#তোমার সমাপ্তিতে আমার প্রাপ্তি,পর্ব (১)
#রোকসানা_রাহমান
বাসর ঘরে ঢুকেই ঘোমটা ঢাকি সদ্য বিয়ে করা বউয়ের ঘোমটা টেনে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে তাজরান! চোখে তীব্র হিংস্র,মুখে শুকনা মরিচে মাখানো ঝাঝালো কণ্ঠ এনে বললো,
“তোরে বিয়া করে আনছি কি সবকিছু ঢেকে,হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার জন্য? এমন ঢেকে বসে আছিস কেন? তোরে উলঙ্গ করতে গিয়ে আমার সময় ব্যয় করাতে চাস? এতো বড় সাহস? আমার সময়ের অপমান করিস তুই??”
তাজরানের কথায় শিউরে উঠে তিহিনাজ। কিছু প্রহর আগেই সে এক অপরিতিচার সাথে বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হয়েছে। চোখের সামনে এমন হিংস্র চাহনি আর ঝাঝালো কন্ঠে রীতিমতো কেঁপে উঠছে তার পুরো শরীর! কন্ঠনালীটাও এতোটাই কেঁপে কেঁপে উঠছে যে সেখান দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছে না । তবুও কিছু বলার জন্য জড়তা কাটিয়ে ঠোঁট নড়াতেই তাজরান ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়েছে!
তিহিনাজের ওপর ঝাপিয়ে পড়েই ওর ঠোঁট টেনে ধরে বললো,
” এমন বিভৎস সাজ তোকে কে সাজতে বলছে?? তোর কি মনে হয় এই সব রং-ঢং মেখে সং সাজলেই পুরুষরা নারীর বশে চলে আসে? পুরুষদের বশ করার জন্য তোদের মতো নারীর নগ্ন শরীরই যথেষ্ট!”
তিহিনাজ আর কিছু বলার সুযোগ পায়নি,কিছু বলবে তো দুরে থাক,তার আর ভয়ে শিউরে উঠাও হয়নি,না হয়েছে একটু কেঁপে উঠা তার আগেই নিজের বস্ত্র টেনেটুনে ছিড়ে ফেলার আচড় অনুভব করছে নিজের শরীরে!
চোখের কোন বেয়ে অঝড় ধারাই নোনা জলের জলপ্রপাত বেয়ে যাচ্ছে। মনের অজান্তেই মনকণ্ঠে আর্তনাদ করে একটি নাম বের হয়ে এসেছে, ইশাদ! তুমি তো কথা দিয়েছিলে তোমার তিহি পাখির চোখে এক ফোঁটা পানিও ঝরতে দিবে না অথচ আজ আমার চোখে শুধু পানি নয় রক্ত ঝরছে,পুরো শরীরে জংলী জানোয়ার তার হিংস্র আক্রমনে দাগ কেটে দিচ্ছে। এমন নরকে তুমি আমাকে কেন ঠেলে দিলে? এই হিংস্র মানুষটার কাছে আমি আমার কণ্ঠে দুটো কথাও ফুটানোর সুযোগ পাইনি তাহলে তার জন্য আমার হৃদয় মাঝে কী করে ভালোবাসা ফোটাবো? আমি পারবো না ইশাদ! তোমাকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারবো না। কিছুতেই না। তোমার তিহি পাখি যে আজ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে!
তাজরানের হিংস্র আচড়ের সাথে,তিহিনাজ হারিয়ে যাচ্ছে এক রঙিন অতিতে! যেখানে ছিলো ভালোবাসার রংধনু যার সাতটি রঙে ঢেকে রেখেছিলো তার ছোট্ট জীবনটাকে!
__________
এক বিশাল গেটের সংলগ্ন দোতলা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার জন্য পা ফেলছে তিহিনাজ। এতো বড় রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি তাদের মতো এমন মফস্বল শহরে তেমন একটা নেই বললেই চলে। আজ এখানে না আসলে হয়তো এটা তার জানাও হতো না আর দেখাও হতো না৷ গেটের কাছটাতে গিয়ে থমকে গিয়েছে সে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে বেশ চিন্তিত! এতো বড় রাজপ্রাসাদ অথচ গেটে কোনো গেইট বাহিনী নেই? আশ্চর্য! ভেতরে ঢুকবে কী ঢুকবে না বুঝতে পারছে না তিহিনাজ। হাতের ছোট পার্সটা খুলে একটা কাগজ বের করে চোখের সামনে তুলে ধরে আছে। এটা তার ইন্টারভিউ ফর টিউশনির চিঠি। যেখানে নিচে ‘বিঃদ্রঃ’ দিয়ে দুবার উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক পাঁচটার মধ্যে সাক্ষাত করতে হবে,নাহলে সে সুবিধা বঞ্চিত লিস্টে চলে যাবে!
