#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_১৮,১৯
লেখনীতেঃ ভূমি
১৮
বাড়িতে রিয়াদ সাহেব নেই।অদ্রিজা আর অদ্রিজার মা সোফায় বসে রইলেন। এই বাসায় আসার উদ্দেশ্য ইনভাইট করে যাওয়া।কিন্তু উদ্দেশ্য পূরণ হলো না।বাসায় রিয়াদ সাহেব কিংবা রক্তিম কেউই নেই।আছেন রিয়াদ সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী।মুখে চোখে তার গম্ভীর ভাবটা এখনো আগের মতোই আছে।হাতে ট্রে ভর্তি নাস্তা এনে হাজির হয়ে মুখে মৃদু হাসি ফুটালেন তিনি।অদ্রিজা বিস্ময নিয়ে তাকিয়ে রইল।ভদ্রমহিলা হেসেছে?অদ্ভুত!এর আগে কখনো এই মৃদু হাসিটাও ভদ্রমহিলার মুখে দেখেনি সে।বিস্ময় ভাবটা হালকা হতেই অদ্রিজা বলল,
‘ কেমন আছেন মা?আর বাবা কেমন আছেন?অফিসে চলে গেছেন নিশ্চয় বাবা।’
মহিলা কপালের ঘাম মুঁছলেন হাতের তালুতে।নাস্তাটা এগিয়ে দিয়ে টেবিলে রাখলেন।বললেন,
‘ ভালো আছি।উনিও ভালো আছেন অদ্রিজা।তুমি কেমন আছো?’
অদ্রিজা মুচকি হাসল।বলল,
‘ আমিও ভালো।’
ভদ্র মহিলা হালকা হাসলেন।অদ্রিজার মায়ের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লেন,
‘ আপনি কেমন আছেন?শরীর ঠিক আছে এখন?’
অদ্রিজার মায়ের মুখে মৃদু হাসি ফুটল।বলল,
‘ হ্যাঁ।ঠিক আছে।বেয়াই সাহেব নেই?তাহলে বরং আপনাকেই বলে যাই বেয়াইন সাহেব।বাসায় ছোটখাটো একটা আয়োজন আছে।মেয়ে জামাইকে ভালো মতো আদর আপ্যায়ন করা হয়ে উঠে নি। তাই এই আয়োজন। আপনারা আর অদ্রিজার চাচার পরিবারই কেবল থাকবে।আপনাদের নিমন্ত্রন রইল বেয়াইন সাহেব।’
ভদ্রমহিলা মুচকি হাসল।মাথার ঘোমটাটা আররকটু তুলেই বলল,
‘ আমি কল দিয়েছি উনাকে।উনিও আসছেন। আপনি উনাকেও বলে যেতে পারবেন।আর আমরা অবশ্যই যাব।অদ্রিজার মায়ের বাড়ি বলে কথা।যাব না?’
অদ্রিজার মা আর ভদ্র মহিলা দুইজনই মুচকি হাসলেন।অদ্রিজা কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল সবটা।কি অদ্ভুত।এই ভদ্রমহিলা যে হাসতে পারে, এভাবে কথা বলতে পারে তা সে এতদিন এই বাসায় থেকেও বুঝেনি।অদ্রিজা ভাবল।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তীক্ষ্ণ চাহনি ফেলে দেখল কেবল ভদ্রমহিলাকে।তার ভাবনা আর পর্যবেক্ষনের মাঝেই হন্তদন্ত করে বাসায় ডুকলেন রিয়াদ সাহেব।কপাল ভেজা ঘাম।আধপাঁকা দাঁড়ি গুলোও ঘামে নেতিয়ে আছে।পরনের ঘামে ভেজা শার্টটা এক হাত দিয়ে হালকা ঢিলে করে আবার ছেড়ে দিলেন।ক্লান্তিমাখা চাহনি নিয়ে এগিয়ে এসেই বললেন,
‘ অদ্রিজা?কেমন আছো মা?আর আপনি কেমন আছেন বেয়াইন সাহেবা?’
অদ্রিজা মিষ্টি হাসল।উত্তর দেওয়ার পর তার মা আর রক্তিমের বাবার কথোপকোতন শুনল চুপচাপ।কথোপকোতন শেষে চলে যাবে ঠিক তখনই বাসার সদর দরজায় দেখা মিলল টলতে টলতে হাঁটা সেই লোকটির।রক্তিমের।চোখজোড়া লাল টকটকে।হেঁটে আসাটা স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না।এই বিকাল বেলায়ও যে সে ড্রিংক করেছে তা তার হাঁটা দেখেই স্পষ্ট।অদ্রিজা একবার রক্তিম তো একবার মায়ের দিকে তাকাল।রক্তিমের এই বিষয়টা বুঝে গেলে তার মা কি ভাববে?মেয়ের জামাই শেষ পর্যন্ত একটা মাতাল! অদ্রিজা চুপচাপ উঠে দাঁড়াল।রক্তিমের কাছাকাছি গিয়ে দুইহাত দিয়ে রক্তিমের বাম বাহুটা চেপে ধরল।শক্ত গলায় মিনমিনিয়ে বলল,
‘ ছিঃ!ড্রিংক করেছেন আপনি?আমার আম্মু বুঝলে কতটা কষ্ট পাবে ধারণা আছে আপনার?আজই ড্রিংক করতে হলো আপনাকে?আজই!এখনই?’
