এক_তুমিতে_আসক্ত #পার্টঃ২৪,২৫

0
2239

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৪,২৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মোঘ
পার্টঃ২৪

১৫৮.

‘বউ রেডি হও ভার্সিটিতে নিয়ে যাবো।

হঠাৎ প্রান্তিকের মুখে ‘বউ’ ডাক শুনে ভরকে যায় অর্ষা। তার কাছে এখনো তার আর প্রান্তিকের বিয়েটা একটা বাজে স্বপ্ন লাগছে।

‘কি হলো যাও’

‘আপনি আমাকে বউ ডাকলেন কেনো?

‘আমার বউকে আমি বউ ডাকবোনা?

‘দেখুন আমি আবারো বলছি যে আমি এই বিয়ে মানিনা।

প্রান্তিক হাঁটু থেকে বালিশটা নামিয়ে ল্যাপ্টপটা ডাউন করে কেবিনেটে রেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পকেটে দুই হাত গুজে অর্ষার দিকে এক পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। ‘মেয়েটা সদ্য গোসল করে এলো। পড়নে একটা নতুন চাকচিক্য শাড়ি। ভেজা চুল থেকে টুপটুপ পানি পড়ছে পেছনে। যার ফল স্বরুপ পিঠে শাড়ির অংশটা ভিজে লেপ্টে আছে। প্রান্তিক এইভাবে অর্ষার দিকে তাকাতেই অর্ষা রাগে কটমট করতে করতে বারান্দায় গেলো তোয়ালে ছড়িয়ে দিতে। পিছন ফিরতেই প্রান্তিকের বুকে মাথা লেগে ধাক্কা খায় সে। প্রান্তিক এক ধ্যানে তাকিয়ে বললো,

‘বউ রেডি হও। তোমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আমাকে অফিস যেতে হবে।

‘আমি আপনার সাথে কোথাও যাবোনা৷ কোথাও না। শুনেছেন আপনি? শুনেছেন? অর্ষার এই আধো চিৎকার করা কথা গুলো শুনে প্রান্তিক মিনমিনিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,

‘না আমি শুনিনি। আর তুৃমি বললেও শুনবোনা। বুঝাতে চাইলেও বুঝাবোনা। সো হাররি আপ তৈরী হয়ে নাও আমি গোসলে যাচ্ছি।

১৫৯.

প্রিয়ন্তির মুখে অর্ষার বিয়ের কথা শুনে ক্ষানিক অবাক হয় তাইফা। সে বললো,

‘অর্ষা মেনে নিয়েছে?

‘নাগো আপি। অর্ষা মানবে। তবে আমার ভাইয়াকেতো ওহ চিনেনা। ঠিক ভালোবাসিয়ে ছাড়বে।

“আচ্ছা প্রিয়ন্তি বিয়ে এতো নিরবতা অনুসারে হয়েছে অনুষ্ঠান হবেনা?

‘হুম হবে। ভাইয়া বলেছে ঝাঁক ঝমক ভাবে তখনি বিয়ে হবে যখন অর্ষা এই বিয়ে মানতে চাইবে। আপু ওহ কে?

‘ওহ আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড রিমি।

‘হাই বনু।

‘হাই আপি।

প্রিয়ন্তি হেসে তাইফা আর রিমিকে বললো,

‘আপুরা আমি যায় ভার্সিটিতে যাবো। আর তোমরা গেলে রেডি হয়ে নাও। একসাথে না হয় বের হবো। রিমি সাথে সাথে বলে,

‘হুম হুম। আমরা যাবো। তুমি যাও আমরা রেডি হয়ে আসছি।

আর এইদিকে তাইফা মনে মনে ভাবছে,

‘এই একটা সুযোগ। যখন ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তখন মামনিকে এইখানে আনতে হবে।

১৬০.

কিরে অর্ষা থুক্কু ভাবী..কেমন ফিলিংস হচ্ছে?

প্রিয়ন্তির এমন রম্য কথাতে অর্ষা চোখ শক্ত করে তাকায় তার দিকে। প্রিয়ন্তি অর্ষার এই রাগ পাত্তা না দিয়ে পুনরায় আবার বললো,

‘আমার ভাইটা তোকে কতো ভালোবাসে আর তুই….

