অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_১৩,১৪,১৫

0
460

#অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_১৩,১৪,১৫
#sharmin_akter_borsha (লেখনীতে)
১৩

ভোর দুপুরে আম গাছের নিচে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ জোড়া বন্ধ করে প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখছে। এমন সময় পেছন থেকে কানের কাছে কে জেনো ধীর কন্ঠে ফিসফিস করে বলে উঠল..

” বউ ও বউ ”

হঠাৎ কানের কাছে কারো ফিসফিসানি শব্দে লাফিয়ে উঠল নীল পেছনে না তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়ল।

” কেরে কার এত সাহস আমাকে তুই বলে?”
“আমি বলেছি গো বউ” (নেকা কন্ঠে)

তাড়াহুড়ো করে পেছনে ঘুরে তাকালো। চেয়ারের উপর দুই হাত রেখে থুতনি ভোড় দিয়ে তাকিয়ে আছে অভ্র ঠোঁটের কোণে মৃদু হেঁসে এক চোখ বাঁকা করে অন্য চোখের ভ্রু কুঁচকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এই হাসির মোহে কত না জানি মেয়ে পাগল হয়েছে। দীর্ঘ কিছুক্ষণ এই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল। না জানি কি যাদু আছে অভ্রর মায়া ভরা দুইটা চোখে যেখানে তাকালে তলিয়ে যায় মানুষ এক নিমিষে হারিয়ে যায় এক অজানা শিহরণে গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট সে ঠোঁটে মিষ্টি বাঁকা হাসি নীল কো অধিক পরিমাণে প্রচলিত করে তুলে মনের মধ্যে উথাল-পাতাল ঢেউ বয়ে যায়।
অভ্রর নেশালো ভয়েস এর কোনো কথাই নেই।
নীল এর জীবনে অভ্র প্রথম পুরুষ যাকে বারবার দেখেও দেখা শেষ হবে না বলে মনে হয়। অভ্রর কোনো ক্রুটি চোখে পরেনি একটা ছেলে এতটা নিখুঁত কি ভাবে হতে পারে। নীলকে উপলব্ধি করতে হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল!

” ও বউ! বউ কি দেখছো বউ এভাবে দেখো না গো লজ্জা লাগে তো আমার! ”

অভ্রর কথায় হুশ ফিরে থুতুমুতু খেয়ে যায়। অভ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” সমস্যা কি আপনার বউ বউ করেন কেন আমি আপনার বউ নই বুঝেছেন। আর আমি কেনো আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে যাবো বয়েই গেছে আমার আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে ”

এতক্ষণ ঝুঁকে ছিল এখন উঠে সোজা হয়ে টেডি স্টাইলে দাঁড়িয়ে বলল!

” তুমি তো দাঁড়িয়ে ছিলে থুক্কু তুমি তো তাকিয়ে ছিলে সেটা তুমি মানছো না কেন অস্বিকার করছো এখন? ”

অভ্রর শুরুতে ভুল কথাটা শুনে নীল উচ্চ সুরে হেসে ফেলে। নীল এর হাসি মাখা মুখের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল।

” তোমাকে হাসানোর জন্য বলছি গো বউ তোমাকে হাসলে খুব সুন্দর লাগে পরীর মতো গোমড়ামুখ করে রাখলে দেখতে বুড়ি বুড়ি লাগে সবসময় হাসবা ওকে? ”

বুড়ি শুনে হাসি থামিয়ে অভ্রর দিকে ঘুরে তাকালো দাঁত কটমট করতে করতে প্রশ্ন ছুঁড়ল।

” কি বললেন আমাকে বুড়ির মতো লাগে ”
“হুম লাগে তো কিন্তু হাসলে কিউটের ডিব্বার মতো লাগে তবে তুমি হাসলে তোমার গালে গর্ত হয়ে যায় কেনো তোমার শরীরে ভিটামিন কম আছে ডাক্তার দেখাতে হবে! ”

“মোটেও গর্ত হয় না আর না আমার ভিটামিন এর অভাব ওটা টোল পরে বুঝেছেন এত বড় লম্বা তালগাছ হয়ে গেছেন আর এই টুকু জানেন না এটাকে টোল বলে ”

” ও তাই নাকি সত্যি তুমি না বললে তো জানতামই না। তবে গর্ত টা বেশ সুন্দর লাগে যখন তুমি হাসে দুই গালে দুইটা গর্ত হয়ে যায় । ”
” আবার গর্ত বলছেন বললাম না ওটা…!
” টোল তাইতো?”
“হ্যাঁ”

“সে যাইহোক তুমি যখন হাসো তখন অনেক ইচ্ছে করে তোমার দুই গালে হাত রেখে ছুঁইয়ে দেই তোমার টোলে। ”
” ভুলেও টাচ করার কথা ভাববেন না বলে দিলাম। ”
” আচ্ছা ভাবলে কি করবে শুনি?”

অভ্র নীল এর দিকে এক পা বাড়ালে নীল তখন নিচে পরে থাকা একটা…

চলবে……?

