দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ২৮,২৯

0
340

#দ্বিতীয়_পুরুষ,পর্ব ২৮,২৯
_নীলাভ্র জহির
২৮

চিত্রা বললো, আমার সওয়ামী আমারে বিয়ের রাইতে বেইচ্যা দিছিলো। বিশ্বাস হয়?
এতক্ষণ পর মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল রূপক। না, তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না। চিত্রা বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলল, অহন কইলে তো বিশ্বাস করবেন না। ওই লোক আমারে টাকার জন্য বিয়া করছিল। আমার সহজ সরল বাপটা সেটা বুঝে নাই। আমার বাপের পিছেপিছে ঘুরছিল আমারে বিয়া করার লাইগা। বাজারের একটা শুটকির দোকান দেখাইয়া কইছিল এইটা তার দোকান। আমার বাপ তো খুব বোকা, পাগলা মানুষ। অত কিছু খোঁজ খবর নেয় নাই। ভাবছে ভালো একটা পোলা পাইছি মাইয়াডারে বিয়া দিয়া দেই। দু চারজন পরিচিত মানুষজনকে লইয়া বিয়া পরাইয়া দিছিল। আমার আত্মীয়-স্বজন বলতে এক ফুপুই আছে। ফুপুরে আব্বা কিছু জানায়ও নাই। বিয়ে পড়ানোর পর ওই লোক আমারে নিয়া একটা বাড়িতে আইসা ওঠে। আমি ভাবছিলাম আমার শশুর বাড়ি। বাড়ি তো না, খালি একখান ঘর। আর কোন মানুষজন আছিল না। আব্বার কাছে শুনছিলাম পোলা একা। ঘরে একখান চৌকি আছিল। ঐখানে আমি বইসা ছিলাম। অপেক্ষা করতেছিলাম আমার সোয়ামি কখন ঘরে আইব। অপেক্ষার পর যে লোকটা ঘরে ঢুকছিল সে আমার সওয়ামী ছিল না। ভয়ংকর দেখতে এক লোক আইছিল। বিশ্বাস হয়?

রূপক চোখ বড় বড় করে চিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। তার প্রিয়তম চিত্রাএ সঙ্গে এমন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গিয়েছে ভেবে শিউরে উঠল গা।
চিত্রা বলল, এখন আমি যদি সত্যিটা কই আপনে বিশ্বাস করবেন না। ভাববেন যার কাছে বিয়া দিছে সে আমারে শেষ কইরা দিছে। সে যে আমারে শেষ করে নাউ এটা আপনি ভালো কইরাই জানেন। আপনার লগে বিয়ের রাতে কি হয়েছিল আপনি তো সবই জানেন। রাইতে আপনি সোহাগ করার পরে বিছানার চাদর রক্তে ভাইসা গেছিল। আমি মাইয়াডা যে কুমারী ছিলাম এটার প্রমাণ পাইয়া গেছেন। ওই রাইতে ওই লোকটার লগে দুই চারটা কথা কইয়া তারে ধুলা দিয়া আমি পলাই আইসি। সারাটা রাত এক জায়গায় বইসা কাটাইয়া দিছিলাম। সকাল হইতে গিয়া উঠছি আমার ফুফুর বাড়িতে। সব শুইনা ফুপু আমারে আর ঘর থাইকা বাইর হইতে দেয়নাই। ওই ঘটনার পর আমি আর আমার বাপের বাড়িত যাইনাই কখনো। যে লোক আমারে কিনা লইছে সে নিশ্চয়ই আমার পিছু ছাড়বো না। সেই ভয়ে আমি আর আমার বাপের কাছেও যাই নাই। আমার ফুপাতো ভাইরা চাইছিল আমার একটা ভালো পোলার লগে বিয়ে দিয়ে দিতে। তাদের কাছে আমি মাইয়াটা তো ভালো। মাইয়ার আগে ও বিয়ে হইছিল সেই কথা কইলে কেউ আর ভালো মনে করব না। আমাগো সমাজের মানুষ মনে করে আগে বিয়া হইলে সেই মাইয়া খারাপ। যেমন আপনি মনে করতেছেন। আমি আপনারে ঠকাইছি, আমি বেইমান। কত বড় বিপদ থাইকা আমি বাইচা আইসি সেটা যদি আপনি একবার বুঝতে পারতেন? আমার জায়গায় নিজেরে একবার কল্পনা কইরা দেখেন। নিজের বিবেক দিয়ে একটু ভাইবা দেখেন। তারপর কন আমার জায়গায় থাকলে আপনি কি করতেন? যে মাইয়ার বাপ নাই মা নাই। অসহায় একটা মাইয়া। ফুফাতো ভাইগো ঘাড়ে বইসা রইছি। তারা নিজেদের দায়িত্বে নিজেদের খরচে যদি একটা পোলার লগে আমার বিয়া দিয়া দেয়, আর আমি যদি সেই পোলারে কই আমি আগেও বিয়ে করছি। তাইলে কি আমার বিয়ে হইত? নাকি আমার সংসারটা টিকতো? আপনি কন। আমার জায়গায় থাকলে আপনে কি করতেন?

