ধৈর্য,২১

0
656

ধৈর্য,২১
Tahmi_Chowdhury
:
আস্তে করে গাড়ির দরজা খুলে দেয় কেউ,,
প্রিয়ন্তি সেদিকে একবারও তাকায় না,,উঠে বসে গাড়িতে!
লক করে ওপর পাশ দিয়ে প্রিয়ন্তির পাশে এসে বসে মানুষটা!
প্রিয়ন্তি মাথা নিচু করে বসে!
চোখে পানি টলমল করছে,,
মেহরাবের বাড়ির দিকে কাচের জানালা দিয়ে তাকায়,,আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়! দুহাত দিয়ে দুহাত কচলাতে থাকে প্রিয়ন্তি,তারপর বড় করে নিঃশ্বাস নেয়,,
ঘার এদিক ওদিক করে চোখের ছলছল ভাব আটকায় প্রিয়ন্তি!
গাড়ি চলতে শুরু করেছে,,
প্রিয়ন্তি আরো একবার তাকায় বাহিরে,,সারাহ হাস্যজ্জল মুখে তাকিয়ে আছে,,
রেহনুমা মহেশ সকলেই দাঁড়িয়ে আছে……
কিন্তু …যাকে চোখ খুঁজছে তাকে দেখতে পায় না,,
দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়,,
মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে প্রিয়ন্তি,,,
—শক্ত হতে হবে,,ধৈর্য ধরতে হবে!
আল্লাহ এর প্রতিদানে ভালো কিছু রেখেছেন নিশ্চয়ই……
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে প্রিয়ন্তি!
বুকের চিনচিন ব্যথাটা ক্রমশই হঠাৎ করেই বেড়ে চলছে যেন প্রিয়ন্তির!
.
আয়াতের দিকে অবাক হয়ে তাকায় তনয়া,,,
আয়াত এখানে,, তাও বরের বেশে ভীষম খায় তনয়া!
জাহানারা বেগম মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দেন!
কাশতে কাশতে মায়ের দিকে তাকায় তনয়া!
জাহানারা হাসেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে……
এ হাসির মানে বুঝে না তনয়া!
ফ্যালফ্যাল করে সামনে বসা আয়াতের দিকে তাকিয়ে থাকে!
আয়াত মিষ্টি হাসে!
তনয়া চোখ ফিরিয়ে নেয়!
কাজি আসেন,,তনয়া আয়াত দুজনেই কবুল বলে!
তনয়ার মনে হতে থাকে সে স্বপ্ন দেখছে!
ঘুম ভাঙ্গলে এখুনি তা ভেঙ্গে যাবে!
তনয়ার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে মিতিশা,,
—–বোরকা পড়ায় তোকে হুরপরী লাগছে রে তনয়া!
তনয়া ঘার ঘুরিয়ে মিতিশার দিকে তাকায়,,চোখে তার রাজ্যের প্রশ্ন!
মিতিশা মুখ টিপে হেসে বলে,,
—ভাইয়ার কাছ থেকেই জেনে নিস! মাথায় চাপ নিস না নইলে অজ্ঞান হয়ে যাবি!
তনয়ার সত্যি অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা,,,চারপাশের এমন অদ্ভুতর কান্ড দেখে মনে হচ্ছে ওর পুরো দুনিয়া চক্কর দিচ্ছে!
আয়াত চশমার ফাঁকেতালে তনয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে……
বিদায়ের অপেক্ষা করছে আয়াত!

প্রিয়ন্তির বিদায়ের গাড়িটা অনেক আগেই রাস্তার মোড় পালটে আবার চেনা রাস্তায় চলতে শুরু করছে প্রিয়ন্তির সেদিকে খেয়াল নেই!
সে নিজ ধ্যানে মগ্ন,,
পাশে তাকা মানুষটার দিকে একবারও তাকানোর প্রয়োজন মনে করে নি প্রিয়ন্তি।,যদি একবার তাকাতো তাহলে দেখতে পেতো একজোড়া চোখ তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে কোন দ্বীধা ছাড়াই!
গাড়িটা থেমে যায়,,
প্রিয়ন্তি আস্তে আস্তে নামে,,
মানুষটা প্রিয়ন্তির হাত শক্ত করে ধরে!
প্রিয়ন্তি কেঁপে উঠে তবুও চোখ তুলে তাকায় না,,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে!
