মম_চিত্তে #পর্ব_২৩,পর্ব_২৪ (স্পেশাল পর্ব)

0
1321

#মম_চিত্তে
#পর্ব_২৩,পর্ব_২৪ (স্পেশাল পর্ব)
#সাহেদা_আক্তার
২৩

লঞ্চে ওঠার সময় অনেক মানুষের ভীড়ে কে কোন দিকে হারিয়ে গেল খুঁজে পাওয়া গেল না। সবাই মানুষের মাঝে মিশে গেল। পাছে হারিয়ে যায় এই ভেবে মমর হাত শক্ত করে ধরে রইল রিয়ান। লঞ্চে উঠে হাফ ছাড়ল ওরা। নিচে বসার জায়গা নেই। সব ভর্তি। তাই দুইজনেই উপরে লঞ্চের ছাদে চলে এল। সেখানে অনেকজনকে পাওয়া গেল ওদের অফিসের। ওদের দেখে মম রিয়ানের হাত ছেড়ে দিল।

তৌসিফা ওকে ডাকল। ছাদে ইঞ্জিনের এত শব্দ যে কিছুই শোনা গেল না। ওর হাত নাড়ানো দেখে মম এগিয়ে গেল ওর দিকে। লঞ্চের ছাদের কিনারায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। ওখান থেকে চারপাশের দৃশ্য সুন্দর দেখা যায়। বেশ কয়েকটা উঁচু পাহাড় ঘেরা জায়গার পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল লঞ্চ। একটু পর কেবল পানিই দেখা গেল। চারদিকে পানির ঢেউগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছে। পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে লঞ্চের চারপাশে। অনেকে বিস্কিট ছুড়ে দিচ্ছে। সেই বিস্কিট পাখিগুলো লুফে নিচ্ছে। কিন্তু লঞ্চে থাকা লোকেরা মানা করল বিস্কিট ছুড়ে দিতে। মমর ইচ্ছে করছিল পাখিদের খাওয়াতে কিন্তু মানা করায় আর করল না।

তৌসিফা আর মম নিজেদের মধ্যে গল্প করতে লাগল। নতুন কিছু দেখলেই দেখাতে লাগল একে অপরকে। ওদের পেছনে কখন ফারিজা এসে দাঁড়ালো টের পেল না। মমর খুব কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে ও। একটা ধাক্কা দিলেই পানিতে পড়ে যাওয়ার মতো বিপদ ঘটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কিছু করার আগেই কোথায় থেকে রিয়ান এসে মমর পাশে এসে দাঁড়ালো। ফারিজা রিয়ানকে দেখে অপর পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। রিয়ানকে দেখলেই ওর খুশিতে মন ভরে ওঠে। ও হেসে হেসে কথা বলতে লাগল রিয়ানের সাথে। রিয়ান হু হা করল কিন্তু তেমন একটা পাত্তা দিল না। ও বিরক্ত হচ্ছে টের পেয়ে ফারিজা কতক্ষণ কথা বলে চুপ করে গেল। তারপর মুখ গোমড়া করে ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেল। যেতে যেতে ঘন্টা দুয়েক লাগবে। তাই মম একবার রিয়ানকে চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিতে বলেছিল কিন্তু এত মানুষের মাঝে বসার জায়গা পেল না।

দুই ঘন্টা জার্নি শেষে ওরা সেন্টমার্টিন পৌঁছালো। রিয়ান আর মম লঞ্চ থেকে নেমে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সবার জন্য। জায়গাটা সুন্দর। মিনহাজ লঞ্চ থেকে নেমে ওদের পাশে এসে গলার সর খাদে নামিয়ে রিয়ানকে বলল, ব্রো, হানিমুনটা না হয় এখানেই সেরে ফেলো। বলে হাঁটা দিল। কথাটা আস্তে বললেও মমর কানে গিয়ে ঠেকেছে। তাই না চাইতেও কান অবধি লাল হয়ে গেছে লজ্জায়। সত্যি বলতে বিয়ের পর এটাই ওদের একসাথে কোথাও বেড়াতে আসা।

সবাইকে খুঁজে নিয়ে হোটেলের দিকে হাঁটা ধরল ওরা। রুম নেওয়া হয়েছে ছয়টা। তিনটা মেয়েদের, দুটাে ছেলেদের আর একটা রিয়ানের জন্য। সবাই সবার মতো সেটেল হয়ে গেল। কিন্তু মম রুম পেল না। এক রুমে চারজন করে মেয়ে। ওরা মোট তেরজন মেয়ে। তাই মম বাকি রয়ে গেল। যে যার মতো রুমে চলে গেছে৷ মম তৌসিফাকে খুঁজল কিন্তু পেল না৷ মিনহাজ এসে জিজ্ঞেস করল, কি হল? দাঁড়িয়ে আছো?

