#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর-১৮,১৯
মাহফুজা_আফরিন_শিখা
১৮
চন্দ্রালোকিত রাতের অপরূপ অভিনব নয়নভিরাম শোভা দেখেছে মেহের। ভাগ্যক্রমে এক শুভ্র নির্মল জ্যোৎস্নার রাতে তাঁর হঠাৎ দেখা। জ্যোৎস্নার রূপ মাধুর্য অবলোকন করতে সে যখন তন্দ্রাচ্ছন্নের মতো গভীর ধ্যানে নিবিষ্ট ছিলো, অকস্মাৎ সে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো, পিছু ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল রাহনাফকে। বুকের উপর হাত গুজে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার দৃষ্টি স্থির মেহেরের মুখশ্রীতে। মেহের সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে আবার চন্দ্র দেখায় মন দেয়। রাহনাফ মৃদু হাসে। দু পা এগিয়ে সে মেহেরের পাশাপাশি দাঁড়ায়, চাদের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার মেহেরের মুখের দিকে তাকায় অতঃপর সে আনমনে বলে উঠে,
– আমি দেখি আমার চাঁদ, আর আমার চাঁদ ব্যাস্ত আকাশের চাঁদ দেখায়।
– কিছু বললেন!
– বাড়ি ফিরতে হবে।
– আর একটু থাকি না প্লিজ, ভালো লাগছে।
মেহেরের এমন কথা শুনে স্মিত হাসে রাহনাফ। আর একটু কেন, মেহের চাইলে রাহনাফ সারারাত এখানেই কাটিয়ে দিবে। আপনার সমস্ত আঙ্গা আমি পূরণ করতে প্রস্তুত লেখিকা সাহেবা। একবার শুধু বলেই দেখুন না।
ভালোবাসি আপনাকে খুব বেশী ভালোবাসি। আজকের এই মুহূর্তটা সারা জিবন স্মৃতি হয়ে থাকবে আমার কাছে। যখন বুড়ো হয়ে যাবো তখন আপনাকে এই বিকালের গল্প শুনাবো আমি। কিছু কিছু মুহূর্ত মনে রাখার জন্যেই বেঁচে থাকা।
এদিকে বাড়িয়ে পৌঁছানোর পর রাহি সোজা তার রুমে চলে যায়। সব কিছু তিক্ত লাগছে তার কাছে। যাকে এত ভালোবাসলো সেও তার ভালোবাসাটা বুঝলো না। আবার তার বাবার নামে আলিহান এতগুলা কথা বলল অথচ তার বাবার কোন প্রতিবাদ কেন করলো না। কিছু ভালো লাগছে না। রুমে গিয়ে সোজা চলে যায় ওয়াশরুমে। শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে বসে থাকে কিছুক্ষণ।
বাড়ি ফিরে ড্রয়িংরুমের সব কিছু ভাংচুর করতে থাকে রাহির মা আফিয়া আহমেদ। সৈয়দ নওশাদ সুফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে তা দেখে নিলে কিছুক্ষণ। হুটহাট রেগে যাওয়া, জিনিসপাতি ভাংচুর করা এটা নতুন কিছু না। আফিয়া আহমেদ এমনটা প্রায়ই করে থাকেন। তাই সৈয়দ নওশাদ বসে বসে নিরব দর্শকের মতো দেখে নিলেন কিছুক্ষণ। কিন্তু যখন দেখলেন ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে আফিয়া আহমেদের রাগ কমার পরিবর্তে বেড়ে চলেছে তখন সৈয়দ নওশাদ উঠে তার কাছে গেলেন এবং তাকে থামানোর চেষ্টা করলেন। আফিয়া আহমেদ তাকে উপেক্ষা করে সব কিছু ভাংচুর করতে ব্যাস্ত আর সৈয়দ নওশাদ ব্যাস্ত তার স্ত্রীকে আটকাতে। এভাবেই চলে কিছুক্ষণ তারপর আফিয়া আহমেদ সৈয়দ নওশাদের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁত চেপে বলে,
– কবে থেকে চলছে এসব! কেন ঠকাচ্ছো তুমি আমাকে?
– আফিয়া, তুমি শান্ত হোও। পরে তোমার সব কথা শুনবো।
আফিয়া আহমেদ সৈয়দ নওশাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায় অতঃপর বলে,
– আগে বলো তুমি কেন আমাকে ঠকালে। এতই যদি বউ আর মেয়ের উপর দরদ তোমার তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করলে।
– কিসব বলছো তুমি আফিয়া। আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি!
