ধৈর্য,৭,৮,৯

0
770

ধৈর্য,৭,৮,৯
Tahmi_Chowdhury

:
দুজনে নিরবে হেটে চলছে,,
চারিদিকে শুনশান নিরবতা…
প্রিয়ন্তি আরচোখে বেশ কয়েকবার মেহরাবের দিকে তাকিয়েছি কিন্তু মেহরাবের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই প্রিয়ন্তির দিকে!
আচ্ছা ও কি দেখতে এতোই খারাপ!
হঠাৎ করে শেয়ালের হাক শুনা গেলে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় প্রিয়ন্তি!
ছোট্ট থেকেই এই হাকটা ভীষণ ভয় পায় সে!
মেহরাবের পাঞ্জাবী পেছন দিক থেকে ভয়ে আঁকড়ে ধরলো প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তির হাতের স্পর্শ পেয়ে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে রইলো মেহরাব!
-কি হচ্ছে এসব!
আপনি আমায় ধরে রেখেছেন কেন?
বিরক্তিভরা কন্ঠ মেহরাবের!
ঠোঁট উল্টে কান্নার ভঙ্গিতে বলে প্রিয়ন্তি,,,
-খুব ভয় লাগছে!
দেখুন না শেয়ালগুলা কেমন করে ভয় দেখাচ্ছে……
প্রিয়ন্তির এমন বাচ্চামো কথা শুনে চেহারা থেকে বিরক্তি উবে গিয়ে তাতে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো মেহরাবের!
শেয়ালরা না কি ভয় দেখায়!
মনে মনে হাসলো মেহরাব!
.
ঘরে ঢুকে আয়নার সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো প্রিয়ন্তি!
-আচ্ছা মা আমি কি দেখতে এতোই খারাপ?
অনিতা বিছানা থেকে উঠে এসে প্রিয়ন্তির পাশে দাঁড়ালেন!
মেয়েটা ঘরে আসার পর থেকেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,,মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেলো না কি?
-কি রে মা! সেই কখন থেকে একইভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস!
কি দেখছিস এতো! তুই তো দেখতে একদম খারাপ নস!
পরীর মতো দেখতে আমার মেয়েটা…
-তাহলে……
বলতে গিয়েও থেমে গেলো প্রিয়ন্তি! মুখ ভার করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে!
অনিতা মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,,
-কালকেই আমাদের রওয়ানা দিতে হবে! সব কিছু প্যাক করে নে!
মায়ের দিকে ঘুরে বিস্ময়কর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বললো প্রিয়ন্তি,,
-কি বলছো মা,,আসার তো দুদিন ও হলো না……
-তর বাবার অফিসের ক্ষতি হচ্ছে,,আর তার উপর কালকে জরুরী মিটিং ও আছে উনার! যেতে হবে!
প্রিয়ন্তি আর কথা বাড়ালো না
খুলা জানালার দিকে আকাশের উজ্জ্বল চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে প্রিয়ন্তি!
কান্নার আওয়াজটা কিছুটা চিৎকারের মতো ভেসে আসছে ভাগ্যিস বাড়িতে প্রিয়ন্তি ছাড়া কেউই নেই নইলে এতোক্ষণে হয়তো তুলকালাম বেজে যেত!
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বালিশ থেকে মুখ তুলে সেজদার মতো পড়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো প্রিয়ন্তি……
-ইয়া আল্লাহ! ইয়া রব!
আমি এতোদিন যে অন্ধকারে ডুবে ছিলাম!
ইয়া আল্লাহ আমি আপনার সাথে শরীক করেছি মূর্তিপূজা করে, ইয়া মাবুদ আমার কি ক্ষমা হবে!
তুমি তো বলেছো রব তুমি শিরককারীরে ক্ষমা করো না……
ইয়া আল্লাহ আমি আমার সামনে জাহান্নাম কল্পনা করছি!
আমাকে আপনি মাফ করে দিন ইয়া আল্লাহ আমি সহ্য করতে পারছি না!
.
দুদিন আগে কালেমা পড়ে মুসলিম হয়েছে প্রিয়ন্তি!
কিন্তু এখনো ইসলামের অনেক বিষয়ই তার অজানা!
