#প্রণয়ের_ঢেউ
#Part_07
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
বিষন্নতার চাদর মুড়ি দিয়ে আকাশে ভিড় করেছে ধসূর রাঙ্গা মেঘ। দমকা হাওয়ার প্রকট, সেই সাথে মৃদু পরিমাণে মেঘের গর্জন। ধুলোবালিতে মাখোমাখো পরিবেশ। বর্ষাকালের শেষ প্রহর হওয়ায় অসময়ে বর্ষণ যেন এখন নিত্যদিনের মেহমান হয়ে গিয়েছে। কথা নেই বার্তা নেই, ঝুপ করে এক পশলা বৃষ্টি নেমে পড়ে ধরণীর বুকে। কলেজ থেকে বের হতেই আকাশের এমন করুণ অবস্থা দেখে দ্যুতির ভ্রু কুঁচকে আসে। সকালেও রৌদ্রের উত্তাপে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছিল না অথচ এখন বর্ষণমুখর পরিবেশ। দ্যুতি একরাশ বিরক্তি নিয়ে ব্যাগ চেক করলো। না, আজ সে ছাতা আনেনি। হতাশাজনক নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে সামনে আগাতেই অরণ্যকে দেখতে পেয়ে দ্যুতি ভড়কে যায়। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে অরণ্যের দিকে। কেন না, এখন অরণ্যের অফিস টাইম। তার এইখানে থাকার প্রশ্নই উঠে না। তাহলে? দ্যুতি কি স্বপ্ন দেখছে? হঠাৎ অরণ্য দ্যুতির সামনেই আসতে দ্যুতি নিজের সম্বিত ফিরে পায়। বিস্ময়কর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— আপনি এইখানে যে?
অরন্য ত্যাড়ামো সুরে বলে,
— কেন আসতে পারবো এইখানে? কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিস আমার জন্য? আমি এই রাস্তা দিয়ে গেলেই আমাকে হাজতে ঢুকাবি?
— আমি তো এইভাবেই জিজ্ঞেস করেছিলাম তাতে এত কথা শোনানোর কি আছে?
অরণ্য এইবার এক হাত দিয়ে নিজের চুল পিছনে ঠেলে দিয়ে বলে,
— জানিস না, এই কলেজে আমার বউ পড়ে। সেই আজ আবদার করেছে তাকে যেন আমি কোলে করে বাসায় নিয়ে যাই। তাই তো তারই আবদার পূরণ করতে ছুটে এসেছি আমি। সর তো সামনে থেকে, আমি আমার বউয়ের কাছে যাব।
অরণ্যের কথা শুনে আপনা-আপনি দ্যুতির ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে যায়। সে বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠে,
— আপনার বউ মানে?
অরণ্য দ্যুতির মাথায় চাটি মেরে বলে,
— বুঝিস না কেন এসেছি? তাও এত ন্যাকামি করিস কেন, বেদ্দব? পড়ালেখা চান্দে উঠিয়ে ড্রামা কুইন হতে চাস?
দ্যুতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিনমিনে স্বরে বলে,
— না মানে, আপনার না এখন অফিস টাইম?
— হলে হবে তাতে তোর কি? এখন কি আমাকে তোর কাছে জবাবদিহি করতে হবে? মুরুব্বি তুই?
— আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।
— বেকার না আকার তা আমি বুঝবো। এখন বাইকে উঠ, আকাশের অবস্থা দেখছিস ভালো না তাও আমার সাথে ঝগড়া করার সুযোগ হাতছাড়া করবি না। দেখা গেলো, আমি মরে যাচ্ছি তখন তুই আমাকে ডেকে তুলে বলবি, অরণ্য ভাইয়া আপনার সাথে আমার ঝগড়া করা বাকি। ঝগড়া করুন আমার সাথে।
দ্যুতি একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
— আমি মোটেও এইসব আজগুবি কথা বলবো না। আর মরার কথা বলেন কেন?
অরণ্য এইবার দ্যুতির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে,
— কেন আমি মরার কথা বললে বুঝি তোর কষ্ট হয়?
