#মেঘমুখ,অষ্টম পর্ব
#লেখনীতে সবুজ আহম্মদ মুরসালিন
ঘড়ির দিকে তাকালাম। সময় শেষ। নীলা মেসেজে বলেছিলো, ৩০ মিনিটের মধ্যে নীলাদের বাসায় না আসলে, নীলা ছাঁদ থেকে লাফ দিবে। মেসেজ পেয়ে অন্য কিছু না ভেবে বাসা থেকে বের হয়ে দৌঁড়াচ্ছি৷ এতো রাতে বাস কিংবা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করা মানে সময় নষ্ট।
নীলা কি ছাঁদ থেকে লাফ দিয়েছে? মনে মনে প্রার্থনা করলাম। নীলা আমাকে আর দশ মিনিট সময় দেও। আমার আসতে মাত্র দশ মিনিট লাগবে। প্লিজ নীলা, পাগলামী করো না। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি একা কি করে বাঁচবো।
পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে৷ প্যান্টের সাথে রক্ত জমাট বেঁধে ব্যথা ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। হাপিয়ে গিয়েছি, দৌঁড়ানোর শক্তি নেই। তবুও কিছু করার নেই। নীলাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে আমাকে এটুকু কষ্ট করতে হবে।
নীলাদের বাসার নিচে পৌঁছে সাথে সাথে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে চলে এলাম। দশ তালা বেয়ে উঠতে উঠতে মনে হয়েছে পায়ের হাড্ডি ভেঙে যাচ্ছে৷ ছাঁদে উঠে এদিক ওদিক নীলাকে খুঁজতে লাগলাম। ছাঁদের এ মাথা থেকে ও মাথা কোথাও নীলা নেই। আমি ছাঁদ থেকে নিচে তাকাতে তাকাতে পুরো জায়গাটা ভাল করে দেখলাম। কোথাও নীলা নেই। মাথা সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে গেলো। বুক আষ্টেপৃষ্টে, গলা শুকিয়ে অবশেষে চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো নিচে৷ আমি ছাঁদে বসে রইলাম।
আমি ব্যর্থ। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যর্থ। আমি কিছু ভাবতে পারছি না। চোখ দিয়ে অনবরত বুলেট-বৃষ্টি হচ্ছে। কি হবে? এখন কি হবে? আমি এই কষ্ট একটা জনম বুকে চেপে কি করে বাঁচবো।
হঠাৎ ছাঁদের গেট দিয়ে কারো প্রবেশ করার শব্দ পেলাম। কেউ একজন ছাঁদে আসছে। আমি কোথায় যাবো? কি করবো?
পরমুহূর্তেই নীলাকে ছাঁদে দেখে দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে ধরলাম। জরিয়ে ধরার সাথে খুশিতে কান্না পেয়ে গেলো। কান্না চেপে রাখতে না পেরে কেঁদে দিলাম। নীলাকে জড়িয়ে ধরে কাদলাম। কতক্ষণ জানিনা। তবে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি মানুষ কেউ হলে সেটা আমি। এই আমি। শুধুই আমি। তবে আমি কি জানতাম? জানতান না, পরমুহূর্তেই নীলাকে দেখে সবচেয়ে অখুশি মানুষটা আমি হবো।
নীলা কিছুক্ষণ পর রেগে বলল, ‘প্লিজ অভ্র, এবার শান্ত হও। এভাবে ছাঁদের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে থেকো না। বাসায় অনেক লোকজন। হঠাৎ কেউ ছাঁদে চলে আসলে বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে।’
আমার বুক থেকে নীলাকে মুক্ত করে একটু দূরে সরে গেলাম। নীলাকে ভাল করে দেখে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো। আমি যেনো তলিয়ে যাচ্ছি। মাটির গহবরে।
নীলাকে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি এই পোশাকে?’
নীলা উত্তর দিলো, ‘আজকে আমার বিয়ে।’
আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার স্বপ্নে গড়া দুনিয়া ধিরে ধিরে ধ্বসে পড়ছে, ভেঙে যাচ্ছে। বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নীলার বিয়ে আজকে!
নীলা বলল, ‘প্লিজ কোনো পাগলামি করবে না। প্লিজ।’
নিস্তব্ধতায় কেটে গেলো অনেকটা সময়। আমি নীলাকে কিছুই বললাম না। হাটুর ব্যথার তীব্রতায় দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে বসে পড়লাম।
কোনো রকম উঠে দাঁড়িয়ে খুড়াতে খুড়াতে হাটা শুরু করলাম। নীলা সেখানে ছিলো সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।
ছাঁদ থেকে নামার মুহুর্তে, নীলা দৌড়ে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। খুব জোরে। আমি ফিরে তাকালাম না। আমি চাইনি নীলাকে আমার চোখের জল দেখাতে। নীলা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রেগে বললাম, ‘কি করছো? কেউ দেখে ফেলবে। তোমার বিয়ে ভেঙে যাবে।’
নীলা উত্তর দিলো না। জড়িয়ে ধরে থাকলো। নীলা কি কান্না করছে? অবশেষে ঘুরে তাকালাম। আমার মেঘমুখ ভর্তি বৃষ্টি। নীলার চোখ থেকে পানি মুঁছে দিলাম। নীলা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।’
আমি হতবাক। নীলা পাগলামী করছে কেনো। যা হবার হয়ে গেছে। এখন কি কিছু করার সুযোগ আছে?
নীলা বলল, ‘তোমার পায়ে কি হয়েছে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছো। দেখি কি হয়েছে।’
নীলা হাটু গেড়ে বসে পা দেখে চমকে গেলো। বলল,
‘এতো খানিকটা কেটেছে। কি ভাবে? আর তুমি খালি পায়ে কেনো? পেয়ের কি অবস্থা। রক্ত বের হচ্ছে।’
নীলার কাছে অনেক গুলো প্রশ্ন। তবে এখন এই মুহুর্তে এই প্রশ্নগুলো অর্থহীন। তাই বললাম, ‘বাদ দেও। যা হবার হয়ে গেছে। এখন এসব অর্থহীন।’
নীলা রেগে গিয়ে বলল, ‘কোনো কিছুই অর্থহীন না।
বলো কি হয়েছে?’
আমি বললাম, – প্রশ্নগুলোর উত্তর শুনতে গেলে তোমার বিয়ের সময় পার হয়ে যাবে। আর আমি বলতে চাই না৷ তুমি চলে যাও। বাসায় যাও। তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
আমি যাওয়ার জন্য ঘুরে যেতেই নীলা আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলো। খুব শক্ত করে। আমার খুব কাছে এসে কানে কানে আস্তেধীরে বলল,
‘তুমি চলে গেলে বিয়ে হবে কার সাথে?’
চলবে………..