অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-সতেরো

0
837

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-সতেরো
নাফিসা নীলয়া!

তিতলি আর রেহান নীরাদের বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়েছে। শিহাব আসেনি ওদের সাথে। অফিসে যাওয়ার কথা বলে এড়িয়ে গেছে। তাছাড়া সে এখন আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম দাড়াতো। তাই শিহাব আর আসেনি।

তিতলি হাসি হাসি মুখ করে বললো।

-নীরা আপুকে ফোন কর আমাদের রিসিভ করুক।

তিতলির কথা শুনে রেহান আশ্চর্য হয়ে গেল। অসুস্থ মানুষকে দেখতে এসেছে। আর তার বোন বলছে কিনা সেই অসুস্থ মানুষই রিসিভ করুক। তিতলির মাথাটা দিনদিন যাচ্ছে।

-তিতলি আক্কেল জ্ঞান কি কিছু নেই? আপু অসুস্থ আর আমরা তাকে দেখতে এসেছি। সেই তাকেই ফোন করে বলবো আমাদের রিসিভ করতে। একটা চড় খাবি আমার হাতে।

রেহানের কথা শুনে তিতলি তার নিজের ভুল বুঝতে পারলো। তাই আর বেশি ঘাটালো না। যদিও তিতলির নিজের ভুল থাকলেও রেহানের সাথে সে সবসময় লেগে থাকে। তবে এখন আর তিতলি কিছু বলবে না। এখন অনেক এক্সাইটেড সে। তার নীরা আপু সুস্থ আছে কিনা তাও তো দেখতে হবে। তাই দুই ভাই-বোন এগিয়ে গেল।

মিলা রান্নাঘরে কাজ করছিলো। মালিহা তাদের দাদীর ঘরে গেছেন খাবার খাইয়ে দিয়ে আসতে। যাওয়ার সময় মিলাকে বলেছেন রুটি বেলে রাখতে। আর তরকারি বসিয়ে দিতে। মিলা ঘরের কাজে একদম আনাড়ি। নীরা বাড়িতে থাকলে সে ই মালিহাকে সাহায্য করে। কিন্তু মিলা করতেও চায় না। তাকে কেউ তেমন চাপ ও দেয় না। তবে ইদানিং তার এসব বিষয়ে আগ্রহ বেড়েছে। নীরাও একটু অসুস্থ তাই সে রান্নাঘরে নিজের ইচ্ছেতেই কাজ করছে। তরকারি বসিয়ে রুটি বেলতে লাগলো সে। তখনই বেল বেজে উঠলো। মিলা বিরক্ত হয়ে মালিহাকে বললো দরজা খুলে দিতে। প্রতিউওরে মালিহাও চেঁচিয়ে মিলাকেই দরজা খুলতে বললেন। রেজাউলও বাসায় নেই। নীরাকে বাসায় আনার পর জরুরি কাজে বাইরে বেড়িয়েছেন। নীরাও বিশ্রাম নিচ্ছে অগত্যা মিলাকেই চুলার আঁচ কমিয়ে যেতে হলো।

রেহান আর তিতলি বেল বাজিয়ে দাড়িয়ে আছে। সাথে অনেক কিছু এনেছে তারা। এই বাড়িতে প্রথম এসেছে আর নীরাকেও দেখতে এসেছে বলে। হঠাত দরজা খুলে গেল। তিতলি হা করে দাড়িয়ে আছে মিলাকে দেখে। মিলা দরজা খুলে রেহানের মুখটা দেখে মুখ বেজার করলেও তিতলিকে দেখে হাসি দিলো। এদিকে রেহান মিলাকে দেখে যথেষ্ট চেষ্টা করছে হাসি আটকানোর। কিন্তু শেষে ব্যর্থ হয়ে হু হা করে হেসে ফেললো। তিতলিও হাসলো তবে রেহানের মতো অত জোরে নয়। মিলা বুঝতে পারছে না ওরা দুজন তাকে দেখে হাসছে কেন! নিজের জামা কাপড়ের দিকে তাকালো মিলা। আর আঁতকে উঠলো। সে উল্টো জামা পরে আছে। নীরাকে নিয়ে আসার পর মিলা গোসল সেরে রান্না ঘরে এসেছে। উল্টো জামা বোধ হয় তাড়াহুড়োতেই পরেছে। কিন্তু কাহিনী এখানে থেমে গেলেও পারতো। তবে থামলো না। রেহান বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো।

