তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি Season_2,পর্ব (১০)

0
804

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি Season_2,পর্ব (১০)
#রোকসানা_রাহমান

“আমি আর পালাব না। ছেড়ে দিন। ছেড়ে দিন! আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”

ইশাদ তিহির কথায় আরো অস্থির হয়ে পড়ে। সে তো তাকে ধরেনি,ছোঁয়নি তবুও কেন বলছে ছেড়ে দিতে? কী সহ্য করতে পারছে না? ইশাদ আরেকটু ঘেষে আসে তিহির দিকে। তখনি নজরে পড়ে তিহির পা। পায়ের কাছে পড়ে আছে কয়েকটি জ্বলন্ত সিগারেট!

ইশাদের চোখে,মুখে ঝরে পড়ছে আতঙ্ক! ভেতরে ভেতরে অনুভব করছে রক্ষণশীলতা সাথে কিছু আজগুবি চিন্তাভাবনা। কী রেখে কী করবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। তিহি এখানে কেন? বন্দী কেন? আর এই সিগারেটগুলোই আসলো কোথা থেকে? ও কাঁদছে কেন? হাজারও প্রশ্নে ঝিম ধরে যায় তার মাথা। উত্তরহীন প্রশ্ন গুলো দূরে ঠেলে তিহির পাশে বসে পড়ে। চোখ পড়ে পায়ের তালুতে। রক্ত ঝরছে কী! ইশাদ পা ছুঁতে যায় সঙ্গে সঙ্গে পা’টি হারিয়ে যায়। ইশাদ চমকে উঠে। হাত সরিয়ে নিতে হাওয়ায় মিলে যায় তিহির শরীরের বিভিন্নাংশ। ইশাদ বসা থেকে দাড়িয়ে পড়ে। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে মৃদু ভীত শব্দ। তারপর? একে একে হারিয়ে যায় তিহির সর্বস্ব। সিগারেটের টুকরোগুলো এমনকি রুমটাও! তখনি ঘুম ছেড়ে লাফিয়ে উঠে ইশাদ৷ তার শরীর ভিজে গেছে। ঘর্মাক্ত শরীর দিয়ে বের হচ্ছে অদৃশ্য উষ্ণ ধোঁয়া! যা দেখা যায় না শুধু অনুভব করা যায়।

এমন বিদঘুটে স্বপ্নের মায়া কাটাতে বেশ সময় নিল ইশাদ। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। টেনে নিল কয়েকটি বড় বড় নিশ্বাস। চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝে নেয়। নিচেই কাঁথা পেতে শুয়ে আছে টনু। রাতে অনেক জোরাজুরি করেও তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমাতে পারে নি ইশাদ। ও বেচারার ভয় ভেতরে শক্তভাবে বসেছে। সে বার বার এক কথায় বলেছে,

“আগের বার কোমর ভাঙছি এবার আপনার লগে হুইলে আমার সব হাড় গুড়া গুড়া হইয়া যাইব। শেষে আমার বউয়ের কী অইব? আপনি উপরে হন,আমি নিচে শুইতাছি।”

বেডের পাশের ছোট্ট টেবিলের উপর পানির গ্লাস রাখা। জগও আছে। ইশাদ দ্রুত পানি খেল। গায়ের চাদর সরিয়ে ধীর পায়ে গিয়ে দাড়ায় জানালার পাশে। এখন রাতের শেষ প্রহর চলছে। বাইরে কোলাহলশূন্য। রাস্তার ব্যস্ত মানুষগুলো এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন। বুনছে হাজারও অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্নজাল। আচ্ছা অদ্ভুত স্বপ্ন হবে কেন? সবাই কি তার মতো স্বপ্ন দেখে? ইশাদ জানালা থেকে সরে আসে। সত্বরে পা চালায় দরজার দিকে। রুম ছেড়ে সোজা চলে আসে ছাদে। ভেতরে ভেতরে এক ভয়াবহ অস্থিরতা কাজ করছে তার। এই অস্থিরতা দমাতে হলে তিহির সাক্ষাত প্রয়োজন। মেয়েটা ঠিক আছে তো? কোনো বিপদ ঘটেনি তো? বার বার তাকে নিয়েই কেন এমন বিশ্রী স্বপ্ন দেখে সে? কেন? মুহূর্তেই ইশাদ ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তিহির একটু দেখা,একটু কথা শোনার জন্য মরিয়া হয়ে চিলেকোঠার ঘরটির সামনে এসে দাড়ায়। দরজায় ভারী কড়াঘাত ফেলার প্রস্তুতি নিলেও ফেলতে পারে নি। ব্রেইন তাকে সাবধানি বার্তা দিচ্ছে। এতো রাতে কারো ঘুম নষ্ট করা কি ঠিক হবে? সমস্যা তার,অন্যের তো নয়। তাহলে অন্যকে কেন বিরক্ত করবে? তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে কে জানে! তৎক্ষনাৎ রেখা ভূঁইয়ার মুখটি ভেসে উঠে চোখের সামনে। মনে পড়ে অনেক কিছু। এরপর দরজায় নক করার সাহস সাহস পায় না। বন্ধ দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। নিরবে সময় কাটিয়ে ঘুরে দাড়ায়। ভেতরের চঞ্চলতা এখনো আগের রূপেই আছে। একটুও কমেনি। কিন্তু কেন? কিসের এত উদ্বিগ্নতা? কার জন্য? তিহির?

