ভুলবশত_প্রেম,৩১,৩২

0
809

#ভুলবশত_প্রেম,৩১,৩২
#লেখনীতে:সারা মেহেক
৩১
জানুয়ারি মাসের ঈষৎ উষ্ণ দুপুরের শীতল হাওয়া এসে বাড়ি খাচ্ছে আমার চোখেমুখে। বাতাসের তোড়ে ঠিকঠাক চোখ মেলে রাখা দায় হয়ে পড়ছে আমার জন্য। ফলে চোখজোড়া বন্ধ করে জানালার দিকে মুখ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে রয়েছি আমি। গাড়ি তার স্বাভাবিক গতির চেয়ে তুলনামূলক দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। এর পিছনে অবশ্য আদ্রিশ দায়ী। উনি উনার রাগটা সম্পূর্ণভাবে এই বেচারা গাড়ির উপর বের করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আফসোস, জানের ভয়ে উনার মাঝে রয়ে যাওয়া সুপ্ত রাগটা পুরোপুরিভাবে এই গাড়ির উপর বের করতে পারছেন না উনি। এদিকে উনার ড্রাইভিং স্পিড দেখে আমার মাঝে ভয়েরা এসে জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও তারা আমার কাছ থেকে সহস্র ক্রোশ দূরে অবস্থান করছে। স্বাভাবিক সময়ে থাকলে গাড়ির এ গতি দেখে আমি নির্ঘাত সেখানে অক্কা পেতাম। কিন্তু আজ এখনও এমন কিছু হলো না। এর কারণটা অবশ্য আমি নিজের মাঝ থেকেই ঝেঁকে বের করেছি। আজ আমার এ নির্ভীক মুহূর্তগুলো কাটানোর প্রধান এবং একমাত্র কারণ হলেন আদ্রিশ। উনি পাশে আছেন বলেই আমি ভয় পাচ্ছি না। ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত না? যে মানুষটাকে আমি মাত্র এক মাস হলো চিনেছি সে মানুষটার কাছেই আমি প্রাণ খোয়ানোর মতো মুহূর্তেও অসম সাহস অনুভব করছি।
তখন গাড়িতে উঠার পরপরই ভীষণ অস্থির অনুভব করি আমি। পরবর্তীতে আদ্রিশ কি করবেন তা ভেবেই আমার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে আসে প্রায়। সে মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করতে আমি গাড়ির উইন্ডোর কাঁচগুলো নামিয়ে দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া উপভোগ করতে শুরু করি। কিছুক্ষণের মাঝেই আমার অবস্থা পূর্বের তুলনায় কিছুটা ভালো হয়ে আসে। তবুও আমার মস্তিষ্কে চলতে থাকে আদ্রিশের বলা প্রতিটা কথা। উনার পরবর্তী কদম কি হতে চলেছে তা আমি কিছুতেই আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে উনি যে বিশাল কিছু করার মতলব নিয়ে বসে আছেন তা এ মুহূর্তে উনার শান্তশিষ্ট মুখশ্রী দেখেই বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

আধ ঘণ্টার মাঝেই আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম। আদ্রিশ আমায় নামিয়ে দিয়ে কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। উনার নিরবতা দেখে আমি ভেতরে ভেতরে বেশ ঘাবড়ে গেলাম। কারণ নিজেকে প্রকাশ করার মানুষগুলো যখন এরূপ নিরবতা পালন করে তখন তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর অর্থ সে মানুষটি নিশ্চিতরূপে নিজের মাঝে বড় কোনো পরিকল্পনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। যা সম্পূর্ণরূপে আমার অজানা রয়ে গেলো।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে আসতেই আপু আমাকে ঘিরে ধরলো। কলেজ ছুটিরও আধ ঘণ্টা পর কেনো ফিরেছি এ নিয়ে আমার সামনে প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসে পড়লো সে। আমিও বেশ রিকশা না পাবার ব্যাপারটা ভান করে বললাম আপুকে। আপুও অবশ্য আমার কথা বিশ্বাস করে নিলো। কিন্তু এরপরও সে আমার পিছু ছাড়লো না। কারণ আমার জন্য যে আজ পার্লারে এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছে সে। দ্রুত সেখানে যেতে হবে যে! কিন্তু এ মুহূর্তে পার্লারে যাওয়া নিয়ে আমার তীব্র অনিচ্ছা থাকায় আমি আপুর সাথে এক প্রকার ঝগড়া বাঁধিয়ে নিলাম। দশ মিনিটের সে বাকবিতন্ডায় অবশেষে আমি জয়ী হলাম। এরপর আর কি! আপু হাল ছেড়ে দিয়ে আম্মুকে আমার নামে অভিযোগ শোনাতে ফোন দিলো। আমিও বেশ আম্মুর মুখের বকা শোনার পূর্বেই কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমানোর এমন ভান ধরলাম যে, আমি শোয়ার সাথে সাথেই গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গিয়েছি। এবার আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেখাও!