‘ওনি জেদ দেখায় ভালো না বাসার তাইনা বউ?

হঠাৎ এমন কথা শুনে প্রিয়ন্তি আর অর্ষা দরজার পানে তাকায়। দেখে প্রান্তিক মোবাইল টিপতে টিপতে আড়ঁচোখে তাকিয়ে কথাটা বললো। প্রিয়ন্তি মুচকি হেসে ঘর থেকে চলে যায়।

অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘প্রিয়ন্তির সামনে আমাকে বউ বউ ডাকছেন কেনো? আপনারতো দেখছি লজ্জা সরম কিছুই নেই।

প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে ফোনটা পকেটে রেখে বললো,

‘আমার বউকে বউ ডাকবো নাতো বইন ডাকমু?

‘আমিতো আপনার বোন ওই হয়।

‘খালাতো বোনকে বিয়ে করা যায় বউ। ১০ মিনিট দিলাম এর মধ্যে রেডি না হলে…..

‘থ্রেট করছেন?..

‘নাগো বউ জাস্ট আদেশ করছি..এইটা বলেই প্রান্তিক মুখে শিষ দিতে দিতে বেরিয়ে যায়। অর্ষার মুখে বিরক্তিতে ফোঁটে উঠে,

‘আজব লোক। আমি এই বিয়ে কিছুতেই মানিনা। আর মানবো ওনা।

১৬১.

খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। নাফিস সরদারের দিকে পরক্ষনেও তাকাচ্ছেনা অর্ষা। নাফিস সরদার সব বুঝতে পারছে তাই তিনিও আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাচ্ছেনা। মেয়ে তার বড় অভিমানী। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাবার খাচ্ছে আর অর্ষা এইসব দেখে রাগে কটমট করতে করতে মনে মনে প্রান্তিকের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছে।

‘প্রিয়ন…তাইফা আর রিমি এসে দেখে সবাই খেতে বসেছে।

‘সরি সরি আসলে আমরা জানতাম না যে তোমরা খেতে বসেছো।

‘আরে তাইফা আপু এমনভাবে বলছো কেনো? রিমি আপুকে নিয়ে খেতে বসো।

‘না প্রিয়ন্তি আমরা খেয়েই বের হয়েছি। আর অর্ষা তুমি ভার্সিটি যাবেনা?

‘হুম আপু যাবো। বসোনা তোমরা। খেয়ে নাও।

‘নাগো সত্যিই আমরা খেয়ে নিয়েছি।

তাইফা এক পলক ফরহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রিমিকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো৷ আর যাওয়ার সময় প্রিয়ন্তিকে বললো,

‘আমরা ওয়েট করছি৷ জলদি চলে এসো।

১৬২.

সাহেরা বেগম তাইফাকে কল করেই যাচ্ছে তার কোনো হেলদোল নেই।

‘কিরে তাফু আন্টির কল ধর।

‘না

কেনো?

‘মামনি কান্না করবে কলটা ধরলেই।

‘অন্য কিছু ওতো বলতে পারে।

‘হুম তা ঠিক। দাঁড়া একটু আমি কথা বলি।

তাইফা ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে সাহেরা বেগমকে কল ব্যাক করলো।

‘মামনি কেমন আছো?

‘কল ধরতে এতোক্ষন লাগে?

‘না মানে..ওইতো রাস্তায় তাই। ঔষধ খেয়েছো?.

‘হুম খেয়েছি। শোন না…তুই কোন ভার্সিটিতে যেনো পড়িস? ঢাকা ভার্সিটি তাইনারে?

‘হুম। কেনো বলোতো মামনি?

‘না কিছুনা। শুন না..আমি এখন কলেজ যাবো তুই সাবধানে যাস কেমন?

মাম…তাইফা কিছু বলার আগেই কলটা ওপাশ থেকে কেটে দেয় সাহেরা বেগম।

‘কিরে আন্টি কি বলেছে?

‘আজব। মামনি হঠাৎ ভার্সিটি কোনটা এইটা জানতে চাইলো কেনো?

