দেশলাই -১৯,২০
Jobrul islam
১৯ পর্ব
আচমকা গাছের ডালে কিছু একটা লাফিয়ে পড়ার শব্দ হয়। ঝিরিপথে উড়ে এসে পড়ে বাঁশের পাতা আর ডুমুর গাছের কয়েকটি ফল। ইলি তখন নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত। কিন্তু মাথার উপরে শব্দ শুনে আঁতকে উঠে সেও রাফসানের সঙ্গে তাকায়। বিস্মিত হয়ে দেখতে পায় ডুমুর গাছের শাখায় বসে তাদের দিকেই তাকিয়ে লেজ চুলকাতে চুলকাতে ফল খাচ্ছে দু’টি বানর। আরেকটি বানর নেতানো বাঁশে ধরে ঝুলে আছে। ইলি বিস্মিত হয়ে বলে উঠে, ‘ওমা বানরগুলোর চোখে চশমা কোত্থেকে এলো।’
রাফসান তখন আলগোছে ইলিকে পাঁজাকোলা করে কোলে নিয়ে বলে,
– ‘চোখে চশমা না৷ এগুলোকে চশমা বানর ডাকা হয়। চোখের চারপাশে সাদা রঙের লোমে আবৃত হয়ে চশমার আকার নিয়েছে। তাই দূর থেকে হঠাৎ দেখলে মনে হয় চশমা পরে বসে আছে।’
– ‘ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো বলছি।’
রাফসান আরেকটু শক্ত করে ধরে পানিতে চপচপ শব্দ তুলে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
– ‘মোচড়ামুচড়ি করিস না ইলি পড়ে যাবো। পারলে আমার বাম হাতের লাঠিটা তোর কাছে নে।’
– ‘না, আমাকে ছাড়ো।’
– ‘ছাড়ছি, সামনের কিনার ঘেঁষে কয়েকটি বড়ো বড়ো পাথর দেখা যাচ্ছে সেখানে যাই।’
তবুও ইলির মোচড়ামুচড়ি থামে না, বারংবার বলেই চলছে, ‘আমাকে ছাড়ো তুমি, ছাড়ো বলছি।’
রাফসান শক্ত করে ধরে হাঁটতে থাকে। খানিক পর পাথরের সামনে নামিয়ে দিয়ে বলল,
– ‘এখানে বস। বাবা এতো ওজন হাঁপিয়ে গেছি।’
ইলি আবার চলে যাচ্ছিল। রাফসান হাত ধরে টেনে কাতর গলায় বলল, ‘বস না। এমনিতেই হাঁপিয়ে গেছি।’
– ‘আমি বলছি না-কি কোলে নাও আমাকে।’
রাফসান ওর কাঁধে ধরে ঠেলে পাথরের বসিয়ে বলল,
– ‘এতো কথা বলিস না তো। দেখি জোঁক ছাড়িয়ে দেই।
– ‘জোঁক থাকুক। রক্ত খাক।’ বলেই ইলি আবার হাঁটতে থাকে।
রাফসান তাড়াতাড়ি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
– ‘কেন এমন করছিস ইলি?’
– ‘তোমার জানার দরকার নাই। পথ ছাড়ো আমার।’
– ‘ইলি রক্ত বেরুবে শেষে।’
– ‘বের হোক আমার রক্ত। তোমার কি আসে যায়।’
ইলি আবার হাঁটতে যেতেই রাফসান হাত ধরে টেনে কাছে এনে গালে হাত দিয়ে বলল,
– ‘কেন এমন করছিস বল? সিগারেট খেয়েছি বলে তাই তো? যা সিগারেট ছেড়ে দেবো আজ থেকে।’
রাফসানের চোখের দিকে তাকিয়ে ইলির ভেতর গুলিয়ে কান্না পায়। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
– ‘ছাড়ো আমাকে। তুমি আমার জন্য সিগারেট ছাড়বে কেন? আমি তোমার কে হই? আমি আসলেই কেউ না সেটা তো সিএনজিতেই প্রমাণ করে দিয়েছো। ইন্তিশা যদি বলতো তুমি ঠিকই দেশলাই দিয়ে দিতে।’
ইলির মুখের দিকে তাকিয়ে রাফসানের বুকটা শিরশির করে উঠে, যুক্তিহীন হয়ে পড়ে নিমিষেই। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ‘ইলি উল্টাপাল্টা কথা বলবি না তো৷ পৃথিবীতে এখন আমার সবচেয়ে আপন মানুষ কেউ থাকলে তুই আছিস। আমার প্রকৃত আপন মানুষ। এই একাকীত্বের দিনে তুই ছাড়া কে আমাকে এতো সঙ্গ দিচ্ছে বল?’