তাই তো অস্থিরতা ঘিরে রেখেছে থাকে!
সেদিন সারাহর কাছ থেকে কোরআনের বাংলা অনুবাদটা খুব করে চেয়ে প্রিয়ন্তিই নিয়ে এসেছিলো!
সারাহ অবাক হয়েছিলো প্রিয়ন্তির এমন কান্ডে,,সাথে খুশিও হয়েছিলো!
“ফেরা” বইটি পড়ার পর প্রিয়ন্তির মনে উসখুস করতে শুরু করে,,হিন্দু ধর্মটা কি আসলেই সত্য ধর্ম?
এরপর থেকে উঠেপড়ে লেগে যায় প্রিয়ন্তি ইসলাম সম্পর্কে জানতে,,,ইসলামকে যত জানতে শুরু করে ততই যেন মনের শান্তিলাভ করতে থাকে প্রিয়ন্তি!
কোরআনের বাংলা অনুবাদ পড়তে গিয়ে প্রত্যেকটা পৃষ্টা চোখের জলে ভিজে যেতে লাগে,,পাগলের মতো কোরআন বুকে চেপে কিছুক্ষণ পরপর কোরআনের ঘ্রাণ শুঁকছিল প্রিয়ন্তি!
কান্না চোখ বেয়ে উপচে উপচে পড়েছে অনবরত!
একটা আয়াত দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি প্রিয়ন্তি,,চাপা কান্নার আওয়াজ হাউমাউ করে আসতে থাকে……
আয়াতটি বিড়বিড় করে পড়ছিলো আর চোখের পানি ফেলছিলো প্রিয়ন্তি……
“ইয়া বুনাইয়্যা! লা তুশরিক বিল্লাহ…..”
অর্থঃ হে আমার প্রিয় বতস্য! তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে সবচাইতে বড় জুলুম (অত্যাচার)।” সুরা লুক্বমানঃ ১৩।
মনের মধ্যে তীরের মতো গেঁথে রইলো আয়াতটি,,
যতবার আয়াতটির দিকে তাকাচ্ছিলো প্রিয়ন্তি ততবারই মনে হচ্ছিলো তার উদ্দেশ্যেই এই আয়াতটি।
সূরা ইখলাস পুরো অনুবাদ পড়েই সেদিন সারাহকে ফোন করে বলেছিলো প্রিয়ন্তি……
-এই সারাহ! আমি না মুসলিম হতে চাই এখনি এই মুহূর্তে তুই আমায় বলে দে প্লিজ তাড়াতাড়ি বলে দে না কিভাবে মুসলিম হবো,,
কি হলো চুপ কেন আছিস!
প্লিজ বলে দে না,,
প্রিয়ন্তির কন্ঠ স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলো সেদিন সারাহ!
সারাহ সেদিন একজন শায়খের নাম্বার কালেক্ট করে দিয়েছিলো প্রিয়ন্তিকে!
প্রিয়ন্তির কথাবার্তায় সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলো অনেকটা সারাহ!
কারণ বারবার সে এক কথাই বিড়বিড় করছিলো,,
-আমি মুসলিম হতে চাই এখনি হতে চাই,,,,,!
.
মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে দরজা ধাক্কালেন অনিতা!
হুশ এলো প্রিয়ন্তির এতোক্ষণ জোরে জোরে কান্না করছিলো সে,,,মা যে চলে এসেছেন সেই খিয়াল ছিলো না প্রিয়ন্তির!
অনিতা অস্থির হয়ে মেয়েকে ঢেকে যাচ্ছেন আর জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছেন!
প্রিয়ন্তি কোরআন সেল্ফের উপর রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে গেলো,,
চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে টিভির আওয়াজ বাড়িয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দরজা খুললো প্রিয়ন্তি!
অনিতা মেয়েকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,,
-কি হয়েছে রে মা! কাঁদছিস কেন তুই?
বাবু তোকে কি কেউ কিছু বলেছি মা কে বল, মহেশ কিছু বলেছে!
মুচকি হেসে মাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো প্রিয়ন্তি!
মেয়ের দিকে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে রইলেন অনিতা!
