অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-সাঁইত্রিশ

0
695

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-সাঁইত্রিশ
নাফিসা নীলয়া!

আজ শিহাব আর নীরার ওয়ালিমা। রেজা সাহেবের ইচ্ছে ছিলো বড় করে ওয়ালিমা করবেন। তিতলি রেহানও তাই ই চাইছিলো। সেজন্যই এতো আয়োজন। সব ডেকোরেট করা আগেই হয়ে গেছে। তিতলি নীরাকে নিজের হাতে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। তিতলি নীরাকে ঠিকমতো দেখে বললো।

-ভাবিমা ইউ লুকিং ভেরি প্রিটি। তুমি যে কি সুন্দর। মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ! কারো নজর না লাগুক।

নীরা তিতলির কথা শুনে হাসলো। বললো।

-তোমার চোখ সুন্দর তাই আমিও সুন্দর।

তিতলি নীরাকে বসিয়ে বললো।

-তুমি বসো আমি আসছি একটু পরে।

নীরাও কিছু না বলে বসে পরলো। তিতলি চলে যাওয়ার পর শিহাব আসলো ঘরে। সে এসেই নীরাকে দেখে চমক খেলো। চমকিত চোখে তাকিয়ে রইলো। নীরা সেটা লক্ষ করে বললো।

-তুমি মাঝেমাঝে এমন ভূত দেখার মতো চমকাবে না। আশ্চর্য হয়ে যাই আমি এমনভাবে চমকে যাও যে আমার মনে হয় আমি কোনো এলিয়েন।

নীরা একটা গাড়ো বেগুনি রঙের শাড়ি পড়েছে। দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে। নীরাকে সব অবস্থাতেই শিহাবের কাছে খুব সুন্দর লাগে। সে নীরার কথা শুনে এগিয়ে এসে বললো।

-আমার কাছে যদি সুন্দরের ডেফিনেশন জানতে চাওয়া হয়। তাহলে আমি তোমাকে দেখিয়ে দিবো।

শিহাবের কথা শুনে নীরার ভালো লাগায় মন ভরে উঠলো। তবে সে প্রকাশ করলো না। একটুখানি হাসলো। শিহাব হঠাত চিন্তিত স্বরে বললো।

-আচ্ছা ভালো কথা শাড়ি পরে হাটতে কষ্ট হবে না তো?

নীরা আগের মতোই হেসে বললো।

-একদম না।

শিহাবের চিন্তা তবুও গেল না। সে জোর দিয়েই বললো।

-দেখো আমাদের বিয়ের দিন ছিলো বলে তোমাকে শাড়ি পড়তে বলেছিলাম। আমি তো জানি তোমার হাটতে অসুবিধা হবে। সো এতোকিছু না ভেবে শাড়ি বদলে অন্যকিছু পড়ো।

নীরা একটু বিরক্ত হয়ে বললো।

-আমার সমস্যা হবে না তো। একটু সাবধানে হাটবো। আমি এতোও আনাড়ি না।

শিহাব গম্ভীর হয়ে বললো।

-না তুমি শাড়ি পালটে আসো। তারপর যা খুশি তাই ই পড়ো আমার সমস্যা নেই।

এবার নীরা বিরক্ত হলো।

-সমস্যা নেই তো। বারবার একই কথা বলছো তুমি! তাছাড়া এই শাড়িটা আমাকে বাবা দিয়েছেন। সেজন্যই আজকে পড়েছি। আমি এটা আর পাল্টাবো না। না মানে না।

নীরার একগুঁয়ে কথা শুনে শিহাব হার মেনে নিলো। বললো।

-এতোদিন জানতাম আমিই জেদী। কিন্তু না এখন তো দেখছি আমার চেয়ে বড় জেদীও রয়েছে।

নীরা এই পর্যায়ে হেসে ফেললো। ওরা কথা বলতে বলতেই রেহান এসে দরজায় নক করলো। শিহাব অনুমতি দিলে ভেতরে আসলো। এসে বললো।

