অভ্র_নীল,১১,১২

0
1311

#অভ্র_নীল,১১,১২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১১
____________
সকাল ১০টায়…!
রাজ চৌধুরী পৌঁছে যায় আকাশের বাড়িতে সাথে মিসেস চৌধুরী ও ছিলেন..!

কলিং বেল বাজাতেই এক সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়!
সার্ভেন্ট– আসসালামু আলাইকুম স্যার…! আসুন..!
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে করতে…!
মিস্টার রাজ– ওয়ালাইকুম আসসালাম…!
কেমন আছো নজরুল…?
সার্ভেন্ট– আলহামদুলিল্লাহ স্যার! আমি ভালো আপনার কেমন আছেন?

মিস্টার & মিসেস রাজ– আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো.!
সার্ভেন্ট– স্যার আপনারা বসেন আমি আপনাদের জন্য স্ন্যাকস নিয়ে আসছি.!

মিস্টার রাজ– দাঁড়াও নজরুল ..! স্ন্যাকস পরে নিয়ে এসো আগে তোমার স্যার আর মেডাম কে গিয়ে বলো আমরা আসছি আর তারাতাড়ি নিচে আসছে!
(ডায়িং রুমে সোফায় বসে আছেন মিস্টার, মিসেস রাজ)

সার্ভেন্ট– ওকে স্যার! আমি তাহলে অন্য কাউকে স্ন্যাকস নিয়ে আসতে বলছি! আর আমি গিয়ে স্যারদের ইনফর্ম করছি।

মিস্টার রাজ— ওকে!

নজরুল আরেকজন সার্ভেন্ট কে বললো স্ন্যাকস বানিয়ে ডায়িং রুমে নিয়ে যেতে আর ও চলে গেলো মিস্টার খান এর রুমের সামনে…!
দরজা নক করছে…
মিসেস খানন– কে?
সার্ভেন্ট— ম্যাম আমি নজরুল..!
মিসেস খান– দাঁড়াও আসছি..!
দরজা খুলে…!
মিসেস খানন– বলো নজরুল?
মিস্টার খানন ল্যাপটবে কাজ করছেন!
সার্ভেন্ট– ম্যাম, মিস্টার ও মিসেস রাজ চৌধুরী আসছেন ডায়িং রুমে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

