#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৫,৩৬
লেখনীতেঃভূমি
৩৫
সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গতেই বিছানায় নিজের পাশে রক্তিমকে আবিষ্কার করল অদ্রিজা।গতকাল রাতে তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে।তখন রক্তিম ফিরেই নি।হয়তো ঘুমানোর পরই এসেছিল রক্তিম।ঝাপসা চোখে রক্তিমের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়েই হাসল। চোখজোড়া স্থির রেখে রক্তিমের মুখ চোখ গভীর ভাবে পরীক্ষণ করল।কাঁপা হাতে রক্তিমের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতেই ঘুমন্ত রক্তিম সজাগ হলে বোধ হয়।চোখজোড়া সেভাবে বন্ধ রেখেই কপালে চেপে ধরল অদ্রিজার হাতটা।ঘুম জড়ানে গলায় বলে উঠল,
‘ ঘুমিয়ে আছি বলে সুযোগের সৎ ব্যবহার করে ফেলছেন?’
অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকাল।হাতটা একটানে রক্তিমের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়েই উঠে বসল দ্রুত।গম্ভীর গলায় বলল,
‘ না, দেখছিলাম ছেলেদের চুল সরানোর অনুভূতি কেমন হয়।ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ডের ঘুমন্ত অবস্থায় এভাবে চুলে হাত বুলাব।দারুণ না আইডিয়াটা?’
কথাটা বলেই ঠোঁট টিপে হাসল অদ্রিজা।রক্তিম চোখ মেলে চাইল এবার।ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠল,
‘ ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড? সে আর আপনার জীবনে আসবে না।সে আশা ঝেড়ে ফেলুন খুব দ্রুত।নয়তো আপসোস করবেন।’
অদ্রিজা কড়া চাহনিতে চাইল।অপূর্ব চোখজোড়ায় গাম্ভীর্য ফুটিয়েই গুরুগম্ভীর চাহনি ফেলল রক্তিমের দিকে।হাতজোড়া বুকে ভাজ করেই কঠিন গলায় বলল,
‘ কেন? আপসোস করব কেন? আপনার থেকেও শতগুণ ভালো হাজব্যান্ড পাব আমি।দেখবেন। আপনার মতো অসহ্যকর একটা লোকের সাথে দিন কাঁটাতে হবে না এটা ভেবেই দারুণ লাগছে।মনটা ফুরফুরে লাগছে।আহ!আমি, আমার বেবি আর আমার ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড!দারুণ একটা সংসার হবে।’
রক্তিম প্রথমবার মজা হিসেবে উড়িয়ে দিলেও এবার মুখচোখ গম্ভীর হলো।ঘুমে ফোলা চোখজোড়া জোর করেই মেলে রেখে অদ্রিজার দিকে শান্ত নিশ্চলভাবে চেয়ে থাকল।ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ পেয়ে গেছেন নাকি ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড?আপনার খুশি দেখে তো মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ডকে আজই বিয়ে করে বর্তমান হাজব্যান্ড বানিয়ে নিবেন।’
অদ্রিজা হাসল।অগোছাল চুলগুলো হাত দিয়ে খোঁপা করতে করতেই ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
‘ উহ!পাই নি এখনো।খোঁজ চলছে।পেয়ে গেলেই টুপ করে বিয়ে করে প্রেজেন্ট হাজব্যান্ড বানিয়ে নিব।দিহান বেচারা নেহার সাথে চিপকে না গেলে আপনার কথা অনুযায়ী দিহানকেই বিয়ে করে নিতাম।এক মুহুর্তও দেরি করতাম না।ও আমায় আগলে রাখত বলুন?অনেক ভালোবাসত।অন্তত আপনি নামক অসহ্যকর লোকটার মতো তো না।’
রক্তিম আরেক দফা ভ্রু কুঁচকাল।আশ্চর্যজনক ভাবে অদ্রিজার কথাবার্তায়, আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে বিস্ময় খেলে গেল চোখমুখে। কথা বলার সময় আগে যে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা থাকত আজ সেটা নেই।দৃষ্টিতে অদ্ভুত রহস্য।ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য নেই।কথার উত্তরেই মিষ্টি হাসছে।হঠাৎ এই পরিবর্তন?এক রাতে কি হয়ে গেল হঠাৎ?সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই অদ্রিজার এমন অদ্ভুত আচরণ?রক্তিম ভাবল।ভীষণ গুরুতর ভাবে ভাবল। কিন্তু কোন উত্তর পেল না।কপাল কুঁচকে অদ্রিজার দিকে বার কয়েক চেয়ে থাকতেই অদ্রিজা ভ্রু নাচাল।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
‘ কি হলো?কষ্ট হচ্ছে?চিন্তা নেই।আপনিও কাউকে বিয়ে করে ফেলবেন আরকি!আমাকে তো ভালোবাসেননি। তাকে ভালোবাসবেন।খু্ব করে। বাসবেন না?’