‘কিরে বল।

রিমির ডাকে তাইফা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। তাইফা বলে, না না কিছু হয়নি৷ তাইফা দেখলো প্রান্তিক,অর্ষা প্রিয়ন্তি ওরা বের হচ্ছে।

১৬৩.

প্রিয়ন্তি,তাইফা আর রিমি এক গাড়িতে আর প্রান্তিক অর্ষা অন্য গাড়িতে। প্রান্তিক ড্রাইভ করতে করতে বলে,

‘মানুষ দেখি জামাইকে কতো ভালোবাসে আর আমার বউ! একটা করলা।

প্রান্তিকের এমন অদ্ভুত জথা শুনে অর্ষা অবাক হয়ে রেগে বলে,

‘কিই? আমি করলা তাইনা? আমি করলা??????? আলতো চিৎকার করে কথাটা বলাতে প্রান্তিক এক হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো,

‘ইশশ আস্তে এখনিতো আমার কানটা ফেটে যেতো। আর আমি ভুল কি বললাম? তুমিতো করলাই৷ তিতা মানুষ মুখে একটু মধু ও নাই। প্রান্তিক কথায় অর্ষা ভীষণ রেগে যায়। সে বললো,

‘কি? আমি তিতা না? আমি তিতা? বুঝাচ্ছি মজা..এইটা বলেই অর্ষা প্রান্তিকের চুল মুঠোয় করে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। ক্ষানিক পরে ঠোঁট দুটো ছেড়ে দিয়ে জানালার বাইরে মাথা রাখে। অকল্পনীয় এই ঘটনায় ভীষম খায় প্রান্তিক৷ আর অর্ষা নিজের এহেন কান্ডে হতবাক। কি করতে কি করে বসেছে সে! প্রান্তিক অবাক হয়ে পরে মিটিমিটি হেসে বললো,

‘বাহ্ বউ তোমার মুখেতো অমৃত আছে।

‘আপনাকে…আ আমি..

‘ইশ বউ তোমাকে রাগলেনা? পুরা লাল টুকটুকে টমেটো লাগে।

‘কিই? টমেটো!

‘হুম গোল টমেটো। এইটা বলেই মুচকি হাসে প্রান্তিক।

১৬৪.

ভার্সিটিতে অর্ষাকে নামিয়ে চলে যায় প্রান্তিক। যাওয়ার সময় স্পষ্ট ভাবে বলেছে যেনো কোনো ছেলে বিরক্ত করলে,

‘প্রান্তিকের নাম বলে।

প্রিয়ন্তি রিমি আর তাইফা অর্ষার কাছে আসে। তাইফা প্রিয়ন্তিকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,

‘তোর মুখতো লজ্জায় সোহাগা হয়ে গেছে কেনোরে?

‘লজ্জা? ওমা লজ্জা পাবো কেনো?.

‘তাহলে তোমার মুখটা লজ্জাবতী হয়ে আছে কেনো গো?

‘রিমি আপু তোমরা কি যে বলো আল্লাহ এই জানে চলোতো ভেতরে যায়।

১৬৫.

অর্ষা ভয়ে ঘাবরে তাইফা রিমি আর প্রিয়ন্তিকে আকঁড়ে ধরে আছে। সামনে পরে আছে আহত একটা ছেলে। আর প্রান্তিক হাতের মুঠোয় শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে শৈবাল,ইরফান অনিক। তারা সবাই প্রান্তিক কে শান্ত করার চেষ্টায় ব্যাকুল হয়ে আছে।

একটু আগে…..

প্রিয়ন্তি আমি আগে যায় তুই রিমি আর তাইফা আপুকে নিয়ে ভার্সিটির গেইটে আয়। ক্লাস শেষতো তাই ভালো লাগছেনা বসতে।

‘ওকে।

অর্ষা মাঠে যেতেই একটা ছেলে হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ ফুলের তোড়াটা ধরে বলে উঠলো,

‘আপনাকে আমি ভালোবাসি’

ব্যাস অনিক কল করে বলে দিয়েছে প্রান্তিক কে।

‘তোকে না বলেছি? কোনো ছেলে কিছু করলে আমার নাম বলতে?

‘আ আ..

‘ভাইয়া তুমি অর্ষাকে বকছো কেনো?

‘প্রিয় চুপ থাক। কি হলো বলো বলিনি আমি?

