#মেহেরজান
#পর্ব-৪২,৪৩
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন
পর্ব-৪২
“তুই কী চাইছিস আমি বুঝতে পারছি না মেহের। কোনো ভুল কিছু করিস না।”
“আমি কোনো ভুল করবো না তারামা। আমি শুধু অর্ণবকে চাই। আর ওই পরিবারের সর্বনাশ। ধ্বংস হোক ওরা।”
মোহিনীর কথা শুনে তারানার বুকটা কেঁপে উঠলো।
“তোকে খুব অচেনা লাগছে মেহের। তুই তো এমন মেয়ে না। এতটা নিষ্ঠুর তো তুই কখনোই ছিলি যে অন্যের অমঙ্গল কামনা করবি।”
“এখানে আমার দোষ নেই তারামা। শুরুটা ওরাই করেছিল। আমাকে আঘাত করেছে ওরা। এর ফল তো পেতেই হবে ওদের। আর অর্ণবকে ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ওদের আঘাতের চেয়ে শতগুণ বেশি আঘাত ফেরত দেব আমি ওদের। অর্ণবও আমার হবে। ওরাও শেষ হয়ে যাবে।”
তারানা মোহিনীর কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বললেন না। গলার স্বর উঁচু করে রজনীকে ডাকতে ডাকতে বললেন,
“আমার ঘর থেকে পানের ডালাটা এ ঘরে দিয়ে যা তো। কি রে, কোথায় ম/রলি? রজনী।”
ওপাশ থেকে জবাব এলো,
“আসছি আম্মা।”
রজনী পানের ডালা নিয়ে এসেই তারানাকে একটা পান সাজিয়ে দিলেন। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারানা পান চিবুতে চিবুতে বললেন,
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখনো এখানে? আমাদের কথা শোনার অপেক্ষায় আছিস? টাকা পেয়েছিস আবার এখানকার খবর ওখানে পৌঁছাবার জন্য?”
“কী বলছো আম্মা? আমি তো বাড়ি থেকেই বের হই না।”
তারানা পানের পিক ফেলে বললেন,
“তো আগে কি ওরা আসতো তোর সাথে দেখা করতে?”
রজনী চুপ করে রইলেন। সেদিনের পর থেকে সুযোগ না পেলে রজনী তারানার মুখে মুখে খুব একটা তর্ক করেন না। এ-বাড়িতে যে তার অবস্থানটা নড়বড়ে হয়ে গেছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন তিনি। এখন সকলের সাথে তাকে বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। তাকে চুপ থাকতে দেখে তারানা বললেন,
“দ্বিতীয়বার আমার চোখ ফাঁকি দেবার চেষ্টাও করিস না রজনী। ভগবানের দিব্যি করে বলছি, একদম জানে মে/রে ফেলবো তোকে আমি। যাহ এখন।”
শেষের বাক্যটা তারানা ধমকের সুরে বলতেই রজনী দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। মোহিনী বলে উঠলেন,
“শোনো।”
রজনী থেমে জিজ্ঞেস করলেন,
“কী?”
“দরজাটা আগের মতো চাপিয়ে দিয়ে যেও।”
তারানা বললেন,
“কী হলো? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কী বললো শুনিসনি?”
রজনী দরজা চাপিয়ে কটমট করতে করতে চলে গেলেন। বাইরে এসে নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বললেন,
“তোদের দুটোকে একদিন বাগে পাই। দেখিস কী করি। আমাকে করা সব অপমানের বদলা নেব।”
হঠাৎ কোনো কিছুর বিকট শব্দে তারানা আর মোহিনী দুজনেই জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
“কী হলো বলো তো তারামা।”
“দেখে মনে হচ্ছে দুর্ঘটনা।”
“আমাদের বাড়ির সামনেই?”
“হোকগে। তাতে আমাদের কী?”
“কী বলছো তারামা? রাত ক’টা বাজে দেখেছো? এরা এখানে ম/রে গেলেও কেউ দেখতে আসবে না।”
“কী করবি তাহলে?”
“নিয়ে আসি?”
