বাঁক,২০,২১
জবরুল ইসলাম
( ২০ পর্ব )
মানহার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। দমবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম তার। নড়তেও পারছে না। মৃদুল বাঁ পা দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে তাকে। ওর অর্ধেক শরীর মানহার ওপরে এনে বুকের দিকে হাত নিয়ে কোল বালিশের মতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাল তারই মুখে রেখেছে। মানহার মনে হচ্ছে নাকটা এবার চ্যাপটা হয়ে যাবে। সে ধীরে ধীরে ওর গালের নিচ থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। মৃদুলের থুতনি পড়ে এবার তার ঘাড়ে। নাক থেকে উষ্ণ শ্বাস আছড়ে পড়ছে গলায়। মৃদুল ঘুমের ঘোরে মৃদু শব্দ করে বাঁ হাত মানহার বগলের দিকে নিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। মানহার একবার ইচ্ছা হলো নিজেকে ছাড়িয়ে নেবে। পুনরায় ভাবে তাতে মৃদুলের ঘুম ভেঙে যাবে। ডান হাতটা কেবল আস্তে আস্তে বের করে ওর মাথায় রাখে। চুলে আঙুল ডোবায়। খানিক পর পর তীব্র ভালোবাসায় মাথায় ঠোঁট আর নাক চেপে ধরে চুমু খায়। মুহূর্তটা অসম্ভব ভালো লেগেছে মানহার। তবে ডান পা কেমন ‘ঝিঁঝিঁ’ করছে। আস্তে আস্তে বের করতে যেয়ে বাঁধলো বিপত্তি৷ মৃদুলের পুরো কোমর তার দু-পায়ের মধ্যখানে চলে এসেছে৷ তাকিয়ে দেখে ওর শরীর কেমন বাঁকা হয়ে আছে। কী করবে এখন? এভাবে থাকলে তো মানুষটার শরীর ব্যথা করবে। মানহা আস্তে আস্তে ওর বগলের দিকে দু-হাত নিয়ে টেনে পুরোপুরি ওপরে নিয়ে আসে। মৃদুলের বাঁ কান তার কানের সঙ্গে লেগে আছে। কাঁধের পেশি থুতনি চেপে ধরে ঠোঁটে এসে লেগেছে। মানহার পুরো শরীর কেঁপে উঠছে বারবার। দু’পায়ে মৃদুলকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দু’হাতে পিঠ প্যাঁচিয়ে কাঁধে নাক আর ঠোঁট আলতো করে ঘষতে থাকে। কী এক অসহ্যকর অনূভুতি হচ্ছে। ওর শরীরের উষ্ণতায় মানহার অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে।
মুখটাও বেশি নাড়াতে পারছে না। ঘাড়ে আর কাঁধ ঠোঁটের কাছে থাকায় বারবার নাক ঠোঁট ঘষছে আর চুমু খাচ্ছে। ইচ্ছা করছে মানুষটাকে খেয়ে ফেলতে। মৃদুল ঘুমের ঘোরে একটু মৃদু গোঙানি দিয়ে নড়ে উঠলো।
অসহ্য এক সুখের ব্যথায় আচমকা ওর পিঠ খামচে ধরে মানহা। দু’পায়ে মৃদুলকে আঁকড়ে ধরে কাঁধে দাঁত বসিয়ে দেয়। মৃদুল আর্তনাদ করে ঘুম থেকে উঠে ওর ওপর থেকে নেমে যায়। মানহা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে। মৃদুল চোখ কচলাতে কচলাতে ওর দিকে তাকায়। কী হচ্ছিল এতক্ষণ সে কিছুই বুঝতে পারছে না। মানহার বুকের ওপর থেকে শাড়ি সরে পড়ে উম্মুক্ত হয়ে আছে। পেট উঠা-নামা করছে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে।
– ‘কী হয়েছে মানহা? তুমি আমার কাঁধে কামড় দিয়েছো কেন?’
