ধৈর্য,২৩(শেষ পর্ব)

0
1271

#ধৈর্য,২৩(শেষ পর্ব)
Tahmi_Chowdhury

সেই ঘটনার পর পাঁচটি বছর কেটে যায়!
এখনো প্রিয়ন্তি আর মেহরাবের কোল খালি!
চারিদিকে মানুষ প্রিয়ন্তিকে নিয়ে নানান কানাঘুষা করেন,,
কেউ কেউ প্রিয়ন্তিকে বন্ধ্যা উপাধি দিতেও ছাড় দেন নি!
প্রিয়ন্তি সব জানে,,সব শুনে,,সবার সব অপবাদ মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়!
প্রিয়ন্তির দৃঢ় বিঃশ্বাস নিশ্চয়ই তার রব এই ধৈর্যের প্রতিদান দিবেন!
সেদিন প্রিয়ন্তির বাচ্চাটা বাঁচে নি,,,
অতিরিক্ত ব্লাড যাওয়ার ফলে সেদিনই বাচ্চাটা মারা যায়,,,
সেদিন বাচ্চা জন্ম দিলেও সেটা মৃত!
প্রিয়ন্তি সেদিন নিজের চোখে বাচ্চাটার মৃত দেহ দেখতে পেয়েছিলো,,,পাথর হয়ে গিয়েছিলো যেন প্রিয়ন্তি!
কতো স্বপ্ন কতো আশা ছিলো এই সন্তানকে ঘিরে!
সব স্বপ্ন আশা নির্নিমেষে গুড়োগুড়ো হয়ে যায়!
বাচ্চাটাকে বাঁচতে দেয় নি ওই জঘন্য দ্বীপ,,
মা-বাবার হওয়ার আশাটাই কেড়ে নিলো!
তবে এই জঘন্য কাজের শাস্তি দ্বীপ পেয়ে যায়!
পুরোহিতের কাছে যাওয়ার পথেই সেদিন গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায়!
এক মায়ের আর্তনাদ আল্লাহ সহ্য করেন নি!
বিজয়বাবু নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় বসে গেছেন,,,যে সম্পদের লোভ তিনি করেছিলেন সেই লোভেই তিনি আজ নিঃস্ব!
নারীলোভী বিজয়বাবু আজ এক নারীর কারণেই নিঃস্ব হতে হয়েছে,,,
কথায় আছে না__
“লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু”
সেটাই বিজয়বাবুর জীবনে প্রতিফলন হয়েছে!
অনিতার যে বোনকে নিয়ে বিজয়বাবু লীলায় মত্ত হয়েছিলেন সেই লীলা বেশিদিন উপভোগ করতে পারেন নি বিজয়বাবু!
কৌশলে নায়রা বিজয়বাবুর কাছ থেকে সব হাতিয়ে নিয়ে আগের স্বামীর কাছে ফিরে গিয়েছে!
নায়রা শুধু সম্পত্তির কারণেই এতোদিন বিজয়বাবুর গলায় ঝুলে ছিলো!
যখন সে নিজের বুঝ বুঝে নিয়েছে তখন সে গলা থেকে নেমে গিয়েছে!
বিজয়বাবু মাথা চাপড়ান!
মহেশ বাবার অবস্থা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসে!
ছোট্ট দুইটা রুম ভাড়া করে মহেশ আর বিজয়বাবু থাকেন!
মহেশ মেহরাবের মাদ্রাসায় ম্যানেজার পদে নিযুক্ত ঘরের খরচটা সে ই চালায় এখন!
“প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ বিনিময় প্রদান করা হবে। তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে তিনি পূর্ণ অবগত আছেন”।
সূরাঃ আযযুমার
“সুতরাং তারা সামান্য হেসে নেক এবং তারা অনেক অনেক কাঁদবে তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ”।
সূরাঃ আত তাওবাঃ আয়াত – ৮২,
এই দুইটা আয়াত মহেশের বারবার মনে পড়ে বাবার দিকে তাকালে!
সত্যিইই আজ তার বাবা কাঁদছে,,,নিজের কৃত কর্মের জন্য কপাল চাপড়াচ্ছে!
মহেশ শক্ত কাটের বিছানাটিতে গিয়ে বাবার পাশে বসে,,,
বিজয়বাবু চোখ বন্ধ করে আছেন,,,
কিন্তু তার চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে তার মানে তিনি ঘুমান নি!