ইশাদ উদাসীন পা চালায় ছাদের পাঁচিলের দিকে। চোখ রাখে আকাশে। রাতের ঘন কালো অন্ধকারটা পৃথিবীর বুকে ঢেলে দিয়ে আকাশ এখন ঝকঝকে পরিষ্কার৷ বিশাল আকাশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে চাঁদ তার জোসনা ছড়াচ্ছে ভূপৃষ্ঠে। গাছের পাতায় পাতায় চলছে নিরব কথোপকথন। কথায় কথায় বাড়ি খাচ্ছে একে অপরের সাথে। সেই সাথে ভেসে আসছে মৃদু বাতাস। অন্ধকারেই ইশাদ মৃদু কেঁপে উঠে। খেয়াল করে তার শরীরের উপরের অংশে কোনো জামা নেই। কখন খুলেছে মনে করতে পারছে না৷ ঘুমের ঘোরে কি?

ইশাদ ভাবুক মনেই সিড়ি ঘরের দিকে তাকায়। সামান্য শীত শীত অনুভব হচ্ছে। কাপড় পরে আসবে নাকি ভাবছে। পরক্ষণে এটাও ভাবল,কাপড় পরে আবার কেন আসবে? এই নিস্তব্ধ রাতে একা একা কিসের অপেক্ষায় প্রহর গুনবে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিহিদের রুমের দিকে তাকায়। চাঁদের জোসনায় ডুবে আছে সে ঘরটি। এক অদ্ভূত মুগ্ধতায় ইশাদ পুনরায় সে রুমটির কাছে চলে আসে। এবার দরজায় নয়,জানালার পাশে এসে দাড়ায়। খানিক্ষণ মোহণীয় দৃষ্টি ছুড়ে জানালার কাছে৷ আলতো করে হাত দিয়ে ছুঁয়েও দিল কাঁচটি। বুজে নেয় চোখদুটো। মুখের অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছে সে কাঁচ নয়,অন্যকিছু ছুঁয়েছে! কিছুক্ষণ এভাবেই কাটিয়ে দিল। মিনিট কয়েক পার করে জানালার নিচেই বসে পড়ে। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ফেলে। ভাবটা এমন যে,আজ সে এখানেই ঘুমাবে।

_______________________________

“ওহে! বস্ত্রহীন বালক,বল তোর কী চায়?”

নারীর সুমধুর কন্ঠে ইশাদের ঘুম কেটে গেল। চোখ মেলে তাকাতেই সূর্যের তীর্যক রশ্মির সাথে বাড়ি খায় অক্ষিকোটর। না চায়তেও চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে। কয়েক বার মাথা ঝাড়া দেয়। হাত দিয়ে চোখ কচলে পিটপিট করে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়ে ভরে উঠে চোখদুটো। সামনে একটি নারী। গাঢ় সোনালী রঙের শাড়ীটি নরম রোদে চিকচিক করছে। সে স্থির মানবী সেজে নরম দৃষ্টি ফেলছে ইশাদের দিকে। ডান হাতটি উল্টো ভাজ করে হাতের তালু শক্ত করে আছে। অনেকটা হিন্দু ধর্মের দেবিদের মতো।