– জায়গা নেই ভাইয়া৷ সব রুম ব্লক।

– আমার সাথে এসো।

মিনহাজ ওর ব্যাগ নিয়ে দোতলায় চলে এল। মম ওকে অনুসরণ করল। একটা রুমে ব্যাগটা রেখে বলল, এই রুমে থাকো তাহলে। মম কাঁধের ব্যাগ রেখে বিছানায় বসতে বসতে বলল, এটা কার রুম? মিনহাজ একটা গোয়েন্দা হাসি দিয়ে বলল, জানতে পারবে। রেস্ট নাও। আমি যাই। মিনহাজ বেরিয়ে গেল। ওয়াশরুমে শব্দ শোনা যাচ্ছে। কেউ আছে রুমে। মম ঝুঁকে ব্যাগটা রাখতেই লাগেজটা চেনা চেনা লাগল। পেছন থেকে কেউ বলল, তুমি? মম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এবার বুঝতে পারল মিনহাজ এভাবে হাসার কারণ। মম পিছন ফিরে দেখল রিয়ান ভেজা গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এখনো মোছেনি৷ মম বলল, কোনো রুমে জায়গা ছিল না। তাই মিনুভাই আমাকে এখানে দিয়ে গেল।

রিয়ান ওর দিকে এগােতে লাগল। মম পেছাতে পেছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকল। রিয়ান ওর কানে ফিসফিস করে বলল, হানিমুনটা তাহলে হয়েই যাচ্ছে। কি বলো? মম ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল, আমি অন্য রুমে চলে যাচ্ছি। কেউ বুঝতে পারলে জানাজানি হয়ে যাবে। রিয়ান ওর হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলল, কিচ্ছু হবে না। এদিকে আসো তো। নাও, মাথা মুছে দাও। রিয়ান টাওয়ালটা এগিয়ে দিল। মম অন্যদিকে ফিরে ওর মাথা মুছে দিতে লাগল। রিয়ান অভিযোগ করে বলল, অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেন? যেন অন্য কারো জামাইকে দেখছো? নিজেরই তো। মম টাওয়ালটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, হয়ে গেছে মোছা। যাও ঘুমাও, সারারাত গাড়ি চালিয়েছো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। বলে মম ওয়াশরুম চলে গেল।

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখল রিয়ান বিছানায় হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। মম মাথার চুল মুছতে মুছতে বলল, ঘুমাও নি? রিয়ান ফোনটা রেখে বিছানায় আস্তে আস্তে বাড়ি মেরে বলল, এখানে এসে বসো। মম জিজ্ঞেস করল, কেন?

– আহা, আসো না। বসো।

মম এসে বসলে রিয়ান ওর কোলে মাথা রেখে বলল, তোমার কোলে ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷ এখন ঘুমাবো। রিয়ান চোখ বন্ধ করল। মম হালকা হেসে ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিয়ানের চোখ ভেঙে ঘুম চলে এল। ষোল সতের ঘন্টার টানা জার্নি ওকে ক্লান্ত করে দিয়েছে। রিয়ান ঘুমিয়ে গেলে মম বালিশে ওর মাথাটা আস্তে করে রেখে দিল। তারপর পাশে শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে যত দেখে মন যেন ভরতে চায় না মমর। রিয়ানকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল টের পেল না।

দরজায় শব্দ হতেই মমর ঘুম ভেঙে গেল। নড়তে গিয়ে দেখল ও রিয়ানের বুকে। রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে৷ রিয়ান কখন এমন করল টেরই পেল না ও। রিয়ানের বাঁধন থেকে সরে এসে ফোন হাতে নিল। প্রায় দুটো বাজে। একটানা তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছে। দরজায় আবার নক হলো। মম উঁকি মেরে দেখল ফারিজা দরজা নক করছে। ও কি করবে বুঝতে পারল না। এখন যদি ওকে রিয়ানের রুমে দেখে তাহলে সবাইকে বলে দেবে। আবার রিয়ানকেও জাগাতে ইচ্ছে করছে না। খুবই ক্লান্ত ও। মম পায়চারি করতে লাগল আর ভাবতে লাগল কি করা যায়। তারপর বাইরে কারো কথা শুনতেই ওয়াচ গ্লাসে চোখ রাখল। দেখল মিনহাজ এসেছে। ওকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল মম। মিনহাজ ফারিজা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিল নিচে। তারপর নক করতে মম দরজা খুলে দিল। মিনহাজ জিজ্ঞেস, কি অবস্থা? সব ওকে? খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছি। রিয়ান কোথায়? মম পিছনে বিছানায় ঘুমন্ত রিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল, ঘুমাচ্ছে। মিনহাজ ওকে দেখে বলল, তাহলে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি সময় করে খেয়ে নিও দুজনে। মম মাথা নাড়ল। মিনহাজ চলে গেলে মম দরজা মেরে দিল।

বিশ মিনিট পর ওদের দুটো প্লেট দিয়ে গেল। মম প্লেট টেবিলে রাখতেই রিয়ান ঘুম ঘুম চোখে উঠে বলল, খাবার দিয়ে গেছে?