বাবার হাত জড়িয়ে ধরে বলে মহেশ…
—বাবা সত্য গ্রহণ করো বাবা!
ইসলাম গ্রহণ করো,,,এটা তোমার জন্য কল্যাণকর বাবা,,,
বিজয়বাবু চুপ করে চোখ বন্ধ করেই থাকেন!
মহেশ আয়াত পাঠ করে___
— “যেদিন তাদেরকে ধাক্কা মেরে মেরে দোযখের আগুনের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং বলা হবেঃ
এই সেই দোযখ, যা তোমরা অবিশ্বাস করতে। এটা কি যাদু, না তোমরা দেখতে পাচ্ছ না। এতে প্রবেশ কর। অতপর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর কিংবা ধৈর্য্যধারণ না কর, উভয় তোমাদের জন্য সমান। তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল প্রদান করা হবে, যা তোমরা করতে”।
সূরাঃ আত্বতুরঃ আয়াত – (১৩ – ১৬)
“যেদিন কাফিরদেরকে দোযখের সামনে উপস্থিত করা হবে সেদিন তাদেরকে বলা হবেঃ এটা কি সত্য নয়?
তারা বলবেঃ হাঁ, সত্য। আমাদের রব্বের কসম ! আল্লাহ বলবেনঃ তবে তোমরা যে কুফরী করতে তার কারণে শাস্তি আস্বাদন কর”।
সূরাঃ আল আহক্বাফঃ
আয়াত – ১৬,১৯,২০,৩৪
বাবা এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’য়ালা মূর্তিপূজারিকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,,,
আল্লাহ এক! উনার কোন শরীক নেই বাবা!
মূর্তিপূজারিকারীদের শাস্তি ভয়ংকর হবে বাবা!
তুমি কি এখনো বুঝতে চাও না বাবা?
বিজয়বাবু অপর পাশ হয়ে মাথার নিচে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নেন!
মহেশ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায়!
গত কয়েকমাস যাবত বাবাকে বুঝিয়েই আসছে,,দাওয়াহ দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু বিজয়বাবুর টনক নড়ে না!
” নিশ্চয়ই যারা কুফরি করেছে(সত্য জানার পরও অস্বীকার করেছে)
তাদেরকে সতর্ক কর বা না কর-তাদের কাছে উভয়ই সমান।
তারা কখনই বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
আল্লাহ তাদের অন্তরে ও শ্রবনশক্তিতে মোহর মেরে দিয়েছেন,
তাদের দৃষ্টিশক্তিতে আবরণ দিয়েছেন।
আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”।
[সুরা বাকারা, সুরা নং-২, আয়াত-৬,৭]
অর্থাৎ যারা সত্যকে জানার পরও অস্বীকার করে (কাফির),
আল্লাহ তাদের নিদর্শন দেখান না। ফলে তারা বিপথেই থেকে যায়।
“আল্লাহ কাফিরদেরকে পথ দেখান না।”
আয়াতগুলো বিড়বিড় করতে করতে বাবার ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় মহেশ!
ছেলে ঘর ত্যাগ করার পর বিজয়বাবু উঠে বসেন বিছানায়,,দু হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছে নেন ভালো করে!
.
—তুমি এটা কি করলে আয়শা?
আমার বাচ্চা আমার বাচ্চাকে মেরে ফেললে?
আল্লাহ আমার বাচ্চাকে ও মেরে ফেললো?
মেহরাজের শরীর থিরথির করে কাঁপছে রাগে ক্ষোভে চোখ জ্বলছে মেহরাজের!
আয়শা চেঁচিয়ে উঠে……
—আমি বলছি না আমি এখন বাচ্চা চাই না!
আমার একটা ক্যারিয়ার আছে,,বাচ্চা হলে আমি আমার ক্যারিয়ার কি করে করবো?
আমার ফীগার নষ্ট হয়ে যাবে,,আমি সো কড়ি বাচ্চার জন্য নিজের ক্ষতি করতে পারি না,,শুনেছো তুমি,,আমার সাথে ঘ্যানঘ্যান করতে আসবা না বলে দিলাম!
—তুই তোর ফীগার নিয়ে পড়ে আছিস,
তোর ফীগারের আমি****
আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছিস তুই!