রূপক কোন উত্তর দিল না। চিত্রার দিকে খানিকক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। তারপর নিঃশব্দে নেমে গেল চৌকি থেকে। টেবিলের উপরে রাখা লাইটার, একটা সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে গেল। খানিকক্ষণ পর দরজার হাতল ধরে এসে দাঁড়ায় চিত্রা। দেখতে পায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রূপক সিগারেট টানছে। তার যা বলার ছিল সবটা তো বলেই দিল। বাকিটা সে রূপকের ওপর ছেড়ে দিবে। আর কিছু বলবে না ভেবে মনস্থির করল। তার কপাল যা আছে তাই হবে।

অনেকক্ষণ রূপক ঘরে ফিরল না। চিত্রা খানিকক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করল। তার শরীরটা ভালো লাগছেনা। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। ক্ষুধায় বমিও চলে আসছে।
চিত্রা জোসনা বেগমের গলা শুনতে পেলো, কিগো বউ। ভাত খাইতাছো না কেন? তুমি কি এখনো একলা আছো? আরেকজনের কথা তো তোমার চিন্তা করতে হইবো।
শাশুড়ির কথায় চিত্রা অল্প কিছু ভাত খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে ঘরে ঢুকে দেখল রূপক শুয়ে পড়েছে। নিঃশব্দে চিত্রা ও তার পাশে শুয়ে পড়ল। রাতের নিস্তব্ধতায় কেবল দুজনের নিঃশ্বাস পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এছাড়া আর কোনো রকম শব্দ নেই। চিত্রার খুব ইচ্ছে করছিল রূপক তার সঙ্গে দুটো কথা বলুক। হোক সেটা ভালো কিংবা খারাপ। রাগ দেখানোর প্রয়োজন থাকলে রাগ দেখাতে পারে। তবুও যেন তার সঙ্গে কথা বলে রূপক। কিন্তু মধ্য রাত অব্দি রূপকের কোন নড়াচড়া কিংবা সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। একসময় চিত্রার ক্লান্ত দুচোখ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম ভাঙলো সকাল বেলা। রূপক কখনো চিত্রার আগে বিছানা ছাড়েনি। এই প্রথম চিত্রা পাশ ফিরে দেখল রুপক তার পাশে নেই। সকালের আলো ফুটেছে। তবুও সাধারণত এত সকালে রূপক ঘুম থেকে উঠে না। আজ হয়তো চিত্রার পাশে শুয়ে থাকতে চায় না বলেই উঠে পড়েছে। চিত্রা চোখ মুখ কচলে বাইরে বেরিয়ে এলো। তার দুচোখ তখন শুধু তাকেই খুঁজে চলেছে। কিন্তু রূপককে কোথাও দেখতে পেল না। লাজ লজ্জা ভুলে সে জোসনা বেগম এর কাছে জানতে চাইল, আপনার পোলা কই গেছে কিছু কইয়া গেছে?
জোসনা বেগম খানিকটা অবাক হলেন। তার মানে ছেলে আর ছেলের বউয়ের মান-অভিমানের পর্ব এখনো চলছে। তিনি তাতে নাক গলাবেন না। কেবল উত্তর দিলেন, মনে হয় দোকানে গেছে।
চিত্রার কষ্ট হতে লাগলো। জীবনের কিছু কষ্ট একান্তই নিজের হয়। যে কষ্টগুলোর ভাগিদার কেউ হয় না। চাইলেও কাউকে ভাগ দেওয়া যায় না। রূপকের ভিতরে যে কষ্টের ঝড় বইছে তার ভাগটা চাইলেও নিতে পারবেনা চিত্রা। একইভাবে চিত্রার বুকে যে যন্ত্রণার দহন, তার ভাগ সে কখনো কাউকে দিতে পারবে না। এই কষ্ট একান্তই তার নিজের কষ্ট। যার ভার বয়ে বেড়াতে হয় আপনাকেই।

