অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-সাত

0
1022

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-সাত
নাফিসা নীলয়া।

স্কুলের ডোনেশন সম্পর্কিত সকল কাজ শেষ। নীরা শিহাবকে অফিসকক্ষের ভেতরে পৌছে দিয়ে সেই যে টিচার্স রুমে চলে গেছে। আর এদিকে আসেনি। ব্রেক টাইম এখনো শেষ হয়নি। শিহাব করিডোরে দাড়িয়ে আছে। উশখুশ করে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। বিভিন্ন স্পেশাল চাইল্ড মাঠে খেলা করছে। সে কখনো এমন পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত না। কতো বাচ্চাদের কতোরকমের ত্রুটি তবুও সবাই কি সুন্দর হেসে খেলে বেড়াচ্ছেে। শিহাবের এসব বিষয়ে কখনো কোনো আইডিয়া ছিলো না। স্পেশাল চাইল্ডদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও সে কখনো এসবে এত ইন্টারেস্টেড ছিলো না। নীরার এই কাজকে সে মন থেকে খুব সম্মান করে। নীরার এনজিওর জন্য এক্সিবিশনের কাজটাও চমৎকার লেগেছে তার। শিহাব নীরাকে প্রায় কয়েকমাস আগেই প্রথম দেখেছে। তার এখনো স্পষ্ট মনে পরে নীরাকে সে প্রথম দেখেছে রাস্তার পাশে ফুটপাতে। রাতের বেলা ছিলো সে একাই ড্রাইভ করে যাচ্ছিলো। তখন সে দেখলো নীরা রাস্তার ধারের ফুটপাতের বাচ্চাগুলোকে পড়াচ্ছে। সেই দৃশ্য ছিলো অতি মনোমুগ্ধকর। যার কারনে সে তার গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষন সেই দৃশ্য অবলোকন করলো। তার কিছুক্ষন পরেই নীরার ফোনে কল আসে যার কারনে সে ওখানেই পড়ানো শেষ করে। তারপর বাচ্চাগুলোকে কিছু টাকা ভাগ করে দিয়ে বিদায় নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে রিকশা ডেকে চলে যায়। শিহাব তখন ভেবেছিলো নীরা বোধ হয় পায়ে চোট পেয়েছে এজন্য ওভাবে হাটছে। কিন্তু চলতি পথে কয়েকবারই নীরাকে সে দেখেছে।আর তার মাধ্যমেই বিষয়টা তার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যায়। নীরার আসলে পায়ে সমস্যা। যার কারনে সে ওভাবে হাটে। আর তার পরে অনেক খুঁজলেও সে নীরাকে পায়নি। পরিচয়ই তো ছিলো না। পাবে কি করে। চিনতোও না ভালোভাবে। ইউনিভার্সিটি তেই সামনাসামনি দেখা হয়েছে তাদের। অবশ্য সে জানতো না যে রেহান এই নীরার সাথেই তার দেখা করানোর কথা বলেছে। যখন সে নীরাকে দেখলো কয়েক পলের জন্য থমকে গেল চোখের মনি হয়ে গেল স্থির। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে নীরার সাথে পরিচিত হলো। অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে সে বর্তমানে আসলো। অনেকক্ষন হলো সে এই করিডোরে দাড়িয়ে আছে। অফিসের প্রচুর কাজের ফাকেও সে সময় বের করে এখানে এসেছে। অথচ যার কারনে এসেছে সে ই উধাও। এক পলকের দেখা দিয়েই সে কই যেনো চলে গেছে। শিহাব এবার প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। তখনই তার সামনে দিয়ে জিনিয়াকে যেতে দেখলো সে। ওনাকে দিয়েই তো নীরাকে ডেকে পাঠিয়েছে সে।

-এক্সকিউজ মি!