– হ্যাঁ ঠকাচ্ছো, তুমি আমাকে ঠকাচ্ছো নওশাদ। তুমি অস্বীকার করতে পারবে মেহের তোমার মেয়ে নয়। তুমি পিতার অধীকারে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াও নি।
আফিয়া আহমেদের কথা শুনে থেমে যায় সৈয়দ নওশাদ। কিছুক্ষণ মৌনতা অবলম্বন করে বলেন,
– হ্যাঁ গিয়েছিলাম আমি মেহেরের কাছে। গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এর সাথে তোমাকে ঠাকানোর কথা আসছে কোথা থেকে। মেহের আমার মেয়ে এটা অস্বীকার করার ক্ষমতা নাই আমার।
– আর রাহি,,,
– রাহিও আমার মেয়ে। আমি ওদের দুজনকেই ভালোবাসি। ওদের দুজনের শরীরে আমার রক্ত বইছে এই সত্যিটা অস্বীকার করার ক্ষমতা নাই আমার। তুমি প্লিজ এসবের মাঝে মেহেরকে টেনো না। মেহের তো আমাকে বাবা হিসাবে মানে না। ও ঘৃনা করে আমাকে। ওর চোখে আমার জন্যে ঘৃনা বয় আর কিছুই দেখতে পাই না আমি। কথাগুলা বলে বড় করে স্বাস ত্যাগ করলেন সৈয়দ নওশাদ। আফিয়া আহমেদ সৈয়দ নওশাদ কলার চেপে বলে উঠেন,
– তুমি এমটা করতে পারো না নওশাদ। তোমার শুধু একটাই মেয়ে। তুমিই তো বলেছিলে তোমার প্রথম স্ত্রী আর তার সন্তান কোন দিনও আমাদের জিবনে আসবে না তাহলে আজ কেন মেহেরের জন্যে তোমার এত দরদ।
– কারন মেহের আমার প্রথম সন্তান। আফিয়া আহমেদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হনহন করে উপরে তার রুমে চলে যান সৈয়দ নওশাদ। আফিয়া সুফায় লাথি মেরে বলে,
– এটা আমি কিছুতেই হতে দিবো না। মেহেরের ছায়াও তোমার জিবনে থাকবে না। আমি আজ অব্ধি যা চেয়েছি সব পেয়েছি। শুধু একজনকেই পাইনি। ভালোবাসা হাড়ানোর কষ্ট আমি জানি। আমি আমার মেয়েকে সেই কষ্ট কিছুতেই পেতে দিবো না। পৈশাচিক হাসি হাসে আফিয়া আহমেদ।
পানির বোতল খামচে ধরে দু-পা পিছিয়ে যায় রাহি। চোখ থেকে তার অঝড়ে অশ্রু ঝড়ছে। মেহের তার বোন। এতদিন যাকে শত্রু ভেবে এসেছে আজ জানতে পারলো সেই তার বোন। বড় বোন। পানি নিতে নিচে আসছিলো সে আর তখন বাবা মায়ের কথোপকথন শুনে দাঁড়িয়ে যা রাহি। বোতলাটা ফেলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় সে।
২৯,
পরেরদিন কলেজে যখন মেহেরে সাথে দেখা হয় রাহির তখন সে মৃদু হেসে মেহেরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চোখ মুখে তার খুশির ঝলক রেখে স্থির দৃষ্টি স্থাপন করে মেহেরের মুখের দিকে। অধোরে তার হাসি ঝুলানোই থাকে। রাহির এমন আচরন দেখে মেহের অবাক চোখে তার দিকে তাকায়। বিড়বিড় করে বলে উঠে,
– এই মেয়েকে কি জ্বিনে ভর করলো নাকি। এই মেয়ে ঠিক আছো তুমি।
মেহেরে প্রশ্নের কোন জবাব দেয়না রাহি। আকস্মিক ওকে জড়িয়ে ধরে। রাহির এমন কান্ডে মেহের এতটাই অবাক যে সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। স্থীর দাঁড়িয়ে আছে। রাহি নিজেই মেহেরে ছেড়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে ভুবনবুলানো হাসি দিয়ে বলে,
– আই এম সরি আপু। রাহির মুখে আপু ডাক শুনে মেহের তার চক্ষুদ্বয় কিছুটা সংকোচিত করে ফেলে। রাহি আবার বলে উঠে, আসলে আমি তো আমার ছোট বোনের মতোই তাই না। এবার মেহের তার হাত শক্ত মুঠি করে নেয়। অতঃপর রাহি বলে, আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ আচরন করেছি আমাকে কি মাফ করে দেওয়া যায় না। ছোট বোন মনে করে আমাকে ক্ষমা করে দিবে প্লিজ।