মানহা ওর দিকে ক্রোধান্বিত চেহারায় তাকিয়ে বললো,
– ‘তোমার চরিত্র তো ভালো না মৃদুল। আমার শাড়ি শরীর থেকে টেনে সরিয়ে ওপরে উঠে যেখানে-সেখানে হাত দিয়েছো কেন? ছাড়াতে বলার পরও ছাড়ছো না দেখে কামড় দিয়েছি।’
মৃদুল বিস্মিত হয়ে বললো,
– ‘কী বলো এসব? আমি তো ঘুমে ছিলাম।’
– ‘তাহলে আমার ওপরে কীভাবে আসলে? আমি কি তোমার নিচে চলে গিয়েছিলাম যত্তসব বাহানা এখন।’
– ‘বিশ্বাস করো মানহা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
– ‘চুপ করো তো, তোমরা পুরুষ মানুষদের জানা আছে ভালো করে। বিয়ে করবে না কিন্তু লোভ ঠিকই আছে। দেখছো ঘুমে আছি ওমনি আমার শাড়ি টেনে বুক থেকে সরিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছো। আমি তো একটুর জন্য দমবন্ধ হয়ে মারা যেতাম। পত্রিকায় তখন হেডলাইন হতো ধর্ষণের পর খুন।’
কথাটি বলেই মানহা বিছানা থেকে উঠে বাথরুমের দিকে চলে গেল। মৃদুল বোকার মতো তাকিয়ে আছে। কী থেকে কী হলো সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না৷ তবে পুরো রাত মানহাকে নিয়ে আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে৷ হয়তো স্বপ্নের ঘোরে সে উলটা-পালটা কিছু করতে বসেছিল। এখন মানহার ভুল ভাঙাবে কী করে? এমনিতেই মেয়েটি তার জন্য মামা-খালার বকা খেয়েছে। বিশ্বাস করে বলেই একই রুমে থেকেছে আর সে কি-না ঘুমের ঘোরে কী থেকে কী করে বসেছে। নিশ্চয় বাজে কিছু হবে। সামান্য ব্যাপারে মানহা এরকম প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো মেয়ে না৷ দু’হাতে মুখটা আঁজলা করে সে বসে রইল পালঙ্কে। মানহা বাথরুমে গিয়ে আয়নায় নিজের কাপড় ঠিক করতে করতে ফিক করে হাসে৷ মৃদুলকে সহজে বোকা বানিয়ে ফেলায় সে অদ্ভুত এক মজা পাচ্ছে। সকালটা সুন্দর ছিল। ভালোই হলো আজ গোসল করবে না সে। ওর শরীরের উষ্ণতা সারাক্ষণ গায়ে লেগে থাকুক। কেবল শাড়ি ঠিক করে মুখটা ধুয়ে চুল ঠিক করে বের হয়ে গেল। মৃদুল মুখে হাত দিয়ে পালঙ্কে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। মানহা যেতেই সে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত কাতর গলায় বললো,
– ‘বিশ্বাস করো মানহা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না৷ ঘুমের ঘোরে বাজে কিছু করে থাকলে সরি।’
মানহা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আর থাকতে পারলো না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ‘ইশ আমি মজা করেছি, আমার বর সোনাটা কিচ্ছু করেনি। আমিই নিজেই বুকে টেনে নিয়ে ধন্য হয়েছি।’
মৃদুল আচমকা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ক্রোধে হাত তুলে বললো,
– ‘একটা থাপ্পড় দিয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দেবো। চরিত্র ভালো না, ধর্ষণ করে খুন এগুলো তোমার কাছে মজার শব্দ তাই না? ঘুম থেকে উঠেই ফালতু একটা নাটক করে প্রেম দেখাচ্ছে।’
মানহা লজ্জায় থুতনি বুকের সাথে লাগিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। মৃদুল বাথরুমের দিকে চলে যেতেই সে ধীরে ধীরে পালঙ্কে গিয়ে বসে। মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে লজ্জা আর অপমানে। মৃদুল এরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সে কল্পনাও করেনি। তারই ভুল হয়েছে, মানুষটা কামড় খেয়ে কাঁচা ঘুম থেকে উঠেছে৷ তার উপর সে চরিত্রহীন, ধর্ষক হেন-তেন বলতে গেল কেন? এখন কী করবে? মাফ চাইবে? লজ্জায় তো আর ওর সামনেও যেতে পারবে না।
মৃদুল বাথরুমে এসে আয়নায় তাকিয়ে দেখে কাঁধ লাল হয়ে দাঁতের দাগ বসে গেছে। কিন্তু মানহা তাকে টেনে বুকে নিয়েছে সে টের পায়নি কেন? কীভাবে সম্ভব? ঘুম ভেঙে যাবার কথা। যাইহোক, সে অতিরিক্ত করে ফেলেছে। এভাবে চড় মারার কথা বলা উচিৎ হয়নি। তার জন্য এতকিছু করছে। আর সামান্য কারণে এতো রাগ করে বসলো? তাছাড়া মেয়েটা তো তার মতো প্রেমের অভিনয় করছে না। ভালোবাসে বলেই এমন করে, তাকে আয়োজন করে বোকা বানায়। মৃদুল ঠিক করলো সোজাসুজি ক্ষমা না চাইলেও ট্রেনে যাবার পথে তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে খুশি করে ফেলবে। মেয়েদের হাজার খারাপের মধ্যে ভালো গুণ হচ্ছে পুরুষ মানুষরা খানিকটা সুন্দর করে কথা বললেই তারা সকল দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়। এই জায়গায় পুরুষ মানুষরা ঠিক উলটো। তীব্র রাগের সময় ভাঙাতে গেলে আরও বেশি রেগে যায়। মৃদুল মুখ-হাত ধুয়ে বাথরুম থেকে বাইরে এসে গেঞ্জিটা পরে নিল। ঠিক তখনই বেজে উঠে মানহার মোবাইল।
____চলবে___
বাঁক ( ২১ পর্ব )
_____________
মানহা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ইরফানের কল।
মৃদুল গেঞ্জি পরে সোফায় গিয়ে বসে তাকিয়ে আছে।
ভেজা চোখ মুছে নিয়ে মানহা কল রিসিভ করে।
– ‘হ্যালো।’
– ‘ঘুম থেকে উঠে গেছো তোমরা?’
