রেড কেইস-২০২,পর্বঃ ০১
লেখকঃ আবির খান
সকাল ৮ টা নাগাদ বাজে। আবির খুব মনোযোগ দিয়ে প্রতিদিনের মতো আজও খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিল। হঠাৎই ওর ডিপার্টমেন্টের চিফ, কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ওকে কল দেয়। আবির তার নাম দেখা মাত্রই দাঁড়িয়ে সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করে সালাম দেয়। আশরাফুল ইসলাম সালামের জবাব দিয়ে বলেন,
— কেমন আছো আবির?
— আলহামদুলিল্লাহ স্যার। আপনি?
— আলহামদুলিল্লাহ। শোনো, তোমার সাথে আমার জরুরি মিটিং আছে। তোমার গত মিশনের ফুল ডিটেইলস দেখলাম। তাই আমি চাই আমার এই মিশনটা তুমিই কম্পলিট করো।
— ইনশাআল্লাহ স্যার। আমি কখন আসবো মিটিংএ?
— ১০ টার মধ্যে চলে আসো। মিশনটা তোমার ভাষায় রেড কেইস বলা যায়। বুঝতেই পারছো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
— জি স্যার, আমি সময় মত চলে আসবো।
— ওকে।
কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ফোন রেখে দেন। আবির ওর চেয়ারে আবার বসে পড়ে। রেড কেইস- ২০১ কম্পলিট করার এক মাসের মাথায় ও আরেকটি রেড কেইস পেয়ে গেল। যেটাকে বলা যায় #রেড_কেইস- ২০২। আবির এই কেইস বা মিশনটা নিয়ে অনেক উত্তেজনা অনুভব করছে। কারণ এবার ডিরেক্ট উপর থেকে মিশনটা এসেছে। অনেকটা বেশি দায়িত্ববোধ কাজ করছে ওর মাঝে। যারা আবিরকে এখনো চিনতে পারছেন না চলুন তাদেরকে আবার নতুন করে আবির এবং ওর টিম সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আসি। আবির হলো একজন বেশ বড়ো মাপের সি আই ডি অফিসার। ক্রিমিনালরা ওর নাম শুনলেই ভয়ে থরথর করে কাঁপে। আবিরের একটা স্পেশাল টিম রয়েছে। ও সহ মোট পাঁচ জনের টিম। সবাই অনেক দক্ষ আর সাহসী। আবিরের টিমে আছে, রাহাত, রুনা, মিশিতা আর রাহুল। আবির ওদেরকে সবসময় গাইড করে। সিরিয়াস কেইস হলে আবির নিজে ওদের সাথে কাজ করে। এ পর্যন্ত অনেক ক্রিটিকাল কেইস আবির আর আবিরের টিম মিলে সলভ করেছে৷ তাই ওদের টিমের নাম দেওয়া হয়েছে “ক্রিমিনাল হান্টার”। একমাত্র আবিরের বিচক্ষণতা, দক্ষতা আর মাস্টার মাইন্ড বুদ্ধির জন্য আজ পর্যন্ত এমন কোন কেইস বাকি নেই যেটা আবির সলভ করে সবাইকে দেখিয়ে দেয় নি। যার জন্য ও পেয়েছে অনেক ম্যাডেল আর পুরষ্কার। ত্রিশ বছর বয়সী আবির আরেকটি নতুন অজানা রেড কেইসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আবির আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত ওর সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত টিম মেম্বার রাহাতকে ওর কেবিনে আসতে বলে। রাহাত বাইরেই ছিল। আবিরের পারমিশন নিয়ে ভিতরে এসে জিজ্ঞেস করে,
— স্যার কল করেছেন?
— হ্যাঁ। আমাদের ডিপার্টমেন্টের চিফ মানে কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম স্যার মাত্র কল দিয়েছিল। জরুরি একটা মিটিং আছে। সে নিজে আমাকে একটা রেড কেইস দিচ্ছে। সো বুঝতেই পারছো আমাদের কি করতে হবে৷ আমি একটুপরই বের হয়ে যাবো। তোমরা সবাই পুরো টিম নিয়ে রেডি থাকো।
রাহাতও নতুন মিশনের কথা শুনে খুব এক্সাইটেড ফিল করছে। ও উজ্জ্বল বড়ো একটা হাসি দিয়ে বলে,
— ওকে স্যার আমি এখনিই সবাইকে ইনফর্ম করছি।
— গুড। তাহলে এখন যাও আর রনিকে বইলো আমার জিপটা ঠিকঠাক আছে কিনা চেক দিতে।
— ওকে স্যার আমি এখনিই বলছি।
রাহাত দ্রুত বিদায় নিয়ে চলে যায়। এরপর আবির কিছু ফাইল দেখতে থাকে। তারপর সব গুছিয়ে ওর নিজস্ব আর্মসটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে মিটিং এর উদ্দেশ্যে। আধা ঘণ্টা নাগাদ সময় লাগে আবিরের পৌঁছাতে। জিপটা আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্ক করে সোজা কমান্ডার আশরাফুল ইসলামের কাছে চলে যায় ও। সেখানে গিয়ে নক করে ভিতরে ঢুকতেই ও দেখে অনেক বড়ো বড়ো হায়ার রেংকের অফিসাররা ওর অপেক্ষায় বসে আছে। সব মিলিয়ে আট নয় জন হবেন তারা। আবির মিটিং রুমে ঢুকে সবাইকে স্যালুট বা সম্মান প্রদর্শন করে। ওকে দেখেই কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম বলে উঠেন,