মায়ের কোলে মুখ গুঁজে কান্নাকে আটকে রেখে মুখ তুলে মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো প্রিয়ন্তি…
-মা আমি যদি হারিয়ে যাই তুমি কি খুব কষ্ট পাবে!
অনিতা মেয়ের এমন কথার মানে খুঁজে না পেলেও বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ঠিকই!
মেয়েটা যে বড্ড আদুরে তার!
প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলতে বললেন প্রিয়ন্তি..
-এসব বলিস না রে মা!
তুই আমার বুকের মানিক!
তুই হারিয়ে যাবি কেন?
অনিতার কন্ঠস্বর ভারী হয়ে এলো কান্নায়!
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো প্রিয়ন্তির!
-কি করে বলবো মা!
আমি চাইলেও আর তোমাদের সাথে হয়তো থাকতে পারবো না,,কতোদিন লুকিয়ে রাখবো আমি মা,,,যদি জানতে পারো তোমাদের মেয়ে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে গেছে তখন তোমারা নিজে ই আমায় তাড়িয়ে দিবে!
অনেক ভালোবাসি মা তোমাদের!
কিন্তুটা সত্যটা জানার পর নিজেকে আর আটকে রাখতে পারি নি,,নিজেকে রবের তরে সপে দিয়েছি!
আমার রব নিশ্চয়ই আমাকে ধৈর্য দিবেন!
-কি হলো রে মা! এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
-মা একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না!
তোমার কোলেই আজ শোবো!
আজ অনেকদিন পর অনিতা ভয় পাচ্ছেন খুব করে অজানা এই ভয়ের আশংকাটা ঘিরে ধরেছে!
তবে কি তাহলে………
প্রিয়ন্তির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আঁচলে মুখ ঢাকলেন অনিতা!
.


:
পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো প্রিয়ন্তির!
আড়মোড়া ভেঙ্গে বুঝতে পারলো মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়েছিলো সে,,
মায়ের দিকে তাকালো প্রিয়ন্তি!
বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো মুহূর্তেই মায়ের মুখটা অতিরিক্ত শুকনো হয়ে আছে!
হয়তো প্রিয়ন্তিকে নিয়েই ভেবেই এমন অবস্থা হয়েছে!
অনিতা আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন,, প্রিয়ন্তির নড়চড় পেয়েই চোখ খুলে গেলো অনিতার!
মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন তিনি,,
-যা মা স্নানটা করে আয়!
আজ সপ্তমী অনেক আয়োজন পড়ে আছে!
বড় ধরণের পূজো হবে আজ!
আজ বড়বাড়ির মন্দিরে অনেকেই উপস্থিত থাকবে সেখানেই যেতে হবে!
মায়ের কথা শুনে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো প্রিয়ন্তি!
পূজো এই নামটার আর ধারেকাছে যেতে চায় না প্রিয়ন্তি!
কিন্তু এখন স্নান সাড়তেই হবে নইলে মা কি না কি ভেবে বসবে!
অগত্যা উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো প্রিয়ন্তি!
মনটা বিষাদিত হয়ে উঠছে মুহূর্তেই!
কতোদিন এইভাবে আড়াল করে রাখবে নিজেকে……
ভাবতে পারছে না প্রিয়ন্তি।
সন্ধ্যাবেলা সবাই মন্দিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো,,
প্রিয়ন্তি কিছুতেই সেখানে যাবেনা,, না যাওয়ার জন্য ফন্দি আঁটছিল পেয়েও গেলো,,
অসুস্থতার ভান করে বেহুশ হওয়ার অভিনয় করে এইবারের মতো পাড় পেয়ে যায় প্রিয়ন্তি!
কিন্তু পরেরবার কি করে পাড় পাবে……
“আল্লাহ ভরসা”
নিজের চিন্তা আল্লাহর উপর সপে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করলো প্রিয়ন্তি!
.
সারাহর কাছে সেদিন জানতে চেয়েছিল প্রিয়ন্তি ইসলাম সম্পর্কে কি করে আরো ভালো ধারণা পাওয়া যাবে?
সারাহ বলেছিলো একটা ভালো মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যেতে কিন্তু প্রিয়ন্তির পক্ষে এটা কখনোই সম্ভব না!
