তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৭)

0
3027

#তোমার সমাপ্তিতে-আমার প্রাপ্তি,পর্ব (২৭)
#রোকসানা-রাহমান

চুল খুলে দিয়ে সরে যেতে নিলে ওর হাতটা আকড়ে ধরে তিহি। তাজের বা’হাতটা নিজের পেটের দিকে টেনে এনেছে। পেটের মধ্যে চেপে ধরে তিহি চোখ বন্ধ করে বললো,,,

“” আপনার নেশায় ডুব দিবো বলেই এতো তোরজোর। স্মৃতির প্রথম পাতাটায় অতীতের কালি আপনার স্পর্শেই আকতে চায়!””

তাজ, তিহির পেটে শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে ওর দিকে চেয়ে বললো,,

“” সত্যি বলছো তো? আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এমন সারপ্রাইজ আমি আশা করিনি। আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো?””

তিহি তাজের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মেঝেতে স্থির রেখে ছোট্ট করে বললো,,

“”উহু!””

তাজ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো। তিহি র চোখদুটো তখনো মেঝেতে স্থির। চোখদুটো যে নোনা পানিরকনা দিয়ে ভরে আছে সেটা খুব বুঝতে পারছে। চোখের পানিগুলো কি বলতে চাচ্ছে সেটাও সে বুঝতে পারছে। কিন্তু আজ সে বুঝতে চায়না। তার নেশাবউয়ের ডাকে সে সাড়া দিবে।

তিহির পেটের দিকে শাড়ীর ভাজটা ছড়িয়ে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুয়ালো তাজ।

“” তোমার শরীরে আর কোনো আচর পড়বেনা নেশাবউ। ভালোবাসার দাগ বসবে। যেটা তুমি আমি দেখতে পাবোনা কিন্তু অনুভব করতে পারবো।””

তিহি নিজের হাতের আঙুল দিয়ে গভীর মুঠ পেকে আছে। চোখের পানিগুলো বাধ ভেঙে গড়িয়ে পড়তে চায়ছে। তাজ ওর হাতদুটো নিজের ঠোঁটে ছুয়িয়ে বললো,,

“” এ হাতে আমি ভালোবাসা ভরে দিবো। আর সেই ভালোবাসায় তুমি আমার চুলে আঙুল ডুবিয়ে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলবে,সার্থক আমার জীবন,তোমার ভালোবাসায়!””

তিহি ভেজা কন্ঠে বললো,,

“” লাইট নিবিয়ে আসুন!””

তাজ ঠোঁটের কোনে মধুর হাসি নিয়ে তিহির মুখটা নিজের হাতের আজলে নিয়ে ওর ভেজা চোখে চুমু খেলো। ঠোঁটের স্পর্শে তিহি চোখ বন্ধ করে নিতেই তার উষ্ণ গরম পানি গাল বেয়ে পড়ছে।

“” তিহি চোখ খোলো।””
“” পারবোনা।””
“” পারবে।””
“” লাইট নিবিয়ে আসুন।””
“” না। তুমি চোখ খোলো।””
“” প্লিজ!””
“” তুমি যদি আমার দিকে না তাকাও তাহলে আমি তোমাকে ছুবোনা।””

তাজ তিহির মুখটা ছেড়ে চলে যেতে নিলে তিহি ওর হাত নিজের গালের সাথে চেপে ধরেছে। না চাইতেও চোখের পাতা মেলে তাজের দিকে ছলছল নয়নে চেয়ে আছে। আকুতিভরা চাহনি নিয়ে মাথাটা ডানে বামে নাড়িয়ে বুঝাতে চাইছে,যাবেননা প্লিজ! আমি মুক্তি চাই,কষ্টে ভরা কালো অধ্যায় থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই। তারজন্য আপনাকে আমার প্রয়োজন। এক নতুন সুখে ভাসতে চাই। স্বামী-সন্তান নিয়ে আমিও বুক ভরে নিশ্বাস নিতে চাই। অনেকতো হলো আর কত নিশ্বাস আটকে রাখবো?? যার জন্য নিশ্বাস আটকে রেখেছিলাম সেতো আমাকে একা করে চলে গিয়েছে!

