হিজিবিজি (৪র্থ পর্ব)

0
895

গল্পঃ #হিজিবিজি (৪র্থ পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

কেউ আমার হাত চেপে ধরলো। একজোড়া ভয়ানক চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপা গলায় মিনমিন করে উচ্চারণ করলাম..
___ আআপনি

___ কেন এখানে কি অন্য কেউ থাকার কথা ছিল?

___ প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।
বলেই নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।

জাবেরকে দেখে এই প্রথম আমার ভয় লাগছে। তাকে আমি কখনোই ভয় পাইনি, আমাদের মধ্যে দুইদিন আগে পর্যন্তও দুইটা অনূভুতি ছিল, প্রথমটা ভালোবাসার আর ২য় টা ঘৃণার। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে এটা ভয়ানক! তবে এটা আমার দিক থেকে একপাক্ষিক ভয়। জানিনা সামনের দিনগুলো কেমন যায়!

জাবের আমার দিকে এতটা ভয়ংকর চেহেরা নিয়ে তাকায়নি। সে আমাকে ঝাকিয়ে বলে উঠলো.
___ এতো সাহস তোমার! এখানে তুমি লুকিয়ে আমার কথা শুনো তাই না? নেক্সট টাইম আমার দ্বারেকাছে আসার চেষ্টা করলে এই যে হাত (হাতে মুচড় দিয়ে বললো) ভেঙে দিবো।

বলেই সে আমাকে ছেড়ে বিছানার দিকে চলে গেলো।
গিয়ে বেরস কণ্ঠে আবার বললো..
___ যদি ভেবে থাকো তোমার বাড়িতে থেকে তোমাকে হুশিয়ারি করার শাস্তি দিবে কিংবা তোমার পরিবারকে জানাবে তাহলে মনে রেখো আহানের সাথে সবগুলো ছবিই তোমার বাবাকে দেখিয়ে দিবো।

এসব শুনে কান্না ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। সত্যি বাবাকে বললে আমি শেষ!
এদিকে জাবের এভাবে ধরাতে আমার হাতে খুব ব্যথা লাগছে। জাবের এতটা খারাপ কিভাবে হতে পারলো?
তারপর আমার পরে যেই মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো, আমাকে রাগানোর জন্য প্রতিদিন ছবি পাঠাতো সেই মেয়ের সামনে যে আমাকে বিয়ে করেছে৷ আর কোনো দোষ নেই?

সে একটা ছেলে বলে এতো বাহাদুরি দেখাবে! এর উপর আমাকে ছেড়ে আবার আরেকজনকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
ভাবছি সত্যি এই জাবেরকে আমি কখনো চিনতাম ? তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো? মেয়ে হয়েছি বলে এতটা অত্যাচারও সহ্য করতে হবে?
আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে জাবেরের চরিত্র এতো খারাপ হয়ে গেছে। এতো চরম খারাপ ছিহ!
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি, নতুন জাবেরকে চিনার নিমিত্তে।

জাবের গিয়েই বিছানার উপর শুয়ে পায়ের উপর পা রেখে মোবাইল বের করে কাকে যেন ফোন লাগালো। আমি আর এখানে দাঁড়ালাম না। এসব শোনলে আমার কিছু আসবে যাবেনা। অযথা ধমকি শুনবো।
বেড়িয়ে বারান্দায় আসলাম। গভীর রাত! এতো রাতে আমি বন্ধ জানালার দিকে তাকাতেই ভয় পাই। অথচ এখানে এভাবে আজ একটুও ভয় লাগছেনা।
শুধু ভেতরে ভেতরে পুড়ছি। একদিনে জীবনটাকে কেমন বিষাদ লাগছে।
ভাবতে পারিনি এমন একটাদিন আমাকে দেখতে হবে!

আমার মোবাইলটা রুমে ফেলে আসছি, নাহলে এখানে সময় কাটাতে খারাপ লাগতোনা।
ফ্লোরে বসে গ্রীলের উপর হাত ভর করে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি এর শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। আমিও তো জাবেরকে ছেড়ে দিবোনা। আচ্ছা যদি আমিও তার মতো এই প্রতিশোধের খেলায় নেমে পড়ি তাহলে আমার অবস্থান শেকড় ছিড়ে উঠে আসবেনা তো?
মানসম্মান ঠিক রাখতে পারবো?
কিন্তু কিছু একটা ব্যবস্থা না নিলে তো জাবের আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে।
ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছি এখানে৷
সকালের রোদের ঝাপটায় চোখ খোলেই ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা অনূভব হলো।
অসুবিধায় ঘুমানোর জন্য এমনটা হয়েছে।
উঠে রুমের যাওয়ার জন্য দরজায় ধাক্কা দিলাম, একি দরজা বন্ধ করে দিছে জাবের৷
ছি! কতটা নির্দয় হয়ে গেছে সে!