-সবাই এসে গেছে ভাই। তোমরা তাড়াতাড়ি এসো।

রেহান কথাটা বলেই যেমন দ্রুত এসেছিলো। ঠিক তেমনভাবেই চলে গেল। শিহাব নীরার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো।

-চলো।

নীরা শিহাবের বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে হাতটা ধরলো।

মিলা রুমা সাইফ আর মালিহারা সবাইও এসে গেছেন। মিলা নির্বানকেও ফোন করে জোর করে আনিয়েছে। নির্বান আসতে চাইছিলো না। কিন্তু মিলা তাকে এমনভকবে ধমকেছে যে সে সুরসুর করে ভয়ে এসে পরেছে।

মিলা এসেই রেহানকে খুঁজছে। কেন খুঁজছে সে নিজেই জানে না। কিন্তু তার চোখ রেহানকে খুঁজছে। মিলা রেহানকে এভাবে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে খোঁজার মধ্যেই রেহান পেছন থেকে এসে মিলাকে আওয়াজ করে ভয় দেখালো। মিলা ভয় পেয়ে পেছনে ফিরে রেহানকে দেখলো। রেহানকে দেখেই তার মেজাজ গরম হয়ে গেল। রেহান মিলাকে ভয় দেখাতে পেরে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। মিলা দাঁত কিড়মিড় করে রেহানকে কিছু বলতে গেলে রেহান নিজেই বললো।

-বেয়াইন। তোমাকে তো খুব প্রিটি লাগছে। খুব সুন্দর সেজেছো দেখছি। কিন্তু লাভ নেই। আমাকে ইম্প্রেস করা এতো সোজা না।

ভয় দেখানোর কারনে না মিলা যতোটা রেগে ছিলো রেহানের এই কথাটা শুনে তারচেয়ে দ্বিগুন রেগে গেল। রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো।

-হাহ্ আমি মিলা তোমাকে ইম্প্রেস করবো? তোমার মতো বেজিকে? হাউ! আয়নায় গিয়ে নিজের চেহারা দেখো যাও।

মিলার এমন কথাতেও রেহানের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতেই বললো।

-ভাবিমাকে কি বলবো যে তার নম্র ভদ্র নিস্পাপ ভাইকে একটা আর্টিফিশিয়াল সুন্দরী টিলা কি কি বাজে কথা বলেছে! কি বলবো?

এরকম কথা শুনে মিলার মাথায় ধপ করে আগুন ধরে গেল। সে রেহানের পায়ে ইচ্ছে করে হিল দিয়ে পা মাড়িয়ে বললো।

-আজকের দিনটা নষ্ট করতে চাইলাম না। নইলে তোমার যে কি হাল করতাম আমি! তা তুমি ভাবতেও পারছো না।

বলেই মিলা উল্টো ঘুরে চলে গেল। এদিকে রেহান দাড়িয়েই রইলো। তার পা বোধ হয় ছিলেই গেছে। ব্যথাও করছে। এটা নিয়ে মিলা তাকে দুইবার এভাবে ব্যথা দিলো। কিন্তু এবার রেহান চেঁচালো না। ব্যথায় আওয়াজও করলো না। হাসি হাসি মুখ করে মিলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। মিলাকে জ্বালিয়ে সে যেই আনন্দ পায়। তা কখনো অন্যকে জ্বালাতন করে পায়নি।

মালিহা রেজাউল আর নূরজাহান বেগম রেজা সাহেবের সাথে কথা বলছিলেন। তখনই নীরা আর শিহাব এলো। মালিহা নীরাকে দেখে এগিয়ে গেলেন। নীরা মালিহাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের বুকে মিশে রইলো । শিহাব রেজাউলকে সালাম জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করলো। নূরজাহান বেগমকেও সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করলো। নীরা খানিকক্ষণ মালিহাকে জড়িয়ে ধরে ওভাবেই রইলো। মালিহাও মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছেন পরম মমতায়। কিছু সময় পর নীরা নিজেই মালিহাকে ছাড়লো। মালিহা নীরাকে দেখলের দু চোখ ভরে। মনে হচ্ছে জনম জনম দেখেননি মেয়েকে। নীরা মালিহাকে ধরেই বললো।

-কেমন আছো আম্মা?