-একি টিলা রান্নাঘরে উল্টো জামা পরে কি যুদ্ধ করতে গিয়েছিলে? উল্টো জামা পরে মুখে আটা হলুদ মেখে কোন যুদ্ধে জয়ী হয়ে এসেছো? বলা না!

কথাগুলো বলেই রেহান পুনরায় হাসতে লাগলো। তিতলিও এবার একটু জোরেই হেসে ফেললো। দুই ভাই বোনের হাসি তামাশা দেখে মিলার খুব রাগ হলো। রাগে দুঃখে পারছে না যে রেহানের মাথার সব চুল সে এখনই ছিড়ে ফেলে। মালিহা এতো হাসাহাসির আওয়াজ শুনে বাইরে আসলেন।

-কিরে কে এসেছে? আর ঘরে ঢুকতে না দিয়ে দরজা আগলে দাড়িয়ে আছিস কেন?

বলতে বলতেই তিনি তিতলি আর রেহানকে দেখলেন।

-আরে তোমরা তা এতোদিন পর বুঝি আন্টির কথা মনে পরলো? রুমার বিয়ের সময় কতো করে বলেছি এখানে আসতে। এতো দেরিতে আসলে যে! আচ্ছা যাই হোক ভেতরে আসো।

তখন তিতলিও বলে উঠলো।

-মিলা আপু আমাদের ঢুকতে দিবে না?

তিতলির কথায় হুস ফেরে মিলার। সে দরজা থেকে সরে দাড়ালো। রেহান আর তিতলি ভেতরে ঢুকলো। মিলা মালিহার দিকে তাকিয়ে বললো।

-আমি যে উল্টো জামা পরেছি বললে না কেন?

মালিহা মিলার দিকে তাকালেন। এতক্ষনে রেহানদের হাসির কারন আর মিলার বেজার মুখের কারন বুঝলেন। আর মিলার চেহারা দেখে এবার তিনিও হেসে ফেললেন। মালিহা প্রথমে খেয়াল করেননি। মিলার অবস্থা হলুদ আটা দিয়ে মাখামাখি। পরনে উল্টো জামা। ওড়না কোমড়ে পেঁচানো। মালিহা হাসি থামিয়ে বললেন।

-একি মিলা রান্নাঘরে কাজ করতে দিয়েছিলাম তোকে। যুদ্ধ করতে না।

মিলা মালিহার কথায় আরো রেগে গেল। তবে কিছু বললো না তার মাকে।

-তিতলি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। আর তোমার গাঁধা ভাইকে হাসতে না করো। কারন হাসলে ওকে বেজির মতো লাগে।

কথাটা বলে মিলা ধুপধাপ পায়ে ঘরে চলে গেল। মিলার কথা শুনে রেহানের হাসি হাসি মুখ কালো হয়ে গেল। মালিহা তা লক্ষ করলেন।

-কিছু মনে করো না বাবা। আমার মেয়েটা একটু এরকমই পাগলি স্বভাবের। তোমরা বসো নীরাকে ডেকে দেই আমি।

-না, না আন্টি আমি কিছু মনে করিনি। আপু এখন সুস্থ আছে তো? আসলে আমরা ভাইয়ের কাছে শুনেই আপুকে দেখতে চলে এসেছি।