অনেক রাত করে রূপক ঘরে ফিরল। সাধারণত তার এত রাত হয়না। বাড়ি ফিরেই মাকে ডাকতে ডাকতে হাতমুখ ধুতে গেল সে। জোসনা বেগম দাওয়ায় পাটি বিছিয়ে খাবার প্রস্তুত করলেন। রুপক একা একা বসে খাবারটা খেয়ে নিল। বাড়ির অন্য সদস্যরা খেয়েছে কিনা তা নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন করল না। যেন চিত্রা নামে কেউ এ বাড়িতে নেই।
খাবার খেয়ে রূপক খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে থাকল। দখিনা বাতাস শিরশির করে তার গায়ে এসে লাগে। মোবাইল বের করে সে একটা সিনেমা চালিয়ে দেখতে শুরু করলো। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে চিত্রা রূপকের দিকে লক্ষ্য করলো। মোবাইলের জ্বলতে থাকা মৃদু আলোয় রূপকের মুখটা দেখা যাচ্ছে। ক্লান্ত ও বিষন্ন মুখে সিনেমা দেখছে রূপক। চিত্রার খুব ইচ্ছে করলো ওই ক্লান্ত মুখখানা আঁচল দিয়ে মুছে দিতে। পাশে বসে দুটো সুখ-দুঃখের কথা কইতে। কিন্তু সাহস হলো না। দূর হতে কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার রইল না তার।

খানিকবাদে জোসনা বেগম ডাক ছাড়লেন, বৌ ও বৌ ভাগ দুইটা খাইয়া লও। দাওয়ায় ভাতের গামলা রাইখা দিছি। কুত্তা আইসা ভাত খাইয়া যাইব আবার। তাড়াতাড়ি ভাত দুইটা খাইয়া লও। মেলা রাইত হইছে। না খাইয়া খাইয়া শইল্টস খারাপ বানাইয়ো না। পোয়াতি মানুষ। একটু বাছবিচার কইরা চলতে হইবো।

জ্যোৎস্না বেগমের কথাতেও যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রূপকের। সে মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরালো না। গান বাজছে। গান শেষ হয়ে আবারো শুরু হল সিনেমা। শাকিব খানের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। মন দিয়ে দেখছে রূপক। চিত্রার ইচ্ছে করলো সে ও তার পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে। তারপর একসঙ্গে হাসতে হাসতে শাকিব খানের সিনেমা দেখতে। কিন্তু পরিস্থিতি কেমন যেন হয়ে গেছে। সংকোচ ও ইতঃস্তত বোধ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে রেখেছে।

আবারো খেতে ডাকলেন জোসনা বেগম, এই মাইয়া দেখি কথা শুনেনা। কইলাম তাড়াতাড়ি ভাত দুইটা খাইয়া লও। ভাত খাইয়া যা থাকবো পানি ঢাইলা রাইখো। মেলা রাইত হইছে।

ভাতের গামলার পাশে টিমটিম করে জ্বলছে কূপির আলো। জোসনা বেগম একবার বারান্দায় এসে বসলেন। রূপককে বললেন, তোর বউরে ভাত খাইতে ক। তোরা কি শুরু করলি? আমার কিন্তু এইগুলা ভালো লাগতাছে না।
রূপক এই কথার উত্তর না দিয়ে বলল, আইজ রুবিনা কল দিছিলো। ফোন করতে কইছে। কল দিমু। কথা কইবা?
জোসনা বেগম উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসে বললেন হ, কল দে। মাইয়াডার কথা আজকে সারাদিন বারবার মনে পড়ছে।