রক্তিমের দৃষ্টি আরো সরু হলো।গম্ভীর গলায় বলে উঠল তৎক্ষনাৎ,
‘ সমস্যা কি আপনার?সকাল সকাল বিয়ে, হাজব্যান্ড নিয়ে পড়লেন কেন?অদ্ভুত!’
অদ্রিজা ঠোঁট কাঁমড়ে হাসল।মুখচোখে হাসির রেশ ফুটিয়েই বলে উঠল,
‘ কেন? অদ্ভুত কেন?চুক্তি হোক বা স্বাভাবিক আপনার সাথে আমার বিয়েটাতো হয়েছে। আপাদত আমি তো আপনার স্ত্রী। আপনার চাওয়াগুলো পূরণ করা আমার উচিত নয় রক্তিম?আপনিই তো এত কষ্ট করে দিহানকে আকুতি মিনতি করে বলেছিলেন। তো আমার উচিত না আপনার ইচ্ছের মূল্য দেওয়া?আপনার ইচ্ছেটা পূরণ করা?তাই ভাবলাম, দিহান না হোক অন্য কোন ছেলেকে এক্সেপ্ট করাই যায়। আমার ভবিষ্যৎ হাজব্যান্ড হিসেবে!’
রক্তিমের চোয়াল শক্ত হলো।ফর্সা মুখটা লাল রক্তিম হয়ে উঠল মুহুর্তেই।অদ্রিজার দিকে টানটান নজরে তাকিয়েই বুঝার চেষ্টা চালাল কিছু।কিন্তু কিছুই বুঝা গেল না। হতবিহ্বল চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থেকেই গমগমে কন্ঠে শুধাল,
‘ আপনি শুধু শুধুই এত সব স্বপ্ন দেখে ফেলছেন!কেউ আসবেও না আপনার জীবনে, আর কেউ আপনার হাজব্যান্ডও হবে না।সো এক্সেপ্ট আর কাকেই করবেন? আপনি মিথ্যে স্বপ্ন দেখতেই পারেন।আমি আপাদত কিছু মনে করছি না।’
অদ্রিজা হাসল।ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ মনে করেননি?তাহলে চোখমুখের হঠাৎ এই পরিবর্তন? রাগে থমথমে হয়ে গেলেন যে মিঃ রক্তিম মাহমুদ?নিজের স্ত্রী অন্য কাউকে নিয়ে ভাববে বলে?সমস্যা কি ভাবলে?এমনিতেও তো ডিভোর্সটা হয়েই যাবে আপনার সাথে তাই না?’
রক্তিম রাগল।চোখমুখে দেখা গেল প্রখর দৃষ্টির চমৎকার রেশ। অদ্রিজার দিকে ফিরে কানের কাছে দাঁত দাঁত চেপে বলে উঠল,
‘ বারবার ডিভোর্সের কথা বলেন কেন?আশ্চর্য!ডিভোর্সটা হবে না।আপনি শুধু শুধুই এসব নিয়ে পড়ে আছেন।আর এসব বলে আমাকে বিরক্ত করছেন শুধুশুধু!’
অদ্রিজা তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকাল।মুখচোখে ভীষণ প্রখর দৃষ্টি ফুটিয়েই রক্তিমের কলার টেনে ধরল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ মোটেই না!আগামী একমাসের মধ্যে দেখবেন হুট করেই কোন একদিন বিয়ে করে নিয়েছি।আপনার শখ আমি অন্য কোন পুরুষের অধীনে থাকি।শখটা পূরণ করা দরকার নয়?’
রক্তিম দাঁতে দাঁত চাপল।অদ্রিজার চোখে চোখ রেখেই বলল,
‘ স্টুপিড!আপনাকে এখন স্যরি বলা উচিত এসবের জন্য?স্যরি বলা দরকার?তাই এমন স্টুপিডের মতো ঐসব কথা আমার সামনে তুলর ধরছেন? আমায় ইচ্ছে করেই জ্বালাচ্ছেন? ‘
রক্তিমের কথাগুলো শুনেই ঠোঁট টেনে হাসল অদ্রিজা।রক্তিমের কলার ছেড়ে দিয়ে কপালে আসা অগোছাল চুল গুলো কানের পেঁছনে গুঁজে নিয়েই বিছানা ছাড়ল।ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতেই বলে উঠল,
‘ উফফস!স্যরি নয়, স্যরি নয়। অন্যকিছু বলতে হবে।বলে ফেললেই কাহিনী ক্ষতম।আমি আর আপনাকে জ্বালাব না।প্রমিজ!’
রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।অদ্রিজার কথাবার্তায় তার মতোই উৎফুল্ল, ছাড়াছাড়া ভাব।তার রকমই হেসে হেসে কথা বলা।তাকে কপি করছে?বুঝে উঠল না।বিছানায় থমথমে মুখে বসেই ভাবতে লাগল কাহিনী আসলে কি। অদ্রিজা রাগছে না কেন আজ?বারংবার মুখে সেই চমৎকার হাসিই বা কেন?কথাগুলো ভেবে ভেবেই কয়েকমিনিট পার করে দিল।অদ্রিজা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসতেই শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ আমায় কপি করছেন আপনি?আমার কথার ভঙ্গি কপি করছেন?এত ইজিলি, উৎফুল্লভাবে কথা বলছেন?অন্যদিন তো কথায় কথায় রেগে, ক্ষেপে যেতেন।’
অদ্রিজা ফর্সা মুখে হাসি ফুটাল সঙ্গে সঙ্গেই।ঠোঁট টেনে বলল,
‘ধরুন আপনি এতদিন যে সত্যটা আই মিন আমার যে দুর্বলতাটা জেনে আমাকে এত উৎফুল্ল ভাবে ইজিলি জ্বালিয়ে যেতেন, ঠিক তেমনই কোন দুর্বলতা আমিও পেয়ে গেছি।তাই আরকি।’
রক্তিম কপাল কুঁচকাল।দুর্বলতা?কথাটা ভাবতেই মাথায় এল অদ্রিজার প্র্যাগনেন্সির কথাটাই।নিজের সন্তানের প্রতি সবাই দুর্বল।অদ্রিজা কি সেই দুর্বলতার কথাই বলছে?সেই দুর্বলতার কথা জেনেই হঠাৎ এই পরিবর্তন?বুঝল না রক্তিম। দ্বিধান্বিত চাহনিতে তাকিয়েই বলল,
‘ কি দুর্বলতা?আপনার প্র্যাগন্যান্সির কথা বুঝাতে চাইছেন? আমি আমার সন্তানের প্রতি দুর্বল এটা জেনে গেছেন?এটা জানার কি আছে?প্রত্যেক বাবাই তো তার সন্তানের প্রতি দুর্বল হবে। তাই না?হেয়ালি না করে বলে ফেলুন কোন দুর্বলতার কথা বলেছেন।’
অদ্রিজা ঠোঁট টিপে হাসল।রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতেই বলল,
‘ উহ নাহ!অন্য কোন দুর্বলতা।ভাবুন।’
.
টেবিলের উপর দুই দুটো ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ।একপাশে অদ্রিজা অন্যপাশে সুইটহার্ট বসা।অদ্রিজা একটা চায়ের কাপ সুইটহার্টের দিকে এগিয়ে দিয়েই মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল,
‘ তুমি কিন্তু কিছু বলবে না সুইটহার্ট!ঐ বেয়াদপ লোকটা আমার দুর্বলতা জেনে ও বারংবার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।কাঁদিয়েছে।অপমান করেছে।আমি তার শোধ নিতে চাই।বলবে না কিন্তু। বললে কিন্তু তোমার সাথে কথা অফ সুইটহার্ট।’
সুইটহার্ট হাসল।বলল,
‘ আহারে!বেচারার প্রতি এখনো তোমার রাগ কমল না।’
‘ রাগ কমবে কেন?কমার প্রশ্নই আসছেেনা সুইটহার্ট!আমি উনাকে বারংবার বলেছি আমি উনাকে ভালোবাসি।তাও উনি আমার সেই কথাটার মূল্য দেয়নি।তাচ্ছিল্য করে ফিরিয়ে দিয়েছিল।বরং যখন জানল আমি উনাকে ভালোবাসি উনি গা ছাড়া ভাবে আমার সাথে দিনের পর দিন গা জ্বালানো কথা বলে গিয়েছে।উনি তো কখনো আমায় ভালোবাসে বলেনি সুইটহার্ট। আমি বলেছি।এখন যদি আবার উনার কাছে নিজ থেকে বলতে যাই ভালোবাসি তাহলে উনি আবারও ভাব নিবেন সুইটহার্ট।এবার কিন্তু আমি আর ভালোবাসি বলব না যতদিন না উনি স্বীকার করবেন।’
সুইটহার্ট মিষ্টি হেসেই বলে উঠল,
‘ শুধু মুখে ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় অদ্রি?অনেক সময় মুখে না বলেও, কখনো প্রকাশ না করেও ভালোবাসা বুঝানো যায়।’
অদ্রিজা সূক্ষ চাহনিতে তাকিয়ে রইল।হয়তো!না বলেও বুঝানো যায়। কিন্তু ঐ যে!অপমানটা সেখানেই সাংঘাতিক, দিহানকে কেন আগলে নেওয়ার জন্য আকুতি জানিয়েছে রক্তিম?কেন!কথাটা ভাবতেই রাগে কান গরম হয়ে উঠল।মুখচোখ লাল হলো।ভেতরে থাকা নরম মনটা বলল, নাহ! কিছুতেই না।রক্তিমকে কিছুতেই এমনি এমনিই ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।আগে সে স্বীকার করবে। নয়তো কিছুতেই মানা হবে না রক্তিম নির্দোষ।
.
