অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-দুই

0
1897

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-দুই
নাফিসা নীলয়া।

ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশ, মিষ্টি হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে নীরাকে। আজানের সময়ই ঘুম ভেঙ্গে যায় নীরার। নামাজ পড়ে প্রতিদিন ভোরের এই সময়টা একদম নিজের মতো করে কাটায় সে। এর মধ্যে কেটে গেছে কয়েকটি বছর। শারীরিক ভাবে ত্রুটিপূর্ণ নীরা এখন অসহায় নীরা নয়। নীরা এখন একটা প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়ায়। পাশাপাশি কয়েকটা সংস্থার সাথেও যুক্ত সে।একজন টিচার, একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার এই ই তার পরিচয়। নীরার কাছে মনে হয় তার মা তার পাশে না থাকলে এতকিছু কখনোই সম্ভব হতো না। নীরার এখন মনে হয় ওপর ওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। এলাকার মানুষজন তাকে এখন অবহেলা করে না। সবসময়ই সবার দুঃসময়ে পাশে থেকেছে সে। এলকার বাচ্চাগুলোও নীরা আপা বলতে পাগল। কয়েকবছর আগে মানুষ তাকে করুনার চোখে দেখতো। তবে এখন নীরা মানেই সবার কাছে আদর্শ। ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন সময়ে সে সবার সাহায্য পেয়েছে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা বন্ধুদের আন্তরিকতা তাকে মুগ্ধ করতো। কলেজে পড়ার সময় তার বন্ধু ছিলো না। তবে ইউনিভার্সিটি তে তার গুটিকয়েক বন্ধু হয়েছিলো। যারা এখনো তার পাশে আছে। ছোট থেকেই নীরার স্বপ্ন ছিলো অসহায় মানুষদের পাশে দাড়ানো। আজ সেটা সম্ভব হয়েছে। ভাবতেই মনটা খুশিতে ভোরে যায়। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় সে।

-আপা কি করো একা একা? আজকে কিন্তু আমার সাথে আমার ভার্সিটির অকেশনে যাচ্ছো তুমি। সবাই কত করে বলেছে জানো তোমাকে নিয়ে যেতে। তোমার কাজ দেখে তো আমার বন্ধুরা সবাই বরাবরই মুগ্ধ। আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন বদরাগী টিচার আছেন না? উনিও তোমাকে যেতে বলেছেন। উনি তো সবসময় তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বারবার বলেন মিলা তুমি একদম তোমার বোনের মতো না। নীরাকে দেখে তো কিছু শিখতে পারো নাকি! আমার যে তখন কি ভালো লাগে আপা।

হাসতে হাসতে কথাগুলো একদমে বলে ফেললো মিলা। নীরা অতীতের স্মৃতি থেকে বেড়িয়ে এলো।বোনের কথায় হেসে ফেললো।

-আচ্ছা আচ্ছা আমি যাবো। তোর বন্ধুরা সবাই কেমন আছে?

নীরার প্রশ্ন শুনে মুখ ফুলালো মিলা।

-আপা তুমি শুধু আমার আপা। ওদের কথা একদম জিজ্ঞেস করবে না। তোমাকে পেলে ওরা এমন ভাব করে যেন তুমি ওদেরই আপা। আমার কিছু নও। আর তুমিও ওদের পেলে আমাকেই ভুলে যাও।

বোনের কথা শুনে নীরার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার বোনটা যে এত অভিমানী। একটু কিছু হলেই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। দেখা যাবে ওখানে গেলে যদি ওর বন্ধুরা আপু,আপু করে নীরাকে ডাকে। তাহলেও মিলা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে।

-আচ্ছা মিলা,আমি তো তোদের সবারই আপা তাই না? এখন আর মুখ ফুলিয়ে থাকিস না। তুই মুখ ফুলিয়ে থাকলে আমার একদম ভালো লাগে না।

