#মেঘ_রোদ্দুরের_আলাপন
#পার্টঃ০৯ এবং অন্তীম পার্ট
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৫৩.
জেইন রিশ এর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে চোখ টিপ মেরে চলে যায়। রিশ অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে ক্ষনিকখন চেয়ে থাকে।
‘এইটা কি হলো! শয়তানের নানা একটা। আমাকে এতো বছর অপেক্ষা করিয়ে এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে ভালোবাসা! নাক বেংচি কেটে কথাগুলো মিনমিনিয়ে বললো রিশ। হঠাৎ টু টু করে ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিতেই মুচকি হাসলো রিশ।
‘আহান ভাই কেমন আছো?
‘আর ভালো। নিহা তো আমার জীবন অর্ধেক বানায় ফেলতাছেরে বইন।
‘ওমা একদিনেই!
হঠাৎ ফোনের ওপাশ থেকে নিহা বলে উঠলো,
‘আপু দেখছো কি মিথ্যাবাদী? তবে যাই বলোনা কেনো এই মিথ্যাটাকে সত্য করতে হবে কি বলো আপু?
‘হুম হুম একদম।
‘ওই ম্ মানে [ আহান ]
এরপর আর কি! ওপাশ থেকে নিহা আর আহানের মাইর শুনা গেলো। [ হি হি হয়তো দাম্মুর দাম্মুর দিছে মাইর আহানরে ]
রিশ হাসতে হাসতে ফোনটা কেটে দিলো।
৫৪.
দাদীমা আমি এইটা আপনার জন্য বানিয়েছি।
‘ওমা আমার নাতবউ তো দেখছি বেশ ভালোই রান্না বান্না করতে পারে।
“শুধু তোমার নাতিকেই ভালোবাসেনা”
জেইনের কথায় আঁড়চোখে জেইনের দিকে তাকায় রিশ। জেইনও খাচ্ছে আর রিশের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।
“রিশ..
‘জ্বি বাবা।
” তোমাদের বিয়েটাতো হোট করে হয়ে গেছে যে তোমাকে কিছু দিতেই পারলাম না। এই নাও এইটা।
সেহের মেহেরিয়া রিশ এর দিকে একটা গয়নার বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো।
‘না বাবা আমার এইসব কিছুই লাগবেনা। আপনারা যে হঠাৎ এতো সুন্দরভাবে আমাকে মেনে নিয়েছেন এইটাই অনেক। এমন দেখা যায়না যে ছেলে হঠাৎ বিয়ে করে নিয়ে আসে সবাই মেনে নেয়।
‘মা জেইন ইতো আমাদের সব। আর আমার কোনো মেয়ে নেই। তুৃমিই আমার মেয়ে। তাই বাবা একটা জিনিস দিলে নিতে হয়৷ না করতে নেই৷ এই নাও।
রিশ একবার জেইনের দিকে তাকালো। কি করবো এইটা ভেবে। জেইন চোখের ইশারায় নিতে বলে। রিশ গয়নার বক্সটা নিয়ে হাসি মুখে বললো, ‘ধন্যবাদ বাবা।
“তুমিও খেতে বসো মামনি”
“না বাবা আপনারা আগে খান পরে আমি খাচ্ছি।
” বাপি বলছে খেতে বসার জন্য বসো।
জেইনের দিকে তাকাতেই রিশ চুপসে বসে গেলো। কি আর করা যেইভাবে ধমকে বলেছে।
“আহা দাদুভাই আমার বোনটারে বকতাছো ক্যান? ছোট মানুষ তাই বুঝতে পারেনি।
” জেইন চোখ বড় বড় করে বললো, ‘কি! ছোট মানুষ? গ্রেণি জানো? ওর বয়স ৫০ হয়ে গেছে।
‘এ্যাহ আপনার কি হুম? আপনারতো ১০০ বছর।
এদের ঝগড়া দেখে হো হো করে হেসে দেয় সেহের মেহেরিয়া আর রিতা মেহেরিয়া।
৫৫.
মিসকাত ভিডিও কলে বসে আছে৷ তার পাশেই রিলজেম। রিশ হেসে বলে “বাহ দাভাই আজকে একসাথে যে?
‘আর বলিসনা। আমাকে পুরো ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসছে আমাকে নিয়ে তোর সাথে ভিডিও কলে বসবে বলে।
” ওমা কি বলো! কিরে মিসকাত কেনো?
‘আরে ওরে অভ্যাস করাচ্ছি বুঝিসনা? ওহ যখন বিয়ের পর কোথাও যাবে সকাল সকাল উঠে যেনো আমাকে কল দিতে পারে।
‘ওমা এতোকিছু ভেবে রেখেছিস?