রক্তিমদের বাসার সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছোতেই নিজের ঠিক দুইধাপ উপরের সিঁড়িতে রায়মানকে চোখে পড়ল অত্রিয়ার।দীর্ঘকার লম্বা, চওড়া শরীরের মানুষটিকে দেখে নিয়েই অত্রিয়া দাঁত কেলিয়ে হাসল। ধপাধপ করেই দুই ধাপ সিঁড়ি একলাপে পার করেই রায়মানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুচকি হেসেই চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠল,
‘ হ্যালো রায়মান ভাইয়া।কেমন আছেন?’
রায়মান মুখ নামিয়ে নিজের সামনে পিচ্চি দেখতে মেয়েটার দিকে চাইল।নজর সরু করেই পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষন করেই মৃদু হাসল।ঠোঁট চওড়া করে বলল,
‘ ভালোই আছি।তুমি?’
অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।ভ্রু উঁচিয়ে বলল
‘ আপনি?আপনি এখানে কেন?তা আগে বলুন।’
‘ প্রশ্নটা তো আগে আমিই করলাম।উত্তরটা তুমি আগে দিবে।তারপর আমি।’
অত্রিয়া ঠোঁট উল্টাল।
‘ উফফস!কথাটাতো প্রথমে আমিই বলেছি আপনার সাথে।সুতারাং উত্তরটা আগে আমারই প্রাপ্য।চটফট বলে ফেলুন, এখানে কেন?বিয়ের কার্ড দিতেেএসেছেন?ইনভাইট করতে এসেছেন আপুদের?দেখি, আপনার বিয়ের কার্ডটা।কোথায়, দিন না, দেখি।’
রায়মান হতাশ হলো।চোখ ছোট ছোট করে অত্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়।তাকে কিছু বলতে না দিয়েই অনবরত বলতে থাকা মেয়েটাকে একটুও বিরক্ত মনে হলো না।বরং মুখ চেপে হাসি আসল।মেয়েটা সত্যিই পিচ্চি। নয়তো কি এভাবে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বকে যেত?ঠোঁট চেপে হেসেই অত্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ অপরপাশে কোন ব্যাক্তি যে আছে ভুলেই যাও নাকি।কিছু বলার সুযোগ দেওয়া তো উচিত অপরপাশের মানুষটাকে অত্রি।’
‘ দিলাম তো সুযোগ।বিয়ের কার্ডটা দেখালেন না ভাইয়া।দেখালে কি আপনার বিয়েতে নজর পড়ে যাবে?’
রায়মান ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ কে জানে!নজর লাগলেও লাগতে পারে।আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে থেকে তো নজর লাগিয়ে দিলে।যদি বিয়েতেও নজর লাগিয়ে দাও। সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার হয়ে যাবে।বিয়েটা যদি ভেঙ্গে যায়।’
অত্রিয়া মুখ ফুলাল।ঠোঁট উল্টে নিয়েই বলল,
‘ তার মানে আপনার বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে?বিয়েটা করে নিচ্ছেন আপনি?পাত্রী কে?’
রায়মান চাপা হাসল।দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘ আর কতকাল একা থাকব বলো।বিয়ে করা কি অনুচিত হয়ে যাবে? ‘
অত্রিয়া মুখটা আরোও ফুলাল।গম্ভীর গলায় বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে রেখে বলল,
‘ পাত্রী কে জিজ্ঞেস করলাম তো।’
রায়মান হু হা করে হাসল এবার। মৃদু গলায় বলল,
‘ তুমিই বোধ হয়।’
কথাটা বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল রায়মান।অত্রিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইল।রায়মান যে এতক্ষন মজা নিচ্ছিল বুঝতে পেরেই মুখ কালো করল।এত্ত অভদ্র!ছোট্ট মনটায় একমুহুর্তের জন্য এভাবে ঝড় তুলে দেওয়া কি উচিত হয়েছে ঐ শ্যামপুরুষের!অভদ্র!চরম মাপের অভদ্র!