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারানা মোহিনী আর চরণকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। গাড়ির ভেতরে শুধু আহত অবস্থায় এক অচেতন মহিলাকে দেখতে পেলেন। এদিক-ওদিক তাকাতেই রাস্তার একপাশে গাড়ির চালককে দেখতে পেলেন। নিশ্চয়ই মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল ব্যাটা। দেখে মনে হচ্ছে গাড়ি গাছের সাথে ধাক্কা লাগার আগেই সে লাফ দিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিল। তাই তেমন কিছু হয়নি। মোহিনী আর চরণ ধরাধরি করে কোনোমতে সেই মহিলাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এলেন। খালি পড়ে থাকা একটা ঘরে এনে শুইয়ে দিলেন। শুইয়ে দিয়ে মোহিনী আর তারানা একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। অন্য মেয়েরা কৌতূহলী হয়ে দরজার বাইরে ভীড় জমিয়েছিল। তারানা ধমক দিতেই জায়গাটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।
.
.
.
পরেরদিন সন্ধ্যেবেলা তার ঘরে চা নিয়ে ঢুকতেই মোহিনী দেখলেন তিনি উঠে বসার চেষ্টা করছেন। মোহিনী চা রেখে তাকে উঠে বসতে সহায়তা করলেন।
“আমাকে একটু জল দেবে?”
মোহিনী জল এনে তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
“এখন কেমন আছেন আপনি?”
গলাটা ভিজিয়ে মহিলাটি জবাব দিলেন,
“ভালো। মনে তোমাদের অনেক অসুবিধায় ফেলে দিয়েছি আমি।”
মোহিনী উঠতে উঠতে বললেন,
“ওতোটাও না। শুধু রাতে ডাক্তার খুঁজে আনতে একটু অসুবিধা হয়েছিল। আসলে এ-বাড়িতে কেউ ম/রতে বসলেও সহজে তাকে দেখতে কোনো ডাক্তার আসতে চায় না। যাদের মধ্যে মানবতা একটু বেশি, তারা আসে। অবশ্য এর জন্য অতিরিক্ত টাকাও দিতে হয় তাদের।”
“আমার জন্য তোমাদের যত টাকা খরচ হয়েছে, আমি তা ফেরত দিতে পারি।”
বলেই নিজের ব্যাগ খুঁজতে লাগলেন তিনি। মোহিনী বুঝতে পেরে বললেন,
“আপনার সব জিনিসপত্র আমার ঘরে রাখা আছে। আর টাকা লাগবে না। ওসবের অভাব নেই আমাদের।”
“তবুও।”
মোহিনী কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললেন,
“আপনাকে এদেশের বলে মনে হয় না। বাংলাটা কিন্তু খুব সুন্দর বলেন। কার বাড়িতে এসেছেন আপনি?”
“অভ্র চৌধুরীকে চেনো? তার সাথেই দেখা করতে এসেছি আমি।”
চমকে উঠলেন মোহিনী। নিজের কাজ থামিয়ে দিলেন। পুনরায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,
“আপনি ওনাকে কীভাবে চেনেন? কী হন আপনি ওনার?”
“তুমি চেনো ওকে?”
“হ্যাঁ।”
“আমার নাম ব্রেন্ডা। আমি অভ্রর বন্ধু। বিলেতে একসাথে থাকতাম আমরা।”
“একসাথে মানে একই বাড়িতে?”
“হ্যাঁ।”
“চায়ে চিনি কয় চামচ দেব?”
“এক চামচ।”
মোহিনী চা নিয়ে এসে ব্রেন্ডার সামনে বসলেন।
“আপনারা একসাথে থাকেন তবুও বন্ধু বলছেন? শুধু বন্ধু নাকি প্রেমিকা?”
ব্রেন্ডা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
“বললে ভুল হবে না।”
“কিন্তু আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তিনি তো এখানে নেই। কলকাতায় আছেন।”
“জানি আমি। এজন্যই সোজা এখানে এসেছি। মাস দুয়েক আগেও এসেছিলাম আমি। কিন্তু খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। ওর বাড়ির লোক আমাকে দেখা করতে দেয়নি ওর সাথে।”
“ওনার বাড়ির লোক?”
