তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি season_2,১৫,১৬

0
813

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি season_2,১৫,১৬
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১৫)

বাংলা ফাল্গুন মাসের পনেরো তারিখ চলছে। দিবার সূর্যের তপ্ত অহংকার অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। সেই সুযোগে দুপুরকে ঠেলে জায়গা করে নিচ্ছে বিকাল! জায়গাটা কতক্ষণ দখলে থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। কেননা,আকাশে এখন সাদা-কালো মেঘের বিচরণ চলছে। যেকোনো সময় নিজের শরীরের তীব্র কালো অভিমান ছড়িয়ে পড়তে পারে সমগ্র অন্তরীক্ষে! তারপর?

ইশাদ ক্লিনিক ছেড়ে বাইরে বেরোতেই কপালের চুলগুলো উদ্দেশ্যহীন উড়ো খেলায় ঝাপিয়ে পড়ে। বুকে আঁচড়ে পড়ে শীতল হাওয়া। ইশাদ কপাল কুঁচকে খোলা আকাশে চোখ রাখে। পড়ে চিন্তার ভাঁজ! সাথে ছাতা নেই। অথচ আকাশ আর বাতাসের চলছে মিলে-মিশে খেলা। কে হারবে কে জিতবে কে জানে! এদের মাঝে পড়ে তার না কাঁকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। ইশাদ ভবিতব্য শঙ্কা নিয়ে রাস্তায় পা ফেলে। পুরো রাস্তা ফাঁকা। দূরে পথচারী দেখা যাচ্ছে। তবে ঝাপসা! ধূলো এসে বাড়ি খায় ইশাদের কালো সু’য়ে। ইশাদ আর অপেক্ষা করে না। হাঁটা ধরে। মনে ভাবনা রাখে, সামনে খালি রিকশা পেলে উঠে পড়বে।

রিকশা থেকে নামতেই বৃষ্টির টুপটুপ শব্দ! যেন আকাশ খন্ড হয়ে ইশাদের শরীরের উপর রেখাপাত সৃষ্টি করছে। কী আশ্চর্য! সাদা তরল দানাগুলো মিশে যাচ্ছে কোথায়? ইশাদের চুলে,গালে,নাকে নাকি ঘাড়,গলা বুক,পেটে? ইশাদ দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে। কলিং বেলে কয়েকবার চাপ পড়তে দরজা খুলে গেল।

“কাকে চায়?”

ইশাদ ভেজা চুল থেকে বৃষ্টি ঝরানোতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ এমন প্রশ্নে হতভম্ব! বিস্ময়ে সামনে তাকায়। ক্ষনিকের জন্য ভেবেই ফেলেছিল ভুল রাস্তায় চলে এসেছে। অন্য বাসাকে নিজের বাসা ভেবে ফেলল নাকি? এত বড় ভুল! ইশাদ মনে মনে হাদারাম শব্দটি উচ্চারণ করতে গিয়ে থমকে গেল। চোখ দুটো সরু হয়ে আসে। ঘন ভ্রূর চাপে চোখের কোটর বড় হয়ে যায়। কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে বলল,

“তিহি,ভিজে গেছি। ঝামেলা করবেন না। দরজা ছাড়েন।”

ইশাদের সাথে পাল্লা দিয়ে তিহি চোখ দুটো অস্বাভাবিক পরিমাণে বড় করার চেষ্টা করে। মুখের ভাবটা এমন করেছে যেন বিস্ময়ে সে ফেটে পড়ছে! কন্ঠে অতিমাত্রা বিস্ময় ঢেলে বলল,

“এমন করে বলছেন যেন,আপনি বাড়ির মালিক আর আমি দারোয়ান? অভদ্র ছেলে! জানেন না অপরিচিতদের সাথে নম্র ব্যবহার করতে হয়। আর সেই অপরিচিত যদি হয় মেয়ে তাহলে তো..”
“আপনি অপরিচিত?”

তিহি খানিকটা দমে গেল। প্রকাশ করল না। মুখে কঠিনভাব বজায় রেখে বলল,

“তা নয় তো কী? এটাই তো আমাদের প্রথম আলাপ তাই না?”

ইশাদ এক কদম এগিয়ে আসে। তিহির দিকে কঠোর দৃষ্টি রেখে বলল,

“এটা প্রথম আলাপ?”

তিহির গলার জোর আবার দুর্বল হয়ে আসল। ইশাদের থেকে চোখ সরিয়ে যথাসম্ভব গম্ভীর গলায় বলল,

“জি।”

ইশাদ কিছু বলবে তার আগেই তিহি দ্রুত বলল,

“আমি অপরিচিতদের সাথে বেশি কথা বলি না। আমি ভদ্র মেয়ে। কার কাছে এসেছেন তাই বলুন।”

তিহির সরল উক্তিতে ইশাদ আশ্চর্য হলো। বলল,

“আপনি বাদে সবার সাথে।”
“সবাই বলতে?”

