#সর্বনাশিনী,৭,৮
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
৭
ইট পাথরের শহরের কোলাহল বড় বড় দালানের উপরে পৌঁছে খুব কম। গাড়ি হর্ণ, যানবাহনের তীব্র শব্দ থেকে বাঁচতেই দিলশাদ আমরিন তার এ্যামপ্যায়ারটির সর্ব শেষ তালায় নিজের কেবিনটি করেছে। নিরব আর নিরবতার জন্য। গত একটি বছর দিলশাদের জীবনে বড্ড অগোছালো, ঝামেলাপূর্ণ ছিলো। কাজের মাঝেই বেঁচে থাকার এক মাত্র আশা খুঁজে পেয়েছে যেন। কাজের মাঝে মনের কোনের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকার বৃথা চেষ্টা। নিজেকে কেমন যেন রোবট বানিয়ে ফেলেছে সে। দিলশাদ কাজের মাঝেই স্বচ্ছ কাচের দেয়াল ছেদ করে বাহিরের কেবিনে আকৃতা শেখকে বসে থাকতে দেখে বুকে মাঝে ধক করে উঠলো। ” স্নেহা!”
নাহ্.. নিহাত শুধু মনের কল্পনা। শুধুই হ্যালোসিনেশন।
দিলশাদ গা এলিয়ে দিলো চেয়ারে। চোখ জোড়া আজ খুব জ্বলছে। বুকের ভিতরটা পুরছে। হয়তো হাতের কাছে বন্দুক থাকলে হৃদয় নামক যন্ত্রটাকে ঝাঝরা করে ফেলতো এখনি। নিজের ভালোবাসা কিভাবে সে চিন্তে পারলো না? কিভাবে? কিভাবে হারিয়ে যেতে দিলো সে? চোখ বুঝলো দিলশাদ। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ছোট একটি বাচ্চা মেয়ে। টমেটোর মতো লাল গাল আর বড় বড় চোখ। ঠোঁটের মাঝে হাসির খিলখিল।
দিলশাদ আমরিন। ছোট থেকে এই যুবক নিজের ভাবান্তর সম্পর্কে কাউকে বুঝতে দেয়নি। না তার সম্পর্কে কেউ কোনো ধরণা করে মিল পেয়েছে। ছোট থেকেই দিলশাদ রগচটা, একরোখা মনোভাবের ছিলো। যা তার পছন্দ হতো? যে কোনো মূল্যেই চাই। সেটি খেলনা হোক আর কোনো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। দিলশাদ ছোটতেই ঠান্ডা গম্ভীর শীতল প্রকৃতির ছিলো। অতটুকু বয়সেই ম্যাচুরিটি ভাব চলে এসেছিলো তার মধ্যে। এভাবে ছেলেকে অন্য সব বাচ্চাদের থেকে আলাদা দেখে বিন্দু আর শিশির খুব কষ্ট পেতো, ভয় পেতো। কেন তার ছেলেটি এমন। যেন এক্সট্রা অরডিনারি কিছু ছেলেটির মাঝে। দিলশাদ যখন ১১ বছরের তখনি ২ টা ক্লাস স্কিপ করে এবং উপরের ক্লাসে ভর্তি হয়ে যায়। ওইটুকুন বয়সেই কম্পিউটার হ্যাকিং করা শিখে ফেলে। ইন ফেক্ট যে কারো ফোন ইজিলি ট্রাকিং করতে পারতো। এমন আরো অসম্ভব কিছু এইটুকুন বয়সেই আয়ত্ত করে ফেলে দিলশাদ।দিলশাদের জীবন এমনি চলছি একদিন তার বাবা-মা একটি ছোট পরির সাথে দেখা করালো। ছোট পরি, গোল গাল মুখ, টমেটোর মতো লাল গাল, বড় চোখ আর তার পলক। দিলশাদকে আকর্ষণ করলো। তারপর থেকেই সেই ছোট মেয়েটি তার জীবন হয়ে উঠলো। নিজের জীবনে আর কোনো মেয়ের জায়গায় ছিলো না। দিলশাদ আমরিন এই শীতল বরফ মানুষটি তার ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে। আর ওর পরিবার আর ভালোবাসার মাঝে যারা আসে? ধংস করতে কোনো দ্বিধাই কাজ করে না। দিলশাদ সেই বাচ্চা কাল থেকে মনের কোনো পোশা মানুষটির জন্য অপেক্ষা করতে করতে বড় হচ্ছিলো। একদিন দিলশাদ তার ভার্সিটি থেকে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঠিক তখনি টুং করে নোটিফিকেশন বেজে ওঠে। দিলশাদ ফোন নিয়ে আনমনেই চেক করতে লাগলো ফোন। এই একটা নোটিফিকেশন দেখেই দিলশাদের চোখ ছানাবড়া। খুশির এক ফোঁটা ছোয়া ছিলো চোখে মুখ।
” সেহের তালুকদার। এটা কি সত্যি তুমি? আমার ছোট পরি?”