#অভ্র_নীল
#সিজন-০২
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখিকা)
#পর্ব_১৪
___________
মাটি থেকে কুড়িয়ে একটা ইট নিলো অভ্রর দিকে ঘুরে বলল।
” একদম আমার কাছে আসবেন না মেরে মাথা ফাটিয়ে দেবো ”
” বুঝি না, তোমার কি ইটের সাথে আগের জন্মের কোনো বন্ধুত্ব আছে নাকি? ”
” মানে কি বলতে চাব? ”
” বলতে চাই তুমি যেখানে থাকো সেখানে ইট ও থাকে আর ইট টা কে ছুড়ে মারার জন্য সামনে আমিই থাকি। এটা বুঝলাম ইটের সাথে তোমার আগের জন্মের বন্ধুত্ব আর..”
“কি আর?”
” আর হচ্ছে আমার সাথে শত্রুতা ”
” হ্যাঁ ঠিক বলছেন আপনি আমার শত্রু কারণ ”
নীলকে থামিয়ে দিয়ে অভ্র বলল।
” সে যাই হোক বাদ দাও… ওই তো দেখো তানিয়া তোমাকে ডাকছে ”
নীল এর পেছনের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল। অভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল তানিয়া ডাকছে শুনে পেছনে ঘুরে তাকালো কিন্তু আশে পাশে তো দূরের দূর দিগন্তেও কেউ নেই। নীল এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজছে কোথাও কাউকে দেখতে পাচ্ছে না তখন নীল এর পাশে দাঁড়িয়ে নীল এর গালে আলতো করে অভ্র ওর ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দেয়।
নীল হঠাৎ গালে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ইতস্ততভাবে দাঁড়িয়ে রইল। অভ্র নীল এর পাশ থেকে সরে যায়। নীল পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে নড়াচড়াও করছে না। এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে লক্ষ্য করল তানজু বাড়ির বারান্দা থেকে দেখে হেঁটে নীল এর পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকবার নীল বলে ডাক দেয় কিন্তু নীল এর কোনো সাড়াশব্দ নেই। সেটা দেখে বিরক্ত হয়ে নীল এর সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত ধরে ঝাঁকালে বাস্তবে ফিরে আসে। চোখের সামনে তানজু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয় নীল। কারণ তানজু কখন আসলো ভাবতে ভাবতে গালে হাত রেখে পাশে তাকালে সেখানে অভ্রকে দেখতে পেলো না সাথে হাতেও ইট নেই হাতে কেনো আশে পাশে কোথাও ইট নেই এইসবের মানে কি? ভাবতে ভাবতেই বিড়বিড় করে নিজেকেই প্রশ্ন করল।
” তাহলে আমি কি সব ইমাজিন করছিলাম? ”
তানজু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নীলকে চিন্তিত দেখে তানজু প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

“কিরে কি বিড়বিড় করে বলছিস কি ইমাজিন করছিলি”
“কি কোই কিছু না তো! তুই এখানে এসে কাউকে দেখছিস?”
” তুই তো এখানে একাই ছিলি কাকে দেখবো এখানে?”
“কেউ-ই ছিল না তুই ভালো ভাবে দেখছিস?”
“কে থাকবে তুই কার কথা বলছিস? ”
“কারো কথা বলছি না তুই সর সামনে থেকে”

আর কিছু না বলে সামনে থেকে তানজুকে সরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো। কোনো ভাবেই মানতে রাজি নয় অভ্রকে নীল ইমাজিন করছিল গালে যে ঠোঁটের স্পর্শ পেয়েছে ভাবতেই গালে হাত দিয়ে আবারও থেমে গেলো। ওইদিকে আম গাছের আড়াল থেকে সবটা পর্যপেক্ষণ করছে গাছের সাথে হেলান দিয়ে নীল কে দেখে মুচকি হাসছে।
মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে ভাবতে রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। খোলা চুলগুলো দুই হাত ধরে খোঁপা বেধে নিলো। অন্য দিকে ঘুরে জামার চেইন খুলল। ঠিক তখনই পেছন থেকে ওই ডাক টা ভেসে আসলো!

” বউ ”

হঠাৎ বউ ডাক শুনে নীল এর কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। পেছনে কি অভ্র সত্যি আছে নাকি নীল ইমাজিন করছে ভেবেই শুকনো ঢোক গিলছে। পেছনে চেইন খোলা পিঠ দেখে ফেলছে অভ্র এটা ভেবেই পেছনে ঘুরে তাকালো সিঙ্গেল সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। সাদা শার্ট পরে আছে বুক পর্যন্ত শার্টের গোতাম খুলা সাদা ধবধবে বুকটা দেখা যাচ্ছে হাতের কনুই পর্যন্ত হাতা ভাজ করা লম্বা চুল গুলো কপালে এসে পরে আছে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। সব কিছু ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে নীল তালগোল পাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” আপনি এখানে কি করেন এলেন হাহহ? ”

সোফার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো নীল এর দিকে এক পা এগিয়ে বলল।

” আমার বউ টাকে একটু কাছ থেকে দেখতে এলাম একটু ভালোবাসতে এলাম ”

অভ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে নীল বলল।
” দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন একদম আমার কাছে আসবেন না। ”
অভ্র নীল এর সামনে এসে নীল এর কোমড়ে হাত রাখতে গেলে নীল এক পা পেছতে নিলো আর তখনই ঠাসসস করে পরে গেলো।

“ওরে বাবা গো মাজা টা ভেঙে গেলো রে সব আপনার জন্য হয়েছে ”

কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী কন্ঠে বলতে বলতে সামনের দিকে তাকালো। সামনে তাকিয়ে আরও অবাক হলো। কিভাবে সম্ভব? রুমের মধ্যে কোথাও অভ্র নেই তাহলে একটু আগে যে নীল অভ্রকে দেখল তাহলে কি এবারও নীল অভ্রকে ইমাজিন করছিল কিভাবে?