তাই সারাহ অনলাইনে ইসলামিক কোর্স করার কথা বললো,,
তাই এখন অনলাইনেই ইসলামিক বিষয় নিয়ে কোর্স করছে প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তির মতো অনেক নওমুসলিমরাও এই কোর্স করছে এটা শুনে মনে মনে অনেক সাহস পেলো প্রিয়ন্তি!
সালাত সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা কোরআনে অনেকবার উল্লেখ করেছেন। প্রিয়ন্তি প্রথম না বুঝলেও পরে ইসলামিক কোর্সের লেকচারারকে জিজ্ঞেস করে এই বিষয় বিস্তারির বুঝে নিলো!
সালাত ইসলামের আরাকানগুলো মধ্যে সবচেয়ে বড় ফরজ বিধান,,
সালাত কাফের আর মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্যকারী!
সালাত আরবি শব্দ এর প্রতিশব্দ “নামায”
নামায বেহেস্তের চাবি!
তাই বেহেস্তে যেতে হলে আগে চাবিটা সংগ্রহ না করলে বেহেস্তে যাওয়া কি সম্ভব?
নামাযের ফরজ ওয়াজিব সব জেনে নিলো প্রিয়ন্তি!
ঠিক করলো আজ থেকে নিয়মিত সালাত আদায় করবে সে!
ওযুর নিয়মটাও শিখে নিয়েছে এতোক্ষণে প্রিয়ন্তি!
তাদের বাড়ির পাশেই মসজিদ সেখান থেকে দৈনিক পাঁচবার করে সালাতের জন্য আহ্বান করলেও এর আগে সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো মানসিকতা ছিলো না প্রিয়ন্তির!
কিন্তু আজ এশার আজান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে প্রিয়ন্তি,,,ঠোঁট উল্টে বেশ কিছুক্ষণ কেঁদেছে ও সে!
ওযু করে এসে ঘরের দরজাটা ভালো করে আটকে দিয়ে নামাজে দাঁড়াতেই দেয়ালে একটি মূর্তির ছবিতে চোখ আটকে গেলো প্রিয়ন্তি!
ইয়া আল্লাহ মূর্তিগুলো সরাতেই ভুলে গেছি!
দেয়াল থেকে মূর্তির ছবি নামিয়ে নামাজে দাঁড়ালো প্রিয়ন্তি!
রবের তরে সিজদা দিতে গিয়ে বুক ফেটে কান্না আসছিলো প্রিয়ন্তির!
এতো ভালো লাগছিলো কেন?
সিজদা থেকে উঠতেই ইচ্ছে হচ্ছিলো না!
আল্লাহ তোমার তরে এতো শান্তি!
এতোদিন কেন এই মরিচিকায় পড়ে ছিলাম ইয়া আল্লাহ!
কতোটাকাল তোমার অবাধ্যতায় কাটিয়ে দিলাম!
চোখের জল যেন প্রিয়ন্তির বাধ মানে না……

-আর কতোদিন এইভাবে দেবদাশের মতো ঘুরে বেড়াবি,,বিয়ে টিয়ে করবি না না কি?
কেন বুঝিস না নিয়ামাহকে ফিরে পাওয়া সম্ভব না,,ও তোকে ছেড়ে চলে গেছে!
মেহরাব ফাহাদের কলার চেপে ধরে মুহূর্তেই,,,
রাগে চোখ দিয়ে যেন আগুন বেড় হবে,,,,
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো নিয়ামাহকে মেহরাব!
কিন্তু মাত্র ৪ টা মাস মেহরাবের সংসারে ছিলো নিয়ামাহ!
টানাপোড়নের সংসারে যেন নিয়ামাহ নিজেকে মানিয়ে নিতে পাড়ছিল না,,তাইতো ৪ মাসের মাথায় মেহরাবকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে একেবারে ফিরে যায়!
মেহরাব সেদিন নিয়ামার পা পর্যন্ত ধরে ফেলেছিলো কিন্তু তবুও আটকাতে পারেনি নিয়ামাহকে সে!
-আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কি করবি! যেটা সত্যি আমি সেটাই বলছি……
ফাহাদের এমন কথা শুনে প্রচুর রাগ হয়ে যায় মেহরাবের!
