তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (১৪)

0
3115

#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (১৪)
#রোকসানা-রাহমান

ইশাদের নাম শুনতেই তিহি থ হয়ে গিয়েছে। জমাট বেধে যাচ্ছে তার শরীর। নিঃসার সুরে বললো,,

“” ইশাদ!””

ততক্ষনে তিহির হাতের ছুরি তাজের হাতে। ছুরিটা সর্ব শক্তিতে মেঝেতে ঢিল মেরে বললো,,

“” আমার সন্তানকে ও কেড়ে নিয়েছে। আমার বুক খালি করে নিজের বুক ভরে নিয়েছে।””

তিহির নিঃসার কন্ঠ ধীর হয়ে এসেছে। চমকের সাথে চমকে তিহি নড়ে উঠে বললো,,

“” আপনার সন্তান?””
“” ইনা আমার সন্তান,আমার মেয়ে। ও শুধু আমার মেয়ে আর কারো নয়। ও আমার হৃদপিন্ড। আমার হৃদপিন্ডকে আমার শরীর থেকে ইশাদ ছিনিয়ে নিয়েছে!””
“” ইনা আপনার মেয়ে?””
“” হুম,আমার আর সানজিদার মেয়ে,আমার ভালোবাসার প্রতিফলন ও!””
“” সানজিদা!””
“” ইরফাদের স্ত্রী!””

তাজ কি বলছে তিহির মাথায় কিছু ঢুকছেনা। ইফাদ ভাইয়ার স্ত্রী উনার ভালোবাসা কিভাবে হয়?? ইফাদ ভাইয়ের মেয়ে উনার সন্তান কি করে হয়?? কিন্তু এ ব্যাপারে তো ইশাদ আমাকে কিছু বলেনি,ও তো বলেছিলো ইনা ওর ভাইয়ের মেয়ে,তাহলে কি ইশাদ আমাকে মিথ্যে বলেছিলো?? আমাদের সম্পর্ক কি মিথ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিলো? কিন্তু কেন? কেন মিথ্যে বলেছে আমায়??

তিহি আর কিছু ভাবতে পারছেনা। মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নানারকম উলুপোকারা মাথার ভেতর দিয়ে ধপধপ করে চারপাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যন্ত্রণা হচ্ছে খুব! তিহি অস্পষ্ট স্বরে বললো,,

“” আমাকে একটু বসিয়ে দিবেন,প্লিজ! দাড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছিনা।””

তাজ, তিহির দিকে তাকালো। তিহি অনেকটাই অসার হয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ফেলেছে৷ এই বুঝি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে!

তিহিকে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিয়েছে তাজ। ওর পায়ের কাছেই মেঝেতে বসে বললো,,

“” বলেছিলাম যে এতো পাগলামি করোনা। আমার কথা কানে যায়না না?? সব নিজের ইচ্ছে তে করবে?? এতো জেদ কোথা থেকে পেয়েছো?””
“” পানি খাবো!””

শিরিন বেগম পানির গ্লাসটা তিহির হাতে দিলেন। মাথায় ভেজা হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু চেয়ে আছেন তাজের দিকে। আজ তিহির জেদের জন্য সেও ও নতুন কিছু শুনেছে যা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। এতোটা বছর ছেলেটা আমার সাথে থাকছে,এতো কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে কই আমিতো এগুলো জানতে পারিনি। জানার যে চেষ্টা করিনি তা নয়,কিন্তু চেষ্টায় সফল হতে পারিনি,হয়তো তিহির মতো এমন জেদ ধরতে পারিনি বলে।

তিহি গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে,জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,,

“” আমি সবটা শুনতে চাই!””

তাজ, তিহির দিকে তাকাতে তিহি আবার অনুরোধের সুরে বললো,,

“” প্লিজ!””