ভাবতে ভাবতেই রুমের বাহিরে ডাক পরল। নীল ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো জামা ঠিকঠাক করে দরজা খুলে দিলো। সবাই শপিং করতে শহরে যাবে আর নীলকে যেতে হবে তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিচে যেতে বলে চলে গেলো।

বাড়ির সবাই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক এক করে গাড়িতে উঠে বসছে নীল গাড়িতে উঠে বসতে যাবে তখনই পেছন থাকা কাজল নীল এর কাঁধে হাত রেখে বলল…

” আমরা গাড়িতে যাবো না ” (কাজল)
” গাড়িতে যাবো না তো কি হেঁটে যাবো? ” (নীল)
” এত গুলো মানুষ এক গাড়িতে জায়গা হবে না ” (তানজু)
” কেন আমাদের গাড়ির কি হয়েছে আমরা আমাদের গাড়িতে যেতে পারি ” (তানিয়া)
” তুই চুপ থাক এত কথা বলিস কেন? ” (তানজু)
” আমাদের গাড়ির টায়ারপানচার হইছে ” (কাজল)
” কবে হয়েছে আগে কেন বলিসনি এখন আমরা কিভাবে যাবো? “. (নীল)

নীল এর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হাত ধরে টেনে পেছনে ঘুরালো আর বলল।

” আমরা ওই টাতে করে যাবো। ”
নীল সামনে দেখে কাজলের দিকে তাকিয়ে কপাল গুজ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

” আমি কিছুতেই যাবো না। আমি গাড়িতেই যাবো৷ ‘
বলে পাশে তাকিয়ে দেখল গাড়ি নেই না মানে গাড়ি চলে গেছে এখন কি হবে। নীল মুখ পেচার মতো বানিয়ে বাকিদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এক এক করে তিনজনে চলে গেলে নীল দুই হাত ভাজ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে আর তখনই নীলকে ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে তুলে নিলো।

বাইকের পেছনে বসিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো।

কিছুক্ষণ আগে, চারজন চারটা বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্রকে দেখেই নীল এর মেজাজ গরম হলো আর জানা কথাই ওরা তিন জন ওই তিনজনের বাইকেই যাবে আর নীলকে যেতে হবে এই বজ্জাত টার সাথে ভেবেই কান্না পাচ্ছে তাই যেতে রাজি নয়। নীলকে রেখে ওরা তিনজন গিয়ে বাইকে উঠে গেলো বাইক দিয়ে চলেও গেলো নীলের চোখের সামনে শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না ভাবতে ভাবতে অভ্র পেছন থেকে এসে নীলকে কোলে তুলে নেয় নীল কিছু বলতেও পারলো না বাইকে বসিয়ে
দিলো। নীল যে কোনো সময় বাইক থেকে পরে যেতে পারে। শুধু এমনি বসে আছে অভ্র কয়েকবার ধরতে বলেছে ওকে কিন্তু নীল ধরেনি সেজে একটু স্পিড বাড়ালো কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ ব্রেক করল। নীল গিয়ে অভ্রর পিঠের উপর পরল।
অভ্রর নীল এর হাত ধরে বলল।

” এভাবে ধরে বসো বউ আর নয়তে পরে যাবা পরে সারাজীবন তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে আমাকে। ”

” আমি আপনার বউ নই বুঝেছেন ”

” তুমি আমার বউ তুমি আমার বউ তুমি আমারই বউ ”
” ছেঁচড়া পোলা ”
” সে তুমি যাই বলো না কেনো আমি কিছু মনে করবো না কিন্তু সত্যি এটাই তুমি আমার বউ ”

“আমি আপনাকে” (রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বলল আর কিছু বলার আগেই অভ্র নীলকে থামিয়ে দিয়ে বলল)

” কি আদর করবা নাকি? ”

” ইশশ কত সখ? ”
” সখ তো অনেক বউ শুধু বিয়ের জন্য তুমি রাজি হয়ে যাও না প্লিজ তন্ময়ের বিয়ে দিন তাহলে আমরাও বিয়ে করে নেবো। ”
” ওই আপনি চুপ করবেন। ”
একটু ধমক দিয়ে বলল। নীল এর ধমক শুনে অভ্র চুপ হয়ে গেলো। নিশ্চুপ হয়ে বাইক চালাচ্ছে।

শপিং মলের সামনে এসে একটা গাড়ি ও চারটা বাইক থামলো সবাই এক সাথে মলের ভেতরে প্রবেশ করল তার অভ্র নীক এর সাথে একসাথে।

চলবে?