তিহিনাজ নিজের হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাতেই মনে পড়েছে,এটার ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছে! এখনো চেন্জ করা হয়নি। ইশ! কেন যে চেন্জ করলাম না,এখন বুঝবো কিভাবে কয়টা বাজে? আশেপাশে তো কাউকে দেখছি না যদি লেট হয়ে যায়? তিহিনাজ আরেকবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে না পেয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো!
ভেতরে ঢুকতেই ফুলের ম-ম গন্ধে তিহিনাজের মনটা নেচে উঠছে,উফ! কী মিস্টি গন্ধ! এমন গন্ধ পেলে তো দুবেলা ভাত না খেয়েও থাকা যাবে। পায়ের কদম ফেলে কিছুটা ভেতরে ঢুকতেই সরু পথের দুধার ঘিরে ফুলের বাগান। গোলাপ থেকে শুরু করে নাম না জানা অসংখ্য ফুলের বিচরন। তিহিনাজের বুঝতে বাকি রইলো না এই বাসার কেউ একজন আছে যার মনটাও এমন ফুলময় রঙে রাঙা নাহলে এতো সুন্দর গোছানো,এতো ফুলের সমারোহ কেন থাকবে?
একটু আগেও সে যে চিন্তিত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিলো তা অনেক্ষণ আগেই চলে গিয়েছে,এমন ফুলের মনোরম পরিবেশে যে কারো কঠিন চিন্তাও দূর হয়ে যাবে। ফুল যে তিহিনাজের খুব পছন্দ তা নয়,কিন্তু অপছন্দও নয়!
তিহিনাজ ফুলের গন্ধে নাক ডুবাতে ডুবাতে এগিয়ে যাচ্ছে ভেতরের রাজপ্রাসাদের মতো বিশাল বাড়ির সদর দরজার দিকে। কিছুটা এগুতে মনে হচ্ছে তার দিকে কেউ চেয়ে আছে,শুধু চেয়ে থাকছেই না সাথে মিটিমিটি হাসছে,যে হাসির কোনো ছন্দ নেই,শব্দ নেই আর গন্ধও নেই। তিহিনাজ আশেপাশে আবার চোখ বুলাচ্ছে কিন্তু কোথাও কাউকে না পেয়ে উপরে তাকাল। আর ঠিক তখনি মনে হলো কেউ একজন লুকিয়ে পড়েছে। তিহিনাজ বেশ কিছুক্ষন দোতলার লম্বা বারান্দাটার দিকে চেয়ে আছে,কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার সামনে এগিয়েছে।
সদর দরজার কাছে এসেও তিহিনাজ বেশ অবাক! এখানেও কেউ নেই? আর দরজাটা এমন খোলা কেন? কেউ থাকুক বা না থাকুক দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো থাকা উচিত ছিলো! তিহিনাজ মনে মনে এবার বেশ বিরক্ত ! কোথায় সে নানা মানুষের সম্মুখীন হয়ে দু,চার প্রশ্নের মুখোমুখি হবে,একটু সাহসী সাহসী মুখ নিয়ে বলবে,আমি এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছি,এই যে দেখুন আমার কাছে ইন্টারভিউয়ের লেটারও আছে!
নাহ! তার সব চিন্তাভাবনা,কল্পনাকে পানি করে দিয়েছে। বাসায় কি কেউ নেই নাকি? ভেতরে ঢুকলে আবার যদি চোর চোর বলে পিটানি শুরু করে? যদি জেলে ঢুকিয়ে দেয় তখন? তিহিনাজের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে,যে ভাঁজে রয়েছে বিরক্তের ভাঁজও। এভাবে ডেকে এনে কেউ থাকবে না? এটা কি ছেলে খেলা? আমি কত কষ্ট করে এসেছি,কতগুলো টাকার ভাড়া মিটিয়েছি,সেগুলোর কী হবে?
