অন্তরালে_তুমি পর্ব_৮| কাছে আসার গল্প

3
8975

অন্তরালে_তুমি
পর্ব_৮
#প্রত্যাশা

—-কি ব্যাপার রেহেনা হঠাৎ কি এমন জরুরি কথা ?

—-রুপাকে নিয়ে..

—-রুপাকে নিয়ে কি কথা?

—-আমাদের মেয়ে আমাদের জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়েছে ..

—-মানে কি বলছো এইসব?

—-রুপা আর আদিত্য একজন আরেকজনকে ভালোবাসে ..

—-কি? ..

—-হুম ঠিকি বলেছি..ওদের অনেক আগে থেকেই পরিচয় ..শুধু মাত্র আমাদের কথা রাখার জন্য রুপা আকাশকে বিয়ে করেছে এই বিয়েটাতে আমরা ওর কোনো মতামতই নেয়নি আমাদের সিদ্ধান্তটা ওর উপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম ..আর আমাদের মেয়েটা আমাদের ভয়ে কিচ্ছু বলেনি ..নিজের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা করে ..আমরা মা বাবা হয়ে আমাদের মেয়ের ক্ষতি করেছি ..এইটুকু একটা মেয়ে আমাদের কথা ভেবে এতো কিছু করলো আর আমরা কিনা ওর কষ্টটা বুঝতেই পারলাম না ..এখন কি করবো বলো ..

—-চিন্তা করো না রেহেনা ..আমি আদিত্যর সাথে কথা বলবো ..আমার মেয়েটা আবার হাসবে আনন্দ করবে ..আমি আজ বিকেলেই আদিত্যর সাথে কথা বলবো ..

—-ঠিক আছে ..

বিকেল ৪.৩০..

আদিত্য আর রুপার বাবা একটা রেটুরেন্টে বসে কথা বলছে ..

—-আংকেল হঠাৎ এইভাবে আমাকে ডাকলেন সব কিছু ঠিক আছেতো ..রুপা ঠিক আছে তো ..?

—-হুম বাবা সব ঠিক আছে ..তবে রুপা ..

—-রুপা !!রুপার কি হয়েছে আংকেল ..প্লিজ বলুন ও সুস্থ আছে তো?

—-অস্থির হয়ো না রুপা সুস্থ আছে ঠিকি তবে ভালো নেয় ..

—-রুপার উপর দিয়ে যা গিয়েছে তাতে ওর ভালো না থাকাটাই স্বাভাবিক ..আমরা সবাই ওর পাশে থাকলে ও ঠিক এই ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে ..

—-তার জন্য তো তোমাকে ওর প্রয়োজন বাবা ..

—-আমি সবসময় ওর পাশে আছি ..

—-তবে আমরা চাই তুমি ওর কাছে থাকো ..মানে আমার মেয়েটাকে বিয়ে করো ..

রুপার বাবার কথা শুনে আদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ..যে বাবার ভয়ে রুপা একদিন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো সেই বাবাই আজকে ওকে বলছে রুপাকে বিয়ে করার কথা ..সময় মানুষকে দিয়ে কত কিছু করাতে পারে ..

—-কিন্তু আংকেল রুপা কি তা চাই ..

—-আমার মেয়েটা বড্ডো চাপা স্বভাবের ..বুক ফেটে গেলেও নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলে না ..ওর তোমাকে প্রয়োজন কিন্তু ও সেটা মুখ ফুটে কখনো বলবে না ..তোমাকেই কিছু একটা করতে হবে ..

—-কি করবো আংকেল ?ওকে তো আর জোর করতে পারবো না ..ভয় হয় যদি আমাকে ভুল বুঝে,,

—-তুমি ভয় পেয়ো না তুমি কালকে তোমার বাড়ির লোকদের নিয়ে আমাদের বাসায় এসো..কালই তোমাদের বিয়ের কথা ফাইনাল করবো ..তবে তোমার বাড়ির লোক কি একটা ডিভোর্সি মেয়েকে তাদের বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবে?

আদি হেসে বললো..

—-চিন্তা করবেন না আংকেল বাড়ির লোকজন বলতে শুধু আমার দাদুই আছেন ..আর উনাকে আমি প্রথম থেকেই রূপের কথা বলে এসেছি ..উনি নিজেই অনেকবার আপনাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন আমিই বারন করেছিলাম …দাদু এখন শুনলে বরং খুশি হবে ..

—-তাহলে তো আর কোনো কথাই নেয় ..সব কিছু ঠিকঠাক ..

—-কিন্তু রুপা যদি না মানে ..

—-সেটা নিয়ে ভেবো না বাবা আমরা আছি ..

—-ঠিক আছে আংকেল ..
???

পরদিন বিকেলে..

বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম হঠাৎ আম্মু রুমে এলো ..

—-কিরে কি করছিস ?

—-বই পড়ছি আম্মু কিছু বলবে?

—-হুম ..এই নে এই শাড়ি আর জুয়েলারি গুলো পরে নে..

—-কেন আম্মু হঠাৎ আজ এসব কেন পরব ..

—-কারণ আছে বলেই পড়বি ..এখন আর কথা না বাড়িয়ে এগুলো পরেনে.
.
কেন জানি আন্তাজ করতে পারছি কি হতে চলছে ..

—-আম্মু সত্যি করে বলো কারা আসবে?

—-তোকে দেখতে আসবে

—-আম্মু আমি তোমাকে আর আব্বুকে আগেই বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করবো না তারপরও কেন তোমরা এমন করছো ..আমি কি তোমাদের জন্য ভোজা হয়ে গিয়েছি ..আম্মু আমি জব খুঁজছি দেখবে কিছু দিনের মধ্যে একটা ভালো জব পেয়ে যাবো তখন দেখো আব্বুর উপর আর চাপ পড়বে না ..

