চাচাতো_বোন_যখন_বউ,পর্ব-১৬ শেষ

1
3192

গল্প – #চাচাতো_বোন_যখন_বউ,পর্ব-১৬ শেষ
✍️ #লেখক_আহমেদ_রাহী

– খুব বিজি আমাকে একটু সময় দিতে পারো না তাই না ..
– আপনি কোথাও ভুল করছেন আমি আপনাকে চিনি না আর নাম্বারটাও কোনো দিন দেখি নাই ।
– ও এখন তো মনে থাকবে না, বিয়ে আগে কতো কিছু করেছো , বিয়ে করার সাথে সাথে সব শেষ?
– আপনি কে বলুনতো?
– বলবো না
– ওকে বায় আমি ফোন রেখে দিলাম।‌
– এই না, না বলছি ।
– তোমার বউ । আজ আম্মুর কাছ থেকে নতুন সিম নিয়েছি তোমার সাথে দুষ্টুমি করবো বলে ।
– তাই , তো কি করছে আমার বাবুটা ।
– কথা বলছি জনাব, তুমি কি করছো?
– একটা মেয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি ।
– কি বললি হারামি তুই , লুচ্চা বেডা তোর সাথে কোনো কথা নাই । তুই কোনো দিন আমাকে বউ বলবি না ।

তানিশা ফোন রেখে দিল , আমি হাসতেছি কেমন বোকা বানিয়ে দিলাম তানিশা কে । একটু পর আম্মু ফোন এলো …

– হ্যালো আম্মু বলো , অসময়ে ফোন দিলা যে কি কিছু হয়েছে?
– কিছু হয়নি , কিন্তু হঠাৎ তানিশা কেমন যেনো করছে ! ওর আচরণ আমার মোটেও ভালো লাগছে না ।
– কেনো আম্মু কি হয়েছে?
– একটু আগে তোর সাথে কথা বললো , তারপর কি হলো না হলো কিছুই জানিনা। আর শুধু কান্না করছে আর বলছে আমি এখানে থাকবো না আম্মু তোমার ছেলে একটুও ভালোবাসে না আমায় ! আমি চলে যাবো।
– ও এমনি ঠিক হয়ে যাবে আম্মু তুমি চিন্তা করো না ।
– তুই কি এমন বলেছিস যে এমন আচরণ করছে?
– আম্মু বাসায় গিয়ে সব বলবো । আর তুমি এসব নিয়ে একটুও চিন্তা করো না ।

ফোন রেখে দেওয়া পর থেকে কিছুই ভালো লাগছে না । ওর সাথে এমন দুষ্টুমি না করলেও পারতাম। মেয়েটা এমন কেনো আমি বললাম আর ও বিশ্বাস করে নিলো। আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরলাম। বাড়িতে এসে তানিশা কে কোথায় দেখতে পাচ্ছি না। তানিশার কোনো সারা শব্দ নেই । তাই আম্মু কে বললাম..

– আম্মু আম্মু…
– কি হয়েছে বাড়িতে এসে এভাবে চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো?
– আম্মু তানিশা কই কখন থেকে ডাকছি কোনো সারা শব্দ নেই ?
– তানিশা ওর বাড়িতে চলে গেছে। আমি বললাম কি হয়েছে আমার কথা না শুনে হন হন করে ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো। আমার এখন একদম ভালো লাগছে না তানিশা যাওয়ার পর থেকে। ঘরটা কেমন যেনো হয়েছে। তুই গিয়ে তাড়াতাড়ি তানিশা কে নিয়ে আয় ।
– আম্মু অনেক রাত হয়েছে এখন তুমি শুয়ে পড়ো আমি আসছি।

( বলেই বাইক নিয়ে শ্বশুর বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বেশি দুরের পথ না শ্বশুর বাড়ি এসে দরজা কলিং বেল দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর তানিশা এসে দরজা খুলে দিল ..)

