ধৈর্য,১০,১১,১২,১৩

0
583

ধৈর্য,১০,১১,১২,১৩
#Tahmi_Chowdhury
১০
:
সারাহর কথা শেষ হতেই প্রিয়ন্তি বললো,,
-আমার অনেক ভালো লাগছে রে সারাহ!
ইসলাম এতো সুন্দর,,,আল্লাহ এতো সুন্দর বিধান দিয়ে রেখেছেন ইসলামে!
সারাহ আমি আরো জানতে চাই ইসলাম সম্পর্কে,,তুই এখানে কতোদিন আছিস!
-এই কাল চলে যাব! তোর আগ্রহ দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে রে প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তি শয়তান তোকে প্রতি পদে পদে বাধা দিবে,,সে চাইবে তুই যাতে ইসলামে পুরোপুরিভাবে প্রবেশ না করতে পারিস!
শয়তানের সাথে তোকে যুদ্ধ করে আগাতে হবে,,
কারণ আল-কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,,
“শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু”
আর তুই তো হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছিস,,তোর সামনে তোর ফ্যামিলির দুঃখ কষ্ট ও মেলে ধরবে শয়তান,,ভয় হচ্ছে রে প্রিয়ন্তি তুই যদি শয়তানের ধোকায় পড়ে ইসলাম থেকে ছিটকে যাস।
প্রিয়ন্তির চোখ পানিতে টলমল করছে,,,
ফ্যামিলির মানুষদের কথা মনে পড়তেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠলো প্রিয়ন্তির!
সে বুঝতে পারছে তার জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে!
ফ্যামিলির সাথে থাকলে কখনোই যে পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করতে পারবে না।
আবার ফ্যামিলিকে ছাড়াও কি করে থাকবে,,কোথায় থাকবে মাকে ছাড়া মায়ের আদর ছাড়া……
চোখে অন্ধকার দেখছে প্রিয়ন্তি।
অনেকটা সময় নিলো নিজেকে সামলাতে প্রিয়ন্তি,,
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সারাহর হাত মুঠোভরে বললো প্রিয়ন্তি,,
-না সারাহ! ইসলামে প্রবেশ করা পর আমি আমার মনে যে শান্তি পেয়েছি আল্লাহকে সেজদা করা পর মনের যে প্রশান্তি অনুভব করেছি তা আমি আর কিছুতেই পাবো না।
আমি পারবো না আল্লাহর সান্নিধ্য ছাড়া চলতে।
আমার আল্লাহ নিশ্চয়ই আমায় সবকিছু মেনে নিতে “ধৈর্য” দান করবেন!
সারাহ তুই তো কালই শশুড়বাড়ি চলে যাবি তাই আর হয়তো এখানে আসা হবে না,,
তুই কি আমায় এমন কোন বই দিতে পারবি যেটা আমার ঈমান দীপ্ত করবে আর হেদায়েতের পথে চলতে সাহায্য করবে!
-হ্যাঁ ভাইয়ার কাছে ইসলামিক বিষয় নিয়ে অনেক বই রয়েছে,,আমি এনে দিচ্ছি……
সারাহকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-আমিও আসি সারাহ প্লিজ!
মেহরাবকে আরো একপলক দেখার জন্য মনটা আনচান করছিলো প্রিয়ন্তির!
তাই তো মুখ ফসকে বের হয়ে গেলো কথাটি!
সারাহ কি ভেবে বললো,,
-হুম আচ্ছা চল!
মেহরাবের রুম ভেতর থেকে লক করা,,
সারাহ ভাইকে ডাক দিলো,,
-মেহরাব ভাই দরজাটা খুলো!
হাত থেকে বই রেখে উঠে দরজা খুলে দিলো মেহরাব!
সারাহর সাথে প্রিয়ন্তিকে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো মেহরাব!
-ভাইয়া……
-সারাহ এদিকে আয় তো তাড়াতাড়ি মা!
কথাটি বলার আগে মায়ের আওয়াজ শুনে সারাহ বললো,,
-ভাই তুই প্রিয়ন্তিকে কিছু ইসলামিক বই দে,,আমি এক্ষুণি আসছি!
সারাহ তথাস্তু সে স্থান ত্যাগ করলো!
মেহরাব ভ্রু কুচকালো সারাহর শেষ কথাটি শুনে।
সে যতটুকু জানে এই মেয়েটা হিন্দু,,তাহলে ইসলামিক বই……
প্রিয়ন্তি বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো!
সামনে তাকালো প্রিয়ন্তি,,মেহরাব রুমের ভেতর চলে গিয়েছে সারাহ যেতেই।
প্রিয়ন্তি রুমের বাহির থেকে উকি দিতেই দেখলো মেহরাব সেল্ফে বই ঘাটাঘাটি করছে!
মেহরাব আওয়াজ দিয়ে বললো,,
-আপনি দেখে নিয়ে যান কোনটা নিবেন!
দু হাত মুচড়ে আস্তে আস্তে মেহরাবের রুমে প্রবেশ করলো প্রিয়ন্তি!
হার্টটা পরিমাণের চেয়ে বেশি দৌড়াচ্ছে প্রিয়ন্তির!
মেহরাবকে দেখলেই এমনটা হচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তিকে প্রবেশ করতে দেখে মেহরাব বেলকোণীতে চলে গেলো।
সারাহর ভাই যে মেহরাব প্রিয়ন্তি এটা আগে জানতো না,,জানলে হয়তো সারাহ থাকাকালীন প্রতিদিন এখানে চলে আসতো!
এতো এতো বইয়ের মাঝে কোনটা নিবে সারাহ ভেবে পাচ্ছে না,,
উল্টে পালটে বইগুলা শুধু দেখেই যাচ্ছে!
মেহরাবকে যে কিছু বলবে সেটাও পারছে না অদ্ভুত এক জড়তা এসে ঘরে রেখেছে!
আড়চোখে একবার মেহরাবের দিকে তাকালো প্রিয়ন্তি,,
মেহরাব বেলকোণিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে!
ইতস্ততভাব নিয়ে মেহরাবকে ডাক দিলো প্রিয়ন্তি,,
-একটু এদিকে শুনবেন!
মেহরাব প্রিয়ন্তির থেকে দূরত্বে দাঁড়িয়ে বললো,,
-বলুন!
-আমাকে নওমুসলিমদের কাহিনী আছে এমন বই দিবেন,,সাথে ঈমান দীপ্ত কাহিনী!
মেহরাব ভারী অবাক হলো প্রিয়ন্তির কথা শুনে!
ঘন কালো চোখ তার উপর জোড়া ভ্রু হালকা হালকা কুঁচকানো মেহরাবের এমন অভ্যাসটা ভীষণ ভালো লাগে প্রিয়ন্তির!
তার উপর গালে টোল ও পড়ে ছেলেটার!
-আপনি এসব বই খুঁজছেন,,আপনি তো মুসলিম নন।
মেহরাবের মুখ পাণ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে বললো প্রিয়ন্তি__
-হ্যাঁ আমি মুসলিম হয়ে গিয়েছি,,
নিজের অজান্তেই সরাসরি প্রিয়ন্তির মুখ পাণে তাকালো মেহরাব!
সাথে অবাক হওয়ার সপ্তমচূড়া।
প্রিয়ন্তিও চোখ তুলে মেহরাবের দিকে তাকাতেই বড় ধরণের ধাক্কা খেলো!
মুহূর্তের মধ্যে শীতল স্রোত শিড়দাড়া বেয়ে নেমে গেলো।
মেহরাবের চাহনী অশান্ত ছিলো,,,চোখে হাজারো প্রশ্নের ভীর দেখছিলো প্রিয়ন্তি!
মেহরাব এর আগে যতবারই প্রিয়ন্তিকে দেখেছে কখনোই সরাসরি প্রিয়ন্তির মুখের দিকে তাকায় নি,,,,
কিন্তু আজ মেহরাবের এমন চাহনি প্রিয়ন্তির মনে ঝড় তুলে দিচ্ছে!
এমনিতেই মেহরাবকে দেখলেই অস্থিরতা বেড়ে যায় হঠাৎ করে,,আর তো চোখে চোখ পড়ে গিয়েছে!
নিজের দু হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বিড়বিড় করে বললো প্রিয়ন্তি,,,
-এই মানুষটা এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন!
দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আল্লাহ!
প্রিয়ন্তির অস্বস্তি ভাব মেহরাবের চোখ এড়ালো না,,নিজের মনকে ধমকে দিলো মেহরাব!
কি করছিসটা কি মেহরাব,,এইভাবে বারবার দৃষ্টির হেফাজত কেন লঙ্গন করছিস?
দুজন পরপুরুষ ও পরনারী যখন একসাথে নিরিবিলি থাকে তখন এর মধ্যে তৃতীয়জন হয় শয়তান!
আর শয়তানই তখন সৃষ্টি করে জিনার মতো নিকৃষ্ট গুনাহ!
মেহরাব বিষয়টি বুঝতে পেরে সারাহকে আওয়াজ দিলো!
ভাইয়ের আওয়াজ শুনে সারাহ রুমে আসতেই মেহরাব হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো!
প্রিয়ন্তি তখনো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না,,,মেহরাবের মায়া দৃষ্টি যে কারো মন মুহূর্তেই অশান্ত করে তুলতে পারে!
সারাহ এসে প্রিয়ন্তির কাদে হাত রাখতেই প্রিয়ন্তি প্রায় ঝাপিয়ে সারাহকে জড়িয়ে ধরলো!
পুরো শরীর অজানা অনুভূতিতে কাঁপছে!
কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তি স্বাভাবিক হলে সে নিজেই সারাহকে ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়!
-পানি খাবো সারাহ!
ভাইয়ের আচমকা এইভাবে ঘর ত্যাগ করা আর প্রিয়ন্তির অবস্থা দেখে সারাহ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে টেবিল থেকে পানি এনে দিতে দিতে বললো,,
-আমার একদম ঠিক হয়নি এইভাবে ভাইয়ের রুমে তোকে একা ফেলে যাওয়া।
-না রে তেমন সমস্যা হয় নাই,,আমি একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম,,বই কোনটা নিবো বুঝতে পারছিলাম না।
-ইয়ে মানে প্রিয়ন্তি আমি তো খেয়ালই করি নি,,তুই তো বয়লার মুরগির মতোই সুন্দরা…
-কি তুই আমায় বয়লার মুরগির সাথে তুলনা করেছিস।
-না না প্রিয়ন্তি তুই আমায় ভুল বুঝছিস,,আমি তোর সৌন্দর্যের উদাহরণ দিলাম মাত্র!
-তাই বলে তুই আমায়……
কান্নার ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টালো প্রিয়ন্তি!
-আরে আরে আমি কি বলছিলাম শুন না,,তুই যেহেতু মুসলিম হয়েছিস তাই এখন থেকে তো তকে এইভাবে চলাফেরা করলে হবে না তার উপর তুই ভীষণ সুন্দর পর্দা সব মুসলিম নারীদের উপর ফরজ তাই……
-তাই এখন থেকে বোরকা পড়বো তাই বুঝাতে চাইছিস তাই তো?
আমার ফ্যামিলি এখনো জানে না সারাহ আমার মুসলিম হওয়ার বিষয়ে এখন যদি আমি বোরকা পড়ে চলাফেরা করি তাহলে তো বুঝতে পারছিস!
আমি এইরকম বড় ওড়না দিয়ে গা ঢেকে মাথায় কাপড় দিয়ে চললে হবে না?
অনেক মুসলিম মেয়েকেই তো দেখি ওরা মাথায় কাপড় পর্যন্তও দেয় না দিলেও অনেককে দেখি অর্ধেক……
-প্রিয়ন্তি মানুষ কি করলো না করলো না দেখলে তুই তোর আখিরাত হারাবি।
তুই তোর হিসাব দিবি আল্লাহর কাছে,,
আর যারা পর্দার মতো ফরজ বিধান লঙ্গন করছে তাদের ও আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে,,,প্রতিটা জিনিসের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে হাশরের দিন!
এনিওয়ে প্রিয়ন্তি তোকে আমি কয়েকটা বই দিচ্ছি তোর এখনো অনেক কিছুই অজানা!
দোয়া করবো,,”আল্লাহ যেন তোকে হেদায়েতের পথে অটল রাখেন”

.

১১
:
বাড়িতে এসে সবার আড়ালে বইগুলো লুকিয়ে রাখলো প্রিয়ন্তি!
অনিতা মেয়ের ঘরে উকি দিলেন,,,
বেলকোণীতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো প্রিয়ন্তি!
পেছন থেকে মেয়ের কাদে হাত রাখলেন অনিতা!
চোখের টলমল পানি নিয়ে তাকালো মায়ের দিকে প্রিয়ন্তি!
মেয়ের চোখে পানি দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো অনিতার!
প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন অনিতা,,,
-মা কি হয়েছে তোর, বেশ কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছি তুই কেমন জানি হয়ে গেছিস,,সবসময় একা একা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকিস!
আর আগে তো তুই রাতে কখনো দরজা লাগিয়ে ঘুমাতি না ভয় লাগতো বলে।
হঠাৎ করেই তোর কি হলো রে মা,,তুই এখন দরজা লাগিয়ে ঘুমোতেও ভয় পাস না!
মায়ের কাছেও আসিস না,,
পূজো তো আর একদমই ছেড়ে দিয়েছিস!
জানিস তোর বাপ ভাই এ নিয়ে কতো কথা শুনিয়েছে,,
যে মহেশ আমার আঁচল ছাড়তো না সেই মহেশ আজ আমার মুখের উপর কথা বলে তোকে ধমকায়,,আর তোর বাবা মানুষটা তো অনেকটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু কয়েকদিন ধরে উনার ও মেজাজ চড়া।
আর আমি ওদের দু চোখের বিষ,,কিছু না কিছু ধমকাবেই দুজন দেখলেই।
কাল রাতে তুই পূজোতে যাস না তা নিয়ে তোর বাবার সাথে দফারফা ঝগড়া হয়ে গিয়েছে!
তোকে পূজোর কথা বললেই কেমন হেয়ালিপনা করিস,,
বলবি মা আমায় কি হয়েছে তোর?
অনিতা একদমে কথাগুলো বলে থামলেন!
উনার ও যে কান্না পাচ্ছে ভীষণ।
প্রিয়ন্তি মায়ের কোমর পেঁচিয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কান্না করলো এতোক্ষণ।
মেয়েকে কি বলে শান্তনা দিবেন অনিতা ভেবে পান না। মেয়ের মনের অবস্থাটাও যে আন্দাজ করতে পারছেন না তিনি!
.
আজ দূর্গাপূজো,,
প্রিয়ন্তি সকাল থেকে হাসফাস করছে,,
সে কিছুতেই পূজের মন্ডপে উপস্থিত হবে না,,,
কারণ কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তার সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া অন্য সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন।” (সুরা নিসা: ৪৮)
হজরত উমর (রা) বলেছেন, “তোমরা মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করোনা। কারন সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গজব নাজিল হতে থাকে”। (বায়হাক্বী)
যে স্থানে আল্লাহর গজব নাজিল হয় আমার ধর্মমতে, সেখানে যাই কি করে?
না না আমি যাব না,,
অনিতা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,,
-কি বলছিস এসব হুম……
মায়ের কন্ঠ শুনে প্রিয়ন্তি ভয়ে ঢোক গিললো,,মা কি সব শুনে ফেললেন না কি?
কান থেকে ফোন নামিয়ে মোবাইলটা দুহাতে চেপে ধরলো প্রিয়ন্তি!
ভয়ে হাত পা কাঁপছে প্রিয়ন্তির।
তাহলে কি সব শুনে ফেললেন অনিতা!
ফোনে কথা বলছিলো সারাহর সাথে প্রিয়ন্তি!
অনিতা এসে প্রিয়ন্তির কাদ ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন,,
-তুই কোথায় না যাওয়ার কথা বলছিলি প্রিয়ন্তি বুঝিনি,,,?
বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লো প্রিয়ন্তি। তাহলে মা কিছুই শুনতে পায় নি আলহামদুলিল্লাহ।
জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে আমতাআমতা করে বললো প্রিয়ন্তি,,
-এই কলেজে না যাওয়ার কথা বলছিলাম মা!
-ওহ আচ্ছা তাই বল!
আমিও কি না কি ভেবেছি!
-ক……কি ভেবেছিলে মা?
ঢোক গিললো প্রিয়ন্তি!
-আরে ও কিছু না,,,
এই ড্রেসটা পড়ে নে তাড়াতাড়ি!
মায়ের হাতে থাকা সাদা আর লালা পাড়ের শাড়িটার দিকে তাকালো প্রিয়ন্তি,,,
না এ শাড়ি সে পড়বে কি করে!
এখন তো সে পুরোপুরি পর্দা করে!
ইতস্তভাব করে মায়ের হাত থেকে শাড়িটা নিলো প্রিয়ন্তি!
অনিতা মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,,
-আজ খুব সুন্দর করে সাজিস তো প্রিয়ন্তি!
যেমনটা তুই তোর বান্ধবীর বিয়েতে সেজেছিলি,,,
-হুম সেজেছিলাম বলেই তো সেদিন বেইজ্জত হতে হতে বেঁচে গিয়েছি,,উনি না থাকলে………
মেহরাবের কথা মনে হতেই চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো প্রিয়ন্তির!
ফর্সা গাল দুটো লজ্জায় লাল হতে নিলো……
মেয়ের থুঁতনি ধরে মুখটা উঁচু করে বললেন অনিতা
-আমার মেয়েটাকে লজ্জা পেলে তো ভারী মিষ্টি লাগে!
তা সাজার কথা বলায় কি এতো লজ্জা?
মায়ের এমন কথায় হুশ এলো প্রিয়ন্তির,,,
ইশ! মায়ের চোখটাও যে কি ফাঁকি দেওয়া ভীষণ মুশকিল!
-আচ্ছা আচ্ছা আর লজ্জা পেতে হবেনা,,
শাড়িটা পড়ে সুন্দর করে সেজো,,আর সাথে লাল টিপ ও দিও!
আমি চললাম,,তাড়াতাড়ি রেডি হো……
মুখটা ঘোর কালোয় আসন্ন হলো প্রিয়ন্তির!
শাড়ি তো সে কিছুতেই পড়তে পারবে না,,,
আর টিপ তো মরে গেলেও না,,
কারণ হাদিসে,,
“টিপ পরিহিতা নারী কে পতিতা দের সাথে তুলনা করে”।
আর আমি জেনেশুনে কেন সেই দলের শামিল হবো।
শাড়ি হাতে নিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো প্রিয়ন্তি!
পূজোতে না যাওয়ার জন্য নতুন কোন বুদ্ধি আঁটতে হবে!
থুঁতনিতে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো প্রিয়ন্তি!
.
মেহরাবের ফোনটা টিংটিং করে বেজে উঠলো!
ফোনের স্ক্রিনে সারাহর নামটা দেখে রিসিভ করেই সালাম দিলো মেহরাব!
সারাহ অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো,,
-ভাইয়া তুই আজও প্রথম সালাম দিয়ে দিলি!
একদিন আমায় সুযোগ দিলে কি হয়?
-হুম কারণ সওয়াবটা বেশি পাবো বলেই দিয়ে দেই,,
আর সারাহমণী বনু তুই এখনো আমার সালামের উত্তর দিস নি,,
সালামের উত্তর দেওয়া কিন্তু ওয়াজিব!
সালামের উত্তর দেয় আবশ্যক। আল্লাহপাক বলেন,
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣُﻴِّﻴﺘُﻢ ﺑِﺘَﺤِﻴَّﺔٖ ﻓَﺤَﻴُّﻮﺍْ ﺑِﺄَﺣۡﺴَﻦَ ﻣِﻨۡﻬَﺂ ﺃَﻭۡ ﺭُﺩُّﻭﻫَﺂ
“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে।” (সূরা আন নিসা ৮৬)
-সরি সরি ভাইয়া!
ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
-হুম ভালো আছিস!
আর আহনাফ ভালো আছে?
-হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া সবাই ভালো আছে!
তুমি মা ভাইয়া ভাবি সবাই কেমন আছো?
-হুম আলহামদুলিল্লাহ।
~ভাইয়া একটা কথা বলার জন্য কল করেছিলাম।
-হ্যাঁ বল?
~ইয়ে মা…মানে ভাইয়া…
ক…কি করে ব…বলি……
-কি হয়েছে সারু,,আহনাফ কিছু বলেছে শশুড়বাড়ির লোকজন কিছু বলেছে?
ভাইয়াকে বল কি হয়েছে?
চিন্তিত ভঙ্গিতে ভ্রু কুচকিয়ে সারাহকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে মেহরাব!
-আরে ভাইয়া তেমন কিছুই না!
আমি অন্য একটা কথা বলতে চাইছিলাম?
~দেখ সারু টেনশন কেন দিচ্ছিস! বল না কি হয়েছে?
-হুম ভাইয়া,, ত…তুমি প্রিয়ন্তিকে বিয়ে করে নাও।
প্লিজ প্লিজ ভাইয়া মানা করো না,,মেয়েটা অসম্ভব ভালো ভাইয়া অনেক ভদ্র ও,,এখন তো ও মুসলিম ভাইয়া!
মেয়েটা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছে,,কতোদিন নিজেকে আড়াল করে রাখবে।
ওর পরিবারের লোকজন ওকে এখন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে কারণ ও কোন ধরণের পূজোতে উপস্থিত হচ্ছে না!
আমাদের ওকে সাহায্য করা দরকার ভাইয়া!
-তাই বলে তুই আমাকে ওকে বিয়ে করার কথা বলবি?
ঢোক গিললো সারাহ!
ভাইয়ের কন্ঠটায় রাগিভাব যে চলে এসেছে ফোনের ওপাশ থেকে ভাইয়ের কন্ঠ শুনে ঠিকই ধরলে পারলো সারাহ!
__না মা…মানে ভা…ভাইয়া!
-ভালো থাকিস! রাখছি ফি আমানিল্লাহ!
ফোনটা কুট করে কেটে দিয়ে কপালে ভাজ উঠালো মেহরাব!

অনিতা বিজয় বাবু মহেশ পূজের থালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিয়ন্তির দরজার পাশে!
সেই কখন থেকে ঢেকে যাচ্ছেন প্রিয়ন্তিকে!
কিন্তু,,প্রিয়ন্তির কোন সাড়াশব্দই পাচ্ছেন না কেউ!
দরজার ওপাশে প্রিয়ন্তি সেজদায় কান্নারত অবস্থায় পড়ে আছে!
বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছে,,
“ইয়া আল্লাহ সাহায্য করো,,
ইয়া রব্ব সাহায্য করো”
সিজদারত অবস্থায় অনেকক্ষণ ধরে প্রিয়ন্তির,,
দরজার অপর পাশে মা-বাবার মুখে মেয়েকে নিয়ের চিন্তার বুলি শুনতে পাচ্ছে প্রিয়ন্তি!
দরজার ধাক্কানোর আওয়াজটাও বেড়ে যাচ্ছে,,যেন দরজাটা যেকোনো মুহূর্তেই খুলে যাবে!
মুহূর্তেই ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলো প্রিয়ন্তি……
.
.

#চলবে ইন শা আল্লাহ

ধৈর্য
Tahmi_Chowdhury
১২+১৩
:
চোখ মুখ ভালো করে মুছে দরজা খুলে মুচকি হাসি দিয়ে দাঁড়ালো প্রিয়ন্তি!
অনিতা মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন।
বিজয়বাবু কিছু বলতে যাবেন তার আগেই মহেশ কপাট রাগ দেখিয়ে প্রিয়ন্তিকে বললো,,,
-এতোক্ষণ আমরা দরজায় দাঁড়িয়ে চিল্লানি দিচ্ছিলাম তুই কি শুনতে পাশ নি?
না কানে এয়ারফোন গুজে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফুসুরফাসুর করছিলি?
প্রিয়ন্তি ভ্রু হালকা নাচিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দিলো,,
-ভাই সবাইকে কি তোর মতো ভাবিস না কি?
অনিতা বুঝতে পারলেন এখনি মহেশ প্রিয়ন্তিত উপর ক্ষেপে যাবে তাই তিনি কথা পাল্টালেন,
-হ্যাঁ রে মা! তুই দেখছি এখনো রেডিই হস নি?
শাড়িটা পড়লি না যে!
প্রিয়ন্তি থতমত খেয়ে বললো,,,
-মা আমাকে কি এই ড্রেসে খারাপ দেখাচ্ছে,,?
-না তা না! কিন্তু……
প্রিয়ন্তির বাবা বিজয়বাবু তাড়া লাগালেন,,
-আচ্ছা আমার মা টা যা পড়েছে তাতেই ওকে কম সুন্দর দেখাচ্ছে না।
চলো চলো যাওয়া যাক!
মহেশ প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেড়িয়ে গেলো!
ভাইয়ের যাওয়ার দিকে বিষণ্ণ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো প্রিয়ন্তি!
-হ্যাঁ হ্যাঁ তাই চলো।
প্রিয়ন্তি চল!
বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে প্রিয়ন্তির!
সে কিছুতেই যেতে চায় না পূজোতে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও পা টা চালাচ্ছে প্রিয়ন্তি!
আল্লাহর কাছে বারবার প্রার্থনা করছে সে!
সদর গেটের বাইরে যেতেই থেমে গেলো প্রিয়ন্তি!
“কিছুতেই আমি যাব না!
হ্যাঁ আজ সত্যিটা ওদের বলে দেবো!
জানি! সত্যিটা জানলে হয়তো মা-বাবা আমাকে ত্যাগ করবে,,,
চোখটা জলে ভরে গেলো প্রিয়ন্তির!
চোখটাও ভারী সস্তা সেই সাথে চোখের পানিগুলো ও কেমন সস্তা!
অযথাই ঝড়ে!
আরে পাগল! আল্লাহর জন্য এসব তো কিছুই নয়!
হ্যাঁ আল্লাহর জন্য যা যা ত্যাগ করতে হয় সব করবো আমি!
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে প্রিয়ন্তি মুখ খুললো,,
-মা!
অনিতা মেয়ের ডাক শুনে পেছনে তাকালেন!
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ন্তি!
পা টা ইচ্ছে করেই এখানে থামিয়ে দিয়েছে প্রিয়ন্তি!
যা হয় হবে! কিন্তু কখনোই সে আর শিরককারীদের দলে শামিল হবে না!
~কি হয়েছে রে প্রিউ!
তুই গেইটে দাঁড়িয়ে রইলে যে…চল তাড়াতাড়ি আয়!
অনিতা তাড়া লাগালেন যাবার জন্য!
প্রিয়ন্তি বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,,
-মা-বাবা আমি মু………
এতটুকু বলে থেমে যায় প্রিয়ন্তি!
চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক ফুঁটে উঠে!
দু হাত মেলে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে টুপটাপ করে চোখের জল ফেলতে থাকে প্রিয়ন্তি!
এ যে কৃতজ্ঞতার জল!
এখনি মাটিতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে রবের দরবারে কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো প্রিয়ন্তির!
কিন্তু সবার সামনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না!
.
আজ আর প্রিয়ন্তিদের পূজোতে যাওয়া হয় নি!
কারণ বাড়ি থেকে বের হতেই চারিদিক থেকে হঠাৎ করেই ঝড়-তুফান শুরু হয়ে যায়!
চোখের সামনে অনেক বড় বড় গাছপালা ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে আর পূজোতে যাওয়ার সাহস করেন নি প্রিয়ন্তির বাবা-মা কেউই!
কিন্তু ঘরে সব আয়োজন করেন,,পাশের বাসার অনেক গেস্ট ও আসেন প্রিয়ন্তিদের বাড়িতে!
প্রিয়ন্তি সেখান থেকে সুযোগ বুঝে সরে নিজের ঘরে এসে রবের দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।
“ইয়া আল্লাহ ইয়া রব্ব আপনি আমাকে এই সাহায্য করে আরো কয়েকদিন আমার পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ করে দিলেন।
আপনার দরবারে অসংখ্য শোকরিয়া আল্লাহ!
ইয়া আল্লাহ আমি আপনাকে ডেকেছি আপনি আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
আপনার ওয়াদা সত্য আল্লাহ!
সত্য আপনার কোরআনের প্রতিটা কথা!
কোরআন খুলে আয়াতটা বিড়বিড় করে পড়ে প্রিয়ন্তি__
“তোমরা আমাকে ডাকো,আমি তোমাদের ডাকে সারা দিবো”।
(সূরাঃ মু’মিন ৬০)।
কোরআনকে বুকের সাথে চেপে ধরে ঝরঝর করে কেদে দেয় প্রিয়ন্তি!

দরজার খটখট আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রিয়ন্তির!
কখন যে চোখ লেগে এসেছিলো!
চোখ মুখ ভালো করে মুছে দরজা খুলে দেখে সারাহ ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছে!
হ্যাচকা টানে সারাহকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় প্রিয়ন্তি!
বোরকা নিকাব খুলতে খুলতে সারাহ বলে,,
-একগ্লাস পানি দে রে বইন।
প্রিয়ন্তি পানি এগিয়ে দিলে সারাহ বসে পানির দিকে তাকালো তারপর বিসমিল্লাহ বলে তিন ঢোকে এক নিঃশ্বাসে পানি খাওয়া শেষ করে আলহামদুলিল্লাহ বললো!
প্রিয়ন্তি মুচকি হেসে পানির গ্লাস নিতে নিতে পানি খাওয়ার সুন্নতটি মনে করলো।
-তুই এখন এইভাবে একা বুঝলাম না সারাহ!
সারাহ উৎকন্ঠিত স্বরে প্রিয়ন্তির দু হাত চেপে বললো,,
-প্রিয়ন্তি তুই মেহরাব ভাইয়াকে খুব পছন্দ করিস তাই না?
সারাহর আচমকা এমন প্রশ্নে প্রিয়ন্তি ভীষণ লজ্জা পেলো,,
-আমি আগেই বুঝেছিলাম……
সারাহর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালো প্রিয়ন্তি!
-তুই জানিস প্রিয়ন্তি তুই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিস!
ভাইয়ার একটা ভয়ংকর অতীত রয়েছে সেই অতীত থেকে ভাইয়া এখনো পুরোপুরিভাবে নিজেকে ফেরাতে পারে নি!
প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে সারাহর দিকে তাকালো প্রিয়ন্তি!
সারাহ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
-মেহরাব ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে!
সারাহর এমন কথা শুনে প্রিয়ন্তির দম বন্ধ হওয়ার যোগাড় হলো!
হয়তো মেহরাবকে নিয়ে অতিরিক্ত কিছু চিন্তা করে নিয়েছিলো সে……
-হ্যাঁ ভাইয়ার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু তা ৪ মাসের মাথায় ভেঙ্গে যায়!
নিয়ামাহ ভাবি নিজ ইচ্ছেতে ভাইয়াকে ছেড়ে চলে যায়!
ভাইয়া আর ভাবির বিয়েটা হয়েছিলো ভালোবেসে!
ভাইয়া জানতো বিয়ের আগে রিলেশন হারাম কিন্তু বুঝতে পারে নি শয়তানের ধোকায় পড়ে!
কিন্তু যখন সে বুঝতে পারলো তখন হারামকে হালালে পরিণতি দিলো।
ভাইয়া ভাবিকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসতো হয়তো এখনো মনের এক কোণে নিয়ামাহ ভাবি জায়গা করে আছে!
তাই তো ভাইয়া এখনো বিয়ে করছে না!
আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুই ভাইয়াকে পছন্দ করিস,,কিন্তু তুই তখন হিন্দু ছিলি,,তখন ভাবি নি এসব।
কারণ পছন্দ করলেই ভাইয়ার সাথে তোর মিল হওয়া সম্ভব নয়,,
কারণ __
“কোন কাফেরকে কোন মুসলিম বিয়ে করলে সে বিয়ে অবৈধ হারাম,,সে বিয়ে সঠিক নয়”
কিন্তু যখন জানলাম তুই মুসলিম হয়েছিস তখন আমার তোর আর ভাইয়ার সম্পর্কের কথা মাথায় আসে!
তারপর আমি ভাইয়ার সাথে একদিন এ নিয়ে কথা বলি!
কিন্তু……
-কিন্তু?
সারাহর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে প্রশ্ন করলো প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো সারাহ!
সারাহর চোখ মুখ আশাতীত কিছু শুনতে চাইছে এখনো!
কিন্তু?
~কিন্তু ভাইয়ার পক্ষে সম্ভব না! ভাইয়া দ্বীনের পথে নতুন!
তাই এখনো ভাবিকে মন থেকে একেবারে সরাতে পারছে না,,,এখনো মাঝে মাঝে ভাবির ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করতে দেখি ভাইয়াকে!
আমার ভাইয়ার চোখে আমি সহজে পানি দেখতাম না,,
কিন্তু ভাবি যাওয়ার পর থেকে বারবার দেখি!
ভাইয়া আল্লাহকে ভয় করে ভাবিকে বিয়ে করেছিলো যাতে হারাম সম্পর্কটা না এগোও,,কিন্তু ভালোবাসাটা একপক্ষের হলে সেটা কি টিকিয়ে রাখা যায়?
তাই তো ৪ মাসের মাথায় ভাবি ভাইয়াকে ছেড়ে দেয়!
-কিন্তু কেন?
প্রশ্ন প্রিয়ন্তির!
-কারণ আমাদের সংসারটা ছিলো টানাপোড়নের,,,
ভাইয়া তখন কোন চাকরি করতো না,,সবেমাত্র পড়ালেখা চালাচ্ছে!
আর মেহরাজ ভাইয়া মেহরাব ভাইয়ার বিয়ের পর থেকে ঘরে সব খরচাপাতি দেওয়া বন্ধ করে দেয়!
তাই একটু টানাপোড়নে পড়ে যাই আমরা!
ভাবির হয়তো অভাবের এই দৃশ্যটা সহ্য হয় নি……
-আর বলিস না সারু!
প্রিয়ন্তি কাপাকাপা গলায় বললো সারাহকে।
প্রিয়ন্তির ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো সারাহ!
-কি বলবে আর!
ভাইয়াটাই তো রাজি নয়!
~তুই কি এই কথাগুলাই বলতে এসেছিস?
মাথা নিচু করে উত্তর দিলো সারাহ……
-হুম তুই যদি পরে কষ্ট পাস!
প্রিয়ন্তি তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বললো,,
-কষ্ট?
আমি আমার মা-বাবাকে ত্যাগ করতে হবে!
এর থেকে কি কোন কষ্ট বেশি হতে পারে সারাহ,,?
প্রিয়ন্তির কান্নাভেজা কন্ঠ!
সারাহ কি বলবে ভেবে পায় না!
হয়তো মেয়েটা একটু আশার আলো দেখেছিলো!
তাও হঠাৎ করেই নিভে গেলো……
ইয়া আল্লাহ আমার এই কলিজাকে “ধৈর্য” ধরার তাওফিক দিও!
-তুই বস সারাহ!
আমি তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি!
প্রিয়ন্তি উঠে যেতেইই সারাহ থামিয়ে দিয়ে বললো,
-উনি নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন প্রিয়ন্তি!
আমাকে এখনি যেতে হবে!
আর এই নে দুটো বই,,
“দৃষ্টির হেফাজত”
“প্রত্যাবর্তন”
সারাহ দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো!
বই দুটোর দিকে তাকিয়ে চোখের নোনাজল গুলো ছেড়ে দিলো প্রিয়ন্তি!

কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে প্রিয়ন্তি!
মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে আছে প্রিয়ন্তির!
এখন প্রায়ই মনটা শান্ত থাকে প্রিয়ন্তির!
এই ৩ টি মাসে হাজারো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে প্রিয়ন্তি।
কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে সাহায্য সর্বদাই এসেছে!
এই চলার পথটা প্রিয়ন্তির জন্য বেশ ভয়ানক খুব ভালো করেই জানে!
আজীবন এই সত্যটা মাটিচাপা থাকবে না সেটা খুব ভালো করেই জানে প্রিয়ন্তি!
কতোদিন চলবে এই লুকোচুরি!
ব্যগে বই গুঁজতে গুঁজত ভাবছিলো প্রিয়ন্তি!
অনিতা এসে মেয়ের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালেন,,
মায়ের চাহনি লক্ষ্য করে নিজের দিকে তাকালো প্রিয়ন্তি,,,
-কাপড়চোপড় তো সব পড়া ঠিকই আছে,,এমন অদ্ভুত ভাবে তাহলে কি দেখছো মা!
-প্রিয়ন্তি আমার কাছে না তোর আচরণ এমন অদ্ভুত লাগছে,, যেমনটা আমার চাহনি তোর কাছে অদ্ভুত লেগেছে!
তোকে বাইরে থেকে ঠিকঠাক মনে হলেও ভেতরটা আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না!
তুই তোর মাকে হয়তো খুব বোকা ভেবেছিস তাই তো ভেবেছিস এই লুকোচুরি করে তুই কাটিয়ে দিবি!
কিন্তু আমি যে মা!
আমি যে সব বুঝতে পারি!
আমার সন্তান কি করছে কেমন চলছে তার খবর আমি মা না রাখলে তাহলে আমি কেমন মা হলাম!
-মায়ের এমন কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেতে লাগলো প্রিয়ন্তি!
তাহলে শেষ পর্যন্ত মা সব জেনেই গেলেন!
হয়তো এখন মা আর তাকে গ্রহণ করবে না!
হয়তো আজই মা-মেয়ের সম্পর্কটা ইতি টানতে যাচ্ছে!
এই শীতের মধ্যে ও প্রিয়ন্তির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে!
.
.
১৩
:
প্রিয়ন্তির কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখেই মৃদু হাসলেন অনিতা……
প্রিয়ন্তির হাতের ব্যাগ কাদে ঝুলিয়ে দিতে দিতে বললেন তিনি……
-তাহলে আমি যেটা ভাবছি সেটাই ঠিক!
আচ্ছা ছেলেটা কে বলতো মা!
এখন আবার ন্যাকামো করিস না যে কিসের ছেলে কিসের কি?
এইরকম কিছু না হলে তো তুই একা একা ঘরে থাকতি না, বা রাত্রে ও একা একা ঘুমোতি না,,আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলতি না!
চাঁদ দেখে হাসতি না……
চোখগুলো গুমগুল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো প্রিয়ন্তি!
তাহলে মা অন্যকিছু ভাবছে!
মাকে কি করে বলি রাতে একা ঘুমাই কারণ আমার এশার নামায পড়তে সুবিধা হয়,, কোরআন পড়তে সুবিধা হয়!
আর রইলো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা,, সাত আসমানের উপরে আরশে আজীমে আল্লাহ তা’য়ালা আছেন তাই তো এই বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করি আমার রব্বের কাছে।
আকাশের দিকে মাঝেমাঝে তাকিয়ে থাকা
রাসূল(সাঃ)এর একটি অন্যতম সুন্নাহ

সূত্র-মুসলিম ২৫৩১ তাবারানি হাদিস ৪১৩ বুখারি ৪৪৬৩
আর এই সহজ সুন্নাহটা আমি কেন হাতছাড়া করবো?
~কি রে কি ভাবছিস এতো?
মায়ের ডাকে ভাবনার জগত থেকে চেতনা ফিরে পেলো প্রিয়ন্তি।
-মা তুমি না একটু বেশিই চিন্তা করে নিয়েছো।
এরকম কিছু হলে তুমি ই প্রথম জানতে পারবা,,,
এখন যাচ্ছি কলেজের দেড়ি হচ্ছে!
~আচ্ছা তাই! তাহলে এই আচরণ কি এমনিতেই আমি ভেবে নিবো?
-মা তুমি গোয়েন্দাগিরিতে নাম লিখালে না কেন?
খুব ভালো হতো,,আর আমি এখন বড় হচ্ছি তো এইভাবে রাত্রে দরজা খুলে ঘুমানো আমার একটা পারসোনালিটি আছে না মা!
~উম্ম! আচ্ছা যা এখন,,তাড়াতাড়ি ফিরিস
গেস্ট আসবে বাসায়।
-কারা মা?
~তা এসেই দেখতে পারবা!
এখন কলেজে যাও!
মায়ের গালে টুপ করে কিসসি দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো প্রিয়ন্তি!
বাড়ির গেইট পেড়িয়ে রাস্তায় উঠে বাড়ির দিকে উকি দিয়ে পাশের বাসার খোলা বারান্দার সামনে গিয়ে ব্যাগ থেকে বোরকা নিক্বাব হাত-পা মোজাসহ বেড় করে প্রিয়ন্তি!
চারিদিকে ভালো করে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আল্লাহর দেওয়া ফরজ বিধান পর্দায় আবৃত করে নেয় নিজেকে!
শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে সামনে এগুতে থাকে প্রিয়ন্তি!

কানে এয়ারফোন গুঁজে “Nasheed” শুনছিলো প্রিয়ন্তি!
অনিতা এসে মেয়ের কান থেকে যন্ত্রটি সরিয়ে প্রায় চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন…
-কতোক্ষণ ধরে তোকে ডাকছি প্রিউ?
ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো প্রিয়ন্তি……
-ইয়ে মানে আমি শুনতে পাই নি মা!
~শুনবি কি করে কানে যে একটা গুঁজে বসে আছিস!
তাড়াতাড়ি রেডি হো নিচে গেস্টরা বসে আছে আর তোকে তারা দেখতে চাইছে!
-গ…গেস্ট ক…কারা মা……
-তুই এমন তোতলাচ্ছিস কেন রে?
আর তোর পিসি আর তার ছেলেরা এসেছে!
আর দ্বীপ তোকে দেখতে চাইছে……
-ম…মানে দ…দ্বীপ।
ভেতর ভেতর বুকটা জোড়ে ধ্বক ধ্বক করতে লাগলো প্রিয়ন্তির!
দ্বীপ পিসির বড় ছেলে,,লন্ডন থেকে এসেছে পড়ালেখা শেষ করে!
১বছর আগেও দ্বীপের সাথে ভালোই বনিবনা ছিলো প্রিয়ন্তির!
প্রিয়ন্তি জানতো দ্বীপ থাকে প্রচণ্ড রকমের পছন্দ করে,,
এ নিয়ে পিসির সাথেও দ্বীপ কথা বলে নিয়েছে!
অনিতাকে ও পরে ব্যাপারটা দ্বীপ জানিয়ে দিলে তবেই প্রিয়ন্তি জানতে পারে!
দ্বীপকে নিয়ে তেমন কিছু না ভাবলেও প্রিয়ন্তি তখন হ্যা বা না কিছুই বলে নি!
অনিতার কথা মেয়ে তার ইন্টার শেষ করুক তারপর না হয় এংগেইজমেন্ট করে রাখবে দুজনের!
কিন্তু সেদিন মেহরাবকে দেখে অদ্ভুতভাবে আকর্ষিত হয় প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তি দাড়ি জিনিসটা একদমই পছন্দ করতো না,,কিন্তু সেই মেহরাবকে দাড়িতে দেখেই পছন্দ করেছে তা ও এতোটা……
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর দ্বীপের সাথে পুরোপুরিভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় প্রিয়ন্তি!
আর যখন জানলো গায়রে মাহরামদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ অযথা কথাবলাটাও ঠিক না সেই থেকেই নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে প্রিয়ন্তি!
পরিবারের সাথে কোথাও ঘুরতে বের হয় না এই ভয়ে,,বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে চলে বরাবরই।
.
অনিতা মেয়ের কাদ ঝাঁকিয়ে বললেন,,
-তুই এতো কি ভাবিস রে প্রিউ।
সে কখন থেকে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস!
মায়ের এহেম কথায় কি বলবে খুঁজে পায় না প্রিয়ন্তি!
কিন্তু এই মুহূর্তে দ্বীপের সাথে দেখা হওয়াটা আটকাতে হবে!
কিছুতেই সে দ্বীপের সামনে যাবে না,,না না শুধু দ্বীপ না কোন গায়রে মাহরাম ছেলের সামনে যাবে না!
-মা তুমি যাও! আর পিসিকে রুমে পাঠিয়ে দাও!
আমি আর কারো সাথে দেখা করতে পারবো না।
শান্ত কন্ঠে প্রিয়ন্তি কথাটি বলে বিছানায় বসলো!
অনিতা মেয়ের কথায় ভারী অবাক হলেন,,,
মেয়ে বলছেটা কি?
দ্বীপ এতোদিন পর এসেছে তা ও দুদিন পর দ্বীপের সাথেই……
-তুই বাহিরে গেলে কি সমস্যা শুনি?
দ্বীপের সাথে কি কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া হয়েছে তোর!
ছেলেটা তোকে দেখার জন্যই কবে থেকে আগ্রহ নিয়ে বসে আছে!
-উহু মা! প্লিজ দরজাটা আটকে রেখে চলে যাও।
এতো প্রশ্ন করো না প্লিজ আমার ভালো লাগছে না!
এই বলে কাথামুড়ি দিয়ে বিছানায়া শুয়ে পড়লো প্রিয়ন্তি!
মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়েন অনিতা!

দ্বীপদের সামনে এসে কি বলবেন কথা খুঁজে পাননা অনিতা!
হাত দুটো কিছুক্ষণ মুচড়ে বলে উঠলেন,,
-ইয়ে সুস্মি মেয়েটা না অনেক অসুস্থ! বিছানায় পড়ে রইছে তাই বাহিরে আসতে পারছে না!
-কিইই প্রিয়ন্তি অসুস্থ!
কিছুটা আওয়াজ নিয়ে দ্বীপ বললো,,,
-হ্যা বাবা!
অনিতার কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো দ্বীপ!
-আন্টি ডোন্ট মাইন্ড,,প্লিজ আমি অনিতার রুমে………
অনিতা মুখে জোরপূর্বক হাসি নিয়ে বললেন,,
-হ্যাঁ বাবা যাও!
দ্বীপ হেটে চললো অনিতার ঘরের দিকে!
বিছানা থেকে উঠে ওড়না মাথায় পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো প্রিয়ন্তি!
অনেকক্ষণ কান্না করার ফলে চোখ মুখ ফুলে গেছে অনেকখানি!
আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের মনের সাথে কথা বললো প্রিয়ন্তি,,
-মেহরাবকে নিয়ে যে মোহ সৃষ্টি হয়েছে সেই মোহ হয়তো কাটবার নয়,,নইলে এতো মাসে কেটে যেত!
