অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-ঊনত্রিশ

0
765

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-ঊনত্রিশ
নাফিসা নীলয়া!

নীরা একইভাবে মাথা ধরে বসে আছে। কিন্তু অনেকক্ষন যাবত সে শিহাবের কোনো সারাশব্দ পাচ্ছে না। সেজন্য নীরা মাথা উচু করে দেখলো শিহাব কাউকে ফোন না করে তার সামনে বসে একধ্যানে তারই দিকে তাকিয়ে আছে। নীরা তাকানোর পরও শিহাব একইভাবে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর শিহাব কথা বলে উঠলো।

-আমাকে বিশ্বাস করো না?

শিহাবের এই প্রশ্নের উওরে নীরা কিছুই বলতে পারলো না। নীরার নীরবতা শিহাবকে আরো রাগিয়ে তুলছে। সে রেগে গিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

-বুঝেছি বিশ্বাস করো না। কেন করো না?

নীরার এখন সব এলোমেলো লাগছে। কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে তার মাথায় এখনো ঢুকছে না।

-তুমি এখন চুপচাপ কেন? বলো কথা বলো।

শিহাবের ধমকানো শুনে নীরা কথা বলে উঠলো।

-তিশার কথাটা কি তুমি আমাকে আগে জানাতে পারতে না? তোমার কি উচিত ছিলো না আমাকে জানানো?

নীরার কথা শুনে শিহাবের কাছে সবই পরিষ্কার হয়ে গেছে। সে এবার নরম স্বরে বললো।

-আমি ক্লিয়ার করি। আমার মা তিশার কথা বলেছিলেন বাবাকে। বাবা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন তিশাকে আমি বিয়ে করতে চাই কিনা। আমি তখন সোজা না করে দিয়েছি। তখনই তোমার কথা বাবাকে জানিয়েছি। নীরা তিশাকে আমি কখনোই ওভাবে দেখিনি। ও আমাদের কাজিন এর চেয়ে বেশি কিছু কখনোই ছিলো না। আমার কাছে আমার মায়ের কথার গুরুত্ব নেই। বাবা আমার কাছ থেকে জাস্ট জানতে চেয়েছেন আমিও আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। দ্যাট্স ইট। এটাকে বিয়ে ঠিক হওয়া বলে না।

-মিথ্যা কথা বলবে না। তোমাদের বিয়ের কথা অনেক আগে থেকেই চলছিলো। তোমাদের মধ্যে আন্ডার্সট্যান্ডিং ও ভালো ছিলো। এজন্যই সবাই তোমাদের বিয়ের কথা ভেবেছে তাই না?

নীরার কথা শুনে শিহাবের এখন ইচ্ছে করছে নীরাকেই ঠাস করে চড় মারতে। আজব মেয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই ব্লেম করা শুরু করেছে।

-অনেক আগে থেকে চলছিলো না। ইভেন মা বাবাকে কয়দিন আগে জানায় এর আগে বাবাও কখনো তিশাকে নিয়ে ভাবেননি। আমার মায়ের একটা ভুল ধারনা ছিলো। যে আমি ওনার পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করবো। কিন্তু সেই ধারনাটা শতভাগ ভুল।

নীরা চুপচাপ বসে আছে। শিহাব নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছে না। আবার জায়মা আর তিশার কথাও নীরা হালকাভাবে নিতে পারছে না। দোটানায় পরে গেছে সে। শিহাব নীরার দ্বিধান্বিত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার কষ্ট হচ্ছে নীরা এখনো তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না। সে বিষন্ন গলায় বললো।

-তোমার দ্বিধান্বিত মুখ আমার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

নীরা মুখ তুলে শিহাবের চোখের দিকে তাকালো ওই চোখে এখন বিষন্নতা রয়েছে। শিহাব উঠে গেল বসা থেকে তারপর বললো।

-কাল বাবাসহ সবাই আসবেন আমাদের বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে। আমি চাইলে আজই তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু আমি সেটা করলাম না। কেন জানো? থাক তুমি তো জানতেই চাও না। তবে এটাও ভেবো না যে তোমাকে কখনো ছাড়বো। কখনো না। আসি।

শিহাব আর কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে গেল। নীরা ওভাবেই বসে রইলো।

শিহাব নীরাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সাইফের ক্যাফের দিকে গেল। তার সবকিছু জানা দরকার। শিহাব জানে নীরা এখন তাকে কিছুই বলবে না। সাইফ আর রুমা যেহেতু নীরার বেস্টফ্রেন্ড সেক্ষেত্রে কিছু না কিছু তো ওদের দুজনের একজন জানতেই পারে। এটা ভেবেই শিহাব সাইফের কাছে যাচ্ছে। শিহাবের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তিশা না জানি আরো কি কি বলেছে নীরাকে। আর নীরাও সেসব হয়তো বিশ্বাস করেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই সে সাইফের ক্যাফেতে এসে পরলো।