তিহির প্রশ্ন এড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল ইশাদ,

“আপনি কি সরবেন?”
“না।”
“কেন?”
“আপনাকে ভেতরে ঢুকতে দেব না।”
“কেন?”

তিহি কথা খুঁজে পাচ্ছে না। চোখের মনি অস্থির হয়ে পড়েছে। মনে মনে দ্রুত ভাবনার পাতা উল্টিয়ে সহসা বলল,

“আপনার কাছে আইডি কার্ড নেই তাই।”

তিহির ধারণা ছিল ইশাদ অবাক হবে। রেগে কড়া ধমক দিয়ে বলবে,আমার বাড়িতে ঢুকতে আমাকে আইডি কার্ড দেখাতে হবে? কানের গোড়ায় সটাং সটাং পড়ার আগে সরেন! কিন্তু তেমনটা হল না। ইশাদ অবাক হলো না। রাগ করে ধমকও দিল না। উপরন্তু পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে সহজভাবে তিহির দিকে বাড়িয়ে দিল। তিহি কার্ডটা নিল। মনোযোগ দিয়ে পরখ করছে এমন ভাব ধরল কিছুক্ষণ। কয়েক সেকেন্ড বাদে কার্ড থেকে চোখ সরাতে সরাতে বলল,

“দেখুন মিঃ ইশশশশশ..”

তিহি নামটা সম্পূর্ণ করতে পারল না। তার আগেই গলার স্বর জমে গেল। ইশাদ শার্ট খুলে দাড়িয়ে আছে। ইশাদ ভেজা শার্টটা তিহির কাঁধে রাখে। ব্যঙ্গ করে বলল,

“ইশশশশশশশ নয় ইশাদ। সামান্য নামটাই উচ্চারণ করতে পারেন না? আমার মনে হয় আপনার পুনরায় আদর্শলিপি নিয়ে বসা উচিত।”

ইশাদ মিষ্টি হাসল। আলতো করে তিহির দুই কাঁধ ছুয়ে দরজা থেকে সরিয়ে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। তিহি তখনো থম মেরে দাড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেষে। চোখের পাতা স্থির!

____________________________
ইশাদ সন্ধ্যার নাস্তা খেতে গিয়ে জানতে পারে তিহি আজ মিহিদের রুমে থাকবে। রেখা ভূঁইয়া দুই দিনের জন্য কোথাও একটা গিয়েছেন। ঠিক কোথায় গিয়েছেন সেটা জানা যায়নি। জানার চেষ্টাও করে নি ইশাদ। তার মনে তখন চলছিল অন্য চিন্তা। এই ফাঁকে তিহির সাথে আলাদা সময় কাটানো প্রয়োজন। তার অনেক কিছু জানার আছে। মস্তিষ্কে সর্বক্ষণ নাড়াচাড়া দেওয়া প্রশ্নের উত্তরগুলো এবার খুঁজে পাওয়ার সময় এসেছে হয়তো। বেশ কয়েকদিন ধরে এই মা,মেয়ের উপর নজর রাখছিল সে। যত দেখছিল ততই সন্দেহের ঘনঘনটা বাড়ছিল। তিহি নামের মেয়েটি এখনো তার জন্য ধোঁয়াশা! তার চালচলন ঠিকঠাক ঠাহর করতে পারছে না। এদিকে রেখা ভূঁইয়ার চালচলনও বেশ সন্দেহজনক। এমন একটা ভাব যেন তিহিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখতে চাচ্ছেন কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পারছেন না। ছটফটানি ভাবটা অত্যধিক। এক সেকেন্ডের জন্যও মেয়েকে চোখের আড়াল করতে চান না। কিন্তু কেন? কিসের এত ভয়? তাহলে কি তিহির সাথে ভয়ঙ্কর কিছু চলছে? ভয়ঙ্কর কিছুর স্বীকার হতে যাচ্ছে? যার কেন্দ্রবিন্দুতে তিহির মা রেখা ভূঁইয়া দাড়িয়ে আছেন।

ইশাদ চিন্তার মাঝেই ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত দশটা। মিহিরা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? কিছু একটা করা দরকার। যেভাবেই হোক ঐ রুম থেকে তিহিকে বের করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?

ইশাদ মনের দুয়ারে প্রশ্ন ফেলে নিজের রুম ছাড়ে। ঘন পা ফেলে সিঁড়ির দিকে। মিহিরা নিচতলায়। সিঁড়ির ডান দিকের রুমটা। সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলতে কানে মেয়ে কন্ঠ আসে। ইশাদ থেমে যায়। সম্পূর্ণ মনোযোগ জমা করে কর্ণদ্বয়ে!

“আন্টি,আমার ঘুম আসছে না আর কিছুক্ষণ থাকি?”

তিহির সাথে সম্মতি রেখে মিহিও বলল,

“আমারও।”

শাহিনা শাইখা মৃদু হাসলেন। নরম চোখে তাকিয়ে রইলেন ওদের দিকে। হঠাৎ করেই তার খুব ভালো লাগছে। মনের এককোণটা দীর্ঘসময় শূন্যতায় পড়ে ছিল। সেটা যেন এখন পূর্ণ হয়ে এসেছে। শুধুমাত্র একজন মা জানেন,একটা পরিবারকে সম্পূর্ণ করতে কন্যাসন্তান কতটা প্রয়োজন!