– হুম, উঠে গেছো? ঘুম হয়েছে?

– হয়েছে মানে? তোমাকে জড়িয়ে ধরে যে ঘুম দিলাম! সারারাতের ঘুম উসুল হয়ে গেছে।

মম ওর হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, এখন খাবারটা খেয়ে পেট ভরিয়ে নাও৷ রিয়ান অস্বীকার করে বলল, খাইয়ে দাও৷ আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে। আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো৷ দাঁড়াও হাত মুখ ধুয়ে আসি। রিয়ান ওয়াশরুম থেকে মুখ হাত ধুয়ে এসে বসল মমর পাশে৷ প্লেট থেকে খাবার নিয়ে মমর মুখের সামনে ধরল। উপায় না দেখে মম খেয়ে নিল। রিয়ান বলল, এবার আমাকে দাও। আ……। মম ওকে লোকমা ধরে খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষে প্লেটগুলো রেখে দু’জনে হাত ধুয়ে এল। রিয়ান বিছানায় বসে বলল, তোমার হাতে খেয়ে আমার পেট কত বড়ো হয়ে গেছে দেখো। ভুঁড়ি দেখা যাচ্ছে। মম ওর পেটে হালকা একটা ঘুষি দিয়ে বলল, তাহলে আর খাইয়ে দেবো না। রিয়ান ওর হাত দুটো ধরে বলল, ইস্। দেবে না মানে? একশবার দেবে। ভাবছি এবার থেকে তোমার হাতে খাবো। মম বলল, পাগল নাকি? রিয়ান ওর মুখের পাশে হাত দিয়ে বলল, তোমার জন্য। মম কিছু বলল না। দুইজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল।

ফোনের রিংটোন বাজতেই দু’জনে চমকে উঠল। রিয়ান বলল, ফোন বাজছে, ওয়েট। মম লজ্জামিশ্রিত সম্মতি জানিয়ে সরে বসল। রিয়ান ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যাঁ বলো ভাইয়া। মিনহাজ অপর পাশ থেকে বলল, সন্ধ্যার সব রেডি হয়ে গেছে।

– ওকে। তাহলে বিকালের পরে সবাইকে সমুদ্র পাড়ে চলে আসতে বোলো।

– আচ্ছা। খেয়েছিস? শরীর কেমন আছে?

– হুম খাওয়া হয়ে গেছে। শরীর এখন ফ্রেশ ঝরঝরে। থ্যাংক ইউ ব্রো।

– হঠাৎ।

রিয়ান একটা হাসি দিল। মিনহাজ বুঝতে পেরে বলল, ওটা তোর ভাগ্য। যাক, হানিমুনটা হয়ে গেল ফাঁকে দিয়ে তোদের। না হলে কোথাও হয়ত যাওয়াও হতো না। আচ্ছা আরেকটু বিশ্রাম নে। আমি বাকি কাজগুলো সেরে নেই। রিয়ান রাজি হয়ে ফোন কেটে দিল। মম জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? রিয়ান আড়মোড়া ভেঙে বলল, আজকে সন্ধ্যার পর সবাই সমুদ্র পাড়ে বসবে। সেখানে আড্ডা হবে, রাতের খাওয়া দাওয়া হবে।

– ও আচ্ছা।

রিয়ান মমর কাছে এসে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল, ইস্ কেউ না থাকলে তুমি আর আমি একসাথে সমুদ্র পাড়ে হাত ধরে হাঁটতাম। একসাথে ঝিনুক কুড়তাম। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতাম। মম?

– বলো।

– চলো না সবাইকে বলে দেই। তাহলে আর কিছু লুকাতে হবে না। নিজেদের ইচ্ছে মতো থাকতে পারব।

– তারপর যে সবাই তোমার বউকে কথা শোনাবে, টিটকারি করবে। ভালো লাগবে?

রিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই সমাজের সব কিছুতে সমস্যা। ভালো করলে একজনকে প্রসংশা করবে আর অপরজনকে দেখিয়ে বলবে তুমি পারোনি। আর খারাপ করলে তো কথাই নেই। তাকে বাজে মন্তব্য করতে করতে ডিপ্রেশনে নিয়ে ফেলে। এই নষ্ট সমাজের মানুষ দুইদিন আগের করা ভালো কাজের কথা মনে রাখে না৷ কিন্তু দশদিন আগের করা খারাপ কাজ ঠিকই মনে রাখে।

বিকালবেলা মম তৈরী হয়ে রিয়ানের আগে বেরিয়ে গেল। রিয়ানের চাইছিল না। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় পড়ার কোনো ইচ্ছে নেই মমর। মিনহাজকে ফোন করে জানতে পারল ওরা কয়েকজন সমুদ্র পাড়ে আছে। মম ওখানে চলে গেল। ও একটা হালকা নীল আর সাদা রঙে কাজ করা সুতির শাড়ি পড়েছে। হাতে মুক্তার ব্রেসলেট। গলায় রিয়ানের দেওয়া মুক্তোর লকেটটা। কানে সাদা দুল জোড়া। রিয়ান থেকে অনেক বলে উদ্ধার করেছে। দিতেই চাইছিল না। পরে আবার ওকে দুলটা ফেরত দিতে হবে এই শর্তে দিয়েছে। কি যে পেয়েছে দুলটাতে! কোমর পর্যন্ত চুল খোলা রেখেছে। ওকে দেখে অনেকে তাকিয়ে ছিল। মম তৌসিফাকে দেখে ওর কাছে গিয়ে বসল। তৌসিফা ওকে বলল, তোকেই মানিয়েছে এই সাগরপাড়ে। আমরা সবাই বেমানান।

– ধুর।

– সত্যি। সুন্দর লাগছে। সাগরের সাথে মিলে গেছে। আচ্ছা ভালো কথা। তোকে দেখলাম না যে। আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। তারপর বেরিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম তোর কথা। কেউ বলতে পারল না। উঠেছিস কোথায়?

– অন্য রুমে।

– ও আচ্ছা। আমি ভাবলাম রুম পেলি কি না। বাস আর লঞ্চে যা করল! তা স্যারের সাথে যে এলি কেমন লাগল?

– কেমন আর লাগবে? সে ড্রাইভার আর আমি প্যাসেঞ্জার।

মম আর তৌসিফা হাসতে লাগল। ওদের কথার মাঝে রাসেল মমর পাশে এসে বসল। খেয়াল করেনি ওরা৷ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মম তাকিয়ে দেখল রাসেল ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। হাতটা কাঁধেই রয়েছে ও তাকানোর পরও৷ মম কাঁধ সরিয়ে বলল, কিছু বলবেন ভাইয়া?

– সমুদ্র পাড়ে এভাবে চুল খোলা রেখো না। বেঁধে ফেলো।

বলে উঠে গেল। মম খোঁপা করে নিল। লোকটাকে মোটেই ভালো লাগে না। কিন্তু সিনিয়র তাই কিছু বলতেও পারে না। কিছুক্ষণ পর রিয়ান এসে উপস্থিত হলো। গায়ে আকাশি রঙের শার্ট আর নীল জিন্স। শার্টের বোতাম খোলা। ভেতরের সাদা টি শার্ট দেখা যাচ্ছে। ওর নায়কের মতো হেঁটে আসা দেখে মমর হাসি পেল। রিয়ান মিনহাজের কাছে এসে দেখতে লাগল কি কি কাজ হয়েছে। এখানে অন্যান্য গাছ থেকে নারিকেল গাছ বেশি। তাই আগুন জ্বালানোর কাঠ পেতে বেগ পেতে হয়েছে। খাবার দাবারের ব্যাপারটাও হ্যান্ডেল হয়ে গেছে। কাছের একটা হোটেল থেকে খাবার আনা হবে। নিজেরা রান্না করবে ভেবেছিল। পরে ব্যাপারটা বাদ দিয়ে দিল।

সন্ধ্যা নামতে সবাই কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসল। রিয়ান আগেভাগে মমর পাশে এসে বসে পড়ল। ফারিজা গিয়ে বসল ওর পাশে। তৌসিফা মমর অপর পাশে বসল। রাসেল কয়েকবার ঘুর ঘুর করেও যখন মমর পাশে জায়গা পেল না তখন তৌসিফার পাশে বাধ্য হয়ে বসে বার বার মমর দিকে তাকাতে লাগল। মিনহাজ একটা গোল বোতলে অনেকগুলো কাগজের টুকরো নিয়ে হাজির হলো। বলল, খেলা প্রথমে কাকে দিয়ে শুরু করব বলো তো? সবাই রিয়ানের নাম বলল। মিনহাজ রিয়ানের কাছে গিয়ে বলল, ওকে ব্রো, নাও, সবার সম্মতি নিয়ে তোমার থেকেই শুরু করি। রিয়ান একটা কাগজ তুলে ওকে দিল। মিনহাজ কাগজটা খুলে বলল, কবিতা।