দিলশাদ সেহেরে প্রোফাইল খুলে প্রোফাইল পিকচারটা জুম করে দেখলো। খুশিতে তার বুক ভরে গেলো। হ্যাঁ এটাই তো তার ছোট পরি। গলার মাঝে এখনো সেই লকেটটা সেহের সুন্দর গলার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে। দিলশাদ জলদি জলদি এক্সেপ্ট করলো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। কিন্তু ততখনে সেহের অফলাইনে চলে গেছে। দিলশাদ দীঘশ্বাস ছাড়লো। ফেইসবুক থেকে বেরিয়ে বিন্দুকে কল করলো। দিলশাদের বুকের ভিতরটা এখন খুশির ঢোল বাজছে। মনে হচ্ছিলো এই দৌঁড়ে দেশে ফিরে প্রিয় মানুষটিকে কাছে টেনে নিতে। ফোনের ওপাশে রিসিভ করতেই দিলশাদ তার উৎসুক গলায় বলল,
” আম্মু? তোমার কি মনে আছে আমরা দেশে থাকতে তালুকদার আঙ্কেলের বাসায় গেছিলাম?”
” হ্যাঁ মনে আছে তো, তুই তাদের মেয়ে তোর তাবিজটি দিয়ে এসেছিলি যে!”
” হ্যাঁ আচ্ছা ওর নাম কি? ”
বিন্দু কৌতূহল কন্ঠ বলল,
” ব্যাপার কি বলতো? হঠাৎ তালুকদার বাড়ির মেয়ের উপর এত ইন্টারেস্ট জাগাচ্ছে কেন?”
দিলশাদ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। এবং চুপ করে যায়। গম্ভীর কন্ঠে কিছুক্ষণ পর বলে উঠে,
” আম্মু তুমি বলবে? না কি ফোন রাখবো?”
বিন্দু হন্তদন্ত হয়ে বলল,
” রাগিস কেন বাপ, বলছি তো, তালুকদার বাড়ির মেয়ের নাম সেহের!”
দিলশাদের ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ছেয়ে রইলো। বিড় বিড় করে বলল,
” সেহের!”
সেদিনের পর থেকেই সেহের ছিলো দিলশাদের সব কিছু। দিলশাদের জান প্রাণ সব। সব সময় তার ভালবাসার জন্য ছিলো লোয়েল। সেহের সামনে সব মেয়েরাই ছিলো অদৃশ্য।
কিন্তু দিলশাদ আমরিন ভুল করেছিলো। চিন্তে ভুল করেছিলো তার প্রাণ পাখিটিকে তার ছোট পরিটিকে।
দিলশাদ হা করে শ্বাস ছাড়লো। আকৃতা শেখের দিকে আবার তকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কেনো এত টানে এই মেয়েটি তাকে? কেনো?