তিহির চোখের ভাষা তাজ স্পষ্ট বুঝতে পারছে। দুজনেই দুজনের প্রথম ভালোবাসাকে অতীতের পৃষ্ঠায় ছেপে দ্বিতীয় ভালোবাসায় মত্ত হতে চাচ্ছে।

তাজ তিহির চোখের ভাষায় হারাতে হারাতে তিহির ঠোঁটের দিকে এগুচ্ছে। আজ দুজোড়া ঠোঁটের মিলনের কালি পড়বে স্মৃতির পাতায়।

তিহির ঠোঁট তাজের ঠোঁট ছুই ছুই করছে। কিন্তু হঠাৎই তাজ কেঁশে উঠেছে। একের পর এক কাঁশিতে তাজ নড়ে উঠছে সাথে তিহিও। দুজনের ঘোরই যেন কেটে গেলো। কাঁশির গতি ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে থামার কোনো জো নেই।

তিহি দৌড়ে পানি এনে দিয়েছে তাজকে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছেনা। না চাইতেও বুকের কাছটাতে তাজের হাত চলে গেছে। মনে হচ্ছে তার বুক ছিড়ে গলা ফেঁটে যাচ্ছে। সাময়িক শান্তির আশায় বুকটা চেপে ধরে কাঁশতে কাঁশতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো তাজ।

~~

সাদা কাগজটাকে কালো কালিতে ভরে ফেলছে মিহি।
লেখা প্রায় শেষ তখনি রুমের লাইটটা জ্বলে উঠেছে। মিহি আৎকে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখে ইরফাদ। ওর চোখে চোখ পড়তেই মিহি নিজের চোখ সরিয়ে ফেললো। ইরফাদ কয়েক পা এগিয়ে বললো,,

“” লাইট বন্ধ করে কি লিখছো?””

ইরফাদের প্রশ্নে মিহির হুশ এলো। চট করে কাগজটা সরিয়ে নিবে তার আগেই ছো মেরে নিয়ে নিলো ইরফাদ। সুক্ষ চোখে কাগজে কি লিখা আছে পড়ছে। বেশ জোরে জোরে,,,

**প্রিয় বুড়ো,

পত্রের শুরুতেই আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার খামখেয়ালির জন্য আপনার জীবনটা তেনাতেনা হয়ে গেছে। যদিও জীবনের অর্ধেকটার পরেই আমার আগমন তবুও আমি দয়ালু বলে পুরোটার দায়ভার নিলাম। আপনি যেদিন থেকে আমার নিজের বুড়ো একান্তই নিজের বুড়ো হয়েছেন,সেদিন থেকে ছ্যাংছ্যাং করছেন আর আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন। আপনার থেকে তো আধাপাকা, পুরোপাকা চুলের বুড়োরা বেশি কিউট হয়। আপনি জানেন আমাদের পাশের বাসার দাদুটা আমাকে কত ভালোবাসে?? আর আপনি??

আর কি লিখবো খুজে পাচ্ছিনা। তবে আজকে আপনি আমাকে বেশি দুঃখ দিয়েছেন। যার ফলে আমি দুদিন একরাত কেঁদেছি আর ভেবেছি। ভাবার কাজ শেষে আমি এতোটুকু উপলব্ধি করেছি যে,আপনি আমাকে পেয়ে বিন্দুমাত্র খুশি নন। বরংচ বিরক্ত আর তিক্ত। হয়তো আমার জন্যে আপনার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আর জোর করে আপনার কাছে পড়ে থাকবোনা। আমি চলে যাচ্ছি। মিহিবাচ্চা আপনাকে আর জ্বালাতন করবেনা। তবে আমাকে আপনি যখন ভুলতে বসবেন তখন আমি আবার আপনার কাছে আসবো। আপনার বউ হয়ে নয়। সুন্দর,লক্ষী,এডুকেটেট,বুদ্ধীমত্তি,ম্যচিউর একটা মেয়ে সেজে। তখন আমি আপনার থেকেও আরো সুন্দর এক বুড়োকে বিয়ে করবো। দেখবেন সে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। আপনার মতো এতো বকবেনা। কারন,তখন তো আমি আর বাচ্চা থাকবোনা। ভালো থাকবেন।

ইতি

মিহি বাচ্চা

ইরফাদ পড়া শেষে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে। মাথাটা নিচের দিকে কাত করা। আশেপাশে চোখ বুলাতেই খাটের উপর কাপড়ভর্তি ব্যাগটাও দেখলো। ইরফাদ বেশ স্বাভাবিক গলায় বললো,,,

“” এমন পুরাতন কাপড় পড়ে যাবে? নতুন জামা পড়লে না?””