চলবে…

#মম_চিত্তে
#পর্ব_২৪ (স্পেশাল পর্ব)
#সাহেদা_আক্তার

এক একজন বোতলটা থেকে এক একটা কাগজ তুলল আর যা লেখা ছিল তাই পারফর্ম করে দেখালো। কেউ গান, কেউ ছড়া, কেউবা কৌতুক আর ধাঁধা। বিভিন্ন রকমের খেলা খেলল ওরা। বেশ ভালো সময় কাটল ওদের। এমন করতে করতে সময়ের কাঁটায় কখন রাত নয়টা বেজে গেল কেউ টের পেল না।

মিনহাজ আরো তিন চারজনকে নিয়ে খাবার আনতে চলে গেল। এই সুযোগে কেউ কেউ উঠে এদিক ওদিক গেল। মম রিয়ানকে দেখতে পেল না। পাশেই ছিল। চট করে কোথায় চলে গেল খেয়াল হল না। দশ মিনিট পর হঠাৎ ওর ফোনে ম্যাসেজ এল। কিছুদূর বাম পাশে একটা হোটেল আছে। ওটার কাছে যেতে বলেছে রিয়ান। মম একটা এক্সকিউজ দিয়ে উঠে গেল। হোটেলটার পাশে আসতেই রিয়ান টান মেরে আড়ালে নিয়ে এল ওকে। মম হঠাৎ টান পেয়ে বলল, কি করছো? হঠাৎ এখানে ডাকলে? রিয়ান বলল, ডান হাতটা দাও। মম ডান হাত বাড়িয়ে দিল। রিয়ান এক ডজন সাদা আর নীল কাচের চুড়ি ওকে পরিয়ে দিল। মম চুড়িগুলো দেখে বলল, এগুলোর জন্য তুমি উঠে এসেছো?

– হুম। তোমার ডান হাতটা কেমন খালি খালি লাগছিল। তাই ভরিয়ে দিলাম। তোমার পছন্দ হয়েছে?

– হুম।

– চলো। সবাই অপেক্ষা করছে।

ওরা দুইজন একসাথে এসে বসল। তৌসিফা ফিসফিস করে ওকে জিজ্ঞেস করল, স্যারকে পেলি কোথায়? মম আস্তে করে বলল, আসার সময়। মমর হাতের চুড়ি খেয়াল করে বলল, চুড়ি কিনলি কবে? মম আমতা আমতা করে বলল, ঐ দিকে গিয়েছিলাম তো আসার সময় দোকানে ভালো লাগল। তাই আর কি। মম কোনোমনে পাশ কাটিয়ে গেল কিন্তু তৌসিফা বিশ্বাস করল কি না বোঝা গেল না।

খাওয়া দাওয়া শেষে যে যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াতে লাগল। মম আর তৌসিফা সমুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ালো। এখানের ঢেউ কক্সবাজারের মতো উত্তাল আর হিংস্র নয়। একের পর এক শান্ত ঢেউ আছড়ে পড়ছে পায়ে আর পায়ের তলার বালি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। কেমন একটা শান্তি আছে ঢেউগুলোয়। মম দাঁড়িয়ে রইল সাগরের দিকে ফিরে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। ইচ্ছে করছে হাত দুটো দুপাশে বাড়িয়ে দাঁড়াতে। ওরা দুইজন সবার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। তৌসিফা একটু এগিয়ে গেল সমুদ্রের দিকে কথা বলতে বলতে। মম ওর কথা শুনে হাসছিল।

হঠাৎ কে যেন ওকে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। অপরিচিত স্পর্শে সরে যেতে গিয়ে টাল সামলাতে পারল না মম। পড়ে গেল সাগরের পানিতে। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল রাসেল। কেমন একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে হাঁটু ভাঁজ করে বসে মমর দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলল, তোমার স্মেল তো সুন্দর। কি পারফিউম ইউজ করো? মমর এবার মেজাজ খারাপ হলো। চড় বসিয়ে দিল রাসেলের গালে। অনেক সহ্য করেছে। সবকিছুর একটা লিমিট আছে। শুধরে যাওয়ার সময় দিয়েছে। কিন্তু সে না শুধরে বরং ওর আরো সুযোগ নিচ্ছে।