মিসেস খান– অবাক হলেন!
মিস্টার খান– ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন..!
কার নাম বললো রাজ আসছে কিভাবে সম্ভব ওকে তো কত মাস ধরে দেখেই না এত ব্যস্ত থাকে আর সে আজ নিজে ওর বাড়িতে আছে দু’জনেই বেশ অবাক..
মিস্টার খান– তুমি যাও ওদের আপায়ন করো আমরা এখনি আসছি!
সার্ভেন্ট– জি স্যার..!
মিস্টার ও মিসেস খান ডায়িং রুমে এসে দাঁড়ালেন পরক্ষণেই মিস্টার রাজ ও মিস্টার খান দু’জন দুজনে কোলাকুলি করলেন সাথে ওনাদের বেগম রাও…
তিন বন্ধুর মধ্যে দুই বন্ধু অনেকদিন পর দেখা হয়েছে গতকাল মিস্টার হোসেনের সাথেও দেখা হয়েছিল (হোসেন শুভর বাবা)
চারজনেই বেশ মজাই আছে আড্ডা দিতেছে ভরপুর..!
রাজ– আমরা যেজন্য আসছি! আমরা তো অভ্রর বিয়ে ঠিক করেছি আগামী শুক্রবার ওর বিয়ে আর এই যে বিয়ের কার্ড তোকে আর ভাবিকে কিন্তু আসতেই হবে আর দু’দিন আগেই যাবি!
মিসেস খান– ভাইসাব আমাদের অভ্রর বিয়ে ঠিক কিভাবে কি?
মিসেস চৌধুরী– হ্যাঁ ভাবি! অভ্রই মেয়ে পছন্দ করেছে কিন্তু কাউকে বলেনি আমাদের তো আকাশ আর শুভ বলেছে সে অনুযায়ী আমরা মেয়ে দেখতেও গিয়েছিলাম মেয়ে তো মাশা আল্লাহ.. আমার পছন্দ হয়েছে ছেলের পছন্দ বেশ ভালো তাই আমরাও রিং পরিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে আসছি।
মিস্টার খান– শুভ আর আকাশ সব জানতো কই আমাদের তো কিছু বলেনি!
মিসেস খান– ভাবা চায় অভ্রর মতো লাঁজুক ছেলে,, এই আমাদের আকাশ ও তো তানজুমকে
মিস্টার খান– হ্যাঁ আর শুভ তানিয়াকে..
মিস্টার ও মিসেস চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন– তুই ওদের কিভাবে চিনিস?
মিসেস খান– ভাই-সাব ওদের বলতে?
মিসেস চৌধুরী– তানিয়া আর তানজুম কে?
মিস্টার খান– ভাবি আপনারা কিভাবে চিনেন?
মিস্টার চৌধুরী– তানিয়া তানজুম তো আমাদের হবু বউমা নীল এর বান্ধবী নীল কে যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন পরিচয় হয়েছে আর সেদিন তো আমাদের সাথে শুভ ও আকাশ ও গিয়েছিল।
মিস্টার খান– ও এই ব্যাপার!
মিসেস খান– কি বলছো কোন ব্যাপার?
মিসেস চৌধুরী– আমিও বুঝলাম না!
মিস্টার চৌধুরী– তার মানে কি আমি যা ভাবছি তুই ও কি তাই ভাবছিস?
মিস্টার খান– ভাবছি মানে কি রে কালতে আকাশ শুভ আমাদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে বলেছে ওরা ওদের বিয়ে করতে চায়,, আর সে অনুযায়ী আমরা আজ ওদের বাড়িতেও যাবো মেয়ে দেখতে…!( রেস্টুরেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুলে বলে)
সবাই হাসছে
মানে তিন বন্ধু তিন বান্ধবীর প্রেমে।
হ্যাঁ রে।
রাজ– এই শোন তোরা তো আজ যাবি তাহলে মেয়ে পছন্দ হলে সেইম ডেট ফিক্সড করিস তিন বন্ধুর সেইম দিনে বিয়ে হবে। কি বলিস?
মিস্টার খান– কথাটা মন্দ বলিস নি! দেখি মেয়ে আগে
মিসেস চৌধুরী– ইন শা আল্লাহ মেয়ে পছন্দ হবেই মেয়ে দু’জন কেই আমরা দেখছি মেয়ে গুলো ও দেখার মতো হিরার টুকরা। মিসেস খান– তাই তো আমাদের ছেলেগুলো প্রেমে পরছে.
তা যা বলেছো।
আরও কিছুক্ষণ গল্প আড্ডা দেওয়ার পর রাজ চৌধুরী ও উনার স্ত্রী বিদায় নিয়ে চলে গেলেন!
দীর্ঘ ১ঘন্টা পর এবার আসছেন!
এখানেও সেইম কথা উপরে যা বলেছে,,, বিয়ের কার্ড, তিনজনের বিয়ে এক দিনে বক্কর চক্কর বলে চলে গেলেন!
এইভাবে সবাইকে বিয়ের নিমন্ত্রণ করেছে কার্ড যার যার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে দিয়ে!
সেইম কাজ মিস্টার ও মিসেস রায়হান সরকার ও করছেন!

বিরতি………!!!!!!

এখন সময় মেয়েদের বাড়িতে যাওয়া…! কথা অনুযায়ী কাজ
কাজল গেলো তানিয়ার বাড়ি আর নীল এলো তানজুমের বাড়ি..!
বেচারা অভ্র পরে গেছে মিনকার চিপায় যাকে বলে দুই নৌকায় সওয়ারি
শুভ– অভ্র তোকে আমার সাথে যেতে হবে,, মানে তুই আমার সাথে যাবি তানিয়ার বাড়ি তোর সময় আমি কিন্তু গিয়েছিলাম.!
আকাশ– হো আর আমি তো ঘোড়ার ঘাস কাটতাছিলাম তাই না! আমি তো যাই নাই
অভ্র আমার সাথে যাবে মানে আমার সাথেই যাবে।
শুভ– না অভ্র আমার সাথে যাবে..
আকাশ– নাহ অভ্র আমার সাথে যাইবো!
শুভ– না আমার সাথে!
আকাশ– না আমার সাথে!