-জ্বি বলুন।

-মিস নীরাকে আরেকটু ডেকে দেওয়া যাবে? আসলে ওনার সাথে আরেকটু দরকার ছিলো।

-আচ্ছা আপনি দুই মিনিট বসুন আমি ম্যামকে ডেকে নিয়ে আসি।

-বসতে হবে না এখানেই আছি আপনি ওনাকে একটু কষ্ট করে ডেকে দিন প্লিজ।

-আচ্ছা। একটু ওয়েট করুন।

শিহাবকে অপেক্ষা করার কথা বলে চলে যায় জিনিয়া। শিহাব মনে মনে ভাবে আমি তো আপনার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে প্রস্তুত নীরা৷ এবার নিজের ভাবনায় নিজেই হেসে ফেললো শিহাব বিরক্ত হলো না।

-নীরা ম্যাম আপনাকে সেই ভদ্রলোক আবার ডাকছেন।জলদিই আসুন উনি অপেক্ষা করছেন করিডোরেই।

-আচ্ছা, তুমি যাও আমি দেখছি।

নীরার কথায় জিনিয়া পুনরায় চলে যায়।

নীরার কাছে শিহাবের এমন আচানক আচরণ মোটেই ভালো লাগছে না। তখন ডোনেশনের কথাগুলো বলতেও কেমন আমতা আমতা করছিলো শিহাব। এবনরমাল মানুষদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাকি খুব প্রখর হয়। আসলেই তাই। আর স্বাভাবিক মেয়েদের সিক্সথ সেন্সই কতো প্রখর সেখানে নীরা তো স্পেশাল। এতো অবুঝ নীরা না। সে ছোট থেকেই খুব বুঝদার। শিহাবকে বেশি পাওা দিবে না সে মনে মনে এটাই ঠিক করলো নীরা। তবুও সৌজন্যতা রাখার জন্য তো এখন যেতেই হয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল নীরা।

শিহাব দাড়িয়ে ঘড়ি দেখছিলো তখনই নীরার আগমন ঘটলো। শিহাব অপলক তাকিয়ে রইলো। তখন এত কথায় ভালোভাবে দেখাই হয়নি নীরাকে। বাদামি রঙের থ্রি-পিসে নীরাকে কি স্নিগ্ধ লাগছে। চুলগুলো সেন্টার সীঁথি করে খোপা করা। ওড়নাটা মাথায় দেওয়া গায়ে কালো রঙের চাদর। ডিসেম্বর মাস শীতের প্রকোপ ও বেশি। শিহাবের ভাবনার মাঝেই নীরা কথা বলে উঠলো।

-আপনি আবার কোনো দরকারে ডাকছিলেন? আমার মনে হয় ওরা সব বলেই দিয়েছে। কাজ শেষ তো?

-হ্যা তা তো শেষ।

-তবে?

-মানে?

শিহাবের এরূপ প্রশ্নে এবার বিরক্ত হচ্ছে নীরা।

-মানে আপনি কি আর কিছু বলবেন আমাকে?

-আপনি কি লাঞ্চ করেছেন? আমার সাথে লাঞ্চ করবেন?

বহু কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে কথাটা বললো শিহাব। সে কি বলবে খুঁজে পাচ্ছিলো না। তখন মনে হলো এখন তো দুপুরই নীরাকে লাঞ্চের অফারই করা যাক। যদিও কথাটা বলা ঠিক হয়েছে কিনা জানে না শিহাব। তবুও বলে ফেলেছে সে।

শিহাবের কথায় ভ্রু কুঁচকালো নীরা।

-না, আমি লাঞ্চ করে ফেলেছি। আর ব্রেক টাইমও শেষ হয়ে গেছে। আর মাএ পাঁচ মিনিট বাকি আছে। আমার ক্লাস আছে এরপর। আমি আসি আপনি ভালো থাকবেন।

এই বলেই নীরা একটা ছোট্ট হাসি ঝুলিয়ে চলে গেল। পেছনে রেখে গেল শিহাবের মলিন মুখ। শিহাব মলিন মুখ করে নীরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তখনই তার ফোন আসায় তার ধ্যান ভাঙলো। এখনই অফিসে যেতে হবে তার। আজ আর লাঞ্চ ও করা হবে না শিহাবের। কি আর করার নীরা তো বুঝলো না তাকে। না বুঝেই চলে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্কুল থেকে বেড়িয়ে পরলো শিহাব।

রুমা আর সাইফের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সামনেই তাদের বিয়ে। দুই পরিবারের সবার দিনখন ঠিক করা হয়ে গেছে। রুমা আর সাইফ এজন্য নীরাদের বাসায় এসেছে সবাইকে ইনভাইট করতে।

-আন্টি তোমরা সবাই যাবে আমাদের বিয়েতে। বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই যাবে। আমি কিছু জানি না। তাই না বল সাইফ?

