#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৮,০৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
পার্টঃ০৮
৫৪.
“আভেশ ভাই তুৃমি কাউকে ভালোবাসো? প্রিয়ন্তির কথায় আভেশ টাওজারের পকেটে এক হাত রেখে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বললো,” না..তেমন কাউকে মনে ধরেনি” প্রিয়ন্তি আভেশের কথায় ফোঁড়ন কেটে বললো,”মনে ধরেনি নাকি মেয়েরা তোমাকে পাত্তা দেয়নি?
প্রিয়ন্তির কথা শুনে আভেশ চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়। প্রিয়ন্তি আভেশের এমনভাবে তাকানো দেখে বললো,”না মানে.. হে আম্মু আসছি…মায়ের মিথ্যে ডাকের অজুহাতে প্রিয়ন্তি তড়িঘড়ি করে আভেশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিলিয়ে কোনোরকম পালিয়ে চলে গেলো। প্রিয়ন্তি যেতেই আভেশ ফিক করে হেসে ফেলে।
৫৫.
ছাঁদের রেলিংয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে পিছনে তাকালো সে। তাকাতেই দেখলো প্রান্তিক প্যান্টের দু পকেটে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। অর্ষা এক পলক প্রান্তিক কে দেখে আবার ঘাড় ফিরিয়ে আনমনে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রান্তিক অর্ষার পাশে রেলিংয়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,”মন খারাপ?
“হুম”
কেনো?
“মা-বাবা আর বোনকে অনেক মনে পড়ছে”
যাবে গ্রামে?
“সামনেতো এক্সাম”
“দেরি আছে। এর ভেতরে চলোইনা আমি আভেশ প্রিয়ন্তি আর তুমি গিয়ে একবার ঘুরে আসি” প্রান্তিকের কথায় অর্ষার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। তার চোখ বলছে..সে আনন্দিত। আচমকা প্রান্তিক অর্ষার গালে ধরে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললো,”এই উজ্জ্বল চাহনিটাইতো সবসময় দেখতে চায়” সবকিছু এতো আচমকা ঘটে গেলো যে অর্ষার বুঝতে কয়েক মিনিট সময় লাগলো। অর্ষা মাথা নিচু করে বিদ্যুৎ গতিতে নিচে চলে গেলো ছাঁদ থেকে।
“প্রিয়শিনী এই আমিটা #এক_তুমিতে_আসক্ত” তাই হাজারো ফুলের মাঝে আমার তোমাকেই চায়…বুকে এক হাত রেখে মুচকি হেসে কথাটা বললো প্রান্তিক”
৫৫.
“মা তোর কিছু লাগবে?
” না খালামনি কিছু লাগবেনা”তোমাকে কাজে একটু হেল্প করি?
“না না দরকার নেই মা” তুই গিয়ে সোফায় বস যা। অর্ষা বিরক্ত নিয়ে মনিশা চৌধুরীকে বললো,”সারাদিনতো বসাই আছি খালামনি। করিনা একটু হেল্প” [ কাতর কন্ঠে ]
মনিশা চৌধুরী হেসে বললেন,আচ্ছা বেশ আয় দেখি। একটু গরম পানি বসাতো…আমি রুটি বেলবো। অর্ষা গরম পানি বসাতে যাবে এমন সময় রান্নাঘরে এক বিকট আর্তনাদের চিৎকারে ছুটে আসে বাসার সবাই।
৫৬.
“তোমাকে কে বলেছে রান্নাঘরে যেতে” চিৎকার দিয়ে কথাটা বললো প্রান্তিক। প্রান্তিকের ধমকে অর্ষা সহ সবাই চুপসে গেছে। আভেশ পাশ থেকে বললো,”ওফ প্রান্তিক তোকে নিয়ে না আর পারিনা। দেখছিস মেয়েটার হাত খানিকটা পুড়ে গেছে। ব্যথায় মেয়েটা কাঁদছে তার মধ্যে তোর এমনটা করতেই হবে? মনিশা চৌধুরীও রেগে বললেন,”প্রান্তিকেরতো সব কিছুতেই আবার বাড়াবাড়ি। মেয়েটা কতো কষ্ট পাচ্ছে ইশশ…প্রান্তিক চোখ শক্ত করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,গ্যাস অন ছিলো কেউ জানোনা? আজ না হয় অর্ষার এমন হয়েছে। কাল যে এতো অসতর্কতার জন্য অন্য কারো এমন হবেনা তার কোনো নিশ্চিয়তা আছে?