তিহির গলা পেয়ে ইশাদ ছুটে আসে মায়ের রুমে। সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকে না৷ বাইরে অপেক্ষা করে। দরজা খানিকটা ভেড়ানো। ভালো করে খেয়াল করলে রুমের ভেতরের অর্ধেকাংশ দেখা যাবে। ইশাদও কি তাই করবে? লুকিয়ে দেখবে নাকি ভেতরে ঢুকে যাবে?

ইশাদ এখনো কোনো উপায় খুঁজে পায়নি। তিহি যেরকম মেয়ে ইশারায় ডাকলে আসবে না৷ আসার কথাও না। সেরকম সম্পর্কটাই তৈরী হয়নি। কেন হচ্ছে না কে জানে! সেভাবে দেখতে গেলে রোজই দেখা হয়। কথাও হয়৷ কিন্তু ভাব হয়না। এমনটাও হয়?

ইশাদ ভেতরে ঢুকার পূর্বে উঁকি দিল। তিহি শুয়ে আছে। মিহিও শুয়ে আছে। তবে সে বালিশে নয়,তিহির বুকের উপর। মাকে দেখতে পারছে না৷ দুজনের চোখ সিলিংয়ে। ইশাদ ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না দোটানায় পড়ে গেল। এরা দুজন যখন ভেতরে আছে,তার মানে বাবা রুমে নেই। এত রাতে গেল কোথায়? তার ভাবনায় ছেদ পড়ে শাহিনা শাইখার কন্ঠে,

“ইশাদ,কিছু বলবি?”

মায়ের প্রশ্নে ইশাদ চমকে উঠে। দ্রুত ভেতর থেকে চোখ বুলিয়ে এনে বলল,

“হ্যাঁ।”

শাহিনা শাইখা দরজা খুলে দিলেন। ভেতরে আহ্বান করতে বললেন,

“ভেতরে আয়।”

ইশাদ ভেতরে ঢুকল। মাকে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ল তিহির দিকে,

“এত রাতে এখানে কী? আম্মু ঘুমাবে। রুমে যান। মানুষকে বিরক্ত করা কি আপনার পেশা?”

তিহি শোয়া থেকে বসে পড়ল। শরীরে যেন ফোসকা পড়ল। জ্বলে উঠে বলল,

“হ্যাঁ। বিরক্তের উপর আমি পিএইচডি করেছি। আপনাকে তো করছি না। আন্টিকে করছি। আপনার কী সমস্যা?”
“আমার সমস্যার কথা আপনাকে না জানলেও চলবে। এই মুহূর্তে রুম ত্যাগ করুন।”

ইশাদের এমন রূঢ় ব্যবহারে স্তব্ধ শাহিনা শাইখা। মিহি তৎক্ষনাৎ বিছানা ছাড়ে। তিহিকে টানতে টানতে বলল,

“তিহি আপু,চলো আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। ইশাদ ভাইয়া খুব রাগ করছেন।”

তিহি চলে যাওয়ার বদলে শুয়ে পড়ল। অটল গলায় বলল,

“না। উনি বললেই শুনতে হবে? আমি শুনব না। আজ এখানেই থাকব। এখানে ঘুমাব।”

এ পর্যায়ে কথা বললেন শাহিনা শাইখা,

“ইশাদ,তুই রুমে যা। ওরা চলে যাবে।”
“চলে যাবে মানে? এখন গেলে কী সমস্যা? আম্মু,তুমি একটা কথাও বলবে না। মা যেমন,মেয়েও তেমন। গলার স্বর সবসময় আসমানে থাকে। বড়,ছোট কিছুই মানে না। মিনিমাম ভদ্রতাবোধটাও নেই।

মায়ের কথা উঠতেই তিহি ফুঁসে ওঠে। বিছানা ছেড়ে ইশাদের সামনে এসে দাড়ায়। কিছু বলতে চেয়েও পারে না। চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে। ইশাদ সেদিকে তাকায় না। মায়ের দিকে তাকিয়েই বলে,

“উনি কি বাচ্চা? তোমার কি দায় পড়েছে উনাকে দেখে দেখে রাখা? এমন ভাব যেন সুযোগ পেলেই কোলে উঠে বসে থাকবে। এতই যদি কোলে উঠতে মনে চায়,নিজের আম্মার সাথে গেল না কেন? আবার বলে একা একা ঘুমাতে পারে না৷ ভয় পায়। উনাকে দেখে মনে হয় উনি ভয় পান? সব মিথ্যে কথা। বানোয়াট। মা,মেয়ে তলে তলে অন্য প্লেন করছে।”

ইশাদ কথা শেষ করে বড় নিশ্বাস টানতে ঠাস করে শব্দ হলো। দরজাটা এখনো কাঁপছে। তিহির জায়গাটা শূন্য। ইশাদ ভয়ে ভয়ে কম্পিত দরজায় তাকিয়ে থাকে। মনে করার চেষ্টা করছে,একটু আগে কী বলেছে। ঠিকঠাকমতো কিছুই মনে পড়ছে না৷ ভুলভাল কী বলেছে? খুব খারাপ কিছু বলেছে নাকি?