তাজ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পড়েছে। তিহির দিকে তাকিয়ে কয়েকটা চোখের পলক ফেলে বলতে শুরু করলো,,

“” আমি ছোটবেলা থেকেই অস্ট্রেলিয়াতে থাকি। বাবা-মা বাংলাদেশি হলেও বাবা ওখানেই কাজের সুত্রে সেটেল হয়ে পড়েন। আমার পড়ালেখাও ওখানে। পড়ালেখার সুবাদেই ইরফাদের সাথে আমার পরিচয়। ও আমাদের এখানে আমাদের ভার্সিটিতেই এডমিট হয়েছিলো। একি ডিপার্টমেন্ট হওয়াই দুজনের সাথে বেশ ভাব। তার উপর বাংলাদেশিও,এক কথায় পুরো দমে দুজন মাতামাতিতে ব্যস্ত! এর মধ্যেই ক্লাসে নতুন মেয়ের উপস্থিতি। নাম সানজিদা। প্রথম দেখাতেই কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করি। দুর্বলতাটা ক্রমশ বেড়ে গিয়েছিলো যখন জানতে পারলাম ও আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমাদের বাসায় থেকেই পড়াশুনা করবে। যদিও বাবা ভেবেছিলো কোনো একটা ভালো প্লেস দেখে সানজিদাকে শিফট করিয়ে দিবে। কিন্তু মায়ের পিড়াপিড়াতে সে ভাবনা বাদ দিতে হয়।

সানজিদা আর আমি একি বাসায় একি ফ্লাটে থাকা সত্তেও আমাদের মধ্যে তেমন কথা হতোনা। আমিও সংকোচতা কাটিয়ে ওর দিকে এগুতে পারছিলাম না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রবল প্রনোদনা অনুভব করছিলাম।

সময় গড়িয়ে যেতে যেতে কিছুটা ভাব গড়ে উঠতে থাকে,তবে সেটা আমার জন্য নয় ইরফাদের জন্য। আমি খেয়াল করছিলাম ইরফাদ আর আমি যখন নানা খুনসুটি নিয়ে ব্যস্ত তখন সানজিদা আমাদেরকে ফলো করতে থাকে,একটা ইচ্ছেও পোষন করতে চাচ্ছে। ব্যস আসতে আসতে হয়ে গেলো সেও আমাদের মাতামাতির অংশিদার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনজনের ভেতর এতো বেশি ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়ে গিয়েছিলো যে আমরা যেখানেই যাই তিনজন একসাথে,যাই করিনা তিনজনেই করবো। সবকিছু ফ্রেন্ডের মতো ঘটলেও আমার ভেতর চলছিলো সানজিদার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের তীব্র ইচ্ছা। ওকে কিভাবে বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভাবলাম ইরফাদের সাথে বুঝাপড়া করে নিলে ও হয়তো কোনো সলিউশন দিতে পারবে।

কিন্তু ও সলিউশন দেওয়ার বদলে দিয়ে দিলো কয়েকগাদা কনফিউশনের দলা। আমার মতো ইরফাদও তখন সানজিদার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। দুজন দুজনার কথা শুনে হেঁসেহেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছি একি সাথে কনফিউশনের উপর লেবেলে বসে আছি। সব শেষে ও আমাকে একটা সলিউশন দিলো। সলিউশনটা এমন ছিলো আমরা দুজনেই একসাথে দুজনের মনের কথা জানাবো সানজিদাকে। তারপর সানজিদা যা চাইবে তাই হবে। ইচ্ছে হলে একজনকে বেছে নিবে ইচ্ছে নাহলে দুজনকেই রিফিউজ করবে।

ঐই ভালোবাসা,কনফিউশন,খুনশুটি,মাতামাতিতে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হলো। ইরফাদ আর সানজিদা বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য তোরজোর করছিলো,সাথে আমিও ঠিক করি,ওদের সাথে আমিও যাবো, ফুপির কাছে। কিন্তু তার আগে একটা ছোটখাটো পার্টির আয়োজন হচ্ছিলো আমাদের বাসায়। ইরফাদ আর আমি ঠিক করেছিলাম পার্টি শেষেই আমরা দুজন সানজিদাকে প্রপোস করবো।