ইলি নিজেকে খানিকটা ছাড়িয়ে চোখ তুলে রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ‘তাহলে আগে দেশলাই আমার কাছে দিলে না কেন? আবার সিগারেটও খেলে। আমাকে তুমি ইচ্ছা করে অপমান করেছো। বুঝিয়ে দিয়েছো আমার সেরকম কোনো অধিকার নেই। আমি যে বাড়াবাড়ি করি তাই আমার লাগাম টেনে ধরার জন্য উল্টো সিগারেটও খেয়েছো।’
– ‘আচ্ছা সব বলছি আগে জোক ছাড়িয়ে নিই।’
– ‘না, আগে বলো তখন দেশলাই কেন আমার হাতে দিলে না। আর সিগারেটও খেলে কেন? ইন্তিশা হলে কি এমন আচরণ করতে পারতে?’
ইলির কোনো উত্তর না দিয়ে রাফসান হাঁটু গেড়ে বসে ওর বাম পা ধরে বলে, ‘টানাটানি করলে পড়ে যাবি। সোজা দাঁড়িয়ে থাক, জোঁক ছাড়িয়ে নিই তারপর যা ইচ্ছা বলিস।’
ইলি খানিকটা নিভে আসে। রাফসানের চুলে আঙুল ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেকেন্ড কয়েক পরেই আবার রাফসান জোঁক হাতে দাঁড়িয়ে বলে,
– ‘দেখ রক্ত খেয়ে কত মোটা হইছে৷’
ইলি ভয়ে চোখবন্ধ করে বলে,
– ‘দূরে ছুড়ে ফেলো।’
রাফসান জোঁকটা ছুড়ে ফেলে পায়ের দিকে তাকায়।
– ‘ইশ, তোর পা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। আগেই বলেছিলাম জোকটা ছাড়াই। তোর জেদের কারণে এমন হলো।’
ইলি জবাব না দিয়ে পাথরের ওপর গিয়ে দাঁড়ায়,
– ‘সামনে এসে দাঁড়াও, তোমার চুল এলেমেলো হয়ে গেছে ঠিকঠাক করে দিই।’
– ‘থাক লাগবে না, আমিই পারবো।’
– ‘তোমার হাতে ময়লা।’
– ‘হাত ধুয়ে ঠিক করবো।’
– ‘এতো কথা বলো কেন রাফসান ভাই? আমি এলোমেলো করছি আমি ঠিক করে দেবো আসো।’
রাফসান সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইলি চুল ঠিকঠাক করে দিতে গিয়ে সেই সন্ধ্যার কথা মনে পড়ে যায়। ওড়না দিয়ে এমন ভাবেই ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিয়েছিল সে।
– ‘কিরে এতোক্ষণ লাগে চুল ঠিক করতে?’
– ‘শেষ।’
রাফসান জলে নেমে হাত ধুয়ে সামনে তাকায়। গাইড বহুদূরে একটা পাথরে বসে আছে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে।
রাফসান তার লাঠি হাতে নেয়,
– ‘তোর লাঠিও ভেসে গেছে। আয় আমার সাথে।’
– ‘না যাব না। এখনও তুমি জবাব দাওনি।’
– ‘কি জবাব দেবো। মেয়ে মানুষের মাথায় কত কিছু ঘুরে। আমি তো এমনিই সিগারেট খেয়েছি৷ তুই এতো কষ্ট পাবি কল্পনাও করিনি। তাছাড়া তোকে অপমান করতে বা লাগাম টেনে ধরতেও সিগারেট খাইনি৷ সবই তোর নিজের ধারণা।’
– ‘আচ্ছা পাশের পাথরে এসে বসো। একটু পর যাবো।’
ইলির দিকে এক পলক তাকিয়ে পাথরে গিয়ে বসতে বসতে বলল, ‘তোর মাথায় কখন যে কি চলে আল্লাই ভালো জানে।’
ইলি ফিক করে হেঁসে ফেলে। রাফসান ভ্রু কুঁচকে তাকায়,
– ‘এখন হাসি ঠেলে বের হচ্ছে তোর। পুরো রাস্তা গোমড়ামুখে থেকেছিস, আমি হাসাতে পারিনি৷’
– ‘তোমার ব্যাগেই সিগারেট আর দেশলাই তাই না?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘দেশলাই আগে দাওনি এখন দাও।’
– ‘কেন?’