সাইফ খাবারের কোয়ালিটি নিয়ে শেফদের সাথে কথা বলছিলো। তখনই তার ম্যানেজার এসে জানালো শিহাব তার জন্য অপেক্ষা করছে। শিহাব প্রায়ই সময় পেলে সাইফের সাথে দেখা করতে আসে। সাইফও মাঝে মাঝে শিহাবের সাথে দেখা করতে যায়। এজন্য সাইফ তাড়াতাড়ি কিচেন থেকে বেড়িয়ে গেল শিহাবের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।

শিহাব অস্থির হয়ে বসে আছে সাইফের অপেক্ষায়। সাইফ এসে দেখলো শিহাব বসে আছে তার জন্য। সে এগিয়ে গিয়ে হাসিমুখে কথা বলা শুরু করলো।

-আরে শিহাব ভাই হোয়াটস আপ? অনেকদিন পর। নীরার কাছে শুনেছিলাম তুমি রাজশাহীতে আছো। কবে ফিরলে?

শিহাব উঠে এসে সাইফকে হাগ করলো। তারপর সাইফকে বললো।

-এইতো আজকেই। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। এজন্যই আসা।

সাইফ বসতে বসতে বললো।

-হ্যা বলো। তার আগে বলো কি খাবে?

-কিছু না ব্যস্ত হতে হবে না সাইফ। যেজন্য এসেছি মেইস পয়েন্টে আসি। নীরা কয়েকদিন ধরে ডিস্টার্ব। তুমি নিশ্চয়ই জেনে থাকবে। ইভেন তোমার বন্ধু আমাকে এই কয়দিন অনেক ইগনোর করেছে। আমার ফোনকল্স এটেন্ড করেনি। মেসেজেসের জবাব দেয়নি। তোমাদের সাথেও কি ও এরকমই ছিলো? আই মিন ওর ডিস্টার্বনেসের কারনটা কি?

শিহাবের কথা শুনে সাইফ একটু অবাক হলো। সাইফ ভেবেছিলো ওর বোঝানোর পর হয়তো নীরা বুঝেছে। ওসব নিয়ে হয়তো দ্বিতীয় বার ভাবেনি। কিন্তু শিহাবের কথা শুনে মনে হচ্ছে নীরা বোঝেনি। তবে ওর ভেতরকার হতাশাটাও ও সেদিনের পরে কারো কাছে প্রকাশ করেনি। এখন শিহাবের কথা শুনে সাইফ নিজেই খুব হতাশ হলো। শিহাব আবারও বলে উঠলো।

-এখন প্লিজ না বলবে না। আমি জানি রুমা আর তুমি নীরার জন্য কি। নীরা মিলাকেও সেসব বলে না যেসব তোমাদের বলে জাস্ট বিকজ মিলা দুঃশ্চিন্তা করবে বলে।

-ও আমাদের কাছেও সব বলে না শিহাব ভাই। নীরা এমনই নিজের সমস্যার কথা কাউকে জানায় না। কাউকে ইনভল্ভ করতে চায় না। তবে হ্যা মাঝে মাঝে কোনোকিছু নিয়ে খুব হতাশ হয়ে গেলে আমার কাছে টুকটাক শেয়ার করে। সেদিনও খুব ডিস্টার্ব হয়ে আমার কাছে এসেছিলো। ও আবারও হীনমন্যতায় ভুগছে শিহাব ভাই। ও আমাকে সেদিন কি বলেছে জানো? কখনো যদি তোমার ওকে নিয়ে আফসোস তৈরি হয়। কখনো যদি মনে হয় ইউ ডিজার্ভ বেটার? তুমি নিশ্চয়ই একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মেয়েকে ডিজার্ভ করো। ওর মাথায় এসবই ঘুরছিলো। তারপর আমি ওকে বারবার এসিউর করলাম ভেবেছি কাজ হয়েছে। কিন্তু আজ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওর মনে এখনো এসবই রয়ে গেছে। আই ডোন্ট নো ও এখনো এসব কেন ভাবছে। ও তো তোমার মায়ের সাথেও দেখা করেছে সেদিন। তারপরও এসব কিভাবে ভাবলো আমার মাথায় আসছে না।

সাইফের সব কথা শুনে শিহাব থমকে গেল। আর কিছু জানার প্রয়োজান নেই বোধ হয়। সে সাইফকে থামিয়ে দিলো।

-নীরার মাথার ভূত আমিই নামাবো সাইফ টেনশন করো না। সব ঠিক হবে এখন আসছি আমি।

-আরে কিছুই তো খেলে না?