শাহিনা শাইখা অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। মুখ দিয়ে ছোট্ট রা শব্দটিও বের হচ্ছে না। যেন এই ছেলেটি তাঁর ছেলে ইশাদ নয়। অন্য কেউ!

মায়ের এমন উদ্ভট দৃষ্টিতে প্রচন্ড অস্বস্থিতে পড়ে গেল ইশাদ। নতুন প্রশ্নের স্বীকার হওয়ার পূর্বেই মায়ের রুম ত্যাগ করে। মেয়েটা গেল কোথায় দেখতে হবে। মাকে পড়ে সামলে নিবে। এই মুহূর্তে তিহিকে সামলাতে হবে! ইশাদের চক্ষু অস্থির হয়ে পড়ে। সাথে পা দুটো। কোনদিকে গেল,কোথায় গেল বুঝতে পারছে না। মিহির রুমে গেল কী? ইশাদ দৌড়ে সিঁড়ি কাটে। মিহির রুমের কাছাকাছি যেতেই ফোন বেজে উঠল। ব্যস্ত পায়েই বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশের কথা আসতেই তার পা থমকে যায়। মিহির রুম ছেড়ে পা বেকে যায় সদর দরজার দিকে।

______________________________
“সামাণ্য পেট খারাপ নিয়ে হসপিটালে ভর্তি? তোর কি বোধশক্তি কোনোদিন হবে না ইমদাদ?”

ইমদাদ অসহায় গলায় বলল,

“আমার কী দোষ? রিয়া ভর্তি করে দিয়ে গেল?”

ইশাদ রাগে কাঁপছে। সে নিজেকে সংযত রাখতে পারছে না। ইচ্ছে করছে ইমদাদকে মাথায় তুলে একটা আছাড় দিতে। সে ইমদাদের পাশে বসে পড়ল। রক্তিম চোখে বলল,

“এই রিয়াটা কে?”

ইমদাদ উঠে বসল। পিঠে বালিশ গুঁজে হেলান দিয়ে শুয়ে বলল,

“তিনদিন আগে পরিচয় হয়েছিল। ফেসবুকে। আজ ওর সাথে আমার প্রথম ডেট ছিল। বিকেলে।”
“তোর অশ্লীল হিস্টোরী শুনতে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিস?”
“না।”
“তাহলে?”
“আমি তো ডাকিনি।”
“তাহলে কে ডাকল?”

ইমদাদ লাজুক কন্ঠে বলল,

“মনে হয় রিয়া।”

ইশাদ বসা থেকে দাড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের বিরক্ত তার প্রশস্ত কপালে হানা দিয়েছে। সবটা কন্ঠে ঢেলে বলল,

“তোর কুকর্মের ফল এইসব৷ আজ পেট খারাপ,কাল মাথা খারাপ হবে দেখিস। ছি!”

ইমদাদ সোজা হয়ে বসল। বলল,

“তার মানে তুই ইচ্ছে করেই ঝাল পিঠা খায়িয়েছিস?”
“ঝাল পিঠা?”
“ছি ইশাদ। এই তুই আমার বন্ধু? তুই জানিস আমার পেটে ঝাল সয় না। সেজন্যে এই নির্মম পরিকল্পনা?”

ইশাদের বিরক্ত চলে গেল। আগ্রহ নিয়ে ইমদাদের পাশে বসল। বলল,

“সব খুলে বলতো।”

ইমদাদ অভিমান নিয়ে বলল,

“আর কী খুলে বলব? ঝাল পিঠা খায়িয়ে হসপিটালে ভর্তি করালি। তুই আমার সামনে থেকে যা। তোকে দেখলেই আমার পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠছে!”

ইশাদ হো হো হো করে হেঁসে উঠল।

________________________________

ইশাদ বাসায় ফিরল রাত বারোটায়। বাসায় প্রবেশ করতেই মায়ের প্রশ্নের মুখোমুখি হলো,

“তোর কী হয়েছে বল তো?”

ইশাদ মাকে এড়িয়ে যেতে বলল,

“তুমি এখনো ঘুমাওনি,আম্মু?”
“তুই ঘুমোতে দিলে তো ঘুমাব।”
“আমি কী করলাম?”
“তুই জানিস না কী করেছিস?”

ইশাদ মাথা নিচু করে ফেলে। শাহিনা শাইখা ম্লানমুখে বলেন,

“মেয়েটা সারাদিন না খাওয়া। রাতে এত চেষ্টা করেও এক দানা খাওয়াতে পারিনি। বিষন্ন ছিল। ভেবেছিলাম ঘুমানোর সময় আরেক বার চেষ্টা করব৷ সেই পথটাও বন্ধ করে দিলি। মেয়ে তো উপর থেকে নামছেই না। দরজা আটকে পড়ে আছে। কোনো অঘটন হয়ে গেলে কী হবে?”