কিন্তু হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে ইরফাদ আর সানজিদা এতো বেশি ড্রিংকস করেছিলো যে ইরফাদ বেহুশ হয়ে ছাদেই পড়ে রইলো আর সানজিদা নানারকম পাগলামি শুরু করে! দুজনের বেহাল দেখে আমার নাজেহাল অবস্থা! সানজিদাকে ওর রুমে দিয়ে এসে আমি আমার রুমে চলে আসি। সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি সানজিদা আমার রুমে। দরজা ভেতর থেকে আটকানো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও আমার কাছে চলে আসে,খুব কাছে। এতোটাই কাছে যা আমার আর ওর জন্য ঠিক ছিলোনা।

সানজিদা একপ্রকার বেহুশ হয়েই আমার কাছে এসেছিলো,আমাকে স্পর্শ করেছিলো কিন্তু আমি? আমি পুরো সজ্ঞানে ওর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। আমার উচিত ছিলো সানজিদাকে প্রশ্রয় না দেওয়া কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসতাম,খুব বেশিই ভালোবাসতাম,এতোটাই ভালোবাসতাম যে তখন আমার কাছে এটাকে পাপ মনে হচ্ছিলোনা। আমার ভেতরে চেপে থাকা কাছে পাওয়ার ইচ্ছেগুলো বেরিয়ে আসে। আমি বিবেকের কাছে পরাজিত হয়ে ওর স্পর্শকে গ্রহন করে নিয়েছিলাম,যার ফলে কেটে যায় একটি অনাকাক্ষিত,অপ্রত্যাশিত,ভয়ংকর মিলনরাত!

তার দুদিনবাদেই জানতে পারি সানজিদা ইরফাদকে ভালোবাসে। তারমানে সে রাতে যা হয়েছিলো তা একতরফা ভালোবাসা ছিলো! আমাদের মধ্যে যা হয়েছিলো তা সানজিদা সকালেই ভুলে গিয়েছিলো। কিন্তু আমি পারিনি,কারন আমিতো যা করেছিলাম তা স্বজ্ঞানে! কিন্তু বন্ধুত্ব আর সানজিদার ভালোবাসার খাতিরে আমি পুরোটাই চেপে যায়।

এর মধ্যেই ওদের দুজনের বাংলাদেশে ফিরার জন্য সবকিছু ওকে! যেদিন ফ্লাইট তার ঠিক দুদিন আগে সানজিদা আর ইরফাদের মধ্যে তুমোল ঝগড়া। কিছুক্ষন ওদের কথা কাটাকাটি শোনার পর বুঝতে পারলাম সানজিদা প্রেগন্যান্ট! দুজনের কেউ বুঝতে পারছেনা এটা কিভাবে সম্ভব?? একে অপরের দোষ দিয়ে যাচ্ছে। ইরফাদ বলছে ও সানজিদাকে ছোয়নি তাহলে ও প্রেগন্যন্ট কি করে হলো? নিশ্চয় অন্যকারো সাথে রিলেশনে আছে। কিন্তু এটা মানতে সানজিদা নারাজ। ও পুরো কনফিডেন্ট নিয়ে বলছে অন্য কারো সাথে কোনো এ্যাফেয়ার নেই। তাহলে বাচ্চাটা আসলো কিভাবে???

দুজনের ঝগড়ার মাঝেই আমি অপরাধির সুরে নিজের অপরাধটাকে প্রকাশ করলাম। দুজনেই হা করে চেয়েছিলো। বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর সবটা আমার কাছ থেকে শুনে। ইরফাদ চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায় আর সানজিদা আমাকে পরপর দুটো চড় মেরেছিলো। আমি সেদিন কিছুই বলতে পারিনি,বলবো কিভাবে? দোষ তো আমারি ছিলো!””

তাজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ হয়ে গেলে তিহি বললো,,,

“” কিন্তু এখানে ইশাদ কি করে এলো??””

