প্রমত্ত_হৃদয়❤️,০৭

0
1858

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,০৭
#লেখনীতে:সারা মেহেক

সাবিহা ধীরে ধীরে পা ফেলতে ফেলতে উৎসুক এবং প্রশ্নাত্মক ভরা চাহনিতে দূর হতে রাগীবকে দেখছে। রাগীব হয়তো তাকে এখনও খেয়াল করেনি। এজন্য বোধহয় রাগীব সাবিহার দিকে চাইলো না।

এদিকে রাগীব গাড়ি হতে নেমে কালো রোদচশমাটি খুলে নেয়৷ অতঃপর সেটি গাড়ির ভেতর রেখে ব্লেজারের হাতা ঠিকঠাক করে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। তন্মধ্যে তার নজর গিয়ে ঠেকলো সাবিহার পানে। আচমকা এ রাস্তায় সাবিহাকে দেখে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেলো সে। তটস্থ হয়ে অধরে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে চলার গতি বাড়িয়ে দিলো। ইতোমধ্যে সাবিহা ও সে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। সাবিহার চাহনি এখনও প্রশ্নে ভরপুর।

রাগীব ও সাবিহা এক হাত দূরত্বে এসে দাঁড়ালো। রাগীবকে দেখে সোফিয়া হাস্যজ্জ্বল কণ্ঠে বললো,
” হাই রাগীব। কেমন আছো?”

রাগীব সাবিহার প্রশ্নাতুর চাহনি লক্ষ্য করে মৃদু হাসার প্রচেষ্টা করে বললো,
” আ’ম ফাইন। তুমি কেমন আছো সোফিয়া?”

সোফিয়া পূর্বের ন্যায় বললো,
” গুড এজ অলওয়েজ। ”

সোফিয়ার জবাব শুনে রাগীব পূর্ণ দৃষ্টিতে সাবিহার দিকে চাইলো। জিজ্ঞেস করলো,
” কোথায় গিয়েছিলেন সাবিহা? এ রোডে যে আপনি? আপনাকে এখানে আশা করিনি৷ ”
এই বলে সে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। সাবিহা রাগীবের কথার সুরের ন্যায় বললো,
” আপনাকেও এখানে আশা করিনি রাগীব। অফিস তো এদিকে না৷ ”

” হ্যাঁ। অফিস বিপরীত রাস্তায়। ”

” সেটা তো আমিও বলছি। আপনি শহরের শেষ প্রান্তের রাস্তায় কি করছেন?”

রাগীব সাবিহার প্রশ্নে খানিক অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। মনের বাক্সে হন্যে হয়ে সাবিহার এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে লাগলো। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় সে প্রশ্নের জবাবও পেয়ে গেলো। তবে মিথ্যে জবাব৷ রাগীব অন্তরালে মিথ্যে জবাবটা ভালোমতো সাজিয়ে নিয়ে সাবিহাকে জবাব দিতে প্রস্তুত হলো। এ পুরো প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হতে সময় লাগলো মাত্র এক মিনিট বা তারও কম।

রাগীব স্বাভাবিকভাবে হাসার চেষ্টা করলো যেনো সাবিহা তাকে কোনোভাবেই সন্দেহ করার অবকাশ না পায়। সে প্রচেষ্টাতেই সে বললো,
” আমার ফ্রেন্ডের সাথে মিট করতে গিয়েছিলাম৷ একচুয়েলি ওর বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম।”

” ইতালিতে আপনার ফ্রেন্ডও আছে?”
সাবিহার কণ্ঠে কিঞ্চিৎ সন্দেহের আভাস। রাগীব তা দূর করতেই আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে বললো,
” কেনো? থাকতে পারে না? ইতালিতে আমার ফ্রেন্ড থাকা বুঝি অপরাধ? ”

” না না তা বলছি না। থাকতে পারে। তবে অফিস আওয়ারে এভাবে বাইরে আছেন যে…….”