মায়ের কথায় ইশাদের বুক কেঁপে উঠল। কী করতে গিয়ে কী করেছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না৷ মৃদু গলায় বলল,

“তুমি যাও। আমি ওনার সাথে কথা বলছি।”

শাহিনা শাইখা কিছু বলতে চাইলে ইশাদ থামিয়ে দিয়ে পুনরায় বলল,

“বললাম তো আমি দেখছি। আব্বু এসেছে?”
“হুম।”

ইশাদ সিঁড়িতে পা ফেলার আগে রান্নাঘরে চলে যায়। প্লেটে ভাত বেড়ে নিয়ে ছাদে চলে আসে।

মায়ের মতে তিহির রুমের দরজা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু না,দরজা খোলা। রুমের লাইট বন্ধ। ইশাদ ভেতরে ঢুকল। লাইট জ্বালাতেই তিহিকে দেখতে পায়। বিছানার শেষাংশে বসে আছে। হাঁটুর উপর মুখ গুঁজে। ইশাদ এক পা ফেলতেই তিহি চমকে উঠে। তার চোখের তারা কাঁপছে! মুহূর্তেই তিহি অস্থির হয়ে পড়ে। পেছনে দেয়ালের সাথে মিশে যেতে চায়। যেন দেয়াল ভেঙে সে অন্যত্র লুকিয়ে পড়বে! এত কিছুর মধ্যেও তার চোখের পাতা পড়ছে না। একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইশাদের দিকে। ইশাদ তিহির দ্বারে এসে মৃদু গলায় ডাকল,

“তিহি?”

সঙ্গে সঙ্গে তিহি শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ইশাদ দ্রুত থালা ফেলে তিহিকে জড়িয়ে নেয়। গালে মৃদু আঘাত করতে করতে বলে,

“তিহি,না। তিহি চোখ বন্ধ করবে না! তাকাও তিহি?”

চলবে

#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (১৬)

“তিহি?”

সঙ্গে সঙ্গে তিহি শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ইশাদ দ্রুত থালা ফেলে তিহিকে জড়িয়ে নেয়। গালে মৃদু আঘাত করতে করতে বলে,

“তিহি,না। তিহি চোখ বন্ধ করবে না! তাকাও আমার দিকে। তিহি?”

তিহির চোখের দৃষ্টি দুর্বল। পিটপিট করে তাকায় তো আবার বুঝে ফেলে। যেন ইশাদের ডাককে উপেক্ষা করতে পারছে না আবার নিজের স্নায়বিক দৌর্বল্যতার সাথে পেরে উঠছে না। দু’দিক থেকেই প্রচন্ড চাপ অনুভব করছে সে। ইশাদের ভেতরটা ক্রমাগত অস্থির হয়ে পড়ছে। অত্যন্ত অস্থিরতায় তার কন্ঠ কাঁপছে। চোখের সম্পূর্ণ দৃষ্টি তিহির আধবোজা চোখটিতে। এই প্রথম মনে হলো,কেন সে সম্মোহন বিদ্যালাভ করে নি? অন্তত এই মুহূর্তটার জন্য হলেও তার সম্মোহন বিদ্যার্জন করা উচিত ছিল! ইশাদ ডান হাতে তিহির বা’গাল শক্ত করে চেপে ধরে। বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে,

“আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে। রাখতে হবে। তুমি চোখ বন্ধ করবে না। আমার অনেক কিছু জানার আছে তিহি। প্লিজ!”

ইশাদের শেষ শব্দটা অত্যধিক করুণ শোনায়! তিহির বুকের কোথাও গিয়ে ধারালো ছুঁচ হয়ে বিঁধে। যার তীব্র যন্ত্রণা আঘাত করে মস্তিষ্কে। সহসাই তিহি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইশাদের দিকে। খামচে ধরে ইশাদের বুকের কাছটায়। গভীর ভাবে শার্টের অংশ টেনে ধরে দীর্ঘক্ষণ এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ইশাদের মুখে। ঘন শ্বাস টেনে নিতে নিতে চঞ্চল হয়ে উঠে দেহের অনু পরমানু। চোখের সরল দৃষ্টিতে আতঙ্ক,ভয়,অসহায়ত্ব ফুটে উঠে। ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠতেই ইশাদ উৎকন্ঠায় দ্রুত জিজ্ঞেস করে,

“ভয় পাচ্ছো? কেন ভয় পাচ্ছো তিহি? কী নিয়ে এত ভয়? আমাকে বল। আমি শুনব। আমি শুনতে চায় তোমার লুকিয়ে থাকা সকল ভয়ের কারণ! তিহি বলো।”