‘আ আমার কোনো দোষ নেই বিলিভ করেন। আ আসলে..

‘গাড়িতে গিয়ে বসো।

‘কি হলো গাড়িতে গিয়ে বসো…প্রান্তিকের ধমকে অর্ষা তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়িতে বসে। আর মনে মনে আল্লাহকে বলে,

‘আল্লাহ এইবার বাঁচিয়ে দাও প্লিজ।

?প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা রমজান মাস তাই গল্প ছোট ছোট করে দিতে হচ্ছে। কিন্তু ছোট করে হলেও আমি প্রতিদিন গল্প দিবো। মানিয়ে নিবেন। কারণ রোযা রেখে কষ্ট হয়ে যায়। আবার পরীক্ষাও সামনে তাই প্রবলেম হচ্ছে। ধন্যবাদ❤️

চলবে….

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

১৬৬.

ভার্সিটি থেকে আসতেই প্রান্তিক কাউকে কিছু না বলে সোজা উপরে উঠে যায়। প্রিয়ন্তি অর্ষা তাইফা আর রিমি বসে পরে বসার রুমে। অর্ষা ঘাবরে আছে। মনিশা চৌধুরী আর রাহেলা বানু ওদের সবার মুখে চিন্তার ভাব দেখে বললো,

‘কিরে কি হয়েছে প্রিয়?

‘আরে আম্মু আজকে অর্ষাকে একটা ছেলে প্রপোস করেছিলো। ভাইয়া তার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে।

‘ওমা কি কস?

‘হুম খালামনি সে আর বলি কি? তোমার মেয়েতো ভয়ে সোজা আমার পিছে লুকিয়ে ছিলো।

‘হেরে প্রিয় প্রান্তিক ভীষণ রেগে আছে তাইনা?

‘জ্বি আন্টি ভাইয়া ভীষণ রেগে আছে।

‘তাইফা তোমরা অর্ষার সাথে ছিলানা?

‘জ্বি আন্টি তবে অর্ষা একটু আগে বের হয়েছে বলেই এতোকিছু হয়েছে।

অর্ষা….এই অর্ষা…প্রান্তিকের ডাকে চমকে উঠে অর্ষা। মনিশা চৌধুরী বললো,

‘কিরে অর্ষা আমার ছেলেটা ডাকছে তোকে যা।

‘খালামনি..মানে..

‘আরে ভয় পাসনা তোকে বকা দিবেনা।

‘যদি দেয়?

‘দিবেনা। যদি বেশি রেগে থাকতো তাহলে এতোক্ষণে সব ভেঙ্গে ফেলতো। আর এখন তোকে ডাকছে তাই আমি জানি প্রান্তিক বেশি রেগে নেই।

মনিশা চৌধুরীর সাথে প্রিয়ন্তিও বললো,

‘হে হে অর্ষা তুই বরং যা।

অর্ষা কিছু বলার আগেই উপর থেকে প্রান্তিক আবার বললো,

“এই তুমি শুনোনা আমি ডাকছি? এতোক্ষণ লাগে আসতে?

অর্ষা এইবার দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যায়।

১৬৭.

অর্ষা পা টিপে টিপে দরজার সামনে যায়। শাড়ির আঁচলটা এক হাত দিয়ে ধরে রুমে উঁকি দেয়।

‘বেলকনিতে এসো’

প্রান্তিকের গম্ভীর কন্ঠ শুনে অর্ষার ভেতরে পানি শুকিয়ে গেছে। সে ধীরে ধীরে বেলকনিতে যায়। অর্ষা যেতেই প্রান্তিক অর্ষাকে উল্টো করে গ্রিলের মুখোমুখি মুখ করিয়ে কোমর ধরে ওর কাঁধে থুতনি রাখে। অর্ষা বার বার বলছে,

‘কি করছেন ছাড়ুন। ছাড়ুন প্লিজ।

প্রান্তিক অর্ষার কোমড়ে হাত রেখে কাঁধে থুতনি রেখে বললো,

‘আকাশ অনেক সুন্দর তাইনা বউ?
কিন্তু এই আকাশ এতো সুন্দর কেনো জানো?