– তোমার উপর আমার কোন রাহ নেই রাহি। তবে হ্যাঁ তুমি আমাকে আপু ডেকো না। আমার কোন ছোট বোন নেই। আমার একটাই বোন, মৌ। বলেই উলটোদিক হাটা শুরু করে মেহের। রাহির স্মিত হাসে। মনে মনে সে বলে উঠে,
– যতই তুমি অস্বীকার করো আপু, একদিক ঠিক তুমি আমাকে ছোট বোন বলে মেনে নিবে।
সেদিনের পর কেটে যায় এক সপ্তাহ । সামনে মেহেরের একটা ডিবেট প্রতিযোগী রয়েছে। সেটা নিয়েই এখন ব্যাস্ত সে। তারউপর একটা বই লেখছে। এবারের বই মেলাতে তার প্রথম বই বের হবে। এক সপ্তাহ রাহির সাথে দেখা হয়নি তার। রাহনাফের সাথে দু এককবার হয়েছিলো কিন্তু সেটাও ক্ষণিকের জন্যে। রাহনাফ তার জাপান যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছে গত কাল। সৈয়দ নওশাদের মানসিকতার উপর ঘৃনা ধরে গেছে তার। এক সময় যাকে নিজের বাবার জায়গায় বসিয়েছিলো তার তার উপরই ঘৃনা জমে গেছে তার। একটা মানুষের মন কতটা নিচু করে সে গায়ের রং বিচার করে। বাহিরের সুন্দরর্য তো লোক দেখানো। আসল সুন্দর তো সে যার মনটা সুন্দর। আফিয়া আহমেদ মেহেরকে অনেক শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনটাই কাজ দিচ্ছে না তার। এই তো সেদিন, অনেক মানুষের ভীরে মেহেরের জন্ম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তু্লেছিলেন তিনি। সেখানে মেহের মাথা উচু করে বলে এসেছে, আমার মা সিঙ্গেল মাদার। অনেকে এসব নিয়ে হাসাহাসি করলেও মেহের সেদিকে পাত্তা দেয়না। হাসুক না এদের কাজই তো পরের পরচর্চা করা। এখানে হাসবে সেখানে গিবত করবে। এটাই তো আমাদের সমাজ। সমস্যাটা সমাজের নয়, সমস্যাটি হচ্ছে আমাদের দেশের। কারন এদেশে সিঙ্গেল বাবা মায়ের প্রচলন নেই। খুব করে দরকার সিঙ্গেল বাবা মা শব্দের প্রচলনের। মানুষ ঘর ভাঙ্গার কাহিনীটা জানে না কিন্তু খোচা মেরে কথা বলতে পারে। পরিবার ভাঙ্গা সংসার ভাঙ্গা বাবা মায়ের বিচ্ছেদ একটা সন্তানের উপর কতটা প্রভাব ফেলে সেটা যদি বাবা মা রা বুঝতো তাহলে তারা অনেক কিছুই ত্যাগ করতে পারতো। আমি খুব করে চাই আমাদের দেশের সিঙ্গেল বাবা মায়ের প্রচলন আসুক। আমরা মাথা উচু করে বাঁচি। সন্তানের একটা উজ্জল ভবিষ্যৎ হোক। সিঙ্গেল বাবা মায়ের প্রচলন আসলে হয়তো পথ শিশুর সংখ্যাও কমে আসবে।
চলবে,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।
#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [১৯]
কখনো কখনো সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কালো মেঘ এসে ভেঙে দেয় সাজানো সংসার। আবার অনেক সময় দুর্ঘটনায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় একটি পরিবার। যে কারণেই হোক, মানুষকে দুঃসময় কাটিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লড়াই। সংসার ভাঙ্গনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয় তার মাকে। সন্তানকে বড় করার জন্য তাকেই হয়ে উঠতে হয় বাবা-মা দুই-ই। একইসাথে সামাজিক ও পারিবারিক চাপ কাটিয়ে একা এগিয়ে চলা বেশ কঠিন। আজকের সমাজে এমন সিঙ্গেল মাদার বা একক