রুমার কথায় সাইফ ও তাল মেলালো।

-হ্যা আন্টি অবশ্যই তুমি কিন্তু আমার পক্ষ মানে বরপক্ষ। সুতরাং তোমার অনেক কাজ আমার বিয়েতে। কনে পক্ষে তো নীরা আর মিলা।

হাসতে হাসতে বললো সাইফ।

-একদম না এখানের সবাই কনেপক্ষ। তোর পক্ষ কেউ না। একদম না। নীরা আমার বেস্টফ্রেন্ড সো ও আর আন্টিরা সবাই আমার পক্ষে।

সাইফ আর রুমার কান্ড দেখে হাসেন মালিহা। ছেলেমেয়ে দুটো নীরার সাথে সাথে থাকতো সবসময়। সেই সুবাদে ওনাদের বাড়িতেও প্রায়ই যাতায়াত ছিলো ওদের। একেবারে আত্নার আত্নীয়। নীরার কাজিনরাও কখনো ওর এতো কাছের হয়ে উঠতে চায়নি। যতোটা সাইফ আর রুমা কাছের হয়েছে।

-হয়েছে থাম দুজনে আমরা দুইপক্ষেরই তাই না মিলা?

-এক্স্যাক্টলি আপা ঠিক বলেছে। তোমরা দুজনেই তো আপার বন্ধু। সো আমরা দুপক্ষেরই। অনেক মজা হবে তাই না।

-হ্যা দুইপক্ষের বিয়েতে খুব মজা করবো আমরা।

নীরা আর মিলা উচ্ছাস প্রকাশ করে। ওদের উচ্ছাস দেখে সাইফ রুমাও যোগ দেয়। কখন কিভাবে কি করবে সব প্ল্যানিং করে। কোন কোন বন্ধুদের বলবে তাও ডিসকাস করে। মালিহা উঠে যান ওদের মাঝ থেকে। ছেলে-মেয়ে গুলো জমিয়ে গল্প করছে করুক। উনি নাহয় রান্নাঘরে ওদের জন্য স্ন্যাক্স বানাবেন।

-আপা আমি জমিয়ে সাজ দিবো কেউ আটকাতে পারবে না। উফ ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে সুন্দর শাড়ি পরবো অর্নামেন্টস পরবো। অনেকগুলো সুন্দর ছবি তুলবো।

মিলার ছেলে মানুষি কথায় আবার হাসিতে ফেটে পরে সবাই।

-আরে আমি তো তোর জন্যই রুমাকে বিয়ে করছি। তুই সাজবি বলেই তো এতো আয়োজন তাই না রুমা?

সাইফের কথায় মুখ চেপে হাসে রুমা।

-তা আর বলতে।

ওদের কান্ড দেখে মুখ ফুলায় মিলা। নীরার কাছে বিচার দেয় সে।

-আপা দেখো দেখো দুজন আমাকে কিভাবে লেগপুলিং করছে। তুমি কিছু বলো ওদের। নইলে ওদের বিয়েতে ঝামেলা করে দিবো কিন্তু।

বোনের কথা শুনে হেসে ফেলে নীরা পরক্ষনেই কৃএিম রাগ দেখায় সে।

-সাইফ,রুমা তোরা একদম আমার বোনটাকে জ্বালাবি না। কি করেছে ও তোদের। শুধু তো একটু সাজবেই তাই না?

নীরার কৃএিম রাগ দেখে ফিক করে হেসে ফেলে ওরা।

-আচ্ছা মহারানী স্যরি আর বলবো না। আপনি যতো খুশি ততো সাজবেন। আমরা আর লেগপুলিং করবো না। ওকে?