প্রিয়ন্তি ভাইয়ের সাথে সহমত প্রকাশ করে বললো, “হুম আম্মু ভাইয়াতো ভুল কিছুই বলেনি৷ প্রিয়ন্তি অর্ষার পাশে বসে বার বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে, ” বেশি কষ্ট হচ্ছে তোর তাইনা অর্ষা? কাঁদিসনা ঠিক হয়ে যাবে। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকাতেই ভেতরের রুহটা কেঁপে উঠলো। অর্ষা ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। গ্রামে থাকলেও অর্ষার মা -বাবা তাকে তেমন কিছুই করতে দিতোনা। তাইতো মেয়েটা এইসবে তেমন অভ্যস্ত নয়।
রুম থেকে একে একে সবাই যেতেই প্রান্তিক অর্ষার দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “কে বলেছে তোমাকে কাজ করতে অর্ষা? কোনো কিছুর দরকার হলেতো রুপা আপাকেই বলতে পারতে। প্রান্তিকের কথা শুনে অর্ষার কান্না থেমে যায়। প্রান্তিকের কথার মধ্যে অন্য এক ধরনের অভিমান আছে তা যেনো বুঝাই যাচ্ছিলো। অর্ষা নিশ্চুপ হয়ে বিছানার অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। প্রান্তিক আদরে স্বরে বললো,” খুব কষ্ট হচ্ছে হাতে তাইনা? ঠিক হয়ে যাবে আভেশ মেডিসিন লাগিয়ে দিয়েছে তোমায় চিন্তা করোনা..এইটা বলেই প্রান্তিক নিজের রুমে চলে এলো। দরজা লাগিয়ে এতোক্ষণে চেপে রাখা কান্না চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো। ছেলেটা এতোক্ষণ কতো কষ্ট করে যে ভেতরের চাপা কান্নাটা অর্ষার সামনে কন্ট্রোল করেছিলো একমাত্র সেই জানে। প্রান্তিক ফোনটা টি-টেবিল থেকে নিয়ে একটা হাসিমাখা পিকে হাত বোলাতে বোলাতে বললো,”এক তুমিতে আসক্ত হৃদয়হরিনী”
৫৭.
আভেশ ভাই ও আভেশ ভাই…তুমি এমন কেনো গো সারাদিন চুপচাপ থাকো?
“ওফ প্রিয় তাহলে কি তোর মতো বকবক করবো? আভেশের কথায় প্রিয়ন্তির হাসি মুখটা কালো হয়ে গেলো নিমিষেই। আভেশের তা চোখ এড়াইনি। আভেশ হাঁটুতে বালিশ নিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছিলো৷ হঠাৎ এসেই প্রিয়ন্তি হাজারটা প্রশ্ন শুরু করলো এরপরই এই অবস্থা। আভেশ কম্পিউটারটা বন্ধ করে টেবিলে রেখে বালিশটা বিছানায় সাইড করে প্রিয়ন্তি সামনে এসে তার থুতনিতে ধরে বললো,” ওমা পেত্নীর মুখ অফ হয়ে গেলো কেনো?
প্রিয়ন্তিঃ…….নিশ্চুপ
“আচ্ছা বাবা সরি এইবারতো একটু কথা বল।
প্রিয়ন্তি কোনো কথা না বলে গাল ফুলিয়ে চলে গেলো আভেশের রুম থেকে। আভেশ পড়লো মহা বিপদে। এখন সে কি করবে? আভেশ চায়না তার জন্য কেউ মন খারাপ করুক। কিন্তু সেতো প্রিয়ন্তিকে রাগিয়ে দিলো। আভেশ দুই হাত চেপে ভাবলো,” না কিছু একটা করতে হবে”
৫৮.
