মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর-৩৮,৩৯

0
516

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর-৩৮,৩৯
মাহফুজা_আফরিন_শিখা
৩৮

৪৮,
কলেজের সামনে থাকা বিশাল দিঘীর পাড়ে বসে আছে মেহের আর মৌ। মৌ-কে জোর করে আজ কলেজে নিয়ে আসছে মেহের। আগামি কাল কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আজ মেহেরের উপর অনেক দায়িত্ব। আর মেহের মৌ-কে ছাড়া কোন কাজ ঠিক মত করতে পারছে নাকি! সব কাজেই দু-বোন একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাইতো আজও মৌ-কে জোর করে কলেজে নিয়ে আসে মেহের। দীঘির পাড়ে বসে মোবাইলে স্কলিং করছে মৌ। আর মেহের অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিঘীর দিকে। মৌ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

– তুই কোন গানে নৃত্য করবি সেটা সিলেক্ট করেছিস?

মৌ-য়ের কথা মনে হয় মেহেরের কর্ণপাত হয়নি।সে কোন রিসপন্স না দিয়ে আগের মতই তাকিয়ে আছে। এটা লক্ষ করতেই মৌ মেহেরে কাঁধে হাত রাখে। নিজের কাঁধে শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে মেহের। পাশ ফিরে মৌ-য়ের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকায়। মৌ ভ্রুযুগলে কিৎচিত ভাজ ফেলে সুধায়,

– এত মনোযোগ দিয়ে কার কথা ভাবছিস মেহু! মেহের কপাল কুঁচকে ফেলে। মৌ স্মিত হাসে অতঃপর বলে,

– রাহনাফের কথা ভাবছিস তো! চলে আসবে, চলে আসবে! এখন রাহনাফের কথা না ভেবে নিজের পারফরমেন্সের কথা ভাব। সবাইকে শিখাতে শিখাতে নিজের কথা ভুলে গেছিস।

– নারে। আমি ভাবছি অন্যকিছু। সামনের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় মেহের।

– কি ভাবছিস তুই!

– রাহির কথা। আগামি কাল কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অথচ রাহি আজ চারদিন যাবৎ কলেজে আসছে না। আবার আমাদের বাসায়ও আসে নি। আচ্ছা রাহি কি কাল অনুষ্ঠানে আসবে না।

মেহেরের মুখে রাহির নাম শুনে মৌ অবাক হয়ে যায়। যে মেহের রাহিকে সহ্য করতে পারে না তার মুখে রাহির নাম। রাহিকে দেখতে পাচ্ছে না বলে তার জন্যে চিন্তা হচ্ছে। মৌ-য়ের অধোরে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে কাধ নাড়িয়ে বলল,

– রাহিকে মিছ করছিস তো। করবি না কেন! বোন হয় না তোর। মিছ করাটাই স্বাভাবি তাইনা।

মৌ-য়ের দিকে শক্ত চোখে তাকায় মেহের। মেহেরের এমন চাহনি দেখে শুকনো ডুকগিলে মৌ। অতঃপর বলে,

– না তুই রাহির কথা জিগ্যেস করবি তাই বললাম। মৌ-য়ের কথা শেষ হলেই চক্ষুদ্বয় কিছুটা সংকোচিত করে ফেলে মেহের। সামনের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,

– কলেজে আসছে না তাই জিগ্যেস করছি। কলেজে আসলে তো সারাক্ষণ আমার পিছু পিছু ঘুরঘুর করতো। আলিহান ভাই তো রাহির সব খরব রাখে তাই তোর কাছে জিগ্যেস করলাম। আর তুই! ভালোই হয়েছে কলেজে আসছে না। অসহ্য নেকা মেয়ে একটা। বিরক্তিকর,,, বিরক্তি সহিত বলে মেহের।

– রাহি কয়দিন কলেজে আসবে না। শীতল কন্ঠে জবাব দেয় মৌ।

– ওহ। ছোট্ট একটা শব্দ বলেই উঠে দাঁড়ায় মেহের। চলে আসার জন্যে সামনের দিকে এক পা বাড়াতেই পিছন থেকে মৌ বলে উঠে,