মালিহা নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

-আলহামদুলিল্লাহ্ আমার মেয়েকে দেখতে পেয়ে আরো ভালো আছি এখন। আমার মেয়েটা কেমন আছে?

-আমিও খুব ভালো আছি৷

নীরার হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে মালিহার মন ভরে গেল। বিয়ের পর মেয়ের সুখী সুখী চেহারা দেখলে কোন মায়ের ভালো না লাগে।

জহুরা এতোখন সব দেখভাল করছিলেন। সবাইকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলেন। মালিহাকে বললেন।

-আপনার মেয়েটা এতো লক্ষী আপা। যে আমি শুধু মুগ্ধই হয়ে যাচ্ছি।

জহুরার কথা শুনে মালিহার খুব ভালো লাগলো। মালিহা জহুরার সাথে কথা বলতে লাগলেন।

নীরা রেজাউলকে দেখে এবার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। রেজাউলও জড়িয়ে ধরলেন। নীরা রেজাউলকে ওভাবে ধরেই বললো।

-শরীর ঠিক আছে না তোমার? ওষুধ খেয়েছো তো ঠিকঠাক?

রেজাউলও হাসতে হাসতে বললেন।

-তোর বোন দায়িত্বশীল হয়ে গেছে। সে নিজেই আমাকে ওষুধ দিয়েছে খেতে।

নূরজাহান বেগম এতোক্ষন শিহাব আর রেজা সাহেবের সাথে কথা বলছিলেন। নীরা বাবাকে ছেড়ে নূরজাহান বেগমের দিকে তাকালে তিনি কপট রাগ করে বললেন।

-আমার দিকে খেয়াল রাখতে হবে না। বাবা-মাকে নিয়েই থাক।

নূরজাহান বেগমের অভিমানী কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। নীরা গিয়ে নূরজাহান বেগমকেও জড়িয়ে ধরলো। ভালো মন্দ খবর নিলো। নূরজাহান বেগম নীরা মুখ ছুঁয়ে বললেন।

-একদিনেই কি সুন্দর হয়ে গেছিস।

নীরা হাসতে হাসতে বললো।

-কেন আগে সুন্দর ছিলাম না?

নূরজাহান বেগম শুধু হাসলেন কিছু বললেন না।

রেজা সাহেব তার দেওয়া শাড়ি নীরাকে পড়তে দেখে চমকিত হলেন। কাছে গিয়ে নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

-একদম আমার মায়ের মতো লাগছে।

নীরা বললো।

-আমি তো তোমারই মা।

রেজা সাহেব স্নেহাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন নীরার দিকে।

মিলা রেহানের সাথে কথা কাটাকাটি করে মুখ ফুলিয়ে রাখলো। রুমা আর সাইফ তা দেখে বললো।

-মুখটাকে এমন করে যে রেখেছিস নীরা দেখলে কি বলবে?

এই কথা শুনে মিলা মুখটাকে স্বাভাবিক করলো। নির্বান ওদের কাছে এসে বললো।

-ইয়ে মানে মিলা আপু। ম্যামের সাথে দেখা করিয়ে দিন আমার খুব জরুরি কাজ আছে দেখা করেই চলে যাবো।

মিলা রেহানের ওপর এমনিতেই রেগে ছিলো নির্বানের কথা শুনে এবার রেহানের ওপরের রাগ নির্বানকে দেখালো। ঝাড়ি মেরে বললো।

-এই ছেলে একদম চুপ। আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি। তুমি আমার সাথে এসেছো আমার সাথেই যাবে। বেয়াদব ছেলে বড়দের কথা শোনে না।

অকারনে মিলার ঝাড়ি খেয়ে নির্বান থতমত খেয়ে গেল। রুমানআর সাইফ নির্বানের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। নির্বান কি বলবে বুঝতে পারলো না। তাই সে চুপচাপ রইলো। মিলা নির্বানকে চুপ থাকতে দেখে বললো।

-কি বলেছি শুনেছো?