– কি হয়েছে এভাবে চিল্লাচিল্লি করছেন কেনো? এটা কোনো মাছের হাট না যে এভাবে চিল্লাচিল্লি করবেন ।‌
– তুমি এভাবে চলে এলে কেনো ,জানো না আম্মু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারে না সাথে আমিও ?
– ঢং করা লাগবে না যেখানে আমার কোনো মুল্যে নেই সেখানে আমি থেকে কি করবো ।
– মানে..
– অফিসে যাওয়ার নাম বলে অন্য মেয়েদের সাথে থাকবে সন্ধ্যা হলে বাসায় ফিরবে , তার কাছে আমি কিভাবে থাকবো ।

তানিশা চোখ মুখ লাল হয়ে আছে মনে হয় অনেক কান্না করছে , কান্না করারই কথা যে কথা বলেছি।

– আরে আমিতো মজা করে বলেছিলাম।আর আমিতো তখন তোমার সাথেই কথা বলছিলাম বিশ্বাস না হলে অফিসে খুঁজ নিয়ে দেখ।
– আমি কোনো খুঁজ নিতে যাবো।‌ আমার কোনো দরকার নেই আপনি এখন থেকে চলে যান। আপনার মতো লুকের সাথে আমি সংসার করবো না ।

বলেই মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো

– কি রে তোমাদের আমার ঝগড়া হয়েছে?
– ওই বেডা বদের হাড্ডি সব সময় আমার সাথে লেগে থাকে ।‌
– তবুও তো তোকে অনেক ভালোবেসে। রাগ করে এখন যে এলি কিভাবে থাকবি এখন।
– সত্যি তো আম্মু আমার এখন ভালো লাগছে না কেনো যে ওকে রাগ তাড়িয়ে দিলাম।
– ওকে ফোন দে
– আমি পারবো না আম্মু তুমি দেও ।
– আমি কেনো দিবো ,তোর জামাই তুই ফোন দে?

তানিশা একটু ভয়ে ভয়ে আমাকে ফোন দিলো

হটাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। পকেটে থেকে ফোনটা বের করে দেখি তানিশা ফোন দিয়েছে। তাই একটু দেরি না করে ফোন রিসিভ করলাম।

– হ্যালো তানিশা…
– কেউ যদি আমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে এসে নিয়ে যেতে পারে।

একটুকু বলেই ফোন টা কেটে দেয় । বুঝতে পারলাম পাগলিটার রাগ কমেছে। তাই দেরি না করে ওকে নিতে চলে এলাম। এসে দেখি ও রেডি ।
চাচি কে না মানে শ্বাশুড়ি মাকে বলে নিয়ে আসলাম। রাস্তায় আমার সাথে একবারো কথা বলেনি তাই আমিই আগে বলি…

– সরি
– হুম
– তুমি এতোটা রাগ করবে বুঝতে পারিনি । আমিতো এমনি মজা করে কথাটা বলেছিলাম।
– তুমি জানো না আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। এসব বললে আমার কষ্ট হবে না ।
– সরি আর কখনো এমন বলবো না । এবার প্লীজ একটু হাসো
– হিহিহিহি হয়েছে?
– এইতো আমার লক্ষী বউ‌।

বাসায় আসতেই আম্মু তানিশা কে দেখে বলতে থাকে..

– কিরে মা রাগ করে এভাবে এখন থেকে চলে গিয়েছিল কেনো জানিস না তোকে ছাড়া এখন এই বাড়িটি ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
– আর জাবো না আম্মু। তোমার ছেলেকে বলো আমার সাথে যেনো না লাগে ।
– রাহী তুই সব সময় আমার মেয়েটার পিছনে লেগে থাকিস কেনো?
– ( চুপ)
– তানিশা তোর সাথে আর এমন করলে আমাকে বলবি তখন মজা দেখাবো হারামজাদা কে।
– ওকে

রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর সময় ঘটলো বিপত্তি।

– তুই বিছানায় ঘুমাবিনা
– আজব তো কেনো
– আমি বলছি তাই .
– সব তো ঠিক হয়ে গেলো কিন্তু এখন আমার কি ?
– কিছু ঠিক হয়নি। আমাকে কষ্ট দেওয়া ফল । যতদিন না আমি বলবো ততদিন তুই নিচেই ঘুমাবি।
– এটা কেমন কথা
– হিহি
– ওই আমার সোনটা ,বাবুটা
– না তুই একদম এসব বলে ডাকবি না আমাকে আমি তোর কেউ না ।
– ও বউ
– কে তোর বউ
– তুমি আমার কিউট সোনা বউ ।
– আমি তোর বউ না । আমার বর তো খুব ভালো সে আমাকে অনেক ভালোবাসে কখনো কষ্ট দেয় না । কিন্তু তুই শুধু আমাকে কষ্ট দিস!
– ও বউ ভুল হয়ে গেছে মাপ করা যায় না ।
– একদম চুপ তুই আজ থেকে নিচেই ঘুমাবি।
– তোমার কষ্ট হবে না এতে?
– আমার কোনো কষ্ট হবে ।
– ওকে গুড নাইট..
– হুম

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি বিছানায়। কি ব্যাপার আমি এখানে কিভাবে আসলাম আমিতো ফ্লোরে ঘুমাই ছিলাম। নিশ্চয়ই বান্দরনী এনেছে থুক্কু তানিশা । মুখের কোনায় অজান্তেই হাঁসি ফোঁটে উঠলো।পাগলি একটা নিজেই নিচে ঘুমানোর কথা বললো আবার নিজেই উপরে নিয়ে আসছে।

– ও বউ.
– চুপ
– আমার সোনা বউ
– সকলে উঠেই বউ বউ করছিস কেনো?
-ও আপু আপনার এখনো রাগ কমেনি।
– কি বললি আমি তোর আপু তাইনা?

এইবার তো মনে হয় আমি শেষ..

– না মানে চাচাতো বোন যখন বউ তাইতো।
– একদম চুপ বেয়াদব
– রাগ কেনো বাবু সরি বলছি তো
– রাখ তোর সরি তোর সরির গুষ্টি মারি ‌।

তানিশার সাথে ঝগড়া করছিলাম তখনি চুটকি এসে ডাক দিল ।

– ভাইয়া তোকে আর আপুকে আব্বু ডাকছে,তাড়াতাড়ি আয়।
– তুই যা আসছি।
– তাড়াতাড়ি আয়

তারপর আমি আর তানিশা আব্বুর কাছে গেলাম।

– আব্বু কিছু বলবে?
– হুম তোমাদের সাথে কিছু কথা ছিলো।
– কি বাবা ( তানিশা)
– আসলে তোমাদের বিয়ে করার পর অনেক সমস্যা গেছে আমাদের পরিবারের উপর । দোকান টাও শেষ হয়ে যায়। হাতে টাকাও ছিল না ।এখন তো সব ঠিক আছে । তাই তোমার কিছুদিন ঘুরিয়ে আসো এই নাও টিকেট কক্সবাজারের আমার সব বেবস্থা করা আছে।
– আচ্ছা আব্বু।

আমিতো মহা খুশি। পরেরদিন আমারা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেই । ওখানে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে তাই আমরা সোজা হোটেলে চলে যাই। তারপর ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রেস্ট নেই কারন অনেক টা পথ জার্নি করে এসেছি। পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমে যাই গিয়ে দেখি তানিশা গোসল করছে , আমাকে দেখে চিৎকার করে উঠে।
– আসর সময় নক করবি তো?
– আমি কিভাবে জানবো তুমি ভিতরে আর দরজা নক করো নাই কেনো?
– তুই ঘুমিয়ে ছিলি তাই নক করি নাই।
– ওও
– বের হ এখন
-কেনো আমি থাকলে প্রবলেম কি হাহাহা
– যেতে বলছি যা।
– না

আমি বাথরুমের দরজাটা নক করে ওর দিকে এগিয়ে যাই। তানিশা ভয়ে পিছনে যেতে থাকে । আমি তানিশার একটিবারের কাছে যেতে ও চোখ বন্ধ করে নেয়। তার পর আমি চলে আসি। তানিশা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ।

– এখনোও কি আমার উপর অভিমান করে আছো? প্লীজ আমার দূরে দূরে রেখো না অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার ।

আমি গিয়ে ওর হাত ধরি।

– প্লীজ

তানিশা কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে।‌

– কখনো ছেড়ে যাবি নাতো?