“অভ্রর ভাইপো।”
“ভাইপো মানে…।”
“অর্ণব। দুমাস আগে দেখা হয়েছিল আমার ওর সাথে। ও গিয়েছিল কলকাতায়। কিন্তু অভ্রর সাথে দেখা করতে দেয়নি। ফিরে গিয়েছিলাম। আবার এসেছি। তবে এবার দেখা করেই ফিরবো।”
মোহিনী বুঝতে পারলেন অর্ণব একারণেই কলকাতায় গিয়েছিলেন। তিনি ব্রেন্ডার উদ্দেশ্যে বললেন,
“আপনি অভ্র চৌধুরীর সাথে দেখা করতে চান কেন? যার জন্য এতোদূর থেকেও বারবার ছুটে আসছেন।”
“সেটা আমি এখন তোমাকে বলতে পারবো না।”
“অসুবিধা নেই।”
“কিন্তু আমি এখন ওর বাড়িতে যাবো কী করে? আমি তো ওর বাড়ি চিনিই না।”
“এটা কোনো সমস্যা নয়। এ গ্রামের সবাই তার বাড়ি চেনে। যতই হোক, জমিদার বলে কথা।”
“তোমার নামটা আমার জানা হলো না এখনো।”
“সবাই মোহিনী বলেই ডাকে।”
“খুব সুন্দর নাম।”
তারানা একবার ঘরের ভেতরে উঁকি দিয়ে তাদের কথা বলতে দেখে চলে গেলেন। টকটকে লাল ঠোঁট, কপালে বড় একটা টিপ, চোখে মোটা করে দেওয়া কাজল, গায়ে ঝলমলে শাড়ি, গয়না। তারানার পুরুষালী দেহে এমন বেশভূষা বড্ড বেমানান লাগলো ব্রেন্ডার কাছে। গতবার কলকাতায় এমনই কয়েকজনের একটা দলের সাথে দেখা হয়েছিল তার। টাকার জন্য প্রচন্ড বিরক্ত করছিল তাকে। কিন্তু তারানা তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, ভিন্ন একটা মানুষ বলে মনে হলো ব্রেন্ডার। মোহিনী বললেন,
“উনি আমার তারামা। উনিই আমাদের সবার মা এখানে। আমাদের দেখাশোনা করেন।”
“আচ্ছা। তোমরা এখানে কী করো? প্রস্টি’টিউশান?”
“ইংরেজি বুঝি না। আর ওতো কঠিন শব্দ তো একদমই না। চৌধুরী বাড়ির মালকিন আমাকে অনেক স্নেহ করতেন বলে বাংলা লিখতে পড়তে শেখার সুযোগটা হয়েছিল।”
“আমি বলতে চাইছিলাম তোমরা কি পতি’তা? দেহ’ব্যবসা করো এখানে?”
ব্রেন্ডার কথাটা মোহিনীর মনে প্রচন্ড আঘাত করলো। হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে গেল। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“সবাই ভাবে এখানে দেহের ব্যবসা হয়। কিন্তু এখানে যে মনেরও ব্যবসা হতে পারে এটা কেউ ভাবে না। আমাদেরও মন আছে। সেটারও লেনদেন হয়। তবে আমরা দেহ’ব্যবসা করি না। এতটা খারাপ অবস্থা আমাদের হয়নি। এটা বাইজীবাড়ি। আমরা নাচ করি, গান করি। এসবের মাধ্যমেই এখানে আসা পুরুষদের মনোরঞ্জন করি।”
“আমাকে ভুল বুঝো না তুমি। তখন এ-বাড়িতে ডাক্তার না আসতে চাওয়ার কথাটা তুমি এমনভাবে বললে। আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কোথায় আছি। আর সকালের দিকে একবার যখন জ্ঞান ফিরেছিল তখন আশেপাশে অনেক মেয়েদের দেখলাম। কিন্তু কাউকে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারিনি। তার আগেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দুর্বল লাগছিল অনেক।”
“আমাদের পতি’তা ভাবার পরও আমাদের হাতের চা আপনার গলা দিয়ে নামলো?”
“অন্য কারও নামতো কি না জানিনা। কিন্তু আমার গলা দিয়ে নেমেছে।”
“বাদ দিন এসব কথা। আপনি না চৌধুরী বাড়িতে যাবেন?”