তুই খুনি তোর এই বাড়িতে জায়গা নেই,,
বেড়িয়ে যা আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা!
আয়শার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মেহরাজ আয়শাকে দরজার বাইরে ঠেলে দিলো!
যখন প্রেগনেন্সি কীট দেখতে পেলো আয়শার ড্রয়ারে তখন বুঝে গিয়েছিলো মেহরাজ!
প্রচন্ড খুশি হয়ে আয়শাকে জড়িয়ে ধরেছিলো,,কিন্তু একমাত্র আয়শা খুশি হতে পারে নি!
পুরো পরিবারে সেদিন মিষ্টি বিতরণ করেছিলো খুশিতে মেহরাজ!
অনেকদিনের আশা একটা বাচ্চার মেহরাজের!
কিন্তু কিছুতেই যেন আশাটা পূরণ হচ্ছিলো না,,
যখন হলো তখন আবার নিভে গেলো আশার আলো……
বাচ্চাটা ডাক্তারের কাছে গিয়ে সেদিনই নষ্ট করে আসে আয়শা!
মেহরাজ দু হাতে মুখ ঢেকে কান্না করছে বাচ্চাদের মতো!
আয়শা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে!
.
—কি হয়েছে ভাইয়ার রুম থেকে এতো চেঁচামেচির শব্দ শুনা গেলো?
মেহরাবকে প্রশ্ন করলো প্রিয়ন্তি!
মেহরাব মুখ শুকনো করে বললো,,,
—আয়শা ভাবী মা হতে যাচ্ছিলেন,,কিন্তু তিনি এখন বাচ্চা চান না বলে নষ্ট করে ফেলেছেন!
–আস্তাগফিরুল্লাহ!
দু হাতে মুখ চেপে বলে প্রিয়ন্তি!
মেহরাব বিরক্ত কন্ঠে বলে,,,
—ক্যারিয়ারের জন্য কেউ নিজের বাচ্চাকে মেরে ফেলে?
—কেউ পায় না! আর কেউ পেয়েও কদর করে না!
অদ্ভুত নিয়ম না?
ক্লান্ত গলায় বলে প্রিয়ন্তি!
মেহরাব বুঝে প্রিয়ন্তির পুরনো ক্ষত ঘারো হয়ে যাচ্ছে!
তাই সে কথা পালটায়!
প্রিয়ন্তি মেহরাবের কথা পাল্টানো দেখে মুগ্ধ হয়ে হাসে!
একটা মেয়ে কতোটা ভাগ্যবতী হলে মেহরাবের মতো স্বামী পায়!
বিয়ের পাঁচটি বছর কোল খালি,,এ নিয়ে মেহরাবকে কোন পেরেশানিতে দেখে নি কখনো প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তিকেও এ নিয়ে কিচ্ছুটি বলে নি মেহরাব পাছে যদি প্রিয়ন্তি কষ্ট পায়!
সেদিন বাচ্চাটা মারা যাওয়ার প্রায় ৬ মাস প্রিয়ন্তির আচরণ ছিলো অস্বাভাবিক!
কিন্তু মেহরাবের যত্ন আর তাহাজ্জতের দোয়া বিফলে যায় নি সুস্থ হয়ে উঠে প্রিয়ন্তি!
মেহরাব ডাক্তার কি বলেছে সেটা বিঃশ্বাস করে না,,,সে আশাহত ও হয় নি!
এখনো আশা করে মেহরাব প্রিয়ন্তি একদিন মা হবে!
কারণ মুমিনরা কখনো নিরাশ হয় না,,ধৈর্যহারা হয় না,,তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যেন এই মেহরাব!
.
রেহনুমা ছেলের কাছে আসেন,,মেহরাবের হাত চেপে ধরে করুণ গলায় বলেন,,
—বাবা ডাক্তার তো বললো বউ মা আর মা হতে পারবে না,,,তুই আরেকটা বিয়ে করে ফেল বাবা!
ঘরটা কেমন খালি খালি হয়ে আছে,,,আমি তোকে সুখী দেখে যেতে চাই বাবা!
মায়ের কথায় মেহরাব উত্তেজিত হয়ে উঠে।
নিজেকে সংযত করে বলে,,
—আমাকে দেখে কি তোমার সুখী মনে হয় না মা?
মনে হয় না আমি প্রিয়ন্তিকে নিয়ে ভালো আছি?