রক্তিম ঘোলা চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকাল।সঙ্গে সঙ্গেই যেন চকচক করে উঠল তার চাহনি।কিছুক্ষন সেভাবেই অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে রইল।অদ্রিজার মুখ,চোখ সব পরখ করে দেখতে লাগল অস্পষ্ট চাহনিতে।ঘোর লাগানো সেই চাহনিতে অদ্রিজা বেসামাল হয়ে উঠল।অস্বস্তিতে হাত পা ঘেমে উঠল তার।এই লোকটার সামনে লজ্জ্বায় নত হওয়া মানে হার মেনে নেওয়া।তা কখনো হতে দেওয়া যায় না।সেইদিনের তীব্র অপমানের পরও এই চাহনিকে কোনভাবেই সুযোগ দেওয়া যায় না।অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলল,
‘ এইখানে আসলেন কেন আপনি?কে বলেছে আসতে এখন?নাকি ইচ্ছে করেই আবার খারাপ হওয়ার নাটক কন্টিনিউ করতে আমার আম্মুর সামনে এভাবে হাজির হয়েছেন?আপনার এক্টর হওয়া উচিত ছিল রক্তিম।ছেলেরাও এত ভালো অভিনয় পারে আপনাকে না দেখলে জানতামই না।’
রক্তিম নেশাক্ত লাল টকটকে চোখের সেই চাহনি সেরকমই রাখল।এক পলকও নড়ল না সেই চাহনি।মুচকি হেসে অদ্রিজার কানের কাছে মুখ নিতেই হেলে পড়ল অদ্রিজার কাঁধে।নিজের প্রতি ব্যালেন্স রাখাটা বোধ হয় মাতাল শরীর পারল না।মাথাটা সেভাবেই অদ্রিজার কাঁধে হেলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনি এই এক্টরের পেছনেই পড়ে আছেন এখনো।অদ্ভুত!’
অদ্রিজা বিরক্ত হয়ে তাকাল।।রক্তিমের ভারী শরীরের কিছুটা ভার তার উপর ও পড়েছে।দুই হাত দিয়ে রক্তিমকে ধরে নিতেই নাকে এসে লাগল ভারী কোন এক গন্ধ।সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে গেল তার। ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপনি তো সত্যিই ড্রিংক করেছেন।ছিঃ! রক্তিম ছিঃ!আশা করিনি আমি।’
রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
‘ কেন?’
‘ জানি না।আমি আপনাকে ধরছি । আপনি সোজা হয়ে হাঁটবেন।যাতে বুঝা না যায় আপনি ড্রিংক করেছেন।আম্মুর কাছে গিয়ে সালাম দিবেন।তারপর রুমে গিয়ে যা ইচ্ছে তাই করুন।মাতলামি করুন, প্রেম করুন যা ইচ্ছে তাই।’
রক্তিম মুচকি হেসেই মুখ ঘেষল অদ্রিজার কাঁধে।অদ্রিজা কেঁপে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই।বাম হাতটা সজোরে চলে গেল রক্তিমের মুখে।শক্ত করে রক্তিমের মাথাটা ধরে সোজা করে দিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ কি করছেন এসব?এটা ড্রয়িং রুম।আম্মু, বাবা সবাই আছে দেখছেন আপনি? ওরা দেখলে কি ভাববে?’
রক্তিম বাঁকা হেসেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ বাহ!পার্ফেক্ট বউ!’
কথাটা বলেই রক্তিম হাসল।অদ্রিজা কোনভাবে দুইহাত দিয়ে রক্তিমের বিশাল লম্বা চওড়া শরীরটা ব্যলেন্স করার চেষ্টা করল।মায়ের কাছে গিয়ে সোজা করে দাঁড় করাতেই রক্তিম হালকা হাসল।বলল,
‘ আসসলামু আলাইকুম আন্টি।’
অদ্রিজার মা মেকি হাসল।ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই রক্তিম আর অদ্রিজাকে পর্যবেক্ষন করল।দেখেই বোঝা যাচ্ছে রক্তিমের শরীরের ভার অদ্রিজার উপরও।উনি ভ্রু কুঁচকে রেখেই বললেন,
‘ ওয়ালাইকুম সালাম।কেমন আছো?অদ্রি?কোন সমস্যা?এভাবে ধরে আছিস কেন?’
অদ্রিজা ভয়ে চুপসে গেল।এই বুঝি তার মা সবটা বুঝে গেল।এই বুঝি বলে ফেলল,”শেষে একটা মাতালকে বিয়ে করেছিস?তোর চাচুর এমন পছন্দ?”শুকনো ঢোক গিলল।আমতা আমতা করেই বলল,
‘ স্ সম্ সমস্যা?নাহ তো আম্মু।কোন সমস্যা নয়।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় উনার পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন তো তাই হাঁটতে পারছেন না।’
অদ্রিজার মা হালকা হাসার চেষ্টা করল।সন্দেহটা গেল না।নজরটা আগের মতো রেখেই তাকিয়ে রইল উনি।অদ্রিজা কাঁপা গলায় আবারও বলল,
‘ আম্মু? তুমি বসো। আমি উনাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি?পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তো।ঔষুধটা দিয়ে আসি।তুমি বসো হ্যাঁ?’
