মেহেরজান #পর্ব-৪৪,৪৫

0
850

#মেহেরজান
#পর্ব-৪৪,৪৫
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন
পর্ব-৪৪

পেছন থেকে পা টিপে টিপে এসেই অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলেন মোহিনী। অর্ণব বলে উঠলেন,

“এভাবে হুটহাট করে আমাকে জড়িয়ে ধরবেন না মেহের। আপনার স্পর্শে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।”

মোহিনী হি হি করে হেসে উঠলেন। অর্ণবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

“বাঃ রে, আপনাকে জড়িয়ে ধরবো না তো কাকে ধরবো?”

“কাউকেই না।”

“আর আমি আপনাকে জড়িয়ে না ধরলে কে ধরবে? পদ্মা?”

অর্ণব ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লেন। পদ্মাবতীকে নিয়ে মোহিনীর বলা প্রতিটা বাক্য যে তার বুকে ছুরি চালায় তা কবে বুঝবেন মোহিনী? অর্ণবের নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়। তাকে কি সারাজীবন এই অপরাধবোধের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে?

“আপনার সবসময় ওই একটাই নাম ঠোঁটের ডগায় থাকে। আমাকে না রাগালে, কষ্ট না দিলে আপনি শান্তি পাননা? সারাজীবন কি এভাবে কথা শোনাবেন এটা নিয়ে?”

“সারাজীবন আর কথা শোনাতে পারবো কই? আপনি তো অন্য কারও। একদিন না একদিন ঠিকই আমাকে ভুলে যাবেন।”

“উল্টোপাল্টা বলবেন না একদম। আমি অন্য কারও? তাহলে আপনি আমার সাথে আছেন কেন? চলে গেলেই তো পারেন।”

“আছি কারণ পরের জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি হয়। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়।”

“চুপ। এখন একটু বেশি বেশিই হয়ে যাচ্ছে।”

“ঠিকাছে। রাগবেন না। আর করবো না মশকরা। আমার ঘরে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিলেন?”

“আপনি যেন সারাজীবন আমাকে কথা শোনাতে পারেন, তার ব্যবস্থা করছি। সে ব্যাপারেই ভাবছিলাম।”

“কী ব্যবস্থা? বিয়ে করে নিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার কথা ভাবছেন নাকি আবার?”

“কেন? এতে কোনো অসুবিধা আছে নাকি আপনার?”

“আমার নেই। অসুবিধা তো আপনার বাড়ির লোকের। তারা মানবে কোনোদিন?”

“সেদিন আপনাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন না? কেউ না মানলে এবার সত্যি সত্যিই পালিয়ে যাবো আপনাকে নিয়ে। অনেক দূরে চলে যাবো আমরা। তারপর আপনি চিরদিনের জন্য শুধু আমার হবেন। আমার মেহেরজান।”

“দেখা যাবে কত পারেন।”

“কী?”

“পালাতে।”

“পালাতে যেন নাহয় তার জন্য এখন বাড়ি যেতে হবে।”

“সে কি! আমি তো মাত্রই এলাম। আপনি এখনই চলে যাবেন?”

“আমি আপনাকে একটা জিনিস দিতে এসেছিলাম।”

অর্ণব পকেট থেকে একটা মোটা একটা বালা বের করলেন। খুবই অদ্ভুত ও আকর্ষণীয় নকশা এর। বালার একপ্রান্তে ময়ূর, যার পেখমে ছোট ছোট গাঢ় নীল পাথর বসানো। আর সেই ময়ূরের গলা পেঁচিয়ে থাকা বালার অপরপ্রান্ত থেকে আসা এক সর্পিণী, যার মাথায় বড় একটা সবুজ রঙের পাথর বসানো। প্রথম দেখায়ই যে-কারও নজর কাড়তে সক্ষম এটি।

“এটা কার?”

“ঠাম্মার। জানেন, এই বালাটারও একটা গল্প আছে। বংশপরম্পরায় কিছু না কিছু শ্বাশুড়ির হাত থেকে বাড়ির বউদের কাছে আসে। কিন্তু আমাদের পরিবারেরটা অন্যরকম। আমাদের পরিবারে এই বালাটা ঠাকুমারা তার নাতবউকে দিয়ে থাকেন।”

“এটা আবার কেমন নিয়ম? নাতির বিয়ে হওয়া পর্যন্ত যদি ঠাকুমা না বাঁচেন?”