ছেলের যদি সুখ চাইতেই হয় মা তাহলে আল্লাহর কাছে সেজদায় পড়ে চাও,,,
মা-বাবার দোয়া সন্তানদের জন্য বিফলে যায় না!
আর সন্তান ছাড়া কি মানুষ সুখী থাকতে পারে না মা?
আমিই কি শুধু নিঃসন্তান?আরো ও তো কতো হাজার সন্তানহীন দাম্পত্য আছে,তারা কিভাবে থাকে মা?
আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকো মা।
আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন!
আর এতো তাড়াতাড়ি কেন আশা হারাচ্ছ ধৈর্য হারাচ্ছো মা?
আমার পিও মা হবে ইন শা আল্লাহ!
আল্লাহ যদি চান বৃদ্ধ হলেও পিওকে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করাবেন আর যদি না ও করান হতাশ নই আমি মা,,,এর প্রতিদানে আল্লাহর কাছে জান্নাত চেয়ে নিবো!
তুমি এসব আর আমায় বলো না মা!
আমি পিও দুজনেই ভালো আছি মা!
আমাদের ভালো থাকতে দাও,,মেয়েটাকেও আর কিছু বলো না ধৈর্য তো আর কম ধরছে না মেয়েটা!
ওর বেশি কষ্ট মা,,আমাদের থেকেও বেশি কারণ সে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে করতেও ব্যর্থ! ওর পেটে ছিলো বাচ্চাটা ওর পেটেই নড়াচড়া করেছে বুঝতে পারছো মা ওর কেমন অনুভূততি হয়েছে?
মা ক্লান্ত আমি………
রেহনুমা বেগম ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলেন!
সত্যি তো ছেলেটা এভাবে ভালো থাকে তাহলে থাকুক না………।
.
চোখের চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখলো প্রিয়ন্তি!
মেহরাব বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে!
প্রিয়ন্তি তাকালো মেহরাবের দিকে,,,
বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে মেহরাবকে,,বড্ড ক্লান্ত…
আস্তে আস্তে মেহরাবের পাশে গিয়ে মেহরাবের বুকে আলতো করে মাথা রাখলো প্রিয়ন্তি!
প্রিয়ন্তি মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো মেহরাব!
—শুনুন না!
—হু
—আপনি প্লিজ মাসনা করে নিন!
—পিও……
ধমকে উঠলো মেহরাব!
প্রিয়ন্তি দমলো না,বলতে লাগলো,,
—মায়ের তো ইচ্ছে করে নাতি নাতনির মুখ দেখতে,,উপভোগ করতে তাদের দুষ্টুমি!
এই বয়সে এসে মায়ের ভারী মুখটা সহ্য হয় না জানেন?
করে ফেলুন না মাসনা,,আমি তো পারবো না আপনাকে বাচ্চা দিতে……
মেহরাব প্রিয়ন্তিকে ছাড়িয়ে বিছানায় বসে!
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে প্রিয়ন্তির দিকে শান্ত হয়ে থাকায়,,আবার বলতে শুরু করে,,,
—তুমি কি চাও তোমার স্বামীরর শাস্তি হোক?
—না না আমি এটা কেন চাইবো!
—তাহলে মাসনা করার কথা কি করে বললে পিও! তুমি জানো আমি মাসনা করলে দুজনের মাঝে আমি ইনসাফ করতে পারবো না,,,,
তোমাকেই হয়তো ভালোবাসবো বেশি,,,তার উপর আর্থিক সমস্যা তো আছেই।
আর যদি আমি মাসনা করে ইনসাফ না করতে পারি এর জন্য আল্লাহর কাছে আমায় জবাবদিহি করতে হবে,,আমি জানি আমি জবাব দিতে পারবো না তখন শাস্তি তো পাবোই তাই না………
প্রিয়ন্তি বলে,,,
—তাহলে বাচ্চা………
—পিও বাচ্চা বাদ দাও,,কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!
—কি?
—বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকে!
.
পরদিন দুপুরে বোরকা হিজাব পড়া মহিলা সাথে জোব্বা পড়া এক লোক, আর সাথে ফুটফুটে ছোট্ট একটা মেয়ে, মেহরাবদের বাড়ি এলো……
প্রিয়ন্তি অবাক হলো,,
প্রশ্ন করলো মেহরাবকে,,,
—ওরা আমার আর তোমার মতো সন্তানহীন ছিলো! নুসরাত ভাবি আর ইমন ভাইয়া, ফুফাতো ভাই ইমন ভাইয়া!