– রাহি কেন কলেজে আসবে না সেটা জানতে চাইবি না।

পিছনের দিকে ঘুরে তাকায় মেহের অতঃপর বলে,

– জিগ্যেস করার কি আছে। হয়তো তার বাবা মায়ের সাথে কোথাও বেড়াতে গেছে তাই। এসব আমার জানার কোন ইচ্চেই নেই। মৌ-কে টেনে তুলে বলে, হলরুমে চল। সেখানে অনেক কাজ আছে। মৌ-য়ের হাত ধরে সেখান চলে আসতে নেয়ে মেহের। কয়েকপা এগোতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায় মৌ। মেহের ভ্রুযুগলে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে মৌ-য়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো,

– দাঁড়িয়ে পরলি কেন? চল আমার সাথে।

– আমার তোকে কিছু বলার আছে মেহু। মৌ মেহেরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর মেহেরের দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,

– মেহু, আংকেল অসুস্থ। হার্ট এট্যাক করে প্যারালাইজড হয়েছে। আংকেলের স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এ জন্যেই রাহি কলেজে আসছে না।

থমকে যায় মেহের। কানের কাছে প্রতিধ্বনির ন্যায় মৌ-য়ের বলা দুটো শব্দ বাজতে থাকে “আংকেল অসুস্থ। হোক না সে অসুস্থ তাতে মেহেরি কি? কে হয় লোকটা তার। হয় তো বায়োলজিক্যাল বাবা সে মেহেরের। এটাই তো সৈয়দ নওশাদের সাথে মেহেরের সম্পর্ক। তাছাড়া আর কি!! মেহের তার তার হাতের মুঠি শক্ত করে নেয়। মনের ভিতরে কোথাও চাপা কষ্ট অনুভব করে সে। কি এই ব্যাথার কারন সেটা জানা নেই মেহেরের। তবে কি, নাম মাত্র বাবার অসুস্থতার কথা শুনে কষ্ট হচ্চে মেহেরের! না এটা কি করে হতে পারে। মেহের তো তাকে বাবা হিসাবে মানেই না।

হলরুমে এসে নিজের ডান্সের স্টেপগুলো দেখছিলো মেহের। মৌ বাকি সবার ডান্সের স্টেপ দেখে নিচ্ছে। এমনি সময় আহসান আসে হল রুমে। মেহেরকে ডান্স করতে দেখে সে দাঁড়িয়ে যায়। ওদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বুকের উপর হাত গুজে দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহেরের দিকে। মেহের তখনো মনোযোগ দিয়ে নিজের ডান্স পারফরমেন্স করছে। আহসানকে দেখে মৌ তার কপাল কুঁচকে ফেলে। তার সামনে গিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

– এই মিস্টার হ্যান্ডসাম, ওদিকে হা করে কি দেখছেন আপনি? আর আপনি কে বলুন তো? গালে হাত রেখে ভাবনার ভঙ্গিমায় বলে কথাটা। আহসান ভ্রুযুগলে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে মৌ-য়ের দিকে তাকাতেই মৌ আবার বলে উঠে, আপনাকে হলরুমে ডুকতে দিয়েছে কে?
কথা বলছেন না কেন? স্যারকে ডাকবো! কোথা থেকে যে আসে এসব উদ্ভট ছেলেপুলে। আর দারোয়ানের কথাও বলি, কেন যে সে যাকে তাকে কলেজে প্রবেশের অনুমিত দেন। মুখচোকে বিরক্তি ছাপ এসে পরে মৌ-য়ের।

আহসান হলরুমের প্রতিটা কোনে অবলোকন করে নিয়ে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মৌ-য়ের দিকে। হাত দিয়ে নিজের চাপ দাঁড়িয়ে হাত বুলিয়ে অধোরে হাসির রেখা টেনে বলে উঠে,

– আপনি এই কলেজের স্টুডেন্ট তো!