#চলবে…..
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_৩৬
লেখনীতেঃভূমি
অদ্রিজার লাবন্যময়ী ধবধবে ফর্সা, লতিয়ে পড়া শরীরে কালো রাঙ্গা শাড়িটা এলেমেলো হলো।ফর্সা ফুলো পেটের উপর থেকে সরে গেল শাড়ির একাংশ।মুহুর্তেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো মুগ্ধ করা পেটের সেই মসৃন ত্বক।রক্তিম নেশালো চাহনিতে তাকিয়ে থেকেই মৃদু হাসল।দু পা এগিয়েই নিজের ট্রাইটা খুলে রেখেই ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিল।চোখজোড়া কিছুক্ষন বন্ধ রেখেই আবার ও মেলে ধরল।অদ্রিজার দিকে আবারও তাকাতে গলা শুকিয়ে আসল মুহুর্তেই।সঙ্গে সঙ্গেই সামনের বোতলটা থেকে ঢগঢগ করে পানি গিলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে।ঘড়িতে তখন মাত্র সন্ধ্যে ছয়টা।এই ভর সন্ধ্যায় অদ্রিজার ঘুমন্ত মুখটা দেখে নিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলল।প্র্যাগনেন্সির শুরু থেকে অদ্রিজার ক্লান্তিটা বুঝে উঠেই চোখমুখ গম্ভীর করল সে।ধীর পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই কানে এল অত্রিয়া আর রায়মানের চাপা গলা।রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল।দরজাটা হালকা ভিড়িয়ে দিয়েই বেরিয়ে আসল রুম থেকে।ড্রয়িং রুমের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা রায়মান আর অত্রিয়ার দিকে চোখজোড়া সরু করে তাকাতেই অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।ভ্রু নাচিয়েই বলে উঠল,
‘আপনার বন্ধুর জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে দেখেছি জিজু।মেয়েটারও আপনার এই খারাপ দেখতে বন্ধুকে পছন্দ।শুধু পছন্ত নয় চরম রকম পছন্দ। এখন আপনার বন্ধু বিয়ে নিয়ে এত সিরিয়াস হয়েও এই মুহুর্তে মজা করছে।মেয়েটার প্রতি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে না বলুন?’
রক্তিম ঠোঁট টেনে হাসল।মৃদু গলায় বলল,
‘ রায়মানের জন্য তো পাত্রী অনেক আগে থেকেই ঠিক করা আছে।তুমি কেন শুধু শুধু কষ্ট করে মেয়ে দেখতে গেলে অত্রিয়া?বৃথা কষ্ট করলে!’
অত্রিয়া বড়বড় চোখে একবার রায়মান তো একবার রক্তিমের দিকে তাকাল।ভ্রু কুঁচকেই বলে উঠল,
‘ সত্যি?মানে সত্যিই? উনি এটা নিয়েও মজা করলেন।কি সাংঘাতিক!কষ্ট পেলাম।’
রক্তিম হাসল।এগিয়ে গিয়ে রায়মানের কানের কাছে কিছু বলেই হু হা করে হেসে উঠল দুজনই।সেই হাসির কম্পনে কম্পিত হলো পুরো রুম।অত্রিয়া বোকার মতোই চেয়ে রইল।দুইজনের হঠাৎ রুম কাঁপানো এই হাসির কোন অর্থ খুঁজে না পেয়েই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল সে।কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হলো?হাসছেন কেন আপনারা?কি এমন বললাম আমি।’
রক্তিম মুখটা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো করার চেষ্টা করল।হাসিটা চেপে রাখার অদম্য চেষ্টা চালিয়েই কন্ঠটা গম্ভীর করে বলে উঠল,
‘ নাহ, কি বলবে তুমি। তুমি একেবারেই ছোট। ঐ ছোটমাথায় আমাদের হাসির বিষয়বস্তু বোধগম্য হবে না।তার থেকে রায়মানের জন্য মেয়ে দেখতেই থাকো।ওর পছন্দ না হলে আমাকে ট্রান্সফার করে দিও তাদের। আমি এখনো পিউর সিঙ্গেল!যতজনই আসুক, সামলে নিব।শতহোক সুন্দরীদের ফেরানো যায় না। বলো?’