যে ভাবে ঝগড়া করছে অভ্র কার সাথে যাবে নিয়ে? না জানি সামনা সামনি থাকলে আজ কি হতো..
তিন জনেই গ্রুপে ভিডিও কলে সোফায় বসে বসে কথা বলছে,,
মানে কথা তো বলছে না এক প্রকার ঝগড়া করছে…
শুভ– আমার সাথে…
আকাশ– না আমার সাথে যাবে।

অভ্র বেচারা মিনকার চিপায়
এই জন্যই বলে দুই বন্ধুর এক সাথে একই দিনে আলাদা আলাদা কোনো প্রগ্রাম করতে বা রাখতে নেই,,
বুঝো এবার অভ্র
বেচারা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আর ওদের কান্ড দেখছে!
১০মিনিট পর.!
অভ্র– Enough!
আমি তার সাথেই যাবো যার হবু বউকে রেডি করতে আমার হবু বউ যাবে! (কিউট স্মাইল দিয়ে একটু লজ্জা মাখা কন্ঠে)

শুভ– হালায় কয় কি!
আকাশ– এবার কি বলবি? শুভ

শুভ– যা তাতে আমার কি! এক মিনিট ওয়েট ওয়েট আমি তো একটা কাজ করতে পারি!

অভ্র– কি কাজ?
আকাশ– কি কাজ বল?
শুভ– বলছি বলছি! আমি তন্ময় কে কল করে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারি আর তাতে কাজল এর ও একটু সুবিধা হবে কি বলিস?
অভ্র– হুম এটা করতে পারিস কিন্তু আঙ্কেল আন্টি কে কি বলবি?
শুভ– বলবো নিউ ফ্রেন্ড..! বিজনেস পার্টনার।
আকাশ– যা ভালো বুঝিস,, কল দিয়ে বল এখনই!
শুভ– ওকে.. ওয়েট!
অভ্র– হো হো তোরা এই বুদ্ধি নিয়া বিজনেস ম্যান হলি কিভাবে সেটাই আমি বুঝতে পারছি না! গাধার দল (দাঁতে দাঁত চেপে)
আকাশ– আমরা আবার কি করলাম
শুভ– তাইতো?
অভ্র– তাই তো না থাডাইয়া একটা থাপ্পড় মারমু,, তন্ময় এর হেয়ার স্টাইল দেখছোস? ওর হাঁটা চলার স্টাইল দেখছোস!
ওকে যে দেখবে সেই বুঝে যাবে ও আর্মি আর আসছে ওনারা একজন আর্মি কে বিজনেস ম্যান বানাতে
আকাশ– হ্যাঁ তাইতো এটা তো ভেবে দেখিনি!
শুভ– তোর মাথায় এত কিছু আসে কিভাবে রে?
অভ্র– তোদের মত গাধা নই যে তাই… বলবি তন্ময় এর সাথে আমাদের রিসেন্টলি দেখা হয়েছে আর ও আমাদের ভালো বন্ধু হয়ে গেছে আর ও একজন আর্মি…! বাস আর কিছু বলতে হবে না এখন রেডি হয়ে নে আমিও একটু রেডি হই আমার জানপাখি কে দেখতে যাবো তোদের উছিলায়

আকাশ– ওকে ওকে!
শুভ– প্রতিদিনই না কলেজে দিয়ে আসিস আর নিয়ে আসিস রোজই তো দেখিস..!
অভ্র– তোর কি যা ফোন রাখ!

ওইদিকে…!
নীল আজ গোলাপি রঙের গোল জামা পরেছে সাথে নীল রঙের উড়না..! চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে চোখে গাড়ো কালো করে কাজল দিয়েছে ঠোঁটে হালকা ম্যাথ লিপস্টিক তবুও দেখতে হেব্বি লাগছে