অর্ণব ভ্রু কুঁচকালেন। এরপর আবার স্বাভাবিকভাবে বললেন,

“সে আমি জানি না। এরকম আরও একটা ছিল। কিন্তু সেটা বহুবছর আগেই চিতায় উঠেছিল। যিনি প্রথম এগুলো বানিয়েছিলেন তার সাথে, তার ইচ্ছায়। আমার দাদার দাদার দাদার সময়েরও অনেক আগে। শুধু এটাই রয়ে গেছে। আর হাত বদলে এক জনের থেকে আরেকজনের কাছে আসছে। ঠাম্মা এটা আমার কাছে দিয়ে বললো আপনাকে পরিয়ে দিতে।”

বলেই অর্ণব বালাটা মোহিনীর হাতে পরানোর চেষ্টা করতে লাগলেন।

“আমাকে পরাতে বলেছে নাকি আপনার স্ত্রীকে?”

“আমি এটা ঠিক জায়গায়ই নিয়ে এসেছি।”

এতো চেষ্টার পরও অর্ণব বালাটা মোহিনীর হাতে ঢোকাতে পারছেন না। মোহিনী হেসে বললেন,

“আপনার এই বালা পরতে হলে আমাকে আরও শুকাতে হবে মনে হচ্ছে।”

অর্ণব হেসে ফেললেন।

“সেটা আপনার দ্বারা সম্ভব হবে না। এক ঘন্টা না খেয়ে থাকতে পারেন কিনা সন্দেহ।”

“আপনি বলছেন আমি বেশি খাই? অবশ্য বলতেই পারেন। মিথ্যে তো আর নয়।”

“তা বললাম কখন?”

অর্ণব এখনো বালাটা মোহিনীকে পরানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। মোহিনী বললেন,

“ছেড়ে দিন অর্ণব। এটা আমার হাতে লাগবে না। আর আমি পরবোও না।”

“কেন?”

“যেদিন মনে হবে আমি এটার সত্যিকার হকদার, সেদিন পরবো। আপনার হাতেই। এখন এটা ফিরিয়ে নিয়ে যান।”

অর্ণব নিজের বৃথা চেষ্টা বন্ধ করে বালাটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেললেন। বললেন,

“আমি এটা ফিরিয়ে নিয়ে যাবো না। আবার পরানোর চেষ্টা করবো। ততদিন যত্ন করে রেখে দেবেন।”

অর্ণব চলে যেতে উদ্যত হলেন।

“অর্ণব।”

“কী?”

“যখন তখন এ-বাড়িতে চলে আসতে আপনার ভয় করে না?”

“কীসের ভয়?”

“লোকলজ্জার।”

অর্ণব যেতে যেতে উত্তর দিলেন,

“না, করে না।”
.
.
.
কামিনী ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। অর্ণবের ঘরের বারান্দায় দাঁড়ালে গন্ধটা আরও ভালোভাবে পাওয়া যায়। পদ্মাবতী প্রাণভরে একটা শ্বাস নিলেন। শেফালী এসে বললেন,

“বড় মামী ডাকছেন তোকে।”

“কেন?”

“জানি না। বলেননি আমাকে। অর্ণবদাও আছেন ঘরে।”

“ওহ, বুঝতে পেরেছি। ঠিকাছে। আমি যাচ্ছি।”

আম্রপালির ঘরে ঢুকতেই দেখলেন অর্ণব বসে আছেন। পদ্মাবতীকে দেখে আম্রপালি তার হাতের কাগজটার দিকে ইশারা করে বললেন,

“আমার হাতে এটা কী জানিস? বুঝেছিস নিশ্চয়ই।”

পদ্মাবতী চুপ করে রইলেন। আম্রপালি আবার বলে উঠলেন,

“তোর আর অর্ণবের বিবাহবিচ্ছেদের কাগজ।”

দেখেই বোঝা যাচ্ছে আম্রপালি প্রচন্ড রেগে আছেন। অর্ণবের উদ্দেশ্যে বললেন,

“এসবের মানে কী অর্ণব?”

“এটাই তো হওয়ার কথা ছিল মা। নাকি আপনি ভেবেছিলেন আমি সবটা মেনে নিয়ে এভাবেই থাকবো?”