অদ্রিজার মা মাথা নাড়ালেন হালকা।অদ্রিজা যত দ্রুত পারল রক্তিমকে নিয়ে রুমে আসল।বিছানার পাশে রক্তিমকে বসিয়ে দিয়েই ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল,
‘ আমার সত্যিই বিরক্ত লাগছে রক্তিম।ড্রিংক করেছেন ভালো কথা।আপনি কেন আবার বাসায় আসবেন?আমি তো জানতাম আপনি এই বাসায় থাকেন না। সুইটহার্টের সাথে থাকেন।তাহলে? এখানে থাকাটা তো কেবল শর্ত ছিল। তাই না?আমার তো মনে হচ্ছে আপনি ইচ্ছে করেই ড্রিংক করে এই বাসায় ফিরেছেন।’
রক্তিম হাসল। জড়ানো কন্ঠে বলল,
উহ, ভুল ভাবছেন অদ্রিজা।মিস্টার মাহমুদ গাড়ি পাঠিয়েছিল। কল করে বলেছিল আপনারা এসেছেন তাই আসাটা নাকি বাধ্যতামূলক।তাই এসেছি।আর কিছু নয়।’
অদ্রিজা লম্বা শ্বাস ফেলল।ছোট গলায় ” ওহ ” বলে চলে আসতে লাগলেই পেঁছন থেকে হাতটা জড়িয়ে ধরল রক্তিম।হেঁচকা টানে নিজের দিকে টানতেই অদ্রিজা টাল সামলাতে না পেরে সোজা রক্তিমের শরীরে গিয়ে পড়ল।রক্তিম মুচকি হেসেই চোখ টিপল।ট্যারাব্যাকা দাঁত গুলো দেখিয়ে হেসেই বলল,
‘ আপনার ডাকনামটা কিন্তু খুব কিউট। অদ্রি।আহ!’
অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলল,
‘ আপনি আমার হাত ধরে টানলেন কেন?অসহ্য!’
রক্তিম বাঁকা হেসেই বলে উঠল,
‘ আপনি বললেন না রুমে এসে মাতলামি করুন নয়তো প্রেম করুন, যা ইচ্ছে তাই করুন।তাহলে চলে যাচ্ছেন যে?প্রেম করব না?নাও স্টার্ট?’
অদ্রিজা মিনমিনে চাহনিতে তাকিয়ে রইল।রক্তিমের শরীরের সাথে নিজের শরীরের স্পর্ষে নিঃশ্বাস ক্রমশ ঘন হয়ে উঠল তার।হৃৎপিন্ডে কম্পনটা সময়ের সাথে বেড়ে চলেছে দ্বিগুণ হারে।কাঁপা গলায় বলল,
‘ মা্ মানে? কি হচ্ছে কি?হাত ছাড়ুন।’
রক্তিম হাত ছাড়ল না ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ এই রুমে কোথাও ড্রিংক করার সামগ্রী দেখতে পাচ্ছেন আপনি?নেই।আর আমি ড্রিংক না করে মাতলামি কি করে করি বলুন তো।আপনি তো দুটো কথাই বললেন, মাতলামি নয়তো প্রেম। যেহেতু মাতলামি করাটা পসিবল না সেহেতু প্রেমটাই গ্রহণযোগ্য।এখন বলুন, এই রুমে প্রেম করার মতো আর কেউ আছে?কার সাথে প্রেম করব?’
অদ্রিজা বিরক্ত চাহনিতে তাকাল।হাতটা কচলাতে কচলাতে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল।এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো রক্তিম ড্রিংক করে নি।এত স্পষ্ট কথা?এত সুস্পষ্ট ভাবনার কথা কি ড্রিংক করার পরও বলা যায় নাকি?অদ্রিজা সন্দেহী চাহনিতে তাকিয়েই বলল,
‘ আপনি সত্যিই ড্রিং করেছেন?নাকি নাটক? এত স্পষ্টভাবে কথা বলছেন?আমার হাত ধরে টানা সময় তো টলতে দেখিনি।’
রক্তিম হাসল।অদ্রিজার হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসল।চকচকে চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ ড্রিংক করতে আমি অভ্যস্ত।ওসব ড্রিংকের সাইড ইফেক্ট হিসেবে মাতাল হয়ে যাব না আমি অদ্রিজা।ড্রিংক করেছি বলে যে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারব না তা কে বলেছে আপনাকে?’
অদ্রিজা চকচকে চাহনিতে তাকাল।বিরক্ত নিয়েই বলে উঠল,
‘ তাহলে এতক্ষন টলতে টলতে হাঁটছিলেন কেন? এই মনে হলো ঠাস করে পড়ে যাবেন।সবটাই নাটক?’
রক্তিম কিছুটা বিরক্ত হলো বোধ হয়।কপালে দেখা গেল মৃদু ভাজ।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই সোজা হয়ে বসল। বলল,
‘ বারবার নাটক ফাটক কেন টানছেন বলুন তো?আপনার সাথে এক্সেক্টলি কি সম্পর্ক যে আপনার সামনে আমায় নাটক করতে হবে?কি লাভ আমার শুধু শুধু নাটক করে?’