নীল তানজুম কে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে সাথে নীলের মধ্যে সবুজ রঙের একটি টিস্যু শাড়ি পরিয়েছে!
তানজুম পরতে চায়নি,, ও থ্রিপিছ পরতে চেয়েছিল কিন্তু নীলকে ওরা জোর করে শাড়ি পড়িয়েছিল তাই নীল ও তাই করলো..!
দেখতে মাশা আল্লাহ দুনজনকে সুন্দর লাগছে।
ওইদিকে কাজল তানজুমকে লালের মধ্যে সাদা পাইরের সিল্ক শাড়ি পড়িয়েছে তানিয়াকে আর খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে!
কাজল থ্রিপিছ পরেছে চুল গুলো বকের ঠোঁট কাঠি দিয়ে পেচিয়ে রাখছে! (আমার মতো আমি এইভাবেই রাখি)
কাজলের একটু মন খারাপ অনেক দিন ধরেই তন্ময় এর সাথে দেখা হয় না আর সেইভাবে কথাও হচ্ছে না!
প্রায় এক ঘন্টা পর আকাশ ওরা তানজুমের বাড়িতে আর শুভ রা তানিয়াদের বাড়িতে চলে আসে!
সবাই পরিচয় হচ্ছে.!
কিছুক্ষণ পর মেয়েকে নিয়ে আসুন.!
…..
নীল তানজুমকে নিয়ে আসছে..! সামনে তাকাতেই নীল এর হাঁটা বন্ধ হয়েগেলো!

কাজল তানিয়াকে ধরে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে.!
সামনে তাকাতেই ওর ও পা থমকে গেলো!

কারণ,,, অভ্র সামনে সোফার উপর দুই পায়ের মধ্যে খানে দুই হাত দিয়ে হাত মুঠি বন্ধ করে এক নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীল এর দিকে.!
নীল এর এখানে অভ্রকে দেখে রাগ হচ্ছে কিন্তু কিচ্ছু করার নেই,,,
নীল– সারাদিন জ্বালিয়ে পেট ভরে না নাকি যে এখানেও চলে আসছে জ্বালাতে (মনে মনে)

কাজল নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছে না।
তন্ময় এখানে ওর চোখের সামনে উইথ শুভর সাথে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না তবুও অনেক খুশি হয়েছে (মনে মনে)

দুই ফ্যামিলির-ই মেয়েদের কে খুব পছন্দ হয়েছে!
বিয়ের ডেট অভ্র আর নীলের বিয়ের ডেটেই ফিক্সড করা হয়েছে…
সবাই অবাক.. তিন বন্ধুর এক সাথে বিয়ে হবে!
এটা ওদের কল্পনার বাহিরে ছিলো এই গুলো যে ছেলেদের বাবা মা-য়েদের বুদ্ধি তারা জানতো না।
সবাই খুশি হলেও শুধু খুশি নয় নীল.. যতদিন যাচ্ছে তত বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে…!

সবার আগা মাথা শেষ, দুই ফ্যামিলি বিদায় নিয়ে যার যার বাড়িতে চলেগেলো! (এত ডং করে লিখতে পারতাম না)
অভ্র নীল কে ড্রপ করতে যাবে নীল রাজি হয়নি কারণ ওর সাথে গাড়ি আছে! কিন্তু অভ্র জোর করেই নীলকে ওর গাড়িতে উঠতে বললো আর নীলের গাড়িকে ওদের ফলো করতে বললো!
তন্ময় নিজের বাইক দিয়ে কাজলকে নিয়ে লং ড্রাইবে গেলো!

#চলবে …..?

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১২
____________
পরেরদিন সকালে…
কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে!
→ নীল →তানজু →তানু →কাজু

নীল এর মুখে বিরক্তির ছাপ!
তানজু→তানু→কাজু তিনজনের মুখে খুশির হাসি…!
নীলকে নিতে অভ্র আসছে আগের মতো আর এখন অভ্র সাথে যোগ হয়েছে আকাশ শুভ তন্ময়…!

নীল কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ি উঠে পড়ল।
এনগেজমেন্ট এর পর থেকে অভ্রই নিয়ে যাচ্ছে আর দিয়ে যাচ্ছে এটা আবার নতুন কি প্রচুর মেজাজ খারাপ হয় নীল এর কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।
ওই দিকে ওরা মহা খুশি তিন জনেই বাইক নিয়ে আসছে আহহহহ বাইকের পেছনে বসে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরছে তিন মাইয়া তিনডা পোলারে পাবলিক রাস্তায় কেমনে জড়াইয়া ধরছে শরম ও করে না আর করবেই বা কেন হবু জামাই বলে কথা

