অন্তরালে_তুমি
পর্ব_৬
#প্রত্যাশা
❤
বিকেল ৪.০০টা ,,
ফাংশন এখনো চলছে ..তবে আমি আর রিমি বের হয়ে গিয়েছি আর ভালো লাগছে না..বাসায় চলে আসি..
রাতে খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছি..হঠাৎ মোবাইল একটা মেসেজ এলো ..
—-এতো রাতে অনলাইনে কি?
অদ্ভুত কে এটা ..প্রোফাইল ঢুকে দেখি আদিত্য স্যার..শোয়া থেকে উঠে বসি..
স্যার আমাকে মেসেজ দিচ্ছে উনি আমার আইডি কোথায় পেলো..উনি আবার মেসেজ দিলো ..
—-কি হলো সীন করে বসে আছো কেন ..রিপ্লাই দিতে হয় সেটা জানো না ..
—-আস্সালামুআলাইকুম স্যার !!
—-ওয়ালায়কুমাসসালাম ..বাই দা ওয়ে একটা কথা বলো আমি কি কখনো তোমাকে পড়িয়েছি?
—-না তো ..
—-তাহলে এত স্যার স্যার করো কেন ..আমি তোমার কোন ক্লাসের স্যার ছিলাম ..
—-না মানে আসলে সম্মান দিতে স্যার বলি .
—-বাবা তুমি সম্মান করতে জানো?
—-জানবো না কেনো? আমি সবাইকে যথেষ্ট সম্মান করি ..
—-তাই তো দেখলাম রাস্তায় কিভাবে আমার সাথে কথা বলেছিলে
—-আসলে তখন তাড়াহুড়োয় ছিলাম আর আপনি এতো স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিলেন যে রাস্তার কাদা এসে আমার গায়ে পরে তাই রেগে গিয়েছিলাম..সরি!!
—-সরিটা এখন একসেপ্ট করছি না ..সময় হলে শোধ তুলবো..
—-কি? শোধ তুলবেন মানে?
—-সময় হলেই বুঝবে..আচ্ছা রাখছি এখন ..আর অনলাইন থেকে বেরিয়ে ঘুমাও..গুড নাইট .
আমিও গুড নাইট বলে অফ লাইনে চলে গেলাম..
———–______———-
মাগরিবের আজান শুনে ভাবনা চিন্তা থেকে বের হলাম ..এইভাবেই আদির সাথে আমার পরিচয়টা হয় ..আজান শেষ হলে উঠে নামাজটা পরে নেই….তারপর বসার রুমে যাই…
—- আয় মা বস এখানে ..
—-হুম আব্বু …আম্মু আমি কিন্তু চা না কফি খাবো
—-জানি জানি.
.—-বলছিলাম যে মা আজকে না কি আদিত্যর সাথে দেখা হয়েছিল ..?
—-হুম আব্বু ..তোমায় কে বললো?
—-আদিত্য বলেছে
—-কথা হয় তোমার সাথে ওর?
—-হু. হয় ..
—–ওহ আচ্ছা
—-ছেলেটা কিন্তু খুবভালো!!
আমি আব্বুর কথার উত্তরে কিছু বললাম না ..
রাত ১০.০০টা,,,,
আলমারিটা খুলে একটা বাক্স বের করলাম ..বক্সের ভেতর পুরুনো একগুচ্ছ গোলাপ আর একমুঠো নীল চুরি ..চুরি গুলো হাতে পড়ি এর আগে কখনো পড়েনি এগুলো..গোলাপ গুলো হাতে নিয়ে মনে পড়ছে সেই দিনটার কথা ..
প্রচুর বৃষ্টি ছিল সেদিন..ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ..রিমিও সে দিন আসেনি ..দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ দেখলাম একটা ছেলে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে এই বৃষ্টির মধ্যে হেটে আসছে দূর থেকে দেখে চিনতে পারিনি..তখনমনে মনে ভাবি কোন সৌভাগ্যবতী ভালোবাসার মানুষ যে উনি যে এইরকম বৃষ্টির মধ্যে কাকভেজা ভিজে তাকে গোলাপ দিতে এসেছে ..ওমা কিছুক্ষন পর দেখি এটা আদিত্য আর উনি আমার সামনে এসে হাটু গেড়ে বসলেন আমি তো পুরো হা..আসে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কত মানুষ এতো মানুষ কৈথেকে আসলো এতক্ষনতো কেউ ছিলনা আর এখন এতো মানুষ..নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি এক গুচ্ছ গোলাপ আমার দিকে একিয়ে দিয়ে বলছে ..
—-রূপ আমার জানা নেয় কিভাবে তোমাকে নিজের মনেরকথা বলবো অনেক প্রেক্টিসে করে এসেছি তবুও তোমার সামনে এসে সব কিছু কুলিয়ে গিয়েছে ..আমি সাজিয়ে গুছিয়ে কিছু বলতে পারবো না ..জাস্ট এইটুকুই বলবো ..আমি তোমাকে ভালোবাসি ..যেদিন তোমাকে নীল শাড়ি পরে দেখি সেইদিন থেকেই ..প্লিজ আমার ভালোবাসা তুমি গ্রহণ করে নাও…
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি ..
—-কি হলো কিছু বলো ..
—-এটা সম্ভব না আদি ..
—-কেন সম্ভব না ..?
—-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে ..সামনে শুক্রবারে আমার বিয়ে ..