– হ্যাঁ।

– তাহলে আমাকে না চেনার কোন কারন তো দেখতে পাচ্ছি না। মনেহয় ঠিকমত ক্লাসে আসেন না।

আহসানের কথা শুনে অধোর কামড়িয়ে চোখ মিটমিট করে নেয় মৌ। অতঃপর বলে,

– আপনি কোন মহামানব যে আপনাকে চিনতে হবে। এক কাজ করুন আপনার পিঠে বড় করে একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে সেখানে আপনার পরিচয় দিয়ে রাখবেন ওকে। তাহলে সবাই আপনাকে চিনবে। কেউ আর আপনার কাছে আপনার সম্পর্কে জানতে চাইবে না।

মৌ-য়ের কথা শুনে বেশ বিরক্ত বোধ করে আহসান। উপরের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস ফেলে। ততক্ষণে আশপাশের কয়েকজন মেয়ে এসে দাঁড়ায় ওদের পাশে। আহসানকে এরকম করতে দেখে পাশ থেকে এক যুবতি বলে উঠে,

– স্যার, কোন প্রবলেম হয়েছে কি? আমাকে বলতে পারেন।

যুবতীর কথা শুনে আহসান মৃদু হাসলেও হাসতে পারে না মৌ। মৌ-য়ের চোখ বড় বড় রসোগোল্লার মত হয়ে যায়। সে অবাকের সূরে বলে,

-স্যা-স্যার।

তখন পাশ থেকে আরেক মেয়ে বলে উঠে, হ্যাঁ মৌ এনি আমাদের নতুন টিচার। মৌ মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে স্যারকে সরি বলে। বিনিময়ে আহসান ও মৃদু হাসে।

আজ মেহেরের মনটা বিষন্নতায় ঘেরা। কোন কাজে মন বসাতে পারছে না সে। সকালে মৌ-য়ের মুখে সৈয়দ নওশাদের কথা শুনে তার খারাপ লাগলেও পরে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে সে। ওই লোকটার যা খুশি হোক তাতে তার কি আসে যায়। তাকে নিয়ে ভেবে নিজের সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয়না। আমাদের দেশে প্রতিদিন কত শত লোক মারা যায় কই তাদের নিয়ে তো আমরা কেউ মাথা ঘামাই না। তাদের মধ্যে তো সৈয়দ নওশাদ আহমেদ ও পরে। তাহলে তাকে নিয়ে কেন এত ভাবছি আমি। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৫০০ মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ। করনা ভাইরাস নিয়ে এক সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন যে, এর মধ্যে ৬৫ ভাগ বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যধিতে মারা যান। ২৪ ভাগ মানুষ মারা যান বার্ধক্যজনিত কারণে। এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু।
তিনি বলেন যে, করোনার কারণে এই মৃত্যুর হার বাড়েনি বরং বাংলাদেশে যে স্বাভাবিক মৃত্যু আছে সেটাই বজায় রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০০ মানুষ মারা যাচ্ছে। যে কোন মৃত্যুই করোনাজনিত মৃত্যু এই ভ্রান্ত ধারণা ঠিক নয়। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।

সন্ধার আকাশে যে চঞ্চলা সন্ধা তারা উঠেছিল সেটা চঞ্চল পায়েই চলে গিয়েছে। এখান চারিদিকে ঘন কাল অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যেয় সেখানে কেমন একটা চাদকে ঘিরে হাজার তারার মেলা। বিষন্নমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেহের। আজ সারাদিন রাহনাফ এক বারও তাকে কল করে নি। আচ্ছা রাহনাফ কি জানে না তার সাথে কথা না হলে মেহেরের অস্বস্তি হয় তাহলে কেন সে আজ কল করলো না। দু-চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলে উঠে, প্লিজ রাহনাফ ফিরে এসো। আর তখনি তার মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠে। মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখতে পায়, স্কিনে রাহনাফের নামটা জ্বলজ্বল করছে। অধোরে হাসির রেখা ফুটে উঠে মেহেরের। কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে সে।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