“হ্যাঁ, তুমি আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসতে পারবে?”
“এখন? বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। এখন গিয়ে আর কী করবেন? আপনি বরং কাল সকালে যাবেন।”
“তাই ভালো হবে হয়তো।”
“ও-বাড়িতে গিয়ে নিজেকে কী বলে পরিচয় দেবেন? আপনাকে আগেই জানিয়ে দিচ্ছি। প্রেমিকা নামক কোনো বস্তুর ও-বাড়িতে কোনো মূল্য নেই।”
“তাহলে কী বলবো?”
মোহিনী স্মিত হাসলেন।
.
.
.
আম্রপালি একটা মেয়েকে বাড়ির সব কাজ ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মেয়েটাও কৌতূহল নিয়ে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। আম্রপালি সব বোঝানো শেষ করার পর জিজ্ঞেস করলেন,
“বুঝতে পেরেছিস তো সব?”
“হ্যাঁ, সব বুঝে গেছি।”
“আর কোনো প্রশ্ন আছে?”
“শুনেছিলাম তোমাদের বাড়িতে নাকি কোনো মেয়েই বেশিদিন টিকতে পারে না। অনেক কাজ দাও। কই? আমার কাছে তো একটুও বেশি মনে হলো না। এসব তো রোজই করতে হয় আমাকে।”
“কিছুদিন কর। তখন বুঝবি। তারপর যদি থাকতে পারিস তো বলিস। আর প্রতিদিন এমন দেরি করে আসলে চলবে না। আজ এসেছিস তো এসেছিস। কাল থেকে আরও সকালে আসতে হবে। একদম ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে।”
মেয়েটা ঘাড় কাত করলেন।
“ওহহ, তোর নামটা যেন কী?”
“পূর্বা।”
“ঠিকাছে। তোর স্বামী কী করে?”
“কিছু করে না। খায় আর সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। আমি ঢুকতে দেই না ঘরে। বাইরেই পড়ে থাকে সারারাত।”
অভিমানের সুরে কথাগুলো বললেন পূর্বা। পরক্ষণেই আবার অনুরোধ করে বললেন,
“মাসি, তোমাদের বাড়িতে তো অনেক কাজ। তুমিই এখানে কোনো একটা কাজে লাগিয়ে দাও না ওকে। ওই, তোমাদের ওই গেটের দারোয়ানের চাকরিটাই নাহয় দাও।”
“আচ্ছা। আমি দেখবো।”
“বাড়িতে কেউ আছেন?”
আম্রপালির কথা শেষ হতে না হতেই কেউ বলে উঠলেন কথাটা। আম্রপালি সদর দরজার দিকে তাকাতেই একজন মহিলাকে দেখতে পেলেন। পরনে শার্ট-প্যান্ট। মাথায় সোনালী চুল। চোখে চশমা। সাথে বড় একটা কাপড়ের ব্যাগ। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনাকে তো চিনলাম না।”
ব্রেন্ডা দু’হাত জোড় করে বললেন,
“নমস্কার। আমি ব্রেন্ডা। অভ্র চৌধুরীর স্ত্রী।”
চলবে…
#মেহেরজান
#পর্ব-৪৩
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন
চোখ বুজে মাথায় হাত দিয়ে সিড়িতে বসে আছেন অর্ণব। শকুন্তলার কান্নার শব্দ কানে আসছে। করুণ সুরে কাঁদছেন তিনি। ব্রেন্ডার পরিচয় জেনে শকুন্তলা যেভাবে অর্ণবের দিকে তাকিয়েছিলেন তা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না অর্ণব। নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য তো খারাপ ছিল না। নিজের ছোটমাকে কষ্ট পেতে দেখতে চাননি বলেই সবটা লুকিয়েছেন। আর যা কিছু ছিল, সবটা তো পুরোনো কথা। ব্রেন্ডা যে এতো বছর পর এভাবে হঠাৎ করে ফিরে আসবেন তা-ই বা কে জানতো? মাথা তুলে সামনে তাকালেন অর্ণব। অভ্রবাবুও ঠিক তার মতোই মাথা নিচু করে বসে আছেন। না চাইতেও যত দ্রুত সম্ভব কলকাতা থেকে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। যে অঘটন ঘটা থেকে আটকাতে তিনি এতোদিন অর্ণবের ভরসায় ছিলেন, সেটাই ঘটেছে। একবার ভাবলেন বলবেন, “জমিদারের বংশধর আমরা। আমাদের জীবনে একাধিক নারী থাকা কোনো অস্বাভাবিক কিছু না। তোমরা এখন একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো এ নিয়ে।” পরক্ষণেই কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলেন। এ কথা বলে নিজের পরিবারের কাছে আর ছোট হতে চান না তিনি। অন্তত এই বয়সে এসে শান্তি দেবীর হাতে মার খেতে চান না। এমনিতেই ছেলের এমন কাজে প্রচন্ড ক্রুদ্ধ তিনি। শকুন্তলার কান্নার শব্দে এখন বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে অভ্রবাবুর। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললেন,
“আহ, তুমি কান্না বন্ধ কর তো এখন। অনেক হয়েছে।”
অভ্রবাবুর কথায় শকুন্তলার কান্না থামার পরিবর্তে কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আরও উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করলেন তিনি। অর্ণব হাতঘড়ির দিকে তাকালেন। ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুইছুই। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব করছেন তিনি। আজ দুপুরে উনুনে হাড়ি চড়েনি। বাড়ির কারও তেমন খাওয়ার মন মেজাজ ছিল না। উপায় না থাকায় অর্ণবকেও বাকিদের মতোই অভুক্ত থাকতে হয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? মনে হচ্ছে পেটের ভেতর আগুন জ্বলছে। ক্ষুধার জ্বালা হচ্ছে সবথেকে বড় জ্বালা। এর আগে কিচ্ছু নয়। পূর্বাকে দেখলেন ড্যাবড্যাব করে সব দেখছেন। ইশারায় ডাকলেন তাকে অর্ণব। পূর্বা এলে বললেন,
“তোমাকে কি এখানে তামাশা দেখার জন্য রাখা হয়েছে? রাতের রান্না বসাওনি কেন এখনো?”
“কিন্তু…”
পূর্বা কথা শেষ করার আগেই অর্ণব বললেন,
“কিসের কিন্তু? তোমার কথা শোনার জন্য মাসে মাইনে দেবো না। এখুনি গিয়ে রান্না বসাও।”
পূর্বা দৌঁড়ে রান্নাঘরে গেলেন। কিন্তু কাজ করতে করতেও তার দৃষ্টি এদিকেই রয়েছে। পদ্মাবতী দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করছিলেন অর্ণব কী বলছেন। নিচু স্বরে কথা বললেও রেগে কথা বলছিলেন এতটুকু বুঝতে পেরেছেন। পূর্বাকে রান্না ঘরে যেতে দেখে বাকীটাও বুঝতে পারলেন। অর্ণব একে একে ভালো করে সবাইকে দেখছেন। কার ভেতরে কী চলছে বোঝার চেষ্টা করছেন। ব্রেন্ডার দিকে চোখ যেতেই দেখলেন একদম শান্ত হয়ে বসে আছেন তিনি। তার মনে কী আছে বুঝতে পারছেন না অর্ণব। হঠাৎ এতোবছর পর কেন ফিরে এলেন? অর্ণব যতদূর জানতেন তার স্বামীর সাথে বেশ ভালোই ছিলেন ব্রেন্ডা। কিন্তু সেটাও সাত বছর আগের কথা। তারপর আর ব্রেন্ডার সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি। এখন তাহলে কী চান তিনি?
ব্রেন্ডা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“তুমি আমার সাথে ফিরে চলো অভ্র।”
শকুন্তলা কান্নার স্বর বাড়িয়ে আম্রপালিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“ও দিদিগো, ও কি আমায় ছেড়ে দেবে এখন?”
“শান্ত হ তুই। কিচ্ছু হবে না এমন।”
অভ্রবাবু ব্রেন্ডার উদ্দেশ্যে বললেন,
“তুমি ফিরে যাও ব্রেন্ডা। আমি আসতে পারবো না তোমার সাথে। আর তাছাড়া তোমারও স্বামী আছে।”
“নেই আমার কোনো স্বামী। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে আমার।”
অভ্রবাবু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। এরপর বললেন,
“আমি তোমার সাথে ফিরবো না ব্রেন্ডা।”
“তাহলে আমাদের সন্তানের কী হবে? ও কি বাবা ছাড়া বড় হবে?”