অরণ্যের এমন কথায় দ্যুতি কিছুটা হকচকিয়ে যায়। অতঃপর কথা ঘুরানোর জন্য আমতা আমতা স্বরে বলে,
— যেকোনো সময় বৃষ্টি পড়বে, তাড়াতাড়ি চলুন।
কথাটা বলেই দ্যুতি উঠে পড়ে বাইকে। অরণ্য দ্যুতির চালাকি বুঝতে পেরে চাপা হাসে। অতঃপর উঠে বাইক স্টার্ট দেয়। বেশ কিছু দূর যেতেই আকাশ চিরে নেমে পড়ে এক পশলা বৃষ্টি। ভিজিয়ে দিতে শুরু করে সকলকেই। অজ্ঞাত বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ছাউনির সামনে বাইক থামায় অরণ্য, আশ্রয় নেয় সেখানে। দুইজনেই ইতিমধ্যে খানিকটা ভিজে গিয়েছে। নিজের জামাকাপড় কোনমতে ঝেড়ে নেয় তারা। আশেপাশে তেমন কোন মানুষ নেই। যার জন্যে রাস্তাটা কেমন নীরব ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ বাতাসের সাথে মিশিয়ে তৈরি করছে এক আপন ধ্বনি। বাড়িয়ে দিচ্ছে নিস্তব্ধতা। কাঁচা মাটির গন্ধ আর বুনোফুলের গন্ধে পরিবেশ মো মো করছে। বৃষ্টির এমন এক পরিবেশে শীতল এক অনুভূতি হচ্ছে দ্যুতির মনে। উপভোগ করছে পরিবেশটি।
হঠাৎ দ্যুতির নজর যায় পাশের রাস্তার উঁচু প্রাচীরের উপর দিয়ে ঝুলে পড়েছে একগাছি কদম ফুল।কদম ফুলগুলো দেখে ক্ষণেই দ্যুতি খুশি হয়ে যায়। উৎফুল্ল কন্ঠে অরণ্যকে বলে,
— ভাইয়া কদম ফুলগুলো একটু এনে দিবে, প্লিজ? আমি না কখনো এই ফুলগুলো আসলে ছুঁয়ে দেখিনি, সবসময় ছবিতেই দেখেছি। এনে দাও না,প্লিজ।
অরণ্য ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
— আমাকে দেখে কি তোর কামলা মনে হয় নাকি যে তুই যা বলবি আমাকে তা জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর বলে করে দিব?
কথাট শুনে দ্যুতি অভিমানী সুরে বলে,
— থাক লাগবে না।
অরণ্য এইবার কিছু না সেই প্রাচীরের দিকে যেতে নিলে দ্যুতি বলে উঠে,
— বললাম তো লাগবে না।
অরণ্য ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
— লাগবে কি, লাগবে না তা আমি বুঝবো। তোকে এত বুঝতে হবে না।
কথাটা বলেই প্রাচীরের সামনে চলে যায় এবং হাত উঁচিয়ে একসাথে চার-পাঁচটা কদম ফুল পেরে নেয়। অতঃপর সেগুলো হাতে নিয়েই এগিয়ে আসে দ্যুতির দিকে। কিন্তু সেগুলো দ্যুতিকে না দিয়ে নিজের হাতে রেখে সেগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। তা দেখে দ্যুতি বার বার আড়চোখে অরণ্যকে দেখতে থাকে। হঠাৎ অরণ্য বলে উঠে,
— কি এইভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ফুলগুলো চাই তোর?
দ্যুতি ফুলগুলো এত কাছ থেকে দেখে তাকে ছুঁয়ে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট দু’টি ভিজিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
— এত কষ্ট করে যখন ফুল পেরে এনেছো তখন তো ফুলগুলো নেওয়াই যায়।
অরণ্য বাঁকা চোখে দ্যুতির দিকে তাকিয়ে বলে,
— কষ্ট যেহেতু আমি করেছি সেহেতু ফলও আমি ভোগ করবো।
দ্যুতি এইবার অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে,
— দাও না ভাইয়া।
অরণ্য দ্যুতির কথা পাত্তা না দিয়ে নিজের মত ফুলগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। তা দেখে দ্যুতি ফুঁসে উঠে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। বেশ কিছু প্রহর এইভাবেই অতিবাহিত হওয়ার পর অরণ্য বলে,
— তোকে আমি ফুলগুলো দিতে পারি কিন্তু এর বদলে আমার এক শর্ত আছে।
দ্যুতি অরণ্যের দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
— কি শর্ত?