অত্রিয়া ঠোঁট উল্টাল।রক্তিমের কথার বিনিময়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রক্তিমের পেঁছন থেকে এক সূক্ষ্ম নারীকন্ঠ ঝংকার তুলে বলে উঠল,
‘ এক্চুয়েলি!রায়মান ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখার সময় উনার জন্য ও পার্ফেক্ট দেখে কয়েকটা মেয়ে চুজ করে ফেলিস অত্রি।আমি চলে যাওয়ার পর বেচারা একা একা দেবদাস হয়ে থাকবে নাকি বল!আমি উনাকে একটা সুন্দরী রমণীর হাতে তুলে দিয়ে তবেই নিশ্চিত হয়ে সুখে সংসার করব।নয়তো দেখা যাবে উনার অভিশাপে আমার ভবিষ্যৎ সংসার দুদিনেই ভেঙ্গে যাবে।’
রক্তিম ঘাড় ঘুরাল।নজর তীক্ষ্ণ করে অদ্রিজার ঘুম ঘুম ফুলে থাকা চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন।অদ্রিজার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসিটা দেখে নিয়েই চোখেমুখে তীক্ষ্ণতার সাথে যোগ হলো বিস্ময়।অদ্ভুত!এই রমণীর হঠাৎ এত পরিবর্তন?তার প্রতি রাগ অভিমান সব মিটে গেছে নাকি?রক্তিম বুঝল না।মনকে বার কয়েক জিজ্ঞেস করেও বিশেষ লাভ হলো না।চোখজোড়া সরু রেখেই কয়েক পা এগিয়ে অদ্রিজার সামনে দাঁড়াল।মৃদু গলায় বলল,
‘ একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না অদ্রিজা।আপনার এই পরিবর্তনের রহস্য কি?কাইন্ডলি বলবেন?আর বিয়েরই বা এত শখ উতলে উঠল হঠাৎ?আমার আপনার ডিভোর্স হয়ে যায় নি মনে রাখবেন।বেশি বিয়ে বিয়ে বলে লাফালাফি করবেন তো দড়ি দিয়ে বেঁধে বাসায় আটকে রাখব।ভালো হবে?’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে ফেলল।রক্তিমের কথার পিঠেই বলে উঠল,
‘ কেন, কেন?বেঁধে রাখবেন কেন?আশ্চর্য!আমি বিয়ে করলে আপনার সমস্যা কি? আপনাকেও সুন্দরী কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব।নো চিন্তা!’
রক্তিম দাঁতে দাঁত চাপল।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো একহাত দিয়ে পেঁছনে ঠেলে দিয়েই নিশ্চল চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকাল কয়েক সেকেন্ড।মুহুর্তেই ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হাসল।অদ্রিজার কানের কাছে মুখ এনেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ইয়েস!চিন্তা কিসের।সুন্দরী মেয়ে পেলে দ্বিতীয় বিয়ে করতে নিষেধ নেই আমার। দুই সুন্দরী বউ নিয়ে সংসার জীবন ভালোই কাঁটবে আমার।কিন্তু কথা হলো আপনাকে নিয়ে।আপনি সহ্য করতে পারবেন তো আমার পাশে আমার দ্বিতীয়, সুন্দরী স্ত্রীকে?না মানে, শুনেছিলাম বাঙ্গালি মেয়েরা নাকি তাদের ভালোবাসার মানুষের পাশে কাউকে সহ্য করতে পারে না।তাহলে, আপনি পারবেন তো?’
অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখে তাকাল।রক্তিম নামক অভদ্র লোকটার কলার ধরে সটান একটা ঘুষি বসাতে মন চাইল তৎক্ষনাৎ। তারই সামনে কত সুন্দরভাবে, নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছে দ্বিতীয় বিয়ে করতে কোন সমস্যা নেই তার?এত সহজেই বলে দিল?কথাগুলো ভেবেই যুবতী মনটা বিদ্রোহের ঘোষণা দিল।টলমল করে চোখজোড়া ভাসাতে মন চাইল মুহুর্তেই।নরম হৃদয়টা ভীষণ অভিমানী কন্ঠে কিছু কথা বলতে চাইল।কিন্তু না!মস্তিষ্ক খুব শান্ত ভাবে নির্দেশ পাঠাল যে,অভিমান,কান্না, কিংবা নিজের স্বচ্ছ অনুভূতির এইটুকুও এই অভদ্রলোকের সামনে প্রকাশ করা যাবে না।কিছুতেই না।সঙ্গে সঙ্গেই চিবুক শক্ত হলো অদ্রিজার।ভ্রু জোড়া কুঁচকে ভীষণ শান্ত গলায় বলল,
‘ কেন পারব না?আমি কি আপনাকে ভালোবাসি নাকি মিঃ রক্তিম মাহমুদ যে আপনার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারব না?অদ্ভুত!’
