চাচাতো_বোন_যখন_বউ,পর্ব-০৪,০৫

0
3520

গল্প – #চাচাতো_বোন_যখন_বউ,পর্ব-০৪,০৫
✍️ #লেখক_আহমেদ_রাহী
০৪

” সেখান থেকে আব্বু চলে গেলো . আমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর চাচু আমাকে বললো..!

– রাহী আমি একটা কথা বলি ?
( পিছন থেকে কাঁদে হাত দিয়ে বললেন)
-হুম চাচা বলেন?
– তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল আমার কথা রাখবি?( কান্না সুরে)
– কিন্তু চাচা?
– কোনো কিন্তু নয় ? তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল আমার কথা রাখবি?
– আচ্ছা বলো ? তুমি যা বলবে আমি শুনবো।
– তুই আমার মেয়েকে বিয়ে কর বাবা? আমার মেয়েটার জীবন বাঁচা? ( কান্না করতে করতে বললেন চাচা)
– কিন্তু চাচা তানিশা আপু লাগে ! তার উপর আমার বড় হয় ?
– কোনো কিন্তু নয়। আর তানিশা তোর মাত্র দুই বছরের বড় ! প্লীজ বাবা তুই আমার মেয়েকে বিয়ে করে ওর জীবনটা বাঁচা!!বল বাবা বিয়ে করবি ? (কাঁদতে শুরু করলেন চাচা )
– ঠিক আছে চাচা আমি বিয়েতে রাজি আছি?

” আর এভাবেই আমার আর তানিশা আপুর বিয়েটা সম্পন্ন হলো । এতোক্ষণ যা বললাম সব বিয়ের আগের ঘটনা। দেখছেন কখন থেকে আপনাদের সাথে বক‌বক করে যাচ্ছি আপনাদের আমার পরিচয় টাই দেওয়া হলো না ?

[ আমার নাম ফয়সাল আহমেদ রাহী। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। আর আমার ছোট একটা দুষ্টু মিষ্টির বোন আছে। আর মনে হয় আপনাদের কিছু বলার দরকার নেই কারণ গল্প পড়লে সব জানতে পারবেন। এখন আর বকবক না করে গল্পে ফিরা যাক কি বলেন আপনারা। ]

” আমি ছাদে দাঁড়িয়ে এগুলো ভাবছিলাম , কখন যে চোখে পানি চলে এসেছে নিজেও জানিনা। চোখ মুছতেছি তখন কেউ কাদে হাত রাখলো? পিছন তাকিয়ে দেখি আব্বু…
– আব্বু এ সময় এখানে, এখনো ঘুমাওনি কেনো ?
– পৃথিবীর একমাত্র খারাপ বাবা হয়তো আমি ! নিজের ভাইয়ের মেয়ের জন্য নিজের ছেলেকে কুরবানী দিলাম।
– আমি চুপ
– তোর সাথে আমি আর ভাই অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। এ সময় তোর ঘুরে বেড়ানো কাজ , বন্ধু দের সাথে সময় কাটানো, পড়াশোনা করার সময় । সেখানে আমরা তোর উপর অনেক বড় একটা দায়িত্ব দিয়ে ফেলেছি। তোর অমত থাকা সত্ত্বেও আমরা তানিশার সাথে তোর বিয়ে দিয়েছি। আমাদের মাফ করে দিস বাবা….
– কি সব আবোল তাবোল বলছো আব্বু? তোমার ভালো মনে করছো তাই বিয়ে দিয়েছো এতে কষ্ট পাওয়া কি আছে?
– মেয়েটা কিছু একটা করে ফেলতে পারে তাই তোর সাথে বিয়ে দিয়েছি । রাগ করিস না বাবা‌? অনেক রাত হয়েছে ?ঘরে যা বাবা মেয়েটা একা বসে আছে?

” আমি আর‌ কিছু না বলে নিচে চলে আসলাম। আমার রুমে দরজা খুলে দেখি আপু কান্না করছে? আমার এখন ঠিক কি করা উচিত বুঝতে পারছি না । আমি কাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

– রাহী?
– হুম?
– তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে?
– হুম বলো কি বলবা।
– আমি জানি তুই খুব ভালো একটা ছেলে। তোর মতন স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমি তোকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না ?

” অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আপুর দিকে?)

– তুই জানিস তুই আমার ছোট ভাই। হোক তুই আমার চাচাতো ভাই। কিন্তু আমি তোকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।
– কিছু বললাম না !
– আমার মনে হয় তুই আমাকে বউ হিসাবে মানিস না ।
– চুপ…
– তুই আমাকে প্রশ্ন করতে পারিস ? আমি যদি স্বামী হিসেবে মানতে না পারি ? তাহলে বিয়ে করলাম কেনো? হ্যা এটার ও জবাব দিয়ে দিচ্ছি? তোর সাথে বিয়ে না হলে হয়তো অন্য কারো সাথে আমার বিয়েটা হতো ! কিন্তু সে আমার মনের কষ্ট টা বুঝতে পারতো না । আমার মনের অবস্থা শুধু তুই বুঝবি অন্য কেউ না ।

চলবে…..!