তিহির চোখের তারা চঞ্চলতায় ক্ষণে ক্ষণে নড়ছে। ইশাদকে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না৷ ঠোঁটের কাঁপন দ্রুততর হয়ে পড়ে। বিবশতায় বা’হাতটা ইশাদের গাল ছুঁয়ে নেয়। মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে চোখদুটো আরো কিছুক্ষণ। ইশাদ বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকে। অপেক্ষা করে না জানা কিছু জানতে পারার অধীর অপেক্ষা৷ কিন্তু সময় ফুরিয়ে চলেছে,তিহি কিছুই বলছে না৷ সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন হচ্ছে। ইশাদ আশাহত হয়,ধৈর্যচ্যুত হয়। ব্যাকুল হয়ে বলল,

“তিহি,প্লিজ! কিছু তো বলো।”

সঙ্গে সঙ্গে ইশাদের বুকে মুখ ডোবায় তিহি। অস্ফুটস্বরে বলল,

“সে এসেছিল!”
“কে?”

ইশাদের অতিশয় ব্যাকুলতার প্রশ্নটা যেন তিহির কানে পৌঁছুল না। সে আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিবিড় মায়ায় দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ইশাদকে। গাঢ় কন্ঠে নিভুসুরে বলল,

“ঘুমাব। ঘুম পাচ্ছে!”

ইশাদের অস্থিরতাগুলো ঠোঁটের বাকেই অদৃশ্যতায় আটকে পড়ল। মুখ দিয়ে আর একটি শব্দও বের হল না। হঠাৎ করেই প্রচন্ড মায়া,স্নেহ,টান,মোহ অনুভব করে। যার সবটা ঢেলে দিতে ইচ্ছে করে বুকে পড়ে থাকা মেয়েটির উপর। কানের কাছে মধুর বীণ হয়ে বাজছে,’ঘুমাব। ঘুম পাচ্ছে!’ দুটো লাইন। কী ছিল এই কথাতে? যার দরুনে সে এতটা নীরব,শান্ত,ধীর,অনুদ্ধত হয়ে পড়ল!

মিনিট কয়েক পর ইশাদ চৈতন্য ফিরে পায়। শুনতে পায় তিহির ভারী নিশ্বাসের মৃদু ছায়া শব্দ। তিহি কি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়ল? নাকি আবারও চেতনা হারিয়েছে? ইশাদ খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ হলেও পরক্ষণে বুঝতে পারে ঘুমিয়ে পড়েছে। সে নিশ্চিত মনে চাপা নিশ্বাস ছাড়ে। চারপাশে তাকায়। হঠাৎই অস্বস্থিতে পড়ে যায়। রুমে পূর্ণ আলোতে সবকিছু দৃশ্যমান। সামনে তাকাতে,দেখতে পারে দরজা এখনো খোলা। বাইরের হাওয়ায় দোল খাচ্ছে! ইশাদ দরজা থেকে দৃষ্টি কাটে,ফিরিয়ে আনে নিজের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে চোখদুটো বন্ধ করে। দৈবকর্ণে শুনতে পায় মিষ্টভাষীর ব্যঙ্গাত্মক নামটি ‘নষ্ট পুরুষ!’

তিহি জেগে থাকলে কি এই নামটিই উচ্চারণ করত না? অবশ্যই করত। নাকের নরম,মসৃণ পাটা ফুলিয়ে আরো কী কী বলত কে জানে! ইশাদ আর ভাবতে পারে না৷ চোখ বন্ধ করেও থাকতে পারে না। কী আশ্চর্য! এই মাঝরাতে একটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সেও কি ঘুমুচ্ছিল? তাঁর চেতনা ধরে রাখতে নিজেই চেতনা হারিয়ে ফেলল? ইশাদ আর চুপচাপ থাকতে পারে না। খানিকটা ভয় কাজ করছে। যদি কেউ চলে আসে? এই অবস্থায় দেখে নেয়? কেমন আপত্তিকর ঠেকবে!

মুহূর্তেই উদ্বিগ্ন ঝেঁকে বসে ইশাদের কপাল মাঝে। তিহিকে সরিয়ে নিতে উদ্যত হয়। কিন্তু পারে না৷ মৃদু সুরে ডেকে তুলতে চায়,তাও পারে না৷ মন,বল কিছুই সাঁয় দিচ্ছে না যে।সবশেষে আলতোভাবে বসে পড়ে। সাবধানে শুয়িয়ে দেয় বালিশে। সাদা আলো নিভিয়ে নীল আলো জ্বালিয়ে বের হয়ে আসে। দরজা চাপিয়ে দিতে গিয়ে ইশাদ আরেকবার চোখ রাখে ঘুমন্ত তিহির উপর। তৎক্ষনাৎ মাথায় ভর করে নতুন চিন্তা! মেয়েটাকে একা রেখে চলে যাবে? ভয় পেলে? তাহলে কি ডেকে তুলবে? বলবে,মিহির সাথে গিয়ে ঘুমাতে? নাকি আম্মুকে ডেকে আনবে? ইশাদ চট করে হাতের ঘড়িটি দেখে নিল। ঘন্টার কাঁটা একের কোঠায়। মিনিটের কাঁটা চার পার হতে চলেছে। আম্মু এখন ঘুমাচ্ছে। মিহিরাও। তাহলে এখন কী করা যায়? কাকে ডাকবে? তিহি,আম্মু নাকি মিহি? উফ! ইশাদ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সবশেষে ঠিক করল কাউকেই ডাকবে না। তিহির দরজার পাশে বসে পড়ল। হঠাৎ ভেজা ছোঁয়ায় ইশাদ মৃদু কেঁপে উঠল। সর্ব শরীরের লোম বিহ্বর কাঁটার ন্যায় শক্ত হয়ে দাড়িয়ে গেল। ইশাদ খেয়াল করল,ছাদ ভেজা। আকাশে চাঁদের দেখা নেই। তাহলে কি এক দফা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে? কী কান্ড! আকাশের কাছাকাছি থেকেও সে বুঝতেই পারল না।