সাবিহার কথা সম্পূর্ণ শেষ না হতে দিয়েই রাগীব বললো,
” আপনার বাবার কাছে পারমিশন নিয়ে গিয়েছিলাম। সমস্যা হয়নি। ”

রাগীবের কথায় সাবিহা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। বুঝতে পারলো, রাগীবকে সন্দেহ করার ব্যাপারটা রাগীব ধরে ফেলেছে। এতে নিজের ভুল বুঝতে পারলো সাবিহা। রাগীবকে যে সে অযথাই সন্দেহ করেছিলো তা ভেবে তার মনে তীব্র অপরাধবোধের জন্ম হলো। আচ্ছা, রাগীবের কাছে কি ক্ষমা চাওয়া উচিত? যেহেতু রাগীব বিষয়টি ধরে ফেলেছে সেহেতু ক্ষমা না চাওয়াটা অভদ্রতা দেখায়৷ তাহলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়াই উচিত হবে।
সাবিহা রাগীবের নিকট ক্ষমা চাইতে উদ্যত হলো। কিন্তু এর পূর্বেই রাগীব অত্যন্ত স্বাভাবিক সুরে সাবিহাকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
” আপনি এদিকে কি করছিলেন সাবিহা? আপনার ভার্সিটি তো এদিকে না। ”

” আমি আর সোফিয়া গ্রোসারি সুপারশপে গিয়েছিলাম৷ রাইট সোফিয়া? ”

সোফিয়া এতোক্ষণ রাগীব ও সাবিহার কথোপকথন শোনার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। কিন্তু বাংলা ভাষা বোধগম্য হওয়া ও এর মর্মার্থ উদ্ধার করা তার পক্ষে অসম্ভব হলো বটে। শেষমেশ আর চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে সাবিহার প্রশ্ন বুঝতে না পারলেও ‘গ্রোসারি সুপারশপ’ শব্দটা বুঝতে পেরেছে। এতে কি মনে করে সে তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো,
” হ্যাঁ। আমরা গ্রোসারি সুপারশপে গিয়েছিলাম। ”

রাগীব বিস্তৃত হাসলো। সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনারা বাসায় কখন যাচ্ছেন?”

সাবিহা বললো,
” এই তো বাসায়ই যাচ্ছিলাম। ”

” হেঁটে?”

” হ্যাঁ।”

” বিকেল হয়ে গিয়েছে। আরেকটু পর সন্ধ্যা নেমে আসবে। চলুন, গন্ডোলায় যাই৷ ”

সাবিহা সোফিয়ার দিকে সম্মতির আশায় একবার তাকালো। সোফিয়া তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। অতঃপর তারা তিনজনে একটি গন্ডোলায় চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

.

” আজকে ‘ডাব্বে’ মুভি দেখবো সাবিত।” বলেই দুষ্টু হাসি দিলো সাবিহা। এদিকে সাবিহার এ রূপ ভঙ্গিমা দেখে ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিললো সাবিত। সে জানে, সাবিহা ইচ্ছে করেই ‘ডাব্বে’ মুভি দেখতে চাইছে। কারন সাবিহা চায় সাবিত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বসে থাকুক। দু তিনদিন তার এ ভয়েই কেটে যাক। গত চার মাস পূর্বে ‘ডাব্বে’ সিরিজের প্রথম সিজন দেখে সাবিত ভয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ঘুমাতে পারেনি। সে মুখ খুলে এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেওনি। কারন সে সবার সামনে নিজেকে ভীত প্রমাণ করতে চায়নি। যদিও সাবিহা ও সামাদ এটি ঠিকই ধরতে পেরেছিলো।

নেটফ্লিক্সে ‘ডাব্বে’ মুভির দ্বিতীয় সিজন বের করে বসে আছে সাবিহা। হঠাৎ সাবিত নিজের ভীত এবং ইতস্ততভাবটি লুকানোর প্রয়াস করে বললো,
” আপু? চল আজ অন্য মুভি দেখি। ”
সাবিতের দেওয়া এ প্রস্তাবের কারণ বুঝতে সাবিহার সময় লাগলো না। সে তৎক্ষণাৎ ভ্রু নাচিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
” কেনো? ভয় করছে?”

সাবিত মুহূর্তেই চেহারার ভাবভঙ্গিমা পরিবর্তন করে হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিমায় বললো,
” আরে না। ভয় করবে কেনো। আজ কেনো যেনো হরর মুভি দেখতে মন চাইছে না। ”

সাবিহা তার ভাইয়ের এ যুক্তি মানতে নারাজ। সে টিপ্পনী কেটে সাবিতকে বললো,
” বাঁকা পথে না গিয়ে সোজা পথে আয়। ডিরেক্টলি বলেই দে যে তুই ভীতু। এজন্য হরর মুভি দেখবি না। ”