ঘুমের ভান করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছি আমি তা টের পায়নি৷ রাত প্রায় আটটার দিকে আমার দীর্ঘ ঘুমের ইতি ঘটলো। এই আটটার সময়েও হয়তো আমার ঘুমটা ভাঙতো না। তবে স্বপ্নে আচমকা আদ্রিশকে দেখায় আতঙ্কে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। অতঃপর ভীত হৃদয়ে চারপাশে আদ্রিশকে দেখতে না পেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি। আদ্রিশ যে একপ্রকার আমার সুখ, শান্তি, ঘুম সব কেড়ে নিজের কাছে নিয়ে রাখবেন তা কখনো কল্পনাও করেছিলাম না আমি। আগে জানলে আমার এ ঘুম, সুখ, শান্তিকে একটি সেফটি লকারে লক করে রাখতাম আমি।

আলস্যে ভরপুর শরীরটা নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম আমি। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে আধো আলোকিত ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম। এই এক সপ্তাহে এ বাড়ির আর কিছু প্রিয় হোক না হোক, এই ব্যালকনিটা আমার ভীষণ প্রিয় হয়ে গিয়েছে। এই জায়গায় সময় কাটালে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যায় এবং মন মস্তিষ্কের সকল বদ্ধ দরজাও খুলে যায় এখানে থাকলে।
ব্যালকনির চারিপাশে বয়ে চলা শীতল হাওয়ায় আমি খানিকটা সংকুচিত হয়ে এলাম। পরনে থাকা শালটা দু হাতের সাহায্য জোরে করে জাপটে ধরলাম আমি৷ অতঃপর চক্ষু জোড়া বন্ধ করে নিজেকে পুরোপুরি শান্ত করার চেষ্টা করলাম আমি। আমার মন মস্তিষ্ক কিছুটা ধীরস্থির হতেই আমার বদ্ধ চোখের সামনে আদ্রিশের প্রতিচ্ছবি ভাসতে লাগলো। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উনি আমার মন ও মস্তিষ্কে নিজের একটি পাকাপোক্ত জায়গা তৈরী করে নিয়েছেন। কিন্তু এ জায়গা উনি কতদিন বজায় রাখতে পারবেন? আমার বাবা মা-র সামনে যে এক সময় উনাকে এ জায়গা ছেড়ে দিতে হবে! আমি জানি, আদ্রিশ আমায় খুব ভালোবাসেন। যদিও উনি এখনও মুখে সরাসরি এটি স্বীকার করেননি। কিন্তু অস্বীকার করার মতো কাজও উনি করেননি৷ উনার প্রতিটা কথা এবং কাজ আমার প্রতি উনার অনুভূতিগুলোর সাক্ষাৎ প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। যা অস্বীকার করার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। তা হলো, আমি কি চাই। উনায় নিয়ে আমার মাঝে সেই অনুভূতির কি সৃষ্টি হয়েছে যে অনুভূতি আমায় নিয়ে উনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ আপু ব্যালকনিতে এসে হাজির হলো। আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে কোনোরূপ ভূমিকা ছাড়াই আপু জিজ্ঞেস করে বসলো,
” তুই আদ্রিশকে ভালোবাসিস?”

আচমকা আপুর এহেন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। ভীষণ বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
” এসব কি বলছিস আপু?”

আমার প্রশ্ন শুনে আপু হুট করে আমায় ধমক দিয়ে বললো,
” আমার সামনে নাটক করতে আসবি না। আমি যা প্রশ্ন করেছি তার ঠিকঠিক জবাব দে।”

আমি নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
” আচ্ছা, সে জবাব দিচ্ছি৷ কিন্তু তুই এ বিষয়ে কার কাছ থেকে খোঁজ পেলি তা তো বলবি।”

” দারোয়ান চাচার কাছে খোঁজ পেয়েছি। চাচা আমাকে ডেকে বললো,আজ না কি তোকে আদ্রিশের গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে। আবার এর আগেও বলে আদ্রিশ তোকে চিঠি দিয়েছি। এসবের কিছুই তো আমাকে জানাসনি মিম! কেনো?”

