ছায়া_সঙ্গিনী #পর্ব-১৮,১৯

0
802

#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-১৮,১৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১৮

আল্লাহ তা’আলা যেদিন চাইবে সেদিন হবে খালামনি।

– তার ফরেও তোমাগো ইছছা থাহন লাগবো না?তুমগো ইছছা থাকলে না আল্লাহ বাচ্চা কাচ্চা দিব। আমাগো কালে তেরো চ‌ইদ্দো বয়সে বাচ্চা কাচ্চা হ‌ইয়া গেছে।অনে তুমাগো নিয়ুম কানুন বুঝি না বাপু।

বৃদ্ধার কথার উত্তরে আমি আর কোন জবাব দিলাম না, হয়তো আমার ভালোর জন্যই বলছেন তিনি। ভাবছি রাহাতের সাথে কথা বলবো এই বিষয় নিয়ে। সবার মতো আমিও চাই আমার একটা ছোট্ট সোনামণি যার ছোট্ট শরীর টাতে আদরে আদরে ভরিয়ে দেব আমি। তার ছোট অধর দুটি ছুঁয়ে দেবে আমায়। আমিও তখন তার আঁখিপল্লব দুটো তে নিজের অধর ছুঁয়ে দেব। ধীরে ধীরে সে কথা বলবে, তখন আমাকে মাম্মা আর রাহাত কে বাবা বলে ডাকবে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা নারী একবার হলেও এই সুখ অনুভব করতে চায়।

– কি হ‌ইলো ব‌উ কিছু ক‌ইতাছো না ক্যান?

আমি উনার হাত দুটো ধরে বললাম,
– খালামণি আমাদের জন্য দো’আ ক‌ইরেন, আল্লাহ তা’আলা যেন খুব তাড়াতাড়ি আমার কোল আলো করে দেয়।

তারপর উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– দো’আ করি ব‌উ তোরে যেন আল্লাহ একটা নাতি দেয়।

আপু এসে বললো,
– আয়রা খেতে আসো। আম্মা আপনি ও আসেন।
তারপর ডাইনিং রুমে এসে দেখি রাহাত আসে নাই,আপু বললো রাহাত ঘুমিয়ে আছে।আপু কতো বার ডেকেছে তাও উঠে নাই।তাই আমি গেলাম ডাকার জন্য।
রুমে এসে দেখি সে আরামে ঘুমিয়ে আছে, এদিকে দুপুর দুটো বেজে গেছে তবুও উনার খাওয়ার খবর নেই। পাশে বসে কন্ঠস্বর ছোট করে ডাকলাম রাহাত উঠো, সবাই খেতে যেতে বলছে।তার কোন পাত্তাই নেই।গরম বলে সার্ট খুলে চিকন স্লিপের সাদা গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে আছে। আমি একটু ঝুঁকে তার চুল গুলো নেড়েচেড়ে বললাম এই রাহাত উঠো সবাই অপেক্ষা করছে তো। সে আচমকা আমার গলা জড়িয়ে তার একদম কাছে নিয়ে আসলো। তারপর ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
– এভাবে মানুষ কে আদর করে ডাকতে আসলে, উঠার বদলে মানুষ আরো আরাম করে ঘুমাবে।

আমি তখন বললাম,
– তো কিভাবে ডাকবো শুনি?

– জোরে চেঁচিয়ে ডাকতে হবে, তাহলেই ঘুম দৌড়ে পালাবে।

– উহু এভাবে ঘুমের মানুষ কে জাগ্রত করা উচিৎ নয়। আকস্মিক চেঁচামেচি শুনে তার মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে।এক হাদিস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, “ঘুম হলো মৃত্যুর ভাই।” উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের শরীর থেকে আত্মা উঠিয়ে নেওয়া হয়। প্রধান পার্থক্য হলো- ঘুমের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয় কিন্তু মৃত্যুর ক্ষেত্রে আত্মা শরীর থেকে চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে যায়। তাই, এই যে প্রতিদিন আমরা জাগ্রত হই, এর মানে হলো আমাদের প্রকৃত অর্থেই আবার জীবন দেয়া হয়। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠার পর বলতেন- “সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের মৃত্যু দেয়ার পর আবার জাগ্রত করেছেন। আর পরিশেষে আমরা তাঁর নিকটেই ফিরে যাব।” প্রতিটি দিনই এক একটি নব জীবন, নব সূচনা।
তাই আমাদের উচিৎ ঘুমন্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে ডেকে জাগ্রত করা।