মায়েদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও নেহায়েত কম না। দিনে দিনে পরিবার ভাঙ্গনের সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে একক বাবা মায়ের সংখ্যা। তবে একদিন আমাদের দেশেও একক বাবা মা শব্দটার প্রচলন হবে। তখন একক বাবা মায়ের সন্তানরা যখন তার বাবা-মাকে সিঙ্গেল বাবা – মা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে তখন লোক সমাজের কাছে শুনতে হবে না, তোমার বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিলো তো! নাকি তোমার মা কুমারী মা হয়েছিলো। একটা সন্তানের জন্যে এর থেকে খারাপ কথা আর কি হতে পারে। দীর্ঘ শ্বাস নেয় মেহের। তার এই ভাবনা আধো পূর্ন হবে তো।
৩০
রাহনাফের মনটা আজ তিক্ততায় ঘেরা। তিক্ত মনে বাসার সামনে পুকুরপাড়ে বসে পুকুরে মাটির ঢিল ছুড়ে মারছে সে।যার ফলে পুকুরের পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্য সময় হলে রাহনাফ তরঙ্গ দেখার জন্যে হলেও উৎসাহ নিয়ে পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়তো। কিন্তু আজ সে নিজের মনের তিক্ততা দূরীকরণের জন্যে ঢিল ছুড়ে মারছে। কোন কিছুতে মন বসাতে পারছে না। ঢিল ছুড়তে ছুড়তে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায় রাহনাফ তবুও ওর মনের তিক্ততা দূর হয়না। এতদিন পর নিজের মাকে চোখের সামনে দেখেও তার থেকে মুখ লুকিয়ে চলে আসাটা নিজের কাপুরুষের পরিচয় বহন করে। দুপুরে কোচিং থেকে ফেরার সময় রাস্তায় জ্যামে আটকে যায় রাহনাফ। আর সেই জ্যামেই সে তার মাকে দেখতে পায়। বড় গাড়িতে একটা সাদা থান পরে বসে আছে তার মা। জানালা দিয়ে শুধু মায়ের মুখ দেখেছিলো সে আর তার কাধে থাকা সাদা থানটা। এতগুলো বছর পর নিজের মাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় রাহনাফ। মা-কে হাড়িরে ফেলার কষ্ঠে বুকটা তার হাহাকার করতে থাকে। চারিদিকে কেমন শুন্যতা অনুভকরে সে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে তার মায়ের মুখখানা দেখতে থাকে। গাড়িতে বসে থাকা রাহনাফের মা যখন জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকায় তখন রাহনাফ হাতদিয়ে তার মুখটা ঢেকে ফেলে। তার মনের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয় তার মা তাকে দেখলে হয়তো কষ্ট পাবে। পরক্ষনে মনে হয় আচ্চা রাহনাফের কথা তার আধৌ মনে আছে কি! নাকি তার নতুন সন্তানদের পেয়ে তার কথা ভুলে গেছে তার মা। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। রাস্তায় জ্যাম ছুটলে রাহনাফের মায়ের গাড়িটা চলে যায় আর রাহনাফের হাত দিয়ে মুখ ডেকে উকি মেরে তাকিয়ে থাকে সেই গাড়ির দিকে। যদি তার মায়ের মুখখানা আর একবার দেখতে পায়। সেই থেকে মন খারাপ হয়ে আছে রাহনাফের। পুকুরে একের পর পর ঢিল ছুড়ছে সে এমনি সময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। বুক পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে মোবাইলের স্কিনে আলিহানের নামটা জ্বলজ্বল করছে। কল রিসিভ করে মোবাইলটা কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আলিহান বলে উঠে,
– একটু মাঠে আসতে পারবি?
– কেন??