ইরফাদের কাছে এমন প্রশ্ন পেয়ে মিহি চোখ বড়বড় করে ওর দিকে চেয়ে রইলো। দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করছে,,কি খারাপ বুড়ো। এতো কষ্ট মেখে চিঠি লিখলাম উনার কোনো রিয়েকশনও নাই? কই আদর করে অনুরোধ করে বলবে,মিহি তুমি কোথাও যাবেনা। আমি আর বকবোনা। তা না সে জিজ্ঞেস করছে নতুন জামা পড়িনি কেন?? এমন স্বামীকে আমি কেন বিয়ে করলাম?? নিষ্ঠুর বুড়ো একটা। এটা আমার বুড়ো হতেই পারেনা। পাবলিক বুড়ো হওয়া উচিত।

ইরফাদ মিহির ডানহাতটা টেনে হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো,,

“” যাও চেন্জ করে আসো।””
“” আপনি জানতেন আমি চলে যাবো? কিন্তু কিভাবে?? আমিতো এ কথা আর কাউকে বলিনি!””
“” হুম!””

মিহি রাগ দেখিয়ে বললো,,

“” আমার নতুন কাপড় লাগবেনা। আমি পুরাতনটা পড়েই যাবো।””

ইরফাদ চোখ পাকিয়ে তাকাতেই মিহি ভো দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। বেশ কয়েক মিনিট পেরুতেই ইরফাদ দরজা নক করে বললো,,

“” কি হলো চেন্জ করতে এতক্ষন লাগে? তুমি কি ঘুমোচ্ছো?””

মিহি অসহায় সুরে বললো,,

“” আমি তিন নাম্বার কাপড়টা হারিয়ে ফেলছি। আমি তো দুটো কাপড় পড়ে আছি। বেরোবো কিভাবে?””

ইরফাদ দুষ্টু হাঁসি হেঁসে বললো,,

“” তিন নাম্বার কাপড়টা আমার কাছে।””

মিহি টুক করে দরজা খুলে একটা হাত বের করে বললো,,

“” তাড়াতাড়ি দিন।””

ইরফাদ ওর হাত ধরে টেনে বের করে নিজের সামনে দাড় করিয়ে রেখেছে। মিহি শাড়ী ছাড়া অর্ধেক নগ্ন অবস্থায় খুব বেশি লজ্জা আর অসস্থিতে ভুগছে। নানাভাবে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করেও ঢাকতে না পেরে উল্টো ঘুরে খোপাটা খুলে বললো,,

“” ছি! ছি!!ছি!!! আপনি আমাকে এভাবে বিদেয় করবেন?? আপনি এতো পচা?””
“” হুম। এদিকে ঘুরো।””
“” না।””
“” মিহি!””

ইরফাদের শক্ত ডাকে মিহি ঘুরে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের কোমড় সমান চুলগুলো এপাশ থেকে ওপাশ বিছিয়ে নিয়েছে। তাতে কি! বস্ত্রের জায়গায় কি চুল খাটে??

ইরফাদ হাটু গেড়ে বসে মিহির কোমড়ের কাছে পেটিকোটের সুতলি টেনে আরেকটু নিচে নামিয়ে দিতেই মিহি চিৎকার করে বললো,,

“” টানছেন কেন? খুলে যাবে তো!””
“” তিলটা ভালো করে দেখা যাচ্ছিলোনা। আর এতো উপরে পড়েছো কেন? তুমি কখনো শাড়ী পড়োনি?””
“” নাহ!””
“” কেন?””
“” মনে নাই।””

ইরফাদ ব্রু কুচকে মাথা উপরে তুলে বললো,,

“” থাকবে কিভাব? মাথাভর্তিতো সব দুষ্টুবুদ্ধী!””
“” আবার কি করছি?””

মিহির কথার পিঠে কোনো কথা বললোনা ইরফাদ। শাড়ীটা খুলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন নেড়ে নেড়ে চেক করছে। অবশেষে উল্টা-সোজা খুজে নিয়ে শাড়ীর এককোন মিহির কোমড়ে গুজে দিতেই মিহি নেচে উঠে বললো,,

“” সুড়সুড়ি দিচ্ছেন কেন?””
“” চুলগুলো সরাও।””

ইরফাদের কথাতে মিহি চুলের উপরেই নিজের দুটো হাত ক্রশ করে চেপে ধরে জোর গলায় বললো,,

“” না।””

মিহির সাথে আর কথা না বলে নিজেই জোর করে চুল সরিয়ে বললো,,

“” আর একটা কথা বললে এভাবেই তিন নাম্বার কাপড় ছাড়াই রুম থেকে বের করে দিবো। চুপ করে দাড়িয়ে থাকো। ঝামেলা পাকাবেনা।””