নীরার কথা শুনে হেসে দিলো মিলা।

-উফ আপা আমি তো এমনি এমনি ড্রামা করছিলাম। তুমি তো সিরিয়াসই হয়ে গেলে।

মিলার কথা শুনে নীরাও হাসলো।

-কিরে দুই বোন মিলে সকাল সকাল কথা বলেই কাটিয়ে দিবি নাকি? দেখ তো ঘড়িতে কয়টা বাজে? সাড়ে সাতটার মতো বেজে গেছে। মিলা তোর তো রেডি হতে কত সময় লাগে। তা না করে বোনের সাথে গল্প করছিস বজ্জাত মেয়ে। সময় শেষ হয়ে গেলে তো চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে দিবি। আশ্চর্য হয়ে যাই আমি। যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হ ঘুম থেকে উঠেই নাঁচতে নাঁচতে আপার কাছে চলে এসেছে।

মায়ের কথায় মিলা ভয়ে দৌড়ে চলে গেল। নইলে একটুপরে তার মা তাকে ঝাটা দিয়ে মারবে। যদিও আপার জন্য পারে না। তবুও মাকে খুব ভয় পায় মিলা।

-আম্মা, তুমি শুধু শুধু ওকে বকো। দেখো না ও কতো ভয় পায় তোমাকে। বাচ্চা মেয়েটাকে আর বকো না তো।

মিষ্টি হেসে বললো নীরা।

মালিহা মেয়ের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছেন। তার মেয়েটা দেখতে কতো মিষ্টি। আর হাসিটা,হাসলে যেনো নীরার চোখ দুটোও হাসে। কেউ হাসলে যে এতো সুন্দর লাগে তা আগে জানতেন না মালিহা। তার মেয়েটা কত ভালো,খালি ওই একটা ত্রুটি ছাড়া। একটা মানুষের তো আর সবদিক পার্ফেক্ট থাকে না। মালিহার এই নিয়ে কোনো আফসোস সেই। মালিহার এখনো মনে পরে ইউনিভার্সিটিতে সবসময় টপ করতো নীরা। সবার আগে মায়ের কাছেই জানাতো সে তার সফলতার কথা। প্রতিবন্ধী হিসেবে কখনো এক্সট্রা সুযোগ নিতো না নীরা,এমনকি চাকরিক্ষেত্রেও না। চাকরিটা পাওয়ার পর সে কি কান্না নীরার। মালিহাকে জড়িয়ে ধরে সে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলো। আর তার নীরা তো ইউনিভার্সিটি তে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত। নামডাক না হোক। নীরার এই কাজগুলো মালিহাকে ভেতর থেকে আনন্দ দেয়। মনে হয় নীরার জন্য তার করা সব কষ্ট সফল। গর্বে বুকটা ভরে যায় নীরার মতো মেয়ের জন্ম দিতে পেরেছে সে। নীরার মতো কজন হয়।

-আম্মা কি দেখো। খিদে পেয়েছে আমার খেতে দাও। সকাল সকাল খিদে পেয়ে যায় আমার তুমি তো জানোই আম্মা।

নীরার কথা শুনে হুশ ফেরে মালিহার। মনে মনে মাশাআল্লাহ আওড়ে নেন। কথায় আছে মায়েরও নজর লেগে যায়।

-হু তাড়াতাড়ি আয় আমি খেতে দিয়ে দেই তোকে। আর তোর বোন মহারানী নাকি আজকে শাড়ি পরবে। তাকেও তৈরি করে দিতে হবে। মেয়েটা যদি একটা কাজও ঠিক করে করতে পারতো।

মিলাকে বকতে বকতে চলে যান মালিহা। মুচকি হেসে নীরাও বের হলো।

-আপা ও আপা দেখো তো কোনটায় আমাকে ভালো লাগবে। সবুজ রঙের শাড়ি না বেগুনি রঙের শাড়ি? সবুজের সাথে কালো ব্লাউজ না সবুজ ব্লাউজ?বেগুনির সাথে কি বেগুনি ব্লাউজই পরবো?

একদমে কথা গুলো বলে ফেললো মিলা। স্বভাবে নীরা যত শান্ত মিলা ততো চঞ্চল। সারাক্ষণ তিড়িংবিড়িং করাই মিলার স্বভাব। মিলার কান্ড দেখে কটমট চোখে তাকালেন মালিহা।

-খেতে দে ওকে একসাথে এত প্রশ্ন কি করে করিস তুই মিলা?