নির্বান মিনমিন করে বললো।

-জ্বি শুনেছি।

সেই মুহূ্তেই তিতলি তিড়িং বিড়িং করতে করতে মিলাদের কাছে আসলো।

-মিলা আপু,রুমা আপু তোমরা এখানে কেন? ভাবিমা কতোক্ষন যাবত তোমাদের খুঁজছে। চলো ওইদিকে চলো।

তিতলির কথা শুনেই মিলা উঠলো। এতোক্ষনে তার মাথা একটু ঠান্ডা হয়েছে। মিলা রুমা আর সাইফের সাথে আগে গেল। তিতলি দেখলো নির্বান নড়ছে না একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে। সে একটু ধমকে বললো।

-আপনাকে কি আমার দাওয়াত করে নিয়ে যেতে হবে? ভাবিমা সবাইকে খুঁজছে। বলার পরও আপনি দাড়িয়ে আছেন কেন আজব!

তিতলির ধমক শুনে নির্বান ভীষণভাবে থতমত খেলো। হচ্ছেটা কি আজ সবাই তাকে এভাবে ঝাড়ছে কেন। নির্বান কথা না বলে হাটতে লাগলো। তিতলি ও নির্বানের পাশে হাটতে হাটতে বললো।

-আপনি যে আমাকে পছন্দ করেন তা আমি অনেক আগেই বুঝে গেছি। আপনি বলারও আগে বুঝে গেছি। কিন্তু এখন কোনোভাবেই কোনো কমিটমেন্ট আমি কাউকে দিতে পারবো না। বা বলতে পারেন আমি এই মুহূর্তে ইন্টারেস্টেড নই। আমার ভাইদের আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। সেই সব স্বপ্ন আমি পূরণ করার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি। আমার ভাইরা আমার জন্য অনেক অনেক ত্যাগ করেছে আর তাদের জন্য আমি আমার সব দিতে পারি। তাই বলছি আপনি যেটা চাইছেন সেটা এই মুহূর্তে সম্ভব না।

কথা শেষ করেই তিতলি হাটা থামিয়ে হেসে নির্বানের দিকে তাকালো। নির্বান কি বলবে বুঝলো না। শুধু এটাই বুঝলো যে সে আরো একবার এই মেয়েটার প্রেমে পরে গেল। এতো অল্প বয়স অথচ কি সুন্দর পরিপক্ক মানসিকতা। তিতলি আবারও বললো।

-এখন হয়তো আপনি বলতে পারেন আমি বলছি যে হয়তো বলতে পারেন। আপনি আমার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাড়াবেন না। আমরা একটা রিলেশনে যেতেই পারি। সেক্ষেত্রে আমি বলবো এখনই এসবের সঠিক সময় না। আমার কাছে সবকিছুর আগে আমার ভাইয়েরা। আর এখন সময় ভাইদের স্বপ্ন, নিজের স্বপ্ন পূরণ করার। এখনই আমি এসবে এতো ইন্টারেস্টেড না। জীবন একটাই আর এই জীবনে আমি সবকিছু খুব সুন্দরভাবে করতে চাই। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে চাই। আর আপনিও তো একদম ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আছেন। আগে নিজের জীবন সুন্দর করে গোঁছান। পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব নিন। তারপর এসব ভাবার সময় অনেক পাবেন। আমি আশা করছি আপনি আমার কথা বুঝেছেন।