তিহিনাজ এবার রাগ নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করেছে। ভেতরে ঢুকেই পুরো মুখ হা! এতো সুন্দর? এরকম তো সে টিভিতে দেখেছে,আচ্ছা এই দেয়ালগুলো কি দিয়ে বানিয়েছে? কী মসৃন! আর এই যে সোফার কালারটাও কি চকচক! তিহিনাজ চোখ ভরে সবকিছুকে একে একে দেখতে দেখতে ঘেমে নেয়ে ফেলেছে। হঠাৎই তার মনে হচ্ছে এটা কোনো ভুতের বাড়ি! নাহলে এতো সুন্দর বাড়িতে একটা মানুষও কেন নেই? এমন তো নয় সে কোনো মায়াজালে আটকে পড়েছে? তিহিনাজের শরীর ঘেমে চুপসে যাচ্ছে। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম বড় হয়ে কানের কাছ দিয়ে বেয়ে আসছে। হাতের তালুটাও ঘামা শুরু করে দিয়েছে। এতো কিছু ভিজলেও তার গলাটা উল্টা রিয়েক্ট করছে,গলা ভিজে না উঠে শুকিয়ে যাচ্ছে।
তিহিনাজ ভয়ে ভয়ে নিজের সুতি ওড়নাটা দিয়ে ঘাম মুছতে নিলেই পেছন থেকে একটি হাত তার সামনে এগিয়ে আসে। হাতে একটি রুমাল!
“”ঘামগুলো মুছে নিন! নাহলে সর্দিতে ভুগবেন।”
হঠাৎ এমন খালি বাড়িতে ছেলে কণ্ঠ পেয়ে চমকে উঠেছে তিহিনাজ। পেছনে ঘুরে ছেলেটিকে দেখতেও পারছে না আবার হাত থেকে রুমালটি নিয়ে ঘাম মুছারও সাহস পাচ্ছে না।
ছেলেটি এবার পেছন থেকে সামনে এসে বলল,
” এখনও তো কিছুই শুরু করলাম না তার আগেই আপনার এ অবস্থা?”
তিহিনাজ আবারও চমকে উঠতে ছেলেটি বলল,
” আমি ইন্টার্ভিউয়ের কথা বলছিলাম। আমরা কি শুরু করতে পারি? নাকি আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামার শপথ পাঠ করবেন ভাবছেন!”
তিহিনাজ মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলতেই ছেলেটি সামনের একটি সোফাতে বসতে বলল। তিহিনাজ এখনও ছেলেটির দিকে তাকাতে পারছে না। বুকটা কেমন জানি ধরফর ধরফর করছে। বারবার মনে হচ্ছে এমন তীক্ষ্ণ কণ্ঠের মালিকটির চেহারাও তীক্ষ্ণই হবে। যে তীক্ষ্ণতাই সে সব ভুলে খেয়ে ফেলবে। আগে সে ইন্টারভিউটা কমপ্লিট করুক তারপর নাহয় দেখা যাবে!
ছেলেটি তিহির সামনা-সামনি একটা চেয়ার টেনে বসল। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন শেষ করে বলল,
“আপনার নাম?”
এই যা আমি তো আমার নামটাই ভুলে গেছি,এখন কী হবে?
“কি হলো নাম মনে নেই?”
তিহিনাজ আর নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনি। নিজের মনের কথা উনি কিভাবে বুঝতে পারল সে প্রশ্ন চক্ষু নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকাল। সরাসরি চোখে চোখ পড়তেও কোনো লজ্জা জাগেনি,বরং লোভ জাগছে। কে বলেছে এটা তীক্ষ্ণ চেহারা? মোটেও না এটা তো আদুরে চেহারা। যে চেহারা দেখলে শুধু আদর করতে মন চায়বে। তিহির জিজ্ঞেসা দৃষ্টি বদলে গিয়ে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে মুগ্ধতা। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে বসে থাকা একটি চকলেট কালারের টি-শার্ট আর ব্লু ট্রাউজার পরা এক সুদর্শন যুবকের দিকে। যার ছোট চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। ঠোঁটে তার মুচকি হাসি!
হঠাৎ করে ছেলেটি উচ্চ স্বরে হেসে উঠতেই তিহিনাজ নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলল,
“তিহিনাজ!”
“অনলি তিহিনাজ? আর কিছু নেই?”
“না।”
“কেন?”