“আম্মু আমরা সবাই সেনাইঝড়িতে যাবো” প্রান্তিকের কথা শুনে মনিশা চৌধুরী আর ফরহাদ চৌধুরী খাবারের থালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে প্রান্তিককে বললো,”আমরা মানে”?
“আমরা মানে আমি অর্ষা আভেশ প্রিয়ন্তি”
“কেনো যাবে? ঢাকায়ইতো কতো সুন্দর সুন্দর ঘুরার জায়গা আছে”
“কিন্তু আমরা সবাই গ্রাম ঘুরতে চায়”।
” ঠিক আছে তোমরা যা ভালো বুঝো” এইটা বলেই ফরহাদ চৌধুরী আবার খাওয়ায় মন দিলো। অর্ষা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। কেউ একজন যে তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে তাতো খেয়ালই নেই মেয়েটার।
“এই প্রিয়ন্তি তুই এতো চুপ কেনোরে?”
আভেশের কথা শুনেও প্রিয়ন্তি পাত্তা না দিয়ে একমনে খেতে থাকলো। প্রান্তিক আর অর্ষা তাকালো প্রিয়ন্তির দিকে। সত্যিই অন্য সময়ের তুলনায় আজ প্রিয়ন্তি চুপচাপ। অর্ষা বললো,”প্রিয়…আভেশ ভাইয়া কিছু জিগ্যেস করছে তোকে”
“জিগ্যেস করলে করুক আমার কি?..এইটা বলেই প্রিয়ন্তি খাবারে হাত ধুয়ে চলে গেলো।
অর্ষা বুঝলোনা প্রিয়ন্তির কি আছে। প্রান্তিক অর্ষার দিকে একটু তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। অর্ষা ভ্রু কুচকে বললো,” কি হলো ভাইয়া হাসছেন কেনো?
“কই হাসলাম? আর হাসি এমনিতেই চলে আসছে তোমার ফেইস দেখে।
” অর্ষা দাঁত কটমট করে কি যেনো বিড়বিড় করতে করতে উঠে চলে গেলো। এরপর প্রান্তিক আভেশের দিকে তাকিয়ে বললো,”কি হয়েছে বলতো? প্রিয় তোর সাথে কথা বলছেনা কেনো?
“উফ তোর বোন না? এমনতো করবেই…এটা বলে আভেশও চলে গেলো। প্রান্তিক দু হাত উঠেয়ে বললো,” যাক বাবা আমার বোন এমন করলেও আমার দোষ!
৫৯.
অর্ষা নিচে নামছে আর হা করে তাকিয়ে আছে সবাই। হলুদ টপ আর জিন্সে কতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা কমলা কালার লিপস্টিক। মিসেস মনিশা অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”মাশাল্লাহ। আমার মেয়েটাকে কতো সুন্দর লাগছে। পাশ থেকে প্রিয়ন্তি বললো,”বারে,এখন সব প্রশংসা অর্ষাই পাবে বুঝি? মিসেস মনিশা হেসে প্রিয়ন্তিকেও জড়িয়ে ধরলেন। প্রান্তিক এক মনে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে৷ ভাইয়া চলো যায় ভার্সিটিতে তাড়াতাড়ি যেতে হবে আজ” প্রিয়ন্তির কথায় কোনো হেলদোল নেই প্রান্তিকের।
“প্রিয়ন্তি হাত দিয়ে তড়ি বাজাতেই লাফিয়ে উঠলো প্রান্তিক বললো,” ক ক্ কিই হয়েছে?
“মন কই থাকে তোমার ভাইয়া?
” তোর বোনের কাছে..কথাটা এতোটাই চাপাভাবে বললো প্রান্তিক যে কারো কানে গেলোনা। প্রিয়ন্তি প্রান্তিকের মিনমিনানো কথা না বুঝে বললো, “ভাইয়া কিছু বললে?