তাজ তিহির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে,একটু আগেও যে চোখটা নির্জীব আর শান্ত হয়ে এসেছিলো আসতে আসতে সে চোখটায় ক্রোধ বাসা বাধছে।

“” ওরা দুজনেই আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। বাংলাদেশে এসে বিয়েও করে নিয়েছিলো। আমি খুশি না হলেও অখুশি হতে পারিনি। কারন আমি জানতাম ইরফাদ সানজিদাকে অনেক ভালোবাসে। আমাদের অপরাধটাকে ঢাকতেই বিয়ে করেছিলো। যদিও ওরা আমার সাথে কথা বলতে চাইতোনা তবুও আমি বারবার কথা বলতে চাইতাম আর রিকোয়েস্ট করতাম বেবিটার যেন কিছু নাহয়। দরকার হলে ও পৃথিবীতে আসার পর আমাকে দিয়ে দিক তবুও নষ্ট যেন না করে। আমি বড় করবো ওকে!

সানজিদা বেবিটা নষ্ট করেনি। কেন করেনি আমি জানিনা। হয়তো আমার কথা রাখতে নাহয় মাতৃত্বের সাধ নিতে! সানজিদার বিরহ আমি সয্য করতে পারছিলাম না তার উপর নিজের অপরাধবোধটাও আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে ফেলছিলো। এদিকে নিজের এক তরফার ভালোবাসার হিরেটাকে কিভাবে দিনে দিনে সানজিদার পেটে নিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে তা দেখার প্রবল ইচ্ছে জন্মাচ্ছিলো। প্রেগন্যান্সির বয়স যত বাড়ছিলো সানজিদারা তত আমাকে ছুড়ে ফেলছিলো। কোনোভাবেই কন্টাক্ট রাখার ওয়ে রাখছিলোনা। আমি অস্থিরতায় মরে যাচ্ছিলাম। না ওদের কাছে যেতে পারছিলাম না দুরে থাকতে পারছিলাম। ডুবে গেলাম নানা ধরনের বাজে নেশায়!

কিন্তু নেশা কাটলেই আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারছিলাম না। দিনরাত মদ্যপানে ডুবে থেকেও নিয়ন্ত্রণে আসতে পারছিলামনা। তাই বাবা-মাকে না বলেই বাংলাদেশে চলে আসি। ভাগ্যের কি পরিহাস! যেদিন আমি বাংলাদেশে পা রাখি সেদিনই সানজিদা পরলোকের বাসিন্দা! বুকের ভেতর উথালপাথাল ঢেউয়ে আমার সবকিনারা ভেঙে ফেলছিলো।

তার বেশ কিছুদিন পর খোজ নিয়ে জানতে পারি ইরফাদ আমার বাচ্চার উপর অনুরাগ করে দেশ ছেড়েছে। তারমানে আমার সন্তান এতিম হয়ে গিয়েছে। আমি থাকতে আমার সন্তান কেন বাবা-মা ছাড়া মানুষ হবে??? আমি নিজের সব সংকোচবোধ ফেলে দিয়ে ইশাদের সামনে হাজির হই। ওকে সবটা জানানোর পর ও স্ট্রেইট আমাকে মানা করে দিয়েছিলো। এমন কি আমি যদি ইনাকে নিয়ে আর কোনো রকম ইস্যু সৃষ্টি করতে চাই তাহলে আমার নামে হ্যারাসমেন্টের কেস ঠুকে দিবে বলে থ্রেট দিয়েছিলো।””

তাজ বড় বড় পা ফেলে তিহির চেয়ারটার দুধার চেপে ধরে ওর চোখে চোখ রেখে ঝাঝালো কন্ঠে বললো,,