মায়ের ধমক শুনে চুপ করে যায় মিলা।

-আম্মা থাক বকো না তো ওকে। শোন মিলা তুই আজকে সবুজ শাড়ি পরে যাবি, সাথে কালো ব্লাউজ ওকে? আর আমি সকালে মিহিদের বাগান থেকে বেলিফুল নিয়ে মালা বানিয়ে রেখেছি। আমার ড্রেসিংটেবিলের ওপর রাখা আছে। সেটা খোপায় গুজে দিবি। আমার অপরূপা বোনকে আরো সুন্দর লাগবে তখন।

নীরার কথা শুনে চেঁচিয়ে উঠে মিলা।

-সত্যিই আপা। তুমি আমার জন্য সাতসকালে এতকিছু করেছো। ইউ আর দ্যা বেস্ট সিস্টার। আই লাভ ইউ।

নীরাকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে মিলা। নীরাও আলতো করে ধরে মিলাকে। দুই মেয়ের কান্ড দেখে হাসতে থাকেন মালিহা।
কাশির আওয়াজে ধ্যান ফেরে সবার। নীরার বাবা রেজাউল এসে দাড়িয়েছেন টেবিলের সামনে। মিলা তাড়াতাড়ি তৈরি হতে চলে গেল। তার তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। টেবিলে এসে চেয়ার নিয়ে বসেছেন রেজাউল। অতীতের করা কাজের জন্য এখন তিনি অনুতপ্ত। তবে তা প্রকাশ করতে পারেন না। কষ্টে বুকটা ভার হয়ে থাকে সবসময়।

-আব্বা খাচ্ছো না কেন? কোনো সমস্যা?

মিষ্টি করে আব্বা ডেকে উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চায় নীরা। নীরার এই আচরন তাকে আরও কষ্ট দেয়। কতো কষ্ট দিয়েছেন তার মেয়েকে কতো অনাদর অবহেলা করেছেন। অথচ সেই নীরাই তাকে, তাদের সবাইকে আঁগলে রাখছে। অপরাধে অনুতাপে বুকটা ভারী হয়ে ওঠে। নীরার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেন না রেজাউল। পারেন না মুখ ফুটে মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে। তাই মাথা নাড়িয়ে না বলে উওর দেন তিনি। তারমানে সমস্যা হচ্ছে না। খেতে খেতে দাদীর কথা জানতে চায় নীরা।

-আম্মা দাদীর খাবার দিয়ে এসেছো ঘরে? দাদীর ওষুধ শেষ হলে বলবে আমাকে।

বয়সের ভারে নুইয়ে পরেছেন নীরার দাদী। বিছানা থেকে কমই ওঠেন তিনি। হাটাচলা প্রায় করতেই পারেন না। মেয়ের কথায় এবার চমকে যান রেজাউল। সে আর তার মা কম তো অবহেলা করেননি নীরাকে। তবুও নীরা তাদের যেভাবে খেয়াল রাখে। এতে কিছু বলতে পারেন না তিনি।

-হ্যা দিয়েছি। আচ্ছা তাড়াতাড়ি খেয়ে নে তুই। মিলার কাছে গিয়েছিলাম শয়তান মেয়েটা এবার তোর কাছে শাড়ি পরবে। আমি পারি না আর এই মেয়েকে নিয়ে তুই দেখ নীরা। জ্বালিয়ে মারে এই মেয়েটা আমাকে।

-আচ্ছা আমিই যাচ্ছি তুমি খেয়ে নাও এবার।

নীরা উঠে গেল। মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন রেজাউল। নীরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে যাচ্ছে। স্বামীর দিকে তাকিয়ে মালিহা বোঝেন যে তিনি অনুতাপের আগুনে পুড়ছেন। তবুও তিনি কিছু বলেন না। নিজে দোষ করেছে। মেয়ের কাছে ক্ষমাও চাইবে নিজে। এরমধ্যে মালিহা কিছু করতে পারবেন না।

-আপা এসেছো তাড়াতাড়ি তৈরি করে দাও আমায়।

বোনের কথায় কিঞ্চিত বিরক্ত হয় নীরা। মেয়েটা সারাক্ষণ তিড়িংবিড়িং করে।।

-শান্ত হয়ে দাড়া মিলা,শাড়িটা ভালোভাবে সেট করতে দে। এতো লাফালাফি করলে শাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।

