কি করে আমার মেয়ের উপর রাগ ঝাড়ার। রাহি যা চাইছে সেটাই দিবে তুমি। রাহনাফের সাথে রাহির বিয়ে দিবে, নাহলে ওই দু টাকার মেয়ে মেহেরকেই এই দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবো।

– না। চমকে উঠে সৈয়দ নওশাদ আর বলে,

– আমি তোমার সব কথাই শুনবো তুমি মেহেরের কোন ক্ষতি করবে না। আচ্ছা আমি কি তোমাদের কোন ইচ্ছে অপুর্ণ রেখেছি কখনো।

সৈয়দ নওশাদের কলার ছেড়ে দেয় তার স্ত্রী। আর বলে,

– যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাহির সাথে রাহনাফের বিয়ের ব্যাবস্থা করো। আমি আমার মেয়ের চোখের পানি সহ্য করতে পারি না।

সৈয়দ নওশাদ কিছু বললেন না। মাথা নিচু করে কিছু ভাবতে ভাবতে তার রুমে চলে যায়।

সেদিন রাতেই সৈয়দ নওশাদ রাহনাফকে ডেকে তার সাথে রাহির বিয়ে দেওয়ার কথা বলে। রাহনাফ সরাসরি সৈয়দ নওশাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সৈয়দ নওশাদ অনেক জোর করেও রাহনাফকে বিয়েতে রাজি করাতে পারে না। সৈয়দ নওশাদের পরিকল্পনা জেনে রাহনাফ পড়াশোনার জন্যে যে জাপানে যাওয়ার জন্যে এপ্লাই করছিলো সেটাও ক্যান্সেল করে দিতে চায় কিন্তু সৈয়দ নওশাদ এটাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাহিকে বিয়ে না করলেও নওশাদ জাপান যাবে। হ্যাঁ নওশাদ জাপান থেকে বিএসসির ডিগ্রী নিয়ে আসবে। রাহনাফ রাহিকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি এটা শুনে রাহির মা মেহেরের উপর প্রচণ্ড রেগে যায় আর মেহেরের ক্ষতি করার জন্যে উঠে পরে লেগে যায়।

এলমাকে পড়ানোর শেষে বাড়ি ফিরছিল মেহের। তখন রাহনাফ এসে মেহেরের পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রাহনাফকে দেখেও না দেখার ভান করে মেহের চলে যেতে নিলে রাহনাফ আবার গিয়ে মেহেরের সামনে দাঁড়ায়। রাগে বিরক্ত হয়ে মেহের ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে,

– সমস্যা কি আপনার? বারবার আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়াচ্ছেন কেন?

– আমি কিন্তু আমার জবাবটা এখনো পাইনি লেখিকা সাহেবা।

– পাগল হয়ে গেছেন আপনি মিস্টার রাহনাফ। আমি কোনদিনও আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। ইভেন কাউকেই নয়। আমি আমার মায়ের পাশে থাকতে চাই।

– আমাকে বিয়ে করে নিন দুজনেই আন্টির মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকবো।

– এটা সম্ভাব না, কেন বুঝতে পারছেন না আপনি। চলে যান আপনি?

– কেন সম্ভব নয়। আপনাকে ভালোবাসতে হবে না শুধু একটা সুযোগ করে দিন আমি যেন আপনাকে মন উজার করে ভালোবাসতে পারি। আপনার প্রতিটা খুশির কারন হতে পারি।

– ভালোবাসা, বিশ্বাস এই শব্দগুলোকেই বিশ্বাস করতে পাই আমি।

– আপনার সব ভয় দূর করে বিশ্বার এক নতুন বন্ধনে জড়াবো আপনাকে।

– আপনি কেন বুঝতে পারছেন না মিস্টার রাহনাফ।

– আপনিও তো আমার দিকটা বুঝতে পারছেন না লেখিকা সাহেবা। প্লিজ হ্যা বলে দিন না হলে অনেক দেরী হয়ে যাবে। আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে।

চলবে,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here