তিহি ঠোঁট টিপে হাসছে। হাসি আটকে গলার স্বর আরো নরম করে মিঠা গলায় বলল,

“সোনা,গয়না,হীরে,টাকা-পয়সা,গাড়ি,বাড়ি? নাকি আরো দামী কিছু? আজ তোর সব চাওয়া পূর্ণ হবে। একবারটি শুধু মুখ ফুটে বল। তোর সাধনায় আমি তুষ্ট! বালক,নির্দ্বিধায় তোর মনের বাসনা বল।”

তিহির এমন আচরণে ইশাদ থতমত খেল। কয়েক সেকেন্ড লাগল তার কান্ড কারখানা বুঝতে। তারপর নিজের দিকে চেয়ে নিজেই লজ্জা পেল। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,ঘুমানোর আর জায়গা পেলাম না? এই মেয়ের ছায়ায় ঘুমাতে হল? আমি কি দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছি? হায়! আমার বুদ্ধিগুলো কোথায় ডুবে মরছে?

ইশাদের ইচ্ছে হলো নিজের গালে কয়েকটা চড় বসাতে। কিন্তু এখন সম্ভব নয়। এই মেয়ের সামনে তো নয়ই। তাহলে এখন কী করবে? ছুটে পালাবে?

ইশাদ লুকিয়ে তিহির দিকে তাকাল। সে এখনো দেবীরূপ ধরে আছে। এমন ভাব যেন সে যা চাইবে তা তার হাতের তালু ছিঁড়ে টুপ করে পড়বে! আদৌ কি সম্ভব? একবার চেষ্টা করে দেখবে? যোগ দিবে তিহির খেলাতে?

ইশাদ হাত-পা নাড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙল। তারপর পা ভাজ করে সোজা হয়ে বসল। হাতদুটো করজোর করে বিনয়ী গলায় বলল,

“এই অধমের বেশি কিছু চায় না। শুধু আপনার..”
“তিহি? কই গেলি মা?”

রেখা ভূঁইয়ার ডাকে ইশাদের চাওয়া কথাগুলো চাপা পড়ে গেল। তিহি নিজের রূপ বদলে তড়িঘড়িতে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে। ইশাদ তার গমনপথে দুর্বল নয়নে চেয়ে আছে। মুখটা ভার! এখনি চলে যেতে হলো? কথাটা তো বলাই হল না।
_________________________

ফাল্গুন মাসের অষ্টম দিন। শীতের কনকনে ঠান্ডাটা হারিয়ে গেছে অনেক আগে। বাইরের ভেসে আসা মৃদু বাতাসে শীতল অনুভূতি জাগলেও লোমগুলো দাড়িয়ে যায় না৷ বরঞ্চ এক রকম অদ্ভূত ভালো লাগা দোল দিয়ে যায়। রাস্তার দু ধারের গাছ গাছালিতে থেকে উড়ে আসে মিশ্র সুবাস! হ্যাঁ বসন্তকালের জানা অজানা নানা রঙের ফুলগুলোর মিষ্টি গন্ধ মিলেমিশে তৈরী করে মিশ্র সুবাস। মানব মনে ভরে তুলে আনন্দময় অনুভূতি। যার কারণ হয়তো কেউ খেয়ালই করে না। ইশাদও কি করবে না৷ সে রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে ক্লিনিকে ঢুকে পড়ে। গেইট পার হয়ে সিড়িতে পা ফেলে থমকে যায়। কিছু একটা ভেবে আবার পিছিয়ে আসে। ঠিক গেইটের কাছে। গেইটের ডানদিকে মাঝারি আকৃতির ছায়াদানকারী চিরসবুজ অশোক বৃক্ষ দাড়িয়ে আছে। গাছে সবুজ রঙের কচিপাতাগুলো কোমল,নরম ও ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। কান্ডে কান্ডে তার বহুপৌষ্পিক! কমলা রঙের তাজা ফুলের মৃদু গন্ধে তার মাথায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ে। তিনি এক কবিতায় বলেছিলেন, পুরাকালে নাকি অশোক গাছে নারীর চরণস্পর্শে ফুল জেগে উঠতো! তবে কি এই ফুলের পেছনেও নারীর চরণস্পর্শের কোনো ব্যাপার আছে? নিজের প্রশ্নে নিজেই চমকে উঠে। এসব সে কী ভাবছে? সে দ্রুত মাথা দু দিকে নাড়ে। সিড়ি ডিঙিয়ে চলে যায় দো’তলায়।