– রাহি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে। আমি আর রাহি মাঠের পাশে বসে আছি।
– ওকে আমি আসছি। কল কেটে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাহনাফ, মোবাইলটা আবার বুক পেকেটে রেখে হাটা শুরু করতে মাঠের দিকে।
প্রায় দশ মিনিট পর রাহনাফ মাঠে পৌছায় গিয়ে। মাঠের এক পাশে কৈশোররা ক্রিকেট খেলছে। রাহনাফকে দেখে দুজন ছেলে দৌড়ে আসে তার কাছে আর বলে তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে। রাহনাফ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে অধোরে হাসির রেখা টেনে জবাব দেয় সে আজ খেলবে না। তারপর সে চলে যায় মাঠের অন্যপান্তে বসে থাকা রাহি আর আলিহানের কাছে। রাহি মন মরা হয়ে বসে আছে আর আলিহান ওর পাশে বসে ওকে কিছু বলছে। রাহনাফ ধীর পায়ে ওদের কাছে দাঁড়াতেই রাহি উঠে দাঁড়িয়ে যায় সাথে আলিহানও। রাহনাফকে দেখে রাহি স্মিত হাসে তারপর সে কিছু বলবে তার আগেই রাহনাফ বলে উঠে,
– রাহি আই এম সরি। মাথা নিচু করে ফেলে রাহনাফ।
রাহি কিছুক্ষণ রাহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখমুখে তার না পাওয়ার হাজারও যন্ত্রনা, কষ্ট। রাহির চোখদুটো যেন বারবার বলে চলেছে, ভালোবাসি রাহনাফ ভালোবাসি। স্মিত হাসে রাহি। অতঃপর সে বলে উঠে,
– সরি তো আমার বলা উচিৎ রাহনাফ। আমার বুঝা উচিৎ ছিলো জোড় করে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তবে তুমি আমার আপুকে ভালোবাসো এতেই আমি অনেক খুশি। মেহের আপু আমার বোন। আমার বড় বোন সেটা তুমি আমার আগে থেকেই জানো রাহনাফ। আজ আলিহান ভাইয়া না বললে তো আমি সত্যিটা জানতেই পারতাম না, আমার আপুর উপর দিয়ে কত কষ্ট লাঞ্ছনার ঝড় বয়ে গেছে। আমার বাবা তার মনস্কামনা পূরণের জন্যে মেহের ও তার মায়ের জিবনটা এমন ভালো নষ্ট করেছে। রাহনাফ তুমি আমাকে ভালোবাসো না এতে আমার কোন কষ্ট নাই। তুমি আমাকে নাই ভালোবাসো, আমার আপুকে তো ভালোবাসো তুমি এতেই আমি খুশি। এভাবেই সারাজীবন আমার আপুকে ভালোবেসো তুমি রাহনাফ। দেখবে একদিন আপুও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমরা তো আছিই, হেল্প করবো তোমাকে। কথাগুলো বলে ভুবনবুলানো হাসি দেয় রাহি। রাহনাফ অবাক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এটাই কি সেই রাহি যে কয়েকদিন আগেও তাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিচ্ছিলো। রাহনাফকে পাবে না হাতের রগ কেটে সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো আর আজ সে কি সুন্দর অনায়াসে কথাগুলো বলছে।
– হ্যলো মিস্টার না হওয়া দুলাভাই, কোথায় হাড়ালেন আপনি? রাহনাফের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে রাহি।
রাহনাফ চোখের পলক ফেলে মিটমিট করে নেয় কিছুক্ষণ তারপর বলে,
– আসলে ভাবছিলাম, এটাই কি সেই রাহি যাকে আমি চিনি। না মানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহিকে আমি চিনিনা। বড্ড অচেনা লাগছে।
– তুই একদম ঠিক বলেছিস রাহনাফ। রাহনাফের কাধে হাত রেখে বলে আলিহান। প্রথমে আমিও অবাক হয়েছিলাম। রাহির হঠাৎ করে এমন পাল্টে যাওয়া আমাকে খুব অবাক করে দিয়েছিলো। পরে যখন জানতে পারলাম রাহি ছোট চাচা আর মেহেরের সম্পর্কটার কথা জানতে পেরেছে আর সেটা নিয়েই কিছুদিন যাবৎ একটু ডিস্টার্ব আছে তাই আজ আমি ওকে সবটা বলি। তবে মজার ব্যাপার কি জানিস রাহনাফ, রাহি যেদিন জানতে পেরেছে মেহেরে ওর বড় বোন সেদিনিই কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে মেহেরকে নিজের বোন হিসাবে মেনে নিয়েছে। মানতে পারেনি শুধু মেহু। রাহি যখনি ওকে আপু বলে ডাক দেয় তখনি মেহু অগ্নিমূর্তি রুপ ধারন করে।