– ‘দাও বলছি দেবে।’
রাফসান ব্যাগটা এনে হাঁটুতে রেখে বলল,
– ‘সামনের চাইনটা খুলে হাত ঢোকা।’
ইলি হাত ঢুকিয়ে দেশলাই নিয়ে বললো,
– ‘আজ থেকে তুমি আর সিগারেট খাবে না। তোমার সবচেয়ে আপন মানুষের নিষেধ। আমি কখনও নিজ থেকে দেশলাই না দিলে তুমি কোনো দোকান থেকেও কিনবে না।’ কথাটি বলে দেশলাই ছুড়ে ফেলতে যেয়েও ফেললো না।
আবার ব্যাগে রেখে বলল,
– ‘সিএনজিতে যাওয়ার পর এই দেশলাই আমার কাছে দেবে। এখন থাকুক।’
– ‘বুঝলাম না কি আবোল-তাবোল বকছিস।’
– ‘আবুল-তাবুলই। তুমি আর কখনও কোনো দোকান থেকে দেশলাই কিনবে না৷ এটা আমার নিষেধ। তুমি চাইলে পালন করবে না চাইলে নাই। তবে অনুরোধ করবো লুকিয়ে সিগারেট খাবে না। লুকিয়ে সিগারেটে আগুন ধরাতে যাওয়ার আগে আমার কাছে আসবে। আমি এই দেশলাইটাই তোমার কাছে দিয়ে দেবো। তারপর থেকে তুমি আবার নিজের মতো সিগারেট খেতে পারবে। তবে এই দেশলাই আমার কাছে যতদিন থাকবে ততদিন মনে করবো বর্তমানে পৃথিবীতে আমি তোমার সবচেয়ে আপন মানুষ।’
– ‘কীসব ছেলেমানুষী কথাবার্তা।’
– ‘থাকুক ছেলে-মানুষী কথা। তুমি প্লিজ বলো এই দেশলাই যতদিন আমার কাছে থাকবে সিগারেট খাবে না।’
– ‘তোর কথার কোনো যুক্তি আছে? কি বলছিস বুঝতেও পারিনি। সব মাথার উপর দিয়ে গেছে।’
– ‘সহজ কথা বোঝো না কেন তুমি? মনে করো তোমার সবচেয়ে আপন মানুষ এই দেশলাই কেড়ে নিয়ে বলেছে এটা ফিরিয়ে দেওয়ার আগপর্যন্ত আর সিগারেট কখনও খাবে না।’
– ‘হ্যাঁ, এখন যদি সে এই দেশলাই না নিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খায়?’
– ‘তুমি খাবে না প্লিজ। একটু আগেও না বলেছিলে আমি বললে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেবে।’
– ‘ছাড়বো। কিন্তু আরও কি বলতে চাইছিস৷ কিছুই বুঝলাম না।’
– ‘কিছু না। এতো কিছু তোমাকে বলে লাভ নাই। এখন সহজ কথা তুমি খাবে না। আর সিএনজিতে উঠে দেশলাই আমার কাছে দেবে ঠিকাছে?’
– ‘আচ্ছা।’
– ‘তুমি লুকিয়ে খাবে না তো?’
– ‘না খেলে কী হবে?’
– ‘না খেলে তোমার উপকার হবে। আরও একটা কারণ আছে বলবো না।’
– ‘আচ্ছা বলতে হবে না৷ তোর মাথা গেছে আর বকবক করিস না।’
– ‘আমি বকবক করলে তোমার বিরক্ত লাগে তাই না?’
– ‘আমি বলেছি না-কি? হুদাই প্যাঁচাচ কেন?’
– ‘তুমি নিজেই প্যাঁচাও, যা বলি সেটার উত্তর দিলে কি হয়?’
– ‘চল যাই। আবুল-তাবুল কথা রাখ।’
– ‘আচ্ছা চলো।’
রাফসান লাঠি হাতে ঝিরিপথে নেমে বলে,
– ‘আয়।’
ইলি পা টিপে টিপে যায়। ঠান্ডা জল। রাফসান বাম হাত ইলির পিঠের দিকে নিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। ইলি ডান হাত দিয়ে ধরে রাফসানকে। লাঠিতে ভারসাম্য রেখে তারা ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। ইলির শ্বাস ভারী হয়ে আসছে। বুক ধুকধুক বেড়ে চলেছে৷
পা হঠাৎ পিছলে পড়ে যাচ্ছিল। রাফসান বাম হাতে টান দিয়ে বুকে আনে৷ ইলির নাক ঠোঁট ঘষা খায় ওর বুকে। ইলির এক অন্যরকম অনূভুতিতে পুরো শরীর কেঁপে উঠে।
– ‘ঠিক আছিস তো ইলি।’
– ‘হুম।’
রাফসান মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ‘এতো নীরব হয়ে গেলি কেন? ভয় পাচ্ছিস না-কি?’