হ্যাঁ নিয়ামাহ তাকে ফেলে গিয়েছে তো কি হয়েছে,,
সে তো এখনো নিয়ামাহকে ভালোবাসে,,তাহলে আর বিয়ের দরকারটা কি!
ফাহাদ মেহরাবের থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে মেহরাবের কাদ চাপড়ে দিয়ে বলে,,
-তুই এখনো মরিচিকার পেছনে ছুটছিস রে মেহরাব!
ভুলে যাস না নিয়ামাহ এখন তর জন্য পরনারী……
ফাহাদের এমন কথা শুনে বিস্ময়ে চোখ দুটো কুঠার হয়ে আসে মেহরাবের,,
কি বলছে মেহরাব,,নিয়ামাহ পরনারী,, মেহরাব তো নিয়ামাহকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো!
-হ্যাঁ মেহরাব নিয়ামাহ এখন তর জন্য পরনারী,,কারণ তোদের তালাক হয়ে গেছে!
তাই তোর এটা কখনোই উচিত হবে না নিয়ামাহকে নিয়ে অতিরিক্ত কোন চিন্তা করা বা নিয়ামাহকে ভালোবাসা!
মেহরাবের যেন হুশ ফিরে,,
-হ্যাঁ তাই তো ও আমায় তালাক……
বিড়বিড় করে বলে মেহরাব!
চোখে জলেরা চিকচিক করছে যেন এখনি চোখে জলের বন্যা বইবে,,
এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে নিজেকে সামলে নেয় মেহরাব!
.
৫ দিন পর কলেজের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছে প্রিয়ন্তি!
দুদিন পর এক্সাম,,এখন কলেজ অফ দেওয়া কিছুতেই ঠিক হবে না!
আজ প্রিয়ন্তি মাথায় ওড়নাটা এমনভাবে দিয়েছে যাতে একটা চুল ও দেখা যাচ্ছে না প্রিয়ন্তির!
চুপিচুপি ঘরে থেকে গেটের বাহিরে এসে হাফ ছাড়ে প্রিয়ন্তি!
এইভাবে দেখলে নিশ্চয়ইই অনিতা অনেক প্রশ্ন করতেন প্রিয়ন্তিকে!
আজ সারাহ ও এসেছে কলেজে,,
সারাহর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে দিয়েছে নিজের মুসলিম হওয়ার কথা!
প্রচন্ড খুশি আজ সারাহ!
তাই আজ জোর করেই সারাহ নিজের বাড়িতে প্রিয়ন্তিকে নিয়ে আসলো!
সারাহর পরিবারের সবাই প্রিয়ন্তির বিষয় শুনে ভীষণ খুশি!
প্রিয়ন্তি যেন এখানে এসে আরেকটি পরিবার পায়!
একদম নিজের মেয়ের মতো আচরণ করছিলেন সারাহর মা!
মেহরাব হাতে কিছু কাগজপত্র নিয়ে ঘরে ঢুকলো,,
মেহরাবকে দেখেই প্রিয়ন্তির বুকটা ধ্বক করে উঠলো,,
মুহূর্তেই হার্টবির্টটা ভীষণ রকমের দৌড়াচ্ছে প্রিয়ন্তির!
মেহরাবকে দেখে যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার!
এতোদিন মনে মনে মেহরাবকেই খুজছিল প্রিয়ন্তি।
এইভাবে হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে পেয়ে যাবে সেটা কল্পনাও করে নি প্রিয়ন্তি……
.
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ

ধৈর্য
MTahmi_Chowdhury
৯ম পর্ব
:
প্রিয়ন্তির দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে একবার তাকালো মেহরাব!
প্রিয়ন্তির হঠাৎ করেই লজ্জা লাগতে শুরু করলো,,এটা যে মেহরাবকে দেখার পর থেকেই!
সারাহ উঠে ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
-হাতে এগুলো কি ভাইয়া?
-ওহ সারু,,এইগুলা মাদ্রাসার কাগজপত্র মাকে বলিস একটু সামলে রাখতে,,আজ মাদ্রাসায় জয়েন দিলাম।
-সত্যি ভাইয়া……আলহামদুলিল্লাহ আমি তো মনে করেছিলাম তুমি আর চাকরিবাকরি করবাই না!