” ক কই নাতো” চল…..
৬০.
এই তোমাকে না বলেছি? ঠোঁটে এইসব না দিতে? ছেলেদেরকে পাগল করার ইচ্ছে জেগেছে পাখি?
“মানে? কি বলছেন ভাইয়া? অর্ষার ভীতভাবে বলাতেও প্রান্তিকের রাগ একটুও দমে যায়নি। প্রান্তিক এখন এমন কাজ করলো যা অর্ষা কল্পনাও করেনি। অর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রান্তিক দেয়ালের সাথে অর্ষার হাত চেপে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। অর্ষা প্রান্তিকের এই কাজে হতবাক। প্রান্তিক অর্ষার ঠোঁট দুটো ছেড়ে, নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে বললো,” হুম এখন ঠিক আছে। ঠোঁটে কোনো আলগা আটা ময়দা নেই। অর্ষা ঘৃণার চোখে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেই। চোখে পানি তার। প্রান্তিক বাঁকা হেসে ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঠোঁটে হাত দিতে দিতে চলে গেলো অর্ষার কাছ থেকে।
“অর্ষা তাড়াতাড়ি আয় ক্লাস শুরু হবে বলে…প্রিয়ন্তির ডাকে অর্ষা তাড়াতাড়ি দুই উষ্ঠাদ্বর ঠিক করে নেয়।
৬১.
প্রান্তিক তোর কি হয়েছে বলতো? তোর মনে হয়না? অর্ষার জন্য তুই কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিস?
” শৈবাল এমনটাইতো কথা ছিলো তাইনা?
“তাই বল…
” প্রান্তিক শৈবালকে কিছু বলতে না দিয়ে বললো,”অর্ষার সময় প্রয়োজন তাই এখনো পিছিয়ে আছি আমি..এইটা বলেই প্রান্তিক ফোন টিপায় নজর দিলো। শৈবাল একটা গোপন নিশ্বাস ফেললো। একমাত্র শৈবালই প্রান্তিকের একটু বেশি ক্লোজ। তাইতো সে সবটা জানে।
৬২.
লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়ছে অর্ষা। প্রিয়ন্তি গেছে ক্যাম্পে। হঠাৎ একটা ছেলে এসে বললো,”হেই আর ইউ নিউ???
“জ্বি ভাইয়া আমি নিউ” অর্ষা খেয়াল করে দেখলো ছেলেটার সাথে আরো কয়েকটা ছেলে আছে। তারা কেমনভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে বললো,”আমি নিশাত” তোমার ২ বছরের সিনিয়র” ক্লাস।
অর্ষা হেসে বললো,”ওহ আচ্ছা।
“তোমার একটা কাজ করতে হবে” অর্ষা ঘাবরে বললো,”কি কাজ ভাইয়া? নিশাত কেমন একটা হাসি দিয়ে যেনো বললো,”আরে ভয় পেয়োনা। কাজটা একদম সহজ। এরপর নিশাত আর ওর বন্ধুরা ব্যাগ থেকে যা বের করলো তা দেখেতো অর্ষা প্রায় হচকিয়ে যায়। অর্ষাতো মনে মনে বলেই ফেললো”আল্লাহ এইবার এইসব কাজ থেকে আমাকে রক্ষা করে নাও প্লিজ প্লিজ।
চলবে…….
এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ০৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৬৪.
প্রিয়ন্তি ক্যাম্প থেকে এসে দেখে অর্ষা মন খারাপের ফেইস নিয়ে গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর বসে আছে।
“কিরে অর্ষা কি হয়েছে তোর?
” এই নে দেখ এইগুলা”
“হায় আল্লাহ এসাইনমেন্টের খাতা! কে দিয়েছে? নিশ্চয়ই সিনিয়র ভাইয়ার?
” হুম। কয়েকটা ভাইয়া আমাকে এতোগুলো খাতা ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে গেলো.”