– এটাই কি স্বাভাবিক নয়। মৃদু হেসে বলে রাহনাফ। মেহেরের জায়গায় আমরা যে কেউই এমনটা করতাম।
– হ্যাঁ হ্যাঁ, মেহু যা করে সবটাই তো তোর কাছে রাইট। একদিকে মেহুর কথা অন্যদিকে পুরো পৃথিবীর মানুষের কথা, তবুও তুই মেহুকেই রাইট ধরবি। মেহু যা করুক সবই ঠিক আর বাকি সবাই ভুল। চোখ টিপ দিয়ে বলে আলিহান।
আলিহানের কথার কোন জবাব দেয়না রাহনাফ, অধরোষ্ঠ চেপে হাসে।
– তুমি ঠিক বলেছো রাহনাফ। আপু যতটা না কষ্টে লালিত পালিত হয়েছে তার থেকেও বেশী সে লাঞ্ছনা সহ্য করেছে। আন্টি তার নিজের জায়গা ঠিক রেখে আপু আর মৌ আপুকে বড় করে তুলেছে। আজকাল আন্টির মতো মানুষ কোথায় পাওয়া যায় বলো। আন্টি চাইলে আমাদের এই সমাজের নিয়ম পাল্টে দিতে পারে। তার সিদ্ধান্তকে সবার সম্মান জানানো উচিৎ। মেহু আপু আর কষ্ট পাবে না। রাহনাফ যদি তুমি আমার আপুকে একটুও কষ্ট দাও তবে তোমাকে,,,
– একবার আপনার বোনকে আমার হাতে তুলে দিন। কথা দিচ্ছি কখনো কোন অভীযোগ করতে দিবো না। ভালোবাসায় তার জিবন রাঙিয়ে তুলোবো। রাহিকে থামিয়ে বলে রাহনাফ।
– হুম দিবো দিবো। আপুকে তোমার হাতেই তুলে দিবো মিস্টার রাহনাফ।
– মৃদু হাসে রাহনাফ। আলিহান রাহির মাথায় চাপট মেরে বলে,
– তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি। আমিতো জানতাম আমার রাহি বোনুটা রাগী বদমেজাজি খিটখিটে। তারও এত সুন্দর একটা মব আছে সেটা জানতাম না। আই ওয়িশ তোর জিবনে এমন কেউ আসুক যে তোকে তোর চেয়ে বেশী ভালোবাসুক।
চলবে,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।
[আসসালামু আলাইকুম। ব্যাস্ততার কারনে দুইদিন গল্প দেইনি তার জন্যে দুঃখিত। এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে কাউকে জানাতেও পারি নি। দুঃখিত আমি আপনাদরে অপেক্ষা করানোর জন্যে]#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [১৯]
কখনো কখনো সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কালো মেঘ এসে ভেঙে দেয় সাজানো সংসার। আবার অনেক সময় দুর্ঘটনায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় একটি পরিবার। যে কারণেই হোক, মানুষকে দুঃসময় কাটিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লড়াই। সংসার ভাঙ্গনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয় তার মাকে। সন্তানকে বড় করার জন্য তাকেই হয়ে উঠতে হয় বাবা-মা দুই-ই। একইসাথে সামাজিক ও পারিবারিক চাপ কাটিয়ে একা এগিয়ে চলা বেশ কঠিন। আজকের সমাজে এমন সিঙ্গেল মাদার বা একক মায়েদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও নেহায়েত কম না। দিনে দিনে পরিবার ভাঙ্গনের সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে একক বাবা মায়ের সংখ্যা। তবে একদিন আমাদের দেশেও একক বাবা মা শব্দটার প্রচলন হবে। তখন একক বাবা মায়ের সন্তানরা যখন তার বাবা-মাকে সিঙ্গেল বাবা – মা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে তখন লোক সমাজের কাছে শুনতে হবে না, তোমার বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিলো তো! নাকি তোমার মা কুমারী মা হয়েছিলো। একটা সন্তানের জন্যে এর থেকে খারাপ কথা আর কি হতে পারে। দীর্ঘ শ্বাস নেয় মেহের। তার এই ভাবনা আধো পূর্ন হবে তো।
৩০