_________________________________
ভোরের নরম আলো মুখে ছুঁয়ে দিতে ঘুম ভেঙে যায় তিহির। কিছুক্ষণ আলসে ভঙ্গিতে চেয়ে থাকে খোলা জানালার দিকে। সূর্যিমামাকে দেখা যাচ্ছে না। তাও কী সুন্দর রোদ ঠিকরে ঢুকছে জানালা দিয়ে। অজান্তেই তিহির ঠোঁটজোড়া উচ্চারণ করে,

কেউ না,তবুও কেউ
অদৃশ্য মায়ায় মিশে
অন্তরালে,গভীর অনুভূতিতে!

সজ্ঞানে সশব্দে উচ্চারণ করে, ঠিক সূর্যিমামার মতো। তিহি বিছানা ছাড়ে। ঘুম কেটে গিয়েছে। মন ফুরফুরে! গুনগুনিয়ে সুর তোলে বিছানা গোছায়। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে রুম থেকে বের হতে অবাক। এ সে কাকে দেখছে? মিঃ ইশাদ? তিহি মাথা দু’দিকে নাড়ায়। যেন ভুল কিছু উচ্চারণ করে ফেলেছে। নিজেকে শুধরিয়ে নিয়ে বলে শুধু ইশাদ। না, শুধু ইশশশশশশশ! তিহি অনেকটা টান দিয়ে নামটা উচ্চারণ করে হেসে ফেলে। নিঃশব্দের হাসি। হাসতে হাসতে ইশাদের দিকে তাকায়। সে এখনো ঘুমোচ্ছে। তিহি নীরবে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কী মনে করে রুমে ছুটে যায়। ফিরে আসে হাতে নেইলপলিশ নিয়ে। ধীর শব্দে বসে পড়ে ইশাদের সামনে। সে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে উর্ধ্বমুখো হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তিহি অতি সাবধানে ইশাদের শার্ট স্পর্শ করে। দাঁতে ঠোঁট কামড়ে সতর্কতায় আলগোছে কাঁধ থেকে নিচের দুটো বোতাম খুলে ফেলে। ফর্সা বুকে নেইলপলিশের শীতল ছোঁয়া পেয়ে ইশাদ নড়ে উঠে। তিহি সামান্য ভয় পেয়ে যায়। ছুটে পালায় নিজের রুমে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা শেষে আবার দরজার আড়াল থেকে উঁকি দেয়। ইশাদের চোখ বন্ধ। তার মানে ঘুম ভাঙেনি। তিহি আবারও ইশাদের সামনে এসে বসে। সামান্য ঝুঁকে পূর্বের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে। অপেক্ষা করে শুকানোর জন্য! অপেক্ষা দ্রুত শেষ করতে নিজেই ইশাদের বুকে ফুঁ দেয় ক্রমাগত। মুখ গহ্বর হতে আগত গরম বাতাসের স্পর্শে ইশাদের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে ফেলে। তিহি চমকে উঠে। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ইশাদ তিহির কান্ডে হতভম্ব! দ্রুত নিজের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,

“কী করছিলেন?”

তিহি জবাব দেয় না৷ বিচলিত হয়ে পড়ে। সব শেষে ইশাদের কাছ থেকে পালাতে রুমে ঢুকে যায়। সশব্দে দরজা আটকে দেয়।

________________________
রুমে ঢুকেই প্রথমে চোখ পড়ে দেয়াল ঘড়িতে। দশটা পার হয়ে গিয়েছে। আম্মু একটিবার কি তার সন্ধান করে নি? ইশাদ ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তাড়াহুড়োয় চোখে,মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসে। সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করার সময় নেই। দুপুরে করে নিবে কিংবা রাতে। শরীরের পুরোনো শার্ট খুলে নতুন একটা পড়ে নেয়। বোতাম লাগাতে লাগাতে আয়নার সামনে দাড়াতেই তার ব্যস্ত হাত থমকে যায়। পূর্বেই লাগিয়ে ফেলা বোতামটা খুলে সম্পূর্ণ বুক উন্মুক্ত করতে আয়নায় ভেসে উঠল, লাল রঙে ইংলিশের পাঁচটি বর্ণ ‘ SORRY’

ইশাদ বিস্মায়াবিষ্ট! বিস্ময়োৎফুল্ল নয়নজোড়া আয়নায় রেখেই হাতের আলতো পরশ রাখে লেখাটিতে। তখনি শাহিনা শাইখার গলা,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

ইশাদ তড়িৎগতিতে শার্টের খন্ড দু’অংশ একসাথে করে ফেলে। দ্রুত বোতাম লাগাতে লাগাতে ব্যস্ত গলায় উত্তর দিল,

“ক্লিনিকে।”

শাহিনা শাইখা এক পলক ঘড়ির দিকে তাকালেন। বললেন,

“এই সময়? আজ না গেলে হয় না?”