– ‘হ্যাঁ ভাই।’
– ‘তাহলে বের হয়ে যাও। ওদের বাসায় বৃদ্ধ মহিলা ছাড়া এখন আর কেউ নাই। ছেলেটিও টিউশনি পড়াতে চলে গেছে।’
– ‘দরজা তালা না দিয়ে চলে যাব এভাবে?’
– ‘না, দরজায় তালা ঝুলিয়ে রেখে গেছে সে। চাবি তার কাছে আছে, তালা মেরে চলে যাও।’
– ‘আচ্ছা।’
– ‘আর হ্যাঁ, ও বললো দরজার পাশে একটা চেয়ারে ফ্ল্যাক্সে চা রেখে এসেছে তোমাদের জন্য।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
– ‘রাখছি এখন।’
– ‘ওকে।’
মানহা ফোন রেখে দরজার ছিটকানি খুলে দেখে তালা ঝুলানো আর পাশের একটি চেয়ারে ফ্ল্যাক্সের সঙ্গে দু’টা কাপ আর পাউরুটির প্যাকেট। মানহা মুচকি হেঁসে সেগুলো নিয়ে ভেতরে এসে টেবিলে রাখলো। আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখে মৃদুল অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। মানহার তাকাতেই লজ্জা লাগছে চা খেতেই বা ডাকবে কীভাবে?
সে দু’টা কাপে চা নিয়ে পাউরুটির প্যাকেট ছিঁড়ে একটা কাপ আর পাউরুটি ওর দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরটা নিয়ে বিছানায় বসে গেল।
মৃদুল কীভাবে ওর সঙ্গে স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছে না। তবুও চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
– ‘মানহা তুমি চাইলে এই টাওয়েল দিয়ে গোসল করে নিতে পারো।’
মানহা মনে মনে ভীষণ অবাক হলো। তারমানে মৃদুল আর রেগে নেই? মানহা কৃত্রিম ম্লান মুখ রেখেই বললো,
– ‘গোসল করবো না।’
– ‘কেন?’
– ‘ভালো লাগছে না।’
মৃদুল আর কী বলবে ভেবে না পেয়ে চা’র কাপে পাউরুটি ভিজিয়ে মুখে দেয়। মানহার বুঝতে পারছে মৃদুল বকা দিয়ে এখন উলটো অনুতপ্ত। সুতরাং সে কৃত্রিম ম্লান মুখ বজায় রেখেই কথা বলবে। তাতে অতিরিক্ত কিছু গুরুত্ব পাবে সে।
– ‘তোমার না প্রতিদিন ভোরে গোসল করার অভ্যাস, তাই বললাম আরকি গোসল করে নিতে। শাড়ি ঝেড়েঝুড়ে আবার এটাই পরে নিবে।’
মানহা জানে একটু আগে যে মানুষ বকা দিয়েছে তার সব কথার উত্তর দিতে হয় না। সুতরাং সে বিছানায় পা তুলে বসে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চা’য়ে পাউরুটি ভিজিয়ে মুখে দেয় আর আপন মনে ভাবে, ‘ব্যাটা আনরোমান্টিক, খাটাশ, রোবট, পাথর, ঘুমের ঘোরে একবার জড়িয়ে ধরেছিস এই উষ্ণতা আর ছোঁয়া আমি গোসল করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে যাব কেন? গোসল করার পর কী আবার জড়িয়ে ধরবি? তা তো পারবি না।’
– ‘ইরফান কী বললো ফোনে?’