আপুর এ ‘কেনো’র জবাব আমি দিতে পারলাম না বলে দৃষ্টিনত করে দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর আপু পূর্বের প্রশ্নে ফিরে গেলো। আমি নত দৃষ্টিতে মিনমিন করে আপুকে জবাব দিলাম,
” আমি জানি না। ”

আপু হয়তো কিছুটা রেগে গেলো। ফলে অনেকটাই ধমকের সুরে বললো,
” জানিস কি তুই? নিজের অনুভূতি সম্পর্কে জানিস না তুই? তুই কি বুঝতে পারছিস পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে? কালকে তোকে দেখতে ইয়াসিরের ফ্যামিলি আসবে। আর আজ আমি শুনছি আদ্রিশ তোকে পছন্দ করে! এটা আগে জানলে কিছু করতে পারতাম আমি। কিন্তু এখন আমি কি করবো? নাহ, কিছু না কিছু তো করতেই হবে। সময় এখনও আছে। ইয়াসিরের সাথে তোর বিয়ে সম্পূর্ণ পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে। ”
বেশ অস্থিরতার সহিত কথাগুলো বলে দম নিলো আপু। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে আছি। আপু কিছুক্ষণ বাদে পুনরায় আমাকে ধমকে বললো,
” বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কিছু একটা তো বল আমাকে। ”

আপুর এ প্রশ্নোত্তরের পর্বের জন্য আমার ভেতরে সবটাই অগোছালো হয়ে এলো। ফলস্বরূপ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম এবং মুহূর্তের মাঝেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেঁদে দিলাম। আমার কান্না দেখে আপু কিছুটা নরম হয়ে এলো৷ আপুও আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলো,
” নিজেকে প্রশ্ন কর মিম। কখনও কি আদ্রিশের জন্য তোর মনে কিছু ফিল হয়েছে?”

আমি নিশ্চুপ রয়ে ভাবতে লাগলাম। আপুর এ প্রশ্নের জবাব নিঃসন্দেহে হ্যাঁ হবে। কারণ আদ্রিশকে নিয়ে আমি কিছুটা একটা অনুভব করেছি। কিন্তু সবসময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। সে অনুভূতি পুরোপুরি জাগ্রত হওয়ার পূর্বেই তাকে দাবিয়ে রেখেছি এবং আমি তাতে সফলও হয়েছি৷
আপু আমায় জিজ্ঞেস করলো,
” কি ব্যাপার মিম? জবাব দে।”

আমি মিনমিনে কণ্ঠে বললাম,
” হ্যাঁ।”

আপু পুনরায় প্রশ্ন করলো,
” ওর সাথে থেকে তুই নিজেকে সুরক্ষিত অনুভব করিস?”

” হ্যাঁ।”

” ওর সাথে থাকলে কখনও খারাপ কিছু ফিল করেছিস তুই?”

” না আপু৷ আমি আদ্রিশের সাথে থাকলে নিজের অনুভূতিগুলোকে ঠিক চিনে উঠতে পারি না৷ উনার সাথে ছোটখাটো ঝগড়া করেই সময় কাটিয়ে ফেলি। এদিকে ঝগড়া শেষে যখন উনি যখন অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকেন তখন আমি প্রচণ্ড অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলি৷ জানিস আপু? আমি সবসময় নিজের থেকেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছি। যেনো আমার আমি’র মাঝেই অপর এক সত্তা বাস করছে। যাকে আমি সবসময় লুকিয়ে রেখেছি। আমি কেমন যেনো আপু! আমি কেমন যেনো অদ্ভুত! কিন্তু আপু জানিস? আমি না আব্বু আম্মুকে খুব ভালোবাসি। তাদেরকে কষ্ট পেতে দেখা আমার জন্য সম্ভব না আপু। এজন্যই আমি নিজের সাথে নিজেই লুকোচুরি খেলা খেলেছি। যার ফল আমি ভোগ করছি।”
এই বলে আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম৷ আপু আমার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বললো,
” তাহলে এতোদিন এসব বলিসনি কেনো?”