সাইফের কথায় মিলাও এবার হেসে দিলো।

-আচ্ছা তোরা কথা বল আমার কল এসেছে ফোনটা নিয়ে আসি।

নীরার ফোনে কল আসায় সে উঠে চলে যায়। তার সাথে রুমা ও যায় তার ওয়াশরুমে যাওয়াও প্রয়োজন। নীরা ঘরে ঢুকে ফোন চেক করে দেখে আননোন নাম্বার। প্রয়োজন হতে পারে বলে সে নিজেই আবার কল দেয়। কিন্তু কেউ রিসিভ করে না। রুমা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে নীরা ফোন হাতে দাড়িয়ে আছে।

-কিরে কে কল দিলো?

-কি জানি কেটে গেল আমি আবার কল ব্যাক করলাম ধরলো না।

-আচ্ছা বাদ দে তোকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম।

-হ্যা বল না।

-আচ্ছা বিয়েতে শিহাবদের ফ্যামিলিকে ইনভাইট করলে কেমন হয়? সেদিন এক্সিবিশনে ওনারাই বেশি কনট্রিবিউট করেছেন। আবার তুই তো বললি আমাদের স্কুলে ও ডোনেশন দিয়েছেন। প্রপোজালের সময়ও ছিলো ওনারা। আর ওইদিন ওনাদের সাথে ভালোই আলাপ গল্পগুজব হয়েছিলো। সাইফ ও চাচ্ছিলো ইনভাইট করতে। ওর সাথে মিস্টার শিহাবের ভালো কথাই হয়েছে সেদিন।

রুমার কথায় একটু চুপ থেকে ভাবলো নীরা।

-হুম দিতে পারিস। আর তোদের বিয়েতে তোরা ওনাদের ফ্যামিলিকে ইনভাইট করবি এটা আবার আমাকে বলতে হয়। ভালোই হবে ইনভাইট করিস।

-আচ্ছা বাইরে চল কতো প্ল্যানিং এখনো বাকি আছে ইয়ার।

রুমার কথায় হেসে সম্মতি জানালো নীরা।

রুমা আর সাইফের বিয়ের সব কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আজ রুমা চাইছে শিহাবের অফিসে গিয়ে ইনভাইট করে আসবে। সেদিন সাইফকে শিহাব নিজের ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলো। সেখান থেকেই অফিসের ঠিকানা জানা গেছে। বাড়িতে গিয়ে ইনভাইট করার কথা ভাবলো না আর। রুমা আর সাইফের যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিয়ের জন্য সাইফের বাড়িতে অনেক কাজ থাকায় সে নীরাকে নিয়ে যেতে বলেছে। নীরা প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না পরে রুমা আর সাইফের অনুরোধে রাজি হলো। অতঃপর দুই বান্ধবি রওনা হলো শিহাবের অফিসের উদ্দেশ্যে।
বিরাট একটা অফিস বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি থেমেছে। রুমা আর নীরা গাড়ি থেকে নেমে অফিসের ভেতরে গেল। রিসেপশনিষ্ট মেয়েটার কাছে গেল নীরা। রুমা ওর পাশেই দাড়ানো ছিলো।

-এক্সকিউজ মি! শিহাব রেজার সাথে দেখা করা যাবে?

-এনি এপোয়েনমেন্ট ম্যাম?

-নো,এপোয়েনমেন্ট ছাড়া কি দেখা করা যাবে না?

-স্যরি ম্যাম নট এলাউ।

নীরা রুমার দিকে তাকালো। রুমা ও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এখন নীরার মনে হচ্ছে ফোন করে আসলেই ভালো হতো। এই বোকামির জন্য নিজের মাথায় নিজেরই বারি দিতে ইচ্ছে করছে তার। রিসেপশনের মেয়েটাকে ফোন দিতে বলতে চাইছিলো নীরা পরে আবার ভাবলো ও নিজেই ফোন করে ডেকে নিক। মেয়েটা যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। অযথা আবার বিরক্ত করার প্রশ্নই আসে না।

-ভিজিটিং কার্ডে ওনার সেল ফোন নাম্বার আছে কিনা দেখ তো রুমা।

রুমা ভিজিটিং কার্ড বের করলো।

-ভিজিটিং কার্ডে তো নাম্বার থাকবেই। কি যে বলিস না তুই নীরা!