#অভ্র_নীল
#সিজন_০২
#পর্ব_১৫
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখিকা)
________
— যেভাবেই হোক আমার ” আদ্রিক রায় চৌধুরীকে ” চাই। ডু ইউ গেট দ্যাট। যে কোনো কিছুর মূল্যেই আমার ওকে চাই হয়তো জীবিত নয়তো মৃত। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার পায়ের সামনে ওকে এনে ফেলবে নয়তো তোমাদের কে আমার সম্মুখিন হতে হবে। ২দিন ১৫ ঘন্টা হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত একটা সামান্য লোককে তোমরা কেউ খুঁজে পাচ্ছো না। লাস্ট বার ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমি যদি ওখানে আসি আমার হাত থেকে তোমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না বুঝতে পেরেছো তোমরা?

প্রচন্ড রাগ ও ক্ষোভ নিয়ে চেচিয়ে বলল কথা গুলো ফোনের উপর পাশ থেকে ধমক শুনে কেঁপে উঠল কান থেকে ফোন নামিয়ে টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলল। পেছন থেকে কেউ একজন এসে কাঁধের উপর হাত রেখে বলল।

” রিলাক্স ব্রো এত প্যাড়া নিচ্ছিস কেন দেখিস ঠিক খুঁজে পেয়ে যাবো। ”
” পেয়ে যাবো পেয়ে যাবো ঠিক কতদিন পর পাবো বলতে পারিস? আজ ২দিন ধরে একই গান শুনছি খুঁজছি কোথাও পাচ্ছি না। সামান্য একজন ব্লাকমাইলার কে খুঁজে পাচ্ছে না। আমাকে ব্লাকমেইল করছে ওকে একবার খুঁজে পাই ওর কলিজা ছিড়ে বের করে আনবো। ”

কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজে দু’জনে ভ্রু উঁচু করে পেছনে দরজার দিকে তাকালো। দরজা ঢেলে ভেতরে প্রবেশ করল ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল।
” আদ্রিক রায় চৌধুরী’র খোঁজ পেয়ে গেছি আর সে এখন কোথায় লুকিয়ে আছে সেটার ও ইনফরমেশন পেয়েছি। কথাগুলো শুনে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন লোকেরই মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠল। এক হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বাঁকা হাসি রেখে আদেশের স্বরে বলল।
” গাড়ি বের কর”

সামনে থাকা লোক একবার মাথা উপরে ও নিচে ঝাকালো। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাহিরে গিয়ে গাড়ি বের করে বাড়ির সামনে পার্ক করে হন বাজাচ্ছে। রুমের মধ্যে থাকা প্রথম লোক এক রুমের থেকে হেঁটে অন্য রুমে ঢুকল আলমারির দরজা টেনে খুলে ভেতরের এক ড্রয়ার থেকে একটা পিস্তল বের করল সাথে গুলি বের করল। পিস্তলের মধ্যে গুলি গুলো সেট করে নিলো। হাত পেছনে নিয়ে পিস্তল টা কোমড়ে শার্টের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো। সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

বাহিরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে গিয়ে দরজা খুলে সামনে ফ্রন্ট সিটে বসল। পেছনের সিটে আরও একজন উঠে বসল। ড্রাইবিং সিটে থাকা ব্যক্তি গাড়ি স্টার্ট দিলো তীব্র গতিতে গাড়ি চলছে।

দুই গ্রাম পেরিয়ে একটা ভাঙা ও পুরাতন বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো তিনজনে এক সাথে গাড়ি থেকে নামলো। গাড়ির দরজার সামনে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ সময় ধরে বাড়িটায় চোখ বুলালো। এক ভ্রু কুঁচকে অপর জনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” তুই Sure আদ্রিক এই বাড়িতেই আছে? ” (তৃতীয় ব্যক্তি)
” আরে বাবা আমি সিউর আমার একজন গুপ্ত চোর আদ্রিক কে এই বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে ” (দ্বিতীয় ব্যক্তি)
” তোরা কি এখন এখানে দাঁড়িয়ে বকবক করবি নাকি ভেতরে যাবি ভেতরে গেলেই তো সবটা ক্লিয়ার হবে? ” (প্রথম ব্যক্তি)

” যদি এই ভাঙা বাড়ির মধ্যে আদ্রিক না থাকে? ” (তৃতীয় লোক)
” তাহলে আমাদের এত রাতে এখানে যে নিয়ে আসছে উইথ ভুল ইনফরমেশন থাকে এখানে মেরে আমরা চলে যাবো ” (প্রথম লোক)
” মানে কি তুই আমাকে মেরে তোরা দু’জন চলে যাবি জোকস মারছিস? ” (তৃতীয় লোক)

” you know very well. I Don’t like any jokes in serious time.! ” (প্রথম ব্যক্তি)