মেহরাব আর কথা বাড়ালো না নিজের অজান্তেই প্রিয়ন্তির দিকে আরো একবার চোখ চলে গেলো!
লজ্জামিশ্রীত মুখ করে মাথা নিচু করে বসে আছে প্রিয়ন্তি!
সেদিকে তাকিয়ে কি ভেবে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টালো মেহরাব!
ভাবি আয়শাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো মেহরাব।
এই মেয়েটা হুটহাট করে মেহরাবের সামনে চলে আসে তার উপর ঠিকমতো মাথায় ওড়নাটা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না,,
বুকের উপর নামেমাত্র ওড়না দিয়ে রাখে!
মেহরাব ভাবির এমন অশালীন চলাফেরা নিয়ে ভাই মেহরাজকে অনেকবার বলেছে সাথে পর্দার ও গুরুত্ব বুঝিয়েছে!
কিন্তু ভাইয়ের এক কথা,,এতোসব মেনে কি চলা যায়!
তাদের অফিস করতে হয় দিনরাত ক্লাইন্টদের সাথে বিজনেস নিয়ে ঢিল করতে হয় পর্দার আরো সময় আছে!
মেহরাব ভাইকে শত চেষ্টায় ও বুঝাতে পারে নি যে আয়শার এমন উগ্র চলাফেরায় সে দায়্যুস হচ্ছে আর দায়্যুস ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম……
#দায়্যুস জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।
রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেছেন, দাইয়্যুস জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। দায়্যুস সে ব্যাক্তি, যে তার অধিনস্তদের ( পরিবারের লোকদের) পর্দায় রাখেনা। [ বুখারী ]
তোমরা (নারীরা) নিজ গৃহে অবস্থান করো, আর পূর্বেকার অজ্ঞতার যুগের নারীদের মতো কেশ বিন্যাস করে বাইরে যেও না। [ সূরা আল – আহযাব: ৩৩ ]
যারা বেপর্দায় চলাফেরা করে শুধু তারাই দাইয়্যুস নয়।
যেই মেয়ে পর্দা করেনা, যে স্ত্রী পর্দা করেনা উক্ত মেয়ের বাবা এবং স্ত্রীর স্বামীই দাইয়্যুস।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেনঃ
১. মদ্যপানকারী।
২. যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং
৩. “দাইয়ুস” (যে তার পরিবারের মধ্যে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয়। পরিবারের লোকদের কে পর্দায় থাকার নির্দেশ দেয়না)। [ মুসনাদে আহমাদঃ ৫৮৩৯ ]
পুরুষগণ মহিলাদের পরিচালক। [ আল কোর’আন ]
পুরুষের উপর নারীদের কতৃত্ব দেয়া হয়েছে। নারীদের ভরন পোষনের দায়িত্ব পুরুষদের উপর ন্যস্ত। আর শুধু তাই নয়। পুরুষদের অধিনস্ত নারীদের ( মেয়ে, স্ত্রী, বোন এবং মা ) কে হেদায়েতের পথে আহবান করা পুরুষদের দায়িত্ব। তাদের সাধ্যানুযায়ী অধিনস্ত নারীদের কে ফরজ বিধানের ( নামাজ, রোজা এবং পর্দার) ব্যাপারে হুশিয়ার করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
[ বুখারী : ৮৯৩; মুসলিম: ১৮২৯ ]
হাদিস কোরআন দিয়ে বুঝিয়েও ভাইয়ের কোন ভাবান্তরই দেখতে পেলো ন মেহরাব!
এখন নিজের মনকে বুঝ দিয়ে দিয়েছে মেহরাব,,
কারণ কেউ হাজার বলে কয়েও কাউকে হেদায়েত দিতে পারবে না যদি না আল্লাহ চান!
কারণ আল্লাহ কোরআনে বলেই দিয়েছেন……
“তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন”
– মেহরাব ভাইয়া তুমি আমার একটা কাজ করে দিতা পারবা?
আয়শার কথা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো মেহরাব,,
-জ্বী।
-এই লিস্টে লিখা ফলগুলা একটু এনে দিও,,কাল আমার অফিসের কিছু ক্লাইন্ট আসবে!
আর তোমার ভাই তো জানোই ও অনেক ব্যস্ত তাই……
-জ্বী ঠিক আছে ভাবি!
মেহরাব আর সেখানে এক মুহূর্ত ও দাঁড়ালো না। এই মহিলাটির সামনে থাকলেই অশান্তি অশান্তি লাগে!
সারাহ এগিয়ে গিয়ে আয়শাকে বললো,,
-ভাবি গায়ে ওড়নাটা একটু তো প্যাচিয়ে রাখতে পারো।
এইভাবে ভাইয়ের সামনে না দাঁড়ালে ও পারতা।
দেখেছ ভাই কতোটা অস্বস্তি ফিল করছিলো।
ভাবি ভাই তোমার জন্য গায়রে মাহরাম,,এইভাবে ভাইয়ের সামনে হুটহাট করে আর বেপর্দা হয়ে যাওয়া গুনাহ ভাবি!
পর্দা না করে একে তো ফরজ বিধান লঙ্গন করছো তার উপর ভাইয়ের সামনে এমন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করছ,,,
আয়শা সারাহর কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো__
-তুমি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো।
তোমার থেকে আমরা ভালো জানি,,এসব হাদিস কোরআন খুব ভালো করেই আমাদের আয়ত্তে আছে।
আর শুনো মনের পর্দাই বড় পর্দা,, গায়ে একগাদা কাপড় ঝুলিয়ে রাখলেই যে পর্দা এমন না,,আমরা বাইরে পর্দা না করলেও আমাদের মনে পর্দা ঠিকই আছে।
তাই তো মেহরাবকে নিজের ভাই মনে কি তাই ওকে কখনোই আমার পর মনে হয় নি আর তোমার ভাইয়ের চোখ এতো খারাপ না আর তোমার মতো চিপ মাইন্ডেড না যে ভাবির দিকে কোন খারাপ নজর দিবে!
-দেখো ভাবি এখানে খারাপ ভালো নজর আসছে না,,
আর আমার ভাইকে আমি খুব ভালো করেই জানি।
তুমি ভাইকে নিজের ভাই মনে করো এতে কোন আপত্তি নেই এটা আরো সুন্দর বিষয়।
কিন্তু জানো ভাবি তুমি যতইই নিজের ভাই মনে করো না কেন ভাই তো তোমার মায়ের পেটের ভাই না,,ভাই তোমার জন্য গায়রে মাহরামই,,আর তার সামনে পর্দা করা তোমার জন্য ফরজ।
আর মনের পর্দা যদি সব হয় তাহলে তো মনে মনে খেলেও আমাদের পেট ভরে যাওয়ার কথা!
আয়শা আর কথা বাড়ালো না,, সে ফ্রিজ থেকে হলুদের বাটি নিয়ে রূপচর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
সারাহ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রিয়ন্তির কাছে গিয়ে সোফায় বসলো!
-সারাহ উনি কি তোর ভাবি,,
উনার পোশাকটা একদম ভালো লাগে নি!
কেমন যেন উগ্র……
সারাহ প্রিয়ন্তিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,
-উনার বিষয় এসব আমরা না ই বা সমালোচনা করলাম।
শুধু শুধু আমাদের নেক আমল উনি নিয়ে নিবেন কেন?
প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে সারাহকে প্রশ্ন করলো,,
-বুঝি নি তোর কথার মানে!
-তুই যে ভাবিকে নিয়ে সমালোচনা করছিস,,এটা একধরণের গীবত!
গীবত এমন এক গুনাহ,,,
যে গুনাহ জিনা’র চেয়েও ভয়াবহ !!!