” আমি বুঝতে চাইনি আপু এ ব্যাপারে। আমি নিজের থেকেই নিজের এ অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রেখেছি আপু। কখনো নিজের উপর চড়াও হতে দেয়নি এ অনুভূতিগুলোকে। কারন এ অনুভূতির কোনো ভবিষ্যত নেই৷ আদ্রিশের সাথে আমাদের মিল যায় না আপু। তোর বিয়ের সময় আব্বু আম্মুর অবস্থা দেখেছি আমি। আমি আবারও আব্বু আম্মুর সে অবস্থা দেখতে চাইনি আপু। আমি লোকের কথা শুনতে চাইনি। এসব থেকে বাঁচতে চেয়েছি। বাঁচতে চেয়েছি। কিন্তু এখন মনে হয়, এ থেকে বাঁচা অসম্ভব হয়ে পড়বে আমার জন্য। কারণ আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ”

আপু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। অতঃপর আশ্বস্ত গলায় বললো,
” তুই চিন্তা করিস না। কাল সবটা আমি দেখে নিবো। শুধু তোকে যা যা বলবো তার সবটাই করবি তুই। ”

আমি ধীর স্বরে জবাব দিলাম,
” আচ্ছা আপু। ”

—-

ছেলেপক্ষ এসেছে অনেকক্ষণ আগেই। আমাদের বাসার ড্রইংরুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কথাবার্তার আওয়াজ একটু বেশিই জোরে শুনতে পাচ্ছি আমি। বাইরে ঠিক কি হচ্ছে তা আন্দাজ করতে পারছি না।
আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে আমি,আপু, নাসরিন আন্টী ও কামাল আংকেল রওনা দিয়েছি বেশ সকাল করেই। আমাদের বাসায় এসেই আপু আমাকে সাজিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে নাসরিন আন্টী আম্মুকে নাস্তার কাজে সাহায্য করতে চলে গেলো। শুনেছি, ছেলেপক্ষ একটু সকাল করেই আসবে। ছেলেপক্ষের আসার কথা শুনেই আমার মাঝে অস্থিরতা বেড়ে গেলো। যদিও জানি, ছেলেপক্ষ আমায় দেখতে আসবে৷ কিন্তু এটা এখন আমি মেনে নিতে পারলাম না। এই অস্থিরতার সাথেই আমি কাটিয়ে দিলাম তিন তিনটা ঘণ্টা। অতঃপর যখন ছেলেপক্ষ এসে পৌঁছালো তখন বাইরে সবার কথাবার্তার ধরণ দেখে আমার মাঝে অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো।

অতঃপর আমার অস্থিরতার কিছুটা অবসান ঘটাতে আপু আমায় নিতে আসলো। আপু আমায় ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
” যা বলেছি গতকাল, সে অনুযায়ীই কাজ করবি। ছেলেকে দেখে সামনেই বলে দিবি যে, তুই ওকে পছন্দ করিস না। বাকিটা আমি দেখে নিবো।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপুর এ প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে গেলাম৷ অতঃপর শাড়ি পরহিতা আমাকে নিয়ে এসে ড্রইংরুমের সিঙ্গেল সোফায় বসিয়ে দিলো আপু। আমি নত মস্তকে চুপচাপ বসে রইলাম। অনুভব করছি, আমার হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক উঠানামা। মনে হচ্ছে এখনই যেনো ছোট্ট এ দূ্র্বল হৃদয়টা ঠাস করে বেরিয়ে আসবে। এ অস্থিরতায় আমার পা দুটো অনবরত নড়তে লাগলো। হাত দুটোও ক্রমশ ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে এলো।

কিছুক্ষণ বাদে আপু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
” মাথা তুলে ছেলের চেহারা সুরুত দেখে এখনই রিজেক্ট করে দে মিম। কে কি ভাবলো সে নিয়ে চিন্তা করিস না। ওসব আমি সামলে নিবো। সাহস জুগিয়ে রিজেক্ট করে দে তুই। ব্যস।”

আপুর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। হৃৎস্পন্দন পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। এমতাবস্থায় ছেলেকে দেখে রিজেক্ট করতে হবে আমার! কি এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! কিন্তু এছাড়া তো আমার কাছে আর উপায় রইলো না৷ অতঃপর কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে এইসেই নানা কিছু বুঝিয়ে প্রচণ্ড ভয়ে কিঞ্চিৎ সাহস নিয়ে মাথা তুলে সামনে চাইলাম। কিন্তু সামনে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে এলো। বিস্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে এলো। এ আমি সামনে কাকে দেখছি!