-আবার পরে আসবো। বন্ধুর বিয়ের আয়োজন করো। খুব শিঘ্রই তোমার বন্ধু কম বোনের বিয়ে হতে যাচ্ছে।

শিহাবের কথা শুনে সাইফ হেসে ফেললো। শিহাব সাইফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো। বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দিতে জায়মাকে ফোন করলো।

জায়মা আপনমনে বসে বসে বই পড়ছিলেন। তখনই তার ফোন বেজে উঠলো। তিনি ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন শিহাব ফোন করেছে। শিহাবের ফোন নাম্বারটা তার ফোনে সেভ করাই আছে। কিন্তু কখনোই শিহাব তাকে ফোন দেয় না। কখনোই না। আজ দিলো বলে তিনি প্রচন্ড অবাক হলেন। অবাকের ধাপ কাটিয়ে তিনি ফোন রিসিভ করলেন।

-শিহাব এতোদিন পর মায়ের কথা মনে পরলো? এতোদিন কি বলছি তুমি তো আমাকে কখনো ফোনই করো না। আমি খুব খুশি হয়েছি বাবা।

-আপনি এখন আমাদের বাড়িতে আসতে পারবেন?

শিহাবের প্রশ্ন শুনে জায়মা যারপরানই অবাক হলেন।

-মানে?

-মানে আমাদের বাড়িতে আসুন। সেখানেই সব কথা হবে।

-আচ্ছা আসবো।

-তাড়াতাড়ি আসবেন।

বলেই শিহাব ফোন কেটে দিলো। জায়মা ভেবে চলেছেন শিহাব কেন তাকে ওই বাড়িতে যেতে বললো। কিন্তু এর কোনো যুক্তিযুক্ত কারন তিনি খুঁজে পেলেন না। আবার ভাবলেন নীরার বিষয়টা নিয়ে কিছু হয়নি তো। এটা ভেবেই তার ভয় লাগলো। তবুও তিনি মনকে শান্ত করলেন। আজ যদি সেরকম কিছু হয়েই থাকে তবে তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের ছেলেকে বোঝাবেন।

মিলা মালিহা আর নূরজাহান বেগম বাড়িতে এসে দেখলেন দরজা খোলা। আর নীরা চুপচাপ বসে আছে। মালিহা অবাক হয়ে গেলেন সাধারণত নীরা দরজা খুলে বসে থাকে না। আর বাড়িতে কেউ না থাকলে তো এরকম করেই না। মিলাও অবাক হয়েছে। মালিহা ভেতরে ঢুকে নীরাকে জিজ্ঞেস করলেন।

-কিরে এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন? কি হয়েছে?

মালিহার কথার আওয়াজ শুনে নীরা ধড়ফড়িয়ে উঠলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো সবাই এসে গেছে। আর তারই কোনো খেয়াল নেই। সে উঠে দাড়ালো। নূরজাহান বেগম বিষয়টা তেমন আমলে নিলেন না তিনি বললেন।

-আমি ঘরে যাচ্ছি বউমা। আমার একটু বিশ্রামের দরকার।

নূরজাহান বেগমের কথায় মালিহা সায় জানালেন।

-হ্যা আম্মা আপনি ভেতরে যান।

তারপর মিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

-তুইও যা গিয়ে ফ্রেশ হ।

নূরজাহান বেগম ঘরে চলে গেলেও মিলা ঠায় দাড়িয়ে রইলো। তার আপার থমথমে চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু হয়েছে। আর সেটা না জানা পর্যন্ত তার শান্তি নেই। মিলাকে ঠায় দাড়ানো দেখে মালিহা আবার বললেন।

-কিরে যা ঘরে যা। আর নীরা কি হয়েছে তোর? এভাবে দরজা খুলে তো কখনো বসে থাকিস না। কি হয়েছে?

মালিহার ক্রমাগত প্রশ্নে নীরা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। মেকি হেসে মাকে আশ্বস্ত করলো।

-কিছুই হয়নি আম্মা ভালো লাগছিলো না। তাই তোমাদের অপেক্ষায় দরজা খুলে বসে ছিলাম।

নীরার কথা মালিহা আর মিলার বিশ্বাস হলো না। কারন নীরা মুখটাই কেমন যেনো হয়ে আছে। নীরা দেখলো মালিহা আর মিলা দুজনেই তার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এজন্য সে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো।

-আরে তোমরা কতদূর থেকে এসেছো দাড়িয়ে আছো কেন? যাও না ফ্রেশ হও। আমি ঠিক আছি শুধু শুধু এতো প্রশ্ন করছো।

কথা শেষ করেই নীরা নিজের ঘরের দিকে গেল। মালিহা মিলার দিকে তাকালেন। মিলা কাধ ঝাঁকিয়ে বুঝালো সে ও বুঝতে পারলো না কিছু। মালিহা মিলাকে বললেন।

-তুই যা তো তোর আপার কাছে। গিয়ে দেখ ওর চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন।

মালিহার কথা শুনে মিলা তৎক্ষনাত বললো।

-হ্যা আম্মা এখনই যাচ্ছি।

মালিহা ভাবলেন মিলা নিশ্চয়ই বের করতে পারবে নীরার কি হয়েছে। এজন্য তিনি নিশ্চিন্ত মনে নিজের ঘরে চলে গেলেন।

মিলা নীরার ঘরে ঢুকে দেখলো নীরা কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। সে নীরার কপালে হাত দিলো। নীরা উঠে বসে বললো।

-আমার কিচ্ছু হয়নি মিলা। যা ফ্রেশ হ। এতো চিন্তিত হতে হবে না।

-তুমি আমাকে বোঝাচ্ছো আপা? তোমার চোখ মুখের অবস্থা দেখে যে কেউ বলে দিবে তুমি ঠিক নেই।

মিলার কথা শুনে নীরা চুপ করে রইলো। মিলা আবারও বললো।

-বলো না কি হয়েছে তোমার?