ইসলাম শান্তির ধর্ম। সমাজে শান্তি-শৃংঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ইসলামের দিকনির্দেশনা জোড়ালো। সোহার্দ্য-সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য গীবত বা পরনিন্দা হারাম করা হয়েছে। গীবতের কারণে সমাজে নানা ধরনের অনর্থ, বিবাদ সৃষ্টি হয়।
গীবতের পরিচয়: গীবতের শাব্দিক অর্থ হল, দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।
পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনো ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।’ (মুজামুল ওয়াসিত)
গীবতের সবচেয়ে যথোপযুক্ত সংজ্ঞা দিয়েছেন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিচের হাদিস থেকে বোঝা যায়। সাহাবি আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা কি জান? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ভালো জানেন।
তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে। তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (সহিহ মুসলিম : ৬২৬৫)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ গীবতের ভয়াবহ পরিণাম বুঝাতে ইরশাদ করেন- ‘আর তোমরা একে অপরের গীবত করোনা। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে। নিশ্চয়ই তোমরা এটাকে অপছন্দ করবে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চই আল্লাহ তাআলা সিমাহীন ক্ষমাকারী এবং অত্যন্ত দয়ালু।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত : ১২)
পরনিন্দা ইসলামি শরিয়তে হারাম। মারাত্মক কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ : আয়াত:১)
কেউ গীবত শুনলে তার অনুপস্থিত ভাইয়ের পক্ষ থেকে তা প্রতিরোধ করবে সাধ্যমতো। আর যদি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে তবে তা শ্রবণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ। হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রা. বলেন, ‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখম-ল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাইল আ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (তাফসিরে মাজহারি)
আবু সায়িদ ও জাবের রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’
গীবতের ভয়াবহতা বুঝানোর জন্যেই অনুরূপ এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গীবত করা জিনা থেকেও মারাত্মক।” (সুনানে বায়হাকি)
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন, এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন বড় কোনো অপরাধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না (যা পালন করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ছিল)। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চুগলখোরী করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতার কারণে। (সহিহ বুখারি)
গীবতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই জিহবাকে সর্তক করে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন ভোরে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তখন শরীরের সব অঙ্গ জিহ্বার কাছে আরজ করে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহর নাফরমাণী কাজে পরিচালিত করো না। কেননা, তুমি যদি ঠিক থাক, তবে আমরা সঠিক পথে থাকব। কিন্তু যদি তুমি বাঁকা পথে চলো, তবে আমরাও বাঁকা হয়ে যাবো। (সুনানে তিরমিযী)
যে ব্যক্তি তার জিহবার দায়িত্ব নিবে। অর্থাৎ সঠিকভাবে ব্যবহার করবে, তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (সহিহ বুখারি)
যাদের দোষ বর্ণনা করা যায়
গীবত নিঃসন্দেহে হারাম। তারপরও যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় তা হচ্ছে-
* কোনো অত্যাচারীর অত্যাচারের কাহিনী প্রতিকারের আশায় বর্ণনা করা।
* সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার পিতা ও স্বামীর কাছে অভিযোগ করা।
* ফতোয়া গ্রহণ করার জন্য ঘটনার বিবরণ দেয়া, প্রয়োজন ও উপযোগিতার কারণে কারো দোষ বর্ণনা করা জরুরি।
প্রিয়ন্তি সারাহর কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে,,ইসলাম এতোটা সুন্দর।
কাউকে নিয়ে খারাপ কথা বলাও নিষেধ।
প্রিয়ন্তির জানার আগ্রহটা যেন আরো বেড়ে চললো,,
প্রশ্ন করলো সারাহকে প্রিয়ন্তি,,
-সারাহ আমরা প্রায়ই কারো না কারো এইভাবে সমালোচনা করে থাকি।
কাউকে না কাউকে নিয়ে টিটকারি আর ফ্রেন্ড মহলে তো এসব শুনতেই হয়।
এ থেকে বাঁচার উপায়?
__গীবত থেকে বেঁচে থাকার উপায়
:
গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যাবশ্যক। এ থেকে বাঁচার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। নিচে তা উল্লেখ করা হলো।
১. অন্যের কল্যাণ কামনা করা। কেননা, রাসূল সা. বলেছেন, ‘দীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
২. আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে/বোনকে অগ্রাধিকার দেয়া। মহান আল্লাহ এ গুণের অধিকারীদের প্রশংসা করে বলেছেন-‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’ (সূরা হাশর : আয়াত : ৯)
৩. অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া।
৪. মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।
আর যে আসরে গীবতের আশংকা থাকবে সেই আসরে না বসা।
৫.গীবতকারীরে গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া আর যথাসম্ভব গীবতকারীকে এড়িয়ে চলা।
.
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here