— তোকে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে?
— কি প্রশ্ন?
— সেটা আপাতত তোলা থাকুক। কিন্তু শর্তটা যেন তোর মনে থাকে, ওকে?
দ্যুতি মাথা দুলিয়ে জানান দেয়, তার মনে থাকবে। অরণ্য আর কথা না বাড়িয়ে ফুলগুলো দ্যুতিকে দিয়ে দেয়। ফুলগুলো পেয়ে দ্যুতির চেহেরায় ফুটে উঠে প্রসস্থ হাসি। সে বার বার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে ফুলগুলো। আলতো হাতে ফুলগুলো ছুঁয়ে দিয়ে, ঘ্রাণ নেয় প্রাণ জুরে। প্রিয়তমার স্নিগ্ধ মুখখানিতে উত্তেজিত আনন্দের রেখা দেখে অরণ্য নিভে গেলো। একমনে, একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো দ্যুতির মুখপানে। হঠাৎ আনমনেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ হাসির রেখা।
_______________
দ্যুতি পড়ার টেবিলের সামনে একটি চেয়ার টেনে বসে। টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা কদম ফুলগুলো আনমনে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে থাকে। ফুলগুলোতে অরণ্যের ছোঁয়া আছে তা মস্তিষ্কে টনক নাড়তে দ্যুতির গাল দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে লজ্জানত হাসি। না চাইতেও ভাবতে থাকে অরণ্যের কথা। অরণ্য এখন আর আগের মত ওর সাথে কঠোর নেয়। কিছুটা নরম হয়ে এসেছে। নিজের অনুভূতিগুলো একটু একটু করে প্রকাশ করতে শুরু করেছে। বুঝে অরণ্যের কথার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা অপ্রকাশিত কথাগুলো। কিন্তু তাও সে আগ বাড়িয়ে কিছু বলে না। প্রকাশ করে না নিজের অনুভূতি। সে ঠিক করেছে, যেদিন অরণ্য প্রকাশ্যে নিজের মনের কথার জানান দিবে দ্যুতিকে, সেদিন দ্যুতি নিজেও নিজের মনের কথা বলে দিবে অরণ্যকে। কিন্তু সেদিন কবে আসবে তা দ্যুতির জানা নেই।
দ্যুতি এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে টেবিলের নিচের ড্রয়ারটা খুলে একটা নীল মলাটের ডায়েরি বের করে। ডায়েরির কয়েক পৃষ্ঠা উল্টাতেই ভেসে উঠে অরণ্য আর দ্যুতি যুগলবন্দী ছবি। ছবিটা প্রায় বছর খানিক পুরানো।
বসন্তের প্রথম দিনে তোলা হয়েছিল ছবিটা। অরণ্য পড়নে নীল রঙের পাঞ্জাবি আর দ্যুতির পড়নে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। শাড়িটা অরণ্যই দিয়েছিল তাকে।বসন্তে ঘুরতে যাবে বলে। রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় তারা যখন মুখোমুখি হয়েছিল তখন দিহান তাদের দেখে কাটখোট্টা দিয়ে বলেছিল, “কিরে তোরা হিমু আর রুপার ক্যারেক্টর এক্সচেঞ্জ করেছিস নাকি?” প্রথম দিকে দিহানের কথা ধরতে না পারলেও পরে তারা বুঝেছিল, অনিচ্ছাকৃত ভাবেই আজ তারা পুরোই হিমু আর রুপার বিপরীত সেজেছে। তখন দিহানই মজার ছলে ছবিটা তুলে ফেলেছিল।
কথাটা ভেবেই দ্যুতি মুচকি হাসে। ছবিটার কথা দ্যুতি জানতো না। সেদিন অরণ্যের রুম থেকে একটা বই নেওয়ার সময় এইটা কোন ফাঁক থেকে বেড়িয়ে আসে। ছবিটা দ্যুতি পাওয়া মাত্র নিজের কাছে রেখে দেয়। ছবিটা যে প্রিন্ট আউট করে অরণ্য যত্নে সামলে রেখেছিল তা ছবির নতুনত্ব ভাবই প্রকাশ করে দিচ্ছিল। হয়তো কোন বইয়ের ভাঁজে ছিল ছবিটা।
দ্যুতি ছবিটায় উল্টিয়ে তার একদম নিচে লিখা কথাগুলো আনমনে আওড়াল,