————–
শীতকালের মাঝে হঠাৎ টিপ টিপ বৃষ্টি। পরিবেশটি আরো রোমাঞ্চকর করে তোলে। চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার ধেয়ে আসে পৃথিবীর বুকে। বৃষ্টির প্রতিটি শীতল ফোঁটায় শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। এমন-ই সময় বিরক্তি নিয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সেহের। হুট করেই গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গেছে। ঘন কালো আধার তার উপর কাজ বাড়াতে বৃষ্টি। উফ! কি বিরক্তি! সেহের এদিক সেদিক দেখলো। নাহ্ এই সন্ধ্যা কোনো গাড়ি তো দূর মানুষের ছায়া টুকু নেই। সেহেরের এমন এক নির্জন জায়গায় হুট করে ভয় লাগতে শুরু করেছে। দূরে কোথাও নেকড়ে কুকুরা ডাকাডাকি করছে। হুট করে বুঝি কোনো পাখি উড়ে গেলো?? হাড়কাঁপানো ভয়ে সেহের কোনো রকম ফোনটি হাতে নিলো। দিলশাদ লিখা নাম্বারটিতে ডায়েল করতেই ওপাশ থেকে তীক্ষ্ণ মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো।
” ম্যাম স্যার মিটিং -এ!”
সেহেরের গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। কোনো রকম আটকে আসা গলায় বলল,
” আ.. মা..র গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গেছে। তোমার স্যারকে বলো আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। হ্যালো হ্যালো!”
কেটে গেলো কলটি। সেহের অজানা ভয়ে এদিক সেদিক চাইলো। গলাটা শুকিয়ে কাঠ। হুট করে একটি কালো ছায়া হেলতে দুলতে এদিকে আসতে দেখা গেলো। রাস্তা ধারের লাইটের আলো গুলো আরো.. আরো.. ভয়ানক করে তুলছে ছায়াটিকে। সেহের ভয়ে গুটিয়ে গেলো। ঠিক তার পিছন থেকেই একটি হাত শক্ত করে চেপে ধরলো সেহেরকে। এবং এক টানে নিয়ে গেলো রাস্তার ধারের ঝোপাটার আড়ালে। এবং ফেলে দিলো মাটিতে। বৃষ্টির ফোঁটায় ঝোপের ধারে কাঁদা মাটি লেগে গেলো সেহের শরীরে থাকা ওয়েস্টার্ন ড্রেসটিতে। সেহের আতঙ্কে কেঁপে উঠলো। একজন বীভৎস দেখতে লোক সেহেরের সুন্দর পা টেনে ধরলো। মুখ দিয়ে আপত্তিকর শব্দ বের করে হেঁচকি তুলে হাসতে লাগলো। বীভৎস লোকটির হাত চলতে লাগলো সেহেরের নরম মাংসপেশিতে। সেহের কাতরাতে লাগলো গলা কাঁটা মুরগীর মতো,
” প্লীজ আমাকে ছেড়ে দাও। লিভ মি। প্লীজ!”