সাবিহার কথার সুরে সাবিত চটে গেলো। মুহূর্তেই জেদি গলায় বললো,
” আমি মোটেও ভীতু না। হরর মুভি দেখে আবারও সেটা প্রুভড করে দিবো আমি। ”
এই বলে সে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। শেষমেশ সে সাবিহার কাছে হেরেই বসলো। এদিকে সাবিহা মনে মনে বেশ আনন্দ পেলো। আহ, কতদিন পর সাবিতকে বাগে পেয়েছে সে। এবার ইচ্ছেমতো জ্বালাবে তাকে।

সাবিহা রুমের সমস্ত লাইট বন্ধ করে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো। তার দেখাদেখি তীব্র অনিচ্ছা সত্ত্বে সাবিতও সেভাবে শুয়ে পড়লো। দুজনে শুয়ে পড়তে সাবিহা তাদের উপর দিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে দিলো। চারপাশের আঁধারিয়া পরিবেশে মুভি শুরু হওয়ার পূর্বেই সাবিতের ভয় ভয় অনুভূতি শুরু হয়ে গেলো। কিন্তু সাবিহার কাছে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে সে নিজের অস্বস্তিকর অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা চালালো।

মুভি চলছে। ল্যাপটপের শক্তিশালী সাউন্ড সিস্টেমের জন্য মুভিতে চলমান প্রতিটি আওয়াজ তীব্রভাবে কানে এসে বাড়ি খাচ্ছে। বিশেষ করে ভুতুড়ে পরিবেশের প্রতিটি শব্দ তীক্ষ্ণতার সহিত কানে আঘাত করছে৷ অন্ধকার পরিবেশ, হিম শীতল আবহওয়া, সব মিলিয়ে ঈষৎ ভুতুড়ে রুমে ‘ডাব্বে’ মুভিটা বেশ উপভোগ করছে সাবিহা। ওদিকে সাবিতের অবস্থা নাজেহাল। ভয়ে তার ঘাম ছুটে যাওয়ার মতো অবস্থা। চিৎকার করতে গিয়েও করতে পারছে না সে। কি এক বিপদে পড়েছে সে!

রুমের বাহির হতে অদ্ভুত ধরণের আওয়াজ শুনে সাবিহার রুমে উঁকি দিলো সামাদ। দেখলো, সাবিহা ও সাবিত ব্ল্যাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে মুভি দেখছে। নিশ্চয়ই ভৌতিক মুভি দেখছে তারা। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সে ভিড়িয়ে রাখা দরজা কিঞ্চিৎ ফাঁকা করে ভেতরে ঢুকে গেলো৷ পা টিপে টিপে এগিয়ে চলে এলো সাবিতের পিছনে। এ মুহূর্তে তার মস্তিষ্কে খেলা করছে দুষ্টু বুদ্ধি। সাবিতকে ভয় পাওয়ানোর দুষ্টু বুদ্ধি।
সামাদ মনে মনে ছোট্ট একটি পরিকল্পনা করে নিলো এবং সে অনুযায়ী কাজে এগুলো। তার পরিকল্পনা অনুসারে সে সাবিতের পায়ের অংশ হতে মন্থরভাবে ব্ল্যাঙ্কেট সরালো। অতঃপর সাবিতের পায়ে আলতো করে ছোঁয়া দিলো সে এবং সাথে সাথে খাটের নিচের অংশ লুকিয়ে পড়লো। সামাদের ছোঁয়ায় মুহূর্তমধ্যেই সাবিত নড়েচড়ে চট করে পিছন ফিরে চাইলো। আচমকা পায়ে কারোর ছোঁয়া পেয়ে সে ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিললো। মনে মনে ভূ’ত’প্রে’ত আ’ত্মা নিয়ে নানা প্রকার জল্পনাকল্পনাও করে ফেললো সে। কিন্তু সাবিহাকে কিছু বললো না। তবে মনস্থির করলো, এরপর কিছু হলে কোনোপ্রকার বিলম্ব না করেই সে সাবিহাকে এ ব্যাপারে বলবে। এতে সে ভীতু প্রমাণিত হলেও সমস্যা নেই। এই ভেবে সাবিত মুভির দিকে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলো।