সারাহ আর রেহনুমা আসেন প্রিয়ন্তি আর মেহরাবকে বরণ করতে,,
প্রিয়ন্তির অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে সারাহ,,
.
এশার আযান দিয়ে দিলে ভারী লেহেঙ্গাটা নিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায় প্রিয়ন্তি!
চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়,,
রুমটা পরিচিত পরিচিত মনে হয়!
বেশি মাথা ঘামায় না প্রিয়ন্তি!
কলাপাতা রঙ্গের শাড়িটা নিয়ে ঢুকে পড়ে ওয়াশরুমে,
ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামায আদায় করে নেয় প্রিয়ন্তি!
ঘুম আসছে প্রচুর,,মাথা ও ধরেছে,,,
অপেক্ষা করবো,,না কি ঘুমিয়ে পড়বো?
ভাবতে ভাবতে সোফায় গিয়ে বসে প্রিয়ন্তি!
পেটে হাত বুলায় প্রিয়ন্তি,,
ক্ষীধে লেগেছে প্রচুর!
ঘড়ির দিকে তাকায় প্রিয়ন্তি,,
১০ টা ছুঁইছুঁই কাটা!
মেহরাব নামায শেষে হাতে এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে!
দরজায় আওয়াজ শুনেই ঝট করে উঠে দাঁড়ায় প্রিয়ন্তি!
মেহরাব হাস্যজ্জল মুখে সালাম দেয় প্রিয়ন্তিকে!
চিৎকার দিতে যায় প্রিয়ন্তি!
মেহরাব দ্রুত প্রিয়ন্তির মুখ চেপে ধরে,,একহাতে দরজা লক করে দেয়!
প্রিয়ন্তি গোঙ্গায়,,মেহরাব হাতের প্লেট টেবিলে রেখে প্রিয়ন্তির চোখের দিকে তাকায়,
প্রিয়ন্তির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,,মেহরাব বিষয়টি বুঝে বলে,,
-ভয় নেই আমি তোমার স্বামী।
প্লিজ চুপ থেকো……
মেহরাব করুণ কন্ঠে প্রিয়ন্তিকে বলে হাত সরিয়ে নেয়!
প্রিয়ন্তি দ্রুত নিঃশ্বাস নেয়,,
থরথর করে কাঁপছে প্রিয়ন্তি,,
কাপাকাপা স্বরে প্রশ্ন করে প্রিয়ন্তি……
-ম…মানে?
মেহরাব হেসে এগিয়ে আসে প্রিয়ন্তির দিকে,,দু কদম পিছিয়ে যায় প্রিয়ন্তি!
মেহরাব দু হাত বুকের উপর ভাজ করে বলে,,
-তোমার সাথেই বিয়ে হয়েছে,,তুমি বোধহয় কাজী সাহেব কি বলেছেন শুনোনি,,
বিষয়টা তখন না বুঝতে পারলেও গাড়িতে যদি একবার তাকাতে বুঝতে পারতে,,আবার একটু আগে চারিদিকে চোখ বুলালেও বুঝতে পারতে!
মেহরাব ভ্রু ভাজ করে দুষ্টুমি ভঙ্গিতে বলে,,
-আমি জানতাম তো তুমি তখন সজ্ঞানেই ছিলে না,,আশেপাশের কি হচ্ছে তোমার খেয়াল নেই!
তোমার চিন্তায় আমি ছিলাম বলে……
প্রিয়ন্তি চোখ কোটর করে বলে,,,
-তাহলে গাড়ি করে আমরা কোথায় গিয়েছিলাম?
মেহরাব ঝট করে উত্তর দেয়……
-বারেহ!
বিয়েটা তো আর করতে পারবে না আমার বউ!
তাই বউয়ের যাতে আফসোস না থাকে যে বিয়ের দিন গাড়িতে ছড়ে স্বামীর বাড়ি আসতে পারে নাই সেজন্যই গাড়ি ছড়িয়ে নিয়ে আসলাম!
এই বলে মেহরাব মুচকি হাসে,,
প্রিয়ন্তির শরীর অস্বাভাবিকভাবে কেঁপে উঠে,
শরীরের ভার ছেড়ে দেয় মেহরাবের উপর!
মেহরাব মুচকি হেসে প্রিয়ন্তিকে পাঁজাকোলে তুলে নেয়!
অতিরিক্ত সুখ হয়তো প্রিয়ন্তির সহ্য হয় নি তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে!
.
তনয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়াত!