মিহি শক্ত হয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো। সবার সামনে তিন নাম্বার কাপড়ের মিসিং নিয়ে দাড়িয়ে থাকার থেকে একজনের সামনে দাড়ানোই ভালো।

মিহির কাধে আচলটা বিছিয়ে দিয়ে ওকে আয়নার সামনে দাড় করিয়েছে ইরফাদ। পেছন থেকে ধীর সুরে বললো,,,

“” দেখোতো,এই বাচ্চাটাকে আমার ছোটবউয়ের মতো লাগছে নাকি?””

মিহি ঘাড় ঘুরিয়ে ইরফাদের দিকে তাকিয়ে বললো

“” কাকে?””

ইরফাদ ওর কাছে এসে নিজের বা হাতে ঘাড়টা সোজা করে,ডান হাতের আঙুল আয়নার দিকে তাক করে বললো,,

“”এই যে শাড়ী পড়া ছোট মেয়েটাকে!””

মিহি আয়নাতে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পারছেনা। অবশ্য নিজেকে নিজেরই চিনতে কষ্ট হচ্ছে। কেমন জানি বড়বড় আর লম্বা লম্বা লাগছে। পাশ থেকে ইরফাদ আবার বললো,,

“” আমার ছোটবউটাকে কেমন লাগছে?””

মিহি আয়নার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছে। তাহলে কি উনি আমাকেই ছোটবউ বলছেন?? মিহির ঠিকমতো লজ্জা পাওয়ার আগেই ইরফাদ ওকে পাজাকোলে উঠিয়ে বললো,,

“” আমার ছোটবউ দেখি লজ্জাও পায়। এবার বলো দরজার বাইরে যাবে নাকি ভেতরেই থাকবে?? তোমার কাপড়ের টুপলাটা তুমি উচু করতে পারবে তো?””

মিহি ইরফাদের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,,

“” জানিনা!””

মিহিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে ওর উপরে নিজের ভারটা ছেড়ে দিলো ইরফাদ।

“” ওরে আল্লাহ্ গো,আপনি কি ভার। আমাকে তো ভর্তা বানিয়ে দিচ্ছেন। আপনার কি জায়গা কম পড়ছে আমার উপরে শুয়েছেন কেন?””

মিহির কথাতে ইরফাদ শব্দ করে হেঁসে উঠেছে। তাতে যেন মিহি আরো একবার বুড়োটার প্রেমে পড়লো। ইরফাদ হাঁসতে হাঁসতে বললো,,

“” বুঝছি,তোমাকে বড় বানাতে হলে আমাকেই হাতে কলমে তোমার ক্লাস নিতে হবে।””
“”আবার ক্লাস?””

ইরফাদ ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,,

“” হুম। কঠিন ক্লাস। তোমাকে রোজ করতে হবে। ফাঁকি দিলেই সারারাত কান ধরে উঠবস করতে হবে।””

ইরফাদ কথার তালে তালে মিহির শাড়ীর আচলে হাত দিতেই মিহি আবার চেচিয়ে উঠলো,,

“” আবার শাড়ী টানছেন কেন? আমার এখানে কোনো তিল নাই।””
“” না থাকলেও খুলবো।””
“” তাহলে পড়িয়েছেন কেন?””
“” যাতে খুলতে সুবিধা হয়!””
“” আপনি তো দেখছি…””

ইরফাদ হাত দিয়ে মিহির মুখ চেপে ধরেছে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

“” ষড়যন্ত্র করে বুড়োকে বিয়ে করেছো,আর বুড়োর অত্যাচার নিবেনা তা কি করে হয়?? চুপ করে সহ্য করতে থাকো। ডিস্টার্ব করলে শাস্তির ডোজ বেড়ে যাবে।””

মিহি ইরফাদের হাত খামচে ছাড়িয়ে চিৎকার করে বললো,,

“” সুন্দর ভাইয়া। আমাকে বাচাও,তোমার ভাইয়া আমাকে ম…..””