-হ্যা নীরা এখন একদম ঠিক আছে। ওকে ডেকে দেই আমি বসো তোমরা।

বলেই মালিহা ভেতরে চলে গেলেন।

নীরা বই পড়ছিলো। একটু কি জ্বর হয়েছে তাতেই সবাই একেবারে তাকে ঘরে বসিয়ে রেখেছে। রুমা আর সাইফ নীরাকে বাসায় পৌছে দিয়ে খেয়েদেয়ে যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গেছে, নীরা যেনো এখন সম্পূর্ণ রেস্টে থাকে। কোনো কাজ না করে। অথচ নীরা তো কাজ ছাড়া থাকতেই পারে না। এভাবে কতক্ষন শুয়ে বসে থাকা যায়। এখন প্রচন্ড বোর হচ্ছে সে।

-নীরা রেহান আর তিতলি এসেছে তোর সাথে দেখা করতে।

মালিহা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন। নীরা মালিহার কথা শুনে খুশি হলো আবার অবাকও হলো। যাক এখন তো ঘর থেকে বের হওয়া যাবে। এই ভেবে খুশিই হলো।

-আচ্ছা,চলো আম্মা।

নীরা মালিহার সাথে ড্রয়িং রুমে গেল। দেখলো তিতলি আর রেহান সোফায় বসে আছে। তিতলি নীরাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।

-নীরা আপু কেমন আছো তুমি? জ্বর বেশি নেই তো এখন?

বলেই নীরার কপালে হাত দিয়ে দেখলে। নাহ্ বেশি জ্বর নেই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

-জানো ভাইয়ের কাছ থেকে শুনে প্রথমে কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। পরে ভাই নিশ্চিন্ত করলো। তাও আমার শান্তি হয়নি। তাই তো এসে পরলাম।

তিতলির কান্ড দেখে মালিহা আর নীরা দুজনই মুচকি হাসলো। নীরাও তিতলিকে জড়িয়ে ধরলো।

-আমি একদম ঠিক আছি তিতলি। নাও আই এম ফিট এন্ড ফাইন। দেখি বসো তো। আমাকে নিয়ে এতো উদ্বিগ্ন হতে হবে না।

বলতে বলতেই নীরা তিতলিকে নিয়ে বসলো। মালিহা রান্নাঘরে চলে গেলেন ওদের আপ্যায়ন করতে।

-আপু নট ফেয়ার। তখন থেকে তিতলির সাথেই কথা বলছো তুমি। এদিকে যে জলজ্যান্ত রেহান তোমার সামনে বসে আছে সেদিকে একদম খেয়াল করছো না।

অভিমানি মুখ করে বললো রেহান। রেহানের কথা শুনে তিতলি মুখ বাঁকালো।

-আহ্ আসছে গুনধর রেহান। কোথাকোর কে রে তুই যে তোকে খেয়াল করতে হবে!

তিতলির কথা শুনে রেহান রাগ দেখালো।

-দেখো আপু দেখো। বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলছে দেখো।

-তিতলি নট ফেয়ার। রেহান তোমার বড় ভাই না?

নীরা হালকা শাসনের স্বরে বললো। তিতলি হাসতে থাকলো।

-আরে আপু আমি তো এমনিই মজা করেছি।

-আচ্ছা!

ওদের গল্পের মাঝেই মিলা এসে হাজির হলো। মিলার মুখটা এখনো বেজার। তিতলি মিলাকে এসে বসতে বললো। মিলা বসলো।

-মিলা আপু উই আর স্যরি। তাও মুখটাকে এমন করে রেখো না। তুমি কতো মিষ্টি। তুমি মুখ বেজার করে রাখলে আমার ভালো লাগে না।

তিতলির মিষ্টি কথা শুনেও মিলা মুখ ভার করে রইলো। নীরা তিতলির দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো কি হয়েছে। তিতলি তখনকার ঘটনা বললো। নীরা মিলার কাছে বসে বললো।

-কেউ বাড়িতে আসলে মুখ এমন লটকে রাখতে নেই মিলা। তাছাড়া ওরা তো শুধু হেসেছেই আর তো কিছু করেনি।