#চলবে

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

৩২

পাত্র হিসেবে আমার আদ্রিশকে দেখে আমার চোখ কপালে তোলার জোগাড় হয়ে এলো। আমি এক প্রকার হা করে নিষ্পলক উনার দিকে চেয়ে আছি। আমার এ প্রতিক্রিয়া দেখে আদ্রিশ সুক্ষ্মভাবে মিটিমিটি হেসে চলছেন। এদিকে আমি ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছি না, যেখানে ইয়াসিরের বসে থাকার কথা সেখানে আদ্রিশ কিভাবে বসে আছেন! আমার বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো যখন আমি খেয়াল করে দেখলাম উনার পুরো পরিবারই এখানে উপস্থিত রয়েছেন। তবে আমার কাছে সবচেয়ে অদ্ভুতুড়ে যে বিষয়টি লাগলো তা হলো, আমার পুরো পরিবার কি করে স্বাভাবিক আছে? তাদের সামনে রীতিমতো পাত্র অদলবদল হয়ে বসে আছে অথচ তারা সকলেই স্বাভাবিক প্রায়! তাহলে সবকিছু কি আগেই থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলো সকলে?
নাহ, কিছুতেই কিছু ভেবে উঠতে পারলাম না আমি। আমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন গিজগিজ করছে। অথচ একটার জবাবও আমার জানা নেই।

আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কামাল আংকেল বলে উঠলেন,
” মেয়ে আমাদের শক হয়ে গিয়েছে। এভাবে পাত্র বদল দেখে যে কেউই ঘাবড়ে যাবে। ”
এই বলে সকলে সমস্বরে হেসে উঠলো৷ এদিকে আমি কামাল আংকেলের কথা শোনামাত্র চট করে মাথা নামিয়ে ফেললাম। তৎক্ষণাৎ আপু আমার কানের কাছে ফিসফিস করে টিপ্পনী কেটে বললো,
” কি ব্যাপার মিম? রিজেক্ট করবি না ছেলেকে?”

আমি বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে রইলাম। আপুর কথা শুনে নিশ্চিত হলাম, আপুও এ ব্যাপারে সবটা জানতো।
কয়েক মিনিট পর আব্বু গলা পরিষ্কার করে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
” আসলে সবকিছু এভাবে হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারিনি আমি। সত্যি কথা বলতে আমি এখনও এটা মেনে নিতে পারছি না৷ নিঃসন্দেহে আদ্রিশ ভালো ছেলে। যেখানে কামাল সাহেব নিজ মুখে আদ্রিশের প্রশংসা করেছেন সেখানে আমার দ্বিতীয়বার বলার কিছু নেই। কিন্তু বাবার মন বলে কথা, আমি আমার মেয়ের মুখ থেকে সবটা শুনতে চাই। ”

এই বলে আব্বু আদ্রিশের বাবা অর্থাৎ ইদ্রিস আংকেলকে বললো,
” আপনার ছেলে আমার মেয়েকে পছন্দ করে৷ আপনার পরিবারও আমার মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু আমার মেয়ে এ ব্যাপারে কি মতামত দেয় সেটাই আমার কাছে বড়। আমার মেয়ে যদি রাজি হয়ে যায়, তাহলে বাকি সবটা আমি সামলে নিবো। এতে আমার কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আমার মেয়ে এতে রাজি না থাকলে….. বুঝছেনই তো কি বলতে চাইছি।”

আব্বুর কথা শেষে ইদ্রিস আংকেল অমায়িক সুরে বললেন,
” জি ভাইজান। আপনার মেয়ে রাজি হলে তবেই আমরা কথা আগাবো। আপনি ওর সাথে কথা বলে দেখুন। ”

ইদ্রিস আংকেলের কথা শেষ হওয়া মাত্রই আপু আমাকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এলো। আমার পিছন পিছন এলো আম্মু ও আভা। আমার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই আমি বিচলিত গলায় আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,
” এসব কি হচ্ছে আম্মু? আদ্রিশের ফ্যামিলি এখানে এলো কি করে? ইয়াসিরদের আসার কথা ছিলো না?”

আম্মু আমার দিকে শীতল চাহনিতে চেয়ে বললো,
” সে বিষয়ে এখন তোকে জানতে হবে না। তুই আগে বল, আদ্রিশকে তুই ভালোবাসিস না কি?”