” জানিনা!”
“ওকে। তিহিনাজ নামটা কেমন সেকেলে লাগছে তোমাকে বরং তিহি বলেই ডাকব।”
“হুম!”
“আমার নাম ইশাদ। পুরো নাম ইশাদ চৌধুরী।”
তিহিনাজও বিড়বিড় করে বলল,আপনার নামটাও কেমন সেকেলে লাগছে,আমিও ছোট করে ইশ! বলে ডাকব।
“কিছু বললেন?”
তিহিনাজ কিছুটা নড়েচড়ে বলল,
“না তো! আপনার কি ইন্টারভিউ নেওয়া শেষ?”
” জ্বী না, মাত্র তো শুরু। তা আপনি কিসে পড়েন?”
” অনার্স প্রথম বর্ষ!”
“তারমানে পিচ্চি! দেখেই বুঝেছিলাম। ফ্যামিলিতে কে কে আছে?”
তিহিনাজ একটু কঠিন স্বরেই বলল,
“আম্মু,আমার ছোট বোন আর আমি।”
ইশাদ কিছুটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিমাই বলল,
” তোমার ও ছোটবোন আছে?”
“থাকবে না কেন?”
“তুমি তো নিজেই পিচ্চি,তার মধ্যে আবার পিচ্চিবোন! কেমন জানি বেমানান লাগছে।”
তিহিনাজের রাগ হচ্ছে,রাগে পায়ের তলা চুলকাচ্ছে! ইচ্ছে করছে পাটা ইশাদের সামনে তুলে নিয়ে বলতে,আপনার আজগুবি কথায় আমার রাগ পেয়েছে,একটু চুলকিয়ে দিনতো!
“ভাই নেই?”
“না।”
ইশাদ আবারও একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গিমাই বলল,
“কেন?”
তিহিনাজের পায়ের তলার চুলকানি এবার তীব্রতায় গ্রাস করে ফেলেছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আব্বু নেই তাই।”
“আব্বু থাকলে ভাই হতো?”
“জ্বী!”
“কিভাবে?”
তিহিনাজের উত্তরে ইশাদ যতটা না বিব্রত হয়েছে তার থেকেও বিব্রত প্রশ্ন করে সে তিহিনাজের রাগকে চরম পর্যায়ে তুলে দিয়েছে। তিহিনাজ চট করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার কোনো টিউশনি লাগবে না। সামান্য একটা টিউশনির জন্য যে ইন্টারভিউ দিতে হয় সে টিউশনি আমার চাইনা।”
তিহিনাজ চলে যেতে নিলে পেছন থেকে ইশাদ আবারও উচ্চ স্বরে হেসে উঠল। আহা! এমন হাসির ছন্দে সে তো বার বার নয় হাজার বারও ইন্টারভিউ দিতে পারে!
ইশাদ তিহিনাজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“সরি ফর ফান। আমি জাস্ট আপনার জড়তা কাটাতে চেয়েছিলাম। এখন আপনার মধ্যে কোনো জড়তা কাজ করছে না। আমার তো মনে হয় এখন আপনি আমাকে ভয় কি পাবেন,আমাকে মারতেও আপনার হাত কাঁপবে না।”
তিহিনাজ ভ্রু কুঁচকে ইশাদের দিকে তাকাতেই আরেকটি অমায়িক হাসি উপহার পেয়েছে। একটু আগে যে ছেলেটা তার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলো সে ছেলের সাথে এই ছেলের কোনো মিল পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে এ হলো অমায়িক দেশের অমায়িক রাজা। যার রাজ্যের মানুষরা তাকে ভীষণ ভালোবাসে।
ইশাদ আবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই,
“বাবাই,এইটা কি আমার মামনি? কি সুন্দর দেখতে। আমি একটা চুমু খাবো।”
তিহিনাজ ইশাদের দিক থেকে পাশ কাটিয়ে তাকাতে একটা বাচ্চা দৌঁড়ে এসে ওর হাত চেপে ধরল। একটু দূরে একটি বয়স্ক মহিলাকেও দেখা যাচ্ছে। এদিকে এগিয়ে আসছে।
” ইশাদ,মেয়েটা কে? আর রমজানকে তো গেটে দেখলাম না। সব কোথায়?”
ইশাদ মেয়ে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলল,
“সবাইকে আজ ছুটি দিয়েছি, আম্মু!”