-মিলা আপু স্যরি তো। এবার হাসো।

তিতলির মিষ্টি কথায় মিলা আর রাগ করে থাকতে পারলো না। স্বাভাবিক ভাবেই ওদের সাথে গল্প করতে লাগলো। তবে রেহানের সাথে এমন ব্যবহার করলো যেন রেহান অদৃশ্য। রেহানও আর কিছু বলতে পারলো না ভয়ে। মিলা হলো জোয়ালামুখী যখন তখন জ্বলে উঠবে। তারচেয়ে এখন স্বাভাবিক আছে এই ই ভালো।

মালিহা রেহান আর তিতলিকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন। দুপুরের খাবারও খাইয়ে ছাড়লেন। মালিহা যত্ন করে খাওয়ালেন ওদের। মালিহার যত্ন দেখে দুই ভাই বোনের চোখে পানি এসে গেল। মায়ের যত্ন বোধ হয় এমনই হয়। বহুদিন পর এমন স্নেহ পেলো ওরা। ওদের মা ছেড়ে যাওয়ার পর জহুরা ওদের যত্ন নিলেও এমন মনে হয়নি।তাই ওদের হৃদয় ভরে উঠলো। মালিহা বিষয়টা লক্ষ করে ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

-তোমাদের যখন ইচ্ছে হবে আন্টির কাছে চলে আসবে।

মালিহার কথা শুনে তিতলি আর রেহান উচ্ছাসিত হলো। তিতলি বললো

-সত্যিই আন্টি? তাহলে তো ভালোই হয়। এখন থেকে তোমার হাতের দারুন রান্না খেতে পারবো। তোমাকে কিন্তু তুমি করেই বলবো আমরা।

-হ্যা আন্টি তিতলি ঠিক বলেছে। কি ভালো রাঁধো তুমি।

তিতলির কথায় রেহানও সায় দিলো। মালিহা হাসলেন দুই ভাইবোনের কথা শুনে।

-এরপরের বার নীরার হাতের রান্না খেয়ো। আমার চেয়েও ভালো রান্না করে তোমাদের আপু।

মালিহার কথা শুনে নীরা মাথা নাড়লো।

-একদম না আম্মা। আমার রান্না তোমার রান্নার ধারে কাছেও নেই।

-আচ্ছা এরপর তোমার হাতের রান্না খাবো নীরা আপু। তখন দেখবো কে বেশি ভালো রান্না করো।

-আম্মা আর আপা দুজনের রান্নাই সেম। আমাকে যদি কেউ বলে পৃথিবীর সেরা শেফ কে! আমি তখন চোখ বন্ধ করে বলবো আমার আম্মা আর আপা।

মিলার কথায় সবাই হেসে উঠলো। হাসি মজাতে সময় কাটতে লাগলো। এরমধ্যে নীরার দাদীর সাথেও ওদের ভাব হয়ে গেছে। রেহান আর দাদীর মধ্যে বিশেষ ভাব হয়েছে। পুরনো দিনের মানুষের সাথে রেহান জমিয়ে গল্প করতে ভালোবাসে।
এভাবেই পুরো দুপুর বিকেল কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো ওরা। যাওয়ার সময় নীরার দাদী ওদের বললেন।

-মাঝেমাঝেই আসিস তোরা। আমার নাতনি দুটো তো নিরামিষ গল্প জমাতে পারে না। তোরা খুব ভালো পারিস। ভালোই লাগলো।

দাদীর কথা শুনে রেহান মিলার দিকে তাকালো শয়তানি করে বললো।

-কিছু মানুষ তো মাথায় সবসময় আগুন নিয়ে ঘোরে মজা করে গল্প করার সময় কোথায় এদের। আমরা অবশ্যই আসবো দাদী।

মিলা তখন আগুন চোখে রেহানের দিকে তাকালো। রেহান ওকে পাওা দিলো না। সবাইকে বিদায় জানিয়ে দুই ভাই বোন বেড়িয়ে গেল।