তৌসিফা পিছন ফিরে রাসেলকে চড় মারতে দেখল। সাথে সাথে মমর কাছে চলে এল ও। রাসেল গালে হাত দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, তোর তো সাহস কম না। সিনিয়রের গায়ে হাত তুলিস। রাসেল মমর ডানটা হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে এক টান দিয়ে উঠে দাঁড় করালো। ওর হাতের চাপে মমর কয়েকটা কাচের চুড়ি ভেঙে হাতে ঢুকে গেল। রাসেল তাতে ভ্রুক্ষেপ করল না। হিড়হিড় করে টানতে টানতে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে আরো দূরে চলে যেতে লাগল। তৌসিফা বাঁধা দিতে চাইছিল কিন্তু ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল রাসেল। ওর মাথায় রক্ত চড়ে আছে। মম হাতটা ছাড়তে চাইছিল কিন্তু সাড়াশির মতো হাত ছাড়তে পারল না। উপায় না দেখে রিয়ান বলে একটা চিৎকার মারল৷ রাসেল সাথে সাথে টান দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরল। মম ব্যাথায় ককিয়ে উঠল। হাতে কাচের অংশ আরো বেশি ঢুকে গেছে চাপে। গল গল করে রক্ত পড়তে লাগল সমুদ্রের পানিতে। কিন্তু ওরা কিছুটা দূরে থাকায় কেউ ডাকটা শুনতে পেল না।

কেউ খেয়াল করছিল না। সাগরের দিকটা অনেকটা অন্ধকারই৷ কয়জন মিলে গান ধরেছে। সবাই সেখানেই জড়ো হচ্ছে। রিয়ান ওদের মাঝে বসে আছে। গানের মাঝেও মমকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ওকে নজরে পড়ল না। তৌসিফা ভেজা শরীরে হাঁপাতে হাঁপাতে কোথায় থেকে হুট করে এসে ওদের সামনে ধপাস করে বসে পড়ল। কয়েকজন মেয়ে ওর কাছে এসে বলল, কি রে? কি হয়েছে? বালিতে দৌঁড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ওকে। কোনো রকম কষ্ট করে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, রাসেল ভাই… মম…। সবাই ভাবল ওদের কোনো বিপদ হয়েছে। মমর নাম শুনে রিয়ান দৌঁড় দিল সবার আগে। ওদের যত কাছাকাছি যেতে লাগল তত রিয়ানের কাছে ব্যাপরটা স্পষ্ট হতে লাগল। সাথে সাথে ওর দৌঁড়ানোর গতি আরো বেড়ে গেল।

মমকে মুখ চেপে ধরে নিতে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে রাসেলের। অতিরিক্ত নড়াচড়া করছে। ওর গাল বেয়ে চোখের পানি রাসেলের হাতে এসে ঠেকেছে। মিশকাও ওর মতো ছিল। বেশি তেজ। পার্টির সবার সামনে চড় বসিয়ে দিয়েছিল। ওকে শাস্তি দিয়েছে। মমকেও দেওয়া দরকার। কিন্তু সেটা অন্যভাবে। জয়েনের পর থেকে ওর উপর আলাদাভাবে নজর পড়েছে রাসেলের। সবার মাঝে সাধারণ কিন্তু অন্য রকম সৌন্দর্য। যা ওকে বার বার টেনেছে৷ আজকে ওকে দেখে ভেতরটা পাগল পাগল হয়ে গেছে ওকে কাছে পাওয়ার জন্য। তাই সামলাতে পারেনি নিজেকে। গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। তাই বলে চড় মারবে?

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ রাসেলের শার্টের কলার খাঁমচে ধরল। ও পেছন ফিরে দেখল কেউ একজন ওর শার্ট খাঁমচে ধরে মাথা নিচু করে হাঁপাচ্ছে। রাসেল ত্যাড়া গলায় বলল, ওই, আর কিছু নেই? আমার শার্ট খাঁমচে শ্বাস নিচ্ছিস? দেখছিস না ব্যস্ত? মম মুখ দিয়ে শব্দ করতে চাইল কিন্তু সে এতটা চেপে ধরেছে যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। রাসেল হাতটা সরাতে যেতেই একটা ঘুষি পড়ল ওর মুখে। মম হাত থেকে ছিটকে পড়ল সামনে। রাসেল বামে সরে গেল ঘুষির কারণে। পড়তে পড়তেও বেঁচে গেল। তেড়ে আসতেই রিয়ানের হিংস্র চোখ ওর চোখে পড়ল। রিয়ান কাছে এসে ওর কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলল, হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই ওমেন? তারপর একের পর এক ঘুষি দিতে লাগল।