-আচ্ছা দে ফোন করি ওনাকে।

ভিজিটিং কার্ডের নাম্বার নিয়ে ডায়াল করলো নীরা।

শিহাব একটা প্রজেক্টের ফাইল চেক করছিলো। তখনই তার ফোনে কল আসলো।

-হ্যালো।

-আসসালামু আলাইকুম। আমি নীরা বলছিলাম।

নীরার কথা শুনতেই দাড়িয়ে গেল শিহাব। নীরা তাকে ফোন করেছে। কিভাবে সম্ভব! কেন। যাই হোক ফোন করেছে এই তো বেশি।

-হ্যা ওয়ালাইকুমুস সালাম নীরা কেমন আছেন?

-আলহামদুলিল্লাহ। আপনি একটু রিসেপশন ফ্লোরে আসতে পারবেন? আমি আপনার অফিসে এসেছিলাম। এপোয়েনমেন্ট ছাড়া দেখা করতে এলাউ করছে না।

নীরার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল শিহাব। নীরা তার অফিসে এসেছে! আল্লাহ সে কি স্বপ্ন দেখছে। গড প্রথম এসেই এপোয়েনমেন্ট নিয়ে ঝামেলা হয়ে গেল। ইস কি লজ্জাজনক ব্যপার।

-আপনি কষ্ট করে দুই মিনিট ওয়েট করুন। আমি এক্ষুনি আসছি আপনার কাছে।

ব্যকুল হয়ে ফোন কেটে রওনা হলো শিহাব। তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে হোচট ও খেলো সে।

নীরা আর রুমা দাড়িয়েই ছিলো। শিহাব ঝড়ের গতিতে এসে থামলো। শিহাবের এমন হাল দেখে নীরা আর রুমা একে অপরের দিকে চাইলো। শিহাব নিজেকে ধাতস্ত করলো।

-আরে আপনারা? এখনো দাড়িয়ে আছেন আমার কেবিনে চলে যেতেন সরাসরি। আর তুমি ওনাদের যেতে বলোনি কেন?

রিসেপশনের মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো শিহাব। মেয়েটা আহাম্মক হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

-স্যার এপোয়েনমেন্ট ছাড়া নট এলাউ। আপনারই তো রুল্স।

মেয়েটার এমন কথায় একটু থমকালো শিহাব। নিজের এমন লাগামহীন কর্মকান্ডে প্রচুর বিরক্ত হলো সে।
নীরা আর রুমা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। নীরার এবার বিরক্ত লাগা শুরু হলো।

-প্লিজ চলুন নীরা এক্সট্রেমলি স্যরি আপনাদের এতক্ষন দাড় করিয়ে রাখার জন্য।

-ডোন্ট বি স্যরি শিহাব। ঠিক আছি আমরা যাওয়া যাক এবার?

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো নীরা।

-শিওর।

নীরা আর রুমাকে আগে হাটতে বলে রিসেপশনের কাছে গেল শিহাব।

-সি রিমি ওনাকে আর কখনো দাড় করিয়ে রাখবে না। যখন যেভাবে যেদিনই আসুক না কেন। কখনো এপোয়েনমেন্টের কথা বলবে না। সোজা আমার কেবিনে বসতে বলবে। বুঝেছো?

রিমি মেয়েটার হতবাক ভাব কাটেনি তখনো। তাদের চিরাচরিত স্যারের কি হলো বুঝতে পারছে না সে। তবুও মাথা নাড়লো সে।

-শিওর স্যার।

মেয়েটার উওরে হেসে দ্রুত নীরাদের কাছে চলে গেল শিহাব।

-প্লিজ বি সিট। বসুন আপনারা। কি খাবেন রুমা? বলুন প্লিজ, আর নীরা?