আমার কথা শুনে আম্মু কেঁদে ফেলে ..

—-এসব কি বলছিস তুই ..তুই আমাদের জন্য ভোজা না মা তুই আমাদের জান্নাত ..মারে আমরা তোর সাথে অন্যায় করেছিলাম আগের বার তাই তুই ভয় পাচ্ছিস এখনো যদি এমন কিছু হয় ..কিন্তু বিশ্বাস কর এখন আর তেমন কিছু হবে না ..আমাদের আরেকটা সুযোগ দে মা ..অনুরোধ করছি তোর কাছে ..

—-আম্মু প্লিজ এভাবে বলো না ..তোমরা তো আমার ভালোর কথা ভেবেই বলছো কিন্তু আমি তোমাদের সাথেই ভালো আছি ..প্লিজ আমাকে দূর করে দিও না ..

রুপার আম্মু চোখ মুখ মুছে নিজেকে শক্ত করে বললো ..

—-তোর কাছে আমি অনুরোধ করছি বাকিটা তোর ইচ্ছে ..

কথাটা বলে উনি রুম থেকে বেরিয়ে যান ..

আর রূপ বসে বসে কাঁদে ..তারই বা কি করার আছে ..এর আগের বার ওতো মা বাবার জন্য আদিকে ভুলে আকাশকে বিয়ে করেছিল এবারও না হয় এমন কিছুই হবে

—-..সব তোমার উপর ছেড়ে দিয়েছে আল্লাহ তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো ..

কিছুক্ষন পর ..
—-রুপা শাড়ি আর জুয়েলারি পড়েছিস একটু তো কাজল আর লিপস্টিকও দিতে পারিস!!

—-আমি আর কিছু পারবো না আম্মু নিয়ে যেতে হলে এইভাবেই নিয়ে যাও..

—-আচ্ছা ঠিক আছে চল ..

রুপা ড্রয়ইং রুমে গিয়ে সালাম দেয় ..

—-ওয়ালাইকুম আসসালাম!!দেখি দেখি আমার নাত বউটাকে ..বাহ্ ! খুব সুন্দর আমার নাতির পছন্দ আছে বলতে হবে ..

রুপা এখনো দেখেনি যে ওকে কে দেখতে এসেছে ..

—-বলছি যে সবার যদি মতামত থাকে তাহলে তো আমরা বিয়েটা ফাইনাল করতে পারি কি বলেন চাচা ..

আদির দাদু উত্তর দেয়ার আগেই রুপা বলে উঠে …

—-না আব্বু আমি বিয়ে করবো না ..আর উনারা কি জানেন আমি ডিভোর্সি ..

—-জি আমরা সব জানি ..জেনে শুনেই আপনাকে বিয়ে করতে এসেছি ..

এবার রুপা পাত্রের দিকে তাকায় ..পাত্রকে দেখে রুপা তো রীতিমতো শকট ..

—-আপনি??

—-আংকেল আমি রুপার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই?

—-হে বাবা অবশ্যই!! রুপা যাও মা আদিত্যকে নিয়ে তোমার রুমে যাও।

—-কিন্তু আব্বু..

—-কোনো কিন্তু না আমি যা বলেছি তাই করো..

আমি আর কিছু না বলে উনাকে নিয়ে আমার রুমে আসি ..

—-এসব কি হুম আপনি পাত্র ?

—-হুম কেন আমি কি পাত্র হিসেবে খুব খারাপ?

—-আদি আপনি সবকিছু জানেন ..আমি বিয়ে করতে চাই না ..

—-বিয়ে তো তোমাকে করতেই হবে সুইট হার্ট ..

—-মানে কি বলছেন এইসব ..

—-দেখো তুমি আগেরবার তোমার ফ্যামিলির দোহাই দিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে ..কিন্তু এখন তোমার ফ্যামিলিই চাই আমাদের যেন বিয়ে হয় ..সো এখন তুমি যাইই বলো না কেন আমি আর শুনছি না ..

—-আদি আপনি আমার চেয়ে আরো ভাল কাওকে ডিসার্ভ করেন ..আমি তো একটা ডিভোর্সি মেয়ে কেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন বলুনতো ..

—-আমি তোমাকে ভালোবাসি রূপ ..এখন তুমি যেমনি হও না কেন আমার তোমাকেই চাই ..

—-আমি ভার্জিন না..

—-হোয়াট রাবিশ ..তোমার কি মনে হয় আমি তোমার শরীরের লোভে তোমাকে বিয়ে করছি ..যদি আমার তোমার শরীরের লোভ থাকতো তাহলে বিয়ের আগেই সেটা মিটিয়ে নিতে পারতাম ..আমি তোমাকে দুই দিন সময় দিলাম ..এর মধ্যে যদি তুমি নিজে থেকে রাজি হয়ে যাও তো ভালো নয়তো তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো ..মনে থাকে যেন ..

কথাটা বলে উনি হনহন করে বেরিয়ে যায় ..বেশি বলে ফেলেছি বোধয় ..কি দরকার ছিল ভার্জিন না বলার ..উনি তো জানেনই ৫ মাস একটা ছেলের সাথে সংসার করার পর কোনো মেয়ে ভার্জিন থাকে না ..আসলেই আমি বোকা কখন কি বলতে হয় সেটাও জানি না ..আল্লাহ যেভাবে হুমকি দিয়ে গেলেন বিয়েতে রাজি না হলে সত্যি সত্যিই তুলে নিয়ে যাবে ..কি করবো আমি এখন ..

২ দিন পর…

চলবে ..
(আল্লাহকে ভয় করো.পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here