“কাকে ছাড়তে চাইছো তুমি? একটু পরিষ্কার করে বলো তো।”

“মানে?”

“মানে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নাকি তোমার অনাগত সন্তানের মাকে?”

আম্রপালির কথা শুনে অর্ণব কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল তার। তিনি বললেন,

“কী বলতে চাইছেন?”

“বুঝছো না আমি কী বলতে চাইছি? খুব শীঘ্রই তুমি একজন পিতা হতে চলেছো। তাই এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। কাল থেকে দূর্গাপূজো। অনেক কাজ। এসব ছাড়াছাড়ির কথা বাদ দিয়ে পূজোটা একসাথে উপভোগ কর। আশা করি সব বুঝতে পেরেছো। এখন যেতে পারো।”

অর্ণবের কাছে এখনো সবকিছু এলোমেলো লাগছে। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। তিনি কি ভুল শুনলেন? নাকি এটাই সত্যি? কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। পদ্মাবতী আম্রপালির দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছেন। আম্রপালি চোখের ইশারায় তাকে কিছু বললেন। পদ্মাবতী কী বুঝলেন কে জানে। তারপর তিনিও চুপচাপ চলে গেলেন। অর্ণবের সামনে আসতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন,

“মা যা বললেন তা কি সত্যি?”

“মিথ্যে বলার কোনো কারণ আছে?”

“একদম হেঁয়ালি করে কথা বলবে না। তুমি জানো আমি মেহেরকে ভালোবাসি। তোমার সাথে সংসার করা অসম্ভব।”

“কেন? এতোদিন কি সংসার করেননি? তাছাড়া রাতের পর রাত যখন আমার সাথে কাটাতেন তখন মনে পড়েনি আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন? তাহলে এখন হঠাৎ ছেড়ে দিতে চাইছেন কেন? নাকি মন ভরে গেছে?”

“একদম বাজে কথা বলবে না।”

“বড়মা মিথ্যে বলছেন এমন কেন মনে হচ্ছে আপনার? এমন তো নয় যে আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। নাকি মোহিনীকে কী করে মুখ দেখাবেন সেটা ভেবে ভয় পাচ্ছেন?”

পদ্মাবতীর কোনো কথারই জবাব দিতে পারছেন না অর্ণব। কারণ মিথ্যে বলছেন না তিনি। শুধু নিজের ওপর রাগ, লজ্জা, ঘৃণায় চোখ লাল হয়ে উঠছে অর্ণবের।
.
.
.
“নোংরা লোক একটা। লজ্জা করলো না আমাকে ভালোবাসার কথা বলেও পদ্মার সাথে সম্পর্কে জড়াতে?”

“পদ্মাবতীর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই মেহের। আমি শুধু আপনাকে ভালোবেসেছি।”

“এখনো মিথ্যে বলছেন আমাকে? সম্পর্ক নেই তাহলে বাচ্চা আসলো কোথা থেকে?”

“মেহের, আমাকে আর একটা সুযোগ দিন। শেষবারের মতো ক্ষমা করে দিন।”

“কিসের ক্ষমা? এতোকিছুর পরও আপনি বলছেন আপনাকে আরও সুযোগ দিতে? লোকে আমাদের চরিত্রহীন ভাবে। আসল চরিত্রহীন তো আপনারা। মেয়ে দেখলে হুশ থাকে না, না?”

“মেহের, আমাকে অন্তত কিছুটা সময় দিন আপনাকে সব বুঝিয়ে বলার জন্য।”

“আর কী বোঝাবেন আমাকে? ভুল তো আমি করেছি, আপনাকে বিশ্বাস করে। আপনার মুখও আর কোনোদিন দেখতে চাই না আমি।”

“যাবেন না মেহেরজান। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। মেহেরজান…”

বিড়বিড় করতে করতেই ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লেন অর্ণব। গায়ের পাঞ্জাবীটা ঘামে একদম ভিজে গেছে। প্রচন্ড হাঁপাচ্ছেন তিনি। গ্লাসে জল ঢেলে এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললেন। দেওয়ালঘড়িতে দেখলেন রাত প্রায় তিনটে বাজে। কিছু ভেবে না পেয়ে শমিতকে কল করলেন। ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কণ্ঠে জবাব এলো,

“কে বলছেন?”