ইশাদ হাতে ঘড়ি পড়ল। মানিব্যাগটা পকেটে পুড়তে পুড়তে বলল,

“হঠাৎ এ কথা? কোনো দরকার?”

শাহিনা শাইখা ইশাদের বিছানায় বসে পড়েন। ধীর গলায় বললেন,

“মিহি জিজ্ঞেস করছিল,তুই বেশি রেগে গেলে কী করিস।”
“এটার সাথে আমার না যাওয়ার কী সম্পর্ক,আম্মু?”
“অনেক। আমার মনে হয়,মেয়েটা ভয় পেয়েছে।”
“ভয়?”
“হুম। কাল রাতে যে ব্যবহার করলি। সবই তো মিহি দেখেছে। নিশ্চয় ভাবছে,এই ভয়ানক ছেলেটা আমার বর হবে?”

মায়ের মুখে শেষ কথাটা শুনে ইশাদ থম মেরে রইল। তার এক মুহূর্তের জন্য মনে হল,তার সামনে আম্মু না স্বয়ং মিহি বসে আছে।

“আমি বলছিলাম কী বিয়ের আগে দুজনের মধ্যে একটু ভাবশাব হলে ভালো হয় না? একটু ঘুরে আয় না মেয়েটাকে নিয়ে। তোদের নিজেদেরও তো কিছু কথাবার্তা আছে। একটু সময় নিয়ে দুজন দুজনকে জানলি। মিহিও অনেকটা স্বাভাবিক হবে। ভয়টাও কেটে যাবে।”

মায়ের কথার প্রতিত্তোর দেওয়ার সুযোগ পেল না ইশাদ। শাহিনা শাইখা অত্যধিক আনন্দিত গলায় বললেন,

“তুই তো রেডি। দাড়া আমি মিহিকে রেডি করে নিয়ে আসছি। মিহিও নাস্তা করেনি। আজ তোরা বাইরে থেকে খেয়ে আসিস।”

কথাটা কোনো রকম ইশাদের উপর ফেলেই শাহিনা শাইখা হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেলেন।
________________________________
মিহিকে নিয়ে বাইরে বের হতেই উপর থেকে তিহির গলার স্বর পড়ল,

“কোথায় যাচ্ছিস,মিহি?”

মিহির আগে ইশাদের চোখের দৃষ্টি পড়ে উপরে। তিহি ছাদের রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে। চোখে,মুখে ফুটে আছে উৎকর্ণ!

মিহি এক কদম এগিয়ে এসে গলা ছেড়ে বলল,

“ঘুরতে যাচ্ছি,তিহি আপু।”

উত্তর শুনেই তিহি রেলিং থেকে সরে যায়। শূন্য জায়গাটাতেই চেয়ে থাকে ইশাদ। যেন এখনি তিহি আবার দেখা দিবে।

“আপনারা ঘুরতে যাচ্ছেন? কোথায় যাচ্ছেন?”

তিহির আকস্মিক প্রশ্নে চমকে যায় ইশাদ ও মিহি। দুজনের দৃষ্টি ছিল উপরে। দুজনে একত্রে তিহির দিকে তাকায়। সে হাঁপাচ্ছে। মনে হয় দৌড়ে এসেছে। তিহি উত্তর পেল কী পেল না সে খেয়ালে ঢুকল না৷ অতিশয় উৎসাহ নিয়ে বলল,

“আমিও যাব।”

কথাটা কার দিকে চেয়ে বলল বুঝতে পারছে না ইশাদ। কিন্তু আবদারটা যেন ইশাদের উপরেই পড়ল! এই অনুরোধ কি ফেলা যায়? ইশাদ সম্মতি দেওয়ায় প্রস্তুত হল। তবে ‘চলো’ শব্দটা উচ্চারণ করার পূর্বেই কেউ তিহির হাতটা ধরে ফেলে। ইশাদ চকিত চোখে তাকায় রুবিনার দিকে। উনি তো এখানে ছিলেন না। হঠাৎ আগমন হলো কী করে? জাদুবিদ্যা জানেন কি?

রুবিনা তিহির হাত চেপে ঘুরিয়ে নিলেন। তিহির উদ্দেশ্যে রুক্ষস্বরে ফিসফিসিয়ে বললেন,

“তুমি কোথাও যাবে না। আমার সাথে এসো।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here