-আমাদের নিয়ে এতো ব্যস্ত হতে হবে না শিহাব উই আর ফাইন। যেটার জন্য এসেছিলাম, রুমা বল।

রুমাকে বলার জন্য ইশারা করলো নীরা। নীরার কথায় মাথা নাড়লো রুমা।

-শিহাব ভাইয়া, আই ক্যান কল ইউ ভাইয়া রাইট?

-শিওর রুমা এটা আবার আমার কাছে বলতে হবে। আপনি ভাইয়াই ডাকুন প্লিজ।

ছোট করে হেসে বললো শিহাব।

-তো ভাইয়া আমাকে প্লিজ আপনি করে বলবেন না ঠিক আছে? তুমি করে বলবেন।

-আচ্ছা তাই ই বলবো। তো তুমি কি যেনো বলতে চাইছিলে রুমা?

-আসলে ভাইয়া সেদিন তো দেখলেনই সাইফ আমাকে বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো। এন্ড ফাইনালি পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছে। আপনাদের সবার সাথে আমাদের খুব ভালো একটা বন্ডিং হয়েছে সেদিন। তো সাইফ আর আমি চাইছিলাম আপনারা সবাই সপরিবারে আমাদের বিয়েতে আসুন। সাইফই আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু ও বিয়ের কাজে আটকে গেছে। তাই আমিই নীরাকে নিয়ে আসলাম। আমাদের নতুন জীবনটা সবার দোয়া আর শুভকামনা নিয়ে শুরু করতে চাই। সো প্লিজ আপনারা সবাই আসবেন।

ইনভাইটেশন কার্ড শিহাবের দিকে এগিয়ে কথা শেষ করলো রুমা। শিহাব কার্ডটা হাতে নিলো। নীরার দিকে কয়েক পল তাঁকালো শিহাব।

-অবশ্যই যাবো। তোমাদের দুজনের জন্য আমি খুবই খুশি। সেদিন ক্যাফেতেই দেখলাম। এমন সুন্দর রিলেশনশিপ কমই দেখা যায়। নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা।

ছোট করে হেসে বললো শিহাব।

-আচ্ছা ভাইয়া তিতলি রেহানকে ও বলবেন। ওদের বলা উচিত ছিলো। কিন্তু বলা হলো না। ওদের নিশ্চয়ই নিয়ে আসবেন, সপরিবারে আসবেন।

-আচ্ছা অবশ্যই আসবো।
শিহাবের আশ্বাস শুনে মুখে মিষ্টি করে হাসি ফোটায় রুমা।

-আচ্ছা তাহলে এবার আমরা যাই। রুমা চল আরো কয়েক জায়গায় যেতে হবে আমাদের।

নীরার কথায় হকচকিয়ে যায় শিহাব।

-এখনই? এত তাড়াতাড়ি?,

শিহাবের এমন উদ্বিগ্নতায় রুমা আর নীরা দুজনেই কিছুটা থমকায়।

-হ্যা এরপর আরো কয়েক জায়গায় যেতে হবে। তাই না রুমা?

-হ্যা ভাইয়া বিয়ের অনেক কাজই আছে। আমাদের যেতে হবে এখনই।

রুমা দ্রুত কথা শেষ করে।

-আচ্ছা চলো তোমাদের এগিয়ে দেই।

নীরা আর রুমা বের হয়ে গেলে শিহাব ও বের হলো। নীরার পাশে পাশে হাটতে লাগলো সে। নিচে এসে রুমা শিহাবকে হেসে বিদায় জানালো। নীরাও সৌজন্যতা বজায় রাখার হাসি হাসলো।

-ভালো থাকবেন নীরা।

নীরার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বললো শিহাব। নীরা অবাক হয়ে তাকালো শিহাবের দিকে। শিহাব ওকে কেন আলাদা করে ফিসফিস করে বললো! রুমার সামনেইই তো বলতে পারতো। অদ্ভুত আচরন। নীরার অবাক চোখে তাকানো দেখে অদ্ভুতভাবে হাসলো শিহাব। নীরা আর পাওা দিলো না রুমার সাথে হাটতে লাগলো।

-ছোট ভাই,এই ছোট ভাই উঠ আর কতো ঘুমাবি এই অবেলায়? উঠ।

তিতলির জোরে ধাক্কানো তে বিরক্ত হয়ে উঠে গেল রেহান।

-হোয়াট তিতলি আমাকে কি একটু ঘুমাতেও দিবি না?