কিয়ৎক্ষণ বাদে সামাদ উঠে দাঁড়ালো। এবার সে ধীরেধীরে তাদের উপর হতে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে নিতে লাগলো। সাবিতের শরীর হতে ব্ল্যাকেট সরতে সরতে যখন কোমড়ের কাছে গিয়ে ঠেকলো তখন সে ভয়ে তৎক্ষনাৎ লাফিয়ে উঠলো এবং সাথে সাথে রুম কাঁপিয়ে উচ্চ আওয়াজে চিৎকার দিলো। তার চিৎকারে কানে তালা লাগানোর জোগাড় হয়ে এলো। সাবিতের চিৎকারে সামাদ ও সাবিহা কানে হাত দিলো এবং সামাদ সশব্দে হাসতে হাসতে সাবিতকে বললো,
” এই ভীতুর ডিম, আস্তে চিৎকার কর। ভুতটা আর কেউ না। বরং আমি। এবার চিৎকার থামা ভাই। ”

সামাদের কথার কোনো প্রভাব হলো না। সে রীতিমতো চোখ বন্ধ রেখে চিৎকার করে গেলো। তার এ চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে সাবিহা দ্রুত গিয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো। তৎক্ষনাৎ সাবিতের চিৎকার বন্ধ হয়ে গেলো। সে হ্যাবলার মতো সাবিহা ও সামাদের দিকে চেয়ে রইলো। পুরো বিষয়টি বুঝতে তার দু মিনিট সময় প্রয়োজন হলো। যতক্ষণে সে বিষয়টি বোধগম্য করলো ততক্ষণে সাবিহা ও সামাদ তার এ কাণ্ডে হেসে পেটে খিল ধরিয়ে দিলো।

সামাদের এ কাণ্ডে সাবিত প্রচণ্ড ক্রোধিত হলো। মুহূর্তেই সে বিছানা থেকে নেমে সামাদের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত রেখে রাগত স্বরে বললো,
” এগুলো কি সামাদ ভাই? তুমি সবসময় এমন করো কেনো? নিশ্চয়ই আপুর সাথে মিলে এসব করেছো। রাইট?”

সামাদ হাসতে হাসতে বললো,
” তোকে ভয় পাওয়ানোর জন্য প্ল্যানিং এর দরকার হয় না। এমনিই করা যায়। রাইট সাবিহা? ”

সাবিহা ভ্রু নাচিয়ে হাসি দিয়ে বললো,
” ইয়েস ব্রো।”
এই বলেই তারা দুজনে শূন্যে হাত মিলালো। সাবিত তাদের কাজে প্রচণ্ড ক্রোধিত হলো। সে পুনরায় বললো,
” এসব কবে বাদ দিবে সামাদ ভাই? তোমার জন্য কবে না আমি হার্ট অ্যাটাক করে বসি। ”

” এসব বাদ দিলে আমার দিন কি করে চলবে রে সাবিত? ভাই বোন দুইটাকে জ্বালাতেই তো মজা। তোরা বিরক্ত হলে আমি যাবো কই। ”
শেষোক্ত কথায় সামাদ আবেগী হয়ে পড়লো। তার কথার সুর কোন দিক প্রবাহিত হচ্ছে তা বুঝতে সময় লাগলো না সাবিহার। সে ইশারায় সাবিতকে কথা ঘুরিয়ে নিতে বললো।
সাবিহার ইশারা মোতাবেক সাবিত সামাদের নিকটে এসে অতি মোলায়েম স্বরে বললো,
” সামাদ ভাই, তুমি কথার অন্য মিন করছো কেনো। আমি একটু রেগে গিয়েছিলাম। তাই বলে আমার কথা সিরিয়াসলি নিবে না কি! জ্বালাতে পারো আমাদের৷ তবে প্লিজ লিমিটের মধ্যে৷ এভাবে হুটহাট এমন কাজ করলে নির্ঘাত আমি আউট অফ ওয়ার্ল্ড হয়ে যাবো। ”

সাবিতের শেষোক্ত কথায় সামাদ ও সাবিহা একত্রে হেসে পড়লো। ক্ষণিকের জন্য সামাদ আবেগী হয়ে পড়েছিলো ঠিকই। তবে দ্রুতই সে নিজেকে সামলে নিলো। অতঃপর সাবিহা ও সাবিতকে বুকে আগলে ধরে পেলব গলায় বললো,
” তোদের দুইজনকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। তোরা আমার প্রাণ। তোদের কিছু হলে আমার বেঁচে থাকা কখনোই সম্ভব হবে না৷ মাঝে মাঝে মনে হয় তোরা দুজন আমার শরীরের দুটো অংশ। যে অংশকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। একেবারেই অসম্ভব। ”
সামাদের গলা প্রায় ভিজে এলো। সাবিহাও বেশ আবেগী হয়ে পড়লো। তবে সে স্বাভাবিক গলায় বললো,
” আমরাও তোমাকে অনেক ভালোবাসি সামাদ ভাই। অনেক অনেক। ”

.