অর্ষা চুপ হয়ে আছে। সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে ব্যর্থ।

‘কি হলো? বলো জানো?

‘অর্ষা অস্ফুটে উত্তর দেয়, না।

‘এই নীল আভার জন্য।

প্রান্তিক অর্ষার কোমর ছেড়ে দিয়ে অর্ষার দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এক ধ্যানে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে সে। অস্ফুটে বললো,

অর্ষা…

প্রান্তিকের এইভাবে তাকিয়ে থাকা আর এমন আসক্ততার ডাকে অর্ষা কিছুটা কেঁপে উঠলো।

‘জ্বি বলুন।

‘এক_তুমিতে_আসক্ত আমি। ভালোবাসি তোমায়। বাসবে আমায় ভালো?

অর্ষা ঈষৎ কেঁপে উঠে শেষের কথাটায়। অর্ষা কিছু না বলে…হোট করে ওইখান থেকে বিদ্যুৎ গতিতে পা ফেলে স্থান ত্যাগ করে।

১৬৮.

‘অর্ষা ধর্ষনের শিকার হয়েছিলো’ ছোটবেলা তা জানলে অর্ষা কখনোই প্রান্তিক কে তার জীবনে জায়গা দিবেনা। ওর শুধু মনে হবে ওহ’ প্রান্তিক কে ঠকাচ্ছে।

‘আহা..ফরহাদ আস্তে বলো দেয়ালেরো কান আছে।

‘আমার এইটা বার বার মনে হচ্ছে তাইতো বলছি’.

হঠাৎ কোনো কিছু পড়ার শব্দে ফরহাদ চৌধুরী আর মনিশা চৌধুরী আতঁকে উঠে। দু’জনই ভয়ে পিছনে তাকায়। দেখে অর্ষা মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে। প্রান্তিকের কথা শুনে দৌঁড়ে অর্ষা নিচে নামতে যাচ্ছিলো। হঠাৎ এমন কথায় থমকে যায় তার পা। অর্ষা একবার পরে যাওয়া ফুলেট টবটার দিকে আরেকবার ওদের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে চলে যায় দৌঁড়ে।

১৬৯.

ড্রাইভ করতে করতে চারিদিকে বার বার দেখছে প্রান্তিক। অর্ষাকে পাগলের মতো ১ ঘন্টা ধরে খুঁজছে সে। বার বার কল আসছে শৈবাল,ইরফান অনিকের। সবার উত্তর একটাই ‘অর্ষাকে কোথাও পায়নি। হঠাৎ প্রান্তিকের চোখ যায় রাস্তার ওপাশের পার্ক টায়। সে কল কেটে তাড়াতাড়ি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তা পার হয়ে গেলো অর্ষার পাশে। মেয়েটার চোখ দু’টোতে গড়গড়িয়ে পানি পড়ছে। আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির তার। শাড়ির আঁচলটা মাটিতে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।

‘বউ…তুমি কাউকে কিছু না বলে কেনো এইখানে এসেছো?

অর্ষাঃনিশ্চুপ…

আম্মু আব্বু যা বলেছে তা কোনোটাই সত্যি নয়। অর্ষা এইবার প্রান্তিকের শার্টের কলার চেপে ধরে বললো,

‘কেনে? কেনো আপনি আমাকে বিয়ে করলেন? বলুন কেনো আমার থেকে লুকিয়েছেন আমার সাথে ছোটবেলায় কি হয়েছে? বলুন প্লিজ বলুন কে আমার এতো বড় সর্বনাশ করেছে? কেনো কেনো কেনে আপনি একজন ধর্ষিতাকে বিয়ে করেছেন?