আমার যখন সম্পর্ক ছিলো, রাত জেগে কথা বলতে গেলে প্রায়ই ইচ্ছে করতো বারান্দায় যাই। কিন্তু সে যেতে দিতোনা৷ বলতো আমি নাকি একা ভয় পাবো। কিংবা ভুতপ্রেতের নজর লাগবে। রাতে বাইরে যাওয়া ঠিক না। আরো কতো ন্যাকামো আলাপসালাপ! এখন এগুলো মনে হচ্ছে আর রাগ উঠছে।
এদিকে দরজায় কয়েকবার নক করলাম। কিন্তু নাহ কোনো সাড়া নেই।

চিৎকার চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেটা করলে তো আমারই বিপদ। অসহায় হয়ে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যে শুনতে পেলাম সামনে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। এবার কিছুটা আশার সঞ্চার হলো।
তৎক্ষনাৎ দেখি এদিকের দরজা খোলে দিছে আর সামনের দরজাটা খোলার জন্য জাবের এগুচ্ছে।
ইচ্ছে করে আমি সাথে সাথে রুমে প্রবেশ করিনি। ভাবলাম দেখি কে আসলো আর কি বলে ।

নাহ কিছুই শুনতে পেলাম না, তাই বাধ্য হয়ে রুমে ঢুকলাম। জাবের পেছনে ফিরেই বললো..
__ আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসতে বলছে। যাও তারাতাড়ি!

__ সারারাত বাইরে রেখে আমাকে নাস্তা আনার কথা বলা হচ্ছে? আনবো না আমি,একা নিজে নিজে খেয়ে বসে থাকবো।

___ আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আহান…

এইটুকু বলার আগেই আমি বললাম..
___ ব্যস বুঝতে পেরেছি, সবাইকে বলে দিবেন আহানের ব্যপারে! আর আমি কি বলতে পারবোনা? আপনার সাথে ওই মেয়ের অসংখ্য ছবি আমার কাছে আছে।

___ হাহাহাহা বলে দাও। মাইকওয়ালাকে ১০০ টাকা দিয়ে বলো শহরে ঘোষণা করে দিতে। আর ওই ছবিগুলো ব্যানারে টাঙিয়ে দাও, যাও যাও!

___হুহহহ!

রাগে গজগজ করতে করতে চলে আসলাম। রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম আম্মু,আব্বু,নানু,মামানিরা গল্প করছে। আমাকে দেখেই আম্মু বললো.
___ জাবেরকে কফি দিয়ে আয়।

___আম্মু তার আগে বলো কালকে এই বাড়িতে কি হয়েছিল? ওই যে মেয়েটা বিয়ে করতে আসছিল সে কোথায়?

___এই বাড়িতে তো কাল তোর আর জাবেরের বিয়ে হয়েছে আর কারো বিয়ে হয়নি। আর ওই মেয়েটা জাবেরের খালাতো বোন সাথে বেস্ট ফ্রেন্ড। কথা ছিল ওর বিয়েতে মেয়েটা বউয়ের মতো সাজবে তাই এভাবে সেজে আসছিল।

___অওও তাই নায়া? তাহলে ওই ছেলেটা জামাই সাজছে যে,তারও কি কথা ছিল জাবের ভাইয়ার বিয়েতে জামাই সাজবে নাকি? আম্মু এটা কেমন ফাজলামো বলোতো?!

___ কে তোর ভাই? জাবের তোর জামাই বুঝলি? ভাই ডাকলি কেন হ্যাঁ?

___ ১০০ বার ভাই ডাকবো।

___ সাহস থাকলে সামনাসামনি ডাকিস আমাদের সামনে না! আর শুন ওই ছেলেটা জাবেরের অফিসের কলিগ! জাবের তাকে নিয়ে আসছে এবং জাবেরই বলেছে দুজন একরকম পোশাক পরবে। এতে ফাজলামোর কি আছে আশ্চর্য!
আর বকবক না করে তুই কফি নিয়ে যাবি এখন?

___ যাচ্ছি তো! কিন্তু তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে,পরে বলবো। আসি..

কফি হাতে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। যত দোষ সব জাবেরের। এই মেয়ে ওর খালাতো বোন আর যাই হোক তার সাথে সম্পর্ক ছিলো। এতে আমি সিউর।

তবে জাবের মিয়া প্রচন্ড চালাক,যে ধরা দেয়না কিছুতে। কিন্তু আমার উপরে বছর বছর ধরে যত ক্ষোভ ছিল সব ঝেড়ে চলছে। নাহলে আহানকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি? সে ভালো করেই জানতো আহানের সাথে আমার একসময় সম্পর্ক ছিলো।
এখানে জাবের অসম্ভব রকম একটা তীক্ষ্ণ খেলা খেলেছে বাহহ, আমাকে বুঝতেই দেয়নি বিয়ের দিন আসলে কি হতে যাচ্ছিলো। আবার আহানকেও জামাই সাজাইছে। কতো বড় বেয়াদব।

জাবেরকে বকতে বকতে রুমের কাছাকাছি এসেই শুনলাম জাবের ফোনে কথা বলছে.. ইচ্ছে করেই এখন রুমে গেলাম না। শুনতে চাইনি কিন্তু কথাগুলো না শুনে পারলাম না কারণ জাবের আহানের সাথে কথা বলছে। আর সেটা বুঝতে পেরেই কান পেতে দাড়ালাম, জাবের বলছে..
___ ওরেএ আহাইন্না এতো চিন্তা করতে হবে না। তোর ভালোবাসা তোর কাছেই ফিরিয়ে দিবো। ওর চেহেরাটা দেখতে হচ্ছে বলেই আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। কুল ম্যান, তোর ভালোবাসার মানুষকে তুই তারাতাড়িই পেয়ে যাবি, আর আমি আপন করে নিবো আমার ভালোবাসাকে!

জাবের এসব কি বলছে? উফফ! হাত কাঁপছে, কাপটা ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে আমার। এ খোদা কি হতে চলেছে আমার সাথে, জাবের একটার পর একটা গেইম খেলেই যাচ্ছে। আমার জীবনটাকে কি মনে করেছে সে!?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here