রাহনাফের মনটা আজ তিক্ততায় ঘেরা। তিক্ত মনে বাসার সামনে পুকুরপাড়ে বসে পুকুরে মাটির ঢিল ছুড়ে মারছে সে।যার ফলে পুকুরের পানিতে তরঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্য সময় হলে রাহনাফ তরঙ্গ দেখার জন্যে হলেও উৎসাহ নিয়ে পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়তো। কিন্তু আজ সে নিজের মনের তিক্ততা দূরীকরণের জন্যে ঢিল ছুড়ে মারছে। কোন কিছুতে মন বসাতে পারছে না। ঢিল ছুড়তে ছুড়তে একসময় ক্লান্ত হয়ে যায় রাহনাফ তবুও ওর মনের তিক্ততা দূর হয়না। এতদিন পর নিজের মাকে চোখের সামনে দেখেও তার থেকে মুখ লুকিয়ে চলে আসাটা নিজের কাপুরুষের পরিচয় বহন করে। দুপুরে কোচিং থেকে ফেরার সময় রাস্তায় জ্যামে আটকে যায় রাহনাফ। আর সেই জ্যামেই সে তার মাকে দেখতে পায়। বড় গাড়িতে একটা সাদা থান পরে বসে আছে তার মা। জানালা দিয়ে শুধু মায়ের মুখ দেখেছিলো সে আর তার কাধে থাকা সাদা থানটা। এতগুলো বছর পর নিজের মাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় রাহনাফ। মা-কে হাড়িরে ফেলার কষ্ঠে বুকটা তার হাহাকার করতে থাকে। চারিদিকে কেমন শুন্যতা অনুভকরে সে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে তার মায়ের মুখখানা দেখতে থাকে। গাড়িতে বসে থাকা রাহনাফের মা যখন জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকায় তখন রাহনাফ হাতদিয়ে তার মুখটা ঢেকে ফেলে। তার মনের মাঝে ভীতি সঞ্চার হয় তার মা তাকে দেখলে হয়তো কষ্ট পাবে। পরক্ষনে মনে হয় আচ্চা রাহনাফের কথা তার আধৌ মনে আছে কি! নাকি তার নতুন সন্তানদের পেয়ে তার কথা ভুলে গেছে তার মা। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। রাস্তায় জ্যাম ছুটলে রাহনাফের মায়ের গাড়িটা চলে যায় আর রাহনাফের হাত দিয়ে মুখ ডেকে উকি মেরে তাকিয়ে থাকে সেই গাড়ির দিকে। যদি তার মায়ের মুখখানা আর একবার দেখতে পায়। সেই থেকে মন খারাপ হয়ে আছে রাহনাফের। পুকুরে একের পর পর ঢিল ছুড়ছে সে এমনি সময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। বুক পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে মোবাইলের স্কিনে আলিহানের নামটা জ্বলজ্বল করছে। কল রিসিভ করে মোবাইলটা কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আলিহান বলে উঠে,
– একটু মাঠে আসতে পারবি?
– কেন??
– রাহি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে। আমি আর রাহি মাঠের পাশে বসে আছি।
– ওকে আমি আসছি। কল কেটে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাহনাফ, মোবাইলটা আবার বুক পেকেটে রেখে হাটা শুরু করতে মাঠের দিকে।
প্রায় দশ মিনিট পর রাহনাফ মাঠে পৌছায় গিয়ে। মাঠের এক পাশে কৈশোররা ক্রিকেট খেলছে। রাহনাফকে দেখে দুজন ছেলে দৌড়ে আসে তার কাছে আর বলে তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে। রাহনাফ তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে অধোরে হাসির রেখা টেনে জবাব দেয় সে আজ খেলবে না। তারপর সে চলে যায় মাঠের অন্যপান্তে বসে থাকা রাহি আর আলিহানের কাছে। রাহি মন মরা হয়ে বসে আছে আর আলিহান ওর পাশে বসে ওকে কিছু বলছে। রাহনাফ ধীর পায়ে ওদের কাছে দাঁড়াতেই রাহি উঠে দাঁড়িয়ে যায় সাথে আলিহানও। রাহনাফকে দেখে রাহি স্মিত হাসে তারপর সে কিছু বলবে তার আগেই রাহনাফ বলে উঠে,
– রাহি আই এম সরি। মাথা নিচু করে ফেলে রাহনাফ।
রাহি কিছুক্ষণ রাহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখমুখে তার না পাওয়ার হাজারও যন্ত্রনা, কষ্ট। রাহির চোখদুটো যেন বারবার বলে চলেছে, ভালোবাসি রাহনাফ ভালোবাসি। স্মিত হাসে রাহি। অতঃপর সে বলে উঠে,