“১৮ টা খাতা! এতগুলো কে লিখবে?
” আমিতো সেইটাই ভাবছি। এমনিতেই নিজেদের খাতা লিখতে লিখতে হাপিয়ে যায় সোই জায়গায় ওদের খাতা তাও একটা না দুইটা না ১৮ টা।
“আমি এইসবে নাই বইন আমার। তোকে দিছে তুই করবি”।
” ওফ আমিতো জানতামি। তোর মতো শয়তান কি আর আমাকে হেল্প করবে নাকি? চল এখন বাসায় যায়। লেইট হয়ে যাচ্ছে।
“হুম হুম চল। এইটা বলেই অর্ষা আর প্রিয়ন্তি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে পড়লো।
৬৫.
অর্ষা আর প্রিয়ন্তি দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির গেইটে। অর্ষা হাতের ঘড়িতে সময়টা দেখে বিরক্ত নিয়ে বললো,” ওফ তোর ভাই কই বলতো? এতোক্ষণ লাগে আসতে? গরমে একদম ভালো লাগছেনা দাঁড়াতে।
“দাঁড়া ভাইয়াকে একটা কল দেয়…প্রিয়ন্তি কানে ফোন নিতে যাবে এমন সময় প্রিয়ন্তি দেখলো প্রান্তিক বাইকে করে আসছে। প্রিয়ন্তি ফোনটা ব্যাগে রেখে মুচকি হেসে বললো,” এইতো ভাইয়া চলে এসেছে। প্রিয়ন্তির কথা শুনে অর্ষা রাস্তার ওপাশে তাকালো। দেখলো প্রান্তিক আসছে।
“হাতে কি?
” এসাইনমেন্ট”
“সিনিয়রদের?
” হুম” প্রান্তিক অর্ষার হাত থেকে এসাইনমেন্টের কাগজগুলো রাস্তার পাশে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
“আরে আরে কি করলেন? এইটাতো ওদের কাজের খাতা।
” সে আমি কাল বুঝে নিবো। এইবার বাইকে উঠো। প্রিয়ন্তি বললো,”আরে অর্ষা বাইকে উঠলে আমি কোথায় বসবো? প্রান্তিক গম্ভীর কন্ঠে বললো,”ওইতো পেছনে রহিম চাচা গাড়ি নিয়ে আছে। তুই কারে করে বাসায় চলে আয়। প্রিয়ন্তি ভাইয়ের গম্ভীর কন্ঠে নরম হয়ে গেলো। আর বললো,”আচ্ছা”।
“না না আমি প্রিয়ন্তির সাথে যাবে ভাইয়া আপনি বাইকে একাই চলে যান। অর্ষার কথা শুনে প্রান্তিক রাগে কটমট করে বললো,” তোমাকে এতো কথা বলতে বলেছি? চুপচাপ পিছনে বসো। কি আর? অর্ষা বেচারি ভয়ে গুটিসুটি মেরে পিছু বসলো।
৬৬.
প্রিয়ন্তি নিজের রুমে ঢুকতেই অবাক। চারিদিকে বেলুন দিয়ে মাঝখানে পেপারে লিখা “Sorry” প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে পুরো ঘর দেখছে আর গুটিগুটি পায়ে রুমে ডুকছে। হঠাৎ দেখলো কেউ একটা বেনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে লিখা”Im Really Sorry” বেনারটা সরাতেই প্রিয়ন্তি দেখলো আভেশ। প্রিয়ন্তি আভেশকে দেখে যা বুঝার বুঝে নিলো৷ প্রিয়ন্তি গাল ফুলিয়ে ব্যাগটা রেখে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় আভেশ তার পথ আটকে দুই হাত দুই কানে দিয়ে অনুরোধের কাতর ভাবে ভাব নিলো”
“প্রিয়ন্তি আভেশের এহেন কান্ডে ফিক করে হেসে দিলো। আভেশ হেসে বললো,” যাক বাবা রাগীনি কন্যার রাগ ভেঙেছে তবে!