“শমিত, আমি অর্ণব।”

শমিতের উঠে বসার শব্দটা ওপাশ থেকে শোনা গেল।

“অর্ণব! তুই এতো রাতে?”

“আমি কলকাতায় যাবো। তোদের ওখানে।”

“কলকাতায় আসবি ভালো কথা। তাহলে সেদিন মামার সাথে চলে এলেই তো পারতি। আর তুই এটা বলার জন্য এতো রাতে আমার ঘুম ভাঙালি? ওখানে সব ঠিক আছে তো?”

“কিচ্ছু ঠিক নেই শমিত। কিচ্ছু ঠিক নেই এখানে।”

“অর্ণব, কী হয়েছে বলতো আমায়। আমার তো র’ক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে তোর কথা শুনে।”

“বলবো। সব বলবো তোকে। আমাকে আসতে দে আগে।”

“ঠিকাছে। তুই শিগগিরই চলে আয় এখানে।”

“কালই আসছি আমি।”
.
.
.
“মেহেরজান,

আপনার মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই আমার। আমার সব ভুল ক্ষমা করলেও এই ভুলটা হয়তো আপনি কোনোদিনও ক্ষমা করবেন না। আমি চেয়েছিলাম আপনার সাথে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিতে। কিন্তু আমিই আপনার আর আমার এক হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি। আপনাকে নিজের বলে দাবি করার অধিকারটাও হারিয়েছি। জগৎটা আমাদের ভালোবাসার বিরুদ্ধে কেন বলতে পারেন? আপনাকে যত পেতে চেয়েছি, তত হারিয়েছি। এখন আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে সবকিছু ঠিক করার উপায়টুকুও নেই। আপনাকে পাওয়ার শেষ আশাটাও নিঃশেষ হয়ে গেছে। আপনাকে হারিয়ে ফেলেছি আমি, চিরকালের জন্য। আমাদের ভালোবাসাটা নাহয় পরের জন্মের জন্যই তোলা রইলো। আবার যখন জন্মাবো তখন চিনতে পারবেন তো আমায়? ক্ষমা করবেন তো আমাকে? সে জন্মে আপনার আর আমার মাঝে অন্য কেউ থাকবে না। তখন আপনি শুধু আমার হবেন। আমার মেহেরজান। -অর্ণব।”

অর্ণবের পাঠানো চিঠিটা পড়া শেষ করে সামনে তাকালেন মোহিনী। এই চিঠির অর্থ তিনি বেশ বুঝতে পারছেন। কারণটাও জানেন। পূর্বার কাছে কাল রাতে শুনেছেন পদ্মাবতী অন্তঃসত্ত্বা। দূরের রাস্তাটা দিয়ে মাত্রই অর্ণবের গাড়িটা চলে যেতে দেখলেন। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু এখন কপোল বেয়ে পড়ছে তার।

“কী অদ্ভুত দেখুন, অর্ণব। এক শরতে আমাদের প্রণয় হলো, পরের শরতেই বিচ্ছেদ। এক বছরের মধ্যে সব যেমনভাবে শুরু হয়েছিল, তেমনিই শেষ হয়ে গেল। আপনি বলেছিলেন আমাকে নিয়ে অনেক দূরে কোথায় চলে যাবেন। কিন্তু আপনি তো আমাকে ফেলে একাই চলে গেলেন।”

পেছন থেকে মোহিনীর কাঁধে হাত রাখলেন তারানা। মোহিনী পেছন ফিরতেই দেখলেন তার চোখে জল। তারানা জল মুছে দিয়ে বললেন,

“কাঁদিস না মেহের। তোর চোখে জল মানায় না। তুই তো সম্পূর্ণটাই আগুন। এই সামান্য জল সেটাকে নেভাতে অক্ষম। তাই অযথা কেঁদে এই জলকে বৃথা যেতে দিস না।”

“আমি আর কাঁদবো না তারামা।”

“ও-বাড়িতে পূজো শুরু হয়েছে। আজ অন্তত যা। দেখে আয়।”

“ও-বাড়ির দরজা আমার জন্য অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে তারামা। শুধু শুধু নিজের অপমান করতে কেন যাবো? ও-বাড়িতে আমার বলে যে ছিল, সেও চলে গেল। এখন কার ভরসায় যাবো আমি ওখানে?”