অদ্রিজা মৃদু গলায় বলল,
‘ সেটা জানলেই তো হতো।আমি ও তো জানতে চাই তা।’
রক্তিম মুচকি হাসল কেবল।বলল,
‘ আপনার আম্মু ওয়েট করছে।বাইরে যান।’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্যমাখা হাসি হাসল।রক্তিম যে তাকে থাকতে বলবে সে ব্যাপারে এটুকুও আশা রাখেনি সে।তবুও ভয়ংকর রকম রাগ জম্মাল রক্তিমের প্রতি।চোখ মুখে দেখা মিলল অদ্ভুত রাগের ছিটেফুটে।সে ভয়ংকর রাগ নিয়েই বলল সে,
‘ আপনি কি ভেবেছেন? আপনার মতো ফালতু একটা লোকের সাথে এক রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে?একদমই না।আপনাকে আমার অসহ্য লাগে রক্তিম।এই যে আপনি আমার হাত ছুঁলেন?এ ছোঁয়াটার প্রতিও চরম ঘৃণা হচ্ছে আমার।আর আপনাকে তো আরো ভয়ংকর ঘৃণা করি আমি। ‘
কথাগুলো বলেই বেরিয়ে আসল অদ্রিজা।চোখে মুখের সূক্ষ্ম রাগটা নিয়েই মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল।থমথমে মুখেই বলল,
‘ শেষ তো আম্মু।চলো। যাবে না?’
অদ্রিজার মা চুপচাপ বসে রইলেন। মুখে চরম থমথমে ভাব।অদ্রিজার দিকে একনজর কঠিন চাহনিতে তাকিয়েই তাকালেন রিয়াদ সাহেবের দিকে।মৃদু গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,
‘ আপনার ছেলে কি ড্রিংক করে বেয়াই সাহেব?আমার মেয়ের সাথে আপনার মাতাল ছেলের বিয়ে দিয়ে জিতে গিয়েছেন?’
অদ্রিজার মায়ের কথাটা শুনেই অবাক হলো রিয়াদ সাহেব।সঙ্গে অদ্রিজাও।মায়ের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতেই তার মা আবারও বলল,
‘ রক্তিম ড্রিংক করে অদ্রি?আমায় বলিস নি তো।’
অদ্রিজা থমকাল।কাঁপা গলায় বলল,
‘ ন্ না আম্মু।আস্ আসলে…’
‘ আসলে?’
মায়ের কথাটা শুনে অদ্রিজা জোরে শ্বাস ফেলল।কি বলবে খুঁজে না পেয়েই কয়েক সেকেন্ড ভাবল।আর সে ভাবনার মাঝেই সেখানে এসে দাঁড়াল রক্তিম।মুচকি হেসেই বলে উঠল,
‘ আসলে আমি ড্রিংক করি আন্টি।এনি প্রবলেম?’
অদ্রিজার মায়ের চাহনিটা এবার তীক্ষ্ণ হলো।রক্তিমের কথাবার্তায় বুঝা গেল না সে ড্রিংক করেছে।তবুও মনের মধ্যকার সন্দেহটা যেন গেল না।হাসার চেষ্টা করেই বলল,
‘ আমি ভেবেছিলাম ড্রিংক করে এসেছো। তাই হাঁটতে পারছো না।ওভাবে তাল পাকিয়ে হাঁটছিলে।যায় হোক, তুমি যদি কখনো ড্রিংক করেও থাকো আর করতে পারবে না রক্তিম।আমি কিংবা আমার মেয়েরা কেউই এসব পছন্দ করি না।আর আমি নিশ্চয় চাইব না আমার মেয়ে এমন একজনের সাথে সংসার করুা যে কিনা ড্রিংক করে।’
অদ্রিজা শুকনো ঢোক গিলল।আর রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার পেছনে দাঁড়িয়েই মাথা নামাল।অদ্রিজার ঘাড়ে ঠোঁট গোল করে ফু দিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপনার মা কিন্তু ভীষণ জটিল মহিলা!’
.
অদ্রিজাদের বাসায় অদ্রিজার চাচাসহ চাচার আত্নীয়রাও।আর তার মায়ের আত্নীয় বলতে কেবল তার এক খালা।অনুষ্ঠানের আগের দিনই এসে হাজির হলো সবাই।অদ্রিজা আর অত্রিয়া মুখে হাত দিয়েই সোফায় বসে ছিল।হঠাৎ সদর দরজায় কিছু একটা দেখেই দুই জোড়া চোখ চকচক করে উঠল।অদ্রিজা সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে ঘুষি দিল অত্রিয়ার পেটে।খিলখিলিয়ে হেসেই বলে উঠল,
‘ তোর শ্যামপুরুষ!’
