ধৈর্য,পর্ব-১,২,৩

0
2149

ধৈর্য,পর্ব-১,২,৩
Tahmi_Chowdhury
১ম পর্ব
:
-কি হলো অনিতা এখানে এই অসময়ে বসে আছিস যে……
পেছনে ফিরে মায়ের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো অনিতা,,
-এমনিতেই মা! ভালো লাগছে না!
-কেন মা! আমাকে বল কি হয়েছে?
-মা তুমি তো জানোই আমি এইভাবে বাড়ি আসি না,,কিন্তু তোমার জামাইবাবু……
-থাক মা বলতে হবে না!
কি করবি মেনে নে!
মেয়েদের এইসব অভিযোগ খাটে না রে মা!
ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালো অনিতা……
শ্রাবণী রাণী মেয়ের পাশে বসতে বসতে বললেন,,
-তা এবারের ঝগড়াটা কি জন্য হয়েছে একটু বল দেখি!
পুকুরের অথৈজলের দিকে তাকিয়ে দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অনি…
এরই মাঝে মা মা ডাকতে ডাকতে ছোট্ট প্রিয়ন্তি এলো পুকুরপাড়ে……!
অনিতা মেয়েকে কোলে তুলে নিতে নিতে বললো মাকে,,,
-দাদাভাইকে বলে দিও মা!
আজ চলে যাব…ও যদি দিয়ে আসতে পারে তাহলে ভালো।
শ্রাবণী রাণী মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল নয়নে বললো,,
-জামাইবাবু নিতে আসবে না!
মায়ের দিকে তাকিয়ে ফের ম্লান হেসে বললো অনিতা,,
-তোমার জামাইবাবু কখনো নিতে এসেছে মা!
শ্রাবণী রাণী চুপ হয়ে গেলেন!
বড় শখ করে বিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েকে!
কিন্তু নিয়তি……
মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে দেখেও তার যে কিছুই করার নাই!
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুকুরপাড়ের সিঁড়ি থেকে উঠে গেলেন শ্রাবণী রাণী!
.
স্বামীর বাড়িতে এসে অনিতার আবার দুঃখের দিন শুরু হয়ে গেলো!
এইমাত্র বিজয়বাবু অনিতার স্বামী অনিতাকে মেরে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে!
অনিতার চোখ ফেটে কান্না আসছে,,কিন্তু তা গাল বেয়ে উপচে পড়ছে না!
হাতের সাদা শাখাগুলো খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো অনিতা!
ছোট্ট প্রিয়ন্তি মায়ের কোলে এসে কাছুমাছু হয়ে বসলো!
মায়ের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে অনিতার চোখ মুছতে মুছতে বললো,,
-আল্লাহ তব থিক করে দিবেন আম্মু,,,আল্লাহর কাতে আব্বুর নামে আমি বিতার দিবো……
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো ছোট্ট প্রিয়ন্তি তার আগেই মুখ চেপে ধরলো অনিতা!
মেয়ের দিকে বিস্ময়কর চোখে তাকালো অনিতা!
মেয়ে বলছে কি?
এসব কে শিখালো মেয়েকে?
ভারী চিন্তায় পড়ে গেলো প্রিয়ন্তি!
এদিকে অনিতা মুখ চেপে ধরায় ছোট্ট প্রিয়ন্তি ছটফট করছিলো,,,
অনিতা তা দেখে মেয়ের মুখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে বললো প্রিয়ন্তিকে……
-মা! তোমাকে এসব কে বলেছে!
তোমাকে আল্লাহ ডাক কে শিখেয়েছে মা!
প্রিয়ন্তি মায়ের কথায় তাকিয়ে পিটপিট করে হেসে বলে,,
-আম্মু আল্লাহ দাক আমি তুম্মুর কাত থেকে থিকেতি!
ও বততে আল্লাহকে বললে আল্লাহ আব্বুকে তাত্তি দিবে!
ফের মেয়েকে কোলে তুলে চারপাশে তাকালো প্রিয়ন্তি!
মেয়ের মুখে এই বুলি শুনলে নির্ঘাত মেয়েকে মেরে ফেলবে ওরা!
কারণ ওরা যে ঘুর ইসলাম বিদ্বেষী!
মেয়ের কপালে চুমো দিয়ে বললো অনিতা,,
-মা রে এইকথা যেন আর দ্বিতীয়বার না বলিস!