রূপক শিমুলের কাছে কল দিয়ে ফোনটা তার মায়ের দিকে এগিয়ে দিল। তারপর উঠে চলে গেল উঠানের অন্ধকারের দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চিত্রা এসে ভাত খেতে বসলো। গলা দিয়ে তার ভাত নামছে না। তবুও বাচ্চার কথা ভেবে তাকে খেতে হচ্ছে। তার খাবার খাওয়ার এক ফাঁকে রূপক এসে দাঁড়াল পাশে। চিত্রার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। ভাবলো ভালো হোক মন্দ হোক লোকটা তাকে কিছু একটা তো বলবে। কিন্তু নিঃশব্দে কুপির আগুনে সিগারেট ধরিয়ে রূপক আবারো চলে গেল অন্ধকারে। কেবল দূর হতে তার সিগারেটের আগুন খানি চোখে পড়ল। ঝিঝি পোকার ডাকে তখন কান ঝালাপালা হওয়ার মত অবস্থা। এই নিস্তব্ধ রাতে চিত্রার বুকের আর্তনাদ বাইরে থেকে শোনার মতো কেউ নেই। হৃদয়ের আর্তনাদ শুনতে হলে হৃদয়ের ভেতর প্রবেশ করতে হয়। তার রুপক এখন তার হৃদয়ের ভেতর নেই। ভীষণ কষ্টের কোন এক ঝড়ের স্রোতে ভেসে গেছে রূপক।

চিত্রা ভাত খেয়ে অবশিষ্ট ভাতে পানি ঢেলে রান্না ঘরে রেখে এলো। তখন শুনতে পেল জোসনা বেগম ও রুপক কথা বলছে।
রূপক বলল, এলাকায়তো কারেন্ট আইতাছে। কারেন নিমু বাড়িতে।
টাকা পয়সা কেমন লাগবো?
যাই লাগুক নিতে তো হইবো। দোকানে কারেন্ট আলোতে থাকি। বাড়িত আইলে হারিকেনের আলো চোখে ধরে না।
সৌর বিদ্যুৎ নিতে কইছিলাম।
এখন আর নিয়া কি হইব? কারেন্ট আইব শুইনা তো আর সোলার নেই নাই।
এমন সময় চিত্রা এসে দাড়ালো বারান্দায়। জোসনা বেগম চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই গেরামে আমরা সবার পরথম সৌরবিদ্যুৎ লাগাইছিলাম। বহু আগের কথা। এগারো বৎসর হইয়া গেল। একটা জিনিস আর কদ্দিন টেকে। অনেকদিন থাইকাই চার্জ কইমা যাইত। তোমাগো বিয়ার আগে আগে একেবারেই বন্ধ হইয়া গেছে। পোলায় আমার কপালপোড়া।

রূপক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ঠিকই কইছো মা। আমি সত্যই একটা কপালপোড়া।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রূপক মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল। কিছু বলার নেই চিত্রার। নিঃশব্দে গুটি গুটি পায়ে সে ঘরে এসে দাঁড়ায়। রূপক আবারও মোবাইলে ছবি চালু করেছে। দেখতে দেখতে শব্দ করে হাসছে। চিত্রার সঙ্গে কোনো রকম কথাবার্তা বলার লক্ষণ পর্যন্ত নেই।
মান অভিমান ভুলে চিত্রা নিজেই কথা বলার চেষ্টা করল, আপনি কি আমার কথাগুলান বিশ্বাস করেন নাই?
রূপকের কোন সাড়া নেই। আবারো প্রশ্ন করল চিত্রা, আমার কথাগুলান কি আপনার বিশ্বাস হয় না?
রূপক উত্তর দিল, এত রাইতে এইগুলা নিয়া কথা কইতে চাইতাছি না। আমি যা জানি তা আমার কাছেই থাকুক। আমার মা বাবারে শুনাইতে চাইতেছি না।
নিজের মনে অশান্তি নিয়ে কয়দিন থাকবেন।
কপালে অশান্তি থাকলে তো আমার কিছু করার নাই।
আপনে অশান্তি টাইনা আনতাছেন। আমারে বিশ্বাস করেন। আমার দোষটা কোথায় একবার বিবেচনা কইরা দেখেন। কে কী কইছে আমারে একটু খুইলা কন।
রূপক কোন উত্তর দিল না। সে সিনেমা দেখায় মগ্ন। চিত্রার মন খারাপ লাগছে। ক্রমাগত বাড়তে লাগল রাত। সিনেমা দেখতে দেখতে এক সময় রূপকের চোখে ঘুম ধরে এল। তবুও সে চিত্রার সঙ্গে কোনো কথা বলল না। যে মানুষটা প্রত্যেক রাতে বাড়ি ফিরে চিত্রাকে আদর সোহাগে মগ্ন হয়ে যায়, ভালবাসার গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখে প্রত্যেকটা রাত। সেই মানুষটা এখন চিত্রার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে চাচ্ছে না। এমনকি আজ একটিবারও চিত্রার দিকে চোখ তুলেও তাকায় নি। এ যেন চিত্রার কাছে আকাশ সম কষ্ট। এই কষ্ট মেনে নিয়ে স্বাভাবিক থাকা তার পক্ষে দুঃসাধ্য। হৃদয়ে ভীষণ আর্তনাদ। তীব্র ঝড়ে তার বুকটা দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে। এই কষ্টের কথা সে কার কাছে বলবে?