ব্রেন্ডার কথা শুনে অর্ণবের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। সবাই কিছুক্ষণের জন্য পাথর হয়ে গেলেন। কেউ-ই যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। শকুন্তলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আম্রপালির ওপর ঢলে পড়লেন তিনি। সাথে সাথে পদ্মাবতী আর আম্রপালি তাকে ধরে বসিয়ে দিলেন।
“শেফালী, তাড়াতাড়ি জল নিয়ে আয়।”
পদ্মাবতী বলা মাত্রই শেফালী জল আনতে ছুটে গেলেন। অভ্রবাবু বললেন,
“আমাদের সন্তান?”
“হ্যাঁ, আমাদের ছেলে।”
“কী সব বলছো তুমি? আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছো?”
“না, মিথ্যে নয়। সত্যিটাই বলছি। তোমার থেকে চলে যাওয়ার কিছুদিন পর জানতে পারি আমি গর্ভবতী। আমি নিজের সংসার নষ্ট করতে চাইনি। আর তোমার ব্যবসার অবস্থাও ভালো ছিল না তখন। তাই আর তোমার কাছেও ফিরে আসিনি। আমার স্বামী ভেবেছিল এটা ওর সন্তান। এতোবছর সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ছ’মাস আগে ও কোনোভাবে জানতে পারে সত্যিটা। এরপর ও আমাদের ছেড়ে চলে যায়। আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় দিতেও অস্বীকার করে।”
“সেদিন তুমি নিজের লাভের জন্যই আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলে আর আজ এতোবছর পর আবার নিজের লাভের জন্যই আমার কাছে ফিরে এসেছো তাহলে।”
“না, আমি এসেছি আমার সন্তানের জন্য। আমি চাই না ও ওর বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হোক। তুমি ফিরে চলো আমার সাথে। ওখানে তোমার ভবিষ্যৎ আছে। তোমার ছেলে আছে। এখানে কার জন্য পড়ে থাকবে তুমি? তোমার কোনো সন্তানও নেই এখানে।”
জল খেয়ে আর চোখেমুখে ছিটিয়ে শকুন্তলা কিছুটা শান্ত হয়েছেন। কিন্তু তার চোখের জলকে আটকাতে পারছেন না। পদ্মাবতীকে বললেন,
“আমাকে ঘরে নিয়ে চল, পদ্মা। আমি আর এখানে থাকতে পারছি না।”
পদ্মাবতী আর শেফালী মিলে শকুন্তলাকে ধরে দোতলায় নিয়ে এলেন। শকুন্তলা নিজের ঘরে না গিয়ে চিত্রার ঘরে ঢুকে ওদের চলে যেতে বললেন। এরপর দরজা আটকে মেয়ের জিনিসপত্র আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
শান্তি দেবী এককোনায় বসে ছেলে কী বলে তা শোনার অপেক্ষা করছেন। শুধু তিনি নন, অন্যরাও একই কথা শোনার অপেক্ষায় আছেন। অভ্রবাবু মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কত বছর তিনি শুধু একটা ছেলে সন্তান চেয়েছিলেন। যাও পেয়েছিলেন, তাও জন্মানোর আগেই ভগবান নিয়ে নিলেন। একটা ছেলের জন্য নিজের মেয়েটাকে কতই না অবহেলা করেছেন। সেও চলে গেল। আর আজ সেই ছেলে পেয়েও খুশির বদলে কষ্ট বাড়ছে তার। যে সন্তানকে তিনি কখনো দেখেননি, স্পর্শ করেননি, যার সম্পর্কে কিছু জানতেন না পর্যন্ত, তার জন্য আজ সবাইকে ছেড়ে গেলে পুরোটা জীবন তাকে একটা পরিবারের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। তার অপরাধের শাস্তি গোটা পরিবার কেন ভোগ করবে?
“তুমি কিছু বলছো না কেন অভ্র? যাবে তো আমার সাথে?”