আম্মুর এহেন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আদ্রিশকে নিয়ে আমার মধ্যকার অনুভূতির কথা আম্মুকে জানানোর অর্থ নতুন করে এক ঝামেলার সম্মুখীন হওয়া। ফলে এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে আমি তেরছা দৃষ্টিতে আপুর দিকে তাকিয়ে কথা ঘুরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলাম। আপুও তৎক্ষনাৎ আমার চোখের ভাষা বুঝে আম্মুকে বললো,
” আহহা আম্মু। এখন যে প্রশ্ন করার কথা সে প্রশ্ন না করে তুমি কোথায় চলে যাচ্ছো?”

আম্মু চট করে গরম চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,
” বেশি কথা বলবি না। আমি ওকে যা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দিতে দে। ”
এই বলে আম্মু আমার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই কি এমন করেছিস যে আদ্রিশ তোকে পছন্দ করে সোজা বাসায় সম্বন্ধ নিয়ে চলে এসেছে?”

আম্মুর প্রশ্নের ধরণে আমি মুহূর্তেই তীব্র প্রতিবাদী হয়ে বললাম,
” আশ্চর্য! আমি কিছুই করিনি আম্মু। আদ্রিশ আমাকে পছন্দ করে সোজা আমার বাসায় বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে এসেছে। এতে আমার কি দোষ আছে! উনিই আগ বাড়িয়ে আমার সাথে কথা বলতেন৷ তুমি আমাকে এখন এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করো না তো আম্মু। দরকার হলে ঐ ছেলেকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করো।”

আমার কথা শেষ হওয়া মাত্র আপু পরিবেশ শান্ত করতে আম্মুকে বললো,
” আম্মু, তুমি এসব বাদ দাও তো। যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। তুমি কি চাও না, তোমার মেয়ে সুখে থাকুক? যেখানে আদ্রিশ ওকে ভালোবাসে সেখানে এতো প্রশ্ন করার কোনো মানে হয় না। ”

আম্মু হয়তো এবার শান্ত হলো। কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়া বিছানায় বসে প্রলম্বিত কয়েকটা শ্বাস ফেলে বসে রইলো। হঠাৎ আমাদের সকলের মধ্যে থেকে আভা মিনমিনে স্বরে বলে উঠলো,
” আদ্রিশ ভাইয়া কিন্তু ভালোই হ্যান্ডসাম আম্মু। ছোট আপু এ বিয়েতে রাজি হলে, তুমি দুই দুইটা হ্যান্ডসাম জামাইয়ের শাশুড়ী হয়ে যাবে আম্মু। তখন তো তোমার ভাবই থাকবে আলাদা। শুধু একবার চিন্তা করো এটা!”
আভার কথা শেষ হতে না হতেই আমরা তিনজনে ওর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। আমাদের এহেন চাহনি দেখে মুহূর্তেই ও মিইয়ে গেলো। মুখ গোঁজ করে বললো,
” কারোর ভালো ভাবতে নেই আসলে। আমি বরং চুপচাপই বসে থাকি।”

এই বলে ও চুপচাপ বসে রইলো। কিছুক্ষণ বাদে আম্মু উঠে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আম্মুর মুখভঙ্গি পূর্বের তুলনায় শান্ত মনে হচ্ছে। আম্মু কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে নরম সুরে বললো,
” তোর মনে কি চলছে খুলে বল আমাকে। তুই যা বলবি সেটাই হবে।”

আমি তৎক্ষনাৎ আম্মুর কথার প্রত্যুত্তর দিলাম না। নিমিষের জন্য আম্মুর দিকে চেয়ে বললাম,
” আদ্রিশরা অনেক হাই ক্লাস বিলং করে আম্মু। সেখানে আমরা মিডেল ক্লাস। এমন তফাতে বিয়ে হলে আমার উপর কোনো কষ্ট যাক না যাক, তোমাদের উপর দিয়ে অনেক কষ্ট যাবে। ”

আম্মু স্মিত হেসে আমার মাথায় আলতো চাপড় দিয়ে বললো,
” এসব নিয়ে তোকে কে চিন্তা করতে বলেছে? সংসার করবি তুই। সিদ্ধান্ত হবে তোর। সেক্ষেত্রে তোর সুখটাই তো আগে দেখতে হবে আমাদের তাই না? আর রইলো আমাদের কথা। আমরা এসব ঠিকই সামলে নিবো। এ ব্যাপারে তোর আব্বুর সাথেও কথা বলবো আমি। ”

” কিন্তু আম্মু…..”