ঘড়ির মোটা ও ছোট কাটাটি এখন বারোটায়। ইশাদ রোগী দেখায় ভীষণ ব্যস্ত। ব্যস্ততার মধ্যেই তার হঠাৎ মনে পড়ে মিহির কথা। তিহির কথা। অতঃপর ইমদাদের কথা। ইমদাদের ধারণা ইশাদ মেয়েদের সাথে মিশে না। কারণ সে মেয়েদের শরীরের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। কিন্তু সে তো দিব্যি মিহির সাথে মিশেছে। তিহির সাথেও। কখনো তো সেরকম অসস্থি হয়নি। তবে কি তার রোগ ভাল হয়ে গিয়েছে? আসলেই? পরীক্ষা করা দরকার! কিভাবে করবে? ইশাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়। এই পরীক্ষার জন্য একটি মেয়ে দরকার। সে বাইরে উঁকি দিল। ওয়েটিং রুমে কোনো মেয়ে রোগী দেখা যাচ্ছে না৷ সব ছেলে। তাহলে? পরীক্ষাটি কি আজ হবে না? ইশাদের উত্তেজনা নিভে যেতেই মনে পড়ে ড. মোহনার কথা। সে পাশের চেম্বারেই আছে। গাইনি বিশেষজ্ঞ। এই মেয়েটির বিশেষ দুর্বলতা আছে ইশাদের উপর। তবে ইশাদের শক্ত আচরণে এদিকে ঘেষার সাহস পায় না৷ আবার পিছিয়েও যায় না। নানা অযুহাতে যখন তখন তার কেবিনে ঢুকে পড়বে। হাত দুটো তার ব্যস্ত থাকে নানা অঙ্গভঙ্গিতে! ইশাদ আর সময় ব্যয় করল না। সোজা চলে গেল ড.মোহনার কাছে। সরাসরি বলল,

“পাঁচ মিনিট সময় হবে? একটু কথা ছিল।”

ড.মোহনা চমকে উঠল। সে রোগী দেখায় ব্যস্ত। একজন মাঝ বয়সী মহিলার নাকের ভেতর আলো জ্বালিয়ে কিছু দেখছিল। ইশাদের এমন আকস্মিক আগমনে ঘাবড়ে যায়। সামান্য উদ্বেগ ভেসে উঠে কপালে। কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে রোগীকে বাইরে যেতে বলল। ইশাদের দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বলল,

” ভেতরে এস। জরুরী কিছু?”

ইশাদ ভেতরে ঢুকল তবে বসল না। বার কয়েক মোহনার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা গলায় বলল,

“একটু আমার সামনে এসে দাড়াবে?”

মোহনা দ্বিতীয় দফায় চমকে উঠল। যেন এই ধরনের কথা এই ছেলের মুখ দিয়ে বের হতেই পারে না। পৃথিবী উল্টে গেলেও না। সে বিস্ময় নিয়েই ধীর পায়ে ইশাদের সামনে এসে দাড়াল। ভেতরে ভেতরে ভয় কাজ করছে। সকালেই মোহনা তার বান্ধবীর কাছে ইশাদকে নিয়ে নানা কল্পনা-জল্পনার কথা বলেছিল। তবে কি ইশাদ সব শুনে ফেলেছে? গালে চড় বসিয়ে দেবে না তো?

মোহনা বেশ দূরত্ব রেখে দাড়িয়েছে দেখে ইশাদ আবার বলল,

“আরেকটু কাছে এসে দাড়াও।”

মোহনা চোখ তুলে তাকাল ইশাদের দিকে। চোখটা বুঝি এখনি ভিজে উঠবে। তার সজাগ মন বলছে,চড় দিবে নিশ্চিত। মোহনা আরেক কদম এগিয়ে তো গেল। তবে ডান হাত দিয়ে বা’গাল ঢেকে ফেলল। বাম হাত দিয়েও ডান গাল ঢাকবে নাকি ভাবছে। তন্মধ্যেই ইশাদ আবার বলল,

“আরেকটু কাছে আসা লাগবে।”

কথা শেষ করে সে নিজেই মোহনার কাছে চলে গেল। অনেকটা ঘেষে দাড়িয়ে মোহনার হাত ধরে ফেলেছে। হাতটা নিজের গালে ছুঁয়িয়ে গভীর নিশ্বাস টানবে তখনি,

“নষ্ট পুরুষ!”