অভ্রবাবু হাত জোড় করে ব্রেন্ডার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“তুমি আমাকে ক্ষমা করো ব্রেন্ডা। আমি আমার স্ত্রী, পরিবার ছেড়ে যেতে পারবো না তোমার সাথে। আমার জীবনে তোমাকে কোনো জায়গা দিতে পারবো না। তবে আমার সন্তানের দায়িত্ব নিতে আমি রাজি। যদি তুমি চাও তো তার ভরণপোষণ দিতে রাজি আছি আমি। তুমি চাইলে ওকে আমার কাছে রেখে যেতে পারো।”
“অসম্ভব। আমার ও ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ওকে এখানে রেখে যেতে পারবো না।”
অভ্রবাবু কী বলবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
“তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
অভ্রবাবু ক্ষমা চেয়ে নিজের জায়গায় এসে বসে পড়লেন। এতোক্ষণ শক্ত হয়ে থাকা মানুষটাও আর নিজেকে আটকাতে পারলেন না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন ব্রেন্ডা। তার কান্নার শব্দ যেন অন্য সব আওয়াজে ছাপিয়ে গেছে। পুরো বাড়ির কানায় কানায় ভরে উঠেছে তার করুণ সুর। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পর শান্ত হলেন ব্রেন্ডা। উঠে দাঁড়িয়ে নিজের যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। আম্রপালি তাকে থামিয়ে বললেন,
“আপনি থেকে যান আজ রাতটা। এতো রাতে যাবেন না।”
“এখন আর এখানে থাকার কোনো মানে নেই। আমাকে আটকাবেন না। আমি ঠিকই নিজের পথ খুঁজে চলে যেতে পারবো।”
অর্ণবের সামনে এসে দাঁড়ালেন ব্রেন্ডা। বললেন,
“বিয়ে করেছো দেখলাম। সেদিন একবারও বললে না যে। এখানে না আসলে তো জানতেও পারতাম না কোনোদিন। খুব মিষ্টি দেখতে তোমার বউটা। তোমার কাকুর মতো, ওকে ছেড়ে আবার অন্য কোনো মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ো না কখনো। ওকে যেন কাঁদতে না হয়। এরকম দিন যেন তোমার জীবনে কোনোদিন না আসে। যাই হোক, বিবাহিত জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।”
নিজের কথা শেষ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন ব্রেন্ডা। অর্ণব ভাবছেন ব্রেন্ডা এসব কী বলে গেলেন তাকে। বাকিরা এখনো যে যার জায়গায়ই বসে রয়েছেন। শান্তি দেবী এসে অভ্রবাবুর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
“ফিরিঙ্গি মাইয়া মানুষের কাছে তো ঠিকই ক্ষমা চাইবার পারস। নিজের বউয়ের কাছে চাইতে লজ্জা করে ক্যান? ওরে কম দুঃখ দিছস? ওর কাছে ক্ষমা চাইবার পারস না?”
তাচ্ছিল্যভরে কথাগুলো বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন শান্তি দেবী।
.
.
.
অন্ধকারে হাতে হ্যারিকেন নিয়ে একটা কাঁচা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন পূর্বা। বাঁশঝাড়ের সামনে আসতেই কেউ ফিসফিস করে বললেন,
“পূর্বা দিদি, এদিকে এসো।”
পূর্বা ঝাড়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“মোহিনী, তুই এখানে? আমি তোদের বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলাম। ভালোই হয়েছে তোকে এখানেই পেয়ে গেলাম।”
“ওসব বাদ দাও। আগে বলো ও-বাড়িতে কী হলো।”
“বলছিরে বলছি। একটু গুছিয়ে নিতে দে।”
“বলো তাড়াতাড়ি।”
মোহিনীর চোখেমুখে তীব্র কৌতূহল প্রকাশ পাচ্ছিলো। কিন্তু কেন তা পূর্বা জানেন না। তার জানার প্রয়োজনও নেই। তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা মোহিনীকে খুলে বললেন। সবকিছু শুনে মোহিনী অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। হাসতে হাসতেই বলবেন,
“আমি যা ভেবেছিলাম, এ তো তার থেকেও অনেক বেশি দূর এগিয়ে।”
পূর্বার কাছে খুব অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা। তিনি মোহিনীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“হ্যাঁ রে মোহিনী, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোকে?”