” মানে তুই সত্যি আমাকে?”
” তোর মনের মধ্যে সন্দেহ আছে এখানে আদ্রিক নাও থাকতে পারে তাইতো? একটা কথা সম্পূর্ণ না জেনে না গেটে দেখে হুট করে আমার কাছে গিয়ে বলে দিলি যে এখানে আদ্রিক লুকিয়ে আছে। আমি এখানে আদ্রিক কে না পেলে তোকে সহ তোর গুপ্ত চোর কে মেরে এই বাড়িতে ফেলে যাবো। ভুলভাল ইনফরমেশন কালেক্ট করার জন্য এখন চুপচাপ বাড়ির ভেতরে চল। টু শব্দ দিও জেনো না হয়।”

ভাঙা বাড়ি তাই ভেতরে ঢুকতে তেমন অসুবিধা হয়নি। কিচেনের ওইদিকে জানালা অনেক টা ভাঙা ছিলো। বাড়িটা প্রায় গ্রাম থেকে অনেক মাইল দূরে এদিকে শুধু জঙ্গল আর খোলা মাঠ এদিকে সচরাচর কোনো মানুষও আসে না! এমন এক জায়গায় এই ভাঙা বাড়ি খুবই আশ্চর্য জনক। জানালা দিয়ে ভেতের ঢুকে তিনজনে থ রয়ে গেলো। বাড়ি টা বাহির থেকে দেখে ভাঙা ও পুরাতন বাড়ি দেখা গেলেও ভেতর থেকে পুরো টা আলাদা।

সব কিছু এত সুন্দর যে চোখ সরানোই যাচ্ছে না। বাড়ির ভেতরে সাদা রং করা দামী দামী আসবাবপত্র দেখে মনেই হচ্ছে না এটা ভাঙা বাড়ি। এবার তিনজনে একটু বুক ফুলালো প্রথম ব্যক্তি আড়চেখে দু’জনের দিকে তাকালো এক ভ্রু উঁচু করে অপর ভ্রু কুঁচকে চোখের পলক ফেলে ইশারা করল। সাথে সাথে দু’জনে হাতে পিস্তল উঠিয়ে নিলো। ধীর পায়ে আস্তে আস্তে বাড়ির ভেতরের দিকে ঢুকল। কিচেন থেকে হল রুমে চলে আসলো। এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে সন্দেহ জনক কিছুই দেখতে পেলো না। প্রথম লোক চোখ দিয়ে সিঁড়ির দিকে ইশারা করল। বাকি দু’জন উনার পেছন পেছন চলতে লাগল।

একটা রুমের সামনে আসতেই রুমের মধ্যে থেকে শব্দ আসতে শুরু হলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকালো মুখে লেগে আছে বাঁকা হাসি যে হাসি মোটেও সুবিধার নয় খুব ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে। পেছনে ঘুরে বাকি দু’জন কে দরজার দিকে ইশারা করতেই দু’জন ঝাপিয়ে পরল দরজার উপর। দরজা ভেঙে গেলো।
বিছানার উপর নিজের শারীরিক চাহিদা মিটাচ্ছিলেন মিস্টার আদ্রিক রায় চৌধুরী হঠাৎ বিকট শব্দ পেছনে ঘুরে তাকালেন। মেয়েটা ভয় পেয়ে গেলো। এই জায়গায় এই সময় কোনো মানুষের আসার কথা নয়। আদ্রিক মেয়েটার উপর থেকে সরে নিজে লুঙ্গি পরিধান করেন। মেয়েটা বিছানার চাদর টেনে নিয়ে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেচিয়ে বলে উঠে আদ্রিক. ” কে ওখানে এখানে আসার সাহস হয় কি করে? ”

রুমের বাহিরে লাইট অফ রুমের মধ্যে লাইট জ্বলছে তাই ভেতরে সবটা ক্লিয়ার দেখা গেলেও দরজার সামনে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। আদ্রিক আবার চেচিয়ে উঠে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” আমি বলছি কে ওখানে?..”

আর কিছু বলার আগেই একজন রুমে ঢুকল। সাথে আরও একজন রুমের মধ্যে ঢুকল। এদের দু’জনকে দেখে হালকা করে একটা শুকনো ঢোক গিলল। পলকহীন ভাবে একবার একে আরেকবার ওকে দু-জনের দিকে তাকাচ্ছে। পাশ থেকে মেয়েটা নেকা কন্ঠে বলে উঠল…

” বেবি এরা কারা? তোমার বন্ধু নাকি হুহ শুনো যদি সবাই মিলে হয় তাহলে কিন্তু পেমেন্ট বেশি দিতে হবে। ”
মেয়েটার কথা শুনে মেয়েটার দিকে অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধমকের স্বুরে বলল।

” একদম চুপ বেশি কথা বললে দেবো উল্টো হাতে এক নড়… ”

আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে থেকে কারো সিটি বাজানোর শব্দ ভেসে আসছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়েই এক ঢোক গিলে ধীরে ধীরে মাথা ঘুরালো দরজার দিকে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক। এক পায়ের উপর অপর পা তুলে দু’টো হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ঠোঁট দিয়ে সিটি বাজাচ্ছে।