ফায়ার প্লেসের পাশে রকিং চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন আফসার সাহেব। তার চোখের পাতা দুটো স্থির ও বন্ধ। শান্ত ও মনোযোগীভাবে তিনি কাজের পরিকল্পনা করছেন। অকস্মাৎ ফোনের তীক্ষ্ণ রিংটোনে তার মনোযোগ বিঘ্নিত হলো৷ দু চোখ মেলে তিনি অপ্রসন্ন কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললেন,
” হু ইজ দা বা’স্টা’র্ড?”
এই বলে তিনি পাশের ছোট টেবিল হতে ফোন হাতে নিলেন। স্ক্রিনে দেখতে পেলেন গিয়াস সাহেবের নাম ও নাম্বার ভেসে উঠেছে। নিমিষের জন্য নামটির দিকে চেয়ে থেকে অনিচ্ছা নিয়ে তিনি কল রিসিভ করে কৃত্রিম ভদ্রতাসূচক কণ্ঠে বললেন,
” জি গিয়াস সাহেব, বলুন। কি মনে করে কল করলেন এতোদিন পর?”

ওপাশে গিয়াস সাহেবের গমগমে গলা,
” একটা দরকারে কল করেছিলাম। ”

” কি দরকার?”

” কালকে আমার সাথে মিট করতে পারবেন?”

আফসার সাহেব কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলো। কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” হঠাৎ কি মনে করে? কোনো জরুরি কাজ?”

” জি। কালকে দেখা হলেই এ নিয়ে কথা বলবো৷ ”

” কোথায় দেখা করতে চাইছেন?”

” এজ ইউজুয়াল আমরা যেখানে দেখা করি। ”

” এল র‍্যাফেলো বার?”

” হুম। আগামীকাল রাতে। ”

” ওকে ডান৷ ”

” আচ্ছা। তাহলে আগামীকাল দেখা হচ্ছে।”
এই বলে গিয়াস সাহেব কল কেটে দিলেন। এদিকো আফসার সাহেব খানিক চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভাবতে লাগলেন, হঠাৎ গিয়াস সাহেব দেখা করতে চাইছেন কেনো। বেশ কিছুক্ষণ ভাবনার চাদরে জড়িয়ে থাকার পরও তিনি এ প্রশ্নের যোগ্য জবাব পেলেন না।

.

সকালে অফিসের জন্য তৈরী হচ্ছেন আফসার সাহেব। অকস্মাৎ গিয়াস সাহেবের ল্যান্ডলাইন হতে তার ফোনে কল এলো। তিনি ভ্রু কুঁচকে সন্দেহভাজন চাহনিতে চেয়ে কল রিসিভ করলেন। মুহূর্তেই ওপাশ হতে গিয়াস সাহবের ইতালিয় সার্ভেন্ট আহত গলায় বললেন,
” আফসার সাহেব, গিয়াস সাহেব ইজ ডে’ড। ”

কথাটি বজ্রপাতের ন্যায় আঘাত করলো আফসার সাহেবকে। দিনের সূচনালগ্ন এমন অ’শুভ সংবাদ শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না আফসার সাহেব। তিনি প্রহৃত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” গতকাল রাতেও তো সুস্থ ছিলেন তিনি। এক রাতে হঠাৎ কি হলো উনার?”

” আমি সঠিক জানি না। মৃ’ত্যু’র কারণ খুঁজে বের করতে উনার বডি হসপিটালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইট মেবি পসিবল দ্যাট উনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন। কারণ বডির বাইরে সব নরমাল কন্ডিশনে ছিলো বলে। ”

” ওহ। আমি আসছি। ”
এই বলে আফসার সাহেব কল কেটে দিলেন। অকস্মাৎ গিয়াস সাহেবের মৃত্যুতে তিনি ব্যথিত হয়েছেন। তিনি কল্পনাও করেননি এভাবে হুট করে গিয়াস সাহেব পরপারে চলে যাবেন। গিয়াস সাহেবের সাথে তার বন্ধুত্ব বেশ পাকা ছিলো। দুজন দুজনার সব খোঁজখবর জানতেন। গতকালও সব ঠিক ছিলো। আর আজ গিয়াস সাহেব নেই, ভাবতেই আফসার সাহেব ভেঙে পড়লেন। আসলেই প্রিয়জনের মৃ’ত্যুর খবর সব উল্টেপাল্টে দেয়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here