লোকটি সেহের এমন কাতরানোতে চোখ মুখ কুচকে ঠাটিয়ে এক চড় বসালো সেহেরর সুন্দর গালে। সেহেরের মনে হলো কোনো ভয়ংকর হায়না তাকে গিলে খাচ্ছে। সেহের এতটা আতঙ্কে যে চিৎকার করতে ভুলে গেছে। এদিকে লোকটি তার কাপড় ছিড়ে ফেলেছে অর্ধেক। সেহের কেঁদে কুটে গাঙ ভাসাচ্ছে।কিন্তু কোনো লাভ হলো না। লোকটি এবার তার প্যান্টের চেন খুলতেই ধুম করে গিয় দু হাত দূরে ছিটকে পড়লো। সেহের সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিচু গলায় ক্রোদন রত কন্ঠে বলল,
” দিলশাদ। দিলশাদ তুমি এসেছো। তুমি না এলে…”
কথাটুকু বলেই ফুপিয়ে উঠলো সেহের। দিলশাদ কিছু বলল না। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকলো বীভৎস লোকটার দিকে।যাকে ঘিরে রেখেছে দিলশাদের বডিগার্ডরা। লোকটিকে মনে হচ্ছে বদ্ধ পাগল। না যেন কতদিন গোসল করে নি, দাঁত মাজে নি। এই মুখ নিয়ে সেহের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুম্বন করছে এই নিকৃষ্ট লোকটি? ছিঃ ভেবেই বমিটিং করতে ইচ্ছে করছে সেহেরের। দিলশাদ সেহেরকে নিজের কোটটা দিয়ে ঢেকে দিলো। বীভৎস দেখতে লোকটিকে আরো কয়েকটা মার মেরে পুলিশকে ফোন করলো দিলশাদের বডিগার্ডরা।আর দিলশাদ সেহেরকে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেলো।
এসব কিছু দূর থেকে দেখে স্নেহার বুকের ভিতর ঝড় উঠতে লাগলো। ধংস করে দিতে লাগলো শরীরের অঙ্গ পতঙ্গ। এসব কিছুই ছিলে স্নেহার প্ল্যান। ঠিক যেমনটি সেহের তার সাথে করেছিলো। একটি রেস্টুরেন্টের বারে কিছু মাতালদের মুখে ছেড়ে দিয়েছিলো। সেখান থেকে কোনো রকম নিজের সম্মান টুকু বাঁচিয়ে ফিরেছিলো স্নেহা। কই ছিলো সেদিন দিলশাদ? যতবার বিপদে পড়েছে স্নেহা কেউতো আসেনি তাকে বাঁচাতে। কেউ না। আর সেহের? ও বিপদে পড়তেই দিলশাদ সবসময় হাজির হয়। সবসময়। স্নেহের বুক ফাঁটা চিৎকার গিলে ফেললো। চোখের জল টুকু মুছে চোখে পড়েনিলো কালো রঙের চশমা। ঠোঁটের কোনে এক রহস্যময়ী হাসি ফুঁটিয়ে স্নেহা বলল,
” সেহের? দিলশাদ কি সব সময় থাকবে তোমার সাথে? নাহ্! থাকবে না। আমার সাথে তুমি যা যা করেছো সব এবার তোমার সাথে-ও হবে। একেই বলে কারমা…..! যেমন বীজ বপন করবে তাইতো পাবে! এটাতো কেবল শুরু সেহের!”
চলবে,
#সর্বনাশিনী
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
৮।
চারিদিকের রঙ্গিন আলোয় ভরপুর। জায়গাটির ঠিক পিছনে-ই মিউজিক বাজাচ্ছে। ডান্স ফ্লোরে চলছে উড়ো ধুরো ডান্স। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাবলিক মাতাল হয়ে নাচে ব্যস্ত ডান্স ফ্লোরের সুন্দরী রমণীদের সাথে। ঠিক তার উল্টো পাশে নিরব নির্জন একটি জায়ায় হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে বসে আছে দেশের টপ টেন বিজনেস ম্যানদের মাঝে অন্য তম দীপক মিশ্র। পাশেই সুন্দরী ললনা তার লতানো শরীর দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।
” মি. মিশ্র! ইট’স হ্যায়ার!”
কর্কস মিষ্টি একটি কন্ঠ ভেসে এলো তার পাশেই ডিভানে আরাম করে বসে থাকা বঙ্গললনার।
” মিস. আকৃতা ইউ হ্যাভ নো রিগ্রেটস!”