এভাবেই চলতে লাগে রোজ!
কাজল এর পরিবর্তন ওর ফ্যামিলির চোখে পড়ছে!
মাঝে মাঝে বাহিরে কানা কানি ও হচ্ছে আদনান সাহেবের মেয়ে একটা ছেলের বাইকের পেছনে ঘুরে বেড়ায় প্রমান নেই বলে আদনান সাহেব মেয়েকে কিছু বলছে না কিন্তু উনার বড় ছেলেকে বলেছে কাজল এর উপর নজর রাখতে!
এরমধ্যে সন্ধ্যা বেলা তিন বাড়ি থেকেই একসাথে বিয়ের কার্ড আসছে! তানিয়া তানজুম আর নীল এর বিয়ের কার্ড।
তিন জনের একসাথে বিয়ে হচ্ছে ভেবে কিছুটা অবাক হন আদনান সাহেব এবার ভাবে নিজের মেয়েরও বিয়েটা দিয়ে দিবে!
যা কানে আসছে আজকাল পরে মান সম্মান থাকবে না।
কলেজ শেষ হলে আকাশ শুভ তন্ময় → তানজু তানু আর কাজল কে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যায় সবাই মিলে অনেক টা সময় কাটায়!
অভ্র নীলকে যেতে বললেই সবসময় নীল কোনো এক অজুহাত দিয়ে চলে আসে! অভ্র বুঝতে পারে নীল ওর সাথে যেতে ইচ্ছুক নয় তাই আর জোর করে না!
নীলকে ওর বাড়িতে ড্রপ করে অফিসে চলে আসে।
আর ওরা ওদের মতো সময় কাটায়। অভ্রর কিছুটা মন খারাপ হলেও অভ্র নীলকে জোর করতে চায় না!
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নীল এর অভ্রকে এইভাবে এভয়েড করা তানজু, তানু, কাজলের একটুও পছন্দ না আর এখন তো কিছুদিন পর বিয়ে এখনও কেনো এমন করছে? সেটাই বুঝতে পারছে না ওরা।
অভ্র হাজারও কষ্ট অভিমান বুকে চেপে রেখে হাসি মুখে সবার সাথে মিশছে কিন্তু ভিতরে কি চলছে সেটা শুধু আকাশ আর শুভ বুঝতে পারছে বন্ধুর কষ্ট করা মেনে নিতে পারছে না অভ্র খুব চাপা স্বভাবের হাজার কষ্টে থাকলেও কারো সাথে শেয়ার করবে না। অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছে অভ্রকে ওরা নীলকে একটু জোর করার জন্য বুঝানোর জন্য কিন্তু অভ্র চায়না জোর করে ভালোবাসা পেতে।

এইভাবেই চলছে দিন…..!
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।
আজ তিন মেয়ে ও তিন ছেলের গায়ে হলুদ।
সকাল সকাল সম্পূর্ণ বাড়ি মাথায় উঠিয়ে নিয়েছে আত্মীয়স্বজন রা!
এইটা এমন কেনো ওইটা ওমন কেনো এইটা করো ওইটা করো তারাতাড়ি করো লেইট হয়ে যাচ্ছে মানে জানেনই তো বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত কাজ।
গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সব কিছু কমিউনিটি সেন্টারেই হবে। তাই বাড়ি থেকে গুলছ গাছ করে সবাই কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন।
তিন জনেরই একই কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হবে।
তিন ফ্যামিলিই ছেলে মেয়ে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে চলে আসলেন সেন্টারে।

আজ গায়ে হলুদ তাই পুরো সেন্টার ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে নানাম ধরনের ফুল,,, ফুলের সুগন্ধ চারদিকে ছুই ছুই করছে।
স্টেজ খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে আর বড় করেই সাজাচ্ছে তিনটা স্টেজ সাজানো হচ্ছে তিন জোড়ার জন্য প্রত্যেকটা স্টেজে লেখা আজ নীল ও অভ্রের হলুদ সন্ধ্যা → তানু ও শুভর হলুদ সন্ধ্যা → তানজু ও আকাশ এর সন্ধ্যা..
স্টেজের সামনে টেবিলের উপর রাখা হয়েছে নানান ধরনের ফল সাজিয়ে রাখছে + হলুদ বাটা + টিউব মেহেদী টেবিলটার চার কোনায় ও ফুল দিয়ে সাজানো তিনটা স্টেজই সেম ভাবে সাজানো হয়েছে।
সম্পূর্ণ সেন্টারটাই ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ফুলের জন্য অন্য কিছু দেখাই যাচ্ছে না এমন টাইপ।
এদিকের সব গোছগাছ প্রায় শেষের দিকে।
তিনজন মেয়ে সহ ছেলে রাও গিয়েছে পার্লারে।
ছেলেরাও পার্লারে যায় শুধু শিকার করে না