এখন রাত এগারোটা। শিহাব ফোন হাতে নিয়ে পাইচারি করছে। নীরাকে ফোন করবে কি করবে না ভাবছে সে। রাতে খাওয়ার সময় তিতলি আর রেহানের থেকে সব শুনেছে সে। ভাই-বোনের উচ্ছাস তার নজর এড়ায়নি। তার ও ভালো লেগেছে ওদের উচ্ছাস দেখে। শিহাব আবার ফোনের দিকে তাকালো। নীরাকে ফোন করবে কি করবে না! আজ সকালের কান্ডে নীরা নিশ্চয়ই এখন আরো রেগে আছে। তার কি দোষ তখন সে দিন দুনিয়া ভুলে গেছিলো। এখন কল দিয়েই দেখুক। নীরার শরীর এখন কেমন আছে নিজ থেকে জানতে হবে তো তাকে। ভাবতে ভাবতেই নীরার নাম্বারে ডায়াল করলো শিহাব।

নীরা মিলার চুল আঁচড়ে বেণী করে দিচ্ছিলো। মিলা প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে নীরার কাছে চুল বাঁধতে বসে। তখনই নীরার ফোনে কল আসলো। মিলার সামনেই নীরার ফোন ছিলো। সে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কে কল করেছে। শিহাবের নামটা স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে উঠলো। ততক্ষনে নীরার চুল বাঁধা শেষ। নীরা জানতে চাইলো কে কল করেছে। মিলা বললো

-শিহাব ভাই।

শিহাবের নাম শুনে নীরা একটু থমকালো। মিলা নীরার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো। নীরা ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করলো। মিলা বসে বসে দেখতে থাকলো তার আপা কি করে।

নীরা ফোন রিসিভ করায় শিহাব আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। তবুও ফোন ধরে গম্ভীরতা বজায় রাখলো।

-হ্যালো নীরা?

-হ্যা বলুন।

-ঠিক আছো এখন?

-ঠিক আছি।

-জ্বর কমেছে? মেডিসিন নিয়েছিলে?

-কমেছে। ওষুধ ও খেয়েছি। আর কিছু বলবেন?

নীরার কথা শুনে শিহাব বিরক্ত হলো। এরকম করে বলছে কেন নীরা আশ্চর্য! সে কি এরকম ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য?

-তুমি কি আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারো না?

নীরা মিলার দিকে একটু তাকালো। তারপর পুনরায় বললো।

-না পারি না। রাখছি।

খট করে মুখের ওপর ফোন কেটে দিলো নীরা। শিহাব কান থেকে ফোন নামিয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো। নীরা তাকে এইভাবে বলতে পারলো! শিহাব বিছানায় বসে দুইহাতে মাথার চুল টেনে ধরলো। নীরা তার সাথে এরকম করে কেন। জীবনে এই একজনের প্রতিই সে টান অনুভব করে। আর তার কাছ থেকেই এরকম ব্যবহার পায়। হঠাত শিহাবের ইউনিভার্সিটির বন্ধু কথার কথা মনে পরলো। কথা তাকে পছন্দ করতো। কিন্তু শিহাব কথাকে বন্ধুর নজরেই দেখতো। যখন দেখলো কথার পাগলামি বাড়ছে তখন শিহাব কথাকে এভয়েড করা শুরু করলো। কথা তারপর বলেছিলো কখনো না কখনো কাউকে না কাউকে তুমি ভালোবাসবে শিহাব। তোমার ভালোবাসার মানুষ যখন তোমাকে এমনভাবেই বুঝেও না বোঝার ভান করে এভয়েড করবে, তখন বুঝবে এর যন্ত্রনা কতো। তার আগে বুঝবে না। শিহাব সেদিন হেসেছিলো। কিন্তু আজ শিহাবের কথাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে।

তোর কারনে এমন হচ্ছে কথা। তুই নিশ্চয়ই অভিশাপ দিয়েছিলি। যার কারণে আজ আমার এই হাল।