– ‘না।’
– ‘ক্ষিধে লাগছে?’
– ‘না।’
– ‘তো এমন লাগছে কেন? আচ্ছা চল ধীরে ধীরে যাই।’
আবার তারা হাঁটতে থাকে। গাইডও যাচ্ছে বিড়ি টেনে টেনে। পাখির সুমধুর কলরব শোনা যাচ্ছে। আচমকা রাফসান খেয়াল করে ইলি বারংবার চোখের পানি মুছছে।
– ‘আরে কি হয়েছে? তুই কাঁদছিস না-কি?’
– ‘কিছু না।’
রাফসান সামনে গিয়ে মুখ আঁজলা করে ধরে বলে, ‘কিছু না মানে। তুই তো কাঁদছিস।’
ইলি আর নিজেকে সামলাতে পারে না। জড়িয়ে ধরে কেঁপে কেঁপে উঠে কান্নায়।
– ‘আরে কি হয়েছে বল না।’
– ‘আমার হৃদকে একদম পছন্দ না রাফসান ভাই৷ আমি কি করবো এখন ভেবে পাই না। তুমি কেন তখন ইন্তিশার সঙ্গে রিলেশন করেছিলে। তাহলে তো আমি হৃদের সাথে বিয়ে ঠিক হতে দিতাম না।’
রাফসান পেছনে তাকিয়ে দেখে আরও কিছু পর্যটক ঝিরিপথে নেমে গেছে।
সে ইলির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
– ‘আচ্ছা পরে সব শুনবো। এখন কান্নাকাটি বন্ধ কর। আরও মানুষ আসছে।’
চলবে…
দেশলাই – ২০ পর্ব
দু’জন আবার হাঁটতে শুরু করে। বাঁ পাশে বড় বড় পাথরের খন্ড দেখা যাচ্ছে। গাছগাছালির আড়াল থেকে কানে ভেসে আসছে পাখির সুমধুর কলরব।
গাইড তাদের থেকে খানিকটা দূরে চলে গেছে। পেছনে একদল ছেলে-মেয়ে হৈ-হুল্লোড় করে পানিতে চপচপ শব্দ তুলে এদিকে আসছে।
ইলি নাক টানছে। চোখের পানি মুছছে।
দু’জনেই পিঠের দিকে হাত নিয়ে পেঁচিয়ে ধরে সাবধানে হাঁটছে।
ইলি মাথা তুলে রাফসানের মুখের দিকে তাকায়,
– ‘আমি তো একসময় ভাবতাম তুমি আমাকে পছন্দ করো। তারপর ভুল প্রমাণ করে ইন্তিশার সাথে জড়িয়ে গেলে। এখন আবার আমার কাছে মনে হয় তুমি আমাকে পছন্দ করো। সেটাও কি ভুল রাফসান ভাই?’
রাফসান অবাক চোখে তাকায়। দু’টি চোখের মিলন হয়। কোনো জবাব না দিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।
ইলি কোমর থেকে হাত পেটে নিয়ে চিমটি কেটে বলে, ‘কি হলো, চুপচাপ কেন?’
– ‘এমনিতেই।’
ইলি আবার প্রশ্ন করে,
– ‘কোনো পুরুষ না-কি পছন্দ করলে মেয়েরা বুঝতে পারে?’
– ‘হয়তো।’
– ‘আমার কাছে তো মনে হয় তুমি আমাকে পছন্দ করো, তাহলে এতো দ্বিধা কেন?’
রাফসান কোনো জবাব দেয় না। ইলি আবার বলে,
– ‘পছন্দ করলে তোমার যখন বিয়ের কথা চলছিল একবারও ফুপুকে দিয়ে আমাকে আলাপ দিতে পারতে না?’
– ‘আমরা তো জানি তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।’
– ‘আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো প্লিজ।’
– ‘পড়ে যাবো। আর আস্তে কথা বলো। পেছনে মানুষ।’
– ‘আচ্ছা ফিসফিস করে বলছি। সত্যি করে বলো তো তুমি কি অবাক হচ্ছ না আমি আজ হঠাৎ এগুলো বলায়?’
– ‘না।’
– ‘কেন?