“কেন?”
ইশাদ তিহিনাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“একটা শুভ কাজ শুরু করতে যাচ্ছি তো তাই।”
” শুভ কাজ?”
“তোমাকে রাতে বলবো।”
ইশাদ আবারও তিহিনাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার এই ছোট্ট ইনাকে পড়াতে হবে। পারবেন তো?”
তিহিনাজ কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই ইশাদ ইনাকে তিহিনাজের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
” সোনামা,তোমার না চুমু খেতে ইচ্ছে করছে? এখন একটা খাও কাল থেকে রোজ দু’ঘন্টা করে চুমু খাওয়ার সুযোগ পাবে!”
ইশাদের কথায় তিহিনাজ হা করে তাকানোর আগেই ইনা পরপর দুটো চুমু খেয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে।
ইনাকে মিসেস মরিয়ম বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশাদ বলল,
“আম্মু,তুমি ইনাকে নিয়ে ভেতরে যাও,আমি তিহিকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।”
তিহিনাজ ইশাদের পায়ে পায়ে তাল মিলিয়ে সামনে এগুচ্ছে আর ভাবছে,তার মানে এতক্ষণ আমি এই লোকটার সাথে একা,খালি বাসায় বসে ছিলাম? ও মাই গড! কিন্তু এই লোকটার যে পাঁচ,ছয় বছরের একটা বাচ্চা আছে দেখে তো বুঝাই যায় না। কি করে সম্ভব? আর ঐ বাসায় তো আর কাউকে দেখলাম না,উনার ওয়াইফ কোথায়?
দুজনের নিরবতা ভেঙে তিহিনাজ প্রশ্ন করেই বসল,
“ইনা আপনার মেয়ে?”
“কেন,দেখতে আমার মতো হয়নি?”
“তা না। আপনাকে দেখে…..”
“তোমার ঘামের গন্ধটা মারাত্মক। এরপর থেকে আমাদের বাসায় আসলে,তোমার ঘামা নিষেধ!”
ইশাদ নিজের কথা শেষ করে উল্টা হাঁটা ধরেল। পেছনে যে তিহি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেটা যেন তার দেখা বারণ।
____________
” কিরে,মরে গেছিস নাকি? কোনো সাড়া শব্দ নেই কেন??”
হঠাৎ ঝাঝালো কণ্ঠে তিহি অতীত থেকে বেরিয়ে এসেছে। চোখ দুটো মেলে ঘামে ভিজে উঠা নিজের হিংস্র স্বামীর দিকে তাকিয়ে বিকট এক চিৎকার করে উঠল।
_____________
ইশাদ বেলকনিতে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। চারপাশটা অন্ধকারে ঘুটঘুটে কালো হয়ে আসলেও সে স্পষ্ট তাদের বাসার গেটটা দেখতে পাচ্ছে। এই গেইটটা দিয়েই তো তার তিহি পাখিটা তার বাসায় প্রথম পায়ের স্পর্শ ফেলেছিল। যে স্পর্শ সে ছাড়া আর কেউ দেখেনি। দেখবে কি করে সে তো কাউকে দেখার সুযোগও দেয়নি,আম্মু আর ইনাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে সবাইকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিলো সেদিন। সে যে চেয়েছিলো তার তিহি পাখিটার প্রত্যেকটা কদমে পায়ের ছোঁয়া,হাতের ছোঁয়া সে নিজে একা বরণ করবে। একান্তই একা!
আজ সেই পাখিটা অন্য কারো বুকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। একজন নতুন পুরুষের ছোঁয়াই হয়তো নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। দিবেই না কেন? সে যে তার স্বামী হয়! হয়তো হারিয়ে যাচ্ছে এক নতুন কল্পনার রাজ্যে,যে কল্পনাই সে নেই। ভাবতেই ইশাদের বুক চিড়ে কান্না পাচ্ছে। শরীরের ভেতর বাহির সবটা হা-হা কারে ভরে যাচ্ছে। চোখ বেয়ে পানি টপটপ করে পড়ার আগেই মিসেস মরিয়মের আগমন,
“ইশাদ,রাত তো প্রায় শেষ হতে চললো,ঘুমোবি না?”
ইশাদ মায়ের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে,আম্মু!”
মিসেস মরিয়ম বেগম তাৎক্ষনিক ছেলের কাধে হাত বাড়াতেই ইশাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
চলবে