মায়ের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে প্রিয়ন্তি……
মেয়েকে নিয়ে ভারী চিন্তায় পড়ে যায় অনিতা……
:
-আমাকে ভাত বেড়ে না দিয়ে তুই এইখানে ওকে বসে খাওয়াচ্ছিস!
অনিতা বিজয়বাবুর দিকে তাকিয়ে ভয়ে আমতাআমতা করতে করতে বলে……
-ওর অনেক ক্ষীদে……
কথা শেষ করতে পারে নি অনিতা তার আগেই বিজয়বাবুর ধৈর্যের বাদ ভেঙ্গে যায়!
অনিতাকে মারা এক পর্যায়ে প্রিয়ন্তির গায়েও লেগে যায়……
প্রিয়ন্তি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে……
বিজয়বাবুর মেয়ের চিৎকারে হুশ ফিরে,,মেয়েকে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নেয়!
প্রিয়ন্তি বাবার কোলে থাকা অবস্থায় বলে,,
-আব্বু তুমি পতা অনেক পতা,,আমি আল্লাহকে বলে দিবো তুমি পতা আমাল আম্মাকে তুধু মালো!
মেয়ের কথায় প্রথমে ধ্যান না দিলেও পরে আৎকে উঠে মেয়ের দিকে তাকান বিজয়বাবু!
প্রিয়ন্তি তখন বাবার দিকে নাক মুখ লাল করে তাকায়!
বিজয়বাবু মেয়ের দিকে একরাশ বিস্মিত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন……।

#চলবে ইনশাআল্লাহ
#অসম্ভব সুন্দর একটি গল্প।

ধৈর্য
Tahmi_Chowdhury
২,৩ পর্ব
.
প্রিয়ন্তির এমন কথা শুনে খুব জোরেই মেয়েকে কোল থেকে ফেলে দিয়েছেন বিজয়বাবু……
প্রিয়ন্তি চিৎকার দিয়ে কোনরকম উঠে মায়ের আচল খামছি দিয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়ায় প্রিয়ন্তি।
মেয়েকে কোলে তুলে বুকের সাথে চেপে ধরে অনিতা!
অনিতার কাছে গিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বলেন বিজয়বাবু মেয়েকে যেন ঘরের বাহিরে খেলতে না পাঠান!
.
আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে প্রিয়ন্তি,,,এতোদিন ঘরের ভেতর বন্ধি হয়ে থেকেছে কেউ তার সাথে খেলতে আসেনি,,
মাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে প্রিয়ন্তি কেন তাকে বাহিরে খেলতে যেতে দেওয়া হয় না!
অনিতা শুধু আঁচলে মুখ চেপে কাঁদে মেয়ের প্রশ্নের উত্তর যে তার কাছে নেই!
অনিতা এখন ৬ বছরের,,
বিজয়বাবু আজ মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে!
অনিতার আরেকটা ছোট্ট ভাই ও হয়েছে সে এখন হাটতে শিখে গেছে!
আধো আধো গলায় প্রিয়ন্তিকে দিদি বলে ডাকতে পারে সে,,,
ভাইয়ের সাথে এখন ঘরেই ভালো সময় কেটে যায় প্রিয়ন্তির!
অনিতার শাশুড়ি মারা গেছেন বছর খানেক হলো!
সেই থেকে বিজয়বাবু কিছুটা নীরব হয়ে গেলেন,,মাকে বিজয়বাবু অনেক ভালোবাসতেন,,,মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে হতেই মন বিষণ্ণ হয়ে উঠে বিজয়বাবুর।
প্রিয়ন্তিকে ভর্তি করিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বিজয়বাবু!
অনিতা তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত……
বিজয়বাবু হাক পাড়েন অনিতাকে,,
-কই গেলা,,এক কাপ চা দিয়ে যাও তো!
ভাতের পাত্র নামিয়ে দ্রুত চুলোয় চায়ের পানি ঢালে অনিতা,,তড়িঘড়ি করে চা টা ও করে নেয় সে!
স্বামীর দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলে অনিতা,,
-আপনার চা!
বিজয়বাবু হাসি মুখে স্ত্রীর হাত থেকে চা টা নেন!
শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বিজয়বাবুর পাশে বসে অনিতা!
এক ধ্যানে তাকিয়ে ভাবে অনিতা মানুষটা কি ছিলো আর কি হলো,,,এখন মনে হচ্ছে সত্যি মানুষটা হিংস্র থেকে মানুষ হয়ে উঠেছে!