-মিলা তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি আমার। আই এম ওকে। শুধু শুধু চিন্তা করছিস।

-তাহলে তুমি বলবে না কি হয়েছে?

মিলার এতো কথা শুনে এবার নীরা রেগে গেল। মিলাকে ধমকে বলে উঠলো।

-বলেছি তো কিছু হয়নি। বারবার একই প্রশ্ন কেন করছিস। বেয়াদব মেয়ে। যা নিজের ঘরে যা আমাকে একদম বিরক্ত করবি না। এখনই যাবি যা।

নীরা ধমক শুনে মিলা কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। তার আপা কি জানে না তার আপার একটু বকাও মিলা সহ্য করতে পারে না তবুও এভাবে ধমক দিলো। সেদিনও রাস্তায় এভাবেই বকেছিলো ভেবেই মিলার কষ্ট লাগলো। সে আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।

নীরা খুব জোরে ধমক দিয়েছে মিলাকে যা মালিহাও ঘর থেকে শুনতে পেয়েছেন। তিনি নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখলেন মিলা মুখ গোমড়া করে ড্রয়িংরুমে এসে বসেছে। মালিহা এগিয়ে এসে মিলাকে জিজ্ঞেস করলেন।

-নীরা এভাবে তোকে ধমক দিলো কেন? ও তো এরকম করে না কি হয়েছে মিলা?

-আমি জানি না আম্মা। আপার নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করাতে আমাকে ধমকে বের হয়ে যেতে বললো।

মিলার কথা শুনে মালিহা নিজেও অবাক হয়ে গেলেন। তিনি নীরার ঘরের দিকে গেলেন। দরজার নব ঘুরালেন দেখলেন ভেতর থেকে লক করা।

-নীরা দরজা বন্ধ করেছিস কেন? আর মিলাকেই বা বকলি কেন? দরজা খোল মা।

নীরার এখন প্রচন্ড মাথা ধরেছে সে দরজা বন্ধ করে আবার শুয়েছে। তাই সে বললো।

-আম্মা আমার একটু মাথা ধরেছে। আমি এখন একটু ঘুমাবো। তোমরা শুধু শুধু চিন্তা করো না।

নীরার এই কথার পৃষ্ঠে মালিহা আর কিছু বললেন না। তিনি তার মেয়েকে বোঝেন। নিশ্চয়ই এখন নীরা একা থাকতে চাইছে এজন্যই দরজা বন্ধ করেছে। যা হয়েছে তা পরেও জানা যাবে। নীরা তার খুব ভালো বাধ্যগত মেয়ে। নিজের ও পরিবারের খেয়াল রাখতে পারে। এখন নিশ্চয়ই কোনো স্ট্রেসে আছে যা কারো কাছে শেয়ার করতে চাইছে না। তিনি জানেন তার মেয়ে নিজের সমস্যায় কাউকে ইনভল্ভ করে না। সেজন্যই এমন করছে। পরে ঠিক হয়ে যাবে ভেবেই তিনি সরে আসলেন। এসে দেখলেন মিলা মুখ মলিন করে বসে আছে। মিলার মুখ মলিন দেখে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মালিহা নিজে বকলে মারলেও মিলা এতো কষ্ট পায় না। যতোটা নীরার সামান্য ধমকে কষ্ট পায়। তিনি এগিয়ে গিয়ে মিলার মাথায় হাত বুলালেন। মিলা মাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।

-আপার কি হয়েছে আম্মা?

-হয়তো কোনো স্ট্রেসে আছে। ঠিক হয়ে যাবে। এখন ওকে বিরক্ত না করাই ঠিক হবে। তুই আর মন খারাপ করে থাকিস না মিলা। একটু পরে দেখবি নীরা নিজে তোর ঘরে এসে তোকে স্যরি বলবে। তোকে ধমক দিলে তো ও নিজেই কষ্ট পায়।

মালিহার কথা শুনে মিলা আর কিছু বললো না। চুপচাপ রইলো।

শিহাব বাড়িতে এসে চুপচাপ বসে রইলো। তিতলি আর রেহান দুজনে ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্ন করে ফেলেছে কিন্তু শিহাব ঠিকঠাক জবাব দেয়নি। তিতলি আর রেহান দুজন এখন চুপচাপ শিহাবকে পর্যবেক্ষন করছে। কিন্তু শিহাবের কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। সে নির্বিকার ভাবে বসে আছে। অনেকক্ষন পর সে তিতলিকে বললো।

-বাবাকে বাড়িতে আসতে বলেছিলি?