তিনজনকে হলুদে শাড়ি পড়ানো হয়েছে লাল পাইড়ের তিনজনের শাড়ি থেকে সাজ হেয়ারস্টাইল সব সেম হবে এটাই মেয়েদের প্ল্যান
ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই ওরাও তিনজন হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে সাথে সাদা কালারের ধুতি…!
তিন জনের সাজগোছ প্রায় শেষ ছেলেদের ফেসিয়াল টেসিয়াল সব শেষ পুরাই রেডি..¡
আকাশ শুভ অভ্র পার্লার থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্য রওনা দিলো!
ভাবছেন তো মেয়ে তিনজন কে ছাড়াই চলে আসছে কেনো কারণ হচ্ছে মেয়ে গুলা অন্য পার্লারে গেছে তাই
এতক্ষণে অতিথিরা সবাই এসেগেছে।
অভ্র, আকাশ, শুভ গেইট দিয়ে আসছে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলের কলেজের ফ্রেন্ড গুলাও আসছে তাদের মধ্যে ওই তিন জন মাইয়াও আছে যারা শুরুতে অভ্রর উপর নজর দিছিলো। তানজু, তানু আর কাজুল ইচ্ছে করেই ওদের তিনটা কে ইনভাইট করছে দেখবে আর জ্বলবে!
তিনজন গিয়ে তিনটা স্টেজে গিয়ে বসে আর পাশেই বক্স বাজানো হচ্ছে গায়ে হলুদের গান চলছে৷
(আর আমার ঘুম আসতাছে লিখতে লিখতে)
কিছুক্ষণ পর অভ্র শুভ ও আকাশের নজর বন্ধি হয় গেইটের দিকে তিনটা পরী আসতেছে
খুব সুন্দর লাগতেছে তিনজন কেই সাথে আসছে তন্ময় ও কাজল
কাজল নিয়ে ওদের তিনজনকে এক এক করে ওদের তিনজনের পাশে বসিয়ে দিলো।
ক্যামেরাম্যানরা ভিডিও করছে শুরু থেকে আরেকজন ছবি তুলছে।
এক এক করে সবাই হলুদ দিচ্ছে ওদেরকে!
এদিকে সুযোগ এর সৎ ব্যবহার করছে কাজল।
এক ধুমধারাকা গান চালিয়ে ডান্স শুরু করে দিছে ওর সাথে ওদের কলেজের কয়েকটা বান্ধবী ও যোগ হয়েছে। এই নাচের পর কাঁপল ডান্স দিবে তন্ময় এর সাথে
কাজল এর ফ্যামিলির কেউ এখনো আসেনি কাজল ভেবেই নিয়েছে তারা আজ কেউ আসবে না।

৩০মিনিট উড়াধুরা নাচ দেওয়ার পর!
এখন সময় কাঁপল ডান্সের তো নাচ শুরু করা যাক
গান হচ্ছে
Gaan???????

Saans?? mein teri saan mile to mujhe??
saans?? ayyi Mujhe saans ayyi???
?? Tu hone chori jismein ki khushbo??
Tu jo pass ayyi tu jo pass ayyi???
(বাকি গান নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন ইউটিউব থেকা আমি বেশি লিখলাম না ঘুম আসতেছে তাই)
নাচের মধ্যেই কাজল এর পুরো ফ্যামিলি এসে উপস্থিত
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।
দাঁড়িয়ে সবাই মেয়ের নাচ দেখছে।
আর আদনান সাহেব মেয়ের সাথে ছেলে টাকে লক্ষ্য করছে কোথায় যেনো দেখেছে।
কাজল নাচের মধ্যে এতটাই মগ্ন ছিলো ও দেখতেই পায়নি ওর আব্বা আম্মা ভাইয়ারা ভাবি সবাই চলে আসছে।