মানহা চিন্তায় পড়ে গেল এই কথার উত্তর দেবে কি-না। না দিলে যদি আবার রেগে যায়? তাছাড়া যাওয়ার পথে অনেক দরকার হবে কথা বলার। সুতরাং দরকারি কথা বলাই যায়। সে মৃদুলের দিকে না তাকিয়ে জবাব দিলো,
– ‘বিদায় না নিয়ে চলে যেতে বলছে।’
– ‘তালা মারতে হবে না?’
– ‘তালা বাইরে আছে।’
– ‘ও আচ্ছা, তা ঘড়ির টাইম তো সাতটা হয়ে গেছে, নয়টায় ট্রেন তাই না?’
– ‘হ্যাঁ।’
মৃদুল কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বললো,
– ‘তাহলে বেরিয়ে পড়ি।’
মানহা কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত কয়েক চুমুক দিয়ে চা শেষ করে টেবিলে কাপ রাখলো।
– ‘পাউরুটির প্যাকেট ভাঁজ করে টেবিলে রেখে যাই আর কাপগুলো ধুয়ে যাওয়া উচিত।’ কথাটি বলে মৃদুল তার কাপ হাতে নিয়ে মানহারটা টেবিল থেকে নেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই মানহা পলকে নিজেরটা নিয়ে নিল। মৃদুল ভাবলো মানহা হয়তো ধুবে তাই তারটাও বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে৷ কিন্তু মানহা সেটা না নিয়ে নিজের কাপ নিয়ে চলে গেল বেসিনের দিকে। মৃদুল বুঝতে পারে এর অর্থ হচ্ছে তোমারটা তুমি ধুবে। সে মুচকি হেঁসে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। মানহা চোরা চোখে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। কাপ ধুতে ইচ্ছাকৃত একটু দেরিই করলো সে। সারাজীবন এভাবে পেছনে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারলে আরও বেশি ভালো লাগতো তার। আজ দিনটা এতো সুন্দর কেন কে জানে। সবকিছু এতো ভালো লাগছে। কৃত্রিম রাগ দেখানোর খেলাটাও কী ভীষণ সুন্দর। মানহা নিজের কাপ ধুয়ে নিয়ে টেবিলে রাখে। মৃদুল এসে বললো,
– ‘চলো বের হই।’
মানহা ভ্যানিটিব্যাগ নিয়ে বাইরে এলো। মৃদুল দরজা তালা দেয়ার পর তারা টিলার ওপর থেকে নামে। টিলার পাশ দিয়ে একটা নির্জন পাকা রাস্তা গিয়েছে বটে। কিন্তু কোনো রিকশা নেই।
– ‘মানহা এদিকটা তো হেঁটে যেতে হবে মনে হচ্ছে।’
মানহা কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করলো। মৃদুল পিছু পিছু এসে বললো,
– ‘কী হলো কথা বলছো না কেন?’
– ‘কথা তো বলছিই।’
– ‘কই বললে, এইযে কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করেছো।’
– ‘তাহলে কী না হেঁটে বলবো তুমি কোলে করে নিতে?’
– ‘এভাবে কথা বলছো কেন?’
– ‘আমি যা বলি সব এভাবে, ওভাবে হয়ে যায় যেহেতু আর কথাই বলবো না।’
মানহা আবার হাঁটতে শুরু করে৷ মৃদুল কাছাকাছি গিয়ে বললো,
– ‘দেখো এই রাস্তাটা কী সুন্দর। পাহাড়ের মাঝখানে দিয়ে গেছে। পাশে ছোট ছোট টিলা। গাছগাছালি আর পাখির ডাক।’
– ‘তো এখন আমি কী করবো?’