– ‘আমি আগে থেকেই জানি তুই আমার ওপর দূর্বল।’
ইলি মাথা তুলে তাকায়, ‘কীভাবে জানো?’
– ‘শুধু মেয়েরা না। যেকোনো মানুষ তার ওপর দূর্বলদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝে ফেলতে পারে। আর তোর সকল পাগলামিতেই গভীর ভালোবাসা, মমতা আমি টের পাই।’
ইলি মাথা খানিকটা ওর দিকে হেলে দিয়ে বলল,
– ‘তাই? তাহলে আমাকে রেখে ইন্তিশার সাথে প্রেম করেছিলে কেন?’
– ‘তখন এতোকিছু বুঝতাম না-কি?’
– ‘এখন বুঝো?’
– ‘হুম।’
– ‘রোবটের মতো শুধু উত্তর দিয়ে যাচ্ছ কেন?’
রাফসান হেঁসে ফেললো,
– ‘তাহলে কীভাবে কথা বলবো?’
– ‘মানে কেমন করে যেন কথা বলছো, ভাল্লাগে না।’
– ‘তোর যা ইচ্ছা বল। আমি এখান থেকে যাবার পর যা বলার বলবো, ঠিকাছে?’
– ‘পরে বকবে না-কি আবার?’
– ‘না।’
– ‘তুমি নিজেকে এতো সামলে রাখো কীভাবে? আগে তো পারতে না। এখন এমন কেন?’
– ‘বড়ো হয়েছি না? এখন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ভাবতে হয়।’
– ‘আচ্ছা তুমিই বলো তো। আমার কোনো ভাই-বোন নেই। শুধু মা-বাবা৷ এখন হৃদকে বিয়ে করে ইংল্যান্ড গিয়ে আমার কি হবে? দুনিয়ায় কি টাকাপয়সাই সব? আমি দেশে বিয়ে করলে মা-বাবাকে দেখতে পারতাম, তাই না? প্রয়োজনে পড়ালেখা শেষ করে জব নিতাম। এখন তো মেয়েরা কত কিছুই করছে।’
– ‘তা পারতি। কিন্তু স্বামী সংসারের জন্য ঠিকই মা-বাবাকে দেখবাল করা সহজ হতো না।’
– ‘অবশ্যই হতো, আমি যাকে সব সময় মন থেকে বিয়ে করতে চাইছি তাকে পেলে সবই হতো।’
কথাটি বলতে বলতে ইলির গলা ধরে আসে।
রাফসান কিছু বলতে পারে না। তার বুক শিরশির করে। পা যেন অসাড় হয়ে আসে। ইলির প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ, পাগলামিগুলো, এতো যত্ন নেয়া, এতো খেয়াল রাখা, চোখভর্তি ভালোবাসা, তার প্রতি সীমাহীন মায়া। সমস্তকিছু ক’দিন থেকে বুকের ভেতর আলতো করে স্পর্শ করছে। উষ্ণ ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত তাকে গলিয়ে দিচ্ছে। ইলির মতো মেয়েকেও কীভাবে এড়িয়ে চলতে হয় সে পুরোপুরি জানে না। এতো ভালোবাসা কীভাবে অবহেলা করে ঠেলে সরিয়ে হেঁটে চলে যেতে হয় তাও জানে না। এতো ক্ষমতা তার আছে কি-না কে জানে! তবুও তো তার নিজেকে সামলে নিতে হয়। কতটুকু সামলাতে পারে। কতটুকু বা ভবিষ্যতে পারবে তাও জানে না। কিন্তু যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নেই। সেটায় সজ্ঞানে জড়াতে চায় না সে৷ ইলিও যে এতোদিন নিজেকে বেশ সামলাচ্ছিল সে টের পায়। কিন্তু আজ হঠাৎ ইলির কি হলো? এতো আবেগি হয়ে পড়লো কেন? নানান কথা ভেবে রাফসান আনমনে হাঁটছে। সেটাও ইলি বুঝে ফেলে।
– ‘কি এতো ভাবছো তুমি? সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করতে পারো না?’
– ‘না।’
– ‘কেন? তোমার না সবচেয়ে আপন মানুষ এখন আমি?’
– ‘হুম।’
– ‘তাহলে বলো না। কি ভাবছো এতো।’
‘এদিক দিয়া উঠতে হইব’ তাদের আলাপচারিতায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে গাইড আঙুল দিয়ে ছোট্ট পাহাড় দেখিয়ে কথাটি বললো।
– ‘আচ্ছা মামা। আসছি, আপনি উঠেন।’
ইলি বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে পেটে খোঁচা দিয়ে তাড়া দেয়, ‘বলো।’
– ‘পরে বলবো সব। খালার বাড়ির পাশে পাহাড় আছে না? সেখানে একবার বসে গল্প করবো, ঠিকাছে?’