নাচ শেষ সবাই হাত তালি দিচ্ছে খুশি তে কাজল সাত আসমানে উড়ছে আর হঠাৎ করেই ধুপ করে সাত আসমান থেকে নিচে পড়ে গেছে হাত পা একটুর জন্য ভাঙে নাই৷
কাজল— আব্বা জান! (বড় বড় শুকনা ঢোক গিলছে)

আদনান সাহেব তুমি আমার সাথে পরে আমার বাড়িতে দেখা করবে।
তন্ময়– জি আঙ্কেল।
আদনান সাহেব– তোমাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে।
তন্ময়– মুচকি হাসছে..
কাজলের ছোটো ভাই– আব্বু আমার মনে পড়েছে চিনতে পারছি।
আদনান সাহেব– কি?
ছোটো ভাই– তোমাকে একটা ছেলে কার এক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে ছিলো নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মনে আছে তোমার?

আদনান সাহেব– হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে তুমিই সেই ছেলেটা?

তন্ময়– জি আঙ্কেল!

ছোটো ভাই– সে দিন আর্মির ড্রেস পড়েছিল তাই তুমি আজকে দেখে চিনতে পারো নাই।

আদনান সাহেব– আচ্ছা সেজন্যই যাইহোক বাবা সেদিনের কথা আমি কোনো দিনও ভুলবো না তুমি না থাকলে সেদিন হয়তো আমি আর বাঁচতাম না তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আর তুমি আমার সাথে অবশ্যই দেখা করবে। (তন্ময় এর কাঁদে হাত রেখে)
পরে চলে গেলেন নীল তানজু তানিয়ার বাবা মার সাথে দেখা করতে!
কাজল– আব্বুর এক্সিডেন্ট হওয়া থেকে তুমি বাচিয়েছো মানে আমাকে বলবে।
তন্ময়– আরে তখন তো আমি জানতাম না উনি তোমার আব্বু আমি তো এখন জানলাম উনি তোমার আব্বু।
কাজল– যাই হোক এখন আমাকে সব বলো।
তন্ময়– বাপ বেটির একটাই ডায়লগ যাইহোক। (মুখ ভেংচি দিয়ে)
কাজু– কি বললা? (রেগে গিয়ে)
তন্ময়– বলছি রাগলে তোমায় সুন্দর লাগে চলো ওই দিকে বলছি।
কাজল– হুম চলো। (…………….)

আজকের মতো এখানেই শেষ হলুদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে লিখতে থাকলে শেষ হবে না।
অনেকরাত হয়েগেছে মেয়েরা ফ্রেশ হয়ে সব এক সাথে শুয়ে পড়ছে। আর ছেলেটা ব্যাচেলার পার্টি

পরেরদিন সকালে….!

সবাই সবার মতো কাজে লেগে পড়েছে।
মেয়েদের ডেকে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ হতে বলে!
আর নাস্তা করে নিতে বলে। নাস্তা ওদের চার জনের রুমেই দিয়ে যায়।
ওরাও উঠে এক এক করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেয়!
এখন সব গুলা এক সাথে বসে আছে..!
(নাস্তার কথা লিখতে গিয়া আমারই খিদে লাইগা গেছে)
তানজু– শেষ স্বাধীনতা।
তানু– আজ থেকা আমরা মিসেস হইয়া যামু।
কাজল– জানিস আব্বু না কাল তন্ময় কে বলছে আব্বুর সাথে দেখা করতে আর আব্বুও তন্ময় কে আগে থেকে চিনে।
তানজু– সে কি? কি ভাবে?
তানু– তারাতাড়ি বল।
কাজল– ওইদিন মনে আছে কলেজ শেষে ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম আর শুভ ও আকাশ ভাইয়া তোদের নিয়ে চলে গিয়েছিল আর ফিরে এসে দেখেছিল তন্ময় আমার সাথে বসে আছে।
তানিয়া– হু তারপর।
তানজু– হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে।
নীল– নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর ওদের কথা শুনছে।
তন্ময় ওইদিন ওই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল.. আর আব্বু হঠাৎ রাস্তায় সিগনাল না দেখেই রোড পার হতে যাচ্ছিল আর তখন একটা গাড়ি চলে পেছন থেকে আব্বু কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আর নিচে আব্বুর জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে ড্রাইবার টাইমলি ব্রেক করায় তন্ময় এর কিছু হয় নাই আর আব্বুর সাথেই ওর পরিচয় হয় তারপর আব্বুকে বিদায় দিয়ে চলে যাবে তখন আমাকে দূর থেকে বসে ফুচকা খেতে দেখে পেছনে আসে আর চুরের মতো আমার ফুচকা খেয়ে ফেলে.!
শেষের কথা শুনে তানজু আর তানিয়ার হাসির শেষ নেই।