সবাই আসতে আসতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। ততক্ষণে রাসেলের নাক মুখ ঘুষিতে ফুলে গেছে। বাঁধা দিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। বাঁধা দিতে দিতে উল্টো মারার সময় পায়নি খুব একটা। দুই তিনটা মেরেছে তার পরও। রাসেলের আংটির ঘষায় রিয়ানের গালের খানিকটা অংশ কেটে গেছে। কিছুটা রক্ত গড়িয়েও পড়েছে। তাও মারা বন্ধ হয়নি। মম মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে রিয়ানের দিকে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। রিয়ানকে এমন রাগতে আগে দেখেনি ও।

মিনহাজ আর সাদাফ এসে রিয়ানকে রাসেল থেকে সরিয়ে আনল। রাসেল ঠোঁটের কাছের কাঁটা অংশে হাত দিল। জ্বলে উঠল সাথে সাথে। এমনভাবে রইল যেন কিছু করেইনি। রাসেলের মুখোভঙ্গি দেখে রিয়ান আবার তেড়ে আসতে চাইল। কিন্তু দুইজনের জন্য পারল না। রিয়ান সাদাফকে ঠেলে সরিয়ে দিল। মিনহাজের হাত ছাড়িয়ে যেতে লাগলে মিনহাজ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, কি হয়েছে? রিয়ান চিৎকার করে বলল, আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করার সাহস হয় কি করে ওর?

আমার স্ত্রী শব্দটা বোমার মতো পড়ল সবার মাঝে। সবাই এক প্রকার শক খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ফারিজা শুনে ধপ করে বসে পড়ল বালিতে। তাকালো মমর দিকে। ও এখনো বসে আছে বালিতে মুখে হাত দিয়ে। কান্না বন্ধ হয়নি। রিয়ান কিছুটা শান্ত হয়ে মিনহাজের হাত সরিয়ে নিল। গায়ের শার্ট খুলে মমর ভেজা শরীর আবৃত করে দিল। মম ভেজা গায়ে বালিতে একাকার হয়ে গেছে। রিয়ান ওকে উঠিয়ে সবার দিকে ফিরে বলল, ও আমার স্ত্রী। শুনতে পেয়েছো সবাই? ভালো করে শুনে রাখো। আর মি. রাসেল, তোমার বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল। তখন প্রমাণ পাইনি। তোমাকে আজকে থেকে বরখাস্ত করলাম। এখান থেকে যাওয়ার পর পরই আমি যাতে রিজাইন লেটার পেয়ে যাই। তোমাকে যেন অফিসের আশেপাশে না দেখি আর। যদি কোনো রকম উল্টোপাল্টা কিছু করেছো তো সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্টের কারণে এফায়ার করে আসবো থানায়। মাইন্ড ইট। সবাই তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে। রিয়ান মমকে নিয়ে হাঁটা ধরল। মমর জুতা ছিঁড়ে গেছে। হাঁটতে পারছে না। রিয়ান ওর জুতো জোড়া নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল একদিকে। তারপর ওকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরল হোটেলের উদ্দেশ্যে।

রুমের সামনে এসে মমকে নামিয়ে দিল রিয়ান। মম জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো একপাশে। রিয়ান রুমে ঢুকে বলল, ফ্রেশ হয়ে নাও দ্রুত। ব্যাগ থেকে এক সেট জামা বের করে দিল। মম বাম হাত দিয়ে নিতেই রিয়ান জিজ্ঞেস করল, ডান হাতে কি হয়েছে? মম তাড়াতাড়ি বলল, কিছু না। রিয়ান ওর ডান পাশে তাকাতেই শাড়িতে লাল রক্ত দেখতে পেল। মম দেখাতে চাইছিল না। রিয়ান জোর করে হাত টেনে এনে দেখল অনেকটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। দেখে রিয়ান রাগে ফেটে পড়ল। আবার বাইরে চলে যাচ্ছিল। মম বাঁধা দিয়ে বলল, প্লিজ। অনেক মেরেছো। তোমার গালটাও কেটে গেছে৷ রিয়ান কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে রাগটাকে দমন করল। তারপর ওকে ওয়াশরুমে এনে সাবধানে ভাঙা কাচগুলো বের করে হাতের কাটা জায়গাটা ধুয়ে দিল। বেশ খানিকটা রক্ত বের হলো। মম ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলল কিন্তু টু শব্দ করল না। না হলে রিয়ান আবার কি না কি করে বসে। রিয়ান সাবধানে হাত ধুয়ে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও। আমি ওষুধ আর ব্যান্ডেজ নিয়ে আসছি। সাবধানে করবে। দেখো আবার হাতে ব্যাথা পেও না। বলে রিয়ান বেরিয়ে গেল।

