শত_তারার_দেশে? Part-3

0
1007

শত_তারার_দেশে?
Part-3
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
বাসার কেউ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট সম্পর্কে জানে না। আর যদি ভুলেও জানে তবে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এখন আমাকেই কিছু করতে হবে যেন সবকিছু ঠিক থাকে। কথাটা ভেবেই ধ্রুব ভাইয়ার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম,
– আমি গিয়ে ছেলেটাকে ডেকে আনি?
.
.
আমি গেলে হয়তো ছেলেটাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আনতে পারবো তাই এই ভাবনা। কিন্তু ধ্রুব ভাইয়া এমন করে তাকালেন যেন বেশ বড় অপরাধ করে ফেলেছি। ভ্রু কুঁচকে বলল,
– তুই যাবি?
.
.
এমন করে বলছে যেন আমি ছোট্ট বাচ্চা, কোলে করে না নিয়ে গেলে কোথাও যেতে পারি না। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
– জি, আমি যাবো! আমার পা আছে যাওয়ার জন্য।
.
.
ধ্রুব ভাইয়া অবাক হওয়ার ভান করে বললেন,
– ওহ, তোর পাও আছে। তুই না বললে তো জানতামই না।
.
.
উনার আজিরা কথা শুনে কোন লাভ নেই, তাই যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু নিচে নামার আগেই ধ্রুব ভাইয়া অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বললেন,
– চুপচাপ চেয়ারে গিয়ে বস! যদি এক পা ও এগোতে দেখি তাহলে তোর খবর আছে।
.
.
আমি মনে হয় তাকে ভয় পাই যে এভাবে বলছে। আমি তো নিচে যাবোই! ভাব দেখিয়ে নিচে যেতে নিলেই ধ্রুব ভাইয়া হাতের বাহু ধরে দেখে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর এমনভাবে চোখ দেখালো যাতে একদম চুপসে গেলাম।
.
.
.
.
.
খেলা শুরু হয়ে গেছে। ধ্রুব ভাইয়া ছেলেটাকে কি বলে এসেছে জানা নেই, তবে ছেলেটা বেশ ভালো খেলে চলছে। কিন্তু ধ্রুব ভাইয়ার কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। চোখ মুখ এমন লাল হয়ে আছে যেন অগ্নিশিখা। মনে হচ্ছে যেন আজকের খেলায় জিতলে না পারলে যেন তার জীবন তামা হয়ে যাবে।
.
.
খেলা পুরো দমে চলছে। ছেলেটা ভালো লেখলেও ধ্রুব ভাইয়ার সামনে টিকতে পারছে না। শেষে ছেলেটা হেরেই গেল। ধ্রুব ভাইয়া আর ছেলেটার খেলা শেষ হলে এক এক করে সবাই খেলা শুরু করেছে। আমি ছেলেটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
– বেশ ভালো লেখেছেন!
.
.
ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
– তাই নাকি?
.
.
আমি হালকা হেসে জবাব দিলাম,
– হুম!
.
.
ছেলেটি একনজর ধ্রুব ভাইয়ার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
– তবে উনি কিন্তু আসলেই ভালো খেলেন।
.
.
আমি ধ্রুব ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। তারপর হেসে বললাম,
– হুম!
.
.
কথাটা বলে আবার ধ্রুব ভাইয়ার দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম ভাইয়ার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। কিন্তু ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে ব্যথা তো পান নি। তাহলে কি আগে থেকেই আঘাত পেয়েছিল আর সেই আঘাতপ্রাপ্ত হাত দিয়ে তিনি খেলে চলেছেন? কথাটা ভাবতেই বুক মুচরে উঠলো। আমি ছেলেটাকে বিদায় জানিয়ে তার কাছে এগিয়ে যেতেই তিনি একনজর আমাকে দেখে নিচে চলে গেলেন।
.
.
.
.
.
ধ্রুব ভাইয়ার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। অন্য সময় হলে সোজা ধুমধাম ভিতরে ঢুকে যেতাম। কিন্তু আজ কেন জানি ভয় লাগছে। ধ্রুব ভাইয়া একনজর আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললেন,
– বাইরে দাঁড়িয়ে কি করছিস?
.
.
ভাইয়ার কথায় হালকা সাহস পেলাম। রুমের ভিতরে ঢুকে ধ্রুব ভাইয়ার দিকে না তাকিয়ে ফাস্ট এড বক্স বের করে ভাইয়ার পাশে বসলাম। বক্স থেকে স্যাভনল তুলোতে বের করে ভাইয়ার হাতটা নিজের কোলে নিয়ে বললাম,
– যখন হাতে ব্যথা তখন খেলার কি দরকার ছিল?
.
.
ভাইয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
– আমার মন চেয়েছে আমি খেলেছি, তোর কি?
.
.
আমি আবার হাত নিজের কাছে নিয়ে বললাম,
– আমার কি মানে! এখন তো সবাই আমাকেই বকবে যে আমি কেন খেলার কথা বললাম।
.
.
ধ্রুব ভাইয়া বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
– তাহলে বকা খাওয়ার ভয়ে ব্যান্ডেজ করছিস?
.
.
এভাবে ব্যান্ডেজ করতে চাইলে তিনি কখনোই করতে দিবে না, বেশি হলে বলবে নিজে করে নিবে। কিন্তু আমি জানি তিনি ব্যান্ডেজ করবেন না। তাই একপ্রকার ইচ্ছে করেই বললাম,
– হ্যাঁ, বকা তো সবাই আমাকে দিবে। আপনার তো কিছু হবে না।
.
.
ধ্রুব ভাইয়া কথাটা শুনে কি রিয়েক্ট করছেন তা দেখার প্রয়োজন আমার নেই। আমি কথাটা বলেই হাতে ব্যান্ডেজ করতে লেগে পড়লাম। ধ্রুব ভাইয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
– হ্যাঁ, তোকে কেউ কিছু বলবে আমার কেন কিছু হবে! কিছুই হবে না!
.
.
কথাটা শুনে খারাপ লাগলো, কিন্তু ব্যান্ডেজ করাটা এখন বেশি দরকার। ব্যান্ডেজ করা শেষ করে বললাম,
– হাত ঠিক না হলে আমাকে অনেক বকা শুনতে হবে। তাই এই হাত সামলে রাখবেন, কোন কিছুর দরকার হলে আমাকে বলবেন। আমি মোটেও চাই না, আপনার জন্য আমার বকা খেতে হোক!
.
.
ধ্রুব ভাইয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
– আমিও চাই না, তুই আমার কারণে বকা খা!
.
.
কথাগুলো বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু না বলেও উপায় নেই। তাই নিজের মন শক্ত করে বললাম,
– যখন চান না আমি বকা খাই, তখন হাতের যত্ন নিন! আর যদি চান আপনার কারণে আমি সবার সামনে অপমানিত হই তাহলে এই হাত নিয়ে যা মন চায় তাই করুন।
.
.
কথাটা বলেই রুম থেকে চলে আসলাম। ধ্রুব ভাইয়া কারণে আমি অপমানিত হবো তা বলতে গেলে অসম্ভব। ভাইয়া এখনোই এমন কিছু করবেন না, যাতে আমাকে ছোট হতে হয়। কিন্তু এখন আমাকে একটু শক্ত হতে হবে, না হলে তিনি কখনোই নিজের যত্ন নিবেন না।
.
.
.
.
.
Continue………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here