শিহাবের প্রশ্ন শুনে তিতলি মাথা নাড়লো।

-হ্যা তুই এসে বলার পরপরই তো ফোন করে বলেছি জলদি আসতে।

ওরা কথা বলতে বলতেই রেজা সাহেব বাড়িতে পৌছে গেলেন। ভেতরে ঢুকে দেখলেন পরিবেশ কেমন থমথমে। তিনি গিয়েছিলেন তার বন্ধুদের সাথে মিট আপে। তিতলির ফোন করে জরুরি তলব শুনেই তাড়াহুড়ো করে এসেছেন তিনি। আর বাড়িতে ঢুকেই তিনি দেখলেন পরিবেশ থমথমে। এরকম কখনো থাকে না। তিন ভাই বোন বাড়িতে থাকলে বাড়ি মাতিয়ে রাখে। বিশেষ করে তিতলি আর রেহান সবসময় ঝগড়া করতেই থাকে। এতে তিনি একটু অবাকই হলেন। রেজা সাহেবকে দেখে তিতলি বলে উঠলো।

-ভাই বাবা এসে গেছে।

তিতলির কথা শুনে শিহাব দেখলো রেজা সাহেব এসে গেছেন। রেজা সাহেব এগিয়ে এসে বসলেন। তারপর শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

-আজই এসেছো। আগে বলোনি তো। আর কি এমন জরুরি কাজ যে আমাকে এতো তাড়া দিয়ে নিয়ে এলে।

-দরকার আছে। আরেকটু অপেক্ষা করো। তারপরেই বুঝতে পারবে।

শিহাবের কথা শুনে কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না। রেহান এসবের থেকে উঠে গিয়ে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরে জহুরা কাজ করছিলেন। রেহান গিয়ে ফ্রিজ থেকে আপেল বের করে খেতে খেতে জহুরাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

-ভাইয়ের কি হয়েছে বলো তো? এমন রেগে আছে কেন?

রেহানের কথা শুনে জহুরাও চিন্তিত গলায় বললেন।

-আমিও তো বুঝতে পারছি না। ওর কি হয়েছে। তোরা জিজ্ঞেস করিসনি?

-আল্লাহ জিজ্ঞেস করিনি আবার। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু কোনো কিছুই বললো না। বোম্ব হয়ে আছে। না জানি কি হয়েছে!

-কি খাবি আজকে তোরা?

-খালা আগে ভাইয়ের কাহিনী দেখে নেই। তারপর বলবো। ভীষণ রেগে আছে। সেই রাগে কাকে ভস্ম করবে কে জানে।

রেহান জহুরার সাথে কথা বলতে বলতেই গাড়ির হর্ন শুনতে পেলো। তারপর জহুরার হাত থেকে ছুড়ি নিয়ে বললো।

-রাখো তোমার কাজ ভাই আবার কাকে ডেকেছে কে জানে চলো দেখে আসি।

বলেই জহুরাকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল রেহান।

জায়মা বাড়িতে ঢোকার পর উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল। জায়মার উপস্থিতি এখন কেউই আশা করেনি। তিতলি জায়মাকে দেখেই রেগে গেল। রেহান এসে জায়মাকে দেখে একটা হাসি দিলো। এগিয়ে এসে বললো।

-মা কেমন আছো?

জায়মা হালকা হেসে বললেন।

-ভালো আছি তুমি কেমন আছো?

-আলহামদুলিল্লাহ।

রেজা সাহেব অবাক হয়ে শিহাবের দিকে তাকালেন। শিহাব বললো।

-আমিই ডেকেছি।

তারপর জহুরাকে উদ্দেশ্য করে বললো

-খালা তিশা আর খালামনিকে ডেকে নিয়ে এসো। এতোক্ষন হয়ে গেল ওরা ঘরে কি করছে!

শিহাবের কথা শুনে জহুরা তিশাদের ডাকতে গেলেন।

রেহান জায়মাকে বসতে বললো। জায়মা বসলেন। তিশা আর আসমাও ততোক্ষনে এসে গেছে। তিশা আর আসমা জায়মাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। জায়মা মনে মনে অনেককিছুই ভাবছেন। তবে সবার সামনে স্বাভাবিক থাকছেন।

শিহাব এক পলক সবার দিকে তাকালো তারপর তিতলি আর রেহানকে উদ্দেশ্য করে বললো।

-মাকে তোমরা ভালোবাসো?

তিতলি আর রেহান একে অপরের দিকে তাকালো। কিন্তু কিছুই বুঝলো না। নীরব রইলো। শিহাব ওদের নীরবতা দেখে ধমকে উঠলো।

-আন্সার মি!

তিতলি আর রেহান মাথা নাড়লো। তারমানে বাসে।

রেজা সাহেব জায়মা তিশাসহ সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শিহাবের দিকে। শিহাব আবার বললো।

-কেন বাসো? যেই মহিলা নিজের স্বার্থের জন্য তোমাদের কথা ভুলে নিজের এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে তাকে কেন ভালোবাসো?