রক্তিম হালকা হাসল। কোন উত্তর না দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে অত্রিয়া আর রায়মানের দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসল।সোফায় বসতে বলেই হোতজোড়া বুকে ভাজ করে দাঁড়াল।ঠোঁট টেনে বলে উঠল,
‘ ভীষণ রকম অদ্ভুত!তো মেয়ে চুজ করে নিয়েছেন?বিয়ে কবে করতে হবে?চটফট বলে ফেলুন।আমার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার সাথে সাথেই যাতে তার দ্বিতীয় মাকেও দেখতে পায় সে ব্যাবস্থা করতে হবে না?’
অদ্রিজাএবার জ্বলে উঠল।দৃষ্টিটা ক্রমশ সরু করেই কন্ঠে ঝংকার তুলে বলে উঠল সে,
‘ আমি আসলেই অবাক হয়ে যাই,এত অনায়াসে আমার সন্তান বলছেন কি করে। আর হ্যাঁ!আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করুন সমস্যা নেই।কিন্তু আমার সন্তানের দ্বিতীয় মা বলে সম্বোধন করবেন না কাউকে।তার মা কেবল আমি এবং আমি।আমার সন্তানকে আপনার সাথেও শেয়ার করব না আমি।দ্বিতীয় মায়ের সাথে শেয়ার করা তো দূর!মাইন্ড ইট!’
রক্তিম ঠোঁট টেনে হাসল।ভ্রু কুঁচকে নিয়ে অদ্রিজার রাগে জ্বলজ্বল করা মুখটার দিকে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল অদ্রিজার গোলগাল ফুলো মুখটাকে।ঠোঁট কাঁমড়েই বলল,
‘ তাহলে আপনি কি করে ভাবলেন আপনার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে আমি আমার সন্তানকে শেয়ার করব?আমার তো আপনার দ্বিতীয় স্বামীর কথা ভেবেই হাসি পাচ্ছে অদ্রিজা।বেচারা আপনার বর হবার আগেই ইন্তেকাল করবে!দারুণ!’
অদ্রিজা কপাল কুঁচকে রেখে কিছুটা সময় তাকাল।তারপরই মুখ চোখ থমথম করে কিছু না বলেই হনহনিয়ে রুমের ভেতরে ডুকল।আর রক্তিম তার হনহনিয়ে চলে যাওয়া দেখেই হেসে উঠল।দুই পা পিঁছিয়ে সোফায় বসে পড়েই ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ হঠাৎ দুই দুইজনই একসাথে?কি ব্যাপার বলোতো!তোমাদের আকস্মিক দেখা করার প্ল্যান ট্ল্যান ছিল নাকি?নাকি মিরাক্কেল!’
অত্রিয়া খিলখিলিয়ে হাসল।রক্তিমের কথা শেষ হওয়ার পর পরই বলে উঠল,
‘ মিরাক্কেল, মিরাক্কেল!’
রক্তিম ঠোঁট চওড়া করে হাসল।রায়মানের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ কিরে!মিরাক্কেল?’
রায়মান গম্ভীর গলায় গমগমে করে বলল,
‘ নাহ!ও আমায় কোনভাবে ফলো টলো করে চলে এসেছে নিশ্চিত।সাংঘাতিক মেয়ে!’
অত্রিয়া মুখ ফুলাল।চোখের দৃষ্টি সরু করেই বলে উঠল,
‘ মোটেই না!আমি আপনাকে ফলো করতে যাব কেন।এটা আমার আপুর বাসা।যখন তখন আসতে পারি আমি।এখানে আসতে হলে আপনাকে ফলো করা লাগবে কেন?অদ্ভুত!’
রায়মান রক্তিম দুইজনই হু হা করে হাসল।অত্রিয়া আবারও বোকার মতো চেয়ে থাকল।কি এমন বলল সে যে এভাবে হাসতে হবে!অদ্ভুত।সূক্ষ্ম নজরে ঐ দুই বন্ধুর দিকে তাকিয়ে রইল কথাগুলো ভেবেই।রায়মান ঠোঁট চওড়া করা সেই হাসি নিয়েই বলে উঠল,
‘ ফলো করতেই পারো।ঐটুকু মেয়ে হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে কাউকে গিলে খেয়ে নিতে পারলে এটা আর কি এমন ইম্পসিবল কাজ?হতেই পারে আমাকে ড্যাবড্যাব করে দেখার জন্য ফলো করছিলে আমায়।আর ফলো করতে করতে এখানে এসে হাজির!হতেই পারে!’