এই মুহূর্তে নির্বান হেসে ফেললো। বললো।

-আমি আপনাকে যদিও বলতাম না এখনই কোনো স্টেপ নিতে৷ আমি ওরকম তো একদমই না। আপনার সম্মতি ছাড়া এগোনোর কথা আমি চিন্তাও করিনি। আপনার চিন্তাকে আমি সম্মান জানাচ্ছি। এমন সুন্দর মানসিকতা কয়জন রাখে! আপনি চিন্তা করবেন না। এখন থেকে আর আমি ওরকম করবো না। প্রমিস। বরং অপেক্ষা করবো সঠিক সময়ের।

তিতলিও হাসলো। বললো।

-আর শুনুন ভয়টা একটু কমাবেন। আমাকে আর আমার ভাইদের দেখলে এতো কাঁপকাঁপি করবেন না। আমি বা আমার ভাইয়েরা এতোটাও ভয়ংকর নই। আমি আমার ছোট ভাইকে বুঝিয়ে বলবো যেনো ও আর আপনাকে উল্টোপাল্টা না বলে।

তিতলির কথায় নির্বান মাথা চুলকে হাসলো। তিতলি বললো।

-চলুন তবে যাওয়া যাক।

কথা শেষ করেই নির্বান আর তিতলি একসাথে হেটে নীরাদের কাছে গেল।

রুমা আর সাইফ নীরাকে পেয়ে কথা বলা শুরু করে দিলো। তাদের দেখে মনেই হচ্ছে না যে গতকালই তাদের দেখা হয়েছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর দেখা হয়েছে। সাইফ হাসতে হাসতে বললো।

-নীরা তুই তো জানিস না কাল কি হয়েছে। কাল রুমা নাক ডেকেছে।

রুমা সাইফের কথা শুনে রেগে গেল। কটমট করে বললো।

-কি? আমি নাক ডেকেছি? আমি? হাউ রিডিউকিউলাস তুই নাক ডেকে আমার নাম দিচ্ছিস?

নীরা দেখলো এরা ঝগড়া করা শুরু করে দিবে। সেজন্য সে দুজনের মাঝখানে আসলো। দুজনকে ধমকে বললো।

-চুপ কর দুজনে। একদম ঝগড়া করবি না এখন। বাসায় গিয়ে ঝগড়া করিস।

নীরার ধমক শুনে দুজনে চুপ হয়ে গেল। শিহাব মিটিমিটি করে হাসলো নীরা ওদের মাঝ থেকে সরে এলে বললো।

-আমরা এমন ঝগড়া করি না। অবশ্য তুমি রেগে অনেক কথাই বলো। আমি সেসব ধরি না।

নীরা কিছু না বলে শিহাবের দিকে কড়া চোখে তাকালো।

মিলা নীরা আর শিহাবের কাছে আসলো। শিহাবকে বললো।

-ভাইয়া রেহানকে কিছু বলবে না? ও খালি আমার পেছনে পড়ে থাকে। ওকে কিছু বলো।

শিহাব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো।

-কিহ্? ওর এতো বড় সাহস দাড়াও দেখছি আমি।

বলেই শিহাব ওখান থেকে চলে গেল। নীরা হাসতে হাসতে বললো।

-রেহান কি একাই তোর পেছনে পরে থাকে না তুইও ওর পেছনে পরে থাকিস?

মিলা মুখ ফুলিয়ে বললো।

-এখন তো রেহানই তোমার সব। ওকেই তুমি আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসো।

নীরা হাসতে হাসতেই বোনকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।

-সবাইকে সমানভাবে ভালোবাসি।

মিলা দেখলো নীরার শাড়ির কুঁচি এলোমেলো হয়ে গেছে। সে নিচু হয়ে কুঁচি ঠিক করে দিলো। ঠিক করে দিতে দিতেই বললো।

-ভাইয়াকেও সবার মতো ভালোবাসো আপা?