#মেঘ_ভাঙ্গা_রোদ্দুর। [৩৯]

আমি বিংশ শতাব্দীর মানুষ, কিন্তু এখনো আমি কৃত্রিম আলোয় ডুবে যাই নি।আর সবার মতো ফ্লোরোসেন্ট আলো আমাকে ভোলাতে পারে নি।আদিম সেই চন্দ্রালোকিত শিহরণের কথা।
অনাদিকাল ধরে শরীরে এক আশ্চর্য শিহরণ বোধ করে।
আমি সেই মানুষগুলোর একজন, যারা এখনো আকাশ দেখতে ভুলে যায় নি।এখনো যারা রোমাঞ্চ খোঁজে জোছনায়, পূর্ণিমায়।

ফোনের অপর পাশ থেকে কথাগুলা বলল রাহনাফ। রাহনাফের কথা শুনে মেহেরের মনে হীম শীতল শিহরণ বয়ে যায়। অধোর কাঁপছে, কথাগুলো গলায় এসে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে। কথাগুলো যে তাকে ঘিরেই বলা হয়েছে এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি মেহেরের। মেহেরকে এমন চুপচাপ দেখে ওপাশ থেকে রাহনাফ বলে উঠে,

– লেখিকার মন খারাপ বুঝি।

স্মিত হাসে মেহের। সে রাহনাফের কথার কোন জবাব দিচ্চে না। ইচ্ছে করেই দিচ্ছে না। সারাদিন একটি বারের জন্যে মেহেরের খোজ নেয়নি সে। আর এখন জ্যোৎস্নাময় রাতে রোমান্টিক কথা বললেই সব ভুলে যাবে। মোটেও না। দূর আকাশের ওই চাদের দিকে তাকায় মেহের। লম্বা করে শ্বাস টেনে বলে,

– আকাশের ওই মিটিমিটি তারার সাথে কইবো কথা।তোমার স্মৃতির পরশভরা অশ্রু নিয়ে গাঁথবো মালা নাই-বা তুমি এলে।

মেহেরের এমন অভিমানী কথা শুনে মৃদু হাসে রাহনাফ। অতঃপর বলে,

– অভিমানীনি।

কোন জবাব দেয়না মেহের। মোবাইলে কানের কাছে ধরে বসে থাকে। ওপাশ থেকে রাহনাফও তাই। কেউ কোন কথা বলছে না। এভাবেই চলছে সময়।

– নিচের দিকে তাকাও লেখিকা সাহেবা। প্রায় ঘন্টা খানেক পা বলে রাহনাফ। মোবাইলটা তখনো মেহেরের কানের কাছেই ছিলো। রাহনাফ কথা বলছে না দেখে সে মোবাইল কানের কাছে ধরে দু-চোখ বন্ধ করে রেখেছে। দু-চোখে নেমে আসছে রাজ্যের ঘুম। হঠাৎ করেই রাহনাফের কন্ঠ শুনতে পেয়ে চমকে উঠে সে। এপাশ ওপাশ তাকিয়ে মোবাইলের দিকে তাকায়। রাহনাফ এখনো কে কাটে নি, মানে মোবাইল থেকে আওয়াজ আসছে। আরো একবার পরখ করে নিল সে মোবাইলটা। তারপর বলল,

– রাহনাফ আপনি এখনো কল কাটেন নি।

– নিচে তাকাও।

– কেন! কি আছে নিচে।

– তাকালেই দেখতে পাইবা। তাকাও!

রাহনাফের কথা মত নিচের দিকে তাকায় মেহের। মেহেরের বারান্দা বরাবর নিচে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় সে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রাহনাফের হাসি মুখটা জ্বলমল করছে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাহনাফ। কিন্তু রাহনাফ তো তার বাড়িতে! তাহলে সে এখানে কি করছে! এটা তার মনের ভুল নয়তো। নিজের হাতে চিমটি কাটে মেহের। ব্যাথা লাগছে। তার মানে সত্যিই রাহনাফ এখানে। আনমনে হেসে উঠে মেহের। অধোরে হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,

– রাহনাফ আপনি এখানে!!