চলবে..

#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ২৯
_নীলাভ্র জহির

মানুষ বদলে যেতে সময় লাগে না। মুহূর্তেই প্রিয়তম মানুষগুলো সবচেয়ে ঘৃণার মানুষের পরিণত হতে পারে। কিন্তু যে বদলে যায় সে কখনো বুঝতেই পারেনা অপর মানুষটা তার পরিবর্তন সহজে মেনে নিতে পারে না। ভীষণ কষ্টে দুমড়ে-মুচড়ে ভেতরটা নিঃশেষ হয়ে যায়। রূপকের এই বদলে যাওয়া চিত্রার কাছে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের মতন। এই ঝড়ের তান্ডবে তার সমস্ত কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রত্যেক দিন সকাল বেলা প্রচন্ড বমি আর মাথা ঘুরানো নিয়ে সে অসহায়ের মত বিছানায় পড়ে থাকে। রূপক একটিবারের জন্যও তার দিকে ফিরে তাকায় না। তার অসুস্থ স্ত্রী কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে সেই জিনিসটা অনুভব করেনা সে। ভোরের আলো ফুটলেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে যায়। যখন সূর্য ওঠে তখন বাসায় ঢুকে ভাত খেয়ে চলে যায় দোকানে। এমনকি যাবার আগে একটি বার চিত্রার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। বিয়ের পর থেকে প্রত্যেকটা দিন চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে সে বাড়ি থেকে বের হতো। বাজারে গিয়েও সারাক্ষণ ছটফট করত কখন বাড়ি ফিরে আবার তার বৌকে কাছে টেনে নিতে পারবে। সেই চিত্রা যেন ধীরে ধীরে তার চোখের বিষ হয়ে উঠেছে।

রাত্রি বেলা ঘুম ভেঙে গেলে আজ ঘুমের ঘোরে চিত্রা রূপকের বুকে নিজের মাথাটা ঠেসে দেয়ার চেষ্টা করল। তাকে বাধা দিলোনা রূপক। দীর্ঘদিন পর স্বামীর বুকে মাথা রাখতে পেরে পরম শান্তি অনুভব করল চিত্রা। দুই হাতে গভীরভাবে সে রূপককে জড়িয়ে ধরল। কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল নীরবে। গত কয়েক দিনে একটিবারও তারা কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়নি। এমনকি ঘুমের ঘোরেও রুপক কখনো চিত্রার দিকে সরে আসেনি পর্যন্ত। আজ চিত্রা কিছুতেই রূপককে আর ছাড়বে না ভাবলো। সে পরম আবেগে জড়িয়ে রইল তার স্বামীকে। আচমকা রূপকের কী হলো কে জানে? চরম বিরক্তিতে চিত্রাকে সে বুক থেকে সরিয়ে দিল। আচমকা এভাবে পাশে সরিয়ে দেয়ায় প্রচন্ড কষ্ট পেলো চিত্রা। ভালোবাসার অপমান সবথেকে বড় অপমান। তার প্রতি এতটা রাগ এখনো পুষে রেখেছে রূপক। তবে মনে হচ্ছে সে কোন রাগ পুষে রাখে নি। বরং ক্রমাগত তার রাগটাকে ভেতরে ভেতরে বেড়ে শিকড় ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বাঙ্গে। চিত্রা নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তার কান্নার শব্দ রূপকের হৃদয়ে পৌঁছালো না। কেবল মাথার নিচের বালিশটা ভিজতে লাগল চোখের নোনা জলে। রূপকের হৃদয়টা যেন চরম নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। তার পাশে কেউ কাঁদছে তাতে কিছুই যায় আসে না তার।

সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়ে সকালের দিকে শরীরটা আরো খারাপ হয়ে গেল চিত্রার। বিছানা থেকে উঠতে পারল না। রূপক সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সকাল সকাল দোকানে চলে গেছে। সকাল দশটার দিকে জোসনা বেগম ঘরে ঢুকে চিত্রাকে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ও বউ তোমার কি হইছে? তিনি খেয়াল করে দেখলেন চিত্রা কথা বলতে পারছে না। অনেক কষ্টে চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে কেবল তার দিকে তাকিয়ে রইল। পরমুহূর্তেই আবার বন্ধ করে ফেলল চোখ। চেহারা ফ্যাকাশে আকার ধারণ করেছে। ভয় পেলেন জোসনা বেগম। তিনি দৌড়ে গিয়ে পাশের বাড়ির কর্তাকে পাঠালেন ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসতে।

ডাক্তার এসে চিত্রাকে ভালোভাবে পরখ করলেন। চিন্তাগ্রস্থ মুখে জোসনা বেগমকে তিনি বললেন, ওনার শরীর খুবই দুর্বল। খাওয়া-দাওয়া করে না নাকি?
জোসনা বেগম চুপ করে রইলেন। গত কয়েকদিন ধরে চিত্রা নিয়ম করে খাবার খাচ্ছে না। তাদের স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব’র ফলাফল এটা।
ডাক্তার বললেন, এতে ওনার বাচ্চার জন্য খুবই রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটা পুষ্টি পাচ্ছে না। এতে করে বাচ্চা যেমন অসুস্থ হয়ে জন্ম নিতে পারে তেমনি ওজনও কম হবে। পরবর্তী জীবনে গিয়ে দেখা যাবে অসুখ-বিসুখ সারাক্ষণ লেগেই আছে। এ সময় আসলে গর্ভবতী মায়ের অনেক ভালো ভালো খাবার খাওয়া দরকার। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। তাছাড়া উনি নিজেই যদি এভাবে অসুস্থ হয়ে যায়, ওনাকে নিয়েই তো আপনাদের টানাটানি হয়ে যাবে। বাচ্চা তো অনেক পরের কথা। আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দিব। এগুলা নিয়মিত খাওয়াবেন। আর পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন। প্রত্যেকদিন খাবারে মাছ মাংস দুধ ডিম এগুলো রাখার চেষ্টা করবেন।

জোসনা বেগম চুপ করে রইলেন। মনে অশান্তি থাকলে কি আর খাবার খেয়ে কাজ হয়। তিনি ভালোমতোই বুঝতে পারছেন তার ছেলে ও ছেলের বউয়ের মাঝে বড় ধরণের অশান্তি চলছে। গত কয়েক দিনেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে চিত্রাম দেখলেই কেমন যেন মায়া লাগছে? চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে।
ডাক্তারি চিত্রাকে জাগিয়ে দিয়ে বললেন, দেখুন এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। এই সময়টা সবাই পার করে। আপনার মা আপনার শাশুড়ি তারাও তো মা হয়েছেন। আপনি ভেঙে পড়বেন না। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করুন। শরীরটাকে সুস্থ করে তুলুন। নয়তো পরবর্তীতে এর ফল আপনার বাচ্চাটা ভোগ করবে। সবসময় অসুস্থ থাকবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন আমার কথাগুলো।

চিত্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ডাক্তারের দিকে। তার চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জল। ডাক্তার সাহেব শুধু শরীরের অসুখটাই দেখলেন? মনের অসুখটা দেখলেন না। তার মনের অসুখ সারাতে পারে একমাত্র রূপক। সেই রূপক যখন অদ্ভুতভাবে বদলে গেছে এই অসুখ সারবে না কখনো। বড় দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্ম নিচ্ছে তার সন্তান।
ডাক্তার জোসনা বেগমকে বললেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে আপনার পুত্রবধূর চেকআপ করিয়ে আনবেন। এ সময় নিয়মিত চেকআপ করতে হয়। যে কোন সমস্যা থাকলে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ নেয়া যাবে। আর এমনিতেই উনি অপুষ্টিতে ভুগছে। আজ কালকের মধ্যে ওনাকে একবার চেকআপে নিয়ে যাবেন। বাচ্চাটা সুস্থ আছে কিনা সেটা জানা দরকার।