— এসেছো আবির বসো বসো। আমরা সবাই তোমার অপেক্ষাই ছিলাম।
— ধন্যবাদ স্যার। (বসতে দেওয়ার জন্য)
আবির আশরাফুল ইসলামের ঠিক সামনে হাতের ডান দিকে খালি চেয়ারটায় বসে। ও বসলে আশরাফুল ইসলাম এবার বলে উঠেন,
— আবিরের সম্পর্কে নতুন করে আপনাদের বলার আর কিছুই নেই তা আপনারা জানেন। এবার আমরা আসল কথায় আসি। আবির, এই ক্রিটিকাল মিশনের জন্য আমরা তোমাকে ছাড়া অন্যকারো প্রতি আস্থা রাখতে পারছি না। তাই তোমাকে চুজ করা এই মিশনের জন্য।
— অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। আমি গর্বিত। (সবার উদ্দেশ্যে)
— আবির এবার তোমাকে মিশন সম্পর্কে বলছি। গত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের দেশে মাদক সেবনের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই-না স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের নাগালে দেশি এবং বিদেশি অনেক ভয়ংকর মাদক চলে যাচ্ছে। হাউ! আমাদের সেটাই খুজে বের করতে হবে। তাই তোমাকে নিয়েছি এই মিশনের জন্য। কারণ এই কাজটা এতটা সহজ না৷ তবে তুমি এটা পারবে তা আমরা বিশ্বাস করি।
— ইনশাআল্লাহ স্যার। আমি আমার সবটা দিয়ে মিশনটা অতিদ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।
— গুড। এবার এই মিশন সম্পর্কে আমাদের কমান্ডার মাহবুব স্যার তোমাকে কিছু বলবেন।
— ধন্যবাদ আশরাফুল সাহেব। আবির আমার গোপন সূত্র অনুযায়ী জানতে পেরেছি, দেশে একটা বড়ো বিদেশি মাফিয়া কয়েক বছর ধরে গোপন ভাবে তার আধিপত্য বিস্তার করছে। তার এই আধিপত্য বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার হলো, বিদেশি মাদক দ্রব্য। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে সেই মাফিয়া কে? এবং তার সঙ্গী কারা তাদের কোন প্রকার ইনফরমেশন আমরা এখনো পাইনি। এখন শেষ ভরসা তুমি। যদি ওদের দমনে কিছু করতে পারোতাহলে দেশের জন্য অনেক ভালো হবে। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।
আবির চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
— স্যার আপনাদের আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা এত বড়ো একটা মিশনের জন্য আমাকে পছন্দ করেছেন শুনেই আমি খুব গর্ববোধ হচ্ছে। আমি ওয়াদা করছি, আমি এই মিশন যেভাবে হোক শেষ করবোই ইনশাআল্লাহ। হয়তো সময় বেশি লাগবে কিন্তু আমি এর একটা শেষ দেখিয়ে ছাড়বো।
সবাই হাত তালি দেয় আবিরের আত্নবিশ্বাস দেখে। আশরাফুল ইসলাম বলে উঠেন,
— আবির তাহলে কাল থেকেই তুমি কাজ শুরু করো। কিন্তু কিভাবে শুরু করতে চাচ্ছো?
আবির আবার বসে বলে,
— স্যার এই মিশনটা খুব রিস্কি। কোন ভাবে ওদের কানে গেলে ওরা সবাই এলার্ট হয়ে যাবে। তখন ওদের ধরা অসম্ভব হয়ে যাবে। তাই এই মিশনটার প্রথম পর্যায়ে একদম সিক্রেট ভাবে এগোতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে একে একে ওদের ধরতে হবে।
— সাব্বাশ। এই না হলো আমাদের আবির। তাহলে তোমার মতো তুমি কাজ শুরু করো। আমরা সবাই আছি তোমার সাথে।
— জি স্যার।
এরপর ওদের আরও অনেক ধরনের কথা হয় মিটিংএ। আবির অন্য যারা বড়ো বড়ো পদে ছিল তাদের সাথে পুরো মিশনটা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে অনেক ধরনের ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়ে নেয়। তারপর মিটিং শেষ করে বাইরে এসে সবার প্রথম রাহাতকে কল দেয় ও। কিছুক্ষণ রিং হতেই রাহাত কল রিসিভ করে। আবির ওকে বলে,
— রাহাত আমার সিক্রেট বেইসে চলে আসো তোমরা। মিশনটা খুব সিক্রেট।
— ওকে স্যার আমরা এখনি রওনা হচ্ছি।
আবির ওর জিপ নিয়ে ওর বানানো সিক্রেট বেইসে রওনা হয়। যা ওর টিম মেম্বার ছাড়া অন্যকেউ জানে না। ও খুব চিন্তায় আছে। কারণ এই রেড কেইসটা আগের সব কেইস থেকে অনেক ডেঞ্জারাস। তবে ওর মাঝে অন্যরকম একটা উত্তেজনাও ফিল হচ্ছে। এবার খুব বড়ো একটা ধামাকা হতে যাচ্ছে শহরে…
চলবে…?
#রেড_কেইস-২০১ এর পরবর্তী কেইস এটি। আশা করি সবার ভালো লাগবে। প্লিজ সবার ভালো সাপোর্ট আশা করছি। তাহলে দ্রুত পরবর্তী পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।