মম গোসল সেরে বেরিয়ে এল। হাতটা অনেকটাই কেটেছে। নড়াচড়া করলেই ব্যাথা করছে। একটু পর রিয়ান এসে ঢুকল রুমে। হাতে ব্যান্ডেজ আর ওষুধ। মমর পাশে এসে ওর হাতটা টেনে ধরে বলল, খুব ব্যাথা করছে, না? ওষুধ খুলে লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলল, এবার ব্যাথা কমে যাবে। মম ওর মুখ দুহাত দিয়ে ধরে বলল, তোমার মুখও তো কেটে গেছে৷ দেখি। ও ওষুধটা হাতে নিয়ে রিয়ানের গালে লাগিয়ে দিয়ে বলল, ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ আনোনি। এখন কি দেবো কাটা জায়গায়? রিয়ান হঠাৎ ওর কোলে শুয়ে বলল, কিছু লাগবে না। মম? মম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, হুম?

– আজকে থেকে আর লুকাতে হবে না।

মম হুম বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। রিয়ান ওর দিকে কিছুক্ষণ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে ওকে কাছে টেনে নিল।

মম ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙল। পাশে রিয়ান গভীর ঘুমে রয়েছে। মম হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু এঁকে দিল। তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেল। বেরিয়ে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছতে লাগল। আজকের দিনটাই অন্য রকম সুন্দর লাগছে। যেন নতুন করে দেখছে সবকিছু। এতদিনের মাথার ভার এক রাতেই নেমে গেছে। বিয়েটার মধ্যে দিয়ে ওর জীবনটা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। অতীতের পোড়া স্মৃতি ভুলে গেছে। এখন কেবল ওর জগত জুড়ে রিয়ানের আনাগোনা। টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মুচকি হাসল ও। রিয়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল, খুব হাসি হচ্ছে মহারাণীর?

– মহারাজার ঘুম ভেঙেছে তাহলে?

রিয়ান ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল, উহু, আরো ঘুমাতে চাই। মম মাথায় হালকা বাড়ি মেরে বলল, সকাল সাড়ে আটটা বাজে। এখনো ঘুমাবেন উনি। যাও ফ্রেশ হও। নাস্তা করতে যেতে হবে না? রিয়ান ওকে ছেড়ে নড়ছেই না৷ ওর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, তোমার হাতের কি অবস্থা? মম চোখের সামনে ধরে বলল, ভালোই। ব্যাথা কমেছে। তোমার গাল?

– খুব ব্যাথা।

– তাই নাকি? দেখি দেখি।

মম ওর দিকে ফিরল। রিয়ান ওকে বাহুতে আবদ্ধ করে বলল, একটা কিস দিয়ে দাও গালে ব্যাথা কমে যাবে। মম ওকে ঠেলে সরিয়ে বলল, ধ্যাত। যাও তো। মম জোর করে ওকে ওয়াশরুম পাঠিয়ে দিল।

মম সব গোজগাছ শুরু করে দিল। বিকাল পাঁচটায় লঞ্চ। দুপুরের খাবার খেয়ে তৈরী হয়ে যেতে হবে ফেরত যাওয়ার জন্য। রিয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দরজায় নক পড়ল। ও গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে বলল, এনেছো? মিনহাজ নাস্তার প্লেট দিয়ে বলল, কেমন আছিস তোরা?

– ভালো।

– ভালো হলেই ভালো। আমি চাচাকে সব জানিয়েছি। রাসেল এতটা ইরোগেন্ট হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।

– ঐ বাস্টার্ডের নাম শুনতে চাই না মিনু ভাই।

– ওকে। তোরা রেস্ট কর। আমি যাই।

মিনহাজ বিদায় নিয়ে চলে গেল। রিয়ান নাস্তার প্লেট এনে মমর সামনে বসল। মম হাত দিতে লাগলে রিয়ান ওর হাতে হালকা চাপড় মেরে বলল, তোমার না হাতে ব্যাথা? জামাই খাইয়ে দিতে চাইছে পছন্দ হচ্ছে না? মম ওকে দেখে হাসল। রিয়ান খাবার মুখের সামনে ধরতেই মম বড় হা করে খেয়ে নিল। ওকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল, আমার বউ এত বড় হা করতে পারে জানতাম না তো! মম মিথ্যে রাগ করে বলল, তাহলে আর খাবোই না।

– না খেলে কিন্তু শাস্তি আছে।

মম জিজ্ঞেস করল, কি শাস্তি? রিয়ান ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কিছু বলল। তাতেই ও লজ্জাবতী লতার মতো লজ্জায় গুটিয়ে গেল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here