জীবন থাকতে ও না ।
– কখনো যাবে না তো ‌। বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো মরতে হলে একসাথে মারবো।‌
– প্রমিজ
– প্রমিজ
– ওই
– হুম
– আমার না ছোট একটা রাহী লাগবে।
– তাই
– হুম
– কিন্তু আমার যে ছোট একটা তানিশা লাগবে ।

তানিশা লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকায়। আমি ওকে খুলে করে নিয়ে বিছানায় ফেলে দেই। ওর ঠোঁটে সাথে আমার ঠোঁট এক করে দেই। তার পর কি হলো সেটাও কি বলতে হবে । আপনাদের কি লজ্জা সরম কিছু নেই । এটা জানার জন্য বসে আছেন ,যান মিয়া ।

এই বছর পর….

আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলাম ঠিক তখনি…

– স্যার আপনার মেয়ে হয়েছে।( ডক্টর)
– হুম , তানিশা কেমন আছে??
– ভালো না শেষ বারের মত দেখে আসেন ।
– কি বলছেন এসব ?

আমি কেবিনে গিয়ে..

– এই তানিশা উঠো দেখো আমাদের মেয়ে হয়েছে। তোমার মতোই মিষ্টি। এই তানিশা দেখো না একবার। প্লিজ একবার কথা বলো । তুমি কিন্তু তোমার প্রমিজ ভেঙ্গে ফেলছো। তুমি আমাকে প্রমিজ করেছিলে। একসাথে বাঁচবো একসাথে মরবো। কিন্তু তুমি আমাকে আগে রেখে যেতে পারো না । ঠিক আছে আমিও চলে যাবো।
( কাঁদতে কাঁদতে বললো রাহী ।)

তখনি তানিশা আমার হাত ধরে বলে ..

– এই পাগল তুমি আমাকে ছেড়ে কই যাবে?
– কোথাও না ,আমার পাগলিটাকে বুকে নিয়ে রাখবো।

তানিশা কে জরিয়ে ধরেছিলাম তখনি….

– আমাদের রাজকন্যা কোথায় দেখি? ( আম্মু)

তানিশা আমাকে ছেড়ে দিয়ে…
– এখানে আছে আম্মু…
– সবাই দেখি সরো আমি বাবুটাকে দেখবো ( চুটকি)

চুটকি বাবুকে দেখে বলতে থাকে…

– আমি একটু খুলে নেই।

তার পর বাবুটাকে কোলে নিয়ে বলে..

– আপু বাবুটা একদম দেখতে তোমার মতো কিউট হয়েছে।
-ওকে আমার কাছে দে ও আমার মেয়ে।
– এহ্ তোর মেয়ে ,আমি কি খেয়ে ফেলছি না কি ।

এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। তারপর আমার মিষ্টি মেয়েকে নিয়ে সবাই আলন্দ করলো। সন্ধ্যা সময়..

– আম্মু আব্বু ,তোমরা বাসায় চলে যাও আমি তানিশার কাছে আছি।
– ঠিক আছে আমারা এখন আসি কিছুক্ষণ পরে খাবার নিয়ে আসবো ।
– হুম আচ্ছা।

তখন তানিশা বললো..
– রাহী এ দিকে এসো..
– হুম বলুন মহারানী?
– এখানে এসে বসো।
– তাহলে তোমার মিষ্টি টা দাও?
– দেখছে তো?
– কে দেখছে?
– তোমার পাঠক পাঠিকা!

এই যে পাঠক পাঠিকা ভাই বোন আর কত দূর যাবেন। এখন আমাদের প্রেম করতে দেন। ভুল ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পুরো গল্পে আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। কেমন হয়েছে গল্পটি বড় করে কমেন্ট করে যাবেন।

সমাপ্ত……..

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here