ওদের কথা বার্তার মধ্যেই নীল- তানজু- তানিয়ার আম্মুরা এসে বলে ওদেরকে এখনি পার্লারের উদ্দেশ্যে বেরোতে হবে। আর কাজল ও ওদের সাথে যাবে।
তারপর তিনজনরেডি হয়ে চলে গেলো পার্লারে।
নীল, তানজু, তানু– তিনজনেই পরেছে বিয়ের লেহেঙ্গা যার বউ সাজ… (বিয়ের জন্য বউ সাজ কেমন হয় লেহেঙ্গা কেমন হয় মেয়েরা খুব ভালো করেই জানো তাই আমি আর বিশ্লেষণ করতে চাচ্ছি না)
তিন ঘন্টা ধরে সাজাচ্ছে আল্লাহ-ই জানে কত আটা ময়দা মাখাচ্ছে
ওইদিকে আকাশ শুভ অভ্র বিয়ের শেরওয়ানী পরেছে লাল + গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানী আর কি আর যা যা বর পরে আরকি তাই পরছে জুতা মুজা টুপি রুমাল ধুতি পাজামা

বিয়ের পর্যায়ে যাওয়া যাক চলেন তিন টাকে বিয়ে দিয়া আসি।

তিনজনেই বসে আছে স্টেজে বর সেজে রুমাল দিয়ে আর বাকিরা গিয়া গিয়া সেলফি তুলতাছে জুতা চুরি করার ফন্দি করতাছে কিন্তু সফল হচ্ছে না কারণ বিয়াইন দের জন্য বিয়াই রা আছে সমনে সমনে টক্কা
এত চেষ্টা করেও তিনটা বরের তিন জুড়া জুতা চুরি করে পারছে বা আহাম্মকের দলেরা
৪ঘন্টা হয়ে গেছে মেয়েরূ এখনো পার্লার থেকে ফিরেনি।
এহনো সাজেই
সেন্টার আজকে নতুন ভাবে সাজানো হয়েছে আজ ডিজে গান বাজানো হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েদের গাড়িও চলে আসে।
ক্যামেরা ম্যান তিনজনের গাড়ি থেকে নামা ধরে ভেতরে গিয়ে বসা পর্যন্ত ভিডিও শুট করছে।
ওরা আজকেও আবার ওদের দিকে আগের ন্যায় দেখছে নতুন করে প্রেমে পরছে।
(আমি লেখিকা– আরে অত তাকাইছ না রে সব মেক-আপ এর সুফল ধুইলেও শেষ)
তো কনেরা বরের পাশে গিয়ে বসে তারপর কাজি সাহেন আসেন এবং সুন্দর করে বিয়ে পরিয়ে চলে যান।
সবাই খুশি!
অভ্র– অবশেষে তোমাকে আমি আমার করে পেলাম! আলহামদুলিল্লাহ!
নীল পাথর হয়ে গেছে।
তারপর বিদায় আহারে কি কান্না ওদের কান্না দেখে আমারও কান্না আসতাছে কিন্তু কান্না করা যাবে না আমি কান্না করলে লিখবে কে তাই নিজের ফিলিংস কন্ট্রোল করে লেখা শুরু করি
মেয়েরা → তানজু ও তানু ওদের বাবা মা কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে আর নীল খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে নীল কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।
নীল এর মা মিসেস রায়হান মেয়ের সামনে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলেন নীল এখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে শুধু চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরেছে।
তারপর বউদের নিয়ে গাড়িতে বসানো হলো আর গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হলো গাড়ি চলছে তিন গাড়ি তিনটা বাড়িতে যাবে।
(বিয়ে সম্পর্কে আপনাদের মোটামুটি ধারণা হয়তো আছে তাই আমি তত বিশ্লেষণ দেইনি শটকাট লিখলাম বিয়ের অতশত বিশ্লেষণ করতে গেলে আরও এক পর্ব লাগবে তাই)

#চলবে …..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here