শত_তারার_দেশে? Part-4

0
1088

শত_তারার_দেশে?
Part-4
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
সকাল সকাল উঠতেই বুঝতে পারলাম সবাই বিয়ে নিয়ে বেশ ব্যস্ত। উঠে ফ্রেশ হয়েই রওনা দিলাম ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশ্যে। সারাদিনের ব্যস্ততায় আবার খাওয়া ভাগ্যে হবে নাকি জানা নেই, তাই এখনই যতটুকু পারি খেয়ে নিতে হয়। বিয়ের বাড়ি, তাই ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে অনেক জনের সাথে আলাপ ছেড়ে নিতে হলো। সাথে এটাও বুঝলাম যে সারাদিন নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাবো না। সবার সাথে কথা শেষ করে ডাইনিং টেবিলে বসতেই বুঝতে পারলাম ধ্রুব ভাইয়া এখানে নেই। তিনি কি আগে খেয়ে নিলেন? খেলে নিশ্চয়ই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিতেন না। দু তিনটা ধমক দিয়ে খাবার পেটে চালান করেই দম নিতেন। তাহলে? কাউকে জিজ্ঞেস করতেও পারছি না, সবাই নিজেদের কাজে প্রচুর ব্যস্ত। তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে চলে গেলাম ধ্রুব ভাইয়ার রুমে। যেহেতু আমরা বিয়ের উপলক্ষে খালাতো বোনের বাসায় থাকছি, সুতরাং আমাদের কারোই নিজস্ব রুম নেই। ধ্রুব ভাইয়ার রুমটাও ভাইয়ার নয়, দু তিনজন মিলে থাকছেন সেখানে। তাই উঁকি মেরে দেখে নিলাম কেউ আছেন নাকি! না শুধু ধ্রুব ভাইয়াই আছেন। বসে বসে কি যেন ভাবছেন। যদিও তার রুমে যেতে কখনো পারমিশন নিতে হয় নি, তবুও টোকা দিয়ে বললাম,
– আসতে পারি?
.
.
ধ্রব ভাইয়া একনজর আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নিচে নামিয়ে নিলেন। দেখে মনে হচ্ছে বেশ ব্যস্ত আছেন। পারমিশন চেয়েছি বলে এখন ভাব নেওয়া হচ্ছে! লাগবে না উনার পারমিশন। আমিও ভাব নিয়ে পারমিশন ছাড়াই ডুকে পড়লাম। ধ্রুব ভাইয়ার ডান হাতটা হাতে নিয়ে দেখলাম এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। কালকে ব্যাডমিন্টন না খেললে হয়তো এতোটা আঘাত পেতেন না। একনজর হাতটা দেখে হাত নামিয়ে নিলাম। তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এ হাত দিয়ে কোনকিছু করতে না বলেছি বলে কি নাওয়া খাওয়াও বন্ধ করে দিবেন?
.
.
ভাইয়া এবার আমার দিকে তাকালেন। এই চাহনির অর্থ একেক সময় একেক রকম কথা তিনি মোটেও পছন্দ করেন না। লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,
– আচ্ছা, দরকারি কাজগুলো করতে পারবেন। তবে প্রয়োজন ছাড়া কিছু যেন না করা হয়!
.
.
তিনি অন্যদিকে তাকালেন। মানে আমার কথা তিনি মানতে রাজি নন। উনার সাথে ভালোভাবে কথা বললে তিনি এমনই করেন। এর জন্যই কালকে এতো রাগ দেখালাম। এখনো বুঝতে পারছি রাগ দেখিয়েই কথাটা বলতে হবে, না হলে তার মাথায় তা ঢুকবে না। মুখে রাগী ভাব এনে বললাম,
– দেখুন, এখন যদি কেউ জানতে পারে আপনি না খেয়ে বসে আছেন, তাহলে নিশ্চয়ই সব দোষ আমার উপর যাবে। আর আপনি তো চান না যে, আমি দোষী হই, তাই না? সুতরাং, এখন ব্যান্ডেজ খুলে দিচ্ছি, গোসল সেরে আসুন। তারপর নতুন ব্যান্ডেজ করে দিবো। বুঝেছেন?
.
.
ধ্রুব ভাইয়া কোন উত্তর দিচ্ছেন না, তাই রেগেই বললাম,
– বুঝেছেন?
.
.
এবারও তিনি কিছু বলছেন না। খুব ভাব দেখানো হচ্ছে। আমিও কম না। হাতের ব্যান্ডেজ খুলে সোজা ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিলাম। তারপর বললাম,
– শাওয়ার না নিলে আজ বের হতে পারবেন না!
.
.
কথাটা বলে দরজায় কান পাতলাম। হ্যাঁ, কিছুক্ষণের মধ্যেই শাওয়ার থেকে পানি পড়ার শব্দ আসছে। মানে তিনি শাওয়ার নিচ্ছেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে পড়লাম। বিছানায় বসে শান্তিতে ফোন টিপছি এমন সময় বড়মা খাবারের ট্রে নিয়ে রুমে আসলেন। আমাকে বললেন,
– ওহ, তুই এখানে! নিচে রোজা তোকে খুঁজতে খুঁজতে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে!
.
.
কথাটা বলেই খাবারের ট্রে টেবিলে রাখলেন। তারপর একনজর ওয়াসরুমের দরজায় তাকিয়ে বললেন,
– ধ্রুব কি ওয়াসরুমে?