” কোনো কিন্তু না। তুই শুধু তোর সিদ্ধান্তটা শুনিয়ে দে। ব্যস, আর একটা কথাও শুনতে চাই না আমি।”

আমি মৌনতা পালন করে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলাম। আম্মু আমায় দেখে বললো,
” ব্যস, বুঝে গিয়েছি। আমি তাহলে বাইরে গিয়ে তোর আব্বুকে বলে আসি।”

এই বলে আম্মু আমার মাথায় আলতো বুলিয়ে চলে গেলো। আম্মু যেতেই আপু আর আভা আমাকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো।

—–

জুম্মার নামাজের আগেই ইমাদ ভাইয়া আমাদের বাসায় চলে এলেন। আজই ট্রেনিং থেকে ফিরেছেন উনি এবং আমার ও আদ্রিশের কথা শুনে উনি বাড়িতে না গিয়ে সোজা আমাদের বাসায় চলে এসেছেন। ইমাদ ভাইয়া আসার পর সকলে একত্রে নামাজ পড়ে খাওয়াদাওয়া করে বিয়ের ব্যাপার সম্পূর্ণ পাকাপোক্ত কথা বলার জন্য বসলেন। ওদিকে আম্মু আমার নানু, দাদি, খালামনি, মামি, চাচি, ফুপিকে এক এক করে আমার বিয়ের ব্যাপারে জানালো। সকলের মতামত নিলো। প্রত্যেকেই জানতো আমাকে আজ দেখতে আসবে। কিন্তু এতো কিছু হয়ে যাবে এটা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। অবশ্য এই পাত্র অদলবদল হওয়ার ব্যাপারটা আম্মু শুধুমাত্র নানুবাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলো। কারণ এ ঘটনা দাদুবাড়িতে যাওয়া মানে কোনো না কোনোভাবে আনোয়ারা দাদির কানে যাওয়া। আর উনার কানে এ সংবাদ যাওয়ার অর্থ নিজেদের জীবনে সাদরে ঘূর্ণিঝড়কে আমন্ত্রণ জানানো।
ওদিকে আব্বু ভিডিওকলে দাদাভাই, চাচু,মামাদের সাথে সলাপরামর্শ করছে। এ সবটাই সে করছে নিজের রুমে বসে। আর ওদিকে বাইরে ইমাদ ভাইয়া আদ্রিশদের পরিবারকে সামলাচ্ছেন। সকলের মাঝেই বসেছে গল্পের বিশাল প্রতিযোগীতা। মোট কথা, আমাদের বাসায় কেউ এখন আসলে নির্ঘাত বলে বসবে, এখানে ছোটখাটো একটা মাছের হাঁট বসেছে।

—–

সন্ধ্যার পর পরই আদ্রিশ ও ইমাদ ভাইয়া আমার জন্য আংটি কিনতে চলে গিয়েছিলেন। কারণ সারাদিনের সলাপরামর্শ শেষে সকলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, আজ আমাকে আংটি পরিয়ে রেখে চলে যাবে। এক সপ্তাহ বাদে অর্থাৎ আগামী শুক্রবারে আমাদের বিয়ে পড়ানো হবে৷ তবে এক মাস বাদে রিসেপশন করে আমাকে উঠিয়ে নেওয়া হবে। এর মাঝে বিয়েতে আমার ও আদ্রিশের শুধুমাত্র কাছের আত্মীয়স্বজনকে ডাকা হবে। অর্থাৎ আমাদের দুজনের নানুবাড়ি ও দাদুবাড়ির সকলে আসবে। এ বাদে বাইরের কাউকে বিয়েতে ডাকা হবে না। এ সিদ্ধান্তটা অবশ্য ইদ্রিস আংকেল আব্বুর কথা মাথায় রেখেই নিয়েছেন। কারণ তিনি আব্বুর উপর অতিরিক্ত প্রেশার দিতে চাননি।