– সরি তো আমার বলা উচিৎ রাহনাফ। আমার বুঝা উচিৎ ছিলো জোড় করে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তবে তুমি আমার আপুকে ভালোবাসো এতেই আমি অনেক খুশি। মেহের আপু আমার বোন। আমার বড় বোন সেটা তুমি আমার আগে থেকেই জানো রাহনাফ। আজ আলিহান ভাইয়া না বললে তো আমি সত্যিটা জানতেই পারতাম না, আমার আপুর উপর দিয়ে কত কষ্ট লাঞ্ছনার ঝড় বয়ে গেছে। আমার বাবা তার মনস্কামনা পূরণের জন্যে মেহের ও তার মায়ের জিবনটা এমন ভালো নষ্ট করেছে। রাহনাফ তুমি আমাকে ভালোবাসো না এতে আমার কোন কষ্ট নাই। তুমি আমাকে নাই ভালোবাসো, আমার আপুকে তো ভালোবাসো তুমি এতেই আমি খুশি। এভাবেই সারাজীবন আমার আপুকে ভালোবেসো তুমি রাহনাফ। দেখবে একদিন আপুও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমরা তো আছিই, হেল্প করবো তোমাকে। কথাগুলো বলে ভুবনবুলানো হাসি দেয় রাহি। রাহনাফ অবাক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এটাই কি সেই রাহি যে কয়েকদিন আগেও তাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দিচ্ছিলো। রাহনাফকে পাবে না হাতের রগ কেটে সুইসাইড করতে যাচ্ছিলো আর আজ সে কি সুন্দর অনায়াসে কথাগুলো বলছে।
– হ্যলো মিস্টার না হওয়া দুলাভাই, কোথায় হাড়ালেন আপনি? রাহনাফের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে রাহি।
রাহনাফ চোখের পলক ফেলে মিটমিট করে নেয় কিছুক্ষণ তারপর বলে,
– আসলে ভাবছিলাম, এটাই কি সেই রাহি যাকে আমি চিনি। না মানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহিকে আমি চিনিনা। বড্ড অচেনা লাগছে।
– তুই একদম ঠিক বলেছিস রাহনাফ। রাহনাফের কাধে হাত রেখে বলে আলিহান। প্রথমে আমিও অবাক হয়েছিলাম। রাহির হঠাৎ করে এমন পাল্টে যাওয়া আমাকে খুব অবাক করে দিয়েছিলো। পরে যখন জানতে পারলাম রাহি ছোট চাচা আর মেহেরের সম্পর্কটার কথা জানতে পেরেছে আর সেটা নিয়েই কিছুদিন যাবৎ একটু ডিস্টার্ব আছে তাই আজ আমি ওকে সবটা বলি। তবে মজার ব্যাপার কি জানিস রাহনাফ, রাহি যেদিন জানতে পেরেছে মেহেরে ওর বড় বোন সেদিনিই কিন্তু কোন প্রশ্ন না করে মেহেরকে নিজের বোন হিসাবে মেনে নিয়েছে। মানতে পারেনি শুধু মেহু। রাহি যখনি ওকে আপু বলে ডাক দেয় তখনি মেহু অগ্নিমূর্তি রুপ ধারন করে।
– এটাই কি স্বাভাবিক নয়। মৃদু হেসে বলে রাহনাফ। মেহেরের জায়গায় আমরা যে কেউই এমনটা করতাম।
– হ্যাঁ হ্যাঁ, মেহু যা করে সবটাই তো তোর কাছে রাইট। একদিকে মেহুর কথা অন্যদিকে পুরো পৃথিবীর মানুষের কথা, তবুও তুই মেহুকেই রাইট ধরবি। মেহু যা করুক সবই ঠিক আর বাকি সবাই ভুল। চোখ টিপ দিয়ে বলে আলিহান।
আলিহানের কথার কোন জবাব দেয়না রাহনাফ, অধরোষ্ঠ চেপে হাসে।
– তুমি ঠিক বলেছো রাহনাফ। আপু যতটা না কষ্টে লালিত পালিত হয়েছে তার থেকেও বেশী সে লাঞ্ছনা সহ্য করেছে। আন্টি তার নিজের জায়গা ঠিক রেখে আপু আর মৌ আপুকে বড় করে তুলেছে। আজকাল আন্টির মতো মানুষ কোথায় পাওয়া যায় বলো। আন্টি চাইলে আমাদের এই সমাজের নিয়ম পাল্টে দিতে পারে। তার সিদ্ধান্তকে সবার সম্মান জানানো উচিৎ। মেহু আপু আর কষ্ট পাবে না। রাহনাফ যদি তুমি আমার আপুকে একটুও কষ্ট দাও তবে তোমাকে,,,
– একবার আপনার বোনকে আমার হাতে তুলে দিন। কথা দিচ্ছি কখনো কোন অভীযোগ করতে দিবো না। ভালোবাসায় তার জিবন রাঙিয়ে তুলোবো। রাহিকে থামিয়ে বলে রাহনাফ।
– হুম দিবো দিবো। আপুকে তোমার হাতেই তুলে দিবো মিস্টার রাহনাফ।
– মৃদু হাসে রাহনাফ। আলিহান রাহির মাথায় চাপট মেরে বলে,
– তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি। আমিতো জানতাম আমার রাহি বোনুটা রাগী বদমেজাজি খিটখিটে। তারও এত সুন্দর একটা মব আছে সেটা জানতাম না। আই ওয়িশ তোর জিবনে এমন কেউ আসুক যে তোকে তোর চেয়ে বেশী ভালোবাসুক।
চলবে,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা