ধৈর্য,১৮
Tahmi_Chowdhury
:
-আমি হয়তো ওকেই দেখেছি,,,আরে ও তো না ও হতে পারে,,
এদিক ওদিকে হাটতে হাটতে একথাই ভাবছিলো মেহরাব!
সারাহ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে মেহরাবকে ডাক দেয়!
মেহরাব সারাহর পাশে গিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলে,,
-সারু আমি বোধহয় ওকেই দেখেছি!
ভাইয়ের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টতে শুধু তাকিয়েই রইলো সারাহ!
-আমি ত…তোর প্র……য়ন্তিকে দেখেছি মনে হয়!
থেমে থেমে বললো মেহরাব!
-ভাইয়া ত…তুই ঠিক বলছিস তো,,কোথায় ভাইয়া কোথায় দেখেছিস?
চেহারাতে উজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে রইলো সারাহর!
মেহরাব চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলো,,
-সারাহ আমি নিজে কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি।
অন্য কেউ হয়তো হতে পারে,,কিন্তু আমার কেন জানিনা……
চিন্তায় মাথার রগ দপদপ করছে মেহরাবের!
অনুভূতিটাও ভিন্ন,,,মন বলছে ও যাকে ভাবছে সে ই,,,মস্তিষ্ক বলছে অন্য!
সারাহর দিকে অসহায় চাহনি নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মেহরাব!
.
-তুই আমার বাড়ি থেকে এক্ষণে বেড়িয়ে যাবি!
নাহলে খুন হয়ে যাবি আমার হাতে,,,
হুংকার ছেড়ে বললেন বিজয়বাবু।
স্বামীর হুংকারে শরীর কাপছে অনিতার!
বিজয়বাবু জেনে গিয়েছেন অনিতার ইসলাম গ্রহণের কথা,,,প্রিয়ন্তি যাবার কয়েকদিন পরই তিনিও গ্রামের একজন হুজুরকে ধরেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
এতোদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজের ধর্ম ত্যাগের কথা! কিন্তু আজ প্রকাশ পেয়ে গেলো,,
স্বামীর পাশ থেকে যখন চুপিচুপি রাত ৩ টায় প্রিয়ন্তির ঘরে এসে তাহাজ্জত পড়লেন তখনি ধরা পড়ে যান বিজয়বাবুর হাতে!
বিজয়বাবুর পায়ের কাছে বসে পড়লেন অনিতা!
করুণ গলায় স্বামীকে বললেন,,
-আমাকে বের করে দিবেন না,,,দয়া করুন আমি কোথায় যাব আমার সংসার ছেড়ে?
-এটা তোর সংসার নয়,,এখন থেকে এটা তোর বোন নায়রার সংসার!
আর রাত পোহালেই ওকে আমি এ ঘরে আনবো!
অনিতা এবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন!
তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছিলেন স্বামীর দিকে,,আর যখন নায়রা এ বাড়িতে এসেছে তখন থেকেই অদ্ভুত কিছু না কিছু চোখে পড়ছে! কারণে অকারণে নায়রা যেন বেশ ভালোভাবেই ঢলাঢলি করছে বিজয়বাবুর সাথে!
অনিতা এতে তখন পাত্তা না দিলেও,,এখন নিজের কপাল নিজেই চাপড়াচ্ছেন!
নায়রার বিয়ে হয়েছে অনেক বছর,,কিন্তু এই আধা বয়সে এসে স্বামীকে তালাক দিয়ে সংসার ছেড়ে নিজের বোনেরই সংসারে আগুন লাগাতে চলে এসেছে!
চিল্লাপাল্লার শব্দে নায়রার ঘুম ভেঙ্গে গেলে সেও সেখানে উপস্থিত হয়!
অনিতা তখনো স্বামীর পা জড়িয়ে আছে!
নায়রা তখন বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো,,
-এই রাত বিরাতে কি নাটক শুরু করলা বাপু?
অনিতা বোনের কন্ঠ শুনে থেমে যান,,,
জড়িয়ে রাখা স্বামীর পা টা ছেড়ে দিয়ে উঠে বোন নায়রার দিকে তেড়ে যান।
চুলের মুঠো ধরে নায়রাকে কয়েক গা মেরেও দেন!
নায়রা তখন ন্যাকা কান্না করতে ব্যস্ত!
বিজবাবু তড়িৎ গতিতে এসে অনিতাকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দেন!
স্বামীর দিকে ছলছল নয়নে তাকান অনিতা!
বিজয়বাবু ব্যস্ত হয়ে নায়রাকে পরখ করেন,,
গালে হাত বুলিয়ে দেন,,।
অনিতা এ বয়সে এসে স্বামীর এমন কর্মকান্ড আশা করেন নি।
ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেন অনিতা!
বিজয়বাবু অনিতার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে বলেন,
-কোন ধর্মত্যাগীর জায়গা আমার ঘরে নেই।
এ ঘরে তুই থাকলে আমার পাপ হবে পাপ!
অনিতা ফিকে হাসেন!
আমি সত্যকে জেনে গ্রহণ করায় পাপ হবে,,আর উনি যে পরকীয়া করে ধর্মের জঘন্যতম কাজটি করেছে এতে পাপ হবে না?
নায়রা বোনের দিকে এসে অনিতার চুলের মুঠি ধরে বলেন,,
-আজ থেকে তুই আমার বোন ছিলি একসময় আমি ভুলে গেলাম!
তারপর বিজয়বাবুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে নায়রা বললো,,
-শুনেন না,,ঘরে তো কোন কাজের লোক নেই ওকে রেখে দিন কয়েকদিন!
বেশি তেড়িবেড়ি করলে না হয় লাত্তি দিয়ে বের করে দিয়েন!
বিজয়বাবু কোমড় পেঁচিয়ে ধরেন নায়রার!
মাথা কাত করে সায় দিয়ে,,,নায়রার কোমড়ে আলতো চাপ দেন বিজয়বাবু!
নিজের চোখের সামনে স্বামীর লীলা দেখে অনিতা বাকরূদ্ধ হয়ে যান!
অনিতা ভেবেছিলেন স্বামী হয়তো তার বদলে গেছে,,
কিন্তু উনার যে শিরা উপশিরায়য় শয়তান কারখানা পেতে নিয়েছে তা বুঝতে বেশ দেড়ি হয়ে গেলো অনিতার!
নায়রার ইচ্ছে অনিতা এখানে থেকে বিজয়বাবু আর ওকে দেখে জ্বলুক।
আর সে তার নিজের প্রতিশোধ নিক!
নায়রার উদ্দেশ্যেই সফল হলো……।
.
মহেশ এসে ঘরে ঢুকে মাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!
অনিতা শক্ত হয়ে মেঝের দিকে দৃষ্টি বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন!
বার কয়েক মাকে ডাক দিলেও অনিতার সাড়া মিলে না!
মহেশ মায়ের গায়ে হাত দিতেই মহেশের উপর ঢলে পড়ে যান অনিতা!
মায়ের গায়ে হাত দিতেই হকচকিয়ে যায় মহেশ!
নিঃশ্বাসটা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনিতার,,,
-মাআআয়ায়-মাআআয়ায়ায়ায়া
মায়ের দিকে তাকিয়েই রইলো মহেশ!
রাতে কি হয়েছিলো কিছু জানে না মহেশ,,।
সে বাড়িতেই ছিলো না রাতে,,প্রিয়ন্তিকে খুঁজতে অনেকদূর যেতে হয়েছে তাই আরর বাড়ি ফেরা সম্ভব হয় নি।
কিন্তু সকাল হতেই ফিরে এসে নিজের মায়ের মরণমুখ দেখবে আশা করে নি মহেশ!
★
সারাদিন ধরে মনটা খচখচ করছে প্রিয়ন্তির!
শুধু শুধুই কান্না আসছে!
সারাহর কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে তবুও যেন চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে যাচ্ছে!
প্রিয়ন্তির গাল বেয়ে পড়ে যাওয়া পানি যত্নে মুছে দিলো সারাহ!
মাথা তুলে উঠে বসলো প্রিয়ন্তি!
__আমার আজ কেমন জানি করছে সারাহ!
মায়ের কথা বড্ড মনে হচ্ছে!
মাকে ফোন দিবো সাহস হচ্ছে,,যদি বাবা পাশে থাকেন!
ওরা না কি হন্য হয়ে খুঁজছে আমায়!
মা তাই কড়াভাবে নিষেধ করেছে উনাকে যাতে আমি কখনো আগ বাড়িয়ে ফোন নাই দেই।
কি করবো সারাহ,,কেন জানি খুব খারাপ লাগছে মায়ের জন্য।
-মন খারাপ করিস না অপেক্ষা কর,,,আন্টিই তোকে দেখিস ফোন দিবে!
প্রিয়ন্তি উদাসীন হয়ে সারাহর দিকে তাকিয়ে রইলো……
কিছু মহিলা প্রায় হট্টগোল পাকিয়ে রুমে ঢুকলো!
প্রিয়ন্তি আর সারাহ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো!
মহিলাদের সাথে জহুরা হোসেন ও ছিলেন।
-দেখি দেখি তোমার মুখটা,,,তুমি না কি আয়াতের হবু বাগদত্তা!
আমার আয়াত আব্বার পছন্দটা তো দেখি!
মহিলাটি প্রিয়ন্তির চিবুকে হাত রেখে মুখ তুললেন!
মাথা নিচু করেই বসে ছিলো প্রিয়ন্তি!
-বাহ আয়াত আব্বা তো পরী পছন্দ করেছে দেখছি!
সবাই বেশ সন্তুষ্ট হলো প্রিয়ন্তিকে দেখে।
আজ জহুরা হোসেন ড্রয়ইরুমে আলাপ করছিলেন আয়াতের সাথে প্রিয়ন্তির বিয়ের কথা!
সেখানে উপস্থিত রেহনুমা বেগম ও ছিলেন।
জহুরা হোসেনের আলাপের এক পর্যায়ে মহিলারা প্রিয়ন্তিকে দেখতে চান,,,সেই সুবাদেই রুমে চলে আসেন উনারা!
মনটা ভীষণ ভার হয়ে আছে প্রিয়ন্তির!
আয়াতকে কখনোই সেই ভাবে ভাবেই নি,,,কোন অনুভূতিই যেন প্রিয়ন্তির কাজ করছে না!
আয়াতের সাথে বিয়ের কথা শোনেই প্রিয়ন্তি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে……
অনেক কিছুই বলতে চায় প্রিয়ন্তি,,কিন্তু কথাগুলো গলাতেই এসে আটকে যাচ্ছে,,মুখ দিয়ে যেন বেড় হতেই চাচ্ছে না!
-তা মেয়ে,,শুনলাম তুমি না কি হিন্দু ছিলা,,
নিজের পরিবার ছেড়ে ও চলে এসেছো এর জন্য!
এত্ত পাষণ্ড মেয়ে তুমি,,মা-বাবারে ছাইড়া আইতে কষ্ট লাগে নাই বুঝি!
মহিলাটি প্রিয়ন্তির কাটা গায়ে যেন লবণ ছিটিয়ে দিলেন!
সারাহ নিরবে সবার কথা এতোক্ষণ শুনলেও এখন বেশ চটা গলায়ই উত্তর দিলো……
-আন্টি আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন ও মুসলিম। আর ও ওর মা-বাবার কাছে থাকতে চেয়েছিলো,,কোন সন্তানই চায় না মা-বাবার থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু……ওর কিছুই করার ছিলো না পরিবারের মানুষরাই ওকে বাধ্য করেছে বেড়িয়ে আসার!
আর আল্লাহর সন্তুষ্টির আগে পরিবার কিছুই নয়।
-তার মানে মাইয়া তুমি বলতে চাইছো,,মা-বাবারে ছাইড়া আইসা ঠিক করছে!
-আন্টি আমি ঠিক বেঠিকের কথা বলছি না।
এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টিরর কথা আসছে।
পরিবারের মানুষ ওকে বাধ্য করছিলো মূর্তি পূজায় শরীক হওয়ার জন্য।
আর আন্টি জানেন ই তো,,আল্লাহ হয়তো অন্যসব গুনাহ মাফ করতে পারেন কিন্তু শিরককারীরে নয়!
-হু,,
ছোট্ট করে নিঃশ্বাস নেন ভদ্র মহিলা!
-মা……
দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে জহুরা হোসেনকে ডাক দিলো আয়াত!
প্রিয়ন্তি গায়ের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো ভালো করে!
জহুরা হোসেন ছেলের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলেন!
কয়েকজন ভদ্র মহিলা প্রিয়ন্তির দিকে ফের প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,,,
-ওর সাথে তো তোমায় বিয়ে হতে যাচ্ছে,,তাহলে ওর সামনে এই ঢং করে মুখ ঢাকলা কেন।
-বিয়ে হবে কি হবে না এটা একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালাই জানেন,,সম্পূর্ণ ইচ্ছা উনার।
আর আমাদের বিয়ে হয় নি আন্টি হবে হয়তো,,বিয়ে না অব্ধি উনি আমার জন্য পরপুরুষ আর উনার সামনে আমার নিজেকে প্রদর্শন করা নাজায়েজ!
এতে আল্লাহর দেয়া ফরজ বিধান পর্দার লঙ্গন!
স্পষ্ট উত্তর প্রিয়ন্তির!
সারাহ প্রিয়ন্তির স্পষ্টভাষী দেখে মুচকি হাসলো!
আয়াতের খালামণি জাহানারা বেগম এর মাঝে বলে উঠলেন,,,
-আমাদের তুমি শেখাতে এসো না মেয়ে!
তুমি নতুন মুসলিম হয়েছ,,,আর আমরা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি!
আমাদের থেকে তুমি বেশি জেনে নিয়েছ না,,
পর্দা নিয়ে তোমার এটা নিছক বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়!
প্রিয়ন্তি জাহানারা বেগমকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিতিশা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,,,
-খালামণি তোমার কথার উত্তর আমি দেই?
জাহানারা বেগম মিতিশার কথা শুনে বেশ ইতস্তবোধ করতে লাগলেন!
কারণ মিতিশা কাউকে কিছু বলার সময় কোন থুয়াক্কা করে না,,যা সে বলতে চায় সেটাই মুখ ফসকে বলে ফেলে!
অবশ্যই এমন কথা বলবে যাতে সামনের মানুষটটা লজ্জা আর শিক্ষা দুটোই পাই!
মিতিশা জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,,
-কি হলো খালামণি!
জোর করে মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললেন জাহানারা বেগম!
-না মা কিছুনা,,,আমি বুঝে গেছি!
আপারা চলেন নিলাশাকে দেখে আসি!
কাল তো মেয়েটার বিয়ে,,,
তাড়া লাগালেন জাহানারা বেগম!
মিতিশা তা দেখে মুখ টিপে হাসলো……
সবাই চলে গেলে মিতিশা প্রিয়ন্তির হাত চেপে ধরে বলে,,
-কিছু মনে করো না পিও! খালামণি এমনই,,,
দ্বীনের জ্ঞান খুবই কম উনার কাছে!
প্রিয়ন্তি ফিকে হেসে বললো,,
-মুসলিমদের এতো অধঃপতন সত্যি ভাবিয়ে তুলে!
★
নিলাশাকে বিদায় দিয়ে কমিউনিটি সেন্টার থেকে বাড়িতে চলে এলেন সবাই!
প্রিয়ন্তি রুমে ঢুকার আগেই পেছন থেকে কারো আওয়াজে থেমে গেলো!
পেছনে না ফিরেই থ হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো!
এই মানুষটার কন্ঠ শুনে এমন অবস্থা হয়,,
মুখের দিকে তাকালে না জানি আমি শেষ হয়ে যাই!
-কি……কিছু জরুরী কথা ছিলো?
পেছন থেকে বলে উঠলো মেহরাব!
প্রিয়ন্তি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো,,হু হ্যাঁ কিছুই বললো না!
-সত্যি কি বিয়েটা হচ্ছে………
ঝট করে প্রশ্নটা করে নিজেই বোকা বনে গেলো মেহরাব! শুরুটা এমন ভাবে করতে চায় নি বা কথাটা ডাইরেক্টলি বলতে চায় নি মেহরাব!
কিন্তু মুখ ফসকে মেইন কথাটাই চলে এলো!
প্রিয়ন্তি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,,,
বিয়েটা হোক সে ও চায় না!
কোন সিদ্ধান্তেও পৌঁছাতে পারছে না প্রিয়ন্তি!
-হ্যাঁ পিও বল! সত্যি কি তুই বিয়ে করতে রাজি!
বা নিজের মন থেকে মানছিস এটা!
সারাহর কথা শুনে চমকে উঠলো প্রিয়ন্তি!
ভাইয়ের পাশে এসে ভাইয়ের দিকে বিষণ্ণ চোখে তাকালো সারাহ!
মেহরাব নিরবে চলে গেলো সেখান থেকে!
প্রিয়ন্তি উত্তর দিচ্ছে না!
হয়তো সে চায়……
সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠছিলো আয়াত,,মেহরাব অন্যমনস্ক হয়ে হাটলে দুজনের কাদে কাদে ধাক্কা লেগে যায়!
আয়াত হেসে দিয়ে বলে,,
-কি রে ভাই! তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন!
মেহরাবের খালাতো ভাই আয়াত!
আয়াতের দিকে তাকিয়ে কিছুটা মুচকি হেসে কথাটি এড়িয়ে গিয়ে বললো মেহরাব,,,
-তোর কি হয়েছে বলতো,,বোনের বিদায় দিয়ে এত্ত হাসিখুশি,,মনে হচ্ছে কোন শত্রু তোর ঘার থেকে নেমে গিয়েছে!
-আর বলিস না ভাই,,নিলাশা আমার শত্রু থেকে কম ছিলো না।
কিন্তু বোনটার জন্য কষ্ট হচ্ছে তার উপর খুশি লাগছে অন্য কারণে।।
-কারণটা……
বলতে গিয়ে থেমে গেলো মেহরাব!
হয়তো পিওয়ের সাথে………
-আচ্ছা আমি মায়ের কাছ থেকে আসছি!
হনহন করে চলে গেলো মেহরাব!
;
-এখন তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,,তাহলে ওর সাথে কথা বলতে তো আর বাধা নেই!
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে প্রিয়ন্তির দরজার কাছে এসে থামলো আয়াত!
ভেতর থেকে লক করা দরজাটা,
ঠোকা দিলো আয়াত!
মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলতেই আয়াতকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে ঘোমটা টেনে দিলো প্রিয়ন্তি!
-পিও এখন তো আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,,তাহলে?
আয়াতের কথার জবাব না দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে রইলো প্রিয়ন্তি!
চোখে পানির স্পষ্ট দাগ এখনো গালের উপর জমাট বেধে আছে প্রিয়ন্তির!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্রিয়ন্তির থেকে কোন জবাব না পেয়ে বললো আয়াত,,
-সরি ডিস্টার্ব করলাম! আসলে আমার ঠিক হয়নি বোধহয় এইভাবে আসা!
আসলে আমি ইসলামের সব বিষয়গুলো ঠিক জানিনা! তাই ভুল হয়ে গেছে হয়তো সরি!
ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে ডাক দিলো প্রিয়ন্তি।
-ডাক্তার বাবু,,আপনার সাথে কথা ছিলো?
আয়াত খুশি খুশি মুখ নিয়ে বলে,,
-হ্যাঁ বলো?
মনে মনে অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে নেয় প্রিয়ন্তি!
দম নিয়ে আরো একবার মনে মনে আওরায় প্রিয়ন্তি,,,
-হ্যাঁ বলতে হবে,,বিয়েটা আমি করবো না!
-বলো……
-আ…মি আমি বিয়েটা……
আর বলতে পারে না প্রিয়ন্তি,,আয়াতের ফোনটা হঠাৎ করেই বেজে উঠে!
চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস নেয় প্রিয়ন্তি!
-সরি পিও! ইমার্জেন্সি যেতে হচ্ছে হাসপাতালে!
আমি এসেই শুনছি……
তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো আয়াত।
#চলবে ইন শা আল্লাহ