গল্প – #চাচাতো_বোন_যখন_বউ ( পর্ব-০৫ )

✍️ #লেখক_আহমেদ_রাহী
________________________

” আমার মনের অবস্থা শুধু তুই বুঝবি অন্য কেউ নয় !
( আমি এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব শুনছি। )

– জানিস রাহী? আমি পৃথিবীর একমাত্র অতভাগা মেয়ে। সুখ কাছে পেয়েও হারালাম।
– ( চুপ)
– তুই আমাকে মাফ করে দিস । তোর জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম। জানিস আমার ও খুব ইচ্ছে ছিল সুন্দর একটা মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দিবো ?
আর তোর বিয়েতে অনেক আলন্দ করবো । কিন্তু তা আর হলো না । তুই আমাকে মাফ করে দিস । আমি তোকে স্বামী হিসেবে মানতে পারছি না।
– অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পরো?

” এ টুকু বলে বারান্দায় চলে এলাম। এমন কিছু আমার জীবনে হবে আমি কখনো কল্পনাও করতে পারি নি। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আমার সাথে বিয়ে হলে কোনো আফসোস থাকবে না ‌। সব কিছু গুছিয়ে নিতে সমস্যা হবে না ‌। কিন্তু কি ভাবলাম আর কি হলো … আসলে সবার কপালে সুখ থাকে না । আমার কপালে ও হয়তো নেই ! আজ নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু কি আর করবো ঘর থেকে বের হয়ে‌ ছাদে চলে এলাম। আর নিজে‌ নিজে বলতে লাগলাম।‌ তানভীর ভাই কেনো তুমি চলে গেলে ? তোমার জন্য আপু কান্না করছে? হয়তো তোমাকে এ কয়দিনে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।আর কি বলে জানো ভাই তোমাকে ছাড়া আর কাউকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবে না । সত্যি কয়েকদিনে তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। এমন কি আমাকেও স্বামী হিসেবে মানতে রাজি না । সত্যি ভাই তুমি অনেক ভাগ্যবান ছিলে আপুর মতো বউ পেতে যাচ্ছিলে‌।‌ কথায় বলে না সবার কপালে সুখ থাকে না । তেমনি তোমার কপালে ও নেই । আমার কপালে ও নেই ।
হায়রে কপাল আমাদের। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনায় আবারো হাত দিয়ে দেখি পানি । চোখে পানি মুছে পকেটে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ২:৪৫ মিনিট বাজে। তাই আর ছাদে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে এলাম। রুমে এসে দেখি এখনো আপু নাক টেনে টেনে কান্না করছে।

– কি ব্যাপার আপু তুমি এখনো ঘুমাও নি?
– কোথায় গিয়েছিলি?
– একটু ছাদে গিয়েছিলাম। রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো?
– তুই কোথায় ঘুমাবি?
– সেটা আপনার না জানলেও চলবে। তুমি উপরে ঘুমিয়ে পরো । আমি ফ্লোরে শুয়ে পড়ছি।

” তার পর আর কিছু না বলে নিচে চাদর বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। মাঝ রাতে হঠাৎ কারো কান্না শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখি আপু এখনও কান্না করছে ? তার আমি বললাম..

– হ্যা আপু তোমার সমস্যা টা কি হুম , এখন কি ঘুমাতে দিবেন না ।যা হবার তা তো হয়ে গেছে ?
– ঠিক আছে তুই ঘুমা?

” আমি আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম। হটাৎ সকালে কারো কান্না কাটি আর চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বের হয়ে দেখলাম , তানিশা, আম্মু , আব্বু, আমার ছোট বোন রিয়া ও কান্না করছে!
আমি গিয়ে বললাম?
– আব্বু কি হয়েছে?
-চুপ…
– আম্মু কি হয়েছে এভাবে কান্না করছো কেনো?
– চুপ…?
– আপু তুমি অন্তত বলো কি হয়েছে?
– আসলে দোকানটা?
– দোকানটা কি হয়েছে বলো না?
– দোকানে আগুন লেগে গেছে । আর পুরো দোকান পুড়ে গেছে।
– কি বলছো এসব?
– হুম বাবা ঠিক বলেছে? ( বাবা)

” সবার কথা শুনার পর যেন …আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! আমি এখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না । তার পর নিজেকে ঠিক রেখে সবাইকে শান্তনা দিতে লাগলাম। এভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো। তার পর শুরু হলো সংসারে অশান্তি। বাবা বড়ো মানুষ ঠিক মতো কাজ করতে পারে না । তাই আর সংসারের কষ্ট দেখতে না পেরে ! সংসারে হাল ধরতে হলো আমাকে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । তাই আমার ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড আফিকুল কে ফোন দিলাম।
– হ্যালো আফিকুল দোস্ত আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবি?
– আরে এভাবে বলছিস কেনো? কোথায় আসতে হবে সেটা বল?
– স্কুলের পাশে দোকানটায় আয় না দোস্ত?
– ঠিক আছে আমি আসতেছি।
– ঠিক আছে আয় ?

” বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। আর রেডি হয়ে স্কুলে পাশে দোকানে চলে গেলাম। একটু পরে আফিকুল ও চলে এলো।

– বল দোস্ত কি বলবি?
– আসলে দোস্ত আমার একটা হেল্প লাগবে?
– তুই এভাবে বলছিস কেনো? কি হেল্প লাগবে সেটা তো বল?
– আসলে দোস্ত আমার একটা চাকরি লাগবে?
– কিহহহহহহহহ তুই চাকরি করবি ?

চলবে….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here