বোনের কথা শুনে ধীরেসুস্থে দাড়ায় মিলা। বোনকে সুন্দর করে তৈরি করে দেয় নীরা।

-কি সুন্দর লাগছে আমার বোনটাকে। কতবড় হয়ে গেছিস তুই মিলা। সেদিনও আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারতি না।

মিলা বুঝতে পারছে তার বোন ইমোশনাল হয়ে পরছে। তাই সে কথা ঘুরানোর প্রসঙ্গে বললো!

-আপা আসো তোমাকেও শাড়ি পরিয়ে দেই?

যদিও সে জানে নীরা একদম রাজি হবে না। শাড়ি পরে হাটতেও সমস্যা হয় নীরার। তবুও বোনকে শাড়ি পরাতে চায় মিলা। শাড়িতে তার বোনকে অপরূপ লাগে।

-না মিলা,শাড়ি পরতে ভালো লাগে না। হাটতেও অসুবিধা হয়।

নীরার কথা শুনে মিলা আর জোর করলো না তার বোনকে।

-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমিও সবুজ রঙের থ্রি-পিস পরবে। আমরা দুইবোন ম্যাচিং ম্যাচিং।

মিলার কথায় সম্মতি জানিয়ে হাসলো নীরা। মিলাও বোনের হাসি দেখে মিষ্টি করে হাসলো।

ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রামে নীরা বোনকে নিয়ে চলে আসলো। এসেই ওর বন্ধুদের সাথে দেখা করতে হলো। নীরাকে পেয়েই একেকজন এসে জড়িয়ে ধরছে।

-আপু,এখন ভাই-বোনদের কথা মনে পরলো? তুমি তো মাঝে মাঝেই মিলার সাথে আসতে পারো নাকি। জানো কতো মিস করেছি আমরা তোমাকে?

কথাটা বললো মিলার ব্যাচমেট রাকিব। সে নীরাকে বড় বোন মানে। শুধু সে না মিলার সব বন্ধুই নীরাকে বড় বোন মনে করে। সবাইকে বড় বোনের মতো গাইডও করে নীরা।

-হ্যা আপু। নিশ্চয়ই মিলা তোমাকে আসতে দেয় না। হিংসুটে রানী নিশ্চয়ই মনে করে ওর আদর কম পরে যাবে।

কথাটা বললো মিলার বান্ধবী সোনিয়া,তার সাথে সবাই তাল মেলাতে লাগলো। এদিকে মিলা রেগে ফুঁসে উঠছে। নীরা মিষ্টি করে হাসলো সবার উদ্দেশ্যে।

-তোরাও তো যেতে পারিস আমাদের বাড়িতে। আমাকে দেখতে। কই যাস না তো। এই নাকি আমি তোদের বোন।

কৃএিম রাগ দেখিয়ে বললো নীরা। নীরার কথায় সবাই হেসে উঠলো।

-এখন থেকে যখনই সময় হবে আমরা সবাই যাবো। তোমার হাতের পাকোড়া খেতে। অনেকদিন খাই না। কি বলিস সবাই।

মিলার এক বন্ধুর কথায় সবাই উচ্ছাসে ফেটে পরে একদম বলে সমস্বরে সম্মতি জানালো। নীরাও মুচকি হেসে কথা দিলো, ওরা যেদিন যাবে সেদিন যেনো ওকে জানিয়ে যায়। তাহলে ও সময় বের করে বাড়িতে থাকবে।
ওদের কান্ড দেখে মিলা ওপরে ওপরে রাগের ভান করলেও। ভেতরে সে প্রচন্ড খুশি। তার আপাকে হাসতে দেখে তার ভালো লাগলো। মনের মধ্যে প্রশান্তি ছড়িয়ে গেল। সে ও সবার সাথে হেসে দিলো।
একই ইউনিভার্সিটি তে নীরাও পড়তো। এজন্য শিক্ষকরাও তাকে পেয়ে খুশি। নীরার সাফল্যে তারাও গর্বিত।

প্রোগ্রাম প্রায় শেষের দিকে সব কার্যক্রম মোটামুটি শেষ। এবার নীরা মিলাকে তাড়া লাগালো বাসায় যাওয়ার জন্য। মিলা,আর নীরা যাওয়ার জন্য হাটতে লাগলো তখনই একটা ছেলে দৌড়ে নীরার সামনে আসলো।
ছেলেটির নাম রেহান মিলার ব্যাচেরই তবে অন্য ডিপার্টমেন্টের। নীরা ছেলেটাকে দেখে হাসলো।

-আস্তে এমন হাঁপাচ্ছো কেন তুমি? দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো?