‘তা না ভেবে কি আর উপায় আছে?। আচ্ছা আগে বল প্ল্যানটা কাজ হলোতো? ট্রিট দে।
‘দিবো দিবো জান। তোর প্ল্যান এর জন্যইতো আমি এইখানে। পাশ থেকে দাভাই বললো,
“শয়তানি বুদ্ধির রানী বলে কথা।
রিলজেম এর কথায় ফিক করে হেসে দেয় রিশ। আর মিসকাত তো চোখ গরম করে তাকায় রিলজেমের দিকে।
৫৬.
এই যে জেদী রাণী সারাদিন শুয়ে আছো কেনো? শরীর খারাপ?
জেইনের কথায় রিশ বিছানার এই পাশে ফিরে তাকায়। শুয়ে থেকেই বলে,
‘বিয়েতো হয়ছে একটা শয়তানের নানার সাথে কিচ্ছু বুঝেনা। আনরোমান্টিক ভূত একটা।
‘এই এই একদম ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু। জেইন রিশ এর একদম সামনে এসে। চোখে চোখ রেখে বললো,
” আর যদি বলো রোমাঞ্চ এর কথা তাহলে…. দেখাবো নাকি?
‘ম্ মানে?
“জেইন আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিশে যায় রিশের সাথে।
৫৭.
রিশ গোসল করে এসে বেলকনিতে যায়। আজ জেইন তাকে পরিপূর্ণ স্ত্রী হিসেবে সম্পূর্ণতা দিয়েছে। রিশ বেলকনিতে গিয়ে তোয়ালেটা রশিতে ছড়িয়ে দিয়ে বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ তার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখেছে। রিশ বুঝতে পেরে বললো,
” অফিস যাবেন না?
‘উহু।
“কেনো?
‘নতুন বউ রেখে এতো তাড়াতাড়ি অফিস গেলে হবে?
” আহা। যখন ভার্সিটিতে পিছু পিছু ঘুরতাম তখনতো পাত্তাই দিতেন না। আর এখন? ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে?
‘একটা সত্যি কথা বলবো?
‘হুম।
‘আমিও তোমাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ভেবেছিলাম দেশে ফিরে তোমাকে সবকিছু বলবো। তার আগেইতো জানলাম তুমিও টিম এ জয়েন্ট। এরপর আরও বেশি খুশি হলাম যে তোমার সাথে মিশন। আবার ভয়ও পেয়েছি যে ক্যাপ্টেন ডন তোমার ক্ষতি করলে? পরেতো দেখলাম আমার ভয়টাই সত্যি হলো। ক্যাপ্টেন ডন তোমার সুযোগ নিয়ে বিডিতে অন্য একটা মেয়েকে পাঠিয়েছে।
রিশ মুখটা বেংচি কেটে বললো, থাক থাক হয়ছে।
“আগে বলো তুমি কি করে পারলে বিয়েতে বসতে?
রিশ হেসে হেসে বলে প্ল্যান।
জেইন অবাক হয়ে বললো মানে?
‘মিসকাত আমাকে বলেছিলো বিয়েতে রাজী হতে তো হলাম। তাও আসল নয় নকল বিয়ে। আহানের সাথে তার ভালোবাসা নিহার বিয়ে ছিলো সেদিন। কিন্তু আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্য একটা কার্ড নকল ভাবে তৈরী হয়। আপনি যদি বিয়েতে না আসতেন তাহলে সেন্সল্যাস হয়ে যাওয়ার অভিনয় করতাম। আর আমি জানতাম স্বাদ ভাইয়া আপনাকে সব বলবে। এরপর হয়তো আপনি আসবেন। কিন্তু ঘটনা ঘটলো অন্যটা। আপনি বিয়ের মেইন মোমেন্টে গিয়েই আমাকে নিয়ে আসেন।
জেইন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিশ এর দিকে। জেইন পরক্ষণেই রিশকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো, ” ভালোবাসি জেদী রাণী।
‘হুম আমিও তবে ওইতো একটাই আফসোস আমার নাতি নাতনি হলে গল্পতে শুনাতে হবে যেইখানে ছেলেরা ঘুরে মেয়েদের পিছে পিছে সেইখানে তার দাদু/নানু তার নানা/দাদাভাইয়ের পিছু ঘুরছে।
এইটা বলেই দুজনে ফিক করে হেসে দেয়।
________সমাপ্ত______
গল্পটা আমার ভাবনাতে এমনি ছিলো। গল্পের নাম #মেঘ_রোদ্দুরের_আলাপন দিয়েছি এই জন্য কারণ নায়ক নায়কার ভালোবাসার পূর্ণতার মাঝে সমাপ্তি ঘটবে।