-এই অবেলায় পরে পরে ঘুমাচ্ছিস কেন গাঁধা? তোকে উঠাবো না তো কি করবো?

তিতলির কথায় প্রচুর বিরক্ত হলো রেহান।। উঠে বসলো সে।

-উঠেছি কি বলবি বল।

-ছোট ভাই ভাইয়ের পেছনে স্পাই লাগালে কেমন হয়? আই মিন ভাই প্রেমে পরলে স্পাই বের করতে পারবে। গুড আইডিয়া না?

তিতলির কথায় প্রচুর বিরক্ত হলো রেহান। মেয়েটা থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে সবকিছুতে থ্রিল খুঁজে পায়।

-হু প্রেমে পরলে স্পাই বলে দিতে পারবে না? বুদ্ধু ভাই প্রেম করলে বের করতে পারবে। প্রেমে পরলে না। আর আমি শিওর এখানে প্রেম সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই।

রেহানের কথায় আশ্বাস পেলো না তিতলি।

-ধুর তোর কাছে আসছি কেন আমি? এতো কথা সবই বৃথা।

-আসতে বলেছে কে তোকে? শুধু শুধু আমার স্বাধের ঘুম ভাঙালি তুই।
চোখমুখ কুঁচকে বললো রেহান।

-কি করিস তোরা? পড়ালেখা কেমন চলছে দুজনের? ফাকিবাজি করছিস না তো আবার?।

ওদের কথার মাঝেই শিহাব এসে হাজির হলো।

-অল গুড ভাই। তবে তুমি এই পেত্নীকে সরাও এ আমার মাথা খেয়ে নিবে।

রেহানের এমন কথায় রেহানের মাথায় গাট্টা মারলো তিতলি।

-আচ্ছা শোন সেদিন সাইফ যে রুমাকে বিয়ের জন্য প্রপোজাল দিলো। তো ফাইনালি ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ইনভাইট করেছে আমাদের নে ধর কার্ড।

তিতলির হাতে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো শিহাব।

-ওয়াও ওরা কি কিউট কাপল। কতো মজা হবে বিয়েতে তাই না? খুব ভালো লাগলো আমার। আচ্ছা ভাই তোর কিন্তু যেতেই হবে। কোনো অকেশন, রিলেটিভের বিয়ে এসব তো তুই এটেন্ড করতেই চাস না। জোর করে নিয়ে গেলেও গোমড়ামুখো হয়ে থাকিস। এবার যেনো তোকে জোর করতে না হয় আমার।

-আচ্ছা, আমি তো যাবোই ওরা অফিসে এসে ইনভাইট করে গেছে না? যেতে তো হবেই।

হেসে বললো শিহাব। এতে তিতলি আর রেহানের চোখ বড়বড় হয়ে গেল। যেই ভাইকে কোনো অকেশন বা বিয়েতে এটেন্ড করাতে ওদের জান বের হয়ে যায় কতো কাঠখড় পোড়াতে হয়। সেই ভাই ই বিনা তর্কে রাজি হয়ে গেল এক কথায়। কি হচ্ছে এসব!

-আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তোরা থাক।

মৃদু হেসে চলে গেল শিহাব। পেছনে রেখে গেল তার দুই ভাই বোনের হতভম্ব চেহারা। তিতলি আর রেহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতলি রেহানের কাঁধে মাথা রেখে বললো।

-আমি যা শুনলাম তুইও কি তাই শুনলি?,

রেহান তিতলির মাথার ওপর নিজের মাথা ঠেকিয়ে দিলো।

-দুনিয়াতে তাহলে অসম্ভব বলে আর কিছুই রইলো না তিতলি।

–চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here