সন্ধ্যার টুকটাক নাস্তা সেরে ইমাদ ভাইয়া ও আপুর জোরাজোরিতে স্বয়ং আদ্রিশ আমায় আংটি পরিয়ে দিলেন। উনাকে দিয়ে এভাবে আংটি পরানো নিয়ে আব্বু আম্মু প্রথমে বেঁকে বসলেও পরে ঠিকই রাজি হয়ে যায়।
এই আংটি পরানোর পর পরই আমার চারপাশটা কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে উঠলো। মনে হলো, সে মুহূর্তেই আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে দূরে চলে গেলাম৷ অনেক দূরে….
আংটি পরানোর মুহূর্তে আমার দু চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগলো। আচমকা এভাবে আমার চোখের পানি দেখে সকলেই অবাক হয়ে গেলো। ফলে সকলেই নিজেদের মতো স্বান্তনা দিতে লাগলো। কিন্তু কারোর কোনোরূপ স্বান্তনামূলক বাণী আমার কান অব্দিও পৌঁছালো না। ভাব এমন হলো যে, আমার কান্না করার কথা আমি কান্না করবোই। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না।

—-

আগামীকাল আইটেম থাকায় রাতের খাবারের পরপরই পড়তে বসে গেলাম। কিন্তু বই সামনে নিয়েও কিছুতেই আমার পড়ায় মন বসলো না। মন বসবেই বা কি করে। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় এক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি আজ আমি এবং সবকিছু একই দিনে হয়েছে। ঘটনাগুলো এতোটাই দ্রুত ঘটেছে যে, শ্বাস নেওয়ার সময় পাওয়া যায়নি আজ। কি ব্যস্ততা ছিলো আজ সারাদিন!
এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার ফোনে আদ্রিশের কল এলো। অকস্মাৎ ফোন বেজে উঠায় আমি চমকে উঠলাম। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে কল রিসিভ করেই ওপাশে আদ্রিশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম,
” এই ছিলো আপনার কাজ! কি করে করলেন এসব? কখন করলেন? সবটা জানতে চাই আমি। একটা কথাও লুকাবেন না আমার থেকে।”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ছোট্ট করে দম ফেললাম আমি। ওপর পাশে আদ্রিশের জবাব শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে বসে রইলাম। আদ্রিশ আমার প্রশ্নগুলোর জবাব তো দিলেনই না, উল্টো সশব্দে হাসতে লাগলেন। উনার হাসির শব্দে আমি পাল্টা প্রতিক্রিয়া করে বললাম,
” আমার অবস্থা দেখে হাসা হচ্ছে তাই না? এতো হাসি আসলো কোথা থেকে? আমাকে সারারাত, সারাদিন চিন্তা আর প্রেশারে রেখে আপনি আমার মজা নিচ্ছেন! ”

আদ্রিশ কোনোমতে হাসির দমেক থামিয়ে বললেন,
” তুমি এতো ঝগড়া কিভাবে করতে পারো মিশমিশ? তোমার এ ঝগড়াপূর্ণ কথাবার্তা শুনেই তো আমি আরেকদফা ভেসে গেলাম।”

আমি তৎক্ষনাৎ কোনো রূপ চিন্তাভাবনা না করে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
” কিসে ভেসে গেলেন?”

অতঃপর এ প্রশ্ন করার পর নিজেই নিজের কপালে চাপড় মারলাম। উপলব্ধি করলাম, বোকার মতো আদ্রিশকে এ প্রশ্নটি করে বসেছি আমি৷ এখন এ থেকে পালাবো কি করে? পালানোর কোনো পথ আছে কি? আদ্রিশ তো নির্ঘাত আমাকে এর জবাব দিবেন।
আমার সন্দেহকে সত্য প্রমাণিত করেই আদ্রিশ প্রগাঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” তোমার এ প্রশ্নের জবাব শুনতে পাবে তো মিশমিশ? সাহস আছে?”

ব্যস, আমার অবস্থা পূর্বের তুলনায় আরো খারাপ করতে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে! আমি নির্বাক বসে রইলাম। কারণ এ প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বলার সাধ্য তো আমার নেই-ই। উল্টো না বলার মতো শব্দই আমি ভুলে বসে রইলাম। ফলস্বরূপ চুপচাপ বসে রইলাম। ওপাশে আদ্রিশ পূর্বের ন্যায় প্রগাঢ় কণ্ঠে বললেন,
” কি হলো মিশমিশ? শুনবে না আমাকে কি ভাসিয়ে নিয়ে গেলো? শুনবে না কোন জোয়ারে ভেসে গিয়ে আমি সকল কূলকিনারা হারিয়ে ফেলেছি?”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here