মিহির কথা মাঝ পথেই কাট করে দিয়ে ওর ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে বন্দী করে নিয়েছে ইরফাদ।

~~

১ ঘন্টা পার হয়ে ২ ঘন্টা হতে চলেছে কিন্তু তাজের বের হওয়ার নাম নেই। তিহি অনেক্ষনযাবত দরজায় নক করে যাচ্ছে কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছেনা। ভেতরটা একদম যে নিশ্চুপ তাও না। ক্ষনিক বাদে বাদেই ভাঙচুরের মতো শব্দ হচ্ছে। কি হচ্ছে না হচ্ছে তিহি কিছু বুঝতে পারছেনা। একে তো টেনশন সাথে রাগটাও কাজ করছে। এক মিশ্র অনুভূতিতে তিহি দরজায় বেশ বড় বড় থাপ্পড় দিয়ে চেচিয়ে বললো,,

“” কি সমস্যা কি আপনার? এতোক্ষন ধরে ভেতরে কি করছেন? কি হয়েছে বলবেন তো। এদিকে যে আমি অস্থির হয়ে মরছি সেদিকে কি আপনার কোনো খেয়াল আছে?””

তিহির কথা শেষ হতেই ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে গেলো। তাজের মাথার পানিতে মুখ চুয়ে বুক পর্যন্ত ভিজে যাচ্ছে। বেশ স্বাভাবিক সুরেই বললো,,

“”চেন্জ করে ঘুমিয়ে পড়ো।””
“” ঘুমিয়ে পড়বো মানে?””
“” তিহি কথা বাড়িয়ো না। যাও প্লিজ!””
“” কি হয়েছে আপনার?””

তিহি তাজের দিকে নিজের হাতটা বাড়াতেই নিমিষেই তাজের শান্ত চেহারায় অশান্ত ছাপ ফুটে উঠেছে। সাদা চোখটা লাল হয়ে গিয়েছে। বেশ ঝাড়ি দিয়ে বললো,,

“” বলছিনা ঘুমিয়ে পড়তে? তর্ক করছো কেন? যাও বলছি!””

তাজের ঝাড়িতে তিহি ছিটকে উঠেছে। সাথে প্রাপ্তিরও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। চোখ বন্ধ করেই কেঁদে যাচ্ছে। তিহি ছুটে গেলো মেয়ের কাছে।

~~
নাস্তার টেবিলে বেশ রমরমা ভাব চলে এসেছে ইশাদদের বাড়িতে। জমিল সাহেব,ইরফাদ,মিহি,ইশাদ,ইনা সাথে ফরিদা বেগমও আছেন। তিন মাস হলো ফরিদা বেগম এ বাড়িতেই থাকছেন। ইরফাদ আর ইশাদের জোরাজুরিকে মাড়াতে পারেননি। তার উপর নিজের অমন ছোট মেয়েটা এতো বড় পরিবারটাকে সামলাতে হিমশিমও খাচ্ছে। সামনে তার পরীক্ষাও সব দিক ভেবে তিনিও এ বাড়িতে এসে উঠেছেন। চাকরীটাও ছাড়তে হয়েছে। মিহি আর ইরফাদের মিল মহব্বত দেখে যেমন সস্থির নিশ্বাস ছাড়েন একি সাথে তিহির জন্য দীর্ঘশ্বাসও ছাড়েন। সবাই যার যার মতো খাওয়া আর গল্প নিয়ে ব্যস্ত এরি মাঝে কলিংবেল বেজে উঠেছে। টুম্পা রান্নাঘরে থাকায় মিহি উঠতে নিলে,ইনা বললো,,

“” আপুমা,আমি যাচ্ছি। তুমি বসো।””

ইনা গুটি গুটি পায়ে দরজা খুলেই আনন্দে চিৎকার করে উঠলো,,

“” প্রাইভেট মামনি??””

ইনা সাথে সাথে তিহির বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে। ওর বুকে চেপে থেকেই চিৎকার করে ইশাদকে ডাকছে,,

“” ছোট বাবাই,তাড়াতাড়ি আসো। প্রাইভেট মামনি এসেছে। তোমাকে আর কাঁদতে হবেনা।””

ইশাদ খাবার রেখে দরজার নিকটে আসতেই ওর বুকটা ছেদ করে উঠলো। তিহিকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন?? ইনার আকস্মিক জড়িয়ে ধরাতে তিহির শাড়ীর আচল পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেদিকে তিহির কোনো খেয়াল নেই। ইশাদ ঝটপট তিহির কাছে গিয়ে ওর বুক থেকে পড়ে যাওয়া আচলটা উঠিয়ে কাধে বিছিয়ে দিয়েছে। আতংকিত কন্ঠে বললো,,

“” কি হয়েছে তিহি?””
“” ইনাকে আমায় দিবে,ইশ??””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here