আদ্রিক তার দিকে তাকিয়ে আছে কপাল ভেয়ে ঘাম ঝড়ছে হাত পা কাঁপা শুরু করছে। দুই হাত প্যান্টের ভেতরে ঢুকিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে রুমের মধ্যে প্রবেশ করল। হেঁটে গিয়ে সিঙ্গেল সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসল। কোমড় থেকে পিস্তল বের করে পিস্তলের মাথা কপালের সাথে ঢেকিয়ে বলল।

” খুব মজাই আছিস দেখছি! লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই আমরা আমরাই তো। খুব ভালো নির্জন জায়গা খুঁজেছিস লুকিয়ে থাকার জন্য তোকে এখানে মেরে ফেলে গেলে কেউ জানতেও পারবে না।”

লোকটার বলা কথাগুলো শুনে আদ্রিক প্রচন্ড বিচলিত হয়ে পরে পুরো শরীর ঘামতে শুরু করেছে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না চোখের সামনে নিজের কাল বসে রয়েছে দেখতে পাচ্ছে। হাত দিয়ে কপাল ভেয়ে পরা পানি মুছে নিলো। তারপর দৌঁড়ে গিয়ে লোকটার পা ধরে মিনতি করতে লাগল।

” আমাকে প্লিজ কিছু করবেন না আমাকে যেতে দিন প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন ভুল হয়ে গেছে আমার মস্ত বড়ো ভুল হয়ে গেছে। ”

আদ্রিকের চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরল। মাথা তুলে নিজের দিকে তাক করে একটু ঝুঁকে আদ্রিকের উদ্দেশ্যে বলল..

” এই তোর সাহস? এই সাহস নিয়ে আমার সাথে পাঙ্গা নিতে নামছিলি। আফরান চৌধুরীর সাথে মত্ত খেলায় নামার আগে ভাবা উচিত ছিলো তোর পরিনতি কি হতে পারে। একটুও ভাবিসনি তোর বুকে পাটা আছে বলতে হয়। কি ভেবেছিলি তোকে আমি খুঁজে বের করতে পারবো না। আমি “আফরান চৌধুরী” আমাকে তুই ব্লাকমেইল করছিলি। ”

রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো। লোকটার হাতের পিস্তল টা লোকটার গাল চেপে ধরে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো আর দাঁতে দাঁত চেপে বলতে শুরু করল।

” ইচ্ছে করছে পিস্তলের সব গুলো গুলি এখনই তোর ভেতরে চালিয়ে দেই। ”

আদ্রিক কিছু বলতে পারছে না শুধু মাথা দুলাচ্ছে। ওর এমন ভাবে মাথা নাড়ানো দেখে লোকটা ভ্রু কুঁচকালো পিস্তল মুখ থেকে বের করে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

“কিছু বলবি? ”

আদ্রিক মাথা নাড়ালো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। বুকের উপর হাত রেখে সামনে বসে থাকা লোকটার দিকে তাকালো সাথে দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন কেউ দেখল। সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ কন্ঠে বলল।

” পানি ”

লোকটা তার ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে আঁড়চোখে তাকালো ভ্রু কুঁচকে ইশারা করল রুমের উল্টে সাইডে টেবিলের পানির বোতলের দিকে।
দু’বার মাথা ঝাঁকিয়ে হেঁটে গেলো বোতলটা হাতে নিয়ে লোকটার হাতে দিলো সে পানির বোতলের মুখ খুলে বোতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আদ্রিকের মুখের উপর সবটা পানি ঢেলে দিলো। বোতলটা সাইডে ফেলে দিলো। লোকটা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো সাথে আদ্রিকের কলার চেপে ধরে দাঁড় করালো দাঁতে দাঁত চেপে কন্ঠ কঠোর করে বলল।

” যদি বাঁচতে চাস তো তোর কাছে একটাই পথ আছে। যেইসব ভিডিও গুলো তুই করেছিলি ওই সব আমার সামনে ডিলিট করবি। এখনই আমি যা বলবো তাই করবি? ”

লোকটা কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তরে বলল।
“হ্যাঁ আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। এখনই এনে দিচ্ছি শুধু আমাকে কিছু করবেন না?”

” এত সহজে মেনে নিলি কিন্তু ওইদিন তো কলে অনেক হাই লেভেলের ডায়লগ মারছিলি। আমার এই করবি সেই করবি আমি কে না জেনেই এত দুঃসাহস দেখানোর ভুল করেছিলি!”

” আমাকে মাফ করে দেন। আমি চিনতে পারিনি আপনাকে ভুল হয়ে গেছে কিছু টাকার লোভে পরে আমি ওমন টা করেছিলাম। আমার জীবন ভিক্ষা দেন। ”
আদ্রিকের শার্টের কলার ছাড়তেই রুমের আলমারি থেকে একটা ল্যাপটপ এনে দিলো। দ্বিতীয় ব্যক্তি ল্যাপটপ হাতে নিয়ে নিলো সে সোফার উপর বসে ল্যাপটপ ঘেঁটে সব ভিডিও ডিলিট করে দিলো। লোকটার কানে কানে বলল। ” সব ক্লিয়ার” লোকটা হাল্কা ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে হাসি দিলো। বিছানার উপর বসে থাকা মহিলার উপর তাকিয়ে এক নজর দেখে চোখ সরিয়ে নিলো আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে বলল।
” তুই বাঁচতে চাইলে তোকে ওকে মারতে হবে। ”
মেয়েটার দিকে ইশারা করল। মেয়েটা লোকটার দিকে তাকিয়ে ভয়ে মিশ্রিত কন্ঠে বলল।

” আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে আমাকে কেনো মারবেন আমি একজন মেয়ে? ”

” মেয়ে বলে পার পেয়ে যাবেন ভাববেন না। আমি নারীদের সম্মান করি কিন্তু দেহব্যবসা করা নারীদের আমি সম্মান করি না।তাই আমি আপনাকে ছাড় দিতে পারবো না। ”
কথাটা বলে আদ্রিক এর দিকে পিস্তল বাড়িয়ে দিলো। নিজে বাঁচার জন্য মহিলার উপর গুলি চালাতে দুবার ভাবেনি আদ্রিক মেয়েটার নিস্তেজ দেহ বিছানার উপর পরে রয় মুহুর্তের মধ্যে দেহ থেকে আত্মা টা পলায়ন করে। বিছানার সাদা চাদর রক্তে লাল হয়ে গেছে।

মেয়েটাকে মেরে লোকটার দিকে ঘুরে তাকালো আর বলল।

” এবার তো আমাকে যেতে দিন? ”

প্রতিউত্তরে লোকটা আবারও ঠোঁট বাঁকা করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। আদ্রিক বোকার মতে লোকটার হাসি দেখছে। কি মিষ্টি একখানা মুখ চিরল ঠোঁটের হাসি দেখে যে কেউ এই হাসির প্রেমে পরে যাবে। চোখ দু’টো তে নেশা ভরা যে তাকাবে সে হারিয়ে যাবে এই নেশা ভরা চোখে আদ্রিক মনে মনে ভাবছে এত সুদর্শন একটা পুরুষ আন্ডারগ্রাউন্ডের ডন কিভাবে হতে পারে। একে দেখতে তো পুরো রাজকুমার এর মতো লাগে সে কি না একজন আন্ডারগ্রাউন্ডের ডন। ভাবতে ভাবতে লোকটা মানে আফরান ওর হাসি থামিয়ে দিলো। চোখ দু’টো ছোটো-ছোটো করে নিলো। আদ্রিক যে হাতে পিস্তল ধরে ছিলো। সে হাতের উপর হাত রেখে হিচকা টান দিলো। আদ্রিকের হাত নিয়ে আদ্রিকের কপালে ঠেকিয়ে রিয়ালবারে চাপ দিলো। এক গুলি আদ্রিকের মস্তিষ্ক ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো।

রাত বাজে সাড়ে ১২টা এই নির্জন জায়গায় তিনজন লোক সাথে দুইটা ডেড বডি। আশে পাশের থেকে কুকুর বেড়াল শিয়াল সহ কিছু পশুর ডাকাডাকি শোনা যাচ্ছে জোনাকিপোকা তাদের সোনালি আলো ছড়িয়ে দিয়ে জিজি করে ডাকছে। তিনজনে মিলে বাড়ির পেছনে বডি দুটো কে নিয়ে আসলো। মাটি খুঁড়ে দু’জন কে একসাথে এক গোর্থে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দিলো সাথে রুম টাকে সম্পূর্ণ গুছিয়ে দিলো কোথাও রক্তের ছিটেফোঁটাও কেউ পাবে না। কেউ দেখে বুঝবেও না এখানে কেউ ছিলো। তিনজনে হেটে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো। দ্বিতীয় লোকটা বলল।

” বল আমার গুপ্তচোর তাহলে ঠিক ইনফরমেশন -ই দিয়েছিল। ”
” ভুল ইনফরমেশন হলে ওই দু’টো বডির জায়গায় তুই থাকতি এখন চুপচাপ চল এখান থেকে ”
“গাড়ি চালাবে কে?”
“প্রতিবারের মতো আমিই চালাবো!”
…….…

সকালের ঘটনা।

শপিং মলের সামনে এসে গাড়ি থামলো৷ গাড়ির পেছন পেছন তিনটা বাইক ও এসে ব্রেক করল চতুর্থ বাইক এখনো এসে পৌঁছায়নি। রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে চতুর্থ বাইকের আসার অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চতুর্থ বাইক এসে থামে। সবাই এক সাথে মলের ভেতরে প্রবেশ করে। পুরো মলে ঘুরছে বিয়ের মার্কেটিং বলে কথা কোনো কিছু বাদ দেওয়া যাবে না। সবার জন্য মার্কেট করতে করতে একটা গোল্ডেন গাউন নীল এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিলো খুব পছন্দ হলো নীলের। সেটা দেখতে অনেক গরজিয়াছ ছিলো। নীলের অনেক পছন্দ হলো ও ওটা নিবে বলে ঠিক করে। ড্রেস টা হাতে নিয়ে চেঞ্জিং রুমের দিকে রওনা দিলো। ড্রেসটার ফিটিংস চেক করার জন্য রুমের মধ্যে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। জামাটা হাতে নিয়ে দেখছে এমন সময় নীল অনুভব করল। কেউ ওর ঘাড়ে তার ঠোঁট স্পর্শ করিয়েছে। কেউ একজন তার ঠোঁট জোড়ার আলতো পরশ একে দিয়েছে। হুট করে জামাটা নিয়ে পেছনে ঘুরল৷ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা কে দেখে থতমত খেয়ে গেলো। চোখ ছোটছোট করে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” আপনি এখানে কি করছেন? ”
একটু রাগী কন্ঠে তীব্র দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে বলল আবার বলল।
” লজ্জা করে না একটা মেয়েকে ফলো করে করতে চেঞ্জিং রুমে ঢুকে পরেছেন। লজ্জা সরমের মাথা খেয়েছেন আপনি এত বেহায়া কেন? চিৎকার করবো আমি এখন সবাই এসে দেখুক আপনার চরিত্র কতটা খারাপ ”