দীপক মিশ্র ঠোঁটের সাথে ওয়াইনের গ্লাসটি লাগিয়ে বলল। স্নেহা ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,
” নো মি. মিশ্র।”
দীপক কৌতূহল কন্ঠে আগ্রহ প্রকাশ করলো,
” তা আপনি ঠিক কেন এমন করছেন মিস মেখ? ইউ নো? আমরিন এ্যামপায়ার আর মিশ্র গ্রুপ বিজনেস কম্পিটউটর?”
” আমি তা ভালো করে জানি মি. মিশ্র। আর তাই আপনাকে সাহায্য করছি। সব থেকে বড় কথা… ইটস গুড আফটারনুন ফর ইউ? সো ট্যাক ইট!”
দীপক মিশ্র ওয়াইনের গ্লাস উপরে তুলে এপ্রিশিয়েট করে বলল,
” থ্যাংক ইউ ফর দ্যা ডিল!”
স্নেহা উঠে দাঁড়ালো। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হেসে বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে।
পরের দিন সকালে,
স্নেহা তার নিয়ম মাফিক অফিসে ঢুকলো। ঠিক তখনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো ম্যানেজার শশি,
” স্নেহা? প্লীজ টেক ইট! এন্ড গো স্যার হোম, স্যার আজ অফিস আসেনি, আর এই ফাইলটি খুব ইম্পর্টেন্ট। এখানে স্যারের সাইন লাগবে।”
স্নেহা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল। আবারো বেড়িয়ে গেলো বাহিরের দিক। তরুনের গিফট করা গাড়িটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো স্নেহা তার শশুর বাড়ি। স্নেহা হা করে শ্বাস ছাড়লো। রাস্তার পথ যত ফুরোচ্ছে? পুরোনো স্মৃতি চরণ হচ্ছে। এই-তো তাদের বিয়ের ঠিক চার মাস পরেই…স্নেহা কনসিভ করে। যা সে জানতোই না… স্নেহা খুব একটা সময় দিলশাদের সাথে ভালো কাটেনি। যতটুকু কাটিয়েছে শুধু বেদনাদায়ক সময়। কনসিভ করাটাই ছিলো যেন তার জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া। বিন্দু এই খবর শুনে স্নেহাকে নিয়ে আসে তার কাছে। দিলশাদ পাল্টাতে থাকে। স্নেহার প্রতি যত্নবান হতে থাকে। যেদিন প্রথম জানলো বাবা হচ্ছে দিলশাদ হুট করেই অনেক খেলনা নিয়ে উপস্থিত হয়। বিন্দু কঁপালে হাত। হেসে হেসে ছেলেকে বলে,
” পাগল ছেলে!”
দিলশাদের সেদিকে খেয়াল কই? দিলশাদ স্নেহাকে কোলে করে রুমে নিয়ে যায় সবার সামনে থেকে। স্নেহা অবাক। এত কেয়ার? সত্যি? স্নেহার চোখে জল ছলছল করে উঠলো। স্নেকে বিছানায় বসিয়ে, ঠিক তার সামনেই দিলশাদ হাটু গেরে বসলো। স্নেহার পেটের কাছে কান নিয়ে ছোট প্রাণটির হৃৎস্পন্দনের শব্দ শুতে চাইলো। কিন্তু বাচ্চাতো এখনো ছোট ধীরে ধীরে তার শরীরের গঠন হবে বড় হবে তারপরেই না বুঝতে পারবে দিলশাদ!