অনিতা দুহাত মিলিয়ে প্রার্থনা করে স্বামীর দীর্ঘ জীবনের জন্য!
.
-প্রিয়ন্তি মা পূজো দিয়ে যা তো,,,তুই ই বাকি থেকে গেলি!
প্রিয়ন্তি বিরক্তি নিয়ে মায়ের হাত থেকে পূজোর থালা নিয়ে মূর্তির সামনে দাঁড়ালো।
প্রিয়ন্তির এই কাজটা করতে প্রতিদিন বিরক্ত লাগে,,
নিজের মনে মূর্তির সামনে দাঁড়ালে হাজারো প্রশ্ন জাগে ওর মনে,,
আজ।ও ব্যতিক্রম হয় নি,,
প্রিয়ন্তি আজ ও ভাবছে,,
-আচ্ছা এটা তো আমাদেরই হাতে তৈরি আমরাই তো এই মূর্তি সৃষ্টি করে তাহলে এরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা হয় কি করে,,,
সৃষ্টিকর্তার মানে তো,,”যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন”
এই মূর্তিটা আমাদের কি করে সৃষ্টি করবে আমরাই যদি এর স্রষ্টা।
এরা নিজেই অন্যের দ্বারা সৃষ্ট তারা আবার সৃষ্টিকর্তা?
কিছুই মাথায় আসে না বাপু,
এই বলে মুখ বাঁকালো প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তি এস.এস সি দিয়ে এখন ইন্টারে ভর্তি হয়েছে। রূপ যেন প্রিয়ন্তির উপচে পড়ছে!
তাই প্রিয়ন্তিকে নিয়ে অনিতা একটু বেশিই চিন্তিত থাকেন,,মেয়ের সৌন্দর্যের দিকে কারো খারাপ নজর না জানি পড়ে যায়!
প্রিয়ন্তিকে ডাকতে এসে অনিতা দেখলো প্রিয়ন্তি মূর্তির সামনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে!
অনিতা মেয়েকে ডাক দিলো,,
-কি রে প্রিয়ন্তি পূজো শেষ হয় নি!
মায়ের ডাকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে প্রিয়ন্তি হয়ে গেছে মা হয়ে গেছে,,
আমি এখন কলেজ যাচ্ছি!
অনিতা পেছন থেকে মেয়েকে বারবার খাবারের জন্য ডেকেও পাত্তা পেলেন না।
বাড়ির বাইরে এসে প্রিয়ন্তি বড় একটা নিঃশ্বাস নিলো!
এতোক্ষণ মনে হচ্ছিলো ও জেল খানাতে আছে!
-হেই কিউটি……
পেছনে থেকে কারো গলার স্বর শুনতে পেয়ে সেদিকে তাকায় প্রিয়ন্তি!
একটা ছেলে বাইকের উপর বসে আছে হাসি হাসি মুখ নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে!
প্রিয়ন্তি ছেলেটাকে দেখে মাথায় বড় একটা ঘোমটা একে দিলো,,,এটা প্রিয়ন্তি কেন করলো নিজেও বুঝতে পারছে না!
প্রিয়ন্তি হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলেও যতেষ্ট শালীনভাবে চলাফেরা করে,,
কোথাও বেড়াতে গেলে কোন সাজুগুজো তো করবেই না তার উপর গায়ে সবসময় বড় ওড়না দিয়ে রাখবে!
কলেজের মধ্যে প্রিয়ন্তিকে অনেকবার অনেকে মুসলিম ও আখ্যা দিয়েছিলো।
প্রিয়ন্তিকে কেউ মুসলিম বললে প্রিয়ন্তির কেন জানি অনেক খুশি লাগে!
প্রিয়ন্তির ছেলেটার কথা পাত্তা না দিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরলো,,
ছেলেটা পেছন পেছন একরকম দৌড়েই চলে এলো প্রিয়ন্তির কাছে!
প্রিয়ন্তি এটা দেখে হকচকিয়ে গেলো,,
ছেলেটা প্রিয়ন্তিকে আশ্বাস দিয়ে বললো ঘাবড়ানোর প্রয়োজন নাই,,
ছেলেটা- অনেকদিন ধরে আপনাকে ফলো করছি,,কিন্তু কথা বলার সাহস পাচ্ছি না।
ছেলেটার কথা শুনে প্রিয়ন্তির বিরক্ত লাগলো,,
তাই ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
-আমার সাথে কি দরকারে আপনি কথা বলবেন,,
-আরে আরে রেগে যাচ্ছেন কেন! এমনিতেই আপনাকে ভালো লাগলো!