তনয়া মোচড়ামুচড়ি করে ছুটার জন্য,,,আয়াতের শক্ত বাহু তবুও ছাড়াতে পারে না!
আয়াত তনয়ার কাদে থুতনি রেখে বলে,,
-পাগলী তুমি আমায় পছন্দ করতে এটা আগে বলো নি কেন?
তনয়া উত্তর দেয়,,
-বলিনি?
-বলো নি তো?
তনয়া কপাট রাগ দেখিয়ে কটমট করে বলে,,
-বলি নি…?
-হু সেই পিচ্চিকালে!
-তাহলে?
—-হু আমি তো তখন ভেবেছি সেটা তোমার আবেগ!
আর এই বয়সে আবেগটা একটু বেশিই তাড়া করে বেড়ায়!
আমি যদি তখন তোমার ডাকে সাড়া দিতাম তাহলে আমাদের দুজনেরই গুনাহ হতো!
জানো তো বিবাহপূর্ব প্রেম হারাম!
তখন এসব না জানলেও এখন জেনে গেছি,,আল্লাহ বাঁচিয়েছেন এমন পাপ থেকে!
-আলহামদুলিল্লাহ!
নিচু স্বরে বলে তনয়া!
তনয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে আয়াত!
-শুনবে না এসব কিভাবে হলো?
প্রশ্নভরা চোখে আয়াতের দিকে তাকায় তনয়া!
আয়াত মৃদু হেসে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বেলকোণীর ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে,,
—প্রিয়ন্তির সুন্দর জানি,,৪ মাস আগে প্রিয়ন্তিকে দেখে ক্ষণিকের জন্য আমার ভালো লেগে গিয়েছিলো আর আমি এই ক্ষণিকের এই মোহকে ভালোবাসার নাম দিয়ে মারাত্মক ভুল করতে যাচ্ছিলাম!
প্রিয়ন্তি এমন যে সে নিজের রূপে কাউকে মোহ লাগিয়ে দিতে পারে,,আর আমি তো একনজর দেখেই!
যাক সেসব কথা ওর বর্ণনা দিয়ে আর গুনাহগার হতে চাই না,,বিষয়টা তোমার জানা জরুরী তাই বলছি!
প্রিয়ন্তির জন্য আমার ভালোলাগা ছিলো ভালোবাসা নয়!
তনয়ার দিকে তাকায় আয়াত,
তনয়ার চোখে জল চিকচিক করছে……
একহাতে তনয়াকে কাছে টেনে এনে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় আয়াত……
আবার বলতে শুরু করে সে…
—বিয়ের তিনদিন আগে তুমি এসেছিলে,,সেদিন মিতিশার রুমে যদি না যেতাম তাহলে হয়তো তোমাকে আর পাওয়া হতো না আমার!
তোমার বলা সব কথা আমি সেদিন শুনে নেই!
আমার ভীষণ খারাপ লাগছিলো,,,কষ্ট হচ্ছিলো কেন নিজেই জানিনা!
বিয়ের দুদিন আগেও আমি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছিলাম,,
তোমার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে,,প্রিয়ন্তিকে যে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি একটাবারও আমার তা মনে হয় না,,বরং প্রিয়ন্তিকেই আমার মনে হয় না!
অদ্ভুত এক টান আমি তোমার জন্য নিজের মধ্যে পেয়েছিলাম,,পরেই এই সিদ্ধান্ত নেই!
এখন স্বস্তি লাগছে!
তনয়া নিজের মাথা আয়াতের বুকে রাখে!
তনয়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় আয়াত!
.
প্রিয়ন্তির জ্ঞান ফিরে,,
মেহরাব মিটমিটে করে হাসছে!
প্রিয়ন্তি ভ্রু কুচকায়!
-খিধে পেয়েছে?
-হু
ছোট্ট করে উত্তর দেয় প্রিয়ন্তি!
মেহরাব উঠে টেবিল থেকে খাবার নিয়ে আসে,,
প্রিয়ন্তির তখনো মনে হচ্ছে ও মেহরাবকে সত্যি স্বপ্ন দেখছে!
মেহরাব হেসে প্রিয়ন্তির মুখে খাবার তুলে দেয়!
স্বাভাবিকভাবেই মেহরাবের হাতে পরম তৃপ্তিতে খেয়ে নেয় প্রিয়ন্তি,,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”
মনে মনে ভেবে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেয় প্রিয়ন্তি!
.
#চলবে ইন শা আল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here