“” তোমার ইশাদ কি করেছিলো জানো?? ইনার ডিএনএ টেস্ট করে ভুল রিপোর্ট বানিয়েছিলো। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে হুমকি দিয়েছিলো। কেন করেছিলো এসব? আমি তো শুধু আমার মেয়েকেই নিতে চেয়েছিলাম। তাহলে?? যে জায়গায় ইরফাদ নিজেও ইনাকে মেনে নিতে চাচ্ছিলোনা সেখানে ইশাদ কেন ইনাকে নিজের মেয়ে বানিয়ে রেখেছে?? ও যদি ইনাকে আগলে রাখতে পারে আমি কেন পারবোনা?? ও তো আমার রক্ত ছিলো। আমার অধিকার আছে ওকে আমার কাছে রাখার,ইশাদ কোন অধিকারে এগুলো করেছে?? বলো কোন অধিকারে করেছে?? কেন কেড়ে নিয়েছে আমার সন্তানকে??””

তাজের ধমকে তিহি কেঁপে উঠছে। তাকাতে পারছেনা তার দিকে। কিভাবে তাকাবে? মানুষটা যে এখন ভয়ংকর ক্ষেপে আছে।

“” নিজের শরীর থেকে যখন হৃদপিন্ডটা কেড়ে নেওয়া হয় তখন কতটা রক্ত ঝড়তে পারে এইটা ওকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছিলাম। সেজন্যই তোমাকে বিয়ে করা। তুমি যখন ইশাদ ইশাদ বলে বিলাপ করো তখন আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে,ইচ্ছে করে ওকে টুকরো টুকরো করে ফেলি।””

তাজ আরো কিছু বলতে চেয়েও থেমে গিয়েছে। তিহির কাছ থেকে সরে আসতেই তিহি বিরস গলায় বললো,,

“” তারমানে ইনাকে নিজের কাছে রাখতেই আমাকে আপনার কাছে তুলে দিয়েছে??””

তাজ সদর দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়েছে। পেছন ঘুরে বললো,,

“” আমি যতটুকু জানি ইশাদ হয়তো এটাও জানেনা তোমার কার সাথে বিয়ে হয়েছে। জানলে এতো সহজে তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারতামনা। ইনার বিষয়টা যতটা স্মার্টলি হ্যান্ডেল করেছে,তোমারটাও তাই করতো। আমারতো এটাও মনে হচ্ছে ইশাদ এখনো জানতে চাচ্ছেনা তোমার হাসবেন্ড কে,নাহলে এতোদিনে ও তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতো। কারন,ও খুব ভালো করেই জানে, আমার কাছে তুমি কখনোই ভালো থাকবেনা!””

~~

মিহিদের বাসা থেকে বের হয়ে ইশাদ রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে। অন্ধকার রাস্তায় নিজেকে ঢেকে রাখতে চাইলেও চাঁদের আলোর জন্য পারছেনা। আজ সে সারারাত হাঁটবে,হেঁটে হেঁটে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন কি বাসায় ফিরবে? নাকি রাস্তার কোথাও একটা জায়গায় শুয়ে পড়বে?? রাত তেমন না হলেও এদিকটার ব্যস্ত শহরটা নির্জন হয়ে এসেছে। সবাই হয়তো ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুধু তারই ঘুমাতে ইচ্ছে করছেনা। ঘুমুলে যে তিহি খুব জ্বালাতন করে,একসময় ওর জ্বালাতনগুলো উপভোগ করলেও এখন আর পারেনা,বুকের ভেতর শুন্যতায় ভরে উঠে।যে শুন্যতায় নিজেকে গ্রাস করে ফেলে। ইচ্ছে করে এমন এক জায়গায় চলে যেতে যেখানে থাকবেনা কোনো মানবের উপস্থিতি!

ইশাদ দুহাত প্যান্টের দুপকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে। চোখটা বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে আছে। কল্পনাতে দেখার ইচ্ছে করছে,তার তিহিপাখিটার কোলে একটা ছোট্টপাখি আসলে কেমন দেখাবে??

ইশাদ বেশিক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেনি,চট করে চোখ মেলে সামনে হাঁটা ধরেছে। মনে মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে, আমার চুষনি কন্যাটার চুষনিবাবুও চলে আসবে আর কি চাই তার? স্বামী,সংসার আর এখন ছোট্ট রাজকন্যে, সুখি পরিবার! শুধু আমারি কিছু নাই,আমার সংসারে আমি একা,বড্ড একা। সঙ্গি হিসেবে তোমার স্মৃতিগুলো আছে,তিহি!