—-কি ?? বিয়ে মানে তুমি আমাকে কিছু বলোনি কেন ..
—-আসলে বিয়ের কার্ড দিবো ভেবেছিলাম
—-বিয়ের কার্ড মাই ফুট ..এই মেয়ে তোমার কি মনে হয় তুমি আমাকে বিয়ের কার্ড দিলে আমি ও নাচতে নাচতে তোমার বিয়ে খেতে চলে যাবো …আমি তোমাকে ভালোবাসি ..বিয়ে যদি করতে হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করবে অন্য কাউকে না ..বুঝেছো
.
—-আদি আমার কিছু করার নেই সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে ..
—-কেন এমন করলে ?তুমি বুঝতে না আমি তোমাকে ভালোবাসি এই ২ বছর ধরে তোমার পেছনে পরে আছি ..প্রতিদিন একবার হলেও তোমাকে দেখতে আসা ..ফোনে কথা বলা ..সরাসরি না বললেও তোমাকে অনেক বার বুঝিয়েছি তুমি আমার কতটা পছন্দ ..এইসব কিছু তুমি বোঝোনি ..কি হলো বলো বুঝতে পারতে না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি ..
—-আদি আমি এই ব্যাপারে আর কোনো কথা বলে চাই না ..আমি আমার পরিবারের উপরে যেতে পারবো না ..আমার বাবা মা যা বলবে তাই হবে..
—-ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার বাবা মার সাথে কথা বলছি ..
—-আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি ..এখন যদি আব্বু আম্মুকে আপনি আমার কথা বলেন তাহলে উনারা ভাববে আমার আপনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ..উনারা আমাকে খুব বিলিভ করে আদি আমি উনাদের বিশ্বাস ভাঙতে পারবো না ..
—-তো এখন আমি কি করবো ?তুমি ই বলো আমার কি করা উচিত ?
—-ভুলে যান আমাকে ..
—-পারবো না
—-মানুষ চাইলে সব পারে ..চেষ্টা করলেই পারবেন ।
—-আমি পারবো না ..তোমাকে ভুলা আমার জন্য ইম্পসিবল ..
—-আমাকে নিয়ে ভাবলে শুধু শুধু আপনার কষ্টটাই বাড়বে এর থেকে বেশি কিছু পাবেন না .তার চেয়ে বরং আমাকে ভুলে অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করুন ..
উনি কিছু বললেন না পকেট থেকে এক মুঠো নীল চুরি বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিলেন ..
—-খুব ভালোবেসে কিনেছিলাম তোমার জন্য ..পড়তে মনে না চাইলে খুলে ফেলে দিও তবুও আমাকে ফিরিয়ে দিও না ..আর এই গোলাপ গুলাও তোমার জন্য ..নিলে খুশি হবো ..
আমি গোলাপগুলো নেয় ..
উনি আমার গালে আলতো করে হাত রেখে বললো ..
—-ভালো থেকো ..আর তোমার নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা ..
উনি কি কাদচ্ছেন ..বৃষ্টির পানিতে বুঝা যাচ্ছে না ..আমি এক পলক উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলি ..নয়তো নিজেকে উনার চোখে হারিয়ে ফেলবো ..উনি পলক হীন চোখে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যান ..উনি যাওয়ার সাথে সাথে আসে পাশের মানুষ গুলো ও চলে যায় ..আর আমি নিচে বসে পড়ি ..খুব ইচ্ছে করছে উনাকে একবার ডাকি ..একবার বলি আমিও যে উনাকে ভালোবাসি ..খুব ভালোবাসি আপনাকে খুব.. আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ..আমি জানতাম আপনি আমাকে ভালোবাসেন এই ২ বছরে আপনার ব্যবহারে আমি এইটুকু বুঝে গিয়েছিলাম ..কিন্তু কি করবো বলুন আমি যে আমার বাবা মার্ সামনে আমার ভালোবাসার কথা বলতে পারবো না ..এইটুকু সৎ সাহস যে আমার নেই ..আব্বু আম্মু কোনোদিনও মেনে নিতো না এই সম্পর্ক সেটা আমি জানি তাই আপনার ভালোবাসার বুঝতে পেরেও আমি আমার মনকে শক্ত করি ..কারণ আমি জানি আমিও যদি দুর্বল হয়ে পড়তাম তাহলে আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে দিতেন না যেকোনো মূল্যে আমাকে নিজের করে নিতেন ..আমি যে নিরুপায় আদিত্য ..আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে খুব ..
,,,,,,,,,,,,
চোখ থেকে পানি পড়ছে ..কেন জানি আজ মনে হচ্ছে উনাকে আমি যে কষ্টটা দিয়েছি তাই আমার সাথেও এমন হচ্ছে ..চুরি আর গোলাপগুলো আবার বক্সে রেখে দিলাম ..ভালো লাগছে না কিছু ..আচ্ছা আদিত্য কি এখনো আমায় আগের মতো ভালোবাসে ..না না কি ভাবছি আমি এসব ..আমি উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর কষ্ট দিতে পারবো না ..লাইট তা অফ করে এসে শুয়ে পড়ি .. ..
সকালে ঘুমের মধ্যে টের পাচ্ছি কেউ যেন আমার পেটে সুরসুরি দিচ্ছে ,,,,
চলবে,,,,,
(আল্লাহকে ভয় করো,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)