“সে আর বলতে? তোমার মুখ দেখোইতো সব রাগ হাওয়া..
” বলছিস?
“হুম ১০০%।
” বাহ তাহলে আমার মুখে আলাদা একটা ম্যাজিক আছে বল..?
“মুটেওনা।
” আছে আছে আমি জানি”।
“আচ্ছা বাবা আছে এখন যাওতো..আমি ফ্রেশ হবো।
” হুম যাচ্ছি। প্রান্তিক কোথায়?
“ওরা বাইকে করে আসছে। আমি গাড়ি দিয়ে এসেছি তাই ওদের আগে বাসায় পৌঁছেছি।
” ওহ আচ্ছা। আমি যাই গোসল করবো।
আভেশ প্রিয়ন্তির রুম থেকে চলে যেতেই..প্রিয়ন্তি কি একটা ভেবে যেনো লাজুকভাবে হাসে।
৬৭.
অর্ষা বাইক থেকে নেমে যেই যেতে যাবে এমন সময় প্রান্তিক তার হাত ধরে বললো,”আসলেই তুমি অনেক অবুঝ তাইনা?
“মানে?
প্রান্তিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,” না কিছুনা। যাও তুমি আমি একটা কাজ সেরেই বাসায় ফিরছি। অর্ষা মুচকি হেসে বলে,”আচ্ছা ভাইয়া”।
৬৮.
আসতে পারি? ভেজা চুলগুলো গামছা দিয়ে ঝাড়ছিলো অর্ষা। হঠাৎ আভেশকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে বললো,”হুম ভাইয়া আসুন আসুন।
“ভার্সিটি থেকে কখন এলে?
” এইতো ভাইয়া আধাঘন্টা হলো। কিছু বলবেন ভাইয়া? আভেশ এক ধ্যানে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। কি অপরুপ লাগছে অর্ষাকে ভেজা চুলে। আসলে একটা কথা সবসময় সত্যি সব মেয়েদেরকে ভেজা চুলে একটু বেশিই সুন্দর লাগে। আভেশ মনে মনে ভাবলো,”আসলেই এই মেয়েটার মধ্যে অসাধারণ কিছুতো একটা আছেই। অর্ষার ইতস্তবোধ হচ্ছে আভেশের এইভাবে তাকানো দেখে তাই সে ডাকলো..ভাইয়া..
অর্ষার ডাকে ভাবনা থেকে ফিরে আসে আভেশ। নিজের এহেন কাজে বেশ লজ্জা পেলো সে। বললো,”আসলে..তোমার কাছে কোনো গল্পের বই আছে? আসলো আমার সবগুলো বই পড়া শেষ।
“অর্ষা হেসে বললো,” এক মিনিট বসুন ভাইয়া আমি দিচ্ছি। অর্ষা গিয়ে তার ব্যাগ থেকে..সমরেশ মজুমদারের “সাতকাহন ” বইটা বের করে আভেশকে দিলো। আভেশ হেসে বিনিময়ে বললো,”ধন্যবাদ” এইটা বলেই আভেশ বেরিয়ে পরে অর্ষার রুম থেকে। অর্ষা একটু হাসে আর ভাবে,”আসলেই বই অবসর জীবন কাটানোর একটা হাতিয়ারো বটে”
৬৯.