কলেজ ইউনিভার্সিটি তে অনেক মেয়েই শিহাবের জীবনে আসতে চেয়েছে। কিন্তু শিহাব এসবে ইন্টারেস্ট দেখায়নি। তার কখনো ইন্টারেস্ট জাগেইনি। ছোটবেলায় বর্ণ বৈষম্যের শিকার হলেও,বড় হওয়ার পর উল্টো সবার পছন্দের হয়ে গেল সে। যাকে বলে ডার্ক হ্যান্ডসাম! ইউনিভার্সিটির সেই বন্ধু কথার এখন বিয়ে হয়ে গেছে। আর এখনো যোগাযোগ হলে কথা ফোন দিয়ে শিহাবকে ডার্ক হ্যান্ডসাম বলে ফ্ল্যার্ট করে। শিহাবের এই অবস্থা দেখলে নিশ্চয়ই কথা হাসবে। রাক্ষসীর মতো হাসতে হাসতে বলবে।

-“আহারে আমাদের ডার্ক হ্যান্ডসাম!একটা মেয়ের কাছে পাওা না পেয়ে শোক পালন করছে রে”।দেখ কেমন লাগে এখন। দেখেছিস!

এসব ভাবতেই শিহাবের মাথা আরো গরম হয়ে গেল। নীরার ওপর আবারও রাগ হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে নীরাকে টেনে এনে সামনে বসিয়ে রাখলে ভালো হতো।

নীরা ফোন কেটে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। মিলা ও তার পিছু পিছু গেল। চুপচাপ নীরাকে পর্যবেক্ষন করলো। তারপর বললো।

-আপা, শিহাব ভাই তোমার জন্য অতোও খারাপ না। হি ইজ দ্যা বেস্ট।

নীরা প্রতিউওরে তখনই কিছু বললো না। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর বললো।

-কিন্তু আমি তো তার জন্য না। আর আমার কখনো তার প্রতি অনুভূতি ও জন্মাবে না।

-জন্মাতে কতোক্ষন আপা? জীবনকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?

নীরা বোনের দিকে স্থির চোখে তাকালো। তারপর বললো।

-তুই সবসময় বলে আসছিস আমি কখনো ভুল করি না। যদিও আমি জানি মানুষ মাএই ভুল। আমিও ভুল করি। কিন্তু আমার এই ডিসিশনে কোনো ভুল নেই। তুই যেহেতু আমার সবকিছুই সঠিক মনে করিস। আমার ভুলগুলোও তোর কাছে সঠিক মনে হয়। তাহলে আমার এই সঠিক ডিসিশনটাকেও তোর সঠিকই মনে করতে হবে।

মিলা আর কিছু বলতে পারলো না। সে তার আপাকে একদম মায়ের মতো ভালোবাসে। ছোট থেকে আপার গা ঘেষে থাকে। তার সবসময় মনে হয় তার আপা কখনো ভুল করতে পারে না। কিন্তু এখন কেন যেনো মনে হচ্ছে শিহাব ভাইকে একটা সুযোগ না দিলে তার আপার জীবনে একটা ভুল হয়ে যাবে। কিন্তু তার আপা সেটা মানতে নারাজ। আর সে তার আপার মুখের ওপর কখনো কথা বলতে পারবে না। কখনোই না! জীবনে প্রথমবারের মতো মিলার আফসোস হলো সে কেন তার আপার বড় বোন হলো না। মিলার ভাবনা থামলো নীরার কথায়।

-রাত হয়েছে গিয়ে ঘুমিয়ে পর। আবার যেনো রিপিট করতে না হয়।

নীরার কথা শুনে মিলা তার ঘরে চলে গেল।

নীরা চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। তার দৃষ্টি সম্মুখে। আজকে আকাশে চাঁদ নেই। কোনো আলো নেই। চতুর্দিকে অন্ধকার। সেই অন্ধকারেই সে নির্মিশেষ তাকিয়ে রইলো। তার চোখ থেকে একটু জল গড়িয়ে পরলো কি!

–চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here