তারানা জবাব দিলেন না। মোহিনী বাক্স থেকে নিজের ঘুঙুরজোড়া বের করলেন।

“যার জন্য আমি তোদের ছাড়লাম, সে আমায় ছেড়ে গেল। কিন্তু তোরা ছাড়লি না। এখনো আমার সাথেই রয়ে গেলি।”

মোহিনীকে ঘর থেকে বের হতে দেখে তারানা বললেন,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“জলসাঘরে। অনেকদিক ধরে মুজরা করা হয়না। এখন আর নিষেধ করারও কেউ রইলো না।”

“আবার নাচবি তুই?”

“হ্যাঁ, নাচবো। আজ সন্ধ্যায় শহর থেকে অনেক বাবুরা আসবেন, না? আমি চাই না আমি ওদের সামনে ভুলভাল নাচি। তাই এখন তার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছি। দেখো তুমি, আজ এই মোহিনীর ওপর থেকে কেউ নজর সরাতে পারবে না।”

চলবে…

#মেহেরজান
#পর্ব-৪৫
লেখাঃ সাদিয়া আফরিন

★শমিতের সাথে কথা বলে মুঠোফোনটা রাখতেই পেছন থেকে আম্রপালি বললেন,

“পালাতে চাইছিস অর্ণব?”

আম্রপালির এখানে আসাটা টের পাননি অর্ণব। মনে হয় কিছুক্ষণ আগেই এসেছেন। শেষের কথাগুলো শুনেছেন নিশ্চয়ই। অর্ণব তার দিকে ঘুরে বললেন,

“মা!”

“সত্যের থেকে দূরে পালিয়ে গেলেই বুঝি সেটা মিথ্যে হয়ে যাবে? আর কাদের থেকে পালাতে চাইছিস? এরা সবাই তোরই আপনজন। দিনশেষে তোকে এখানেই ফিরে আসতে হবে।”

“আমি এসব চাই না মা। আপনারা জোর করে আমার ওপর একটা বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। যেটা নিয়া চলা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।”

“তুই ভাবছিস তাই বোঝা মনে হচ্ছে। কখনো এই বিয়েটা সহজভাবে নিয়েছিস? মেনে নিয়ে দেখেছিস?”

“মানতে চাইও না। আপনারাও জানেন আর আমিও জানি মেহের আমার জন্য কী। ওকে ছাড়া আমার জীবন মূল্যহীন।”

আম্রপালি তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি দিয়ে বললেন,

“এখনো মোহিনীর কথাই ভাবছিস? আমাকে একটা কথা বল তো অর্ণব। মোহিনীর সামনে তুই কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবি? ওর ভালোবাসার যে অমর্যাদাটা তুই করেছিস তারপরও ও তোকে মেনে নেবে?”

“মেনে নেবেন। সব মেনে নেবেন। আমি ক্ষমা চাইবো তার কাছে। তিনি আমাকে ফেরাতে পারবেন না মা।”

“ভুল ভাবছিস তুই। মিথ্যা বলে নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছিস মাত্র। ও তোকে কোনোদিন মানবে না। তুই এখনো ওকে চিনতে পারিসনি। আমি বড় করেছি ওকে। আমি জানি ও এসব মেনে নেবে না। ওর সাথে প্রতারণা করেছিস তুই। বারবার তোকে ক্ষমা করে, তোর প্রতি নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করে নিজের আত্মমর্যাদায় কখনোই আঘাত হানতে দেবে না ও।”

বিছানায় ধপ করে বসে পড়লেন অর্ণব। আম্রপালি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

“অর্ণব, আমি তোর মা। তোর ভালো চাই সবসময়। বিয়েটা তুই যেমন নিজের অমতে গিয়ে আমার কথায় করেছিলি তেমন এবারও আরেকটা কাজ করবি?”

“কী?”

ছোট্ট একটা শব্দেও আম্রপালি বুঝতে পারলেন অর্ণব মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কাঁদছেন। আম্রপালি তার মুখ দু’হাতে উঁচু করে ধরলেন। আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন,

“আমার সামনে কাঁদতে লজ্জা কীসের? নাকি ছেলে বলে লজ্জা পাচ্ছিস? ছেলেদের যে কাঁদতে নেই, এটা ভুল। আর মায়ের কাছে তার ছেলে-মেয়ে দুজনেই তার সন্তান। মায়ের কাছে মন খুলে কাঁদা যায়। তুইও আজ ইচ্ছেমতো কেঁদে নে। তাহলে বাকিটা জীবন অন্তত হাসিখুশি থাকবি।”

“কেন?”