.
.
আমি মাথা নাড়তেই বড়মা নিঃশ্বাস ফেললেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ছেলেটা একটুও নিজের খেয়াল নেয় না। বল, আমি কি সবসময় এতো বড় ছেলের পিছনে ঘুরে বেড়াতে পারি?
.
.
মায়ের মন সবসময় তার ছেলের চিন্তা করে। ছেলে যতই বড় হোক না কেন মায়ের চিন্তার এক অংশও কমতি হয় না। বড়মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম,
– আমি আছি তো! আমি থাকতে আপনার কোন চিন্তা করতে হবে না।
.
.
আমার কথা শুনে বড়মা হালকা হাসলেন। হেসে বললেন,
– তুই আছিস বলেই তো চিন্তা কম হয়। আমি জানি, আমার পরে যদি কেউ ওকে সামলাতে পারে সেটা তুই!
.
.
বড়মা কথা বলে আবার হাসলেন। বড়মার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও হাসলাম। বড়মা একনজর ওয়াসরুমের দরজায় তাকিয়ে তারপর বললেন,
– আমার কাজ আছে একটু। তুই ওকে…!
.
.
বড়মা কথা শেষ করার আগেই বললাম,
– আমি জোর করে উনাকে খাইয়েই দম নিবো। আপনি চিন্তা করবেন না।
.
.
বড়মার হয়তো আরো কিছু মনে এসেছে। একটু ভেবে বললেন,
– কালকে খেলতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছে হয়তো! একটু দেখে ব্যান্ডেজ করে দিস!
.
.
মায়ের চোখে কিছুই আড়াল হয় না। ধ্রুব ভাইয়ার হাতও তার চোখ থেকে আড়াল হয় নি। আমি আশ্বাস দিয়ে বললাম,
– আচ্ছা, বাবা। সব করে দিবো! এখন আপনি সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে বিয়ে এনজয় করুন।
.
.
বড়মা মুখ ছোট করে আনমনেই বললেন,
– ছেলের বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত কি আমার চিন্তা দূর হবে?
.
.
ধ্রুব ভাইয়াকে নিয়ে বড়মা অনেক বেশিই চিন্তা করেন। আমার মাও কি কম নাকি! আসলে পৃথিবীর সব কটি মা একেকটা চিন্তার ভান্ডার। কথাটা ভেবে হালকা হাসলাম। বড়মা একনজর ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে নিজের গন্তব্যে হাঁটা দিলেন। বড়মা যেতেই খেয়াল আসলো আমি ওয়াসরুমের দরজা লক করে রেখেছি। আল্লাহ! আমিও পারি! হয়তো এজন্যই বড়মা বারবার ওয়াসরুমের দিকে তাকাচ্ছিলেন। কি ভাববেন এখন তিনি। যাই ভাবুব, আগে দরজাটা খুলে নিই। অন্য কেউ আবার চলে আসলে মান সম্মান প্লাস্টিক হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি করে গিয়ে দরজা খুললাম। দরজা ভিতর থেকেও লক করা। দরজা খুলে শান্তিতে এসে বিছানায় বসে পড়লাম।
.
.
.
.
.
কিছুক্ষণ পরেই দরজা খোলার শব্দ আসলো। ওয়াসরুমের দিকে তাকাতেই দেখলাম ধ্রুব ভাইয়া সাদা টাওয়াল পরে বেড়িয়ে এসেছে। ফর্সা শরীরে এখনো বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। সিল্কি ভেজা চুলগুলো কপাল জুড়ে লেপ্টে আছে। চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম। দোষ আমারই, সাথে কাপড় চোপড় দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। কাপড় দিলে এভাবে তাকে কাঙ্গালীর মতো বের হতে হতো না। তারও অবশ্য দোষ আছে। কাপড় চাইলেই পারতেন। আমি কি মানা করতাম নাকি! এমনও না যে আমি ছেলেদের কাপড় চিনি না। ধ্রুব ভাইয়া আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে আবার ওয়াসরুমে ঢুকে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কালো জিন্স, সাদা টি-শার্ট আর উপরে কালো জ্যাকেট পড়ে বের হলেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করতে করতে খাওয়ার ট্রের দিকে চোখ পড়তেই বললেন,
– তুই নিয়ে এসেছিস?
.
.
আমি একনজর খাবার ট্রের দিকে তাকালাম। তিনি হয়তো জানেন না যে বড়মা এসেছিলেন। মানা করে বললাম,
– না, বড়মা এসে দিয়ে গিয়েছেন। তিনি হাতের ব্যান্ডেজও করাতে বলেছেন।
.
.
কথাটা বলে আয়নায় তাকাতেই বুঝতে পারলাম তিনি মন খারাপ করেছেন। কিন্তু কেন? ভাইয়া চুল ঠিক করে কাছে আসতেই বিছানায় বসিয়ে দিলাম। ফাস্ট এড বক্স হাতে নিয়ে ব্যান্ডেজ করতে নিলেই তিনি বললেন,
– ব্যান্ডেজ করলে খাবো কিভাবে?
.
.
আমি ইশারায় উনাকে চুপ করতে বলে ব্যান্ডেজ লাগানোর কাজে লেগে পড়লাম। উনিও বাধ্য বাচ্চার মতো আমার কথা মেনে চুপ করে ব্যান্ডেজ লাগানো দেখতে লাগলেন।
.
.
.
.
.
Continue…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here