– ‘আচ্ছা।’
দু’জন কয়েক কদম চুপচাপ গেল৷ ইলি আবার বললো, ‘আজ দিনটি আমার জন্য অনেক স্পেশাল।’
রাফসান অবাক চোখে তাকায়, ‘কি বলিস? আমার কাছে লাগছে তোর অনেক কষ্ট হচ্ছে। একটুও উপভোগ করছিস না।’
– ‘তা ঠিক। কিন্তু তোমার কাছ থেকে তো কোনোদিন এতো গুরুত্ব পাইনি। আজ রাগ করায় তুমি অনেকবার রাগ ভাঙাতে চাইলে। হাসাতে চাইলে। নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল।’
– ‘তাই?’
– ‘হুম।’
– ‘তুই জানিস, তোকে মুখভার মানায় না? তোর চঞ্চলতা, বাড়াবাড়ি করা ভালো লাগে।’
– ‘কচু ভালো লাগে তোমার। এসবের জন্য আমাকে তুমি কতভাবে অপমান করেছো তা জানো?’
– ‘কি বলিস। কখন?’
– ‘আমি মুরব্বিয়ানা করি। বুঝদার। বকবক করি। এগুলো তুমি কেন বলো? এই বাড়াবাড়ি আর চঞ্চলতার জন্য।’
রাফসান আরেকটু বুকের সঙ্গে ওর কাঁধ চেপে মুখের দিকে তাকায়, – ‘ইশ, তুই এগুলো এতো খেয়াল করে কষ্ট পাস? আমি তো এমনিতেই বলে ফেলি।’
– ‘হুম, আমিও মাঝে মাঝে বলি। বাট শেষে নিজেই কষ্ট পাই।’
– ‘যেমন, কি বলেছিলি।’
পরে বলছি গাইড দাঁড়িয়ে আছে।
– ‘হুম, এখন পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে।’
পর্যটক উঠার জন্য পাহাড় কেটে কেটে সিঁড়ি বানিয়ে রাখা। ইলি সেদিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো,
– ‘আল্লাহ এখন এদিকে উঠতে হবে।’
– ‘হ্যাঁ, পারবি না?’
– ‘পারতে তো হবে।’
পেছনের লোকগুলো তাদের কাছাকাছি চলে এসেছে দেখে রাফসান গাইডকে ডেকে বললো, ‘মামা এরা চলে যাক আগে। আমরা আসছি। আপনি উঠে যান।’
ইলি ভেজা কামিজ একটু ঝেড়েমুছে খোঁপাটাও আবার ভালো করে বেঁধে নেয়।
লোকগুলো গল্প করতে করতে চলে যাবার পর রাফসান আচমকা ইলিকে পাঁজাকোলা করে কোলে নেয়। আঁতকে উঠে সে। ঘটনাটি বুঝতে পেরে নিষেধ করে বললো,
– ‘ছাড়ো তো, এতটা পথ উঠতে পারবে না। কষ্ট হবে তোমার।’
– ‘নড়াচড়া করবি না, পড়ে যাবো।’
রাফসান দুই কদম উপরে উঠে যায়। ইলি বুঝতে পারে আর নিষেধ দিয়ে কাজ হবে না। তাছাড়া তার ভালো লাগছে। দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে মুখের দিকে গভীরভাবে তাকায়। রাফসান এক কদম উপরে উঠলেই মৃদু ঝাঁকুনিতে ওর খোঁচা খোঁচা দাড়ি কপালে লাগে।
– ‘এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আমার হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে।’
– ‘আচ্ছা আর তাকাচ্ছি না।’ কথাটি বলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে মুখ ডুবিয়ে দেয় গলায়। এখন হাঁটার ঝাঁকুনিতে নাকে-মুখে দাড়ির খোঁচা লাগছে। ইলি গলাতে নাক-ঠোঁট ঘষে চোখবুঁজে ফেলে। বারংবার মনে মনে প্রার্থনা করে, ‘আল্লাহ পথ যেনো এতো তাড়াতাড়ি শেষ না হয়।’
কিন্তু রাফসানের হাঁপানো কানে লাগায় চোখ মেলে তাকায়। অর্ধেকটা পথ এখনও বাকী।
– ‘নামাও তো রাফসান ভাই।’
– ‘কেন?’