স্নেহার বড্ড লজ্জা লাগছিলো। দিলশাদের এমন কেয়ারে সে অভস্ত্যত নয়। তাই কেমন লাগছিলো যেন। তবু-ও স্নেহা দিলশাদের প্রতিটি মুভ মেন্ট পর্যবেক্ষণ করছিলো। একপর্যায়ে দিলশাদ স্নেহার মেদহীন পেটে গভীর চুমু খেলো। স্নেহা সঙ্গে সঙ্গে শিউরে উঠলো। স্নেহার প্রতিটি অঙ্গে আরো গভীর হতে লাগলো দিলশাদের নরম ঠোঁটের স্পর্শ। স্নেহা কেঁপে উঠলো, অপ্রত্যাশিত ভালোবাসায়। দিলশাদ স্নেহার কানের কাছে এসে থেমে গেলো, নিচু গলায় বলল,
” তুমি আমাকে অনেক বড় একটি উপহার দিয়েছো স্নেহা। কিন্তু তাই বলে আমার থেকে ভালো কিছু আশা ছেড়ে দেউ। ভুলে যেও না কখনো আমি শুধু সেহেরের। আর এই বাচ্চাটা-ও আমার। এই বাচ্চার উপর তোমার কোনো অধিকার থাকবে না!”
একজ যুগল এমন ইন্টিমেটের সময় যদি ঠিক এমন একটি কথা বলে তার পার্টনার? অবশ্যই তা ভালো লাগবে না? স্নেহারো লাগলো না হতাশা জনক চোখে স্নেহা বলল,
” আপনি না হয় আমাকে সারা জীবন ভুল বুঝে গেলেন দিলশাদ, তবে এই বাচ্চার বেলায়, কোনো ভুল ভাবনায় আপনাকে থাকতে দিবো না। বাচ্চাটি শুধু একার আপনার না.. আমারো। এর উপর ঠিক ততটুকু অধিকার আছে আমার যতটুকু আপনার!”
দিলশাদ রেগে গেলো। চোখ মুখ লাল করে স্নেহার গালে শক্ত করে ধরলো। শাসিয়ে বলল,
” আমার মুখে মুখে তর্ক পছন্দ নয়। বাধ্য থাকো, নয়তো এই বাচ্চা জম্ম হওয়ার পর আর মুখ দেখতে পারবে না।”
স্নেহা আত্মকে উঠলো,
” এতটা কঠোর হবেন না!”
দিলশাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। তার এই হাসিতে স্নেহা ধমে গেলো। মুখ দিয়ে রা বের করার সাহস পেলো না। চোখ দিয়ে অজস্র জল পড়তে লাগলো।
কিন্তু স্নেহার খুশিতে গ্রহণ লাগবে না? তা কি হয় নাকি? পৃথিবীতে যারা যত সরল, নরম তাদের জন্য শত শত কষ্ট। মারিয়া… দূর সম্পর্কের আত্মীয়া বিন্দুর। বাবা-মা এক দূর্ঘটানায় মারা যাওয়ায় ছোট থেকে বিন্দু আর শিশির আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছে। টিভি স্টার বানিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারিয়ার ফলোয়ার। সুন্দর দেহ, সুন্দর রূপ নিয়ে তার বড্ড অহং। ছোট থেকেই একটি তার দূর্বলতা… দিলশাদ আমরিন। কিন্তু দিলশাদ প্রথমে সেহের এখন স্নেহাতে আসক্ত। মারিয়ার কোনোই চান্স নেই। কিন্তু একটা আশা ছিলো স্নেহাকে দিলশাদ ডিভোর্স দিবে বলেছিলো। কিন্তু বাচ্চার আগমনে দিলশাদ আমরিন যেনো ইউক হয়ে পড়ছে স্নেহার প্রতি। এসব কিছু যেন আউট ওফ কান্ট্রোল হচ্ছিলো মারিয়ার।মারিয়া তাই ছক কসলো।
” বাচ্চা টা? বাচ্চাটা যদি না থাকে? তাহলে তাহলে হবে তো দিলশাদ আমার?”
মারিয়া ঠিক কিছু দিনের মাঝেই সফল হলো তার কাজে। সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে স্নেহা স্লিপ কেঁটে একে বারে নিচে পড়ে যায়। এবং তিন মাস বয়সেই স্নেহার অংশটি পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। এর জন্য অবশ্যই দোস স্নেহা উপর পরেছিলো। যার জন্য স্নেহাকে দিলাদ তাদের বাসা থেকে বের করে দিয়ে ছিলো।
স্নেহা আজ আবার সেই বাসায় নিজের পা রেখে এগিয়ে গেলো ভিতরে। স্টাডি রুমের সামনে এসেই নক করলো দরজা।
“কামিং!”
ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো। স্নেহার হার্ট ভীট দিগুণ বেগে বৃদ্ধি পেলো। ডিপ ডিপ করে ছন্দ বাজিয়ে যাচ্ছে এই হৃদপিণ্ড নামক যন্ত্রটা। কেন? কেন এমন হয়? স্নেহা যতবার এই লোকটির সামনে আসে? নিজেকে ভুলে যেতে থাকে! কেন এমন মনে হয়? পুরো দুনিয়া ফেলে নির্জনে দিলশাদের বুকে মাথা রাখতে। কেন এমন মনে হয়? এই নিকৃষ্ট এরোগেন্ট লোকটিকে কাছে পেতে। স্নেহার অবচেতন মন জাগ্রত হতে স্নেহার আবেগ-বিবেক ধংস করতে চাইছে খুব করে। কিন্তু সচেতন মন একটা টোকা মেরে মস্তিষ্ককে জাগ্রত করে তুললো। স্নেহা এসে দাঁড়ালো দিলশাদের সামনে। দিলশাদ নিস্প্রভ দৃষ্টি মেলে আকৃতা শেখকে দেখছে,
” ফাইল!”
স্নেহা এগিয়ে দিলো। যথাসম্ভব চোখে জোরা নিচে রেখে আছে স্নেহা। দিলশাদের তীক্ষ্ণ চাহনি স্নেহাকে আনকম্ফোর্টেবল করে তোলে। দিলশাদ ফাইলটি পর্যবেক্ষণ করে নিলো ভালো করে। ফাইল দেখার মাঝে আড় চোখে আকৃতা শেখকে গভীর ভাবে খুটিনাটি দেখতে লাগলো। স্নেহার নরমাল মুভ মেন্টের সাথে স্বভাব সাথে খাপ খাইয়ে যায়। দিলশাদের মাথায় চিন্তার দুটি ভাজ পড়লো। তারপর সাইন করে এগিয়ে দিলো। স্নেহা মাথা নাড়িয়ে যেই বাহিরে যেতে লাগলো। দিলশাদ স্নেহার হাত টেনে ধরলো। সন্ধিহান কন্ঠে বলল,,
” হো আর ইউ?”
স্নেহা উপরে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরে নিয়ে বলল,
” স্যার আপনি কি আমাকে একা পেয়ে ফায়দা উঠাতে চাইছেন?”
দিলশাদ ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
” তোমার কি মনে হচ্ছে?”
স্নেহা হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। দিলশাদ আরো শক্ত করে ধরে স্নেহাকে আরো কাছে টেনে নিলো, দিলশাদের ঝংকার তোলা কন্ঠ। উৎসুক চোখ জোরা নিয়ে বিচলিত হয়ে বলল,
” তোমার উপস্থিত, তোমার স্পর্শ, তোমার চাহনি, সব.. সব কিছু তার মতো। তুমিই কি সেই?”
একমুহূর্তের জন্য স্নেহার মনে হয়েছিলো সে ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু? কিন্তু না.. শুধু ডাউট। স্নেহা নিজেকে শক্ত করে বলল,
” স্যার আপনি ভুল করছেন, প্লীজ লেট মি গো।”
দিলশাদ ছাড়লো না আরো কাছে টেনে নিলো। এতটা কাছে যে একটা সুতো পরিমাণ জায়গায় দু’জনের ঠোঁটের মাঝে…. যে একটা চিত্র। ভালোবাসায় মগ্ন দুটি নর-নারী। ঠিক সেই সময় বড়সর আওয়াজ করে দরজা খুলে গেলো। আর দেখলো….
চলবে