“তোর আজ যত কষ্টই হোক অর্ণব, আমার আর মাত্র একটা কথা রাখ। মোহিনীকে ছেড়ে দে। ভুলে যা ওকে। তোর সামনে এখন দুটো দরজা আছে। এক দরজায় মোহিনী আর আরেক দরজায় পদ্মাবতী আর তোর সন্তান দাঁড়িয়ে। মোহিনীর দরজাটা ক্ষণিকের জন্য খোলা আর যে দরজায় পদ্মাবতী, সেটা চিরকাল খোলা থাকবে তোর জন্য। এবার বল, কার কাছে যাবি তুই?”

অর্ণব জবার দিলেন না। আম্রপালিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। আম্রপালি আবার বললেন,

“পদ্মাবতী আর মোহিনী, দু’জনকেই আমি বড় করেছি অর্ণব। একজন গড়তে ভালোবাসে তো আরেকজন ধ্বংস করতে। মোহিনী তোকে ধ্বংস করে দেবে। আর পদ্মাবতী সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তোকে আবার গড়তে পারবে। তুই ওর সাথে খুব ভালো থাকবি।”

অর্ণব পাঞ্জাবীর হাতায় চোখ মুছে আম্রপালির দিকে তাকিয়ে বললেন,

“আমি পারবো না মা। আমি পারবো না। মেহেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। পদ্মাবতীকে আমি আমার জীবনে জায়গা দিতে পারবো না। তবে হ্যাঁ, একটা কাজ করবো।”

“কী?”

“মেহেরকে ছেড়ে দেব। ঠিক বলেছেন আপনি। কোন মুখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো? আর কোনোদিন তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো না আমি। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে খুব সাহসী দাবি করে এসেছি কিন্তু তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে কিছু বলার সাহস আর আমার মাঝে নেই। আর কোনোদিন আমার মুখ দেখাবো না তাকে।”★

ছেলের জীবন নিজ হাতে সুন্দর করে গড়ে দেবেন বলে ঠিক করেছেন আম্রপালি। তাতে ছলনার আশ্রয় নিতে হলে তা-ই সই। মোহিনীর জীবনে যে অর্ণবের জন্য আর কোনো জায়গা নেই, এটা সত্যি হোক আর মিথ্যে, তা অর্ণবকে বিশ্বাস করাতে পেরেছেন তিনি। অর্ণবকে আর কোনোকিছু নিয়ে জোর করেননি সেদিন। চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সকালে হাসিমুখে বিদায় দিয়েছিলেন ছেলেকে। পানশালায় বসে পুরনো সেসব কথাই ভাবছিলেন অর্ণব। অভ্রবাবুর ডাকে স্মৃতিচারণে ব্যাঘাত ঘটলো তার। অভ্রবাবু জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বললেন,

“শুনতে পাচ্ছো অর্ণব?”

“হু?”

“শুনতে পাচ্ছো আমি কী বলছি?”

অর্ণব নির্লিপ্তভাবে চেয়ে রইলেন। নেশা ধরে গেছে তার। অভ্রবাবু এতোক্ষণ কী বলেছেন তার কোনো কথাই কর্ণকুহর হয়নি অর্ণবের। অভ্রবাবু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

“নিজেকে আয়নায় ভালো করে দেখেছো একবার? কী অবস্থা হয়েছে তোমার?”

অর্ণব ঘোরগ্রস্তের মতো জবাব দিলেন,

“হুম। মাথায় লম্বা চুল, বহুদিনের না কামানো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর রাতে না ঘুমিয়ে থেকে থেকে চোখের নিচে কালি পড়ে যাওয়া সবসময় ঘুমাচ্ছন্ন থাকা রক্তবর্ণ দুটো চোখ। দেখেছি আমি নিজেকে।”

“তোমার মা তোমাকে এভাবে দেখলে খুশি হবেন না। তিনি তোমাকে এখানে আমার ভরসায় পাঠিয়েছেন। আমি চাই না তুমি এভাবে কষ্ট পাও।”

“আমি নিজের খেয়াল রাখতে জানি কাকু।”

“এতোমাস হয়ে গেল তুমি এখানেই আছো। তোমার একটু হাওয়াবদল প্রয়োজন। তুমি কিছুদিনের জন্য কুঞ্জনগরে ফিরে যাও অর্ণব। ঘুরেবেড়িয়ে এসো। তাছাড়াও তোমার স্ত্রী এখন সন্তানসম্ভবা। যেকোনো দিন তুমি বাবা হতে পারো। এখন ওর প্রয়োজন তোমাকে।”

“বাবা!”