প্রান্তিক বাসায় ফিরে রাত ১১ টাই। সদর দরজা খোলাই ছিলো। মনিশা চৌধুরীকে কল করে প্রান্তিক বলে দিয়েছে তার আস্তে লেইট হবে।
অর্ষার ঘুম আসছিলোনা। তাই সে পড়ছিলো। হঠাৎ পানি তৃষ্ণা পেতেই সে নিচে গেলো। অন্ধকার জুড়ে আছে পুরো ড্রইংরুম। হঠাৎ অর্ষা একটা ছায়া মর্তি দেখে ঘাবরে যায়। ভূ…অর্ষা চিৎকার করতে যাবে হঠাৎ প্রান্তিক তার মুখ হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে। বলে…এই চুপ চুপ আমি প্রান্তিক। অর্ষা এইবার চুপসে গেলো। এখনো তার মুখে ভয়ের প্রতিছাপ। অর্ষা দুই কোমড়ে হাত গুজে ভ্রু কুচকে বললো,”আপনি এইভাবে এইখানে ভূতের মতো ছিলেন কেনো? অর্ষার এমন ফেইস দেখে প্রান্তিক একটু হেসে ফেলে। প্রান্তিক পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে নিজেও অর্ষার মতো ভঙ্গিমা করে বললো,”ভীতুর রাণী তা তুমিওতো এইখানে ভূতের মতোই দাঁড়িয়েছিলে তখন?
“সেতো আমি পানি খেতে এসেছিলাম” টর্চ ছিলোনা তাই…
“বুঝলাম মিস। প্রান্তিক এইবার অর্ষার হাত একটা হেচকা দিয়ে নিজের কাছে অর্ষাকে আনে। এক হাত দিয়ে অর্ষার কোমড় আরেকহা অর্ষার গালে রেখে বললো,”চোখে কি আছে বলোতো?
অর্ষা ঘাবড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে..ক ক্ কি?
” প্রান্তিক অর্ষার কপালে একটদ কিস করে অর্ষার চুলগুলো ফু দিয়ে সাইড করে দিয়ে বললো,”চোখে কি আছে তোমার?
“অর্ষা তোতলিয়ে বললো,” কা কা্ কাজল।
অর্ষার এমন উত্তরে হোহো করে হেসে ফেলে প্রান্তিক। অর্ষার কোমড় ছেড়ে অর্ষার দুই গাল ধরে বললো,”পিচ্চি একদম। অর্ষা থতমত খেয়ে গেলো। প্রান্তিক অর্ষাকে শান্ত ভঙ্গিতে বললো,”কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখো কালই আমরা সেনাইঝড়িতে যাবো। অর্ষা খুশিতে চিৎকার করে বললো,”সত্যি? প্রান্তিক তাড়াতাড়ি অর্ষার মুখ চেপে ধরে বললো, ওফ অর্ষা আসতে সবাই জেগে যাবেতো। আর হুম সত্যিই যাচ্ছি কাল। অর্ষা খুশিতে বললো,”আচ্ছা তো আমি যাই সবকিছু গুছায়। অর্ষা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। আর প্রান্তিক বিরক্ত নিয়ে ভাবছে, নিজেকে কন্ট্রোল করা বড় দায় হয়ে পড়ছে।
৭০.
সকালের স্নিগ্ধ হাওয়ায় অর্ষার খোলা চুল উঠছে। সারা রাত বাড়ি যাওয়ার আনন্দে ঘুমই হয়নি তার। নামাজ পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ দেখলো পাশের বেলকনিতে আভেশ। প্রান্তিকের সাথে ঘুমায় বোধহয়। অর্ষা মুচকি হেসে বললো,”আরে ভাইয়া কখন উঠলেন?
“এইতো অর্ষা নামাজ পড়তে সকালে উঠেছি।
” প্রান্তিক ভাইয়া উঠেনি?
“না আসলে অনেক রাত অব্দি কাজ করেছেতো তাই উঠতে পারেনি।
” কি কাজ?
“কিছুদিন পর প্রান্তিক কোম্পানিতে জয়েন করবে বলে ডিসাইড নিয়েছে।
” ও ভালো” আনমনে আভেশের সাথে কথা বলে চলে যায় অর্ষা। আভেশের যেনো কেনো ভালো লাগে অর্ষাকে। অতি শান্ত একটা মেয়ে। সকালের প্রকৃতির সাথে যেনো তার আলাদা একটা ভাব। প্রকৃতি যেমন সকালে শান্ত, মেয়েটাও তেমন। “Nature Queen” নিজের এমন ভাবনা দেখে নিজেই খিলখিল করে হেসে ফেলে আভেশ।
চলবে….