এতক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে নীলের সবগুলো কথা মুখে হাসি রেখেই শুনল শেষের কথার পর নীলের পেছনে আয়নার দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল।

” ওই তো তেলাপোকা ”

পেছনে ঘুরে খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে দিলো এক চিৎকার। চিৎকার শুনে বাহিরে কিছু লোকজন জড়ো হল আর ডাকাডাকি করতে শুরু করল। ” কি হয়েছে ভেতরে সব ঠিক আছে কি না দরজা খোল। ” এইসব বলছিল তাদের ডাক শুনে নীল পেছনে ঘুরলো। অবাক করা বিষয় পেছনে কেউই নেই । অত শত ভাবার সময় নেই দরজা খুলে দিতে বেশ কিছু লোকজন রুমের মধ্যে প্রবেশ করল। আর জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে। এই রুমের মধ্যে আরও একজন ছিলো যে এত ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পরল। নীল এর কথা অনুযায়ী রুমের মধ্যে কেউ একজন আছে। দু’জন মহিলা খুঁজে দেখল ভেতরে কাউকে পেলো না। নীল ভেবে নিলো আবারও অভ্রকে ইমাজিন করছিল। ভিড়ের ভেতরে থেকে বেরিয়ে আসল আর প্রশ্ন ছুড়ল।

” তুই চিৎকার দিয়ে ছিলি কেনো” (তানিয়া)
” আমরা তো তোর চিৎকার শুনেই ছুটে এলাম ভয় পেয়ে গেছিলাম কি না কি হলো ” (তানজু)
” ওই অভ…”
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো। হালকা করে হাসার চেষ্টা করে বলল।
“কি অভ? ” (তানিয়া)

” কিছু না ওই আমি ভেবেছিলাম তেলাপোকা তাই ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে ফেলছি। ”
” আনতাজি না দেখে শুনে হুট করে চিৎকার দিছিস। এদিকে ভয় পাইয়ে দিছিস আমাদের। ” ( কাজল)

” পাগল মেয়ে এত বড় হয়ে গেছিস আর তেলাপোকা দেখে ভয় পাওয়া ছাড়িস নি। ” (কাজলের মা)

মাথা নিচু করে শীতল কণ্ঠে বলল।
” সরি আন্টি ”

সবাই বের হয়ে গেলো। নীল আবারও সব জায়গা খুঁজে দেখল কোথাও অভ্র নেই এইবার নীল সিউর হলো। সব জায়গায় অভ্রকে ইমাজিন করছে।
চেঞ্জিং রুম থেকে বের হয়ে সবার কাছে এসে দাঁড়ালো আর সবার উদ্দেশ্যে বলল। ” এই ড্রেস টা আমি নিবো। ” সবাই প্রতিউত্তরে মুচকি হাসলো।
সবার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ পেছনে ঘুরে তাকালো অভ্র, আকাশ, শুভ তন্ময়ের সামনে একটা শেরওয়ানী ধরে দাড়িয়ে আছে আর তিনজনে খুব হাসছে। নীল অভ্রর মুখে হাসি দেখছে। নিজের অজান্তেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠে।

সমস্ত জিনিসপত্র কিনতে কিনতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
শপিংমলে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পরেছে ছেলে চারজন। আজ তারা হারে হারে বুঝতে পেরেছে মহিলা মানুষ এর ধৈর্য্য কত? সেই সকালে এসেছে আর এখন পর্যন্ত ঘুরছে তবুও তাদের মুখে ক্লান্ত শব্দ টা শুনতে পেলো না তাদের এনার্জি দেখে মনে হচ্ছে তারা সারা রাত শপিং করলেও ক্লান্ত হবে না।
ঠিক তখনই নীল হঠাৎ মাটিতে পরে গেলো। অভ্র পেছন থেকে নীলকে পাজাকোলে তুলে নেয়।
সবার মার্কেটিং করাও শেষ। তাই অভ্র নীলকে নিয়ে বাহিরে চলে আসে। গাড়িতে বসিয়ে দেয়। পাশেই কাজল বসেছে। নীল এর মাথা কাজলের কাঁধের উপর নিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে। তখন গাড়ির উইন্ড-এর দিকে হালকা ঝুলে অভ্র বলে ওঠে….

” কাজল আমার নী….

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here