“হিমু-রুপার চরিত্র ভিন্নভাবে উপস্থাপন হলেও, দিনশেষে তারা কিন্তু একে অপরেরই।”
অরণ্যের এই কথা মানে দ্যুতি বুঝতে পেরে লাজুক ভঙ্গিতে হাসলো। ক্ষণেই মনের মাঝে থাকা প্রণয়ের স্রোত যেন দৃঢ় হলো। স্বপ্নরাও আরেকটু প্রশ্রয় পেয়ে বৃহৎ হলো। ইচ্ছেগুলো বুনতে শুরু করলো নিজের ঠিকানা।
_________________
নিশিরাতের মায়ায় সকলে জড়িয়ে পড়তেই চারদিকে ছেঁয়ে গিয়েছে পিনপতন নীরবতা। আঁধার প্রগাঢ়তা পাওয়ার সাথে সাথে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কুকুরের মিছিমিছি ডাক৷ মাঝে মধ্যে শোনা যাচ্ছে নিশাচর পাখির ডাক। ঘড়ির কাটাও এরমাঝে শব্দ করে জানান দিচ্ছে বারোটা বাজতে বেশি সময় নেই। এরই মাঝে নিঃশব্দে কিছু মানুষ ঢুকে পড়লো দ্যুতির রুমে। দ্যুতি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাই বুঝতেই পারলো না তার ব্যতীত দ্বিতীয় কোন অস্তিত্ব উপস্থিত হয়েছে তার রুমে। ঘড়ির কাটায় ঠিক বারোটা বাজতেই দ্যুতির রুমের লাইট জ্বলে উঠল। কয়েকটি কন্ঠ একত্রিত হয়ে কলধ্বনিতে রুপান্তরিত হলো, ক্ষণেই চারদিকে ভেসে উঠো কথাটি, “হ্যাপি বার্থডে দ্যুতি।”
কথাটা দ্যুতির কর্ণগোচর হতেই তার ঘুম ছুটে গেলো। ঘুমঘুম চোখে চারদিকে চোখ বুলাতেই দেখতে পেলো দিহান, শাহিদা বেগম আর রুহুল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। দ্যুতি ভালো মত সকলের দিকে তাকাতেই দিহানের হাতে কেকটি দেখে তার মস্তিষ্ক জানান দিল আজ তার জন্মদিন। ক্ষণেই উঠে বসলো সে, হাসি মুখে তাকালো সকলের দিকে। কিন্তু চারদিক চোখ বুলিয়েও যখন কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা মিললো না তখন মনটা হঠাৎ করেই বিষিয়ে গেলো। মিইয়ে গেলো ঠোঁটের কোনে হাসিটা। কিন্তু তাও পরিবারের কথা ভেবে একবারে বিলীন হতে দিল না হাসিটা। সকলে পুনরায় তাকে জানালো জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই দিহান দ্যুতির সামনে কেকটা রেখে বলে,
— এই পেত্নি তাড়াতাড়ি এখন কেকটা কেটে উদ্ধার কর আর আমার কষ্টের ফল দে। নিজের ঘুম ফেলে, কতক্ষণ ধরে তোর এই কেক কাটার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। অর্ধেক কেক দিয়ে হিসাব দিবি আমায়।
দ্যুতি ভেংচি কেটে বলে,
— এহ মামা বাড়ির আবদার। এক পিসও পাবি না তুই। যা ভাগ!
দিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহিদা বেগম চুপ করিয়ে দেন ওকে। দ্যুতিকে বলেন কেকটা কাটতে। দ্যুতি তাই আর কথা না বাড়িয়ে কেকটা কাটে, উঠে খায়িয়ে দেয় সকলকে। অতঃপর কিছুটা সময় দ্যুতির পাশে থেকে শাহিদা বেগম আর রুহুল সাহেব বেরিয়ে যান। দিহানও আর কিছুটা সময় থেকে চলে যায়। দ্যুতি কিছুটা কেক খেয়ে বাকিটা ফ্রিজে রেখে রুমে চলে আসে। লাইট অফ করে শুতেই যাবে তার আগেই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। দ্যুতি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অরণ্য ফোন করেছে। অরণ্যের ফোন দেখে দ্যুতি চটজলদি ফোনটা রিসিভ করে। কানের সামনে ফোনটা নিতেই কেউ একজন তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠে,
— এখনই ছাদে আয় তো।
দ্যুতি কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— কেন?