অত্রিয়া লাজুক দৃষ্টিতে তাকাল। ছেলেটাকে প্রথম তার চৌদ্দ বছর বয়সে দেখা।উড়তি কিশোরী বয়স।শরীর মন সবকিছুতে মাত্র যৌবনের ছোঁয়া পড়েছে।তার চাচার বাসায় দেখেছিল প্রথম তাকে কোন এক অনুষ্ঠানে। তারপর থেকে আরো কয়েকবার দেখেছে পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় এই ছেলেটাকে সে কিংবা অদ্রিজা কেউই চেনে না।কে সে,কোথায় থাকে কিছুই না।অত্রিয়ার মুখটা কালো হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই।লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
‘ দূরর!সে কে?তারে তো চিনিই না আমি। নামটাও তো জানি না।শ্যামপুরুষ আর হবে?সম্ভাবনা নেই।’
অদ্রিজা হাসল।চোখ টিপে বলল,
‘আরেহ আছে আছে।পেছনে চাচুর শালীর মেয়ে রাইমা থুক্কু রাইমা আপু দেখ।উনার থেকে নাম ঠিকানা সব জেনে নিব পাক্কা।’
অত্রিয়া চোখ ঘুরিয়ে সেই লোকটার দিকে তাকাল।হ্যাঁ পেছনে আরো দুইজন।রাইমা, আর যে লোকটা সে বোধ হয় রাইমার বর।অত্রিয়া খিলিখিলিয়ে হেসেই লোকটার দিকে বেশ মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে রইল।লোকটা সুন্দর কিনা তার জানা নেই।তবে লোকটার দিকে তাকালে আর নজর সরাতে তার মন চায় না।ইচ্ছে করে কেবল তাকিয়েই থাকুক।
#চলবে…..
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_১৯
লেখনীতেঃভূমি
রাতের আকাশে ছোট ছোট উজ্জ্বল তারা জোনাকির মতো জ্বলছে।মাঝখানেই বড়সড় একটা ঝলমল করা চাঁদ।জানালার এপাশ থেকে অদ্রিজা মুচকি হাসল সেই চাঁদটার দিকে তাকিয়েই। হাসিটা অবশ্য বেশিক্ষন টিকল না।কিছুটা সময় পরই তা তীব্র বেদনায় আর বিষাদে রূপান্তরিত হলো মোবাইলের স্ক্রিনে রক্তিমের নামটা দেখেই।অদ্রিজা ছোট ছোট শ্বাস ফেলল।প্রতিজ্ঞা করল কলটা সে রিসিভড করবে না।কিন্তু একবার, দুবার, তিনবারের সময় আর প্রতিজ্ঞাটা প্রতিজ্ঞার মতো রইল না।কলটা রিসিভড করেই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে বসল সে,
‘কি সমস্যা রক্তিম?এতবার কল দিচ্ছেন কেন আপনি?’
রক্তিম ওপাশে নিঃশব্দে হাসল।কয়েক সেকেন্ড পরই হঠাৎ টুংটাং শব্দ কানে ভেসে আসল অদ্রিজার।ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই ফোনের ওপাশে টুংটাং শব্দটা মনোযোগ দিয়ে শুনল অদ্রিজা।রক্তিম মৃদু হেসেই বলল,
‘কানের ঝুমকোটা আছে?’
অদ্রিজার ডান হাতটা তৎক্ষনাৎ গিয়ে স্থির হলো কানে।বাম কানটা চেক করে ডান কানে হাত নিতেই খেয়াল হলো, কানে দুলটা নেই।অদ্রিজা হতাশ হলো।মুখ চোখ কালো করে বলল,
‘ আপনার কাছে আমার ঝুমকো? ‘
রক্তিম হাসল।সেই হাসির মৃদু শব্দ ভেসে আসল অদ্রিজার কানেও। সাথে সাথে তীব্র বিরক্তি ছুঁয়ে গেল মনে। মুখ চোখে দেখা গেল অন্ধকার আলোর রেশ। দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,
‘ আজব তো!হাসছেন কেন আপনি? হাসির মতো কি বলেছি আমি?ঝুমকোটা আপনার কাছে?’
রক্তিম হাসি থামাল।কন্ঠটা কঠিন দৃঢ় করার চেষ্টা করেই বলল,
‘ আমার কাছে তোমার ঝুমকো কেন থাকবে অদ্রি?’
অদ্রিজা একেবারে চমকে উঠল রক্তিমের সম্বোধন শুনে।তুমি আর অদ্রি ডাকটা রক্তিমের মুখে কিছুটা ভিন্ন শোনাল যেন।মনের ভেতর বয়ে গেল অদ্ভুত এক শিহরন।অদ্রিজা হালকা গলায় বলে বসল,
‘ কি বললেন?আমায় অদ্রি ডাকার অধিকার নেই আপনার।অদ্রিজাই ডাকবেন।’
রক্তিম পিচেল গলায় বলে উঠল,
‘ উহ!তোমার প্রেমিকের দেওয়া নামে তো ডাকছি না অদ্রি।অদ্রি ডেকেছি, দ্রিজা নয়। ‘
অদ্রিজা চুপ রইল।বিরক্তে মাথাটা ছিঁড়ে যেতে চাইল যেন মুহুর্তেই।রাগে হাঁসফাঁস করে কিছুটা সময় নিরবতার পরই রক্তিম আবারও বলল,
‘ রেগে গিয়েছো নাকি অদ্রি?কুল! তোমার বান্ধবীর ফুফাত ভাই হিসেবে এটুকু মজা আমি করতেই পারি। তাই না অদ্রি?’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে ফেলল।রক্তিমের কথাগুলো চরম বিরক্তি নিয়ে শুনেই কড়া কন্ঠে বলল,
‘আপনি আমার কেউ নন রক্তিম।কেউই নন।বান্ধবীর ফুফাত ভাই হিসেবে তো আপনার সাথে আমার পরিচয় হয় নি।যে পরিচয়টা হয়েছিল সেটা আমি কিংবা আপনি কেউই মানি না।হাতে গোনা আর কয়েকটাদিন পর এমনিতেও আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হবে না আর।তাই আপনি আমার কেউই নন রক্তিম।এটুকু মজা করারও অধিকার আপনার নেই।আর অদ্রি ডাকার বা তুমি করে বলার ও অধিকার নেই।’
রক্তিম মুচকি হেসেই বলে উঠল,
‘ হ্যাঁ, জানি।তবুও অনাধিকার চর্চা করতে আমার ভালোই লাগে অদ্রি।এনিওয়েজ,আমি বোধ হয় বিরক্ত করছি।এইটুকু সময়ে তোমার প্রেমিকের সাথে কথা বললে কতগুলো অনুভূতি প্রকাশ করা হয়ে যেত। তাই না?’