“বাবা হওয়াটা মুখের কথা নয় অর্ণব। তোমার জীবন সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিতে পারে এই একটা শব্দ। তুমি এখন শুধু নিজের কথা ভাবছো। তুমি কিসে ভালো থাকবে সেটা ভাবছো। কিন্তু বাবা হওয়ার পর তোমাকে দেখতে হবে তোমার সন্তান কিসে ভালো থাকে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে তোমাকে সব কষ্ট সহ্য করতে হবে। নিজের কথা ভুলে তার ভালোর জন্য ভাবতে হবে।”

অর্ণব সামান্য হাসলেন। অভ্রবাবু বললেন,

“হাসছো? আমি তোমাকে এ-বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি বলে হাসি পাচ্ছে নিশ্চয়ই তোমার। আমি পারিনি অর্ণব। আমি একজন ভালো পিতা হতে পারিনি। কিন্তু আমি জানি তুমি পারবে।”

“বাবা হব আমি? একজন ভালো বাবা।”

“আমার মতো ভুল তুমি করো না অর্ণব। নিজের স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুখী থাকো। বিয়ের পরও অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক রাখাটা কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। কিন্তু এই সন্তান তোমার জীবনে নিশ্চয়ই ভালো কিছু নিয়ে আসবে।”

শেষের কথাগুলো খুব ভালোভাবে অর্ণবের মাথায় গেঁথে গেল। আশেপাশের লোকগুলো তাদের দুজনের সম্পর্ক জেনে প্রায়ই তাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। এজায়গায় মানুষ সচরাচর নিজের পরিবারের সাথে এসে একসাথে বসে মদ খায় না। গুরুজনদের সাথে তো একদমই নয়। বরং লুকিয়েই আসে। অভ্রবাবু এটা বুঝতে পেরে অর্ণবের পাশ থেকে উঠে কিছুটা দূরে গিয়ে বসলেন। অর্ণব এখনো অভ্রবাবুর বলা কথাগুলো ভাবছেন। বিড়বিড় করে বললেন,

“যে সন্তান জন্মাবার পূর্বেই আমাদের বিচ্ছেদ ঘটালো, সে সন্তান আর কী ভালো নিয়ে আসবে আমার জীবনে। আমি এখনো ভাবতে পারি না মেহের, যে আপনি আর আমার নেই। অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছি আপনাকে আমি। প্রায় আট মাস হতে চললো আপনাকে আমি দেখিনা মেহের। তবুও প্রতিটা মুহুর্ত আমার চোখের সামনে আপনার চেহারা ভাসে। দিনে যতবার শ্বাস নিয়েছি, তার থেকেও অধিকবার আপনার কথা ভেবেছি আমি। আমার প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাসে আপনার নাম লেখা আছে মেহেরজান।”

বিড়বিড় করতে করতে অর্ণব তার একটু দূরেই একটা লোককে বসে থাকতে দেখলেন। বয়স পঞ্চাশের কোঠায় হবে। অর্ণব চেনেন না তাকে। কথা হয়নি কখনো। কিন্তু যতবার এখানে এসেছেন ততবারই ওই লোকটাকে দেখেছেন। হয়তো প্রতিদিনই আসেন এখানে। প্রতিবার নতুন নতুন মুখের সাথে এই একটা পুরনো মুখ দেখতে পান অর্ণব। তাই সহজে নজরেও এসে গেছে। অর্ণব গ্লাসে থাকা মদটুকু এক নিঃশ্বাসে গিলে উঠে তার পাশে গিয়ে বসলেন।
.
.
.
আয়নার সামনে বসে কান থেকে ঝুমকো দুটো খুলে পাশে রাখলেন মোহিনী। চুড়িগুলো খুলতেই হাত ফসকে সব নিচে ছড়িয়ে পড়লো। মোহিনীর চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো। ঊর্মিলাকে ডেকে বললেন,