মানুষটাকে এতোদিন পর আবার কেন মনে পড়লো।
কি আছে এই মানুষটার মাঝে,,কেন আমি নিজেকে এইভাবে হারিয়ে ফেলি নিজেকে কন্ট্রোল করতে কেন কষ্ট হয় এই মানুষটাকে ভাবলে!
হুম এটা হয়তো শয়তানেরই এক ধাঁদা! হয়তো আল্লাহর নিয়ামত থেকে হতাশ করে দিতে পারে!
না আমি ক্লান্ত হতে পারি কিন্তু হতাশ নই!
কারণ আমি আমার দুঃখ কষ্টগুলা তো উনার কাছেই নিবেদন করেছি!
উনিই তো উত্তম পরিকল্পনাকারী!
চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আতকে উঠলো প্রিয়ন্তি!
বিছানায় অপরমুখী হয়ে দ্বীপ বসে আছে!
বুকের ভেতরটা অজানা ভয়ে ধিরিম ধিরিম করছে!
আওয়াজ পেয়েই দ্বীপ ঘুরে তাকাতেই প্রিয়ন্তিকে দেখতে পেলো!
ঝট করে অপরদিকে ঘুরে রইলো প্রিয়ন্তি!
গায়ের ওড়নাটা আরো ভালো করে টেনেটুনে দিচ্ছে!
প্রিয়ন্তির ওড়নায় টানা দেখে মুচকি হাসলো দ্বীপ!
তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো প্রিয়ন্তির দিকে!
প্রিয়ন্তির সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে!
প্রিয়ন্তির ষষ্ট ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে দ্বীপ এদিকটাই আসছে!
চোখ বন্ধ করে আয়াতুল কুরসী পড়তে মনোযোগী হলো প্রিয়ন্তি!
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া এইমুহূর্তে আর কোন পথই খুঁজে পাচ্ছে না সে!
প্রিয়ন্তির একহাত দূরে এসে দ্বীপ দাঁড়ালো!
গলা খাঁকারি দিয়ে প্রশ্ন করলো প্রিয়ন্তিকে……
-তুমি কি সুস্থ! আর ওদিকটায় তাকিয়ে আছো কেন?
না কি আমার উপর কোন কিছু নিয়ে রাগ হয়ে আছো।
আচ্ছা রাগ হয়ে থাকলে সরি বাবা! এই মাফ চাইছি!
আলতো করে দু কানের লতি ধরে ঠোঁট বাকিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো দ্বীপ!
প্রিয়ন্তি বড়সড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,,
-এখান থেকে যাও দ্বীপ।
প্রিয়ন্তির কর্কশ স্বর শুনে হকচকিয়ে গেলো দ্বীপ।
প্রিয়ন্তি তো কখনোই এইভাবে কথা বলেনি দ্বীপের সাথে!
কোমলকন্ঠি প্রিয়ন্তির স্বরটা কেন কর্কশ!
তা ও দ্বীপের সামনে?
মাথায় প্রশ্নগুলো ঝট পাকাতে লাগলো দ্বীপের।
প্রিয়ন্তি ইচ্ছে করেও গলার স্বরকে কর্কশ করে তুলেছে!
কারণ পরপুরুষ এর সাথে কোমলতরভাবে কথা বলা হারাম!
-আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন দ্বীপ!
ধমকের স্বরেই কথাটি বললো প্রিয়ন্তি!
কিন্তু আওয়াজটা ছিলো ক্ষীণ।
দ্বীপ আহতস্বরে বললো,,
-তোমার থেকে এরূপ আচরণ আমি কখনোই আশা করিনি প্রিয়ন্তি!
তোমার জন্যই আমার দেশে আসা! তোমাকে একনজর দেখবো বলেই এতোদূর থেকে ছুটে এসেছি!
গত ১ বছর হলো তুমি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছো!
কারণ আমি জানতে চাই নি!
আর চাইবো ও না।
আমি তোমাকে পছন্দ করি তুমি জানতে এমনকি আজকে আমাদের আসার কারণটাও জানতে!
তারপর ও……
হুম আচ্ছা বাই দা ওয়ে,,যদি তোমার আমাকে দেখার ইচ্ছে না থাকে আমি চলে যাচ্ছি!
কিন্তু একটা কথা বলে যাই প্রিয়ন্তি এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো মেনে নিয়েছি দুদিন পর আমাদের আশীর্বাদ তারপর তুমি আমার,,শত চেষ্টা করেও আমার থেকে মুখ ফেরাতে পারবে না তুমি আমি ফেরাতে দিবো না তোমাকে!
গত ১ বছরে আমাকে যে কষ্ট দিয়েছ তা তিলেতিলে উশুল করে নিবো দেখে নিও।
দ্বীপের গলার স্বর কঠিন,,,প্রিয়ন্তির দম বন্ধ হওয়ার যোগাড়!
দ্বীপ এসব কি বলছে,,সে কি করে দ্বীপকে বিয়ে করবে,,
না দ্বীপ তার জন্য হারাম!
কারণ সে মুসলিম!
ঠাশ করে দরজার আওয়াজে কেঁপে উঠে প্রিয়ন্তি!
দ্বীপ গটগট করে নিচে নেমে আসে!

ঘর থেকে বের হতেই বাড়িতে একটা আমেজ আমেজ দেখতে পায় প্রিয়ন্তি!
কিন্তু কিসের আমেজ বুঝতে পারে যখন বাবা-আর মায়ের কথোপকথন শুনতে পায়!
-হ্যা গো প্রিয়ন্তির মা!
আগামী বুধবার ওরা আশীর্বাদের তারিখ দিলো!
যাক দ্বীপ পাত্র হিসেবে বেশ ভালোই! তার উপর উচ্চশিক্ষিত বাড়ি গাড়ির কিছুরই অভাব নেই মেয়েটা সুখেই থাকবে!
অনিতা চুপ থেকে কি যেন ভাবছেন!
বিজয়বাবু গলার আওয়াজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,,,
-কি বললাম শুনেছো!
-জ্বী হ্যাঁ হ্যাঁ শুনছি!
হকচকিয়ে বললেন অনিতা!
বাবা-মায়ের কথাশুনে প্রিয়ন্তি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো!
বুধবার আর এক সপ্তাহ ও নয়!
ইয়া আল্লাহ! এই বিয়েটা আটকে দাও!
আমি কি করবো আল্লাহ!
প্রিয়ন্তি দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো!
-দ্বীপ তুমি বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেললে!
তোমার জন্য এইবার আমি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো,,,,তোমাকে আমি কখনোই মাফ করবো না দ্বীপ!
ধীর পায়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো প্রিয়ন্তি……
.
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here