অর্ষা পাগলের মতো কান্না করে প্রান্তিক কে এক নাগারে এইসব বলেই যাচ্ছে। প্রান্তিক কোনো উপায় না পেয়ে রেগে অর্ষাকে থাপ্পড় মারলো।

‘কি হয়েছে কি তোর? কোনো ধর্ষিতাকে বিয়ে করা পাপ নয়। আর এতে তো তোর কোনো দোষ নেই। দোষ আমাদের মতোই বিপরীত কিছু কাপুরুষ। ধর্ষিতা বলে কি নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখা পাপ? আমি তোকে ভালোবাসি বুঝলি? ভালোবাসি তোকে। আর ওই কুত্তা***সোহেল কেতো আমি কিছুতেই ছাড়বোনা। জেলে ছিলো এতোদিন। কিন্তু জেল থেকে পালিয়েছে। তোকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায়নি বলে আবার বিয়ে করেছি। কি অবাক হয়েছিস? আবার কেনো বলেছি জানিস? কারণ ছোটবেলাও আমাদের বিয়ে হয়ে ছিলো৷ তখন আমিও ছোট ছিলাম। কিন্তু তোর প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো অসীম। তাই খালুজান ওই জানু**চ্চাকে জেলে দেওয়ার পর আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক তখন সবার সামনে বলে উঠে আমি অর্ষা রাণীকে বিয়ে করবো।

ব্যাস হয়ে গেলো। আমার সব জেদ দিয়ে আমি সবাইকে বিয়েতে রাজী হতে বাধ্য করিয়েছি। এরপর থেকে তোর সব খেয়াল আমি রাখতাম। কথা ছিলো তুই ১৮ তে পা দিলে আবার বিয়ে হবে। তোর কি মনে হয়? এইখানে খালামনি তোকে এমনি এমনি দিয়েছে? আমার জন্য দিয়েছে শুধুই আমার জন্য।

অর্ষা অবাক হয়ে এইসব শুনছিলল হঠাৎ ঢলে পড়ে প্রান্তিকের বুকে।

‘অর্ষা এই অর্ষা কি হয়েছে তোমার? কথা বলো অর্ষা। ওহ মাই গড স্যান্সলেস হয়ে গেছে!

১৭০.

মনিশা চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কি থেকে কি হয়ে গেলো৷ তারা কল্পনাও করেনি যে অর্ষা শুনে ফেলবে। হঠাৎ দেখলো প্রান্তিক অর্ষাকে কোলে নিয়ে তড়িঘড়ি করে বাসায় ডুকছে।

‘অর্ষা এই অর্ষা কিরে প্রান্তিক কি হয়েছে মেয়েটার?

‘আম্মু সেন্সল্যাস হয়ে গেছে।

‘তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে যা ডক্টরকে কল দেয়।

‘হুম তাড়াতাড়ি কল দাও আব্বু। আর আম্মু এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে আসোতো।

‘আচ্ছা বাবা যা যা নিয়ে যা ওকে।

১৭১.

নাফিস সরদার আর রাহেলা বানু কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন। এতো আদরের মেয়ে তাদের। কি থেকে কি হয়ে গেলো? কিছুক্ষণ আগেও সব ঠিক ছিলো। আবার গ্রাম থেকে খবর এসেছে যেতে। চেয়ারম্যান বলে কথা যেতেতো তাকো হবেই।

‘রাহেলা ব্যাগ পত্র গোছাও।

‘আপনে কি কন? আমার মাইয়াডার এই অবস্থা..

‘এইখানে ওর আরেক মা বাবা আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রান্তিক বাপজান আছে। সেবার কমতি পরবেনা।

‘তবুও..

‘না রাহেলা আর কিছুইনা রেডি হও যাও।

১৭২.

অর্ষা চোখ খুলতেই প্রান্তিক তোয়ালেটা রেখে তড়িঘড়ি করে অর্ষার কাছে যায়। অর্ষার গাল বেয়ে পানি পরছে। প্রান্তিক তা মুছে দিয়ে অর্ষার ঘাড় ধরে আধশোয়াভাবে বসালো। টি-টেবিলে রাখা দুধের গ্লাসটুকু নিয়ে অর্ষার মুখ পানে ধরলো। অর্ষা নিরব হয়ে আছে। মুখে টু শব্দটাও করছেনা সে। নিরব হয়ে দুধ টুকুও খেয়ে নিলো এইবার।

প্রান্তিকের এখন ভীষণ ভয় করছে। অর্ষা হোট করে এতো নিরব হয়ে যাওয়াতে। ভালো ডক্টরের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে যেতে হবে অর্ষাকে.. এইটা ভাবতেই প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকায়। অর্ষার দৃষ্টি জানালার বাইরে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here