“চিরুনীটা আমার হাতে দিয়ে চুড়িগুলো ওঠাতো ঊর্মিলা।”

ঊর্মিলা যথারীতি চিরুনীটা মোহিনীর হাতে দিয়ে চুড়িগুলো খুঁজতে লাগলেন। কাজ করতে করতে বললেন,

“আজ মনে হলো পদ্মাবতীকে দেখলাম ছাদে উঠেছে।”

মোহিনী চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ চুলে টান লাগতেই “আহ্” করে উঠলেন। এরপর বললেন,

“কীভাবে দেখলি? এখান থেকে ওতো ভালো করে মুখ বোঝা যায় নাকি?”

“দুপুরে লুকিয়ে লুকিয়ে আম্মার দূরবীক্ষণটা নিয়ে ছাদে উঠেছিলাম। আর মুখ দেখেও তো চিনতাম না। ওকে আগে কখনো দেখেছি নাকি আমি।”

মোহিনী সামান্য হাসলেন।

“তাহলে বুঝলি কী করে ওটা পদ্মাবতী?”

“পেট দেখে।”

মুহুর্তেই মোহিনী কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেলেন। চিরুনীটা সামনে রেখে বললেন,

“তা ওর শ্বাশুড়ি ওকে এই অবস্থায় ছাদে উঠতে দিলেন?”

“সে আমি জানি না।”

ঊর্মিলা সবগুলো চুড়ি উঠিয়ে রেখে দিয়ে বললেন,

“মোহিনী।”

“হুম।”

“তোর অর্ণবদার কথা মনে পড়ে না?”

“কার কথা?”

“অর্ণবদা।”

“অর্ণব চৌধুরী আবার তোর দাদা হলো কবে থেকে?”

“ঠিকাছে। এবার বল। অর্ণব চৌধুরীর কথা কখনো মনে পড়ে না তোর?”

“না, মনে পড়ে না। তার কথা আমার কেন মনে পড়তে যাবে? মনে রাখার মতো কোনো মানুষ সে?”

“কিন্তু তুই তো ভালোবাসিস তাকে।”

“ভালোবাসতাম। কিন্তু সে প্রতারণা করেছে আমার সাথে। তাই আমিও ভুলে গেছি তাকে।”

“সত্যিই ভুলে গেছিস?”

“ভুলে না যাওয়ার কী আছে? আর আমাদের জীবনে একাধিকবার প্রেম আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। একটা গেছে তো আরেকটা আসবে।”

“অন্যকারও জন্য না হলেও তোর জন্য অবশ্যই অস্বাভাবিক।”

“তুই এখন বের হ তো আমার ঘর থেকে। খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি এখন ঘুমাবো।”

বলেই ঊর্মিলাকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন মোহিনী। আলমারি থেকে খুব গোপনে রেখে দেওয়া একটা বাক্স বের করলেন। বাক্সে অসংখ্য না পাঠানো চিঠি, অর্ণবের দেওয়া নুপুর আর বালাটা রয়েছে।। সেগুলো পাশে রেখে মোহিনী আরেকটা চিঠি লিখতে বসে গেলেন।

“কেমন আছেন অর্ণব? সবাইকে মিথ্যে বললেও সত্যি এটাই যে আপনার কথা আমার সবসময় মনে পড়ে। কতমাস হয়ে গেল আপনাকে দেখি না। আপনাকে দেখতে যে বড্ড ইচ্ছে করে। কিন্তু তার সব রাস্তাই যে আপনি বন্ধ করে গেছেন। আমাকে একা ফেলে চলে গেছেন। জানেন অর্ণব, আপনাকে আমি যতটা না ভালোবাসতাম, তার থেকেও অধিক ঘৃণা করি এখন। আপনার কথা মনে পড়লে এখন আর ভালোবাসা নামক শব্দটা মাথায় আসে না। শুধু একটা শব্দই মনে পড়ে। সেটা হলো ‘প্রতারক’।”

চিঠিটা লেখা শেষ করে বাক্সে রেখে আবার তা আলমারিতে তুলে রাখলেন মোহিনী। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বুজে বললেন,

“ঈশ্বরের কাছে আমার একটাই প্রার্থনা। ওদের সর্বনাশ।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here