তিতলি আর রেহান এই কথার কোনো জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে রইলো। জায়মা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আজ পর্যন্ত শিহাব তাকে এভাবে বলেনি। কখনোই না। মনে রাগ দুঃখ ঘৃণা থাকলেও এসব কথা তাকে শিহাবের থেকে কখনোই শুনতে হয়নি।

-মা যাওয়ার পর সবসময় তোদের খেয়াল কে রেখেছে?

তিতলি ইতিমধ্যে কেঁদে দিয়েছে। সে এখন হিচঁকি তুলে কাঁদছে। রেহানের আর রেজা সাহেবের চোখ ও ছলছল করছে। রেহান আর তিতলি একসাথে শিহাবকে বললো।

-তুমি ভাই।

-তাহলে আজ এখন তোরা ঠিক কর। তোদের কাছে আমি বড় না তোদের সো কল্ড মা বড়?

জায়মার গাল বেয়ে পানি পরছে। এই দিনও তার দেখতে হলো। তিশা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে শিহাবের রাগের কারন। সে কিছু বলেও পারছে না এখন। শিহাব সবাইকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে উঠলো।

-এই মহিলা আমাদের ছেড়ে রাতের আধারে তার প্রাক্তনের সাথে পালিয়ে গেছে। স্বার্থপরের মতো। তার ভাষায় আমার বাবার সংসারে ও বাবার প্রতি তার বিতৃষ্ণা এসে গেছিলো। এজন্যই সুখের খোঁজে সে পালিয়েছে। এরপরের গল্পটা কি সবাই জানে? এরপরের গল্পটা হচ্ছে আমি আর রেহান বাইরে গেলে স্কুলে গেলে রিলেটিভদের বাড়িতে গেলে বেড়াতে গেলে সবজায়গায় আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। সবাই আমাদের জিজ্ঞেস করতো আমাদের মা কার সাথে পালিয়েছে। আমরা কিছু দেখেছি কিনা। কোনো বাইরের লোক বাবার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে আসতো কিনা। আরো জঘণ্য সব কথা শুনতে হতো আমাদের। আর তিতলি? ও তো দুধের শিশু ছিলো। যেদিন এই মহিলা চলে গেল সেদিনের পর তিতলি মায়ের দুধের অভাবে কাঁদতো। গলা ফাটিয়ে কাঁদতো। আমি আর রেহান তখন কিছুই বুঝতাম না। বুঝতাম না আমাদের পুতুলের মতো ছোট্ট বোন কেন এতো কাঁদে! বুঝতাম না আমরা। পরে যখন বুঝলাম ও খিদের চোটে কাঁদে তখন ওকে এমনি দুধ খাওয়াতাম। ওতে কি ওর পেট ভরে। ওটুকু বাচ্চা মায়ের দুধ ছাড়া কি কিছু খেতে পারে! আর আমাদের বাবা এই মহিলাকে এতো ভালোবাসতেন যে শোকে পাথর হয়ে গেছিলেন। আমাদের প্রতি তার কোনো খেয়ালই ছিলো না। এতোকিছুর পরও বাবা এই মহিলার প্রতি কোনো অভিযোগ করেননি। বিনাবাক্য ব্যয়ে মুক্তি দিয়েছেন। তারপর আমাদের খেয়ালই রাখেননি। তখন আমি তোদের দেখেছি। আমরা নিজেরাই নিজেদের খেয়াল রেখেছি। বাবা তার কয়েকটা মাস পর জহুরা খালাকে নিয়ে এসে বললেন এখন থেকে উনিই আমাদের দেখে রাখবেন। খালার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। সেসময় খালা না এলে আমি আমার ভাই-বোনদের ভালোভাবে দেখভাল করতে পারতাম না।

একসাথে এতো কথা বলে থামলো শিহাব। তার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সে কথাগুলো বলছে শক্ত কন্ঠে। রেজা সাহেব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছেন। তিতলি কাঁদছে রেহানকে জড়িয়ে ধরে। জায়মা মাথা নিচু করে আছেন। শিহাব আবার তিতলি আর রেহানকে উদ্দেশ্য করে বললো।

-আমি স্কুল থেকে এসেই তোদের খাইয়ে দিতাম নিজ হাতে। জহুরা খালার কাছে তোরা খেতে চাইতিস না। বলতিস ভাই না খাইয়ে দিলে খাবি না। আমি তোদের এই আনাড়ি হাতে খাইয়েছি, গোসল করিয়েছি,পড়িয়েছি,যত্ন করেছি। ভালোভাবে বড় করেছি। আমার এই ভালোবাসা,ত্যাগ যদি তোদের কাছে মনে থাকে তাহলে আজকের পর থেকে তোরা এই মহিলার সাথে কোনোপ্রকার যোগাযোগ করবি না। অনেক হয়েছে। আমি কখনো বাঁধা দেইনি। ওনার যখন মনে হয়েছে তোদের সাথে দেখা করেছেন। যখন মনে হয়েছে তোদের কাছে এসেছেন। যখন মনে হয়েছে দূরে ছুড়ে ফেলেছেন। আমি কিছুই বলিনি। তবে আজ বলছি। আমি তোদের না করলাম। এরকম মহিলা কখনো কারো মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তোরা ওনার সাথে যোগাযোগ রাখবি না।