— আসতে বলেছি মানে আসবি। এত কেন কেন লাগাচ্ছিস কেন? পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেন তোকে ছাদে দেখতে পাই। নাহলে খবর আছে তোর।
দ্যুতিকে আর কথা বলতে না দিয়ে খট করে ফোনটা রেখে দেয় অরণ্য। দ্যুতি যাবে কি যাবে না এই নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। অতঃপর শেষে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে সবার দৃষ্টির আড়াকে বেরিয়ে আসে বাসা থেকে। চলে যায় ছাদে।
ছাদে এসে দেখে চারদিকে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই সাথে জনমানব শূন্য। দ্যুতি এইবার সাহস করে কিছুটা এগিয়ে যায় ভিতরে দিকে। নিচে কেউ যাতে শুনতে না পায় তাই নিচু স্বরে ডেকে উঠে অরণ্যকে। হঠাৎ অরণ্য দ্যুতির পিছন দিক এসে ওর হাত চেপে ধরে৷ দ্যুতি সেই মূহুর্তে ভড়কে গেলেও অরণ্যের উপস্থিতি বুঝতে পেরে না চেঁচিয়ে চুপ থাকে। অরণ্যও কিছু না বলে তাকে টেনে নিয়ে যায় ছাদের চিলেকোঠার দিকে। চিলেকোঠার ভিতরে ঢুকতে দ্যুতি দেখতে পায় রুমটি মাঝ বরাবর একটা টেবিল আর তার চারপাশটা ছোট ছোট সাদা রঙের মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। টেবিলের উপরে ছোট একটি কেক আর রেপিং পেপারে মুড়ানো কিছু বক্স। অরণ্য দ্যুতিকে টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে তার হাতটা ছেড়ে দেয়। দ্যুতি বিস্মিত চোখে চারদিকে চোখ বুলিয়ে অরণ্যের দিকে তাকাতেই সে দ্যুতির কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
— হ্যাপি বার্থডে চাঁদ।
কথাটা শোনা মাত্র দ্যুতির শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। মনের মাঝে আঁচড়ে পড়ে ভালোলাগার ঢেউ। দ্যুতি মুচকি হেসে ‘থ্যাংক ইউ’ জানাতেই অরণ্য ওকে কেক কাটতে বলে। দ্যুতি নীরবে সম্মতি জানিয়ে কেকটা কাটে। নিজ হাতে খায়িয়ে দেয় অরণ্যকে। অরণ্যও একটুকরো দ্যুতিকে খায়িয়ে দেয়। দ্যুতি সেই কেকটুকু খেয়ে মিনমিনে স্বরে বলে,
— আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমার বার্থডে ভুলে গিয়েছেন।
অরণ্য বা হাতের তর্জনী উঠিয়ে দ্যুতির ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা কেকের ক্রীমটুকু মুছে দিতে দিতে বলে,
— তোর বার্থডে ভুলা আমার পক্ষে সম্ভব না।
দ্যুতি কথাটার প্রত্যুত্তর না করে লাজুক হাসে। অরণ্য কেকের ক্রীমটুকু মুছে হাতটা নামিয়ে ফেলে। দ্যুতি এইবার আড়ষ্ট ভঙ্গিতে সরে আসতে নিলে অরণ্য দ্যুতির হাত টেনে ধরে। দ্যুতি সচকিত দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে বলে,
— কিছু বলবেন ভাইয়া?
অরণ্য নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে উঠে,
— আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি আজ?
দ্যুতি কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— কি?
অরণ্য কিছুটা সময় চুপ থেকে কোন প্রকার ভূমিকা ছাড়াই বলে উঠে,
— তুই কি আমার আঁধার রাতের ব্যক্তিগত চাঁদ হবি? একান্ত আমার?
#চলবে