অত্রিয়া ভ্রু বাঁকাল কথাগুলো শুনে।আর রক্তিম আর রায়মান আবারও একসাথে আওয়াজ করে হাসল।ছোট্ট অত্রিয়ার ফুলিয়ে রাখা গাল, বাঁকানো ভ্রু, আর ঠোঁট উল্টানো দেখেই হাসিটা দ্বিগুণ হলো তাদের!
.
অদ্রিজা বেলকনির একধারেই বসে ছিল।দৃষ্টিটা আকাশের পানে।লতানো ছোট্ট রূপবতী শরীরটায় জড়ানে কালো রাঙ্গা শাড়িটায় বেলকনির হলদেটে আলো স্পষ্ট।লাবন্যময়ী শরীরের ভাজে ভাজে লাবন্যময় সৌন্দর্যের আভাস।নরম ফর্সা গালে আদুরে সৌন্দর্যের ঢেউ!রক্তিম মুচকি হেসেই চাপা স্বরে বলে উঠল,
‘আপনার সৌন্দর্য দিন দিন বাড়ছেই অদ্রিজা।দিনের পর দিন আপনি যে চরম রকম সুন্দর হয়ে উঠছেন, জানেন? আমি যে সে সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত বেসামাল হয়ে উঠছি আপনি বুঝেই উঠছেন না।কতোটা সেক্রিফাইস করছি আমি আন্দাজও নেই আপনার।এতটা সেক্রিফাইস করা যায়? বলুন তো।’
অদ্রিজা চোখ ফিরিয়ে চাইল রক্তিমের দিকে।তার মুখে চোখে দুষ্টুমিমাখা হাসির রেশ।দাঁত কেলানো হাসি।হাতজোড়া বুকে ভাজ করে রেখেই দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।অদ্রিজা একনজর তাকিয়েই রক্তিমকে পরখ করে চুপ রইল।রক্তিমের সাথে একটাও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ এড়িয়ে গেল। বেলকনিতে সে ব্যাতীত অন্য কেউ আছে কথাটা ভুলে বসেই একইভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।রক্তিম বোধ হয় বিরক্ত হলো এবার।কপাল কুঁচকে অদ্রিজার সামনে এসেই ঠোঁট টিপে আহত কন্ঠে বলল,
‘ সত্যিই আপনি বেসামাল সুন্দরী হযে উঠছেন!আই কান্ট কন্ট্রোল…’
অদ্রিজা চোখ তুলে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাল।রক্তিমের শীতল,জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো শুনেও তার কোন ভাবাবেগ হলো না।দাঁতে দাঁত চেপে রেখেই কঠিন গলায় বলল,
‘ ভালো লাগছে নাহ আমার!একা থাকতে পারি একটু?’
রক্তিমের নির্বিকার উত্তর,
‘ একদমই না।আমি থাকতে একা কেন থাকবেন আপনি?আছি না আমি।’
অদ্রিজা দ্বিগুণ বিরক্ত হলো।রক্তিম বিরক্তিটা বুঝতে পেরেই অদ্রিজার কানের কাছে মুখ নিয়েই ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
‘ উহহহ!এত রাগবেন না অদ্রিজা।এমনিতেই বাড়তি রকম সৌন্দর্যে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে যাচ্ছি আমি।আপনার রাগে লাল হওয়া মুখ দেখে বেশ কষ্টে কন্ট্রোল করা নিজেকে সত্যি সত্যিই কন্ট্রোল্যাস করে ফেলতে চাই না। আবার শাড়িতে!উফফস!শাড়ির আঁকাবাঁকা রূপে আপনি ময় আসক্তিতে মাতাল হয়ে যাচ্ছি!’
কথাটা বলেই বুকের বা পাশে হাত রাখল রক্তিম।চোখেমুখে দুষ্টুমিমাখা হাসিটা স্থির রেখেই চোখজোড়া বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল।অদ্রিজা বড় বড় চোখে রাগ নিয়ে তাকাতেই চোখ খুলল রক্তিম।ঠোঁট কেলিয়ে হেসেই অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দ্রুত হুড়মুড় করে বের হয়ে আসল রুম থেকে।ঐ সাংঘাতিক রাগের মুখোমুখি হতে হলে নিশ্চয় আজ আবারও উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্ষ অদ্রিজার ঠোঁটে গিয়ে ঠেকবে!এই চরমরকম ঘটনাটা দ্বিতীয়বার না ঘটিয়ে কেঁটে পড়াই শ্রেয়।
#চলবে…..