– ‘এতো কেন কেন করো না তো। নামাও বলছি নামাও।’
রাফসান আস্তে করে সামনের সিঁড়িতে দাঁড় করায়।
– ‘ইশ, হাঁপিয়ে গেছো।’
– ‘হাঁপাবো না? খেয়ে খেয়ে শুধু মোটা হয়েছিস।’
– ‘আমি বলছি না-কি কোলে নিতে?’
– ‘সিঁড়ি দেখেই আল্লাহ করে উঠলি তো কি করবো?’
ইলি ফিক করে হাসে।
– ‘আবার হাসছিস, চল যাই।’
ইলি আগেই উপরে উঠে যায়। রাফসান হাঁপাতে হাপাতে এসেছে। ঘামে কপাল চিকচিক করছে। চুল কয়েকটা সামনে এসে পড়েছে। ইলি গাইডকে বললো,
– ‘মামা হাঁটেন আমরা আসছি।’
তারপর চারদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। ওড়নাটা খুলে মুখ মুছে দিতে এগুতেই রাফসান বাঁধা দেয়, – ‘লাগবে না।’
ইলি কাতর গলায় বলে, ‘প্লিজ আজ এতো ফর্মালিটি না। দেই না একটু মুছে।’
রাফসান আর না করতে পারে না। ইলি ওড়নার আঁচল দিয়ে পরম ভালোবাসায় কপাল, মুখ, গলার ঘাম মুছে দিতে দিতে একটা ঘোরের ভেতর চলে যায়। রাফসান মুখে কাঠিন্যের ভান সেঁটে দাঁড়িয়ে আছে। ইলি আচমকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে।
রাফসান আঁতকে উঠে। কি করবে ভেবে পায় না।
– ‘কি হলো ইলি?’
ইলি কেঁপে কেঁপে উঠছে কান্নায়। রাফসান পিঠে হাত রাখে, ‘কি হয়েছি ইলি? কেন পাগলামি করছিস?’
ইলি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়, ‘আমি কি তোমাকে আর পাবো না রাফসান ভাই? কোনোভাবেই কি আর পাওয়ার সুযোগ নেই? আমি তো জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। তবুও এমন হলো কেন?’
– ‘কিছুই হয়নি ইলি। হৃদকে বিয়ে করলে সুখেই থাকবি। আমার তো নিজেরই টিকে থাকা দায়।’
– ‘আমার হৃদকে বিয়ে করতে ইচ্ছা করে না।’
– ‘তাহলে তখন নিষেধ করতে পারতি।’
– ‘তখন তুমি ইন্তিশার সাথে রিলেশনে ছিলে। তাই মেনেছি।’
– ‘আর আমি যখন বিয়ে করলাম তখনও তো বলতে পারতি। তখন তো কিছুই বলিসনি?’
– ‘তুমি তখন এমন ছিলে না। আমার সাথেও মিশতে না। আমি সাহস পাইনি।’
– ‘এখন কি করে সাহস হলো?’
– ‘জানি না।’
– ‘আচ্ছা এখন ছাড়। কেউ চলে আসবে।’
– ‘তাহলে তুমি একবার নিজ থেকে জড়িয়ে ধরো।’
– ‘কি বলিস এসব?’
– ‘কিচ্ছু হবে না বলছি না? আমি বাড়িতে গিয়ে জানিয়ে দেবো হৃদকে বিয়ে করবো না, যা হয় হবে।’
রাফসান মুচকি হেঁসে বলে, ‘পাগলামি করসি না ছাড়। কেউ আসবে।’
– ‘আসুক। তুমি হাত নিয়ে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, তাহলে ছেড়ে দেবো।’
রাফসান চারদিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে পিঠের দিকে হাত নিয়ে ধরে। তার পুরো শরীরে উষ্ণতা ছড়িয়ে যায়। ইলি মাথা তুলে একবার রাফসানের মুখটা দেখে নেয়। আবার গলায় নাক ডুবিয়ে ফুফিয়ে-ফুফিয়ে কেঁদে উঠে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘প্লিজ আমাকে তুমি নির্লজ্জ বেহায়া ভেবো না রাফসান ভাই। আমি কি করবো। সেই ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। তোমাকে পেলে আর কিচ্ছু চাই না৷ প্লিজ তুমি একটা কিছু করো।’
রাফসান দ্বিধাদ্বন্দে কি করবে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কেবল সান্ত্বনা দিয়ে বললো, ‘পরে দেখা যাবে ইলি৷ এতো ভেঙে পরিস না৷ আমি তো আছি। এখন ছাড়।’
ইলি মাথা তুলে তাকায়। আঁজলা করে ওর মুখটা ধরে। তারপর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমার আজও কবর গলির সেই সন্ধ্যার কথা মনে পড়ে রাফসান ভাই। তোমার ঠোঁটে লিপস্টিক লেগে গেল। আমি আঁচল দিয়ে মুছে দিলাম। তোমার এগুলো কেন মনে নাই বলো তো?’