স্মিত হাসে রাহনাফ। অতঃপর বলে,

– বাহিরে আসতে পারবে।

– এখন অনেক রাত। কেউ দেখতে পেলে বদনাম হবে।

– বদনাম হলে হোক না! মন কুটিরে জায়গা করে দিব তোমায়। বলতে ইচ্ছে করলেও সেটা মুখে প্রকাশ করল না রাহনাফ কল কেটে মোবাইলটা পকেটে পুরে মেহেরের রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। সামনে তাকা দেয়াল ডেঙ্গিয়ে মেহেরের রুমে চলে আসে রাহনাফ। মেহের প্রথমে ভয় পেলেও পরে সে নিজেকে সামলে নেয়। মেহের ও রাহনাফ দুজনে মিলে মেহেরের বারান্দায় জ্যোৎস্না বিলাস করছে। রাহনাফের কাঁধে মেহেরের মাথা। আর রাহনাফ এক হাতে মেহেরকে আগলে ধরে অন্য হাতে মেহেরের এক শক্ত করে ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর রাহনাফ তার পকেট থেকে একটা রিং বের করে মেহেরের হাতে পরিয়ে দিয়ে হাতের উল্টোদিকে আলতো করে নিজের অধোর ছুঁইয়ে দেয়। লজ্জা পেয়ে মেহের রাহনাফের বুকে মুখ লুকার। স্মিত হাসে রাহনাফ। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

– ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলোনা, ও বাতাস আঁখি মেলো না
আমার প্রিয়া লজ্জা পাচ্চে যে।

৪৯
– আজ বৃষ্টির মাঝে সকাল সাজে, মেঘের শবদ্দ খানেতে বাজে। কিছু বিরহের স্মৃতি বুকের মাঝে প্রণয় সৃষ্টি করে রাহির। মনের ভিতরে কষ্টের ঘন্টা বাঝতে শুরু করে। তার জীবনটা কেন প্রেমহীন, কেন তার জিবনে প্রিয় মানুষের ভালোবাসা নেই। চোখ মেলে জানালার থাই গ্লাসের দিকে তাকায় রাহি। বৃষ্টির ফোটা গ্লাসের উপর পরে সেটা শিড় বেয়ে নিচে পরে যাচ্ছে। বাহিরে থাকা গাছগুলাকে আজ সতেজ লাগছে। বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার কাছে যায় সে। জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ধরার ব্যার্থ চেষ্টা করে। হাত থেকে বৃষ্টির ছিটা এসে তার মুখে পরছে। আজ সকালটা বেশ অন্যরকম লাগছে রাহির। সুন্দর স্মৃগ্ধ বেশ ফুরফুরে সকাল। বৃষ্টির পানি গায়ে মাখছে রাহি। ইশ কতদিন এমনটা খেলা হয় না। এর আগের বছর যখন রাহি বৃষ্টিতে ভিজত তখন তার মা তাকে কত বকাঝকা করবো। তাই চুপিচাপি বৃষ্টিতে ভিজতো। মা যখন কিছু বলতো তখনি সে তার বাবার পাশে গিয়ে লুকাতো। অতীতের কথা মনে পড়তেই দু-চোখ অশ্রুতে ভরে উঠে তার। মাস কয়েকের মাঝে তার জিবন কতটা বদলে গেছে। কত বড় হয়ে গেছে রাহি। ভাবতেই স্মিত হাসে সে। ইশ এসব ভাবতে গিয়ে সে ভুলেই গিয়েছে তার বাবার কথা। রাহিকে হসপিটালে যেতে হবে।সৈয়দ নওশাদকে সুস্থ করে তুলার জন্যে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় । জানালা ছেড়ে এসে ওয়াশরুমে ডুকে পরে।

ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই থমকে যায় রাহি। চারিদিকে স্তব্ধ, শূন্যতা অনুভব করে সে। সামনে থাকা লোকটাকে দেখে যতটা না রাগ হচ্ছে তার চেয়ে বেশী ঘৃনা হচ্চে। রাগে নিজের হাতের শক্ত মুঠি করে নেয় সে। নাক ফুলিয়ে দাত কটমট করে দু-পা সামনে এগিয়ে লোকটার নিকটে চলে আসে। আর তখনি সে খেয়াল করে সুফায় বসপ আছে রাহনাফ। নিচের দিকে তাকিয়ে বড় বড় করে শ্বাস ত্যাগ করছে সে। দু-হাতে শক্তকরে কুশন জড়িয়ে রেখেছে। দেখে মনে হচ্ছে এই কুশন খুন করার মতো অপরাধ করেছে তাই তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে তাকে এভাবে শাস্তি দিচ্চে রাহনাফ। রাহি তার দৃষ্টি সড়িয়ে তার দাদির দিকে নিক্ষেপ করে। দাদি তখন ড্রয়িংরুমের এক কোনে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে। রাহি তার রাহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

– রাহনাফ তুমি এখানে!

মাথা তুলে সামনে তাকায় রাহনাফ। তার চোখের দিকে তাকাতেই একটু পিছনের দিকে ঝুকে পরে রাহি। রাহনাফের চক্ষুদ্বয় লাল বর্ণ ধারন করেছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর চোখে লাল মরিচ গুলিয়ে রেখেছে। চোয়ালগুলো শক্ত। ঘারের রগগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্চে রাহি। রাহি কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে বলে,

– রাহনাফ তুমি ঠিক আছো তো। কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

রাহির প্রশ্নগুলো উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ায় রাহনাফ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আফিয়া আহমেদের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাহিকে বলে উঠে,

– আমার তোমাকে কিছু বলার আছে রাহি।

– হ্যাঁ বল না কি বলতে চাও।

রাহির দৃষ্টি তখন রাহনাফের দিকে। আর রাহনাফ এখনো কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে আফিয়া আহমেদের দিকে।আফিয়া আহমেদ করুন চোখে রাহনাফের দিকে তাকিয়ে দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে না করে। রাহনাফ যেন রাহিকে কিছু না বলে। রাহনাফ তার দৃষ্টি সড়িয়ে রাহিকে বলে,

– কোথায় যাচ্ছ এখন।

– হসপিটালে, বাবার কাছে।

– তাহলে চল, যেতে যেতে বলা যাক।

– হুম চল। অতঃপর রাহি আর রাহনাফ দুইজনেই চলে যেতে নেয়। মেইন ডোরের কাছে আসতেই আফিয়া আহমেদ পিছন থেকে রাহিকে ডাক দেয়। দাঁড়িয়ে যায় রাহি। পিছনের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই সে বলে উঠে,

– এখনো আমার উপর রেগে আছিস তুই মা।

বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে রাহি। অতঃপর বলে,

– তুমি আমার মা। আমাকে জন্ম দিয়েছো লালন পালন করে বড় করে তুলেছো। আমি কি করে তোমার উপর রেগে থাকবো মা। এটা তোমার বাড়ি তুমি চলে এসেছো ভালো হয়েছে।

– আমাকে নিয়ে যাবি না নওশাদের কাছে।

– এইকয়দিন তুমি কোথায় ছিলে মা, যখন আমার বাবা হাসপাতালে মৃত্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল। কোথায় ছিলে তুমি। বাবার পাশে না থেকে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলে তুমি। স্ত্রী হিসাবে কি এটা কোমার কর্তব্যের মধ্যে পরে না।

– আমায় নওশাদের কাছে নিয়ে চল। কান্নামিশ্রত কন্ঠ আফিয়ার।

রাহি কিছু বলে না। নিঃপলক তাকিয়ে থাকে রাহনাফের দিকে।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here