জোসনা বেগম নিঃশব্দে ঘাড় নাড়লেন। ডাক্তার চলে গেলে বারান্দার খুঁটি ধরে কাঁদতে কাঁদতে জোসনা বেগম বললেন, জানিনা আমি কোন পাপ করছিলাম। কোন পাপের শাস্তি পাইতাছি। আমার পোলার সংসারে অশান্তি। কি জন্য এত তাড়াহুড়া কইরা আমি খোঁজ খবর না নিয়ে তারে বিয়া দিয়া দিলাম। বিয়া হইতে না হইতে মাইয়া পোয়াতি হইল। সংসারে অশান্তি শুরু হইল। পোলার আমার কপালটাই খারাপ।

চিত্রার দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এই মুহূর্তে মনে মনে মৃত্যু কামনা করা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।
জোসনা বেগম থালায় ভাত তরকারি নিয়ে এসে বললেন, উইঠা খাইয়া লও। এমনে পইরা থাইকো না। কোন দিকে যে যামু আমি। আমার হইছে মরন জ্বালা।

উঠতে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামল চিত্রা। তার মাথা ঘুরাচ্ছে। তবুও হাত ধুয়ে ভাত খেতে বসলো। খাবার মুখে দিয়ে বমি এল ভেতর হতে। একদমই খাবার খাওয়ার মত শক্তি কিংবা রুচি কোনটাই নেই। তবুও খেতে হবে। তার নিজের জন্য নয় বরং অনাগত সন্তানের জন্য। ডাক্তার যে কথাগুলো বলে গেছেন সেগুলো এখনও কানে বাজছে চিত্রার। নিজের অপরাধে একটা নিষ্পাপ শিশুকে সে কষ্ট দিচ্ছে। জোর করে কয়েক লোকমা ভাত মুখে পুরে দিয়ে বসে রইল চিত্রা। আবারো মাথা ঘুরাচ্ছে। এক গ্লাস পানি খেয়ে এসে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল।

দুপুরের পরপর রূপকের গলা শুনে ঘুম ভাঙলো চিত্রার। সে পাশ ফিরে দেখল তার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে রূপক। বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। জোসনা বেগম তাকে বলে যাচ্ছে ডাক্তার কি কি বলেছে। রূপক সব শুনে চিত্রাকে বলল, ওষুধ সব আইনা দিছি। ভাত খাওনের পর ওষুধ গুলা খাইতে হইবো।
চিত্রা ওঠার চেষ্টা করল। রূপক সাহায্য করলো তাকে। ছলছল চোখে চিত্রা রূপকের দিকে তাকায়। কতদিন পর রূপক তাকে স্পর্শ করেছে। সে রূপকের বুকে হেলান দিয়ে বসে। পরম শান্তি শান্তি লাগে তার।
রূপক বলল, আমি ডাক্তারের ঐখানে গেছিলাম। সব শুনছি। এখন তুমি যদি এইরকম কইরা আমার পোলাডার জীবনটা নষ্ট কইরা দাও কেমনে হইব? তোমার কি মনে হয় না এই সময় তোমার বুইঝা শুইনা চলা উচিত?
চিত্রা চুপ করে রইলো। আর মনে মনে বলল, আপনি আমারে ক্যান এভাবে কষ্ট দিলেন এতদিন। আপনি আমারে এমনে কষ্ট না দিলে আমার শইলটা ভালই থাকতো। কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না।
রূপক বলল, ভাত খাইয়া লও। বইসা থাইকো না। শইলে একটু আলো বাতাস লাগাও। ওষুধ কোনটা কোনটা খাইতে হইবো আমি দেখাইয়া দিতাছি।

রূপক চিত্রাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এইটুকু ভালোবাসার স্পর্শেই যেন চিত্রার শরীরে অনেক শক্তি ফিরে এসেছে। সে বেশ বুঝতে পারল ভালোবাসার চেয়ে বড় শক্তি আর নাই। সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়। মনে মনে প্রার্থনা করে চিত্রা উঠে ভাত খাওয়ার চেষ্টা করল। আবারো তার পাশে এসে বসল রূপক।
চিন্তিত মুখে বলল, তোমারে একখান কথা কই। আমি ঝামেলা পছন্দ করিনা। তোমার লগে কোন বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি করার ইচ্ছা আমার নাই। কিন্তু আমি চাই তুমি নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখো। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো। ভালো কইরা চলা ফেরা করো, নামাজ-কালাম পড়ো। আমাগো বংশের মধ্যে আমি প্রথম বাবা হইতেছি। আমার পোলা সবার আদরের মণি হইবো। তুমি তারে কোন কষ্ট দিও না। তারে যেই ভাবে সুস্থ সবল কইরা দুনিয়াতে আনা যায় তুমি সেই চেষ্টা করো। এই সময়ে তার শরীর তুমি খারাপ কইরা দিও না। ডাক্তার নাকি কইছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে চেকআপ করাইতে। কাল সকালবেলা মারে নিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাইবা। ডাক্তার আপা যা যা কইব মন দিয়ে শুইনা সে অনুযায়ী কাজ করবা।