প্রিয়ন্তির ছেলেটার হাবভাব ঠিক লাগলো না তাই প্রায় দৌড়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো,,
প্রিয়ন্তির আচমকা এমন দৌড় দেখে ছেলেটি হো হো করে হেসে উঠলো!
.


:
সোজা প্রিয়ন্তি কলেজে চলে আসলো,,হাপাতে হাপাতে সারাহর পাশে সিটে বসলো!
সারাহ প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,,
-এতো হাপাচ্ছিস কেন রে প্রিয়ন্তি?
তোকে কি কেউ ধাওয়া করছে না কি…
এই বলে প্রিয়ন্তি নিকাবে ডাকা মুখে নিঃশব্দে হাসলো!
ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো প্রিয়ন্তি,,
তারপর শান্ত হয়ে সারাহর কথার জবাবে বললো,,,
-ধর তেমনি,,একটা ছেলে পিছু নিয়েছিলো যা ভয় পাইছিলাম,,বেটা বলে আমাকে না কি আবার অনেকদিন ধরে ফলো ও করছে,,,উফ অসহ্য……
প্রিয়ন্তি মাথার ওড়নাটা গলায় ঝুলিয়ে নিলো!
তারপর সারাহর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,,
-আমার না মাঝে মাঝে কি ইচ্ছে হয় জানিস মুসলিম হয়ে যাই আর তোদের মতো বোরকা পড়ে এইভাবে নিজেকে ঢেকে রাখি!

প্রিয়ন্তির এই কথা শুনে সারাহর পুরো শরীর অজানা এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো,,,সে প্রিয়ন্তির হাত শক্ত করে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,,
-হয়ে যা না বোন!
প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস নেয়!
সারাহ চুপ হয়ে যায়!
স্যার ও স্টুডেন্টসরা চলে আসায় প্রিয়ন্তি মাথায় আবার ওড়না দিয়ে দেয়।
ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রিয়ন্তি একবার সারাহর দিকে আড়চোখে তাকালো!
মেয়েটাকে কেন যে এতো ভালো লাগে!
চাল চলন,,শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়েটাই প্রিয়ন্তির বেষ্ট ফ্রেন্ড!
সারাহর কানের কাছে গিয়ে প্রিয়ন্তি ফিসফিসিয়ে বলে,,
-বোর লাগছে না তোর স্যারের ক্লাসটা,,আমার তো একদম অসহ্য লাগছে!
চল না বের হই!
সারাহ প্রিয়ন্তিকে চুপ থাকতে ইশারা দিয়ে ক্লাসে মনোযোগী হয়!
প্রিয়ন্তি আর কথা না বাড়িয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে……
!
.
আজ সারাহর বিয়ে,,
প্রিয়ন্তি ভেবে পাচ্ছে মাত্র ইন্টারে পড়ুয়া এতো পিচ্চি একটা মেয়েকে কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে,,,আর সারাহ ই বা কি হাসতে হাসতে বিয়ের পিড়িতে বসে গেছে!
অনিতা বেগম মেয়ের রুমে এলেন,,,
প্রিয়ন্তি তখন শাড়ি পড়তে ব্যস্ত……
অনিতা মেয়েকে দূর থেকে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত,,,
মেয়েটা তার খুব তাড়াতাড়িই বড় হয়ে গেলো!
মেয়েটার গায়ে যেন স্রষ্টা অপার সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন!
অনিতা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে উঠেন!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রিয়ন্তি দেখতে পায় মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর আনমনেই হাসছেন!
শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে মাকে প্রশ্ন করে প্রিয়ন্তি……
-মা হাসছো যে!
-হাসছি আমার মেয়েটা কত্ত বড় হয়ে গেছে!
মায়ের কথায় নিঃশব্দে হাসে প্রিয়ন্তি!
গোলাপি রঙ্গের শাড়ি আর হালকা সাজে প্রিয়ন্তিকে অসাধারণ লাগছিলো!
অনিতা মেয়ের দিকে তাকান মুগ্ধ দৃষ্টিতে!