ছেলেটাকে দেখে মিলা কটমটিয়ে তাকালো। এই বেহায়া রেহানকে সে একদম দেখতে পারে না। একে তো তাকে দেখলেই মিলা টিলা বলে টিজ করে। দুই তার আপার সামনে সবমসময় সাধু সাজে। আপার কাছে বিচার দিয়েও লাভ হয় না তার। আপার মতে রেহানের মতো ভালো ছেলে দুইটা নেই। কিন্তু রেহান যে কতবড় বেয়াদব সেটা তো আপা জানে না।

-এই মিলা পানি দাও।

সোজা হয়ে দাঁত কেলিয়ে মিলার কাছে পানি চাইলো রেহান। মিলা দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাগ থেকে পানি বের করে দিলো। রেহান পানি খেয়ে বোতল ফিরিয়ে দিলো।

-নীরা আপু,প্রোগ্রামের ঝামেলায় তোমার সাথে দেখাই করতে পারিনি। কতোদিন পর দেখলাম তোমায় অথচ দেখো সময়ই হয়ে উঠলো না কথা বলার।

রেহানের কথায় নীরা হেসে দিয়ে রেহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

-সমস্যা নেই ভাই এখন তো দেখা হলো। আর তুমি তো একটা কাজ করতে পারো। মিলাদের সাথে নাহয় আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার সাথে দেখা করতে। তা তো করো না।।

নীরার কথায় রেহান হেসে দিলো।

-তোমার বোন তো নেয় না আপু। সেদিন কতো করে বললাম যে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাও। কতোদিন আপুর সাথে কথা হয় না। কিন্তু না তোমার বোন নিলোই না।

মিলার মাথায় হাত। এই বজ্জাত ছেলে আবার কখন তাকে এসব বললো। হাড়েবজ্জাত ছেলে আপা সামনে নইলে এই ছেলের বারোটা বাজাতো আজ মিলা।

-একদম মিথ্যে বলবে না রেহান। তুমি কখনোই আমাকে এসব বলোনি। আপার সামনে ঢঙ করছো এখন না! বেয়াদব ছেলে।

মিলার কথা শুনে নীরা কপট ধমক লাগালো।

-আহ মিলা এটা কি ধরনের ভদ্রতা। এভাবে কথা বলিস কেন তুই!

মিলাকে ধমক খেতে দেখে রেহান দাঁত কেলিয়ে হাসলো। মিলা রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো।

-আচ্ছা রেহান তুমি যখন খুশি আমাকে ফোন করে বাড়িতে যাবে। আমি সময় বের করবো তোমার জন্য। আজ আসি ভাই, অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে।

নীরার কথায় এতখনে রেহানের হুশ আসলো। সে তো তার ভাইয়ের সাথে নীরা আপুর পরিচয় করিয়ে দিতে এসেছিলো। ভাইকে বলেছিলো সামওয়ান স্পেশালের সাথে দেখা করাবে। দেরি হওয়ার কারনে আগে নিজে এসে দেখতে চাইছিলো যে নীরারা আছে কিনা। এদিকে মিলাকে জ্বালাতে গিয়ে সেই কথা বেমালুম ভুলে গেছে সে। তার ভাই নিশ্চয়ই অনেক রেগে গেছে।

-আপু আমার ভাইয়ের সাথে তোমাকে দেখা করাতে চেয়েছিলাম। দেখো কথায় কথায় একদম ভুলে গেছি। একটু বসো এখানে আমি আমার ভাইকে কল করে আসতে বলি।