তিতলি আর রেহান দুজনেই এসে শিহাবকে জড়িয়ে ধরে বললো।

-রাখবো না। আমাদের কাছে আমাদের ভাই বড়। যেই ভাই আমাদের জন্য এতোকিছু করেছে তার কথা আমরা কখনোই অমান্য করবো না। আমরা আমাদের ভাইকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।

তিতলি আর রেহানের কথা শুনে জায়মা সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেললেন। এতোক্ষন তিনি বহু কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছিলেন। এখন সম্ভব হচ্ছে না। জায়মা কাঁদতে কাঁদতে শিহাবের কাছে মিনতি করলেন।

-এতো বড় শাস্তি আমাকে দিয়ো না বাবা। দিয়ো না। আমার সন্তানদের কাছ থেকে আমাকে আলাদা করো না।

জায়মার বলা কথা শুনে শিহাব শান্তভাবে বললো।

-আপনি কবে আপনার সন্তানদের কাছে ছিলেন? যে আজ আলাদা হবেন?

শিহাব এবার উঠে তিশার সামনে আসলো। তিশা ভড়কে গেল। তিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শিহাব তিশাকে জোরেসোরে চড় মারলো। এতে তিশা ব্যালেন্স রাখতে না পেরে পরে গেল। আসমা হতভম্ব হয়ে বললেন।

-আমার মেয়েকে কেন মারলে তুমি?

-কারন আপনার মেয়ে আমার ভালোবাসাকে কষ্ট দিয়েছে। শুনে দেখুন ওর কাছে। ও আর এই মহিলা মিলে নীরাকে কি বলেছে! শুনে দেখুন।

জায়মা কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করে বললেন।

-শিহাব ওই মেয়ে তোমার যোগ্য না। এটাই বুঝিয়েছি আমি ওই মেয়েকে। আমার ছেলে একটা ডিজেবল্ড মেয়েকে বিয়ে করবে সেটা আমি কি করে হতে দেই?,তুমি ওর থেকে আরো ভালো মেয়ে পেতে। আর তুমি কিনা ওই মেয়ের জন্য আমাকে এভাবে অপমান করলে? আমি ঠিকই করেছি তাহলে। একদম ঠিক করেছি ওই মেয়েকে ওর নিজের জায়গাটা দেখিয়ে।

জায়মার কথা শুনে শিহাব ভয়াবহ রেগে গেল।

-আপনার কোনো জায়গা আছে? যে আপনি নীরার জায়গা ওকে দেখাবেন? আপনার আর আপনার পছন্দের তিশার কি যোগ্যতা আছে? আপনি তো প্রথমে আমার বাবার টাকায় আলিশান জীবন কাটিয়েছেন। আর এরপর আপনার সেকেন্ড হাজবেন্ডের। আর আপনি জায়গক দেখাবেন নীরাকে? প্লিজ এটা বাইরের কাউকে বলবেন না। নইলে নিজেই হাসির পাএী হয়ে যাবেন।

শিহাব এবার তিশার দিকে তাকিয়ে বললো।

-তোর বয়ফ্রেন্ড কি ছেড়ে দিয়েছে তোকে? নাকি এখন আর দুজন দুজনের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই কোনটা? সবাই জানে যে তুই তোর সো কল্ড বয়ফ্রেন্ডের সাথে অনেক গভীর সম্পর্কে ছিলিস? স্পষ্ট ভাষায় বলবো আরো? এখানে সবাই এডাল্ট। সবাই বুঝে গেছে আশা করি। সাহস কি করে হলো নীরাকে ওসব বলার? বল সাহস কি করে হলো ওর সেল্ফ রেস্পেক্টে আঘাত করার? খুব বড় ভুল করেছিস তুই। খুব বড়। কান খুলে শুনে রাখ আমার লাইফ পার্টনার হওয়ার যোগ্য একমাএ নীরা। তোর মতো কেউ না। কখনোই না।

তিশা এর আগে এতো অপমানিত কখনোই হয়নি। অপমানে রাগে কষ্টে তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সে তো শিহাবকে শুধু ভালোইবেসেছে। মাথা উচু করে কারো দিকে তাকাতে পারছে না সে।

শিহাব জায়মাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

-আপনি আর যাই করুন নিজের মতোই কাউকে চুজ করেছেন। তিশাও আপনার মতোই কংগ্রাচুলেশনস। বাই এনি চান্স আমার সাথে ওর বিয়ে হলে ও নিজেও আপনারই মতো একসময় প্রাক্তনের সাথে পালিয়ে যেতো। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন রাইট?