আমার কথা গুলো রাহাত মনোযোগ দিয়ে শুনে, তাকিয়ে রইলো অপলক দৃষ্টিতে। আমি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

– আমার সুন্দরী এবং জ্ঞানী ব‌উ কে দেখছি।জানো তুমি না বয়সের তুলনায় বেশি ই বুঝো, মা শা আল্লাহ।

– হুম হয়েছে আর পাম দিতে হবে না, আমি পামে ফুলি না।

– তাই না??

ব্যাস শুরু হয়ে গেল তার ভালোবাসা নামক অত্যাচার! তবে এটা একটা পবিত্র বন্ধনের অংশ বিশেষ, যেখানে কোন কলঙ্ক নেই। যেখানে স্ত্রীকে ভালোবাসা সুন্নাত। আলহামদুলিল্লাহ।

কিছুক্ষণ পর আমাকে ছাড়লেন তিনি, আমি তার কান মলে দিয়ে বললাম,
– ফাজিল ছেলে কোথাকার,দরজা খুলে রাখা যদি কেউ চলে আসতো?

সে কান ডলতে ডলতে বললো,
– আরে আমি জানি কেউ আসবে না,তাইতো তোমার মিষ্টি অধরে টুপ করে ডুবে গেলাম হা হা হা,,

– হ‌ইছে এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি যাই ওখানে, না জানি তারা কি ভাবছেন?

রাহাত বাথরুমে চলে গেল, আর আমি ডাইনিং রুমে আসলাম। এসে দেখি খালামণি আর জিহান খেয়ে চলে গেছে।আর আপু আমাদের জন্য বসে আছে। আমি চেয়ার টেনে বসে বললাম,
– আপু আপনি খেয়ে নিতেন, কয়টা বেজে গেছে এখনো অবধি আমাদের জন্য বসে আছেন। আপনার ভাই কে ডাকতে ডাকতে শেষ আমি। উঠতে ছিল‌ই না।

– আরে সমস্যা নেই, তোমাদের রেখে আমি খাই কি করে।ভাই এরকম ই, অফিসে প্রচুর পরিমাণে কাজ করে তো সে জন্য ছুটি পেলে ঘুমিয়ে নেয়। কারণ আবার কাজে জয়েন হলে তো ঘুমাতে পারবে না তেমন।

– জ্বি বুঝতে পেরেছি আপু।

তারপর রাহাত আসলে খাওয়া শুরু করি।আপু অনেক কিছু তৈরি করেছেন_পাট শাক,মাছ ভাজা,মাছ ভুনা,ডিম ভাজা, গরুর গোশত, মুরগির রোস্ট,ডাল।আপু আমাদের দুজনের প্লেট ভরে খাবার দিল। আমি অল্প খেয়ে আর খেতে পারছি না, রাহাত আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বললো, আজকে এগুলো খেয়ে তবেই উঠবে তুমি না হয় খবর আছে। ঠিক মতো খাবার না খেয়ে দিন দিন পাতলু হয়ে যাচ্ছ। শেষে না পেরে একটা একটা করে ভাত মুখে দিচ্ছি। রাহাত নিজের খাবার শেষ করে, আমার খাবার প্লেট নিয়ে গেল।যা দেখে আমি খুব খুশি হয়ে উঠতে যাবো তখনি রাহাত বললো,
– কোথায় যাচ্ছ? বসো এখানে।

এই বলে আমার খাবার গুলো মাখিয়ে লোকমান ধরলো আমার মুখের সামনে। আমি করুন চোখে তাকালাম, কিন্তু সে কোন পাত্তাই দিল না। উল্টো চোখ রাঙিয়ে ইশারা করলো খাওয়ার জন্য।
শেষে না পেরে খেতে হলো সব গুলো খাবার। খাবার শেষে আপু দ‌ই দিল, সেগুলো ও আমাকে খাওয়ালো বেয়াদব ছেলেটা। ইচ্ছে করছে কামড়ে দেই,আপু বলে কিছু করতে পারছি না। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চলেছে তিনি।