অদ্রিজার রাগ আর বিরক্তিটা এবার আকাশ ছুঁলো।ক্ষুদ্ধ কন্ঠেই বলে উঠল,
‘ ইরিটেটিং! বারবার প্রেমিক বলে কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?দিহান মোটেই আমার প্রেমিক নয়।আর আমার কোন প্রেমিক নেই। আশা করি বিষয়টা আপনাকে বুঝাতে পেরেছি।’
রক্তিম হাসল।ফিসফিস করে কাউকে কিছু বলেই কিছুটা সময় চুপ রইল।অদ্রিজাও চুপ রইল।অবশেষে ওপাশ থেকে কোনকিছু শুনতে না পেয়েই বলল,
‘ বাই রাখছি।’
রক্তিম এতক্ষন কিছু না বললেও এবার লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।মৃদু গলায় ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ডোন্ট মাইন্ড অদ্রিজা।পাশে সুইটহার্ট ছিল এতক্ষন।আপনার ঝুমকোটা পকেটে দেখেই সন্দেহ করেছিল।তাই কল করে শিওর করলাম তাকে।আপনাকে তুমি আর অদ্রি বলে ডাকাটা তার উপস্থিতির জন্যই।বাই।’
সঙ্গে সঙ্গেই কলটা কেঁটে গেল।অদ্রিজা লম্বা শ্বাস ফেলল।এই মানুষটাকে বুঝা দায়।বড্ড্ কঠিন রকম এই মানুষটা।এমন কেন?অদ্রিজা ভেবে কোন উত্তর পেল না।হতাশ চাহনিতে এপাশ ওপাশ তাকিয়েই নিজের রুম পেরিয়ে ড্রয়িং রুমের একপাশে গিয়ে দাঁড়াল।ফ্লোরে পাটি বিছানো।তার উপর রাইমা, রাইমার বর, অত্রিয়া আর অত্রিয়ার শ্যামপুরুষ সহ তার চাচাতো বোন দুজনও আছে।অদ্রিজা মুচকি হাসল। তাদের কাছাকাছি আসতেই অত্রিয়া অদ্রিজার ডান হাতটা টানতেই এলোমেলো হয়ে বসে পড়ল অদ্রিজা।অত্রিয়া ফিসফিসিয়ে বলে উঠল অদ্রিজার কানে,
‘ আপু?রাইমা আপুর যে একটা প্রাক্তন ছিল জানতি তুই?খুব ভালোবাসত।কিন্তু লোকটা জঘন্যরকম খারাপ ছিল আপু।রাইমা আপুকে ফিরিয়ে দিয়ে রাইমা আপুর বেস্টফ্রেন্ডকে ভালোবেসেছিল।পরে নাকি সে বেস্টফ্রেন্ডকেও ঠকিয়েছে।জিজু কিন্তু অনেক ভালো। আপুর সবটা জেনেও আগলে নিয়েছে।এতক্ষন এসবই বলেছে আপু।তুই মিস করলি আপু।’
অদ্রিজা চকচকে চাহনিতে তাকাল।রাইমার দিকে তাকিয়েই চোখ ঘুরিয়ে রাইমার বরের দিকে তাকাল।সরু চাহনিতে রাইমাকে পর্যবেক্ষন করেই বলল,
‘ রাইমা আপু? বলো তো সে জঘন্য লোকটা ভালো নাকি জিজু?ঐ জঘন্য লোকটার সাথে বিয়ে হলে সুখী হতে এখন যতোটা সুখী?’
রাইমা মুচকি হাসল।সুন্দর ধবধবে মুখে চমৎকার হাসিটা বড্ড চমৎকার ঠেকল।বলল,
‘ কখনোই তার সাথে বিয়ে করে আমি সুখী হতাম নাহ রে অদ্রি।সে কখনো আমায় বুঝেই নি যতোটা তোর জিজু বুঝে।সে এই শহরেই থাকে।এই শহরে যেহেতু এসেছি তাকে অবশ্যই একটা ধন্যবাদ জানিয়ে যাব আমি।সে ফিরিয়ে না দিলে আমি তোদের জিজুর মতো কাউকে হয়তো পেতামই না।’
অদ্রিজা হাসল।হাসল বাকি সবাইও।রাইমার বরের চোখে মুখে দেখা গেল এক মুগ্ধ চাহনি।সেই মুগ্ধ চাহনির রেশ টেনেই অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হেসে বলল,
‘ জিজু নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলে নাকি রাইমা আপুর? ‘
কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠল।অত্রিয়ার শ্যামপুরুষের মুখেও দেখা গেল গম্ভীর চাপা হাসি।হাসির আড়ালে সেই হাসিটার দিকেই তাকিয়ে রইল অত্রিয়া।কি স্নিগ্ধ হাসি।এই হাসিটা দেখার জন্য হাজারটা রসিকতা করতে হলে ও ক্ষতি নেই।আহা!কি সুন্দর।
.