মোহিনী হাসি থামিয়ে বললেন,
“কী কথা?”
“কাল আমাকে বললি ও-বাড়িতে কাজের লোক লাগবে। আমাকে যেতে হবে। তুই যেতে বলেছিস একথাও গোপন রাখতে হবে। ওদের সব খবর এনে দিতে বললি। সবকিছু শুনে হাসার কথা নয় তবুও এমন পাগলের মতো হাসছিস। তা কেন? ও-বাড়িতে তুই আর যাস না?”
“এখন সব বলার সময় নেই দিদি। সময় হলে পরে জানাবো তোমাকে। তুমি আমায় বড় উপকার করেছো। এই নাও। এটা রাখো। বলেছিলাম তোমার মেয়ের চিকিৎসার সব খরচ আমি দেবো। ভালো একটা ডাক্তার দেখিও ওকে। তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে উঠবে ও।”
কথাটা বলেই টাকার মোটা একটা বান্ডিল পূর্বার হাতে দিলেন মোহিনী। পূর্বার দু-চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো।
“তোর এই ঋণ আমি কোনোদিন ভুলবো না রে মোহিনী। সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো তোর কাছে।”
“এখন যাও তুমি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমিও আসি।”
বলেই মোহিনী বাড়ির পথে হাঁটা দিলেন। বাড়িতে ফিরে তারানাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কথা বললেন। বলেই আবার হাসতে শুরু করলেন। এই হাসি তারানার মোটেও পছন্দ হলো না। তিনি বললেন,
“এসবে তোর কী লাভ?”
“লাভ নেই তারামা। কিন্তু শান্তি আছে। আমি চাই আমাকে দেওয়া কষ্টের স্বাদ ওরাও গ্রহণ করুক। প্রিয়জন দূরে সরে গেলে কেমন লাগে সেটা ওরাও বুঝুক।”
মোহিনীর চোখে প্রতিশোধের আগুন স্পষ্ট দেখতে পেলেন তারানা। মনের মধ্যে এক অজানা ভয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো তার। এই আগুনে যে শুধু ওরা নয়, মোহিনীকেও পুড়ে ছাই হতে হবে তা দিব্যি বুঝতে পারছেন তিনি।
.
.
রান্না ঘরে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করছিলেন পদ্মাবতী। হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠায় চমকে উঠলেন। পেছনে ঘুরে দেখলেন শেফালী দাঁড়িয়ে আছেন। ঘুমঘুম চোখে শেফালী জিজ্ঞেস করলেন,
“রাতদুপুরে তুই রান্না ঘরে কী করছিস পদ্মা?”
“তেমন কিছু না। খিদে পেয়েছিল খুব। খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই রাঁধছিলাম।”
“তাই বলে এখন?”
“হ্যাঁ, এখনই। এতোরাতে তুই এখানে?”
“জল খেতে উঠেছিলাম। আওয়াজ শুনে নিচে নেমে এলাম। ভেবেছিলাম বেড়াল-টেড়াল ঢুকেছে হয়তো। এসে দেখি তুই।”
পদ্মাবতী থালায় খিচুড়ি বেড়ে আচারের বৈয়াম খুলতে খুলতে বললেন,
“এতো সাবধানে কাজ করছিলাম যাতে কারও ঘুম না ভাঙে। কিন্তু তুই ঠিকই টের পেয়ে গেলি।”
“তোকে দেখে আমারও খিদে পেয়ে গেল মনে হচ্ছে।”
“খেতে না করেছে কে তোকে?”
“কিন্তু ঘুমও তো আসছে খুব। তুই আমার জন্য কিছুটা রেখে দিস। সকালে উঠে খাবো। এখন দাঁড়িয়ে থাকছে পারছি না।”
“ঠিকাছে। যা তাহলে তুই। আমি রেখে দেবো তোর জন্য।”
শেফালী চলে গেলে পদ্মাবতীও খাওয়া ছেড়ে হাত ধুয়ে নিলেন। আধখাওয়া খাবারটা ঢেকে রেখে আম্রপালির ঘরের দিকে চলে গেলেন।
চলবে…