জায়মার বলার আর কিছুই রইলো না। তিনি নিঃশ্বব্দে কাঁদতে লাগলেন। তিশা এবার সবার সামনে বলে উঠলো।

-যা করেছি তোমাকে ভালোবেসে করেছি শিহাব। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে দয়া করো তোমার কাছে একটু জায়গা দাও।

শিহাব তিশাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আসমাকে বললো।

-খালামনি আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনারা তিশাকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেননি। দয়া করে ওকে নিয়ে যান। আর কখনো যেনো আমার বাড়িতে ও না আসে।

জায়মার কাছে গিয়ে শিহাব আস্তে করে বললো।

-নীরাকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আমি এতোটা ভালোবাসি ওকে। আমাকে যদি আপনি সত্যিই নিজের ছেলে ভেবে থাকেন। তাহলে ভুলেও নীরাকে কটু কথা বলে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ইনিয়েবিনিয়ে ব্রেনওয়াশ করার চেষ্টা করবেন না। আরেকটা কথা আপনি তিশাকেও খুব ভালোবাসেন আমিও সেটা জানি। তাই আপনাকেই বলছি। তিশাও যদি কখনো কোনোদিনও নীরাকে কষ্ট দেয়। একটুও কষ্ট দিয়ে কথা বলে বিশ্বাস করুন আমি তিশার লাইফটাই হেল করে দিবো। তিশাকে তো আপনি মেয়ে ভাবেন। মেয়ের লাইফ জাহান্নামে পরিণত হলে কেমন লাগবে আপনার? আপনি এখন আসতে পারেন।

কথা শেষ করেই শিহাব চলে আসলো। রেজা সাহেব জায়মাকে বললেন।

-আমি তোমাকে বহুবছর যা বলতে পারিনি আমার ছেলে আজ তা ই বলে দিয়েছে।

কথা শেষ করেই রেজা সাহেব নিজের ঘরে চলে গেলেন। আজ আরও বেশি আত্মগ্লানিতে ভুগছেন তিনি।

জায়মা তিতলি আর রেহানের দিকে তাকালেন। ওরা দুজনেই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। জায়মা তবুও ওদের সামনে গিয়ে বললেন।

-মাকে পারলে ক্ষমা করে দিস। শিহাবকে বলিস ও যেনো আমাকে ক্ষমা করে দেয়।

তিতলি আর রেহান দুজনের কেউই কিছু বললো না। জায়মা একরাশ কষ্ট নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। তিশা রাগে শক্ত হয়ে নিজের ঘরে গেল। আসমাকে ধমকে বললো ব্যাগ প্যাক করে নিতে। আসমা নিজের মেয়ের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকালেন। এতোকিছুর পরও নিজের মেয়ের এহেন অবস্থা দেখে। তবে কিছু বললেন না। তিশা আর আসমা তাড়াতাড়ি ব্যাগ প্যাক করে বাড়ি থেকে চলে গেল। সবার সামনে দিয়েই গেল। তাদের কেউ কিছু বললো না আর তারাও শোনার অপেক্ষাতে রইলো না।

শিহাব নিজের ঘরে খাটে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। অনেকক্ষন হয়ে গেছে সে একইভাবে বসে আছে। রাত হয়ে গেছে বসে থাকতে থাকতেই। সে ওভাবেই বসে নীরাকে ফোন করলো।

নীরা শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। রিংটোনের আওয়াজে উঠে বসলো। শিহাবের ফোনকল দেখে একবার ভাবলো ধরবে না। আবার ভাবলো যেই ঘাড়ত্যাড়া ফোন না ধরলে বাড়িতেই এসে পরবে। বাধ্য হয়ে ফোন ধরতে হলো। ফোন ধরেই নীরা চুপ করে রইলো। শিহাব বলে উঠলো।

-আই এম স্যরি। তখন আমার ওরকম বিহেভ করা সত্যিই উচিত হয়নি।

নীরা তবুও কিছু বললো না। শিহাব নীরার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বললো।

-তোমার সাথে এসব ঠিক যাচ্ছে না।

এবার নীরা কথা বললো। জিজ্ঞেস করলো।

-কোনসব?

-এইযে এমন বিহেভ।

-কেমন বিহেভ?

এইবার শিহাব শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই বললো।

-কিছু না।

-রাখছি।

-তুমি কি আবার রেগে গেলে?

নীরা ভ্রু কুঁচকালো শিহাবের কথা শুনে। শিহাব আবার বললো।

-তুমি নিশ্চয়ই এখন ভ্রু কুঁচকে আছো?

শিহাবের কথা শুনে নীরা অবাক হয়ে গেল।

-আমি কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছি। আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি। আমার সত্যিই ভীষণ কষ্ট হয়েছে।

নীরা আনমনে বললো।

-হু।

-হু আবার কি? আচ্ছা আমাদের বিয়েতে তুমি কি পরবে? সব তোমার পছন্দ অনুযায়ী হবে।

নীরা বিরক্ত হলো এবার।

-তুমি সত্যিই একটা যা তা।

শিহাব হাসতে হাসতে বললো।

-শুধু তোমার জন্য।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here