খাবার খাওয়া শেষে আমি জিহান এর রুমে চলে গেলাম। রাহাত জোর করে খাইয়ে দিয়েছে বলে ওর রুমে গেলাম না আমি।
গিয়ে দেখি জিহান চিপস, চকলেট,ডাল ভাজা,জোস এগুলো দুই ভাগে বিভক্ত করছে। যেগুলো ওদের জন্য ওর মামা এনেছে। আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম। জিজ্ঞাসা করলাম দুই ভাগ কেন? বললো,এক ভাগ ওর আরেক ভাগ ওর ভাইয়ের। খেয়াল করে দেখলাম একদম সমান করে ভাগ করেছে। হঠাৎ জিহান বললো,
– মামি,মামা কি তোমার সাথে খুব বেশি দুষ্টুমি করে?

ওর এরকম কথায় বরকে গেলাম আমি। সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন এমন মনে হলো তোমার?
ও বললো,
– তখন দেখলাম তুমি মামার কান মলে দিচ্ছ তাই।

আমি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কি বলে এই ছেলে?ও আবার আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে ফেলে নি তো?যদি দেখে থাকে! হায় আল্লাহ!এখন কি করবো আমি? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
– তুমি কিভাবে জানলে জিহান? তুমি কি দেখেছো?

বড় বড় পাপড়ি গুলো মেলে,চোখের কালো মণি গুলো আমার দিকে স্থির রেখে জিহান বললো,
– আম্মু তখন তোমাদের খাবার খেতে ডাকার জন্য আমাকে পাঠিয়েছিল, আমি গিয়ে দেখি তুমি মামার কান মলে দিচ্ছ।

– তাহলে যে তুমি আমাদের ডাকলে না?

– মামা দুষ্টুমি করেছে,আর তুমি শাসন করছো। আমি গেলে মামা লজ্জা পেত তাই চলে আসি।

আমি শুধু অবাক হয়ে ওর কথা গুলোই শুনলাম,মা শা আল্লাহ এইটুকুনি ছেলে ওর এতো জ্ঞান? আমি সাথে সাথে ওর গাল দুটো টেনে দিলাম।জিহান অনিমেষ চাহনিতে তাকিয়ে র‌ইলো। আমি তখন বললাম,
– আমার বিজ্ঞ বাবাটা কি দেখছে এভাবে?

জিহান এক গাল হেসে বললো,
– মামি তুমি খুব সুন্দর।

আমিও হেসে বললাম,
– উহু আমি সুন্দর ন‌ই, তুমি সুন্দর।

– ছেলেরা সুন্দর হয় নাকি?মেয়েরাই সুন্দর হয়।

– কেন এমন মনে হয় তোমার?

– আমার ক্লাসমেট রিমু ও খুব সুন্দর।ও বলেছে ছেলেরা সুন্দর হয় না।মেয়েরাই সুন্দর হয়। মেয়েদের খুব বড় বড় চুল হয় চুল গুলো সুন্দর সুন্দর ফ্রান্স ক্লিপ দিয়ে বেঁধে রাখা যায়। কিন্তু ছেলেদের এই সুন্দর্যোটা নেই। তাছাড়া ওরা কতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস পরতে পারে, ছেলেদের সার্ট প্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নেই তেমন।
জিহানের কথা শুনে বুঝতে পারলাম, এই নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে তার সুন্দরী ক্লাসমেট রিমুর সাথে।তাই জিহান কে বললাম, তোমার ক্লাসমেট রিমু কে বলবে মেয়েরা কখনোই সুন্দর হয় না! মেয়েরা হয় সুন্দরী।আর ছেলেরা সুন্দর।
জিহান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– সত্যি মামি? তবে কেন মেয়েরা সুন্দর হয় না?

– এটা তুমি বড় হলে এমনিতেই বুঝতে পারবে,কজ আমার জিহান অনেক বুদ্ধিমান।

মামা তুমি এভাবে উকি ঝুকি মারছো কেন? রুমের ভিতরে আসছো না কেন? তুমি কি ভয় পাচ্ছ মামি কে?