– ‘কিছু করতে বলছি না।’
মানহা আর কিছু না বলে পুনরায় হাঁটতে শুরু করে। মৃদুল পেছনে আসতে আসতে বললো,
– ‘বুঝি না, জামাই একটু বকা দিলে বউ এতো রাগ করবে কেন? নিজের জামাইই তো বকা দিয়েছে বাবা। তাও যদি বুঝতাম একটা বকার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত পড়ে গেছে, আরেকটার সঙ্গে চোখ উড়ে গেছে, আরেকটার সঙ্গে ব্যাংক ব্যালেন্স খালি। আরেকটার সঙ্গে বাড়িঘর ভেঙে খানখান। একরকম কিচ্ছুই হয় না, গায়ে ব্যথাও লাগে না। তাহলে শুধু শুধু এতো রাগ করার কী আছে।’
মানহা ফিক করে হেঁসে ফেললো। মৃদুল ওর হাত ধরে টেনে নিজের দিকে নিয়ে বললো,
– ‘তুমি হাসছো দেখেছি আমি, সুতরাং রাগ শেষ।’
– ‘আজাইরা কথা শুনে আমি হাসি না। কথার নাই কোনো যুক্তি আগামাথা আমি হাসবো কেন? ছাড়ো আমার হাত।’
মৃদুল না ছেড়ে টেনে আরও কাছে এনে হাতে বন্দী করে বললো,
– ‘ছাড়বো না।’
মানহা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
– ‘এটা রাস্তা জনাব।’
– ‘কেউ নাই তো আশেপাশে।’
– ‘তো কী হয়েছে? ছাড়েন বলছি, আমাকে খুশি করার জন্য প্রেম দেখানো হচ্ছে।’ মানহা নিজেকে ছাড়িয়ে আবার হাঁটতে শুরু করে।
মৃদুল কাছাকাছি হাঁটতে হাঁটতে বললো,
– ‘খুশি করার জন্য প্রেম দেখাবো কেন?’
– ‘যে মানুষ সারারাত কাছে পেয়েও রোবটের মতো থাকে তার হঠাৎ দিনেদুপুরে মাঝ রাস্তায় প্রেম, এগুলো আমি বুঝি।’
– ‘বাবা এতো অভিমান।’
– ‘আমার কারও প্রতি অভিমান নেই।’
তাদের পাশ দিয়ে একটা রিকশা টুংটাং শব্দ করে চলে গেল।
মানহা আবার হাঁটে। মৃদুল চারদিকে তাকায়। হঠাৎ দেখে রাস্তার পাশের একটা ছোট টিলার পর খানিকটা সমান জায়গায় সবুজ ঘাস তারপর আরেকটা টিলা। মৃদুল চারদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই, আচমকা সে মানহাকে কোলে নেয়। আঁতকে উঠে মানহা।
– ‘কী করছো এসব?’
– ‘আজ তোমাকে শেষ করে ফেলবো, নায়িকাদের মতো বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করো।’
মানহা ফিক করে হেঁসে বললো,
– ‘ছাড়ো তো হঠাৎ কেউ দেখে ফেলবে।’
– ‘না আজ ছাড়াছাড়ি নাই।’
মৃদুলকে টিলার দিকে উঠতে দেখে বললো,
– ‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’
– ‘জঙ্গলে।’
– ‘কেন?’
– ‘আমি না রোবট, তাই আজ দেখাবো আমি যে রক্ত মাংসের পুরুষ।’
মমৃদুল দুই টিলার মাঝখানের সবুজ ঘাসে মানহাকে শুইয়ে রেখে সেও একপাশে শুয়ে হাঁপাতে থাকে।
– ‘এতো ওজন আমি হাঁপিয়ে গেছি।’
– ‘এই তোমার নিজেকে রক্ত মাংশের পুরুষ দেখানো?’
মৃদুল পাশ ফিরে তাকায় মানহার দিকে। নীল শাড়ি আর সবুজ ঘাসে পেটের ওপর রাখা মানহার ফর্সা হাত কী ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে। সে ওর হাতটি এনে গালে চেপে ধরে ঠোঁট দিয়ে আলতো চুমু খায়। মানহা লজ্জায় অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
– ‘চলো এবার যাই।’
– ‘এতো তাড়াহুড়ো কিসের?’
মানহা হাত ছাড়িয়ে শুয়ে থেকে দাঁড়িয়ে বললো,
– ‘দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।’
মৃদুল দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে ওর দিকে যায়। কাছাকাছি যেতেই মানহা বললো,
– ‘কী হয়েছে?’
মৃদুল ওর মুখটা আঁজলা করে ধরে পবিত্র গ্রন্থের মতো চুমু খায়। মানহা একবার চোখ তুলে তাকিয়ে পুনরায় মাথা নুইয়ে ফেলে। মৃদুল আচমকা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মানহা ওর পেছনের চুলে আঙুল ডুবিয়ে কাঁধে গালটা চেপে ধরে চোখবুজে। আজ দিনটা এতো অদ্ভুত সুন্দর কেন সে ভেবে পাচ্ছে না। চোখটা জলে ঝাপসা হয়ে এলো প্রশান্তি আর আনন্দে।
____চলবে___