– ‘ইলি, চল এখন আমরা যাই।’
ইলি নিজের চোখমুখ মুছে নেয়,
– ‘হুম বুঝতে পারছি। তোমার বিরক্ত লাগছে আমার কথাবার্তা।’
– ‘আমি বলছি বিরক্ত লাগছে?’
– ‘বলতে হয় না বুঝা যায়।’
রাফসান লাঠি হাতে নিয়ে বলে, – ‘চল তো যাই।’
খানিকদূরে গিয়ে গাইডকে পায় তারা। পাহাড়ি সুরু পথে হাঁটতে থাকে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে ঝর্ণার পানির গর্জন। তবুও ইলির মন খারাপ। সুরু রাস্তা হওয়ায় দু’জন পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটা যাচ্ছে না। সে পিছু পিছু ম্লান মুখে হাঁটছে।
– ‘আস্তে আস্তে যাও তো রাফসান ভাই। আমাকে পেছনে ফেলে চলে যাচ্ছ।’
রাফসান মুচকি হেঁসে ঘুরে তাকায়,
– ‘আচ্ছা তুই সামনে যা। আমি পিছু পিছু আসি।’
– ‘না।
– ‘কেন?’
কান দাও বলি। রাফসান কাছে এসে মাথা নুইয়ে কান পাতে। ইলি ফিসফিস করে বলে, ‘আমি সামনে চলে গেলে তোমাকে দেখা যায় না।’
রাফসান হেঁসে ফেলে। ইলির গালে হাত দিয়ে বলে, ‘তুই কত অসাধারণ মেয়ে জানিস?’
ইলি রসিকতা করে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– ‘না।’
– ‘আগেও অবশ্য সুন্দর ছিলি। কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে এসে তোকে অন্য রকম সুন্দর দেখলাম।’
ইলি কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
– ‘কিন্তু ওইদিন তো বলেছিলে আমি চাকরানীর মতো দেখতে।’
– ‘মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম। সারারাত এর কারণে আমার ঘুম আসেনি।’
– ‘সত্যি?’
– ‘হ্যাঁ, তুই সকালে যাওয়ার পর বুঝলাম রাগ করিসনি।’
ইলি মুখে হাত দিয়ে হেঁসে ফেললো। একটা পাখি মাথার উপর দিয়ে ডেকে ডেকে চলে গেল।
– ‘হাসছিস কেন?’
– ‘আমি ভেবেছিলাম তুমি রাগ করে চলে গেছো। তাই সকালে নিজে নুডলস বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।’
– ‘তাই? তুই না বললি মামী পাঠিয়েছে।’
– ‘এমনিতেই বলেছিলাম।’
– ‘আচ্ছা চল, যাই।’
– ‘হুম। আর শোন। চুল, দাড়ি কাটায় তোমাকেও অনেকটা আগের মতো সুন্দর লাগছে। আমার সাথে থাকলে পুরোপুরো ঠিক হয়ে যাবে।’
রাফসান মাথায় গাট্টা দিয়ে বলে,
– ‘আমাকে পিছনে দে৷ সামনে যা।’
– ‘ওমা কেন?’
– ‘এমনিতেই।’
– ‘আগে বলো তুমিও কি আমাকে দেখে দেখে হাঁটতে চাও?’
– ‘না।’
– ‘তাইলে দরকার নাই।’
– ‘আচ্ছা হ্যাঁ।’
ইলি ফিক করে হাসে। তারপর সামনে গিয়ে হাঁটতে থাকে।
পাহাড় পেরিয়ে ছোট্ট একটা রাস্তা। বাম পাশে ঝিরিপথ দেখা যাচ্ছে। সামনে খানিকটা পথ এগুতেই দেখা গেল মানুষের ভীড়। গাইড তাদেরকে দাঁড় করিয়ে সামনে থেকে এসে জানায়, একটু অপেক্ষা করতে হবে। রাস্তায় ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা ফ্লাগ মিটিং করছে।
চলবে…