আমরা পাঁচ বছর যাবত,, আর ওরা সন্তানহীন ৩০ বছর যাবত ছিলো তারপর আল্লাহ এক কন্যা সন্তান দান করেন উনাদের!
ভাইয়া ভাবি বৃদ্ধ প্রায়, আর দেখো আল্লাহর কি ফয়সালা,,সুবহানআল্লাহ!
দেখো তাদের আর আমাদের মাঝে বিস্তর ফারাক না?
তারপর ও দুজন মানুষ একসঙ্গে ছিলো,,,কেউ কাউকে ছেড়ে যায় নি!
পিও সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত!
যারা পায় আলহামদুলিল্লাহ,,,আর যারা পায় না ধৈর্য ধরে আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিত!
কারণ আল্লাহ তা’য়ালা মুমিনদের জান -মাল দিয়ে পরীক্ষা করেন!
আমাদের ও তাই পরীক্ষা নিচ্ছেন!
আর যাদের আল্লাহ দুঃখ কষ্টে বেশি আপতিত করেন তাদের আল্লাহ তা’য়ালা বেশি ভালোবাসেন!
পিও আমাদের দুজনের উচিত আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করে বসে থাকা!
সন্তান দুনিয়ার জন্য পিও,,,দুনিয়ার জন্য আমাদের আশা ভরশা খুব বেশি থাকা উচিত নয়!
বা না পাওয়ার জিনিসগুলো যেন আমাদের খুব বেশি কষ্ট না দেয়!
আমরা পেতে চাইলে,,আমাদের কষ্ট হতে চাইলে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য হওয়া চাই!
পিও আর কখনো হতাশ হইয়ো না,,আল্লাহ যখন চাইবেন সন্তান দান করবেন।
আমাদের শুধু ধৈর্য ধরা বাকি…….
নিজেকে আর এইভাবে অসহায় করে রেখো না পিও,,,আমি জানি চারিদিকের লোককথায় তোমার কলিজা জ্বালিয়ে দেয়,,অন্তর বিদীর্ণ হয়ে যায়,,,তুমি যতটুকু কষ্ট পাও না পিও ঠিক তিনগুণ কষ্টটা আমার ও হয় পিও……
তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পরো তাহললে আমি হয়তো তীলে তীলে শেষ হয়ে যাব,,,,
তোমার বিষাদ মুখটা দেখার জন্য আমি তোমায় নিজের করি নি পিও…
প্রিয়ন্তি মেহরাবকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে……
মেহরাব পরম মমতায় প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে আছে!
কাঁদুক না,,যদি নিজের কষ্টটটা একটু হালকা হয়!
—আমি আর কষ্ট পাবো না,,,আমি ধৈর্য ধরবো যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ আমায় সন্তান দান না করেন ততোদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।
এমনকি যদি আমি মৃত্যুমুখে আপতিত হই আমি হতাশ হবো না ইন শা আল্লাহ!
মেহরাব প্রিয়ন্তির কথায় মুচকি হেসে কপালে চুমো একে দিলো!
দরজায় দাঁড়িয়ে সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্যটা আয়শাকে কান্না করিয়ে দিলো!
সে আলতো করে নিজের পেটে হাত রাখলো!
নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আয়শা,,,দ্বিতীয় বারের মতো আল্লাহ তা’য়ালা মা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন আয়শাকে!
এতো পাপ করার পর ও আল্লাহ তা’য়ালা মুখ ফিরিয়ে নেন নি!
কৃতজ্ঞ আয়শা,,,রবের দরবারে শোকরিয়া সিজদাহ করে আয়শা,, প্রিয়ন্তি আর মেহরাবের জন্য ও দুহাত তুলে রবের দরবারে দোয়া করে!
“যারা ধৈর্য ধরে আল্লাহ তাদের দুনিয়া আখিরাতে এর ফল প্রদান করেন”
এই ধৈর্যের বিনিময়ে আল্লাহ হয়তো একদিন প্রিয়ন্তির ও কোল ভরে দিবেন!
সবটা আমরা না ই বা জানলাম।
দোয়ায় রাখি যেন প্রিয়ন্তি আর মেহরাবদের!

___সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here