**স্মৃতি তুমি আলিঙ্গন করে নাও আমায়,,,,
জীবন তরী বেয়ে যাক,তোমার বানানো বৈঠায়****

~~

রাতে ঘুমুতে যাওয়ার জন্য নিজের রুমে পা বাড়িয়েছে তিহি। দরজা চাপানো দেখে হালকা ধাক্কা দিচ্ছে। ওমা দরজাতো খুলছেনা। তাহলে কি উনি ভেতর থেকে আটকে রেখেছেন? কি করছেন ভেতরে? যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হয়েছে!

তিহি দরজায় নক করতেই তাজ ভেতর থেকে বললো,,,

“” আজ থেকে তোমার জন্য এ রুমে ঢুকা নিষেধ। যাও ফুপির সাথে শুয়ে পড়ো। এখন থেকে ফুপির সাথেই ঘুমাবে। কাল সকালে তোমার যারতীয় জিনিস ঐ রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।””

তিহি তাজকে কঠিন কথা শুনাতে গিয়েও শুনালোনা। রাগ আর জিদ মিশ্রিত কন্ঠে চিৎকার করে বললো,,

“” ফুপিমা,তোমাদের ঐ আরেকটা রুম যে খালি পড়ে আছে ওটার চাবি দাও। আজ থেকে আমি ওখানেই শুবো।””

তিহির চিৎকারে শিরিন বেগম ছুটে এসে বললেন,,,

“” সেকিরে,ঐ রুমে কেন? আমার সাথে আয়।””
“” না,আমি একা ঘুমাবো।””
“” ঐ রুমে তুই একা ঘুমাবি? আমার রুম থেকে অনেকটা দুরে তো। যদি কোনো দরকার হয় তখন?””

তিহি তাজকে শুনিয়ে শুনিয়ে গলার স্বরটা বাড়িয়ে বললো,,

“” কিছু হলে এবাড়ির কারো কিছু যায় আসবেনা। আমি দম আটকে মরে গেলেই তো কারো শুকনো আত্মায় ঠান্ডা পানি পড়বে।””

~~

চারমাস পর,

মিহি ক্লাসে বসে কারো জন্য অধির আগ্রহে বসে আছে,কাউকে দেখার আশায় মনটা আকুপুকু করছে। তার পাশে বসেই নিশি যে বকবক করে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। মিহির চোখ পুরো দমে ক্লাসের দরজার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ কেউ ক্লাসে পা রাখতেই সকলেই দাড়িয়ে সালাম দিয়েছে। মিহিও দিয়েছে,কিন্তু সালাম শেষেও যখন সবাই বসে পড়েছে তখনও মিহি দাড়িয়ে। নিশি বিরক্ত নিয়ে ওকে টেনে বসিয়ে বললো,,,

“”আমাদের হিসাববিজ্ঞানের স্যারটা এতো হ্যান্ডসাম,এতো ইয়াং, এতো সুন্দর করে কথা বলে,তার দিকে সবাই মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর তুই একমাত্র বান্দা যে কিনা এই বুড়ো ইংলিশ স্যারটার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকিস। তোর পছন্দ এমন বুড়ো বুড়……””

নিশি কথা শেষ না করতেই ওর গালে ঠাস করে একটা চড় পড়েছে। শুধু থাপ্পড় মেরেই মিহি ক্ষান্ন নয়। রীতিমতো, নিশির চুলধরে টানাটানি শুরু করেছে আর চিৎকার করে বলছে,,,

“” তোর এতো সাহস হয় কি করে? আমার ক্রাশকে তুই বুড়ো বলিশ?? আজ তোর চুল আমি ছিড়ে ফেলবো। টাক বানিয়ে ফেলবো,তারপর বুঝবি বুড়ি কাকে বলে!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here