আমি পিছনে ফিরে দেখলাম, রাহাত জিহানের কাছে ধরা পরে এখন বোকা হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওরে দেখে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। সে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে জিহানের সাথে বসে বললো,
– কি করছো তোমরা?

জিহান গাড় ঘুরিয়ে মাথা উঁচু করে বললো,
– মামা তুমি অনেক দুষ্টুমি করো মামির সাথে।পচারা দুষ্টুমি করে তুমি জানো না?

রাহাত এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার মামি আমার কথা একদম শুনে না, সেই জন্যই তো আমাকে দুষ্টুমি করতে হয়। এই দেখ আমি কতোবার ডাকলাম তাও তোমার মামি শুনলো না, এখানে এসে বসে আছে। তুমি ই বলো এখানে কি আমার দোষ?

জিহান বিপদে পড়ে গেল কি বলবে এখন?তাই সে বিছানার অন্য পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। এদিকে রাহাত মুচকি মুচকি হাসছে। তারপর আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। লাগিয়ে বললো, দুপুর বেলা না ঘুমিয়ে অন্যের ঘুমে ডিস্টর্ভ করছো। পিচ্চি কোথাকার,চলো ঘুমাবে চলো। তারপর জোর করে নিয়ে শুইয়ে দিল, সাথে নিজেও। আমি ঘুমানোর ট্রাই করছি আর সে আমাকে ঘুম পারানোর নাম করে উল্টো ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।,,,,,,

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-১৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সূর্য মামা তার তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিয়ে, ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিকে।তাই এবার আমাদের বের হবার পালা।যাত্রা ছোট আপু মানে রাহাত এর ছোট বোনের বাসায়।তাই তৈরি হয়ে জিহানদের রুমে এসেছি।জিহান ঘুমরো মুখে বসে আছে আমরা চলে যাচ্ছি বলে।জামান কিছুক্ষণ আগে স্কুল থেকে ফিরলো।জিহান এর বড় ভাই জামান। এবার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে, বেচারা সেই সকাল স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট পড়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছে। কিন্তু বিশ্রাম না নিয়ে আমাদের পিছু পিছু ঘুরছে যেন আমরা না যাই। ওদের এরকম কান্ড দেখে আমার খুব মায়া হলো তাই রাহাত কে বললাম,
– আজকে থেকে যাই ওরা এতো করে বলছে, আমার খুব খারাপ লাগছে ওদের ছেড়ে চলে যেতে।

রাহাত তখন ওদের কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বললো,
– মামা আবার ছুটি পেলে তোমাদের মামি কে নিয়ে আসবো কেমন?জানো তো তোমাদের খালামণির বাসা থেকে আগামীকাল ঢাকায় ফিরে যেতে হবে।তোমরা মা শা আল্লাহ অনেক বিচক্ষণ বাবা আমার। তোমরা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পেরেছো মামার সমস্যা তাই না?

ওরা দুজন কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আবার আসবে কিন্তু।

তারপর রাহাত ওদের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে, দুজনের হাতে পাঁচশত টাকার দুটো নোট গুঁজে দিয়ে বললো চকলেট খাবে কেমন?
তারা বড়দের মতো করে বলো, না না আমাদের টাকা লাগবে না। ওদের দুজনকে দেখে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল, আমার মামা,আন্টিরা যখন যাওয়ার সময় হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে বলতো চকলেট কিনে খেও তখন এরকম ভাবে নিতে চাইতাম না। কিন্তু পরে ঠিকই অনেক খুশি হতাম।আর পরিকল্পনা করতাম কি কি ক্রয় করা যায় এই টাকা দিয়ে। শৈশবের স্মৃতি সত্যি ভুলার মতো নয়।
_______
অতঃপর, ছোট আপুর বাসায় এসে পৌঁছালাম। আপুর এক ছেলে এক মেয়ে।বড় মেয়েটা খুব কম কথা বলে, আমি আসার পর শুধু সৌজন্য মূলক সালাম দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করেছে। এছাড়া আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলে না হয় বলে না। ঠিক এরকম ছোট বেলায় আমিও ছিলাম। খুব শান্ত সিষ্ট, এর অনেকে প্রশংসা করতো আবার অনেকে আম্মুর কাছে বিচার দিতো। কেন কথা বলি না চুপচাপ বসে থাকি। আম্মুর ফোনে কল এসে কেটে যেত তাও রিসিভ করে কথা বলতাম না। এতে আম্মু খুব বকাঝকা করতো। তা-ও কথা কম বলতাম। কথা কম বললে মানুষ অহংকারী মনে করে, অথচ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চুপ থাকা পরিশ্রম বিহীন ইবাদত। আলহামদুলিল্লাহ।