মেয়েকে অনেকদিন পর সাজতে দেখছেন তিনি!
মেয়েটাকে সাজলে তো সুন্দরই লাগে,,তাহলে মেয়েটা যে কেন সাজে না!
অনিতা-কি রে আজ বান্ধবীর বিয়ে বলে সাজলি,,আর আমি বললে পাত্তা দিস না,,
প্রিয়ন্তি মুচকি হেসে বলে,,
-বেষ্টির বিয়ে মা একটু তো সাজতেই হয়!
শাড়ির আঁচল মাথায় তুলে ব্যাগ হাতে নেয় প্রিয়ন্তি!
অনিতা বিরক্তি নিয়ে বলেন,,
-মাথায় আবার ঘুমটা দিচ্ছিস কেন? হুম!
-ভালো লাগে মা!
অনিতা আর কথা বাড়ান না,,,মেয়ে তার অনেক জেদি এটা তিনি ভালো করেই বুঝেন!
-তাড়াতাড়ি ফিরিস তো মা!
-রাত হবে মা!
-গাড়ি পাঠাবো!
-লাগবে না।
.
বিয়ে বাড়িতে লোকদের শোরগোল!
চারিদিকে এতো এতো মানুষ!
প্রিয়ন্তি অনেকটা আনইজি ফিল করতে লাগলো!
চারিদিকের অনেক ছেলেরা প্রিয়ন্তির দিকে লুলোপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,প্রিয়ন্তি ঘোমটা একটুখানি টেনে দিলো!
-ওইতো সারাহ!
এই বলে প্রিয়ন্তি সারাহর কাছে গেলো!
সারাহ আজ ও বোরকা নিকাব পড়ে আছে,,এসব দেখে প্রিয়ন্তি ভীষণ অবাক হলো!
সারাহকে জিজ্ঞেস করলো প্রিয়ন্তি,,
-তুই আজ ও এসব পড়ে আছিস!
আরে তুই সাজিস নি!
সারাহ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিকাব মুখের উপর ধরলো,,,
অসম্ভব সুন্দরভাবে সেজেছে সারাহ!
প্রিয়ন্তি সারাহর মুখের দিকে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড থ মেরে রইলো!
প্রিয়ন্তি- এতো সুন্দর সাজ,,আর তুই মুখ ঢেকে বসে আছিস!
তাহলে এই সাজার মানেটা কি হলো হু,,,
কোমরে দু হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে সারাহর দিকে তাকিয়ে থাকলো প্রিয়ন্তি!.
প্রিয়ন্তির হাত টেনে ধরে নিজের পাশে বসালো সারাহ!
মুচকি হেসে বললো সে,,
-এটা আমাদের মুসলিম ধর্মের নিয়ম,,আর সকল নারীদের উপর পর্দা ফরজ যেকোনো অবস্থাতেই আল্লাহর হুকুম এটা!
বিয়ের জন্য বেপর্দা হয়ে গেলে এতোদিন পর্দা করার মানেটা কি হলো!
আর হ্যাঁ এই সাজটা দরকারেই সেজেছি,,,
অনেকটা ফিসফিসিয়ে সারাহ বললো,,
-বরকে দেখাবো বলে!
প্রিয়ন্তি সারাহর কথা শুনে হেসে দিলো!
সারাহর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে!
সারাহর গাল টেনে দিয়ে বললো প্রিয়ন্তি,,
-ওলে ওলে আমার বাবুটা,,বরকে দেখাবা……
সারাহ লজ্জামাখা হাসি দিলো!
.
রাতের বেলা সারাহর বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়!
প্রিয়ন্তি সারাহকে রুমে রেখে বাহিরে আসলো,,
তখনি কে যেন পেছন থেকে প্রিয়ন্তির মুখ চেপে ধরলো,,,
প্রিয়ন্তি নিজেকে হাজার ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলোনা!
দৃশ্যটা হঠাৎ করেই আরেকজনের চোখে পড়লে এগিয়ে যেতেই প্রিয়ন্তিকে গাড়িতে তুলে ফেলা হয়!
লোকটা দৌড়ে গাড়ির সামনে যেতেই গাড়ি ছেড়ে দেয়!
প্রিয়ন্তি ছটফট করে ছুটার জন্য,,,,
লোকটা গাড়িটাকে অনুসরণ করে একটি সি এন জি নিয়ে পিছু নেয় গাড়িটার……

#চলবে_ইন শা আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here