‘ তুই আমায় ভালোবাসিস নেহা?’
নেহা চমকে উঠল সামনের ছেলেটার কথাটা শুনেই।হাত পা কেঁপে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই।লোমকূপ জুড়ে শিহরণ বয়ে গেল মুহুর্তেই। অস্বস্তিতে ঘেমে উঠল হাতের তালু, পায়ের তালু।বার কয়েক দিহানের দিকে তাকিয়ে থেকেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল সে।গলা দিয়ে যেন একটা শব্দও বের হলো না তার।দিহান বুঝতে পারল নেহার অবস্থাটা।হতজোড়া বুকে ভাজ করেই আবারও গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
‘ কি হলো?ভালোবাসিস?উত্তর দিচ্ছিস না কেন তুই?’
নেহা এবারও কিছু বলতে পারল না।শুকনো গলা নিয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল।তীব্র অস্বস্তি নিয়ে কিছু না বলেই মাথা নিচু করে পালিয়ে আসতে নিতেই দিহান আবারও সামনে এসে দাঁড়াল মুহুর্তেই।গম্ভীর কন্ঠে আবারও শুধাল,
‘ নিরবতা সম্মতির লক্ষণ নেহা।তাহলে কি আমি তোর উত্তরটা হ্যাঁ ধরে নিব?ইয়েস অর নো?’
দিহানের কথাগুলো শুনেই গলাটা যেন আরো শুকিয়ে আসল নেহার।কোন রকমে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ উত্তর দিতেই কানে আসল দিহানের গমগমে কন্ঠ,
‘ এভাবে চুপচাপ হয়ে আছিস কেন তুই?খেয়ে ফেলব তোকে আমি?এমনিতে তো বেশ চঞ্চল আর বাচাল হয়ে থাকিস। তবে?এখন এমন বিহেভিয়ার করছিস কেন?’
নেহা মাথা তুলে তাকাল। কাঁপা গলায় বলে উঠল,
‘কো্ কোথায়?ঠিকই তো আছি দিহান।’
দিহান হালকা হাসল।এতক্ষনের গম্ভীর মুখে ঐটুকু হাসি দেখেই যেন একটু হলেও স্বস্তি পেল নেহা।সরু চাহনিতে তাকাতেই দিহান মৃদু কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আমায় কেন ভালোবাসিস?কি কারণে?’
নেহা হতাশ হলো এবার।মনে মনে ভাবল আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছে সে।কিন্তু মনে পড়ল না।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাসা থেকে বেরিয়ে এমন একটা জেরার মুখোমুখি হতে হবে জীবনেও ভাবে নি সে।তাও সেই মানুষটার কাছেই যাকে দেখলে সে বেসামাল হয়ে উঠে, অগোছাল হয়ে যায় সেই আজ তাকে চেপে বসেছে এভাবে?নেহা ছোট্ট শ্বাস ফেলল।দিহানের দিকে তাকিয়েই কোনভাবে বলল,
‘ দি্ দিহান, মাথা ব্যাথা করছে। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। তুই ভার্সিটি যা।হু?’
দিহান মুচকি হাসল।সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে নেহার হতাশ হওয়া মুখচাহনিটা দেখে নিয়েই টুপ করে বলে বসল,
‘ ভালোবাসবি আমায়?’
দিহানের কথাটা যেন বিশ্বাস হলো না নেহার।চোখ মুখে খেলে গেল তীব্র বিস্ময়। চোখজোড়ায় তীব্র বিস্ময় নিয়েই কিছুটা সময় তাকিয়ে রইল দিহানের মুখের দিকে।তা দেখেই দিহান হাসল।মৃদু গলায় বলল,
‘ আমি তোকে ভালোবাসি না নেহা।তবে তোর ভালোবাসা পেতে চাইছি।ভালোবাসবি?’
‘ মা্ মানে?’
‘ ভালোবাসবি? আমি তোর সব ভালোবাসা গ্রহণ করব।আগলে নিব।কোন একদিন ভালোও বাসব। নিজের পুরোনো ভালোবাসাকে ভুলতে হবে আমায়।সাহায্য করবি নেহা?প্লিজ!’