চিত্রা ঘাড় ঘুরিয়ে উত্তর দিল, আচ্ছা ঠিক আছে।
তোমার লাইগা ফল ফ্রুটস আনছি। ওইগুলা খাইবা। শইলে এখন ভিটামিনের দরকার আছে।

চিত্রা ফ্যালফ্যাল চোখে রূপকের দিকে তাকিয়ে রইল। তার শুকনো চোখের দিকে তাকিয়ে যেন হঠাৎ করেই রূপকের মনে বড় মায়া হয়। মুহূর্তেই একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে রূপক চোখ ফিরিয়ে নেয়। বুকটা চিন চিন করে ওঠে চিত্রার। কতদিন পর যেন একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়েছে তারা। মনে হচ্ছে মাঝখানে কেটে গিয়েছে যুগের পর যুগ। যেন শতবর্ষ তারা একে অপরকে দেখে নি এভাবে। মাত্র কয়েকদিনের দূরত্ব তাদেরকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছে যোজন যোজন দূরে।

রূপকের পাশে বসে বেশ খানিকটা ভাত খেয়ে নিতে পারল চিত্রা। খাওয়া শেষে রুপক তাকে দেখিয়ে দিলো কোন ওষুধ গুলো কখন নিয়ম করে খেতে হবে। রূপকের গলা আজকে বেশ ঠান্ডা। চিত্রা বারবার ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকাচ্ছে। বলার মতো কোন কথা নেই কিংবা শক্তি নেই মুখ ফুটে কিছু বলার। তার নিষ্প্রাণ চোখ বলে দিচ্ছে রূপকের বাড়ি ফেরায় কতটা আনন্দিত হয়েছে সে।

দোকানে যাওয়ার আগে রূপক চিত্রাকে বলল, তোমার লাইগা কিছু আনতে হইবো? কিছু খাইবা?
চিত্র ঘাড় বেঁকিয়ে রূপকের দিকে তাকালো। তারপর মাথাটা দুদিকে নাড়ায়। ইশারায় বোঝাতে চায় সে কিছু খেতে চায় না। তবে রূপকের এই প্রশ্নে অসম্ভব খুশি হয়েছে সেটা তার শুষ্ক মুখের হাসি দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
রূপক বেরিয়ে গেল দোকানের উদ্দেশ্যে। মনে মনে খুশি হল চিত্রা। তার অসুস্থতা যেন দুজনকে আবারো এক করে দিচ্ছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে কয়েকদিনের সৃষ্টি হওয়া অমোঘ দূরত্ব। চিত্রা নিজের পেটের ওপর হাত বোলায়। তার মনে হচ্ছে এই সন্তানের উছিলায় সবকিছু ঠিক হয়ে যাচ্ছে। একটা সন্তান সত্যিই স্বামী স্ত্রীর মাঝখানে অনেক বড় সেতুবন্ধন। সে সব সময় শুনে এসেছে বাচ্চার জন্য টিকে আছে সংসার। মুরুব্বীরা সবসময়ই বলে একটা বাচ্চা নিলে স্বামী আর কখনো ছেড়ে যায়না। এই সমাজে একজন সন্তান সংসার টিকিয়ে রাখার প্রধান হাতিয়ার। এতদিন সেটা শুনে আসলেও কখনো বিশ্বাস হয়নি কথাটা। আজ নিজেকে দিয়ে সে বেশ উপলব্ধি করলো কথাটা হারে হারে সত্যি। অনাগত সন্তানের প্রতি হঠাৎ করেই তার ভালোবাসা দ্বিগুণ হয়ে গেল। পেটের উপর হাত বোলাতে বোলাতে আপন-মনে চিত্রা বলল, তোর এই দুঃখিনী মায়ের পাশে তুই থাকিস বাবা।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here