ইশাদ চড়কি বেগে ঘুরে দাড়ায়। তিহি দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে। মাথাটা ভেতরে ঝুঁকানো। অনেকটা উঁকি দেওয়ার ভঙ্গিমা। তিহি মুখ কুঁচকিয়ে বলল,

“ছি! এখানেও নষ্টামি শুরু করে দিয়েছেন?”

বিস্ময়ে ইশাদ কিছুক্ষণের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মানবমূর্তি ধারণ করে নির্জীব দৃষ্টি ফেলছে দরজা পানে। তিহি মুখ ঝামটি মেরে চলে গেল। বাইরে থেকে ভেসে আসছে,

“আম্মা,এখানের ডাক্তার ভালো না। চলো আমরা অন্য কোথাও দেখাব!”

__________________________
“আর কতক্ষণ দেখব?”

ইমদাদের কাতর স্বরে ইশাদের মায়া হল না। সে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“আধা ঘন্টা হতে এখনো ছয় মিনিট বাকি। ভালো করে দেখ। আমার মাথা থেকে পা অবধি সব দেখবি। গভীর পর্যবেক্ষন কর।”

ইমদাদ ইশাদের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,

“কিন্তু কেন? এমন এক ধ্যানে দেখে কী হবে? আমার চোখ জ্বালা করছে বন্ধু!”

ইশাদ আবার ঘড়ি দেখল। কাটায় কাটায় আধঘন্টা শেষ হলে খুশি মনে বলল,

“সময় শেষ।”

সঙ্গে সঙ্গে ইমদাদ চোখের পাতা ফেলল। চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসল। ভাব দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘকাল তাকে পাথরবন্দী করেছিল!

ইশাদ টেবিলের উপর হাত রেখে দৃঢ়স্বরে জিজ্ঞেস করল,

“বল তো আমি কে?”

ইশাদের প্রশ্নে ইমদাদ ‘থ’ হয়ে রইল। সন্দিহানে বলল,

“পাগলের চেম্বারে এসে কি পাগল হয়ে গেলি?”

ইমদাদের কথা শেষ হতেই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল ইশাদ। রূঢ় গলায় বলল,

“ভুলভাল উত্তর দিলে আবার খাবি। যে প্রশ্ন করেছি সেই উত্তর দে।”

ইমদাদ দমে গেল। শুকনো গলায় বলল,

“কোন প্রশ্ন?”
“আমি কে?”
“তুই ইশাদ। আমার ছোটবেলার বন্ধু,সহপাঠী,খেলার সাথ…”

এবার ইমদাদ কথা শেষ করার সুযোগও পেল না। তার পূর্বেই আরেকটি চড় পড়ল। ইমদাদ মিনমিনিয়ে বলল,

“এখন কী করলাম?”
“আমি জানতে চেয়েছি আমি কে। আর তুই তোর বন্ধুর বায়োডাটা দিচ্ছিস। আই ওয়ান্ট টু নো,হু এম আই?”

এবার ইমদাদ কাঠ গলায় বলল,

“তুই ইশাদ। ড. ইশাদ (আই স্পেশালিষ্ট)।”

ইশাদ ঝট করে উঠে দাড়াল। কিছুটা উগ্র স্বরে বলল,

“না। আমি ইশাদ নই। অন্য কেউ!”
“অন্য কেউ?”

ইশাদ ইমদাদের কাঁধ চেপে ধরে। চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল,

“আমার মনে হয়,আমি ইশাদের মতো দেখতে অন্য কেউ। বাহ্যিকটা এক। কিন্তু ভেতরটা আরেক।”
“তাই নাকি? তা এই অন্য কেউটা কে? তার নাম কী? কোথায় থাকে?”

ইশাদের দীপ্ত মুখটা নিষ্প্রভ হয়ে এল। মৃদু গলায় বলল,

“জানিনা। মনে হয় আমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গিয়েছে।”

ইমদাদ চট করে বলল,

“এক মিনিট দাড়া। আমি বাইরে থেকে কয়েকটা ইট নিয়ে আসছি। তোর মাথায় ভাঙলেই স্মৃতিশক্তি ফিরে আসবে!”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here