সঙ্গে সঙ্গেই নেহার এতক্ষনকার নুঁইয়ে থাকা চাহনি জ্বলজ্বল করে উঠল।মুখে তীব্র ক্ষোভ নিয়েই বলল,
‘ তোকে ভালোবাসি আমি দিহান।তাই বলে তুই আমায় একজনকে ভুলার মেডিসিন হিসেবে পাশে চাইবি? আমি তোকে ভালোবাসি। তুই আমার হলি কি না হলি তাতে আমার কিছু যায় আসে না।কিন্তু তোকে পাওয়ার জন্য এজ এ মেডিসিন হিসেবে তোর পাশে থাকতে হবে? আমি থাকতে পারব না দিহান।স্যরি।সম্ভব নয়। ‘
দিহান হাসল।বলল,
‘ ইটস ওকে।থেংক্স।’
নেহা চমৎকার ভাবে হাসল।এই হাসিটা দেখে মনেই হবে না একটু আগেও তার চোখেমুখে ক্ষোভ ছিল, একটু আগেও মেয়েটা অস্বস্তিতে নুঁইয়ে পড়েছিল সে।মুখের চাঞ্চল্য মাখা হাসিটা তা একবিন্দুও বুঝতে দিল না। সেভাবে হাসতে হাসতেই বলল নেহা,
‘ তোর পুরোনো ভালোবাসাটা কে শুনি?আহারে!তোকে এভাবে ছেড়ে দিল?’
দিহান আশ্চর্য হয়ে তাকাল নেহার দিকে।হঠাৎ নেহার পরিবর্তিত কথায় অল্প অবাক হলেও নিজেকে সামলে মৃদু গলায় বলল,
‘দ্রিজা।’
কথাটা বলেই আর দাঁড়াল না দিহান।নেহা যেন ঐ একটা শব্দ শুনেই জমে গেল।দ্রিজা?দ্রিজা কিভাবে?তবে কি ভার্সিটির সেই গুঞ্জন সঠিক ছিল?দ্রিজা আর দিহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল?তারপরই দ্রিজার বিয়ে হয়েছে?নেহা বুঝে উঠল না।পাগল পাগল লাগল নিজেকে একমুহুর্তের জন্য।নিজের এতটা কাছের বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ দুইজনের সম্পর্ক ছিল অথচ বলেইনি তাকে?জানেই না সে?দ্রিজা তো জানত সে দিহানকে পছন্দ করে তাহলে কোনদিন কেন বলল না তার আর দিহানের সম্পর্ক আছে?কেন?
.
‘ আপনাকে প্রিয় সম্বোধন করা কি আমার উচিত অদ্রিজা?জানি না আমি। তবে আমি খুব অসহায় অদ্রিজা।খুব অসহায় আমি।আমায় একমুঠো সহায্য ভিক্ষে দিবেন অদ্রিজা?আমি ভীষণ ভীষণ রকম অসহায়!আমার এই জীবনটায় আমি কম ভালোবাসা পাই নি অদ্রিজা।অনেক নারীই আমায ভালোবেসেছিল। খুব করে চেয়েছিল আমায় ।কিন্তু আমি কখনো কাউকে চাইনি অদ্রিজা।কখনোই না।আপনাকেও চাই না আমি। এটুকুও ভালোবাসি না আমি আপনাকে। তবুও আমি আপনাতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। কেন বলুন তো?রাত হলেই আমার ঘুম আমায় কাছে টানছে না।মাথা ব্যাথায় মাথাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে আপনি নামক মানুষটার ভাবনায়। আমি কি করব অদ্রিজা?আপনি নামক মরনব্যাধির কি কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি এখনো?আর যে সহ্য করা যাচ্ছে না এই তীব্র ব্যাথা।আমার এই দীর্ঘ জীবনের সব দুঃখের একমাত্র ঔষুধ অ্যালোকোহলও আপনি নামক ব্যাধির সাথে লড়তে পারছে না অদ্রিজা।কেন ভুলতে পারছি না?এই অসহ্য যন্ত্রনা থেকে আমায় মুক্তি দিন অদ্রিজা।মুক্তি চাই আমার।’
ভাজ করা সাদা কাগজে লেখা গুলো পড়েই চমকে গেল অদ্রিজা।কাগজটা একটা বক্সে ছিল।বক্সটা তার চেনা।রক্তিমের সুইটহার্টের জম্মদিনে যে বক্সটা সে গিফট করেছিল কিন্তু রক্তিম ফেরত দিয়েছিল সেই বক্সটার ভেতরেই এই চিরকুটটা পেল।এতদিন খুলে দেখে নি সে।বক্সের ভেতরে একজোড়া কানের দুলই উপহার দিয়েছিল সে।আজ বাসার সবাই সেঁজেছে।অত্রিয়া সাঁজার জন্য এই বক্সের কানের দুলটার পেঁছনেই পড়ে ছিল এতক্ষন।বক্সটা খুলে কাগজটা চোখে পড়তেই এক প্রকার ঝাপটে নিয়ে নিল অদ্রিজা।অত্রিয়াকে দুলজোড়া দিয়ে কোনভাবে রুম থেকে বের করে দিয়েই চিরকুটটা পড়ল সে।সঙ্গে সঙ্গেই টগবগ করে উঠল শিরায় উপশিরায় বয়ে চলা রক্ত।বুকের ভেতর হৃৎস্পন্দনের মাত্রা যেন ঘন হয়ে উঠল দ্রুত।আপসোস হলো, আরো আগে কেন বক্সটা খুলে দেখেনি?এই লেখাগুলো আরো আগে কেন পড়া হয়নি?কেন?
#চলবে……