আপুদের টিন সেট ঘর, কিন্তু টিন সেট হলেও খুবই সুন্দর। ঘরটায় সাতটা রুম!প্রত্যেকটা রুমে ফার্নিচার এ ভরপুর। একটা বিল্ডিং এর থেকে কোন অংশে কম নয়। শুনেছি দুলাভাই ব্যবসায় করেন, কিন্তু কিসের ব্যাবসায় আমার জানা নেই।

ছয় নাম্বার রুমটায় আমাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। খুবই সুন্দর রুমটা, গ্রামে এরকম ঘর হলে যান্ত্রিক শহরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে একটাই সমস্যা গ্যাস সংযোগ নেই এখানে। না হয় সব কিছু দিয়ে শহর থেকে বেটার।

রাহাত জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, মৃদু বাতাস প্রবেশ করছে জানালা দিয়ে তাই আমিও জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে রাহাত পিছনে চলে যায়, তার প্রশস্ত বুকের সাথে আমার পিঠ দূরত্ব বিহীন দাঁড়ায়। তারপর ধীরে ধীরে নিজের বাম হাতটা আমার পেটের উপর জায়গা করে নেয়। আমি জানালার গ্রিলে হাত রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছি। চারিদিকে অন্ধকারে ডুবে আছে, চাঁদের আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তেমন। কাছের কয়েকটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে,পাতা গুলো মৃদু দুলছে। রাহাত কথা বলা শেষ করে, আমার পিঠের চুল গুলো সাইটে সরিয়ে দেয়। তারপর, আমার গলায় তার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। এবার দুই হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
– তোমার কি মন খারাপ?

আমি মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম। আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,
– তাহলে কথা বলছো না কেন?

আমি এবার তার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
– আমার ছোট্ট বেবি চাই রাহাত! দেবে আমাকে বেবি? আমার খুব ইচ্ছে, আমার বেবি কে গর্ভে ধারণ করে, একটা মায়ের আনন্দ কষ্ট গুলো অনুভব করার। দিবে সেই অনুভব উপলব্ধি করার অধিকার?

রাহাত আমার গাল দুটো ধরে বললো,
– আয়রা মেহেনূর? আমাকে কি তোমার নিষ্ঠুর,পাষান মনে হয় বলো তো? এভাবে কেন বলছো তুমি? আমার ইচ্ছে হয় না আধো আধো কন্ঠে বাবা ডাক শোনার, একটা ছোট্ট শরীর’কে আদরে আদরে ভরিয়ে দেওয়ার। তাহলে এভাবে কেন বায়না ধরতে হবে আমার কাছে? কোন সুন্দর উপন্যাসের মতো করে, চাইলে তুমি তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারতে। কোন এক দিনে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরতাম তখন তুমি লজ্জা মাখা কন্ঠে বলতে এই নাও তোমার সারপ্রাইজ! তখন ডাক্তারের দেওয়া রিপোর্ট টা খুলে দেখতাম আমি! রিপোর্ট টা দেখে পৃথিবীর সমস্ত সুখ অনুভব করতাম আমি। তোমাকে আদরে আদরে পাগল করে দিতাম। তোমার শরীরের যে স্থানে তার অস্তিত্ব ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে সেখানে কান পেতে তার অস্তিত্ব বোঝার চেষ্টা করতাম আমি।আর কিছু বলতে হবে এই ব্যাপারে?

