#মেঘমুখ,নবম এবং শেষ পর্ব
#লেখনীতে সবুজ আহম্মদ মুরসালিন
“আজ আমার বিয়ে?
তুমি চলে গেলে বিয়ে হবে কার সাথে?”
নীলার বলা কথাগুলোর অর্থ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘন্টাখানেক আগে মেসেজ দিয়ে বলেছে, ৩০ মিনিটের মধ্যে আমাদের ছাঁদে না আসলে, আমি ছাঁদ থেকে লাফ দিবো। আমি ৩০ মিনিটের মত দৌড়ে নীলাদের ছাঁদে এসে কাউকে দেখিনি। কিছুক্ষণ পর নীলা বিয়ের পোশাকে ছাঁদে এসে বললো, আজকে আমার বিয়ে। আবার, আমি চলে যাবো এই মুহুর্তে বলল, তুমি চলে গেলে বিয়ে হবে কার সাথে? নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। নীলা এক সময় এক এক রকম কথা কেনো বলছে? নীলার উপর এই প্রথম এতোটা রাগ হচ্ছে। রেগে নীলাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘কি হচ্ছে এসব? আমাকে একটু ক্লিয়ার করে বলবে? আমি তোমার কথা কিছুই বুঝছি না। সত্যি নিজেকে এখন পাগল পাগল লাগছে। অসহায় লাগছে।’
নীলার মুখে সেই চেনা পরিচিত হাসি দেখে এখন খুব ভাল লাগছে। এই মানুষটা অদ্ভুত। মেঘমুখের হাসিটা অদ্ভুত। নীলাকে বিয়ের শাড়িতে দারুন লাগছে। বাকরুদ্ধ সুন্দর! সাথে, ভয়ংকর সুন্দর!
নীলা হাসি দিয়ে বলল, ‘আজকে তোমার সাথেই আমার বিয়ে। তুমি চলে গেলে বিয়ে হবে কি ভাবে?’
আমি অবাক-খুশি হয়ে বললাম, ‘আমার সাথে?’
নীলা বলতে লাগলো, ‘তোমার সাথে ওইদিন রাতে ঝগড়া করে ফোন কেটে দেওয়ার পর, কষ্টে আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি৷ অনেক কান্না করেছি। তোমার প্রতিটি মেসেজের উত্তর দিতে ইচ্ছা হয়েছে। তোমার ফোন কল রাগে ইচ্ছা করে ধরিনি। তবে, না ধরতে পেরে তোমার থেকে আমার বেশি কষ্ট হয়েছে। ভোর রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তুমি যখন বাসায় থাকবে না তখন তোমার বাসায় গিয়ে বাবা মার সাথে আমি নিজে কথা বলবো। পরের দু’দিন অনেক ভেবেছি কি করবো৷ ভেবেছি, বাসায় যাবার পর কি ভবে কি বলবো। তোমার মা সবটা জানতো। তাই তোমার মাকে নিয়ে কোনো ভয় ছিলো না। ভয় ছিলো বাবাকে নিয়ে, বাবা কিভানে রিয়েক্ট করে এটা নিয়ে অনেক ভয়ে ছিলাম। তবুও আমাকে কাজটা করতে হবে। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে মরে গেলেও বিয়ে করতে পারবো না। অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।’
‘তৃতীয় দিন বিকালে তোমার বাসায় যাই। তুমি তখন বাসায় ছিলে না। আমি জানতাম তুমি এই মুহুর্তে বাসায় থাকবে না। আর আমি চেয়েছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো। তাই আগে থেকে কিছু জানাইনি।’
‘বাসায় গিয়ে মা’র সাথে প্রথম দেখা। মা’কে সবটা খুলে বলি। আনিকা বাসায় ছিলো। আনিকাকে সবটা বলি। বাবাকে ফোন দিয়ে মা বাসায় আসতে বলে। তোমার বাবা বাসায় আসার পর প্রথমে ভয়ে ছিলাম। হঠাৎ তোমার বাবা বলল, ভয় নাই। যা বলতে এসেছো বলো। আমি সবটা বলি। আমাদের রিলেশনের কথা। তুমি ভয়ে বাবাকে আমাদের কথা বলতে না পারার কথা। তোমার বাবা খুবই ভাল মানুষ। তুমি শুধু শুধু ভয় পাও। বাবা সবটা শুনে কোনো দ্বিধা করেনি। সাথে সাথে রাজি হয়ে গেছে।’
‘সেদিনই তোমাকে সবটা জানাতে চেয়েছিলাম। সেদিন তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তবে, আনিকা সবার সামনে বললো, ভাইয়া কে বড় একটা সারপ্রাইজ দিবো। তারপর এই যে মেসেজ দেওয়া, ৩০ মিনিট মধ্যে বাসায় আসা, আজকে আমার বিয়ে এটা বলা তোমাকে, সব কিছু আনিকার প্লান ছিলো।’
তোমার বাবা-মা গতকাল ফোনে আমার বাবা-মার সাথে কথা বলেছে। আমার বাবা-মাও দ্বিমত করেনি। সবাই রাজি। তাই আজ পারিবারিকভাবে বিয়েটা হবে। পরে অনুষ্টান করা হবে।
হঠাৎ আনিকা ছাঁদে আমাদের ডাকতে আসলো। বলল,
‘ভাইয়া, আর কত সময় থাকবে ছাঁদে। তারাতাড়ি নিচে আসো। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।’
আমি আনিকাকে বললাম, ‘তোর খবর আছে। আজকে বিয়েটা হোক। তারপর দেখছি তোকে।’
‘ইশ, আমি সব কিছু ম্যানেজ করলাম। উল্টো খুশি হয়ে আমাকে উপহার গিফট দিবে৷ এখন বলছো আমার খবর আছে। আচ্ছা, এখন নিচে আসো। সবাই অপেক্ষা করছে।’ এই বলে আনিকা নিচে চলে গেলো।
আমি নীলাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘জানো, আমি আজকে কতটা খুশি?’
নীলা বলল, ‘তোমার থেকে আমি বেশি খুশি।’
‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’
নীলা বলল ‘আমার থেকে বেশি না।’
নীলা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘তোমার পায়ের অবস্থা ভালো না। কেউ এভাবে পাগলের মত আসে? কি করছো নিজের খেয়াল আছে?’
আমি হেসে বললাম, ‘ভালোবাসি যে।’
‘হয়েছে, এবার চলো। নিচে গিয়ে আগে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেস করে দেই। তারপর ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি পড়বে।’
‘বাহ, সবকিছু প্রস্তুত?’
‘জি হ্যাঁ, শুধু তোমার এই অবস্থা। আসো, নিচে আসো।’
এই বলে নীলা চলে যাচ্ছিলো। আমি নীলার হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললাম,
‘আজকে সম্পূর্ণ আমার হয়েই যাচ্ছো।
‘হয়ছে! আর আহ্লাদ দেখাতে হবে না। এখনো হয়নি। আর হবার পর তোমার খবর আছে।’
এই বলে লজ্জায় দৌড়ে নিচে নেমে গেলো নীলা।
অবশেষে মেঘমুখ একান্ত আমার নিজের হচ্ছে। এটা ভাবতেই নিজেকে দুনিয়ায় সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার মত আনন্দ অন্য কিছুতে কি আছে?
সমাপ্ত______