তার কথা শুনে মিলা বিরক্ত হলেও নীরা হেসে বললো।

-সমস্যা নেই তুমি ডাকো তোমার ভাইকে।

রেহান তাড়াতাড়ি তার ভাইকে কল দিয়ে বলে দিলো তারা কোথায় আছে।

দুই মিনিটের মাথায় একজন শ্যামবর্ণের লম্বা সুদর্শন ভদ্রলোক তাদের সামনে এসে দাড়ালো। এই ভদ্রলোককে দেখেছে নীরা। স্টেজে অতিথিদের আসনে বসে ছিলেন। রেহান পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

-ভাই,এই সেই নীরা আপু। যার কথা তোমাকে সবসময় বলি। আর নীরা আপু ইনি আমার ভাই শিহাব রেজা।

জবাবে নীরা একটু হাসলো।

ভদ্রলোকও একটু হাসলেন। তবে পরিমিত হাসি।

-আপনার কথা শুনেছি রেহানের থেকে। রেহান তো সবসময় আপনার কথা বলে আমায়। নাইস টু মিট ইউ। ভালো আছেন মিস নীরা?

শিহাবের কথায় নীরা আবার হাসলো।

-আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো।

শিহাব আবার পরিমিত হাসি দিলো। পাশে মিলাকে লক্ষ করে বললো!

-আপনার বোন?

নীরা বা মিলা কিছু বলার আগেই রেহান বললো!

-হ্যা আপুর বোন। আমার ব্যাচমেট। কিন্তু একদম আপুর বিপরীত। তিতা করলা।

লাস্ট কথাটা বিড়বিড়িয়ে বললো রেহান। শিহাব নীরা না শুনলেও মিলা ঠিক শুনে নিলো কথা টা। মনে মনে ভাবলো পরে দেখে নিবে রেহানকে।

-কেমন আছো তুমি?

শিহাবের প্রশ্নে মিলা হাসলো।

-ভালো আছি ভাইয়া আপনি ভালো?

শিহাবও হেসে বললো,

-আমিও ভালো। এখন খুবই ভালো।

-আচ্ছা রেহান ভালো থেকো আমরা এবার যাই। বাড়িতে একটু কাজ আছে।

নীরা বলে উঠলো। সগতোক্তি করলো মিলা।

-হ্যা হ্যা শিহাব ভাইয়া আজ আমরা যাই। আবার দেখা হবে আমাদের।

-যাবেই তো তাড়াহুড়োর কি আছে? আমরা ড্রপ করে দিচ্ছি ওকে?

রেহানের কথা শুনে মিলা বললো

-না,না আমরাই যেতে পারবো সমস্যা হবে না তাই না আপা?

-হ্যা রেহান আমরাই যেতে পারবো। ভালো থেকো। আর দেখা করতে ইচ্ছে হলে চলে এসো।

শিহাব,রেহান দুজনে জোড়াজুড়ি করলেও নীরা আর মিলা ওদের সাথে গেল না। দুজনে চলে গেল। শিহাব ওদের যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এদিকে রেহান বুঝতে পারছে না তার বদরাগী ভাইয়ের হলোটা কি। দাড় করিয়ে রাখার জন্য এখনো বকছে না কেন। আবার ওদের সাথেও তার বদরাগী ভাই কি সুন্দর কথা বললো। হজম হচ্ছে না রেহানের। সে নীরার সাথে দেখা করানোর জন্য জোর করেছিলো তার ভাইকে, তখন শিহাব রাজি হচ্ছিলো না। পরে রাজি হয়েছে। কিন্তু এতক্ষন সে ভাবছিলো তার বদরাগী ভাইকে দাড় করিয়ে রাখার কারনে ওদের সামনেই কিনা বকে দেয়। আর ওর প্রেস্টিজই না চলে যায়। কিন্তু এ তো এখনো শান্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। যাক বাবা বাঁচা গেল। ভাই আর বকবে না। এই ভেবে শান্তি লাগছে রেহানের।

-ভাই,ভাই!

রেহানের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলো শিহাব।

-কি ও হ্যা চল বাড়িতে যাই আজ অনেক টায়ার্ড আমি।

রেহানও সগতোক্তি করলো। তারপর দুই ভাই বাড়ির দিকে রওনা হলো!

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here