আমি মুচকি হেসে জরিয়ে নিলাম তাকে, তার লোমশ বুকে অধর দুটি ছুঁয়ে দিলাম। এই স্থানে যেন সর্ব সুখ নিহিত রয়েছে। এখানে থাকলে কোন কষ্ট ছুঁতে পারবে না আমায়।
সেও এক‌ই ভাবে জড়িয়ে নিলো আমায়। তারপর দুজন দুজনাতে মত্ত হয়ে গেলাম। সর্ব সুখের ভেলায় ভাসতে ভাসতে ঘুম নামক আরেকটি সুখে পারি দিলাম।
______
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। খুব বড় দুঃস্বপ্ন দেখার কারণে। রাহাত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, তাই ডাকলাম না। তাছাড়া খারাপ স্বপ্ন কাউকে বলতে নেই।
আমি দ্রুত উঠে বসলাম।বাম পাশে থুতু নিক্ষেপ করে, আল্লাহ তা’আলার নিকট শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করলাম।
আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং কেউ যদি ভীতিকর দু:স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন বাম পাশে থুথু নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর নিকট শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। তাহলে শয়তান এই দু:স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না।”
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৫৮৩)

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

“যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পাঠ করবে।) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে। (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২২৬১

আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

“তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় কিছু স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন উঠে সলাত আদায় করে আর মানুষের নিকট সে (স্বপ্নের) কথা গোপন রাখে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৫৭৯৮ অধ্যায়ঃ হাদিস একাডেমি)

আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

“যখন কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে-যা সে পছন্দ করে-তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং সে যেন এ ব্যাপারে আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আল হামদু লিল্লাহ পাঠ করে) এবং তা মানুষকে বলে। আর যদি অন্য কিছু দেখে-যা সে অপছন্দ করে-তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং সে যেন এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং এটি কারো নিকট আলোচনা না করে। তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯৮৫, মুসনাদে আহমদ- ৭০৪৫)

অনেকে না বুঝে যার-তার কাছে স্বপ্নের বিষয় বলে বেড়ায়। এতে সে নিজেই নিজের ক্ষতির পথ প্রশস্ত করে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবে তা বাস্তবায়িত হয়। তোমাদের কেউ যখন স্বপ্ন দেখে, সে যেনো আলেম বা হিতাকাঙ্ক্ষী ছাড়া কারো কাছে তা বর্ণনা না করে। (মুসতাদরাক হাকেম : ৪/৩৯১)

প্রখ্যাত স্বপ্নবিদ আল্লামা ইবনে সিরিন (রহ.) তাঁর বিখ্যান্ত ‘তাবিরুর রুইয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : ‘স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারীদের জন্য কোরআনের তাফসিরের জ্ঞান, রাসুল (সা.)-এর হাদিস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, আরবি ও অনারবি বিভিন্ন ভাষার শব্দের বিবর্তন সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানার জন্য বুজুর্গ, সূক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী ও সুসাহিত্যিক হওয়া জরুরি। এ ছাড়া যিনি স্বপ্নের তাবির বা ব্যাখ্যাদানকারী হবেন, তাঁর সার্বিক অবস্থা ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। সব সময় সত্য পথে চলতে হবে। তাহলে আল্লাহপাক বিশেষ অনুগ্রহে তাঁকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবেন। তাঁর জবান (মুখ) সত্য ও নেক হতে হবে। এর ফলে আল্লাহপাক তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করবেন। তাঁর চিন্তাও হতে হবে সৎ ও স্বচ্ছ। খাবার হতে হবে হালাল। মোটেও অনর্থক কথা বলা যাবে না এবং সব ধরনের পাপ থেকে নিষ্কলুষ হতে হবে। তাহলে তিনি জ্ঞানী ও নবীদের প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে গণ্য হবেন। সুতরাং যার তার কাছে স্বপ্নের বিবরণ বলার থেকে বিরত থাকুন।
________
এক সপ্তাহ পর,
মাকে সঙ্গে করে ঢাকায় ফিরে এসেছি আমরা।এখন থেকে আমি রাহাত মা এখানেই কোয়ার্টারে থাকবো। রাহাত অফিসে চলে গেছে,আর আমি পেট ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছি খনে খনে। তবে আজকে পেটের ব্যাথা থেকে মনের ব্যাথাটা বেশি!যার কারণে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে,,,,

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here