কথাটা বলেই মিলা উঠে দাড়ালো। নীরা ভ্রু কুঁচকে তাকালে মিলা ফিসফিস করে বললো।

– তোমাদের বিয়ের আগে ভাইয়া যখনই তোমাকে তার মনের কথা বলতো তারপর পরই তুমি খুশিতে কেঁদে ফেলতে। আমি তোমার চেহারা দেখে বুঝতাম আপা। আর কতোদিন তোমরা দেখা করেছো সেটাও আমি বুঝে ফেলতাম। শুধু ঘুমের ভান করে মটকা মেরে পরে থাকতাম। আদতে তো আমি সবই টের পেতাম।

নীরা মিলার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। সে এতো লুকিয়ে চুড়িয়ে সব করতো। অথচ তার বোন সব বুঝে ফেলতো। হায়! একেই বলে কপাল। সে মিলার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।

-এতো পাকা হয়ে গেছিস তুই। দাড়া আম্মাকে বলতে হচ্ছে!

মিলা আর কিছু না বলে হাসলো। তিতলি আর নির্বান দেরিতে ওদের কাছে আসলো। নির্বান এসে নীরার সাথে কথা বললো।

-কেমন আছেন ম্যাম?

নীরা হেসে বললো।

-খুব ভালো। তুমি ভালো তো?

নির্বান কিছু বলতেই চাইছিলো। কিন্তু মিলা তার আগেই নির্বানকে বললো।

-এক্সট্রেমলি স্যরি তখন ওরকম বিহেভ করার জন্য। আসলে মাথা ঠিক ছিলো না।

-আরে মিলা আপু ইট্স অলরাইট আমি কিছু মনে করিনি।

নীরা ওদের কথা শুনে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো। মিলা নীরাকে বললো।

-ও চলে যেতে চাইছিলো তাড়াতাড়ি সেজন্য ওকে ধমক দিয়েছিলাম। এখন তাই স্যরি বলছি।

নীরা মিলার কথা শুনে নির্বানের দিকে তাকিয়ে বললো।

-সত্যিই? তুমি যদি এরকম করতে তাহলে আমি কিন্তু খুব রাগ করতাম।

নির্বান অপরাধী মুখ করে বললো।

-স্যরি ম্যাম এখন আর যাচ্ছি না। পরেই যাচ্ছি।

-আচ্ছা এবারের মতো মাফ করলাম।

নীরার কথা শুনে তিতলি ফিক করে হেসে ফেললো।

এতো সুন্দর দিনে বোধ হয় নীরার জন্য আরো সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছিলো। যখন সে দেখলো তার স্কুলের স্পেশাল চাইল্ড বাচ্চাদের এবং তার সংস্থার ছোট ছোট বাচ্চাদের শিহাব নিয়ে এসেছে। নীরা এটা দেখে এতো খুশি হলো যে খুশিতে তার চোখে পানি এসে পরলো। শিহাব সবাইকেই রুমা আর সাইফের মাধ্যমে ইনভাইট করেছে। নীরার জন্য এটা একটা সারপ্রাইজ ছিলো। নীরা খুশিতে কিছু বলতেই পারলো না।

এসব দেখে সবাই খুব অবাক হয়ে গেল। শিহাব নীরার কাছে এসে হাত ধরে নীরাকে বাচ্চাদের কাছে নিয়ে গেল। বাচ্চারা নীরাকে পেয়ে আনন্দিত হয়ে ঝাপিয়ে পরলো। সবাই সুন্দর করে নীরাকে উইশ করলো। নীরাও সবাইকে আদর করে দিলো।

নীরাকে সবাই চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। নীরা সবার মাঝখানে দাড়িয়ে হাসছে। শিহাবের কাছে এই দৃশ্যটা সবচেয়ে মূল্যবান দৃশ্যের একটি। নীরার হাসি মুখ দেখতে শিহাবের ভালো লাগে। এখন আরো ভালো লাগছে। সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। নীরার হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে শিহাব ভাবলো এতো সুন্দর স্বচ্ছ হাসির মেয়েটা তার বউ আজীবনের জন্য তার। ভাবতেই ভেতরে অদ্ভুত ভালো লাগার আবেশ সৃষ্টি হলো।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here